স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ৮ম পর্ব

স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ৮ম পর্ব

জগাই – থানায়! ওয়ারেন্ট! বলেন কি! কি সৌভাগ্য আমার! ওরে কে আছিস! হাবু, কেলু, ঘেটু শীগগির শরবৎ নিয়ে আয়! আমার নামে ওয়ারেন্ট এয়েচে!
কনস্টেবল – একি! একি! আপনি তো মশাই আচ্ছা ঢ্যামনা! ওয়ারেন্ট শুনলে লোকে ভিরমি খায়, আর আপনি দেখছি একেবারে আনন্দে দিশেহারা!
জগাই – কি যে বলেন পুলিশদা! ওয়ারেন্ট কি আর যার তার নামে বেরোয়? কাগজে তো দেখি বড় বড় সব মন্ত্রী, বড় বড় সরকারি আমলা, বড় বড় নেতা, এদের নামেই ওয়ারেন্ট টোয়ারেন্ট বেরোয়। বলুন ঠিক কি না? সে যাই হোক, আপনি ঠিক দেখেছেন তো? ওয়ারেন্ট আমার নামেই তো?
কনস্টেবল – মশাই, ছাব্বিশ বচ্ছর পুলিশে চাকরী হয়ে গেল। হু হু বাবা! একটা ওয়ারেন্ট দেখতে ভুল এই শর্মার হবে না। (পকেট থেকে ওয়ারেন্ট বার করে) এই তো, আপনারই নামে ওয়ারেন্ট। এই যে পরিষ্কার লেখা আছে জগাই মিত্তির।
জগাই – উঁহু, তবে তো হলো না। নাকের সামনে থেকে সুযোগ ফস্কে গেল। একি অসম্মান!
কনস্টেবল – তার মানে? কিসের অসম্মান?
জগাই – আরে এখানে তো লেখা আছে শুধু জগাই! কিন্তু আমি তো চতুর্থ জগাই!
কনস্টেবল – চতুর্থ! না এখানে কোথাও চতুর্থ বলে কিচ্ছু লেখা নেই। থাক আমি বরং থানায় একবার ঘুরে আসি। বড়সাহেবকে একবার দেখিয়ে ভালো করে জিজ্ঞেস করে আসি।
জগাই – না-না-না, সেটি হবে না। এয়েচেন যখন তখন আমাকে নিয়ে যেতেই হবে। আপনি জানেন আমি কোন বংশের ছেলে? আমার একটা প্রেস্টিজ আছে না? পুলিশ এল, ওয়ারেন্ট বার করল, অথচ আমাকে গ্রেপ্তার করল না। কেন? আমি কি এলেবেলে? সমাজে কি আমার স্ট্যাটাস নেই নাকি?
কনস্টেবল – এ তো ভালো মুস্কিল! চতুর্থ জগাই লেখা না থাকলে আমি গ্রেপ্তার করব কি করে? আইনে ব্যাপারটা টিকবে না।
জগাই – তাও তো বটে! আচ্ছা আপনি বসুন, আমি এই বাফুমুটা খেয়ে নিই। হু হু জাপানী খাবার!
কনস্টেবল – জাপানী! কি বললেন? বামুফু?
জগাই – না না, বামুফু নয়, বাফুমু। মানে বাতাসা-ফুলুরি-মুড়ি। এই হলো গে আমার জাপানী খাবার। হু হু দ্য গ্রেট জলখাবার অব দ্য গ্রেট জগাই দ্য ফোর্থ।
কনস্টেবল – ধ্যাত জাপানীরা ফুলুরি খায় নাকি! মুড়ি বাতাসা জাপানে পাওয়া যায় নাকি?
জগাই – হ্যাঁ রে দাদা হ্যাঁ। সব পাওয়া যায়। পুলিশে চাকরী করেন বলে কি লেখাপড়া একদম করেন না। যাকগে, বসুন। বলুন দেখি কত নেবেন?
কনস্টেবল – (ভ্যাবাচ্যাকা) কিসের কত?
জগাই – মানে বসতে কত নেবেন? কত টাকা?
কনস্টেবল – মানে? টাকা মানে? বসতে টাকা নেব কেন?
জগাই – না, মানে বাপ ঠাকুর্দার আমল থেকে দেখে আসছি পুলিশ মানেই হলো উঠতে টাকা, বসতে টাকা।
কনস্টেবল – আমার বসে কাজ নেই। থানা থেকে ঘুরে আসি। আপনি অপেক্ষা করুন। আমি এই যাব আর আসব।

(চলবে)

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

1 thought on “স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ৮ম পর্ব

  1. একাঙ্ক এই নাটক এর দর্শক হয়ে আছি যেন। অভিনন্দন প্রিয় কবি সৌমিত্র। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।