দুই শালিকের গল্প

– মণি,
– আসি বাবা…
একমুঠো চালের দানা নিয়ে বারান্দায় আসে মণিকা। ছড়িয়ে দেয় উঠোনে।

এটা মনিকার প্রতিদিনকার প্রথম কাজ। সকালে মায়ের উঠোন-বাড়ি ঝাড় দেওয়া হয়ে গেলে বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রতিদিন মেয়েকে ডাকেন। আর মেয়ে যথারীতি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চালের দানা ছড়িয়ে দেয়।

তারপর বাপ-মেয়ে মিলে ব্রাশ করতে করতে সিঁড়ির পরে বসে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে দু’টো শালিকের খুঁটেখুঁটে দানা খাওয়া।

গত সন্ধেয় কালবোশেখি ঝড়ে উঠোন ঝরা লতাপাতায় ভরে ছিল। তাই আজ মায়ের একটু দেরি হয়ে গেছে উঠোনটা পরিস্কার করতে। আর সেজন্যেই শালিকের খাবার দিতেও আজ একটু বিলম্ব হয়েছেে।

– বাবা, ওরা তো আসছে না?
-আসবে, এক্ষুনিই আসবে। দেখ..
বাবার পেটে আস্তে করে একটা টোকা দিয়ে মনিকা বলল- ওই দেখ বাবা, আসছে।
দু’জনই শালিকের দিকে উচ্ছ্বসিত চোখে তাকায়।
-কিন্তু বাবা, আর একটা কই?
-আসেপাশে কোথাও আছে। দেখ্ এক্ষুনি আসবে।

শালিকটি এল। চালের দানাগুনো দেখল। একটা দানাও ঠোঁট দিয়ে তুলল না। শুধু এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।
-বাবা, ও বাবা, খাচ্ছে না কেন?
বাবাও ব্যাপারটা খেয়াল করছিলেন। কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
– দাঁড়া, খাবে ‘খনে।
-খাচ্ছে না তো। ওই দেখ , না খেয়েই চলে যাচ্ছে-
– তাই তো- মনে হয় ওর সাথিকে ডাকতে যাচ্ছে।

কিচ্ছুক্ষণ পরে আবার ফিরে এল শালিকটি। কিন্তু এবারও ঠোঁট ছোঁয়াল না চালের দানায়। শুধু একবার চালের দিকে আর একবার ওদের দু’জনের মুখের দিকে করুণচোখে তাকাল যেন। তারপর গুটিগুটি পায়ে বাড়ির পেছনের দিকে চলে গেল।

মণিকা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল- ও বাবা, চলে গেল তো।

ততক্ষণে স্নান সেরে মাও এসেছেন। তিনজনে মিলে শালিক দু’টোর খোঁজে বাড়ির পেছনের বাগানের দিকে গেলেন।

হঠাৎ আনন্দে চিৎকার করে ওঠে মণিকা- ওই তো একটা…
ওরা আর একটু এগিয়ে গেল। দেখল- একটা মৃত শালিকের পাশে মাথা গুঁজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে শালিকটি।
মা বললেন- গতকালের ঝড়ে কোনোভাবে হয়তো মারা গেছে।

মণিকা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল সাথিহারা পাখিটির দিকে।

বাবা শক্ত করে মায়ের হাতটি ধরলেন।

শংকর দেবনাথ সম্পর্কে

শংকর দেবনাথ জন্মঃ ২১ অক্টোবর, ১৯৭৪ প্রকাশিত গ্রন্থ - কবিতার বইঃ ১) আত্মহনন অথবা মৈথুন ২) শিয়রে নীলাভ জ্বর ৩) পরকীয়া ঘুম ছড়ার বইঃ ১) দুধমাখা ভাত ২) টক ঝাল তেতো কড়া ৩) ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ৪) লাগ ভেল্কি লাগ ৫) রসে কষে ভরা প্রবাদের ছড়া গল্পগ্রন্থঃ ১) দুই শালিকের গল্প ২) গাছের জন্মদিন পিডিএফ ছড়ার বই: ১. ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ২. সুজন পাখির কূজন ৩. অথৈ প্রাণের ধারা ৪. ছন্দ মাতে বন্দনাতে ৫. কিম্ভুতকিমাকার ৬. অপ্রচলিত ছড়া ৭. আমার সুকুমার ৮. প্রাণের ঠাকুর ৯. গাছপাগলের পদ্য ১০. ছড়ায় পড়া ১১. শব্দ নিয়ে মজা ১২. ভূত আছে ভূত নেই ১৩) ঠাকুরদাদার বউ ১৪) তাই রে না না ১৫) খুশি মনে পুষি ছড়া ১৬) স্বরবর্ণের ঘর সম্পাদিত পত্রিকাঃ ছোটদের ভোরের পাখি ভেল্কি ছড়াপত্র ঠোঁটকাটা মাসিক ছড়াপত্রিকা পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ ১। নিখিলবঙ্গ শিশুসাহিত্য সংসদ প্রদত্ত " কবি কৃত্তিবাস সম্মাননা" -২০১৮ ২। দীনবন্ধু রাখালদাস বিভূতি বিনয় একাডেমি প্রদত্ত " কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার সাহিত্য সম্মান -২০১৯

16 thoughts on “দুই শালিকের গল্প

  1. সাধারণত না লিখলেও ক্ষতি কি দাদা। লিখতে লিখতেই শুরু হয়ে যাবে। ভাল হয়েছে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  2. গদ্য সাধারণত না লিখলেও এই গদ্যে একটি অসাধারণ মেসেজ পেলাম।

    পাখিদের মধ্যে যে ভালোবাসার শোকাহত দেখলাম তা এই যুগের কিছু মানুষের মধ্যেও নেই।

    গদ্য লেখা শুরু যখন করেছেন আর থামবেন না প্রিয় লেখক!

    অনেক শুভেচ্ছা রইলো মিঃ শংকর দেবনাথhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  3. আজ একটা শালিক এলো; কিন্তু খেলোনা। চলে গিয়ে শালিকটা আবার এলো। কিন্তু এবারও খেলোনা। পাখিটা কী  সাথী হারা হয়েছে? 

    মণিকার বাবা তার জীবন সাথীর হাতখানা শক্ত করে ধরলো। হারাতে চায়না!

  4. আমি অনেক সময়ই আমার সহধর্মিণীকে বলি, তুমি যদি আমার আগে মৃত্যুবরণ করো; তাহলে আমি মনে হয় তোমার একমাসের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করতে পারবো না। সহধর্মিণী বলে, কেন পারবে না? জবাব দেই  তোমাকে হারানোর শোকে শোকে আমিও মরে যাবো। আমার সহধর্মিণী বলে, আমার বেলাও তা-ই হবে। 

    ভালোবাসার শোক বড়ই স্পর্শকাতর। সয়া যায়, বলা যায় না।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।