মুক্তিযুদ্ধের কাণ্ডারির নাম কোথায়?

১৯৫০ সাল।
তখন রাজধানী ঢাকার ১৫০ নাম্বার পুরোনো মোগলটুলি ছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের কেন্দ্র বিন্দু। সেখানে সবার মধ্যে সততায়, সত্যবাদিতায়, স্বকীয়তায় তাজউদ্দিন ছিলেন সবার শ্রদ্ধাভাজন, আস্থাভাজন। চিন্তায়, কর্মে এবং দৃঢ়তায় তাজউদ্দিন সব সময়ই ছিলেন, কোনো স্বার্থ বুদ্ধি, কোনো অসৎ চিন্তা অথবা তার মধ্যে কোনো অবসাদ ছিলো না।

সত্তরের নির্বাচনের সময়ই হোক, কি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই হোক অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন দেশ সেবায় সব সময় একই রকম তাঁর ভূমিকা রেখেছেন।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের শক্তিশালী সাধারণ সম্পাদক ফকির আব্দুল মান্নানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন তাজউদ্দিন। জয়লাভ করলেন। সেই তাঁর জয়যাত্রা। সেই থেকে গণআন্দোলনের পুরো ভাগে তিনি শেখ মুজিবের দক্ষিণ হস্ত। শেখ মুজিব এবং তাজউদ্দিনের মিলনে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী দলে পরিণত হয়। শেখ মুজিবের কারিশমা এবং তাজউদ্দিনের বুদ্ধিমত্তা আওয়ামী লীগকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের আশা আকাঙ্খার বাহনে রূপান্তরিত করলো। গণআন্দোলনের মুখে আইউব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেন। ইয়াহিয়া নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলো। ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নৃশংস ভাবে মানুষ হত্যা শুরু করলে অত্যাচার, হত্যা, লুণ্ঠনে মানুষ দিশাহারা, ঘরবাড়ি ছাড়া হয়। জাতি বুঝতে পারছিল ধ্বংসের এখানেই শেষ নয়, আরো ধ্বংস বাকী আছে। সেই দিনগুলোতে তাজউদ্দিন শক্ত হাতে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।

বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে, বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামকে, বাংলার চেতনাকে উদ্দীপ্ত রাখার জন্য শপথ গ্রহণ করলেন। অসীম সাহসিকতায়, ধৈর্য্য- শক্তি ও ত্যাগ নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সরকার গঠন করতে পেরেছিলেন।

এক কোটি শরণার্থীর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। বাংলার এই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভারতের সাহায্য সহযোগিতা আদায় করেছিলেন তাজউদ্দিন। তাজউদ্দিনের আশেপাশে বহু সদস্য, নেতা কর্মী ছিলেন কিন্তু স্বাধীনতার জন্য তাজউদ্দিনের একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা এক অনন্য সাধারণ ঘটনা।

১৯৭৪ এর ২৬শে অক্টোবর তাজউদ্দিন অর্থমন্ত্রীর পদ ছাড়লেন। ডঃ কামাল হোসেন তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। আসলে শেখ মুজিব বনাম তাজউদ্দিনের যে সংঘাত, সেই সংঘাতে তাজউদ্দিনের কিছুই করার ছিল না। তাজউদ্দিন কারো কাছে কোন দিন নালিশও করেননি, কারো কাছে কোনো দিন আফসোসও করেননি। কিন্তু তারপরও তাঁকে জীবন দিতে হলো? তাজউদ্দিন কারাগারে নিহত হলেন। ৩রা নভেম্বর ১৯৭৫ এ।

তাজউদ্দীনের হাতে গড়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গত একচল্লিশ বছরে একে একে কত কিছু হলো! সরকারের অদল- বদল, সরকার টিকিয়ে রাখবার কলা, কৌশলে চরিত্র হনন করা হলো। বাংলাদেশের যে মূল্যবোধ ছিলো তা একেবারেই জলাঞ্জলি দেয়া হলো। সেই মূল্যবোধ চরিত্র কোথা থেকে আসবে? এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
ভাষা আন্দোলনের কথাও বিকৃতির হাত থেকে রেহাই পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হলো হাইজ্যাক। যদি সম্ভব হতো তাজউদ্দিনকে সুযোগ দিলে আবার সে দৃঢ় হাতে, স্থির বুদ্ধিতে পারতেন আমাদেরকে কলংকের হাত থেকে রক্ষা করে মহিমান্বিত করে তুলতে। কিন্তু হায়! সেই মুক্তিযুদ্ধের নাম কোথায়? যোগ্য সন্মান, প্রাপ্তি, আমরা দিয়েছি কি তাকে?

কিন্তু ধন্য তাজউদ্দিন, সে তো জাতির পতাকা দিয়ে গেল। এখন যারা জাতির নেতৃত্বে আছেন, ক্ষমতায় আসীন তারা সেই পতাকাকে সমুন্নত রাখুন। বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করুন, কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটান। তবুও তো তাজউদ্দিনের প্রতি দেশের ঋণ কিছু শোধ হবে।

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter