৮
মালয়েশিয়ার লাংকাউই – সমুদ্রের পাড়ে এক দল থাকেন যারা প্যারাস্যুটে ওঠার ব্যাপারে গাইড করেন এবং যে বা যিনি প্যারাস্যুটে উঠবেন তার সাথে গাইড হিসেবে থাকেন একজন। আমাদের গ্রুপের সবাই প্যারাস্যুটে উঠে ভীষন এক্সাইটেড। স্মিতা, দুরন্ত, সুমন, মইনুল সবাই বল্লো ওঠো তুমি। কোন ভয় নেই।
আমার উচ্চতা ভীতি আছে এটা কোন রকমেই তাদের বোঝাতে পারলাম না। ঠেলে ঠুলে পাঠানো হলো আমাকে। ওঠার আগে আমাকে একটা ড্রেস পরিয়ে দেয়া হল, একটা বেল্ট সামনে পেছনে আর বসার জন্য একটা বেল্ট দুহাতে ধরার জন্য মোটা রশি এবং পেছনে আমার গাইড। যখন উড়ে যাব তখন অন্যরা বললো “রান রান রা -আ- ন –”
কিছুদিন আগে সিঁড়িতে ওঠার সময় পায়ে ভীষন ব্যথা পেয়েছিলাম।
তখনো ব্যথা ছিল তবু দৌড়ালাম। মূহুর্তেই আমরা মাটি ছেড়ে শুন্যে উঠলাম। নীচের মানুষ গুলো সব ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেল। আমার পাশে গাইড সে একটা কথাও বলছিল না। এত সুন্দর আকাশ নীচে সমুদ্রের সবুজ জল – ঠান্ডা গা জুড়ানো বাতাস, ঘন সবুজ পাহাড় – নীল আসমান – ধীর গতিতে পাখির মত উড়তে থাকা – পাখিরই রয়েছে এমন সুন্দর জীবন, আত্মবিশ্বাস – উড়তে পারার বিশ্বাস –বিকেল ছিল ওই সময়টা – কি যে অসাধারণ ঠান্ডা মৌন ঋষির মত এই পৃথিবী – ব্যাখ্যাতীত সব – সব সুন্দর ব্যাখ্যা করা যায় না – কিন্তু কিছুই উপভোগ করতে পারছিলাম না। ভয়ে টেনশনে আমি পর্যুদস্ত ।
মনে হচ্ছিল যদি পড়ে যাই বেঁচে উঠব কি করে -এই আতংক আমাকে সারাক্ষণ ঘিরে ছিলো। অনেকটা আকাশ পথে উড়ে উড়ে একসময় ধীরে ধীরে নীচে নামতে লাগলো প্যারাস্যুট। অদৃশ্য মানুষ গুলো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকলো। আস্তে আস্তে প্যারাসুট মাটি স্পর্শ করলো । হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন। জোরে নিঃশ্বাস নিলাম – আহ ! কি অসাধারণ এই বেঁচে থাকা –
সবাই জিজ্ঞেস করছিল কেমন লাগছিল ! কেমন লাগছিল !
অনেক সুন্দর এমাজিং, বিশ্বাস করার চাইতেও সুন্দর- বলতে পারলাম না –
রবীবাবুর সেই গানের কথা মনে পড়লো ‘ অনেক কথা যাও যে বলি কোনো কথা না বলি-
মালয়েশিয়ায় স্পাইডারম্যানের সাথে পায়ে পায়ে’-

৯
যে অবস্থাতেই থাকি সেটাকে আমি অভিজ্ঞতা বলি। কে আছে যে তার সব দিন সমান আনন্দে কাটে ? সেদিন ক্লাসে নিজের সম্পর্কে লিখতে বলাতে দেশের কথা এতো তীব্রভাবে মনে পড়লো আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলাম। আশ্চর্য! চোখের পানি কিছুতেই থামছে না। চোখের জলের কিছু ধর্ম আছে , যেমন বন্যার পানির মতো বাঁধ ভেংগে উপচে পড়া। যখন কিছুতেই সামলাতে পারছিলাম না, আমি হাল ছেড়ে দিলাম। যা বুকের ভেতর থেকে আসে সে আসুক – যদি ভাসিয়ে নেবার হয় সে নিক, সে আপনাতেই থেমে যাবে। জীবনের ধর্ম গতিশীলতার মতো ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হবে জীবন। জীবন থেমে থাকার নয় –
