অবয়ব (পর্ব-৪)

অবয়ব (পর্ব-৪)

সাব্বির নামের একছেলে আমার মতো বন্ধুদের তাড়নায় পড়ে অন্ধগলির বাসিন্দা হয়ে যায়, দলবেঁধে একসাথে কয়েকজন বন্ধু তাকে নিয়ে হোটেল আমারি-তে হাজির হয়, এক এক জনের জন্য এক একটি কামড়া ভাড়া করে, ঐ বন্ধুর দল সাব্বিরের জন্য ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া স্মার্ট এবং রূপবতী এক পরিকে হোটেলে নিয়ে আসে, সে নাকি পড়ালেখার ফাঁকে বাড়তি উপার্জন করে, আধুনিক সমাজের সাথে তাল মেলাতে তার সহপাঠি অনেকেই এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। মেয়েটির নাম জুই বলেছিলো তার বান্ধবী, তার বান্ধবী লতার মাধ্যমেই তার সাথে যোগাযোগ, অবশ্য লতাদের চেয়ে তার রেট বেশ চড়া এবং কাটসাট কথাবার্তা, সাব্বির যেন পাগল হয়ে যায় দ্যাখা মাত্র এজন্যই তার বন্ধুরা বেশি টাকা খরচ করে তাকে নির্বাচন করেছে। সবাই তো আর এমন উঁচু তলার নামিদামি হোটেলে আসতে পারে না।

যাই হোক, সাব্বিরকে তার কামড়ায় দিয়ে বন্ধুরা যার যার কামড়ায় চলে যায়, জুইকে আগেই তার কামড়ায় দেয়া হয়েছিল, কামড়াটা জুঁইয়ের আগে থেকে পছন্দের, এজন্য সাব্বিরকে শুধ তার রুম নাম্বার বলে দেয়া, অবশ্য তার পাশের রুমেই সবার অবস্থান ছিলো। সাব্বির নিজ কামড়ায় ঢুকে হতবাক হয়ে যায়, এতো সুন্দর একটা রুম, উত্তর এবং দক্ষিণের জানালার পাশে বাহারি কৃত্রিম গাছ, দক্ষিণ দিকটায় দাঁড়িয়ে বাহিরে প্রকৃতি দেখছে কোনো এক সুন্দরী, পেছন থেকে তার কেশের ঢেউ দেখে সাব্বির অভিভূত, মনে মনে ভাবছে এমন কেশী মেয়ে যদি আমার জীবন সঙ্গীনি হতো তাহলে সত্যি ধন্য হতাম।

সাব্বিরের প্রবেশ বুঝতে পেরে জানালার পর্দা টেনে বিছানায় এসে বসে পড়লো জুই, চুল দেখে যেমন অভিভূত হয়েছে ঠিক তার সম্মুখ দেখেও হতবাক সাব্বির, শক খাওয়ার মতোই মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ উচ্চ শব্দে সাব্বিরের ধ্যান ভেঙে গেলো, এবার তার হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে, আর সে অবাক এতো সুন্দর একজন মেয়ে নিজেকে এভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছে দিনের পর দিন, মেয়েটির পরিচয় জানতে চাইলে তার প্রত্যুত্তর শুনে সাব্বির তো পাগল বনে যাওয়ার অবস্থা।

আচ্ছা আমার পরিচয় নিয়ে আপনার কি উপকার হবে, আমার পরিচয় দেয়ার সময় নেই, আমার পরিচয় এই বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলতে পারবো না, ঠিক অতীতও না, আমার সময়ের অনেক মূল্য, যে জন্য আমাকে এখানে আনা হয়েছে সেই কাজ শেষ করে আমাকে বিদায় দিলে উপকার হয়, অযথা কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই, তিন ঘন্টার জন্য আমাকে কেনা হয়েছে, সময় শেষ হওয়া মাত্র আমি আপনাকে চিনতে পারবো না, পরে যে উত্তেজিত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করবেন সেটার কোনো সুযোগ নেই, এখানের সবাই আমাকে চেনেন এবং জানেন, বরং আপনাকে কেউ চেনেন না, অতএব সময় নষ্ট করে নিজের ক্ষতি চাইবেন না, বলেই বুকের উপর থেকে ওড়নাটা সরিয়ে বলতে লাগলো…

-আসুন, আপনার যা চাহিদা পূর্ণ করুন,
-যদি বলি আমি আপনার সেই সকল ক্রেতার মতো আমি নই, তবে?
– এমন কথা অনেকেই বলে, অনেক দেখেছি, প্রেমিকা রেখে হোটেলে ফূর্তি করতে, আর প্রেমিকার নিকট গিয়ে হুজুর, যেন ভাজা মাছটা উল্টো খেতে জানেন না,
-শুধু পুরুষকেই এমন দোষারোপ করলেন, নিজের কথা একবার ভাবুন, আমার মতো মনে হয় আপনি ভালো পরিবারের একজন মেয়ে, শুনেছি ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেন, মনে হয় আপনি আপনার এই ব্যবসার কথা আপনার পরিবারকে বলেছেন কিংবা তারা জানেন? শুনুন দোষ দিতে হলে দুজনকেই দিন, একহাতে তালি বাঁজে না মনে রাখবেন। আমি আবারও বলছি আমি অন্যদের মতো নই, হ্যাঁ এখানে এসে অবশ্যই পাপ করেছি, কিন্তু সেটাও বন্ধুদের বুঝানোর জন্য।

