আজ বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস


আজ ১৫ অক্টোবর, ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত হয়ে আসছে ১৮৭৪ সাল থেকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২০০৯ সাল থেকে এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি পালনের মূল্য উদ্দেশ্য- রোগ প্রতিরোধে সাবান দিয়ে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো।

এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পরিষ্কার হাত সু-স্বাস্থ্যের উপায়’। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিকভাবে হাত ধুতে পারলে ২০ ধরনের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। হাত আমাদের মুখে খাবার পৌছে দেয়, সেই হাতই হয়ে উঠতে পারে জীবানু ছড়ানোর ভয়ংকর মাধ্যম- যদি তা অপরিষ্কার হয়। সারাদিন আমরা হাত দিয়ে কত কিছু স্পর্শ করি। তাই হাতে লেগে থাকতে পারে অনেক মারাত্নক জীবাণু। হাত ধোয়া তাই খুবই দরকার।

“হাত ধুইয়া কী হইব, হাত ধুইয়া খাইলেও মৃত্যু, না ধুইয়া খাইলেও মৃত্যু- হুমায়ূন আহমেদের এক নাটকে এক গ্রাম্য লোকের উক্তি ছিল এটি। আজও হয়তো গ্রামের অনেক লোকের এইরকম চিন্তা-ভাবনা আছে। গ্রামের অনেকেই আছেন যারা শুধু ভাত খাওয়ার আগে হাত ধোয়। অন্যান্য শুকনা খাবার খাওয়ার আগে গামছা কিংবা লুংগিতে হাত মুছে নেয়। ময়লা হাতের মাধ্যমে ছড়ায় এমন একটি মারাত্নক রোগ হলো ডায়রিয়া। শুধু গ্রাম নয় শহরেও এমন অনেক মানুষ আছেন যারা আধুনিক বলে নিজেদের দাবি করেন। হাত না ধোয়ায় পরোক্ষভাবে নিউমোনিয়া ছড়াতে সাহায্য করে। আমরা জানি এর শিকার কারা, এর শিকার বেশির ভাগ শিশুরা। The State of the World’s Children Child Survival. UNICEF অনুযায়ী প্রতি বছর ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়াতে মারা যায় ৩.৫ মিলিয়ন শিশু। শুধুমাত্র নিয়মিত হাত ধোয়ার মাধ্যমে এর বিরাট অংশকেই নিরাপদ রাখা যায়।

হাত ধোয়ার কিছু নির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো অনুসরণ না করলে হাত ধোয়া সঠিক হবে না। প্রথমে পানি দিয়ে হাত ভেজাতে হবে। তারপর সাবান নিয়ে দুই হাতে মেখে ফেনা করতে হবে। দুই হাতে সেই ফেনা ব্যবহার করে দুই হাতের উভয় দিক, আঙুলের ফাঁকগুলো, নখের নিচে এবং কিনারে, বুড়ো আঙুলের গোড়া এবং কবজি খুব ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে প্রায় ১৫ সেকেন্ড ধরে। তারপর ট্যাপের প্রবহমান পানিতে হাত ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। ট্যাপটি বাম হাতে বন্ধ করতে হবে। পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছা দিয়ে হাত শুকিয়ে নিতে হবে। খাওয়ার আগে মোছার প্রয়োজন নেই। এবার শিখে নেয়া যাক কিভাবে হাত ধোয়ার পদ্ধতি।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চর্চার মাধ্যমে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। হাত ধোয়ার অভ্যাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চর্চার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নিয়ম ও সময় মতো হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, ডায়রিয়া, কৃমিরোগসহ আরো অনেক জীবাণু দ্বারা সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

হাত ধোয়া কেন জরুরি?
হাত ধোয়া অবশ্যই জরুরি। হাত ধোয়ার অভ্যাস সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য সহজ এবং অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। আমরা যখন হাত দিয়ে নানা কাজ করি, এটা-সেটা ধরি, তখন অসংখ্য জীবাণু হাতে লেগে যায়। এক মিলিমিটার লোমকূপের গোড়ায় প্রায় ৫০ হাজার জীবাণু থাকতে পারে। আর একটা আংটির নিচে ইউরোপ মহাদেশের জনসংখ্যার সমান সংখ্যক জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। এসব জীবাণু খালি চোখে দেখা যায় না। এরপর যখন আমরা সেই হাতে খাবার, মুখ, চোখ, নাক স্পর্শ করি, তখন আমরা সংক্রমিত হই। অন্যকে স্পর্শ করে তাকেও আমরা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত করতে পারি।

