স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক) ৬ষ্ঠ পর্ব

স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক) ৬ষ্ঠ পর্ব

জগাই – কিন্তু মা, তোমার বিয়ে তো সেই কত যুগ আগের ব্যাপার। তাছাড়া দাদু বিয়েটা দিয়েছিলেন বাবার সাথে। আর বাবাও এখন ফুস। (ওপরের দিকে আঙুল দেখায়) তবে এখন আর আফসোস করে লাভ কি?
মা – না না, আফসোস করব কেন? আমি তো এখন তোমাদের বোঝা। ও রেখে গেল আমাকে এই জ্বালা সইবার জন্যে। হে ভগবান! কবে যে যেতে পারব! (কেঁদে ফেলে)
জগাই – (মা কে জড়িয়ে ধরে) আঃ মা মা আমার সোনা মা! কাঁদছ কেন? এই দেখ না এক্ষুণি বেরোব আমি। বাজারে যতই দোকান থাকুক আমার মত খাঁটি, পচা নয়, একনম্বর, এই উটপাখির ডিমের সাইজের মত এই এত্তোবড় ডিম (দু হাত দু দিকে ছড়িয়ে দিয়ে ডিমের সাইজ দেখায়) খদ্দেররা আর কোন দোকানে পাবে বল? ঘুরেফিরে সেই আমার দোকানেই আসতে হবে। (গেয়ে ওঠে) এ তো ডিম নয় গো এ যে ডিমডিমাডিমডিম ডিডিম ডিডিম ডিম… (মা হেসে ফেলে) হ্যাঁ এই তো হাসি ফুটেছে মুখে।
মা – আমারও কি ইচ্ছে করে তোকে সকাল থেকে জোর করে দোকানে পাঠাতে। সারাদিন ওই একভাবে বসে থেকে ডিম বিক্রী করা। আমি কি বুঝিনা? বুঝি সব। কিন্তু কি করব বল?
জগাই – মা, মা গো, তোমাকে এতসব ভাবতে কি বলেছি আমি? আর তাছাড়া ডিম বিক্রী করতে আমার ভালোই লাগে। কত রকম মানুষ আসে। তাদের সঙ্গে কথা হয়। পাশের চায়ের দোকানের খবরের কাগজ পড়ি। সময়টা যে কখন সুড়ুৎ করে কেটে পড়ে বুঝতেই পারিনা।
মা – ওই দোকানটুকু করতে পেরেছিলি বলে বেঁচে গেলাম আমরা। নইলে যে কি হতো ভগবানই জানেন। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মরতে হত হয়তো।
জগাই – হ্যাঁ বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাদের খুবই কষ্ট হয়েছিল বল!
মা – হ্যাঁ মনে হয়েছিল যেন অথই জলে পড়েছি। কেউ কোথাও নেই। মানুষটা তো একটা টাকাও জমিয়ে যেতে পারেনি। পাড়ার লোকেরা না দেখলে কি যে হতো!
জগাই – হ্যাঁ বাবা বেঁচে থাকলে কি আর আমাদের অভাব থাকতো!
মা – অভাব? না অভাব তো আমাদের চিরকালই ছিল। তোর বাবা কখনোও মিথ্যে কথা বলতেন না আর লিখতেনও না। সে জন্যে যারা মিথ্যে দিয়ে কাগজ ভর্তি করে তাদের কাছে তোর বাবার কোনো কদর ছিল না।
জগাই – তবুও বাবা তো কাগজের রিপোর্টার ছিল। আর রিপোর্টারের মাইনে খারাপ নয়, তাহলে?

(চলবে)

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

1 thought on “স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক) ৬ষ্ঠ পর্ব

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।