রক্ত এবং দিনপ্রতিদিন

রক্ত এবং দিনপ্রতিদিন

নদীর শুকনো চর বিদ্ধ করে
ছলাত্ …
একদলা রক্তকণা ছিটিয়ে লাল
রাজপথ।

রক্ত দেখলেই একদল উৎসুক
খুঁটে খুঁটে হিমোগ্লোবিন
ভাঁড়ারের সাম্বৎসরিক জোগাড়,
রক্ত দেখলেই কারো খিদে পেয়ে যায়।

আরও একদল ভুরভুর সুগন্ধি রুমাল
নাকে চেপে দ্রুত সরে আসে,
রক্ত দেখলেই তাদের ওয়াক…

অথচ সময় অসময়ে টিভির চৌকো
বাক্স তাদের ডাকে – তইতই…তইতই…
সব্জিবাথানে সামান্য অন্যমনস্কতার
একফোঁটা রক্তে হৈচৈ ব্যান্ডএড
রাঙাজবা থেকে কেয়া শেঠ
রক্তরং সিঁদুরের জন্য হাপিত্যেশ
ব্রাহ্মমূহুর্তে সূর্যের রক্তরঞ্জিত আকাশে
ওহম জবাকুসুমসংকাশ …
অথচ অন্য গ্রুপের রক্তে
হে ঈশ্বর, বড়ই অ্যালার্জি!

এরচেয়ে শপিংমলের ঝংকৃত জলুস
এপাড় ওপাড়ের কট্টর দলের গোপন
আঁতাতে কফি মগে তুলকালাম হারিকেন
আর রাতদিন দিনরাত
প্রেম প্রেম খেলা
ক্রিকেটের তুমুল জ্বর
আর যত টিকি দাড়ির ফতোয়ায়
উপোসের রক্ষণাবেক্ষণ,
আহহা! য়হি তো হ্যায় জিন্দেগী ইয়ার!

এখন অনেক বেশী জরুরী
গরু খাওয়া বিষয়ক বৃত্তান্ত
পরকীয়া রমন কিম্বা
দুহাজার স্কোয়ার ফিটের ঝাঁ চকচকে
ফ্ল্যাট আর আনুষঙ্গিক টন টন ফার্নিচার,
এখন অনেক বেশী জরুরী
জরুরী অবস্থা, নেতাজীর বেঁচে থাকা,
পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রাজা,
দুর্গাপুজো, ঈদ, দেওয়ালির
ফুটফুটে ব্র্যান্ডেড পোষাক।

রাজপথের অচ্ছুত রক্ত ক্রমশঃ
শুকিয়ে কালো হয়
আঁসটে গন্ধ ছাড়ে
দূষণ মুক্তির জন্য
প্রয়োজন হয় আরো এক ঝলক রক্তের।

পিঠে হাত দিয়েও আজকাল
মেরুদণ্ড খুঁজে পাওয়া যায় না,
এসময় রক্তের জন্য চাপ নেয় কোন শালা ! …

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

8 thoughts on “রক্ত এবং দিনপ্রতিদিন

  1. পিঠে হাত দিয়েও আজকাল
    মেরুদণ্ড খুঁজে পাওয়া যায় না,
    এসময় রক্তের জন্য চাপ নেয় কোন শালা ! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. "পিঠে হাত দিয়েও আজকাল
    মেরুদণ্ড খুঁজে পাওয়া যায় না,
    এসময় রক্তের জন্য চাপ নেয় কোন শালা ! …"

    –আবার মুগ্ধ হয়ে পড়লাম!

  3. রাজপথের অচ্ছুত রক্ত ক্রমশঃ
    শুকিয়ে কালো হয়
    আঁসটে গন্ধ ছাড়ে
    দূষণ মুক্তির জন্য
    প্রয়োজন হয় আরো এক ঝলক রক্তের।

     

    * ভাব, ভাষা, উপস্থাপনা কৌশল সবই অপূর্ব হয়েছে প্রিয় কবি দাদা… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  4.  

     

     

    রক্ত এবং দিনপ্রতিদিন – ভালো লাগলো রক্ত দেখে দেখেই আজকাল দিন কাটে, প্রতিদিন আসে।

    বেঁচে থাকতে হবে রক্তের ভাগাড়ের মধ্যেই। 
    কবিতায় ভালোলাগা রইলো সৌমিত্র দা 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।