সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচণ্ডদ্রোহী এক মহান ব্যক্তিত্ব রাজা রামমোহন রায়……
জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বাংলার নবযুগের প্রথম ও প্রধান নায়ক কীর্তিমান পুরুষ রাজা রামমোহন রায়। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম আধুনিক অগ্রদৃষ্টিমান চিন্তানায়ক ও কর্মনেতা ও ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় ও শিক্ষাক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল। ১৮৩০ সালে খেতাবসর্বস্ব মুঘল সম্রাট রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
রামমোহন রায় ১৭৭২ খ্রিস্ট্রাব্দের ২২ মে মাসে হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত কুলীন (বন্দোপাধ্যায়) ব্রাক্ষ্মণবংশে জন্মগ্রহণ করেন। রামমোহন খুবই মেধাবী ছিলেন। তিনি সংস্কৃত, আরবী, উর্দু, ফারসী ও ইংরেজি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। এ ছাড়া হিব্রু, গ্রিক ও সিরীয় প্রভৃতি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। ইসলাম, খ্রিষ্ট ও বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি হিন্দুধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করেন এবং ইসলাম ধর্মতত্ত্ব ও আইনশাস্ত্রে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন। প্রথম যৌবনেই তিনি অ্যারিস্টটলের যুক্তিবিদ্যা এবং ইউক্লিডের মূলনীতিগুলো পাঠ করেন। এ গ্রন্থাবলি অধ্যয়নের ফলে তাঁর ভেতরে যুক্তিবাদিতা ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম হয়। এ সময়ই তিনি ইসলাম ও হিন্দুধর্মের মধ্যে তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করতে আরম্ভ করেন। পারস্যের সুফি মরমিয়া কবিদের কাব্য পাঠও তাঁর মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। যৌবনের প্রারম্ভে নানা গ্রন্থ ও শাস্ত্র অধ্যয়নের ফলে রামমোহন রায় মূর্তি পুজার ব্যাপারে বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। এবং তাঁর বিপ্লবী চিন্তার ফসল হিন্দুধর্ম সংস্কার আন্দোলন। তিনি প্রতিমা পূজা বর্জন করেন এবং বিশ্বাস করতেন এক সর্বজনীন ঈশ্বরপূজায়। তিনি ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্ম সভা, যা পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্ম সমাজ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই ব্রাহ্ম সমাজকে হিন্দুধর্মের নতুন শাখা হিসেবে অভিহিত করা যায়।
স্বামী বিবেকানন্দ এর দৃষ্টিতে রামমোহনের তিনটি দান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়। “His acceptance of Vedanta, his preaching of patriotism and the love that embraced the Muslanmans equally with the Hindus”.
এবং স্বামীজী তাঁকে “the first man of new generation” নামে ভূষিত করেছেন।
রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ। সনাতন হিন্দুধর্মে প্রচলিত অমানবিক ও নির্মম সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর আন্দোলনের ফলে ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথার মতো কুপ্রথা সরকার আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেয়।
রামমোহন রায় স্বীয় ধর্মমত ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের জন্য ১৮২১ সালে সংবাদ কৌমুদী নামে একটি বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এ ছাড়া ১৮২২ সালে মিরাত-উল-আখবার নামে ফারসি ভাষায় একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এই দুই পত্রিকায় রামমোহন রায়ের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং বিশ্বাসের সপক্ষের যুক্তিগুলো গদ্য রচনার মাধ্যমে প্রকাশিত হতো।
১৮২৩ সালে গভর্নর জেনারেল জন এডাম ভারতীয় প্রেসের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন, তখন রামমোহন রায় বন্ধুদের নিয়ে প্রিভি কাউন্সিলে স্নারকলিপি পেশ করে বলিষ্ঠভাবে এর প্রতিবাদ করেন। তিনি বন্ধু দ্বারকানাথ ঠাকুরকে নিয়ে ১৮২৬ সালে ভারতীয় জুরি আইনের কতিপয় বৈষম্যমূলক ধারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থবিরোধী সরকারি রাজস্বনীতির বিরুদ্ধে তিনি বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিংয়ের কাছে ১৮২৯ সালে প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেন। বলা যায়, রাজা রামমোহন রায়ের সমসাময়িককালে কলকাতায় সংঘটিত এমন কোনো সামাজিক আন্দোলন পাওয়া যাবে না, যাতে তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেননি। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন।
রাজা রামমোহন রায় ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর পর সেখানকার ইংরেজ সমাজ তাঁকে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করে। ১৮৩২ সালে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে যান। ১৮৩৩ সালে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল নগরীতে ভ্রমণকালে তিনি অসুস্থ হন।ব্রিস্টলেই তাঁর চিকিৎসা চলে। বিলেতি প্রাজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে বাংলার নবযুগের নায়ক রাজা রামমোহন রায় ১৮৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলার নবযুগের প্রথম ও প্রধান নায়ক কীর্তিমান পুরুষ রাজা রামমোহন রায়। শ্রদ্ধা জানাই।
পাঠে খুশি হলাম কবি দি শাকিলা তুবা।
রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ। সনাতন হিন্দুধর্মে প্রচলিত অমানবিক ও নির্মম সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। খুব বেশী জানা ছিলোনা তাঁর ব্যাপারে। যতটুকু যা সেটা পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে। আপনার সংক্ষিপ্ত পোস্টে জ্ঞানে যুক্ত হলো আরও তথ্য। ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা কবি সুমন আহমেদ।
আপনার এই লেখাগুলোর মাঝে হাইস্কুলের কথা মনে পরে
অনেক শুভেচ্ছা নিবেন দিদি
হাই স্কুলের কথা !! ভালই বলেছেন কবি বাবু।
রাজা রামমোহন রায় এর জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আপনাকেও ধন্যবাদ দি'ভাই
ধন্যবাদ কবি জাহিদ দা। সমস্বরে বলি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচণ্ডদ্রোহী এক মহান ব্যক্তিত্ব রাজা রামমোহন রায়।
জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অনেক কিছু জানলাম অজানা ছিলো … অসংখ্য ধন্যবাদ আপা।
ধন্যবাদ দাদা।
অনেককিছু জানা হলো শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি।
খুশি হলাম নিতাই দা।
তথ্যবহুল দামি লেখা। সাধুবাদ জানাই দিদি।
কীর্তিমান পুরুষ রাজা রামমোহন রায় এর জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি !
শুভেচ্ছা প্রিয় মিড দা।