আজ থেকে ৯৭১ বছর আগে সুদূর ইরানে জন্ম নিয়েছিলেন বিখ্যাত গণিতবিদ ও কবি ওমর খৈয়াম। আজ গুগল নিজস্ব ডুডল দিয়ে বিখ্যাত ফার্সি গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং কবি ওমর খৈয়ামের ৯৭১ তম জন্মদিন উদযাপন করছে। গণিতবিদ হিসাবে, খৈয়াম ঘনকের সমীকরণ শ্রেণিবদ্ধকরণ ও সমাধান সম্পর্কে তার বিশদ কাজের জন্য পরিচিত। তিনি কণিকের ছেদের জ্যামিতিক সমাধান বের করেছিলেন। তিনি প্রথম ঘন সমীকরণ সমাধান করার জন্য একটি সাধারণ পদ্ধতির ব্যবহার করেন। খৈয়াম সমান্তরাল অক্ষ বিষয়েও কাজ করেছেন। একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসাবে, তিনি জালালি ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করেন একটি খুব সুনির্দিষ্ট ৩৩ বছরের intercalation চক্রের একটি সৌর ক্যালেন্ডার। এটি পরে বেশ কয়েকটি ক্যালেন্ডার তৈরির ভিত্তি হয়ে ওঠে।
ওমর খৈয়ামের জন্ম ১০৪৮ সালের ১৮ মে ইরানের নিশাপুরে। তাঁবু নির্মাণকারীদের (খৈয়াম) একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ওমর। আরবি ভাষায় তাঁর পুরো নাম ছিল আবু’ল ফাত ওমর ইবন ইব্রাহিম আল খৈয়াম। কবিতা ও গদ্যের জন্যও বেশ বিখ্যাত ছিলেন খৈয়াম। তিনি হাজারেরও বেশি রুবাইয়াত বা গদ্য লিখেছেন। ওমর খৈয়ামের ‘রুবাইয়াত’ পরে আর এক বিখ্যাত কবি Edward fitzgerald অনুবাদও করেন, তার মৃত্যুর বহুকাল পরে খৈয়ামের এই লেখা পর পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ওমর খৈয়াম চার লাইনের বিশেষ ধরনের কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়ে অাছেন। তার কবিতাগুচ্ছ রুবাইয়াৎ নামে সমাদৃত হয়েছে। পেত্রার্কের সনেটের মত রুবাইয়াৎ এক বিশেষ ধরনের চতুষ্পদী কবিতা। খৈয়ামের কবিতা গুচ্ছের বিষয়বস্তুু প্রেম, উপভোগ,পরকালের সুখ দু:খের অবিশ্বাস,জাগতিক বিষয়ে উদাসীনতা,মাদকতা প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে। ওমর খৈয়াম ঠিক কতগুলো রুবাই লিখে গেছেন তার সঠিক হিসাব কারো জানা নেই। তাঁর অমর গ্রন্থ রুবাইয়াৎ-ই-খৈয়ামে ৭২২ টি রুবাই পাওয়া গেছে। রুবাই ছাড়াও কবিতা গজল লিখেও তিনি খ্যাতি পান। ঊনিশ শতকে ইংল্যান্ডের কবি Edward fitzgerald ওমর খৈয়ামের কবিতা ইংরেজীতে অনুবাদ করলে পারস্যের বাইরের পাঠকের খৈয়ামকে জানার সুযোগ ঘটে। সেটা সতের শতকের দিকে। ইংরেজী ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় ওমর খৈয়ামের কবিতা অনূদিত, বহুল পঠিত ও সমাদৃতি হয়।জীবনের অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হয়ে ১১২৩ সালে ৭৯ বছর বয়সে বিশ্বখ্যাত কবি ও মহামনীষী ওমর খৈয়াম মারা যান।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে অনুবাদ সাহিত্যের অনন্য এক কারিগর, তিনি সে প্রমাণ রেখেছেন পারস্যের কবি ওমর খৈয়ামের ফারসি ভাষায় লেখা ‘রুবাইয়াৎ-ই-খৈয়াম’ বাংলায় অনুবাদের মধ্য দিয়ে। তিনিই প্রথম বাংলায় এই গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন এবং গ্রন্থটি ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে। সে সময় বইটির চিত্রায়ন করেছিলেন খালেদ চৌধুরী এবং ভূমিকা লিখেছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী।
চলুন কাজী নজরুল ইসলামের অনূদিত ওমর খৈয়ামের কয়েকটি রুবাইয়াৎ পড়ে নেওয়া যাক-
১. আত্মা আমার! খুলতে যদি পারতিস এই অস্থিমাস
মুক্ত পাখায় দেবতা-সম পালিয়ে যেতিস দূর আকাশ।
লজ্জা কি তোর হল না রে, ছেড়ে তোর ওই জ্যোতির্লোক
ভিনদেশি-প্রায় বাস করতে এলি ধরায় এই আবাস?
২. সাকি! আনো আমার হাতে মদ-পেয়ালা, ধরতে দাও!
প্রিয়ার মতন ও মদ-মদির সুরত-ওয়ালি ধরতে দাও!
জ্ঞানী এবং অজ্ঞানীরে বেঁধে যা দেয় গাঁট-ছড়ায়,
সেই শরাবের শিকল, সাকি, আমায় খালি পরতে দাও।
৩. ছেড়ে দে তুই নীরস বাজে দর্শন আর শাস্ত্রপাঠ,
তার চেয়ে তুই দর্শন কর প্রিয়ার বিনোদ বেণির ঠাট;
ওই সোরাহির হৃদয়-রুধির নিষ্কাশিয়া পাত্রে ঢাল,
কে জানে তোর রুধির পিয়ে কখন মৃত্যু হয় লোপাট।
৪. আমরা দাবার খেলার ঘুঁটি, নাইরে এতে সন্দ নাই!
আসমানী সেই রাজ-দাবাড়ে চালায় যেমন চলছি তাই?
এই জীবনের দাবার ছকে সামনে পিছে ছুটছি সব
খেলা শেষে তুলে মোদের রাখবে মৃত্যু-বাক্সে ভাই!
অমর গ্রন্থ রুবাইয়াৎ-ই-খৈয়াম পড়েছি। ইতিহাস শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ রিয়া।
পাঠের অভিনন্দন প্রিয় বন্ধু। শুভেচ্ছা।
সমৃদ্ধ হলাম কবি রিয়া রিয়া। মহামনীষী ওমর খৈয়াম এর বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান।
ধন্যবাদ কবি সুমন আহমেদ।
খুব পছন্দের একজন ব্যাক্তি সম্পর্কে লিখেছেন
ধন্যবাদ কবি দা।
এইখানে এই তরুর তলে
তোমার আমার কৌতুহলে,
যে ক’টি দিন কাটিয়ে যাবো প্রিয়ে-
সঙ্গে রবে সুরার পাত্র
অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেকখানি ছন্দ মধুর কাব্য হাতে নিয়ে!
আপনার জন্য শুভকামনা কবি।

খৈয়াম রচনা আমার কাছে ভালোই লাগতো একসময়। এখনও সময় পেলে পড়ি।
ধন্যবাদ প্রিয় কবি দি। সময় আমার কম হলেও আমিও নেড়েচেড়ে দেখি।
ধন্যবাদ রিয়া অন্তত ওমর খৈয়ামের উপর এই অসাধারণ লেখাটার জন্য । ওমর খৈয়াম আমার প্রিয় কবিদের একজন ।
শুভেচ্ছা কবি দিদি ভাই।
বেশ লাগলো। শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ প্রিয় অর্ক দা।