Be positive, be enlightned.
কক্ষনো কোনো বাঙালির সাথে কথা বলার সময় আমি ইংরেজী বলিনা। অপরপক্ষ কথার মাঝে যদি ছটা শব্দের মধ্যে তিনটে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেন তাহলে যথোচিত সৌজন্য বজায় রেখেই বাংলায় তার উত্তর দিই। আর অপরপক্ষ অপরিচিত হলে তাঁকে পরিষ্কার বলি, আমি একজন অশিক্ষিত ঘেসুড়ে, আদৌ ইংরেজী জানিনা বা বুঝিনা। কিন্তু আজ শুরু করলাম ইংরেজী দিয়েই, কারন মনে হলো আমি যা বলতে চাই তার সঠিক প্রতিশব্দ বাংলায় খুঁজে পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।
সঠিকভাবে বলতে গেলে আমার কি যোগ্যতা যে আছে তাই অনেক ভেবেও বার করতে পারিনি। শুধু হাসতে পারি আর অকাতরে বিলিয়ে দিতে পারি ভালোবাসা। এমনকি আমাকে বিদ্রুপ করলেও। যাই হোক আমার বায়োডেটা দিতে এখানে বসিনি। কিছু ভাবনা তাড়া করে প্রতিনিয়ত বাস্তবের মাটিতে পা রাখলেই, সেগুলোই ভাগ করে নিতে এলাম।
‘কেমন আছেন?’ – এই প্রশ্ন করলেই জবাব ত্বড়িৎগতিতে ছুটে আসে – ‘নাহ, একেবারেই ভালো নেই’। প্রত্যেকেই মনে করেন তাঁর মতো সমস্যা আর কারো নেই। প্রত্যেকেই মনে করেন তিনিই সবচেয়ে বেশি কর্মগত কিম্বা সাংসারিক চাপে আছেন। তাঁরই আর্থিক, সামাজিক, মানসিক অবস্থান বিপন্ন। অনেক সময় সমস্যায় আক্রান্ত হবার আগেই অনাগত সমস্যার ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েন। আসলে এই পুরো ব্যাপারটার জন্যেই যে দেশ কাল জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বর্তমান আর্থ-সামাজিক কাঠামোই দায়ী, এতোটা তলিয়ে দেখেন না কেউ। যারা মুখে বলেন, তাঁরাও আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস করেন না। তাই, সমস্যার বেড়াজালে বন্দী থেকেই কাটিয়ে দেন সারাজীবন।
একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, মাথা ঠান্ডা রেখে মোকাবিলা করা, আর সারাদিন শুধু সমস্যার কথাই না ভেবে চোখ মেলে পরিপার্শ্ব কে দেখা, উপভোগ করা। আবার যথাসময়ে নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা। এটাই এই রোগের দাওয়াই।
অনেকে রোগের কথা বলতে খুব ভালোবাসেন। সর্বদা পকেটে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঘোরেন। তাঁরা প্রত্যেকেই নাকি সবসময় সেরা ডাক্তার কে দেখান আর সেইসব উৎকৃষ্ট চিকিৎসকেরা সেই মহামূল্যবান প্রেসক্রিপশনে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ওষুধ তাঁদের লেখেন। আমার মনে হয় এও এক ধরনের স্টেটাস সিম্বল বলে তাঁরা মনে করেন। কিন্তু সারাদিন রোগের কথা বলতে বলতে যে তাঁরা নিজেরাই মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছেন, তা খেয়াল করেন না।
হামেশাই দেখি প্রেম নিয়ে সাঙ্ঘাতিক হাহুতাশ। সত্যি কথা বলতে কি প্রেম ব্যাপারটা আমার বেশ পছন্দসই। কেউ একটু ফিক করে হাসলেই আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। কিন্তু তাই বলে সবসময়ই প্রেমকে ধর ধর – গেলো গেলো আর তারপরে হাপুস কান্না, নাহ এতো ব্যর্থ প্রেমিক বা প্রেমিকা সেজে আলটিমেট রেজাল্ট জিরো। আসল তো কিছু সৃষ্টির প্রত্যাশা। সেই সৃষ্টি যে কোনো মাধ্যমেই হতে পারে। চোখ খুলে প্রতিমুহূর্তে চারপাশকে দেখলেই অনন্ত উপাদান খলবল করে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। সেগুলো মনের ক্যামেরায় তুলে পালিশ করে ফেলে দিলেই ঝকঝক করে মাতিয়ে দেবে, এটাই আমরা ভাবিনা।
আচ্ছা! এই এতো এতো কাঁড়ি কাঁড়ি রাজনৈতিক দল আর সেগুলোর নেতাদের মধ্যে মোদির বিরাট সাফল্যের কারন কি? অনেকে হাঁ হাঁ করে বলে উঠবেন কোনো একটা নির্দিষ্ট কারন নেই। তারপরেই সাড়ে তিনশো পাতার বিশ্লেষণ হাজির করবেন। কিন্তু একজন আম ভোটার, যে কিনা সরবৈব ভুক্তভোগী আর বিপর্যস্ত, যার কাছে ২০০২ এর গুজরাত কিম্বা গোধরা নারণিয়ার মতই কোনো রূপকথার দেশ যার নামই সে শোনেনি (কারন এইসব ঘটনা আমাদের অপদার্থ রাজনীতিকদের জন্যে কিছু শহুরে পড়াশোনা জানা মানুষের বাইরে পৌঁছায়নি), সে ওই হাজার চিৎকৃত কণ্ঠস্বরের মধ্যে মোদির গলাকেই পজিটিভ মনে করল। সারা ভারত জুড়েই এটা হয়েছে। আর অতীতেও সব সাফল্যের প্রাথমিক কারন কিন্তু ইতিবাচকতা, এটা আমরা ভুলে যাই।
