ছড়াদাদু বললেন- তিনরকম ছন্দ আর অনুপ্রাস নিয়ে মোটামুটি আলোচনা করা হল। এবার আমরা যাব মুক্তকছন্দে। মুক্তক বা মুক্তছন্দ আসলে কোনো ছন্দ নয়। ছন্দের আঙ্গিক বিন্যাস মাত্র। তিনটি ছন্দেই মুক্তক পদ রচনা করা যায়। এটি যে কোনো ছন্দে প্রতি লাইনের পর্বসমতা কম-বেশি করে লেখা হয়।
যেমন –
খবরটা নয় /উড়ো-৪+২
চিনদেশেতে /আছে সে এক/ পাঁচবছরের/ বুড়ো।৪+৪+৪-২
খরায় জ্বরায়/ ভিজে ভিজে-৪+৪
থমকে আছে /বয়সটা তার /
একটু বাড়ে/নি যে।৪+৪+৪+২
এটা স্বরবৃত্তে লেখা একটি মুক্তপর্বের ছড়া। তো ব্যাপারটা আঁচ করতে পারছো তো?
আদৃতা বলে- কিছুটা। তবে অন্য ছন্দের আর একটা উদাহরণ পেলে আরো পরিস্কার হয় যাবে।
দাদু বলেন – এবার তাহলে রবীন্দ্রনাথের কবিতাই বলি-
প্রিয়া তারে রাখিল না/ রাজা তারে/ ছেড়ে দিল পথ-৮+৪+৬
রুধিল না /সমুদ্র পর্বত ৪+৬
আজি তার রথ……৬
আসলে মুক্তছন্দে ছন্দকে ঠিক রেখে ইচ্ছেমত ভাবের প্রসার ঘটিয়ে ইচ্ছানুযায়ী মাত্রা, পর্ব, ছন্দের অন্ত্যমিল এবং স্তবকসহ কবিতার পুরো বিন্যাসকে নিজেরমত করে সাজিয়ে নেওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথই প্রথম পয়ার ভেঙে অসমপর্বের এই ছন্দের প্রবর্তন করেন।
এই মুক্তকছন্দের সাথে গদ্যছন্দের সাদৃশ্য আছে। গদ্যকবিতার ছন্দেও ভাষাগত পরিমিতি, ভাবের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ ধ্বনিপরিমিতি মেনে সচ্ছন্দ গতিশীলতা বজায় রাখতে হয় যাতে পড়ার সময় হোঁচট খেতে না হয়।
দীপেন বলে – দাদু একটা গদ্য কবিতার উদাহরণ দিন।
– বলা-ই যায় না
শুধু দলাদলা কষ্টরা
দীর্ঘশ্বাস বেয়ে নেমে আসে।
দেখ, এখানে হয়তো ছন্দের নির্দিষ্ট রূপ নেই তবু এর চলনে রয়েছে একটা সচ্ছন্দ গতিশীলতা যা অক্ষরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্তের মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। ছাড়ো এসব।
দাদু একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন- আমরা যেহেতু শুধুমাত্রা ছড়া বা ছোটদের কবিতা লেখার কায়দাকানুন নিয়ে কথা বলার জন্য পাঠশালা খুলেছি, তাই ও’গুলো লিখতে গেলে যতটুকু ছন্দ-অলঙ্কার জানার দরকার সেটুকুই শুধু বলা ভাল। যা যা আলোচনা হল তা কি তোমাদের বোধগম্য হয়েছে?
ওরা হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ল।
দাদু বললেন- এবার তাহলে আমাদের ছড়া আর ছোটদের কবিতা লেখায় হাত দিতে হবে।
আগামিদিন আমরা সেপথেই এগুবো। আজ ওঠা যাক।
(চলবে)
ছড়াদাদুর পাঠশালা'র নিয়মিত ছাত্র আমি। পড়ি আর পড়া শেষ হলে স্লেট পেন্সিল নিয়ে ফিরে যাই। ছাত্র হিসেবেও ভালো নই। শিখছি ঠিকই কিন্তু প্রয়োগের মানসিকতা অবশিষ্ট নাই। ছড়াদাদু পরীক্ষা নিলে আমি হবো শেষ ছাত্র … যে কিনা হোমওয়ার্ক করেনি।
আলোচনাটি চললে আমি বাদ থাকলেও অন অথবা অফলাইনের বন্ধুরা ঠিকই শিখে নেবেন। ধন্যবাদ ছড়াদাদু। ধন্যবাদ মি. শংকর দেবনাথ। শুভ সকাল।
আর দুটো পর্ব লিখব।
ছড়াদাদুর পাঠশালায় ছোটরা নয় বড়দেরও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। বুড়ো ছাত্রী আমি বেশ উপভোগ করলাম।
ধন্যবাদ বড়দি
এই আসরের অধিকাংশ ক্লাস মিস করেছি। সম্ভবত দুটোতে ছিলাম এবং তাতেই বুঝেছি কতো দামি ক্লাসগুলি। সবগুলি একদিন পড়বো; সম্ভবত বারবার পড়তে হবে। খুব দামি যে— !!
ধন্যবাদ
আজও টুকে নিয়ে গেলাম দাদা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ দিদি
ছড়া দাদু ছন্দের প্রচলন ফিরিয়ে আনতে পারবেন আশা করছি। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
* চলুক…
আমরা সাথে আছি।
ধন্যবাদ
বিশ্লেষণ লেখা গুলো সম্পদ হয়ে থাক শংকর দা।
ধন্যবাদ