সকালবেলার আলোয় বাজে বিদায়ব্যথার ভৈরবী
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে দেবী কৈলাস পাড়ি দেন। সেই কারণেই ‘বিজয়া দশমী’ নাম। কিন্তু এই দশমীকে ‘বিজয়া’ বলা হয় কেন? তার পৌরাণিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে একাধিক কাহিনি সামনে আসে।
দুর্গা পূজার অন্ত চিহ্নিত হয় বিজয়া দশমীর মাধ্যমে। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই দিনেই পিতৃ-আবাস ছেড়ে দেবী পাড়ি দেন স্বামীগৃহ কৈলাসের দিকে। এই দিনেই তাই দেবীর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই দিনটিকে ‘বিজয়া দশমী’ বলা হয় কেন? কোন ‘বিজয়’-কেই বা চিহ্নিত করে দিনটি?
পুরাণে মহিষাসুর-বধ সংক্রান্ত কাহিনিতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পরে দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেন দেবী। শ্রীশ্রীচণ্ডীর কাহিনি অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী আবির্ভূতা হন, এবং শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর-বধ করেন। বিজয়া দশমী সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে।
উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই দিনে দশেরা উদযাপিত হয়, ‘দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ‘দশহর’ থেকে, যা দশানন রাবণের মৃত্যুকে সূচিত করে। বাল্মীকি রামায়ণে কথিত আছে যে, আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই রাবণ-বধ করেছিলেন রাম। কালিদাসের রঘুবংশ, তুলসীদাসের রামচরিতমানস, কিংবা কেশবদাসের রামচন্দ্রিকা-য় এই সূত্রের সঙ্গে সংযোগ রেখেই বলা হয়েছে, রাবণ-বধের পরে আশ্বিন মাসের ৩০ তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ। রাবণ-বধ ও রামচন্দ্রের এই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষেই যথাক্রমে দশেরা ও দীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে। আবার মহাভারতে কথিত হয়েছে, দ্বাদশ বৎসর অজ্ঞাতবাসের শেষে আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমীতেই পাণ্ডবরা শমীবৃক্ষে লুক্কায়িত তাঁদের অস্ত্র পুনরুদ্ধার করেন এবং ছদ্মবেশ-মুক্ত হয়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ঘোষণা করেন। এই উল্লেখও বিজয়া দশমীর তাৎপর্য বৃদ্ধি করে।
যাইহোক, তিথি অনুযায়ী দশমী হলেও। বাড়ির প্রতিমা, মন্দিরের প্রতিমা একটাও বিসর্জন হয় নি এখনও। ঢাক তো বলেই দিচ্ছে আজ “ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন।” আবার তো সেই এক বছরের অপেক্ষা।
যারা এখনই “শুভ বিজয়া” পাঠিয়েছেন তাদের বলি, একটু সবুর করুন বন্ধুরা, আমার বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন না হওয়া পর্যন্ত আমি কাউকেই “শুভ বিজয়া ” জানাতে পারবো না।
বৈকালিক বিশ্রাম শেষে এসে যখন পুনরায় পিসির সামনে বসবো ততোক্ষণে সম্ভবত আপনার বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন হবার সম্ভাবনাই বেশী। অতএব শুভ বিজয়া।
এখন বলা যেতে পারে শুভ বিজয়া প্রিয় বন্ধু।

‘ওঁ দেবি ত্বং জগতাং মাতঃ স্বস্থানং গচ্ছ পূজিতে।
সংবত্সর ব্যতিতে তু পুনরাগমনায় চঃ \’
অর্থাত্, হে দেবী, জগজ্জননী, পূজিতা হয়ে তুমি নিজ স্থানে গমন কর এবং এক বছর পরে আবার তুমি অবশ্য আসবে।
মা আবার আসবে নিতাই দা। শুভ বিজয়া।
শুভ বিজয়া।
শুভ বিজয়া।
আগামী এক বছর ভালো যাক এই হোক আরাধ্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অটুট থাক।
শুভ বিজয়া । প্রণাম দি'ভাই