রাত্রি গভীর। জোছনা ভরা। চারপাশও সুনসান।
রাতজাগা এক-দুইটা পাখি –
হঠাৎ হঠাৎ উঠছে ডাকি।
প্রভাত সোনার দুচোখ ধুধু।
ঘুম নেই। সে ভাবছে শুধু।
ক্লাসের পড়া। চাঁদের কথা। চন্দ্র অভিযান।
আর্মস্ট্রং কলিন্সেরা চাঁদের দেশে ঘুরে-
দেখে এলেন যেমন করে
দেখতে যদি পারতো ওরে
তেমন করে চাঁদকে ছুঁয়ে
ভাবছে প্রভাত শুয়ে শুয়ে।
হঠাৎ কে সে ডাকলো এসে মিষ্টি মধুর সুরে।
অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে ভয় পেয়ে যায় ভারি-
একদম তার দেহের কাছে
কে যেন ঠিক দাঁড়িয়ে আছে
দুষ্টমিঠে মুচকি হাসি
অঙ্গজুড়ে ফুলের রাশি
পরনে তার অপূৃর্ব এক শুভ্রময়ী শাড়ি।
হিম হয়ে যায় শরীর ভয়ে। প্রভাত তো… তো… ক’রে-
বলল কাঁপা গলায় শেষে-
কে তুমি গো পরীর বেশে
এলে আমার ঘরের মাঝে?
বুঝতে কিছুই পারছি না যে।
বলেই প্রভাত কাছ থেকে যায় একটু দূরে সরে।
মিহিন মোহন কণ্ঠে বলে আগন্তুকা হেসে-
ভয় পেয়ো না লক্ষ্মী-মাণি’
আমি হলাম পরীর রানি।
ইচ্ছে তোমার চাঁদের দেশে
ঘুরবে অভিযাত্রি-বেশে।
তাইতো এলাম তোমায় নিয়েই যাবো চাঁদের দেশে।
প্রভাত বলে- পরীর রানি, ইচ্ছে আমার ভারি
হাঁটবো চাঁদের বুকের পরে
দেখবো চাঁদের বুড়ির ঘরে
কেমন ভাবে আছে কী কী
ভূগোল বইয়ের সব কি ঠিকই?
কিন্তু আমার নেই কোনো যান – দিই কেমনে পাড়ি?
পরীর রানি, বলছো তুমি আমায় নিয়ে যাবে-
আবিস্কারের নেশায় মেতে
ভালই হতো পারলে যেতে।
কিন্তু সে তো অনেক দূরে
তেমন করে উড়ে উড়ে-
যাবার মতন বৈজ্ঞানিকের যানটি কোথায় পাবে?
মুচকি হেসে পরীর রানি বলল – এসো, ভাই!
মহাকাশ যান লাগবে কেন?
থাকতে পাখা আমার হেন।
আমার পিঠে চাপবে তুমি
পৌঁছে যাব চাঁদের ভুমি-
এক নিমেষে কেমন করে দেখবে শুধু তাই।
আনন্দে মন ডগমগ উৎসাহে মন ভরে-
বলল প্রভাত – সত্যি তা কি?
একটুও নেই মিথ্যে ফাঁকি?
চাঁদের দেশে পৌঁছোতে চাই
তবেই চলো এক্ষুনি যাই।
প্রভাত ওঠে পরীর পিঠে এবং পরী ওড়ে।
শোঁ শোঁ করে উড়ছে পরী। কী মজা আ মরি!
লক্ষ তারা চতুর্পাশে
মিটমিটিয়ে কেবল হাসে।
দেখছে প্রভাত মুগ্ধ চোখে
ছুটছে দ্রুত চন্দ্রালোকে।
ইচ্ছেগুলো দিচ্ছে ধরা। নাচছে তো মন-পরী।
সাধটা পূরণ করতে ক্রমে চাঁদ কি বড় হবে?
