মিঁয়া- বিবি v/s ৩য় ব্যক্তি
__________________
বর ঝিনুক আর বৌ-কাছিম অন্য আর পাঁচ জনের মতো বেশতো ছিল। তবে কিছুদিন গড়াতেই গিন্নী যথারীতি কর্তার ওপোর তিতিবিরক্ত হয়ে উঠলো। লাটসাহেব দিবারাত্রি সমুদ্রতীরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে রোদ পোয়াবেন, আর হুকুৃম চালাবেন। আজই যেমন সাতসকালে :
– ওগো, খুব তেষ্টা পেয়েছে। শিগগিরি আমার সুমুখে কুয়ো খুঁড়ে দাও দিকিনি…
বৌয়ের বরফ-ঠাণ্ডা চোখ।– আমার যটা হাত, তোমারও তো তটাই…
– কার কটা হাত, আমার সে হিসেবে কাজ নেই। যা বলছি, করো। এমন ছোটোলোকের ঘরের মেয়ে, যে স্বামীকে তেষ্টার জলও একটু দেবে না……
কাছিম কাজ ফেলে একলাফে বরের সামনে, ঝাঁঝের সঙ্গে হাত নাড়িয়ে বললো,
– এইতো দুটো হাত।সকাল থেকে জ্বালানির কাঠ কেটেছি, এখন উনুন গড়ছি, আবার এই দুটো হাতেই তো গুষ্টির পিণ্ডি পাকাতে হবে। বাড়তি হাত কোথায় যে তোমার কুয়ো খোঁড়ার কাজে লাগাবো?
মেয়েছেলের মুখে কিনা এতো- এতো কথা!
ঝিনুক তড়াক্ করে একলাফে বৌয়ের ঘাড় চেপে ধরে দমাদ্দম পেটাতে লাগলো। বেশটি করে হাতের সুখ করে মনের ঝাল মিটিয়ে সোনামুখ করে জিজ্ঞেস করলো,
– আমার হাতের এই নিপুণ ব্যবহার কেমন লাগলো, সুইটি?
মিন্টিনটা, মানে কাছিম – বৌ, সিম্পলি দুহাতে ঝিনুককে তুলে মাথাটা বালিতে গুঁজে দিল। ব্যস, লেগে গেল দুতরফের ঝটাপটি – ঝটাপটির সঙ্গে ইনোভেটিভ গালাগালির তুমুল ছররা। আক্ষরিক জগঝম্প।
‘আকামা’ নামের এক বিশালদেহী তিমি সে মূহুর্তে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে প্রাতঃভ্রমণ সারছিলেন। ওদের কাণ্ড দেখে বুঝলেন যে এক্ষুনি দুজনকে ছাড়িয়ে না দিলে কেউ না কেউ প্রাণে মারা পড়বেই। বিবেচনা মতো আকামা দুজনকে দুহাতে ধরে পরস্পরের উল্টোদিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো, — খুব হয়েছে বাপু তোমাদের ঘরকন্না করা! জঙ্গলের পশুদের মতো বিহেব করছো। আর তোমাদের একসঙ্গে থেকে কাজ নেই। আজ থেকে ভদ্রভাবে যে যার মতো আলাদাভাবে বাঁচো।…
তৎক্ষনাৎ, আকামা তখনো পিছু ফিরতে সময় পায়নি, মিন্টিনটা ত্বরিতে তোড়ে তেড়ে এসে আঁচড়ে- কামড়ে রক্তাক্ত করে দিল তাকে, ওদিকে স্বামী ঝিনুক ও কোথা থেকে একটা লাঠি কুড়িয়ে এনে দমাদ্দম পেটাতে লাগলো তিমিকে।
তিমিতো হতবাক,—ওমা! আমি তো তোমাদের শুধু সাহায্য করতে চেয়েছি। অথচ তোমরা কিনা…….
স্বামী-স্ত্রী একযোগে খিঁচিয়ে উঠলো,
– সত্যি যদি সাহায্য করতেই চাও, তো পত্রপাঠ বিদেয় হও এখান থেকে। আর জীবনে কখনো কোন দাম্পত্য কলহে নাক গলাবে না।…
তড়িঘড়ি তিমি পালিয়ে বাঁচলো
সেই থেকে জীবনে আর কখনো বিশালদেহী তিমি সমুদ্রতীর ঘেঁষা অল্প জলের ধারেকাছেও আসেনা। নিজের রাজ্য, গভীর সমুদ্রে থেকেই নিজের চরকায় তেল দেয়।
আর আবহমান কাল ব্যাপী কাছিম দিবারাত্রি বালি খুঁড়ে গর্ত করেই চলেছে শুধুমাত্র নিজের ডিমগুলিকে সুরক্ষিত রাখার আকুলতায়। ঝিনুককে জল খাওয়াতে তার বয়েই গেছে।
A.W. Reed এর Aboriginal Myths, Legends & Fables থেকে অনুদিত।
___________________________________
শিক্ষণীয় লিখাটি অসাধারণ অনুবাদ হয়েছে বন্ধু। গুড।
ধন্যবাদ জানাই ।
পড়তে বেশ লেগেছে দিদি ভাই। নমষ্কার।
জেনে ভাল লাগলো রিয়া।
খুব ভালো লাগলো, গঠনমূলক লেখা।
ধন্যবাদ বন্ধু ।