স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক) ৪র্থ পর্ব
উকিল – তাহলে আপনি কি ইয়ার্কি করছেন নাকি! জানেন এটা কোর্ট!
জগাই – হাড়ে হাড়ে জানি স্যার। রীতিমতো জানান দিয়েই এসেছি। আর এসেই জানতে পেরেছি যে এটাই সেই কোর্ট। যেখানে এলে মানুষের সাড়ে সব্বোনাশ।
বিচারক – বাজে কথা ছাড়ুন। আসল ব্যাপারটা কি খুলে বলুন তো।
জগাই – সেটাই তো অনেকদিন ধরে বলার চেষ্টা করে যাচ্ছি হুজুর। কিন্তু বলার সুযোগ পাচ্ছি কই? একবার মুখ খোলা আর একবার মুখ বন্ধ করার দাপটে কথাগুলো ঠিকমত পেট থেকে স্লিপ করছে না।
বিচারক – আদালতে দাঁড়িয়ে অবান্তর কথা বলার অপরাধে আপনাকে আরও দশ…
জগাই – (আর্তস্বরে চিৎকার করে বিচারককে থামিয়ে দেয়) থামুন থামুন স্যার দাদা হুজুর! এত ঘন ঘন দশ করে চাইলে আমিই বা পাব কোথায় বলুন? আজকাল তো ছটা ডিম বিক্রী করলেও পুরো দশটা টাকা পাই না।
উকিল – দেখুন দেখুন স্যার, পরিষ্কার রাষ্ট্রবিরোধী কথা। অসন্তোষ, বিক্ষোভ ইয়ে মানে ইয়ে… (কথার খেই হারিয়ে ফেলে)
বিচারক – ঠিক আছে, ঠিক আছে। শুনুন চতুর্থ জগাই, আপনি ক্রমাগত রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে চলেছেন। সাবধান হন।
জগাই – কেন কেন হুজুর? কি করলাম আমি?
বিচারক – এইমাত্র আপনি আমাকে জরিমানার কথা বলতে বাধা দিলেন। জানেন, এতেও জরিমানা হতে পারে?
জগাই – স্যার, বরং এক কাজ করুন। আমাদের গোটা পরিবারটাকেই দশ বচ্ছর জেলে দিন। সেটা স্যার সহজ। কিন্তু ওই দশ দশ করে বাড়লে আমার পক্ষে দেওয়া খুবই কঠিন।
উকিল – ওহে এটা পাড়ার চায়ের দোকান নয় যে এখানে দর কষাকষি হবে।
বিচারক – যাইহোক, এবার আসল কথায় আসা যাক। পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি কেন?
জগাই – সেটা স্যার পুলিশই ভালো বলতে পারবে। আমি তো স্যার পুলিশকে সহযোগিতা করেছি। ওদের দিয়ে আমাকে ধরিয়েছি।
বিচারক – ব্যাপারটা কিরকম? খোলসা করে বলুন।
জগাই – এই তো পরশু সকালের কথা। আমি তখন আমার বাড়ীর রকে বসে বাফুমু খাচ্ছিলাম।
বিচারক – কি খাচ্ছিলেন?
জগাই – আজ্ঞে বাফুমু।
উকিল – সে আবার কি? কোনো জাপানী খাবার নাকি? কোন দোকানে পাওয়া যায় বলুন তো? নাকি শপিংমলে? আমার মিসেস আবার এইসব বিদেশী খাবার খুব লাইক করেন। বলুন বলুন, তাহলে আজই ফেরার সময় কিনেই ফিরব।
জগাই – আজ্ঞে হ্যাঁ, আমার খুব প্রিয় এক জাপানী খাবার। আমি আমার চার পুরুষের ভিটের বারান্দায় বসে খাচ্ছি আর গান গাইছি। তখন…
উকিন – গান! এতবড় অন্যায় করেও গান গাইছেন?
জগাই – আজ্ঞে হ্যাঁ স্যারদাদা। গান আমার রক্তে দাদাস্যার। গান গাইতে আমি খুবই ভালোবাসি। তা আমি বসে আছি। খাচ্ছি আর গাইছি…
(জগাই গান গেয়ে ওঠে। গানের মধ্যেই মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়।)
(চলবে)
লিখাটি পাঠক এবং মঞ্চস্থ্থ হলে নিশ্চয়ই দর্শক সমাদৃত হবে আশা করি প্রিয় সৌমিত্র।
চিত্রে আসুক
প্রতীক্ষায় রইলাম।