টুকরো মুহুর্ত

আমাদের বাড়ির পাশেই একটা মাঠ আছে। আমার মেয়েবেলায় দাপিয়ে বেড়িয়েছি সেই মাঠে। ঘুড়ি ওড়ানো, কানামাছি, ডাংগুলি, গুলি, ক্রিকেট, ফুটবল আরও কত খেলার সাথী সেই মাঠ। খেলার সময় ছিলো বিকেল সাড়ে চারটে থেকে ছটা পর্যন্ত। তারপর মায়ের এক ডাকেই বাড়ি ফিরতে হতো। সাড়ে ছটায় পড়তে বসা সাড়ে নটা পর্যন্ত। তারপর খেয়ে জেঠুর জন্য অপেক্ষা। আমাদের সব ভাই বোনদের গল্প শোনাবে। খুব ভালো গল্প বলে জেঠু। সব স্বরচিত গল্প। মুখে মুখেই। আর আমি চোখের সামনে ঘটতে দেখতাম সেই গল্প।

একদিন বাড়ির পেয়ারা গাছে উঠে পেয়ারা চুরি করছি বন্ধুদের জন্য। কারন ঠাম্মা বন্ধুদের বাড়িতে ঢুকতে দিতো না। জিনিস ভাংচুর করবে বলে। সব তো লক্ষীছানার দল তাই। এমন সময় দাদুর বন্ধুরা একে একে বাড়িতে আসছেন। কারন চারটের সময় দাদুর বন্ধুরা আসতেন রোজ। আমি মহা বিপদে পরলাম। কি করে নামবো গাছ থেকে কেউ দেখে নিলে মাকে বলে দেবে।

ঠিক সেই সময় রক্ষাকর্তার মতো আবির্ভাব হলেন আমার আর এক দাদু। তিনি মাটির জিনিস বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আমি বলতাম মাটি দাদু। খুব ভালোবাসতেন আমাকে। তিনিই নামালেন গাছ থেকে। বললেন বড়িবিটি চল তোমার জন্য খেলনা বানিয়েছি। বললাম দাঁড়াও দাদু আমি ওদের পেয়ারাগুলো দিয়ে আসি। আর তোমার তো দাঁত নেই তুমি দুটো জামরুল খাও আমি পেরেছি আমাদের গাছ থেকে।

মাটি দাদু থাকতেন মাঠের শেষ প্রান্তে একটা ছোটো ঘরে। টালির ঘরে। আমার খুব ভালো লাগতো খুব শান্তি ছিলো সেই ঘরে। আমাকে দিলেন মাটির বানানো খেলনা। হাড়ি, কড়াই, উনুন, এমনকি শিল নোড়া পর্যন্ত। কি সুন্দর দেখতে, কত সুন্দর ডিজাইন করা। খুব পছন্দ হলো আমার আনন্দে লাফাতে লাফাতে বাড়ি এলাম সবাইকে দেখালাম। সবার পছন্দ হল খুব।

বাসন্তি মাসি বললো “তোমার ঘর কোথায় যে সংসার পাতবে”। বাসন্তি মাসি টুকটাক কাজ করতো বাড়ির। ভাবলাম তাইতো! আমার ঘর কোথায়! পরেরদিন আবার গেলাম মাটি দাদুর ঘরে খুব বায়না ধরলাম দাদীর কাছে বললাম আমায় খেলনা দিলে আর একটা ঘর দিতে পারলে না! একটা মাটির ঘর বানিয়ে দাও, বাসন্তি মাসি বলেছে, ঘর না হলে সংসার হয় না। দাদী হেসে বললেন আচ্ছা আমি তোমার দাদুকে তোমাদের বাড়ি পাঠাচ্ছি বাড়ি ফিরুক। এখন ছটা বাজে বাড়ি গিয়ে পড়তে বস।

দাদুর ঘরে আওয়াজ পেলাম মাটি দাদুর। দৌড়ে নামলাম নীচে। দেখলাম দাদুর সাথে কিসব কথা বলেছে। আমাকে দেখে বললেন কি হল জরুরি ডাক কেন? আমি রেগে বললাম আমায় ঘর বানিয়ে দাও। আমি সংসার করব। মাটি দাদু হেসে বললেন, সংসার কি জিনিস বড়ি বিটি? উত্তরে বললাম আমি কি জানি, বাসন্তি মাসি বলেছে। দাদু বললেন আলি এইবার তোমার নিস্তার নেই, যেমন খেলনা দিয়েছ এখন ঘর দাও। মাটি দাদু বললেন আচ্ছা পরশু ঘর হয়ে যাবে কিন্তু এর মধ্যে বাড়ির পেছনের বাগানে যাবে না। বললাম জো হুকুম মেরে আকা দাদু।ঘর হয়ে গেলো পাতার ঘর। কিযে পছন্দ হয়েছিলো আমার সেই ঘর। সেই ঘরেই রান্নাবাটি খেলতাম। কিন্তু কদিন? আমার কি বসে বসে এইসব রান্নাবান্না পোষায়? রান্নাঘরের দ্বায়িত্ব অন্যবন্ধুদের হাতে দিয়ে চললাম আবার মাঠে।

9 thoughts on “টুকরো মুহুর্ত

  1. জীবনের টুকরো মুহুর্ত। অসাধারণ প্রিয় কবিবন্ধু রিয়া রিয়া। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. আমাদের বর্ণিল ছোটবেলা। ছোটবেলায় আমরা ঘর বানাতাম লতাপাতা, গাছের ডাল দিয়ে। সেই ঘরে বসা যেত দাঁড়ানো যেত না। আমার খুব চেষ্টা ছিল একটা ঘর বানানো যেখানে দাঁড়ানো যায়। আপনার লেখা পড়ে সেইসব দিন খুব মনে পড়ে গেল। অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা প্রিয় রিয়া আপু।

  3. আপনাদের মেয়েবেলায় আপনারা ঘর পড়তেন, আর আমার ছেলেবেলায় খুজে খুজে মেয়েদের ঘর ভাঙতাম। কে জানতো সেেই ছলেবেলা আর মেয়েবেলা সারাবেলা হয়ে উঠবে!!

  4. ঘুড়ি ওড়ানো, কানামাছি, ডাংগুলি, গুলি, ক্রিকেট, ফুটবল আরও কত খেলার সাথী সেই মাঠ। খেলার সময় ছিলো বিকেল সাড়ে চারটে থেকে ছটা পর্যন্ত।’

    অতুল স্মৃতি গাঁথা। দাদু ভালো থেকো দোয়া র’লো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।