সর্বদা নেতিবাচক হলে তা দু একদিন চর্চার বিষয় হয়, তারপর তা একঘেয়ে হয়ে যায়। সমস্যা থাকবেই। কিন্তু তার সমাধানও আছে। মাঝরাতে অসম্পূর্ণ রান্নার মাঝে যদি গৃহিণী দেখেন জ্বালানী শেষ, তাহলে তিনি প্রথমেই ছোটেন কর্তার কাছে। এবার কর্তা যদি দাঁত মুখ ছরকুটে চুল ছিঁড়তে বসেন কিম্বা হাহুতাশ, গালমন্দ করতে থাকেন, তাতে খাবার ব্যবস্থা হবে কি? না কি তারচেয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে নিকটতম প্রতিবেশীর অতিরিক্ত জ্বালানী ধার নিয়ে আপাত কাজ চালানোই ভালো।
আসল কথা সদর্থক হতেই হবে। আর যেকোনো ঘটনাকে বাঁকা দৃষ্টিতে না দেখে সোজা তার গভীরে ঢুকতে হবে। তারপরে ব্যর্থ হলেও সান্ত্বনা তো থাকবে, যে আমি চেষ্টা করেছিলাম। দুই মহা মহা মানুষের দুটো কথা বলেই শেষ করি। প্রথম বিদ্যাসাগর – ‘কাউকে অবিশ্বাস করে ঠকার চেয়ে বিশ্বাস করে ঠকা ভালো’। দ্বিতীয় সেই বর্তমান বহুল চর্চিত মোদি – ‘একটা গ্লাসে কেউ বলেন অর্ধেক জল, কেউ বলেন অর্ধেক খালি। আমি বলি পুরোটাই ভর্তি। অর্ধেক জল আর অর্ধেক হাওয়ায়’।
___________
সৌমিত্র চক্রবর্তী।
যারা মুখে বলেন, তাঁরাও আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস করেন না। তাই, সমস্যার বেড়াজালে বন্দী থেকেই কাটিয়ে দেন সারাজীবন।
একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, মাথা ঠান্ডা রেখে মোকাবিলা করা, আর সারাদিন শুধু সমস্যার কথাই না ভেবে চোখ মেলে পরিপার্শ্ব কে দেখা, উপভোগ করা। আবার যথাসময়ে নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা। এটাই এই রোগের দাওয়াই।
সহমত প্রিয় কবি কথাশিল্পী সৌমিত্র চক্রবর্তী।
সময়ে নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করাই রোগের দাওয়াই। ভালোবাসা।
আসল কথা সদর্থক হতেই হবে। আর যেকোনো ঘটনাকে বাঁকা দৃষ্টিতে না দেখে সোজা তার গভীরে ঢুকতে হবে। তারপরে ব্যর্থ হলেও সান্ত্বনা তো থাকবে, যে আমি চেষ্টা করেছিলাম।
আন্তরিক ধন্যবাদ সুমন আহমেদ ভাই। ভালোবাসা।
সর্বদা নেতিবাচক হলে তা দু একদিন চর্চার বিষয় হয়, তারপর তা একঘেয়ে হয়ে যায়। সমস্যা থাকবেই। কিন্তু তার সমাধানও আছে। …………. অনেক ভালো লিখেছেন ।
ধন্যবাদ ভাই সালজার রহমান সাবু।
অসাধারণ বিন্যাস হয়েছে কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী। সব মিলিয়ে ভালো থাকুন ভাই।
ধন্যবাদ কবিবোন শাকিলা তুবা।
Be positive, be enlightned.
ইতিবাচক হও আলোকিত হও।
ইতিবাচক হও আলোকিত হও। দামী আবাহন কবি ভাই।
ধন্যবাদ কবিবোন সাজিয়া আফরিন।
আপনার ইতিবাচ ও আলোকিত হওয়ার আহ্বানটা বেশ মজায় লেগেছে।
ধন্যবাদ আলমগীর কবির ভাই।
"অনেকে রোগের কথা বলতে খুব ভালোবাসেন। সর্বদা পকেটে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঘোরেন।"———— কারণ সে আসলে মানসিক রোগী। আমার চেনা একজন; নাম ভজহরি। ক্যাটারাক্ট অপারেশনের পর একচোখ বন্ধ (দস্যুর মতো) সেলফিও সে ফেবুতে পোস্ট দিয়েছিল। সিম্প্যাথি পাবার জন্য। এটা অসুখ; একটা নামও আছে অসুখটার।
"হামেশাই দেখি প্রেম নিয়ে সাঙ্ঘাতিক হাহুতাশ।"———ভজহরির ভিতর এটাও দেখেছি। তার বয়স প্রায় ৭০। ম্যাজিক মিররে ছবি তুলে সে ২৭ হতে চেয়েছিলঃ গালে গোলাপি প্রলেপ ছিল; দাড়ি গোঁফের চেয়ে লাল লিপস্টিক এবং নেইল পলিস বেশি উজ্জ্বল ছিল। এটাও তার অসুখ। পারসোনালিটি ডিজঅরডার!
খুব ভালো লিখেছেন!
অনেক ভালো লেগেছে দাদা।