আমরা কখন হাত ধোব?
খাওয়ার আগে ও পরে, খাবার-দাবারে হাত দেয়ার আগে, পায়খানার পরে, কাঁচা মাছ, গোশত, ডিম বা শাকসবজি স্পর্শ করার, শিশুদের ডায়াপর পরিবর্তন করার, ময়লা আবর্জনা স্পর্শ করার, হাত দিয়ে নাক ঝাড়ার এবং হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দেয়ার পরে অবশ্যই হাত ধুতে হবে।এ ছাড়া হাত যখন দেখতে ময়লা দেখাবে, তখন তো ধোবোই।হাত না ধুয়ে কখনোই তা দিয়ে মুখের ভেতর স্পর্শ করা যাবে না।

আমরা কী দিয়ে হাত ধোব?
সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবান কিন্তু জীবাণু মারে না। সাবানের ফেনা হাতে লেগে থাকা ময়লা, চর্বি ও জীবাণুগুলোকে হাত থেকে আলগা করে ফেলে। আর তখন পানি দিয়ে সেগুলোকে সহজেই ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলা যায়। শুধু পানি দিয়ে যতই ঘষা হোক ময়লা, চর্বি ও জীবাণু কখনই পুরোপুরি পরিষ্কার হবে না।

কী ধরনের সাবান ব্যবহার করব?
যেকোনো সাধারণ সাবান দিয়েই হাত ধোয়া যাবে। ছোট সাবান বড় সাবানের চেয়ে ভালো। কারণ তা ঘন ঘন বদলানো যায়। সাবান রাখতে হবে পানি ঝরে যায় এমন সাবানদানিতে। তরল সাবান সাধারণ সাবানের চেয়ে ভালো, তবে খরচ বেশি। তরল সাবানের কনটেইনার আবার ভরতে চাইলে তা আগে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।

আমরা হাত ধোয়ার সময় কী কী ভুল করি?
হাত ধোয়ার সময় আমরা সচরাচর কিছু ভুল করে থাকি। যেমন, হাতের দুই দিক সঠিকভাবে মাজিনা, আঙুলের ফাঁকগুলো পরিষ্কার করি না, নখের নিচে বা কিনারে পরিষ্কার করি না এবং বুড়ো আঙুলের গোড়ার দিক মাজি না। অনেক সময় এক হাতে সাবান নিয়ে হালকা করে কচলিয়ে নেই। সব শেষে হাত মোছার জন্য কমন তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করি।আমরা হাত ধোয়ার এই ভুলগুলো করব না।

আমিনুল ইসলাম রুদ্র সম্পর্কে

মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, জন্ম : ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮১। ডাক নাম রুদ্র আমিন (Rudra Amin)। একজন বাংলাদেশ কবি, লেখক ও সাংবাদিক। নক্ষত্র আয়োজিত সৃজনশীল প্রতিযোগিতা-২০১৬ কবিতা বিভাগে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। জন্ম ও শিক্ষাজীবন মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ফুলহারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ আব্দুল হাই ও মাতা আমেনা বেগম। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে খাগড়াছড়ি এবং বগুড়া সদর উপজেলায়। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন মূল পেশা থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন এর ষ্টাফ রিপোর্টার ও অনলাইন নিউজপোর্টাল নববার্তা.কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উইকিপিডিয়াকে ভালোবেসে উইকিপিডিয়ায় অবদানকারী হিসেবে উইকিপিডিয়া অধ্যয়নরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : যোগসূত্রের যন্ত্রণা (২০১৫); আমি ও আমার কবিতা (২০১৬); বিমূর্ত ভালোবাসা (২০১৮); অধরা- সিরিজ কবিতা (২০২০) প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : আবিরের লালজামা (২০১৭)। আমার সকল লেখা পড়তে ভিজিট করুন : রুদ্র আমিন

3 thoughts on “আজ বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস

  1. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অনেক মূল্যবান পোষ্ট। সবার কাজে লাগবে।

    তবে আপনার দেয়া লিংক টা কাজ করছে না।

  2. দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পরিষ্কার হাত সু-স্বাস্থ্যের উপায়’। সার্বজনীন সচেতনতা প্রত্যাশা করি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  3. নিজেদের সুরক্ষার জন্যই আমাদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।