স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ৯ম পর্ব

স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ৯ম পর্ব

জগাই – না দাদা! সেটি হচ্ছে না। যারাই বলে এক্ষুনি ঘুরে আসছি, তারাই আর আসে না। এ আমার দেখে ঠকে অনেক শিক্ষা হয়েছে। দিব্যি ডিম নিল। হাতে নেওয়ার পরে বলে, এই যাহ্‌! জগাই খুচরো আনতে ভুলে গেছি। এখুনি এসে দিয়ে যাচ্ছি। ব্যাস! সেই যে যায় এক্কেবারে পগাড় পার। আর টিকিটি মেলে না।
কনস্টেবল – কেন? আমি আপনার কাছে ডিম নিয়েছি নাকি?
জগাই – না-না, ডিম নেবেন কেন? হে হে…আমি তাই বলেছি কি? অবশ্য ইচ্ছে হলে নিতেও পারেন। পুলিশ তো সাবান টু সেফিটিপিন সবই নেয়। মানে… বলছি… আর… কি… যে… ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না। হাজার হোক আপনি পাড়ার পুলিশ। বাড়ী বয়ে এসে ডাকলেন। আপনাকে কি খালি হাতে ফিরে যেতে দিতে পারি! আমাদের বংশে অতিথিকে কেউ খালি হাতে ফিরে যেতে দিয়েছে কখনো? না-না, আমাকে নিয়ে যেতেই হবে। এই আমার খাওয়া শেষ। চলুন।
কনস্টেবল – তারমানে! কি করে আপনাকে নিয়ে যাব? নামেই তো মিলছে না!
জগাই – তা হোক। তবুও আমাকে নিয়ে যেতেই হবে। পুলিশ তো হামেশাই একে তাকে তুলে নিয়ে যায়! ওয়ারেন্ট নিয়ে আর কজন কে ধরে? কতবড় সম্মানের ব্যাপার বলুন তো?
কনস্টেবল – হুম, আপনাকে নিয়ে যাই , আর তারপরে রাজ্যের যত দিদি আর দাদারা ঝাঁপিয়ে পড়ুক। ভুল লোককে লক আপে কয়েদ! কাগজের হেডলাইন। মানবাধিকার কমিশন। ওরে বাবা! পেট টা আবার কেমন মোচড় দিচ্ছে!
(জগাই হঠাৎ হাত তুলে নাচতে শুরু করে)
জগাই – ইউরেকা – ইউরেকা! পেয়েছি – পেয়েছি!
কনস্টেবল – এই রে! এই – এই মশাই! কি হলো? আরে হলোটা কি? এখনো তো এক ডান্ডাও দিইনি। এরকম করছেন কেন?
জগাই – শুনুন, অপরাধীদের কি একটাই মাত্র নাম থাকে?
কনস্টেবল – কস্মিনকালেও না।
জগাই – অ্যাই ঠিক বলেছেন। কি রকম নাম হয় ওদের?
কনস্টেবল – ধরুন, কাটা ফটকে ওরফে ফটিক। কানা কেষ্ট ওরফে ফাটা বিষ্টু। গন্নাকাটা শাকিল ওরফে লঙ্কাবাটা ভোকিল।
জগাই – জগাই ওরফে চতুর্থ জগাই।
কনস্টেবল – অ্যাঁ! (উইকেট কিপিং এর ভঙ্গীতে কিছুক্ষণ জগাই এর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে। তারপর আচমকা দৌড়ে গিয়ে জগাইকে জাপটে ধরে চীৎকার করতে থাকে) পেয়েছি! পেয়েছি! আসামী জগাই ওরফে চতুর্থ জগাই প্রেপ্তার! স্যার! স্যার! ওপর থেকে তাকিয়ে দেখুন স্যার ছাব্বিশ বছরের চাকরীতে এই প্রথম একজন সত্যিকারের আসামীকে ধরতে পেরেছি স্যার! নো প্রক্সি। স্যার এবার কিন্তু থানায় ডাক তোলার কাজ আমাকে দিতেই হবে। হুঁউঁউঁউঁউঁউঁ… (বাচ্চাদের বায়নার মত আওয়াজ করে)
জগাই – আরে ছাড়ুন ছাড়ুন মশাই! করছেন কি! কাতুকুতু লাগছে যে! হিহিহি…
কনস্টেবল – না না! ওসবে ভুলছি না। আসামীকে হাতে পেয়ে থুড়ি বগলে পেয়ে ছেড়ে দিই, আর আপনি ফুড়ুৎ! এত বোকা নাকি আমি!
জগাই – আরে! এতজোরে চেপে ধরলে আপনার পেছন লিক করে যেতে পারে। সেটা ভেবেছেন! আপনার পেট টা ঠিক নেই।
কনস্টেবল – ও হ্যাঁ, ঠিক আছে। (ছেড়ে দেয়) কিন্তু পালাবেন না প্লিজ!

(চলবে)

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ৯ম পর্ব

  1. চোখমুঁদে দর্শক হয়ে আছি প্রিয় কবি সৌমিত্র। শুভ সন্ধ্যা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।