নাট্যমঞ্চ


কলাম করা একটি চারা গাছ এনেছিলাম। সময়টা শুধুই মনের দাবি। কখন, কোনদিন, কোন বার, কোন সময়ে? আকাশে কালমেঘ যখন স্বচ্ছ আকাশটাকে আধা জ্বলন্ত চুল্লির ধোয়ায় চোখে জল নিয়ে আসে ঠিক তেমনি। চোখের জল ছাড়া কিছুই বলতে পারি না। মনেও পড়ে না। শুধু বেদনার জল, স্মৃতির ছলছলানির কথাই স্মরণ হয়।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কলামের চারা থেকে ফল আহরন করবো না। যেদিন পরিপক্কতা পাবে কিংবা যেদিন ফল দিয়ে সে তৃপ্ত হবে সেইদিন নেব। চারা গাছে একদিন মুকুল এলো এর পর ফলের পথে পথ চলতে শুরু করলো। একদিন ফল পরিপক্কতার রূপ ধারন করলো। লোভ সামলানোটা কষ্টের রুপে বেদনা হয়ে উপস্থিত হলো। সকল বেদনার অবসান ঘটিয়ে মনকে সান্ত্বনা দিয়েই অপেক্ষায় রাখেছি।
ফলের ঘ্রাণে চারদিক মৌ মৌ সুগন্ধি। গাছের নিকট যাই আর ফলের পানে চোখ মেলে তাকাই। মাঝে মাঝে হাত বুলিয়ে দেই। একদিন ভাবতে থাকলাম। ফল পূর্ণতা পেয়ে গাছের নিচে পড়ুক। কলামের চারা নয় নাড়ীর চারা নিয়ে অন্য কোথাও বপন করবো।

দিন গেলো মাস গেলো। চারা গাছের নীচে চারার চারা দেখতে পেলাম। কি সতেজ চারা গাছের পাতা, কাণ্ড। খুব মায়া হলো মাটির বুক চিরে কিভাবে চারাটি অন্য স্থানে স্থানান্তর করি। দিনে দিনে মায়া বেড়েই চললো। আর হলো না চারা গাছটি উত্তোলন করে অন্যত্র বপন করা।

দিন,মাস, বছর পেরিয়ে চারা আর চারা নেই যৌবনের জোয়ারে ভাসছে। যার নিকট থেকে তার বেরিয়ে আসা আজ সে তার থেকেও অনেক অনেক বড় হতে চলেছে। কলামের সেই গাছটি আজ চারা গাছের আড়ালে খাবারের অভাবে শুকিয়ে গেছে। কোন মায়া মমতাই নেই। হায়রে চারা বৃক্ষ, যেখান থেকে তোর আসা সেই রাস্তাকে এভাবেই তিলেতিলে ধবংস করে দিলি।

একদিন কলামের গাছটির পাতা,মূল,কাণ্ড টলতে শুরু করেছে। অবহেলা অযত্নে আর কতদিন। খাবারের অভাবে আজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এতো গুলো ফল জন্ম দিয়েও আজ সে খাবারের অভাবে ঠিক ফাঁস দেয়া মানুষের মতো শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। সেদিন রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে কি লাভ হলো। যেই রক্ষক আজ তাকেই ভোগ করে নিলো।

সৃষ্টির সৃষ্টতা সত্যই বড় অদ্ভুদ। একদিন সেও হয়তো এভাবেই কারো না কারো ভোগের সামগ্রী হয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানাবে। আসলে ভবিষ্যত নিয়ে কেউ ভাবে না। বর্তমানকেই স্বর্গ ভেবে ভুলে যায় সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টি মাঝেই যে ধবংস সে কথা ভুলে যায় ক্ষণিকের আহলাদে, স্বার্থে। সত্য এটাই চলে যেতে হবে সবার। জীবনটা নাট্যমঞ্চের চেয়েও কঠিন নাট্যঙ্গায়ন।

“জন্মিলে মরিতে হবে রে, জানে তো সবাই
তবু মরণে মরণে অনেক
ফারাক আছে ভাই রে, সব মরণ নয় সমান।।”— প্রতুল মুখোপাধ্যায়

আমিনুল ইসলাম রুদ্র সম্পর্কে

মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, জন্ম : ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮১। ডাক নাম রুদ্র আমিন (Rudra Amin)। একজন বাংলাদেশ কবি, লেখক ও সাংবাদিক। নক্ষত্র আয়োজিত সৃজনশীল প্রতিযোগিতা-২০১৬ কবিতা বিভাগে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। জন্ম ও শিক্ষাজীবন মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ফুলহারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ আব্দুল হাই ও মাতা আমেনা বেগম। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে খাগড়াছড়ি এবং বগুড়া সদর উপজেলায়। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন মূল পেশা থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন এর ষ্টাফ রিপোর্টার ও অনলাইন নিউজপোর্টাল নববার্তা.কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উইকিপিডিয়াকে ভালোবেসে উইকিপিডিয়ায় অবদানকারী হিসেবে উইকিপিডিয়া অধ্যয়নরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : যোগসূত্রের যন্ত্রণা (২০১৫); আমি ও আমার কবিতা (২০১৬); বিমূর্ত ভালোবাসা (২০১৮); অধরা- সিরিজ কবিতা (২০২০) প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : আবিরের লালজামা (২০১৭)। আমার সকল লেখা পড়তে ভিজিট করুন : রুদ্র আমিন

1 thought on “নাট্যমঞ্চ

  1. শুধু কবিতার চাদরে আবৃত করে নয়;
    গদ্য লিখায়ও যে আপনি সাবলীল … এই লিখাটি তারই স্বাক্ষ্য বহন করে। অসাধারণ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।