সন্দেহের সংসার

প্রিয় মানুষটি অন্য কারো সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটাচ্ছে, সেটা আপনি কখনই মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু সেই আপনিই যখন পছন্দের কারো সাথে ভালোলাগা মুহূর্তগুলো উপভোগ করেন, তখন কি একবারও আপনার মনে হয় আপনার সেই প্রিয় মানুষটির কথা, যাকে আপনি একচেটিয়া ভাবে সন্দেহ করে যাচ্ছেন? আমি জানি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে কেউই প্রস্তুত নন। আমরা মানুষ। আমাদের চরিত্র বিচিত্র রকমের। আমরা নিজের বেলায় শুধু ষোল আনা বুঝি। অন্যকে বুঝতে চাই কম। আর গোলমালের সূত্রপাত এখানেই।

একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, আপনি সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকেন। হোক সে অফিসে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দেশে বা দেশের বাইরে। সময় কখন বয়ে চলে যায় স্রোতের মত টেরও পান না। কিন্তু আপনার প্রিয়জন বাসায় কিভাবে সময় কাটান, একবারও কি ভেবেছেন? যারা চাকরী করছেন বা ব্যবসা সামলাচ্ছেন তাঁদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্যরকম। সেখানে দুজনের সন্দেহের মাত্রাটা দুজনের প্রতি সমান। আপনার প্রিয়জন যদি গৃহিণী হয়ে থাকেন তবে টিভি দেখে, পত্রিকা পড়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে সময় কাটান। তিনি যখন অনলাইনে আসেন তখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হাজারো মুখের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। তাঁর মানে এই নয় যে, তিনি আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। যদি ব্যতিক্রম কিছু ঘটে সেটার জন্য আমি আপনাকেই দায়ী করব।

ইন্টারনেটে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে তোলাটাকে আপনি যদি সহজভাবে না নিতে পারেন তবে অবশ্যই আপনি তাকে পর্যাপ্ত সময় দিবেন। আর তা যদি না পারেন তাঁর সময় কাটানোর জন্য বন্ধুদের সাথে অনলাইনে সময় কাটানোটাকে সহজভাবে মেনে নিন। প্রাণ খুলে গল্প করার সময় আপনি দিবেন না, আবার কারো সাথে করতেও দিবেন না, তাহলে ঐ মানুষটা আর একজন কারাবন্দীর মধ্যে পার্থক্য কোথায় বলুন? মানুষ কারো সাথে গল্প করলে কখনই তাঁর হয়ে যায় না। প্রাণ খুলে গল্প করার মাঝে নারীরা এক ভিন্ন ধরনের আনন্দ খুঁজে পায়।

সামান্য খুটিনাটি বিষয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভয়ানক ঝগড়ার সৃষ্টি হতে দেখেছি আমি। এর পেছনে মূল কারণ সন্দেহ। স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে প্রাইভেসি বলে কিছু নেই। এই প্রাইভেসির দেয়াল আমরা নিজেরাই তৈরি করি ভুল বোঝা বা সন্দেহের কংক্রিট দিয়ে। যা শেষ পর্যায়ে ছাড়াছাড়িতে পতিত হয়। আর যাদের সন্তানাদি আছে তাঁরা বেড়ে ওঠে কুরুক্ষেত্রের মতন সংসারে। যা তাঁদের মানসিক বিকাশে বাঁধ সাধে। আপনার প্রিয়জনের যদি আপনাকে ভালো না লাগে তাহলে সে এমনিতেই আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে। আপনি ঠেকাতে পারবেন না। বেশীরভাগ পুরুষ মনে করেন আমার স্ত্রীর অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক আছে। ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কে এমন ভাবনা প্রত্যেক পুরুষই অন্তরে পুষে রাখেন।

একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, কোন নারীই স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সাথে দৈহিক মেলামেশা করতে আগ্রহী নন। অবশ্য যারা চারিত্রিক ভাবে ছোটবেলা থেকে অন্যরকম তাঁদের কথা আলাদা। মেয়েরা ঘুরতে বেশী পছন্দ করেন। পছন্দ করেন গল্প করতে। দৈহিক চাহিদা নয় বরং হৈচৈ করে সময় কাটাতে তাঁরা বেশী পছন্দ করেন। তাঁদের মন অতি কোমল। তাঁর প্রতি অশ্লীল সন্দেহ পোষণ করেন এটা যদি সে ঘুনাক্ষরেও টের পায় তাহলে সর্বনাশ। তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুন। বেশী বেশী সময় দিন। মনে দাগ কাটে এমন আচরণ করবেন না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে তাকে স্বাধীনতা দিন। কেউ যদি পাপ করার আশা পোষণ করে, তাকে মানুষের পক্ষে পাহারা দিয়ে থামানো সম্ভব নয়।

নিজে ধর্মের হুকুম আহকাম মেনে চলুন। প্রিয়জনকেও উৎসাহিত করুন ধর্ম পালনে। যারা পাপকর্মে লিপ্ত তাঁদের পরকালের করুণ পরিনতির কথা বার বার বিভিন্ন উপায়ে স্মরণ করিয়ে দিন। সব কাজে তাঁর মতামতকে প্রাধান্য দিন। দূরে থাকলে দিনে একাধিকবার খোঁজ খবর নিন। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তাঁর সাথে শেয়ার করুন। তাঁর থেকে অভিনয় করে হলেও বুদ্ধি নেবার চেষ্টা করুন।

দেখবেন তাঁর জগতে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আপনি যখন তাঁর থেকে দূরে সরে যান তখনই সে মলিন মুখে অন্যের পানে তাকায় মনের কষ্ট গুলোকে শেয়ার করার জন্য। বাড়তে থাকে দূরত্ব। আপনি নিজের চোখের যেমন যত্ন নেন, একটা ধূলি কণার আঘাতও লাগতে দেন না, প্রিয় জনের ঠিক তেমন যত্ন নিন। শান্তিময় জীবন যাপন করুন। হাসি খুশীর মাঝে বেড়ে ওঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পৃথিবীকে উপহার দিন।

10 thoughts on “সন্দেহের সংসার

  1. খুবই সত্য কথা বলেছেন মি. নূর ইমাম শেখ বাবু। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী হলে আমিও মনে করি "সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে তাকে স্বাধীনতা দেয়া উচিত। কেউ যদি পাপ করার আশা পোষণ করে, তাকে মানুষের পক্ষে পাহারা দিয়ে থামানো সম্ভব নয়।

    নিজে ধর্মের হুকুম আহকাম মেনে চলুন। প্রিয়জনকেও উৎসাহিত করুন ধর্ম পালনে। যারা পাপকর্মে লিপ্ত তাঁদের পরকালের করুণ পরিনতির কথা বার বার বিভিন্ন উপায়ে স্মরণ করিয়ে দিন। সব কাজে তাঁর মতামতকে প্রাধান্য দিন।" এটাই সঠিক পন্থা। ধন্যবাদ।

    1. সব সময় আপনার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আসছি। ভালোবাসা জানবেন প্রিয়।

    1. একদম তাই। ভালো থাকুন।

  2. ইন্টারনেটে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে তোলাটাকে আপনি যদি সহজভাবে না নিতে পারেন তবে অবশ্যই আপনি তাকে পর্যাপ্ত সময় দিবেন। আর তা যদি না পারেন তাঁর সময় কাটানোর জন্য বন্ধুদের সাথে অনলাইনে সময় কাটানোটাকে সহজভাবে মেনে নিন। একদম সহজ পথ।

    1. অফুরান শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয়জন

       

  3. পরস্পরের ভাল লাগা আর না লাগা মাথায় রাখলে সংসার সুন্দর হবেই। :) 

    1. ভালো থাকুন প্রিয় দিদি। 

  4. দুজনের সন্দেহের মাত্রা দুজনের প্রতি সমান থাকতে থাকতে সতর্ক থাকাটাই ভালো।

    1. শুভ কামনা আপনার জন্য প্রিয় দাদা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।