সিডনীর পাঞ্চবোলে যখন আমরা আছি তখন ভাবছিলাম এতো গ্রামীন ভাব – বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া পরিবেশ বান্ধব ভীষন। পাখিরা মানুষকে ভয় পায় না। পাখি এতো পাশে এসে দাঁড়ায় যে , যেনো জানে তারা নিরাপদ। এতো বেশী বৃক্ষের সারি – নাগরিক জীবনকে সুশীতল শান্তির পরশ দেয়। আমার ছেলে দুরন্ত বলে – কিন্তু মা এখানের গাছ পালা দেশের মত এতো বেশী সবুজ না। আমিও তাই ভাবি। অথবা হতে পারে এখনো এখানে শীত। শীত যাই যাই করছে। এই সময়টা তো পাতা ঝরার সময়। পাতা হলুদ হয়ে বিবর্ণ হবে এরপর ঝরে যাবে। তাই দেখা যায় প্রায় গাছের শাখা আছে কিন্তু একটা পাতাও নেই। চিকন উর্ধ্বমুখী শাখায় গাছগুলো পত্রশুন্য ।
সে যাই হোক মুল সিডনী শহরে গেলে ভুল ভেঙ্গে গেলো। হাইরাইজ চকচকে ঝকঝকে বিল্ডিং, নারী পুরুষ ছুটছে তো ছুটছেই। এরই মাঝে প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতন দুএকজন ভিক্ষুককে বসে থাকতে দেখেছি রাস্তার পাশে। একজন আবার উবু হয়ে দুহাতের ভেতর মুখ লুকিয়ে হাত দুটো দিয়ে ধরে রেখেছে একটা বক্স যাতে কয়েন জমা হবে। যদিও ওরা মনে হয় না বাংলাদেশের ভিক্ষুকের মত গরীব। বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, কাপড় চোপড়ে এত দরিদ্র না। তবু মনটা কেন যেনো খারাপ হলো তাদের জন্য। সেন্ট্রাল লিংক তো বেকার ভাতাও দেয়। আর এক স্বাস্থ্যবতী মহিলাকে দেখেছি গীটার বাজিয়ে ভিক্ষা করতে। ভালই গাইছে। ফরসা চেহারা, ভীষন হেলদি, চকচকে লিপস্টিক ঠোঁটে, প্রায় ছয় ফিট লম্বা মহিলাকে ভিক্ষুক ভাবতে কষ্ট হয়।
এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতো মনোরম যে মাঝে মাঝে মনে হয় আহা বাংলাদেশে যদি এমন হতো তাহলে কতই না ভালো হতো। যেমন পাঞ্চবোল থেকে যদি টাউন হলে যেতে হয় তবে প্রায় দশটা বা পনেরটা জায়গা টাচ করতে হয়। এক মিনিট পরে পরে স্টেশন। তার মানে শহরের নাগরিকদের যাতায়াতের সুব্যবস্থার জন্য প্রতিটা জায়গাতেই ট্রেনের ব্যবস্থা আছে। যদিও এতো ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা তারপরেও আমার তীব্র ভাবে রিকসা জার্নির কথা মনে হয় –
সন্ধ্যার পরে রিকশায় উঠলেই ঝিরি ঝিরি বাতাস – উপরে আকাশ, চাঁদের সাথে সাথে চলা –
আহা -আমাদের গেছে যে দিন -একেবারেই কি গেছে !!


প্যারাস্যুট ড্রাইভ অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। আহা একবার যদি উঠতে পারতাম।
হুম । একবার ঘুরে আসেন মুরুব্বী । মজা পাইবেন ,
যদি হাইপ্রেসার থাকে অসুধ খাইয়া লইয়েন
হ্যাঁ, ব্লাড প্রেসারের ঔষধটা মিস করা যাবে না আপা।
আজকের পর্বও সুন্দর এসেছে বর্ণনায়। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম দিদি ভাই।
ধন্যবাদ আপু । ভালো লাগছে জেনে যে আনন্দ পাচ্ছ পড়ে ।
অভিবাসনে আপনার জীবন চরিতের চমৎকার ছবি পড়তে পারছি বোন।
জেনে ভালো লাগলো কবি । শুভেচ্ছা জানবেন ।
লেখায় ভীষণ আগ্রহ পাচ্ছি। অনেকদিন আপনাকে কোথাও দেখিনি। ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ তুবা । বেঁচে থাকলে তো দেখা হবেই বন্ধু । ভালো থেকো ।
প্রতি দিনের বর্ননা চাই, চাই, চাই।
ইনশাল্লাহ ! দোয়া রাইখেন খালিদ ভাই ।
* বর্ণনাচিত্র আমার কাছে সুখপাঠ্য হয়ে রইলো… শুভরাত্রি।
ধন্যবাদ দিলওয়ার ভাই । শুভেচ্ছা আপনাকে ।
দারুণ লেগেছে!
ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।
দারুণ বর্ণনা খুঁজে পেলাম!
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য । ভালো থাকবেন ।