-বুঝেছি আপনি সাধু তাই তো? আমার মতো মেয়ে ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন নামিদামী হোটেলে, এমন কত মানুষ দেখলাম জীবনে, তা এতো ভালো আপনি এসব কাজে না এসে বাড়িতে বিয়ের কথা বলছেন না ক্যানো?

আমার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে, আশা করছি অতি শীঘ্রই বাবা-মায়ের পছন্দ অনুযায়ী কাউকে বিয়ে করে নিবো, প্রার্থনা করি আপনার মতো যেন কাউকে তিনি আমার কপালে না জুটিয়ে দেন, বিয়ের জন্য অবশ্য বাবা-মা উঠে পড়ে লেগেছেন।

-তাহলে ক্যানো এখানে এসেছেন?

আপনাদের মতো মানুষের সাথে পরিচিত হতে, আর জানতে এর থেকে বেশি কিছু নয়, কিন্তু আমার বন্ধুদের জোরে, আমি তাদের বলেছি যেখানেই আমাকে নেয়া হোক না ক্যানো আমি আমার মতোই থাকবো, কিন্তু তারা বলেছে তোকে এমন একজন মেয়ের সাথে থাকতে দিবো যে তোকে অজানা স্পর্শ দিয়ে দিবে,
আর তুই তাকে দেখে পাগল হয়ে গোপন সুখ পেতে নিজেকে হারিয়ে ফেলবি,

– শুনন ভালো মানুষ, আমি নষ্ট মানুষ হলেও কিন্তু আমার কিছু নীতি আছে, কাজ না করে আমি পারিশ্রমিক নেই না। এজন্যই আপনাকে বলছি আমার সময় নষ্ট করবেন না, বলেই জুই সাব্বিরের হাতটি টেনে নিজের উপর ফেলে দিলেন, যেমন ভাবে পড়েছিলেন তেমনি উঠে দাঁড়ালেন আর বললেন–

আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন বেশ ভালো এর থেকে আর বেশি কিছুর আশা করবেন না, আমি আমানতের খেয়ানত করতে রাজি নই, একটা কথা ভেবে দেখুন..আপনি যা করছেন হয়তো কোনোদিন আপনারও সংসার হবে আর আপনি আপনার স্বামীর যে আমানত নষ্ট করেছেন তেমনি আপনার স্বামীও তো আপনার আমানত নষ্ট করতে পারে? কিংবা আপনার স্বামী আমার মতো হলে আপনি সৃষ্টিকর্তার নিকট কিভাবে নিজেকে হাজির করবেন? যাই হোক আপনি চলে যেতে পারেন,

রনি তুই কি বলতে চাইছিস, এতো প্যাঁচাল ভালো লাগে না?
আরেকটু ধৈর্য ধর বন্ধু, খুব একটা বেশি নেই, আসল ঘটনা তো শেষে বন্ধু, আর একটু ধৈর্য ধরে শোন ভালো লাগবে
তাহলে তাড়াতাড়ি বল..
শোন….

চলবে

আমিনুল ইসলাম রুদ্র সম্পর্কে

মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, জন্ম : ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮১। ডাক নাম রুদ্র আমিন (Rudra Amin)। একজন বাংলাদেশ কবি, লেখক ও সাংবাদিক। নক্ষত্র আয়োজিত সৃজনশীল প্রতিযোগিতা-২০১৬ কবিতা বিভাগে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। জন্ম ও শিক্ষাজীবন মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ফুলহারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ আব্দুল হাই ও মাতা আমেনা বেগম। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে খাগড়াছড়ি এবং বগুড়া সদর উপজেলায়। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন মূল পেশা থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন এর ষ্টাফ রিপোর্টার ও অনলাইন নিউজপোর্টাল নববার্তা.কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উইকিপিডিয়াকে ভালোবেসে উইকিপিডিয়ায় অবদানকারী হিসেবে উইকিপিডিয়া অধ্যয়নরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : যোগসূত্রের যন্ত্রণা (২০১৫); আমি ও আমার কবিতা (২০১৬); বিমূর্ত ভালোবাসা (২০১৮); অধরা- সিরিজ কবিতা (২০২০) প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : আবিরের লালজামা (২০১৭)। আমার সকল লেখা পড়তে ভিজিট করুন : রুদ্র আমিন

1 thought on “অবয়ব (পর্ব-৪)

  1. পড়ে চলেছি প্রিয় কবি ও গল্পকার মি. রুদ্র আমিন। শুভ সকাল। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।