মহাশুন্যের আঁধার দেশে
সোনার আলোর মোহন বেশে
একটা বিশাল থালার মত
চাঁদটা হাসে অবিরত।
কল্পনারই সেই চাঁদে আজ যাচ্ছে সে বাস্তবে।
পরীর রানির মিষ্টি বাণী হঠাৎ আসে কানে-
প্রভাত, সোনা ভাইটি আমার
সময় হলো এবার নামার।
দু’চোখ মেলে দেখো তুমি
ওই দেখা যায় চাঁদের ভূমি-
ঊষর ধূসর খাত ও পাহাড় ছড়িয়ে সবখানে।
ঘামছে প্রভাত আনন্দে খুব। নামছে চাঁদে ধীরে-
কল্পনা নয় বাস্তবে সে
ঘুরবে এখন চাঁদের দেশে।
ভাবতে কী যে শিহরণে
পুলক মাখায় দেহমনে।
বলবে সবই বন্ধুদেরই পৃথিবীতে ফিরে।
নামিয়ে চাঁদে পরীর রানি বলল -দেখো ঘুরে-
যা পড়েছো বইয়ের পাতায়
কল্পনা যা তোমার মাথায়
মিলিয়ে দেখো মজায় মেতে
থাকছি আমি এইখানেতে।
যত্তো খুশি বেড়াও ছুটে নিকট কি বা দূরে।
হস্তে নিয়ে চাঁদের মাটি একটুখানি শোঁকে।
তারপরে সে অঙ্গে মাখে।
মজায় মেতে হাঁটতে থাকে।
দারুণ মজা। হালকা ভারি
লাগছে কেন শরীর তারই?
হচ্ছে মনে যাচ্ছে উড়ে কোন সে অরূপলোকে।
পাহাড় টিলা গর্ত কত নিমেষে এক লাফে-
যায় পেরিয়ে হায় কী আরাম!
নেই কষ্টের একটুও ঘাম।
গাছপালাহীন ধুসর মাঠে
মাইল মাইল কেবল হাঁটে।
থামতে গেলেই পড়ছে শুধু একটুখানি চাপে।
কুড়ায় নুড়ি পাথর চাঁদের ভুমির থেকে দু’টো –
পকেট ভরে যত্নে রাখে
দেখাবে সে মা বাবাকে।
সহপাঠির ভুল ভাঙাতে
প্রমাণটুকু থাকবে হাতে।
অবাক চোখে দেখবে সবাই খুলবে যখন মুঠো।
চরকা কাটা চাঁদের বুড়ির নেই কোনো ঘর-বাড়ি,
প্রভাত জানে- মিথ্যে সবই
কল্পনাতে আঁকা ছবি।
প্রাণহারা এক নিরস দেশ এ’
মহাকাশেই বেড়ায় ভেসে।
সূর্যালোকেই এই অপরূপ জোছনা হাসি তারই।
চাঁদের আকাশ কালোয় ভরা, নয়তো মোটেও নীল-
নেই বায়ু তাই পরাণহীনা
বাজে না সুর- শব্দবীণা।
নীলের বিশাল একটা দেহে
ঝুলছে একা ওইটা কে হে?
ঠিক পৃথিবী। প্রাণের-জলের আলোতে ঝিলমিল।
হঠাৎ প্রভাত চমকে ওঠে। আড়ষ্ট গা-খানি।
থমকে দাঁড়ায় ভয়েই শেষে।
সামনে ওটা বিকট বেশে-
পাহাড় নাকি? কিন্তু তাহার-
প্রভাত বুঝি হবেই আহার।
ভেবেই ভয়ে চেঁচিয়ে ডাকে-বাঁচাও পরীরানি।
কী হয়েছে? চেঁচাস কেন? কী হয়েছে তোর?
মা এসে ক’ন তার শিয়রে-
স্বপ্ন দেখেছিস কি ওরে?
কোথায় নুড়ি? পকেট খোঁজে-
এবার প্রভাত সবই বোঝে।
ভূগোল বইটা খোলাই আছে মাথার পাশে ওর।
দারুণ পদ্য কথায় পূর্ণাঙ্গতার ছোঁয়া পেলাম। ভীষণ ভালো লেগেছে আমার কাছে।
শুভেচ্ছা মি. শংকর দেবনাথ। শুভ সকাল।
আপনার মন্তব্য আমাকে প্রাণিত করে। ধন্যবাদ দাদা।
আমারও তো ভাল লাগলো
ধন্যবাদ। শুভকামনা।
অসাধারণ নিঃসন্দেহে। শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দা।
ধন্যবাদ
নির্মল এবং নির্মেদ একটি কবিতা। অভিনন্দন কবি।
ধন্যবাদ
মোটাদাগে সুন্দর হয়েছে কবি শংকর দা।
ধন্যবাদ
মুগ্ধতা।
ধন্যবাদ