স্বপ্নহীনের সাপলুডো (একাঙ্ক নাটক)

স্বপ্নহীনের সাপলুডো (একাঙ্ক নাটক)

চরিত্র : জগাই, বিচারক, উকিল, মা, কনস্টেবল, চোর, ঘোষক।

(মঞ্চের ডানদিকে ডাউন রাইট স্টেজে জগাই দাঁড়িয়ে গান গাইছে। একটি শাওয়ার আলো তার মাথার ওপরে। আধো আলো আধো অন্ধকার। জগাই কে স্পষ্ট দেখা যায় না। বাকি অংশ অন্ধকার।)

জগাই – আয় রে ভোলা খেয়াল খোলা দমদমাদম বাজিয়ে আয়
সোনায় মোড়া স্বাধীনতার ক্ষীর ননী সব গিলবি আয়,
তুই খাবি আর আমি খাব, আর খাবে সব চামচা
নেতার মাথায় সোনার টুপি, জনগনের গামছা।
সাত দশকে সাতশো রকম দেখলি ডাকাত চোর
রাত নেমেছে নাচ রে ভোলা, আসবে কি আর ভোর!
নেতার ছেলে নেতা হবে, চাষীর ব্যাটা চাষী
হায় ক্ষুদিরাম কার জন্য গলায় পরলি ফাঁসী।
(আপ সেন্টারে আলো পড়ে, সেখানে এক বিচারক, এক উকিল কাগজপত্র দেখছেন। বোঝা যায় আদালত। বাইরে থেকে ঘোষণা ভেসে আসে। গোটা মঞ্চই আলোকিত)
ঘোষক – আসামী চতুর্থ জগাই হাজিইইইইইর…!
জগাই – (খুব জোরে চিৎকার করে) হাজিইইইইইইইইইর…
বিচারক – (চমকে ওঠে) অ্যাই … অ্যাই … কি হলো! অ্যাঁ! ওরকম চ্যাঁচাচ্ছো কেন?
জগাই – আঁজ্ঞে স্যার, আজ আমার কি আনন্দ! ওহ্ এত মাণ্যিগণ্যি লোক রয়েছেন আপনারা! আমায় ডাকছেন! ভাবা যায়!
বিচারক – তোমার দশ টাকা জরিমানা হলো।
জগাই – কেন? কেন?
বিচারক – পনেরো টাকা ফাইন হলো।
জগাই – অ্যাই মরেচে! ফাইন কেন? আর বেড়েই বা যাচ্ছে কেন?
উকিল – অ্যাই মশাই চেপে যান না। বেশী বকছেন কেন? এই জন্যেই তো ফাইন বেড়ে যাচ্ছে।
জগাই – অ! (চুপ করে যায়)
বিচারক – আদালতে চ্যাঁচামেচি করে আদালতের পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টার অপরাধে আসামী জগাই ওরফে চতুর্থ জগাইয়ের পনেরো টাকা জরিমানা হলো। (বাইরে টাইপের শব্দ)
আসামী জগাই ওরফে চতুর্থ জগাই! (জগাই চুপ করে থাকে) কি হলো! সাড়া দিচ্ছেন না কেন? (জগাই তবু চুপ করে থাকে) কি ব্যাপার! কথা বলছেন না কেন বলুন তো? একটু আগেই যা গলা ফাটালেন তাতে বোঝা গেছে বোবা তো নন? তবে? (জগাই নির্বাক) হুম। আমার প্রশ্নের উত্তরে কথা না বলে আদালত অবমাননা করার অপরাধে আসামী জগাই ওরফে চতুর্থ জগাইয়ের দশ টাকা ফাইন হলো। (বাইরে টাইপের শব্দ)
জগাই – হুজুর! হুজুর! একি শাঁখের করাত!
বিচারক – কি?
জগাই – হুজুর! কথা বলার জন্যেও ফাইন! আবার না বলার জন্যেও ফাইন! এতো খুব খিটকেল কান্ড দাদা!
বিচারক – দাদা কাকে বলছেন? এটা পাড়ার রক নয় বুঝেছেন! এটা কোর্ট। দাদা টাদা নয়, এখানে স্যার বলবেন।
জগাই – আচ্ছা স্যার! আপনারা যেমনটি বলবেন তেমনটিই করব স্যার! কথা বলতে বললে বলব, চুপ করতে বলেছেন কি সঙ্গে সঙ্গে চুপ। আর কথাটি নয়। (গেয়ে ওঠে) তুমি যেমন চলাও তেমনি চলি, আমি যে তোমার গাধা হে…
উকিল – চুপ! চুপ! আবার গোলমাল করে!
(জগাই নিজের মুখে হাত চাপা দিয়ে চুপ করে)

[চলবে]

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

1 thought on “স্বপ্নহীনের সাপলুডো (একাঙ্ক নাটক)

  1. শব্দনীড় এর ইতিহাসে এই প্রথম খণ্ড নাটিকার অংশ বিশেষ পড়তে পারলাম।
     আমার কাছে লিখাটি যথেষ্ঠ ইন্টারেস্টিং মনে হলো। বিশেষ করে চরিত্রগুলো। চলুক। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।