পটশিল্পের ইতিহাস (প্রথম)

পটশিল্পের ইতিহাস (প্রথম)

পট কথাটির অর্থ কাপড়, এটি সংস্কৃত পট্ট শব্দ থেকে এসেছে। পট চিত্র কাপড়ের টুকরোর ওপরে আঁকা হয়। পট চিত্রের প্রাচীনত্ব জানতে গেলে পৌঁছতে হবে সেই বুদ্ধ দেবের সময়ে, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকে। যে সময়ে বুদ্ধদেব স্বয়ং ‘চরণচিত্রের’ প্রশংসা করেছিলেন যা ছিল পট চিত্রের উত্তরসূরি। এই চরণচিত্রে একটি ছবির নীচে আর একটি ছবি আঁকা হয়। বুদ্ধদেবের সমসাময়িক আজীবক ধর্মমতের প্রবর্তক গোসাল ছিলেন এক চিত্রকরের ছেলে। তিনি নিজে সন্ন্যাস গ্রহণের আগে তাঁর বাবার মতোই ছবি দেখিয়ে বেড়াতেন। বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যে যেমন, পাণিনি, পতঞ্জলির গ্রন্থেও তেমন এক শ্রেনীর চিত্রকরের উল্লেখ আছে যারা গান গাইতে গাইতে ছবি দেখিয়ে পথিকদের মনোরঞ্জন করতেন। বাণ তাঁর ‘হর্ষচরিত’এ বর্ণনা করেছেন যে হর্ষবর্ধন থানেশ্বর নগরীতে ঢোকার মুখে এমন এক পট্টিকার কে দেখেন যিনি এক হাতে ঝোলানো পট খুলে খুলে গান গেয়ে ‘ যমপট’ দেখাচ্ছিলেন। ঠিক এইভাবে পরবর্তীতে বাংলার পট চিত্রেও দেখা যায় ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত একই ভাবে কাহিনীর ঘটনা গুলো পরস্পর আঁকা হয়েছে। বাংলার পটুয়ারা ঠিক এই ভাবেই যুগ যুগ ধরে বাংলার গ্রামে গঞ্জে ‘যমপট’ ও আরও নানান পট দেখিয়ে বেড়াতেন।

আগে পট চিত্র আঁকা হোতো কাপড়ের ওপরে খড়িমাটির জমি তৈরি করে। পরে জমির বদলে কাগজ আটকে। পট দু’রকম ১. আয়তকার অর্থাৎ ‘চৌকস পট’ এবং ২. দুহাত চওড়া ও বারো থেকে পঁচিশ হাত লম্বা ‘জড়ানো পট’। প্রাচীন কালে এই ‘জড়ানো পট’ অর্থাৎ কাঠের দণ্ডে গোটানো পট চিত্রই ‘যমপট’ নামে পরিচিত হয়ে আসছে। পটুয়া অর্থাৎ যারা পট চিত্র তৈরি করেন, তারা এই রকম পট দেখিয়েই গান গেয়ে লোক শিক্ষা ও মনোরঞ্জন করতেন। সেই দিক থেকে দেখলে পটুয়ারা যে শুধু চিত্রকর ছিলেন তা নয়, একাধারে তারা ছিলেন কবি- গীতিকার এবং সুরকার ও বটে। ধর্মমত ও নীতিজ্ঞানে তারা যে কতখানি সমৃদ্ধ ছিলেন তার পরিচয় তাদের গানেও পাওয়া যায়। সমাজের নিম্ন বর্গের মানুষের শিক্ষা দানের দায়িত্ব তারা সফলতার সাথেই পালন করে গেছেন। রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, মঙ্গলকাব্য, ও চৈতন্য জীবন অবলম্বনে পট এঁকে মানুষের জ্ঞানের দিক আরও প্রসারিত করেছেন।

2 thoughts on “পটশিল্পের ইতিহাস (প্রথম)

  1. ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের এই নিবন্ধটি অসাধারণ। অভিনন্দন প্রিয় কবিবন্ধু রিয়া রিয়া।

  2. ভালো লাগলো শুভকামনা থাকলো

    অনেক সুন্দর, ভালো লাগলো ভালো লাগলো

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।