ডুমিসানি গোবা র কবিতা

waat

লোকটার হাতে হাতকড়া।
লোকটার মুখ মাটির সাথে ঘষটাচ্ছে।
লোকটার ঘাড়ের ওপর একটা নৃশংস হাঁটু।
ওরা কিছু করেনি।

লোকটা পুলিশ অফিসারটাকে বলছিল ‘স্যার প্লিজ.. স্যার প্লিজ..’
ওরা কিছু করেনি।

লোকটা নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাইছিল।
লোকটা বারবার একটু জল খেতে চাইছিল।
লোকটা ক্ষমা চাইছিল।
ওরা কিছু করেনি।

লোকটার নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিলো।
লোকটার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।
লোকটা হিসি করে ফেলেছিল।
ওরা কিছু করেনি।
লোকটা চিৎকার করে কাঁদছিলো ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা, প্লিজ..’
ওরা কিছু করেনি।

আরও ১২ বার…

‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’
‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..’

ওরা কিছু করেনি।

শেষবারের মতো লোকটা ফিসফিসিয়ে উঠলো ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা স্যার, প্লিজ..’
ওরা কিছু করেনি।

লোকটা অজ্ঞান হয়ে গেল।
ওরা কিছু করেনি।

এক প্রত্যক্ষদর্শী দমকল কর্মী ১০০ বার বললেন লোকটার নাড়ি টিপে দেখতে।
ওরা কিছু করেনি।

একজন কাজ থেকে ফেরা স্বাস্থ্য কর্মী বার বার অফিসারদের আবেদন করলেন ‘প্লিজ ছেড়ে দিন, আর গলা চেপে রাখবেন না, ওর নিশ্বাস পড়ছে না!’
ওরা কিছু করেনি।

অক্সিজেনের অভাবে,
শরীরের সব যন্ত্র বিকল হয়ে গেল লোকটার,
ধীরে ধীরে মস্তিষ্কও।
চোখ উল্টে গেলো।
ওরা কিছু করেনি।

ওরা জর্জ ফ্লয়েডকে মরতে দেখলো।
জর্জের জীবন আস্তে আস্তে উবে যেতে দেখলো।
একটা ধীর শীতল মৃত্যু, ওদের হাঁটুর চাপে।
ওরা কিছু করেনি।

একটা নৃশংস হত্যা।
না, ওরা কিছু করেনি।
পাক্কা আট মিনিট।
চারজন পুলিশ অফিসার দেখলো।

জর্জ ‘মা.. মা..’ বলতে বলতে কাঁদলো।
একটা বয়স্কলোক..
তার জন্মদাত্রী মাকে মনে করতে করতে কাঁদলো।
কারণ সে মৃত্যুভয়ে সন্ত্রস্ত তখন,
তবুও ওরা কিছু করেনি।

একটা কৃষাঙ্গ লোক।
একটা নরম দৈত্য।
খুন হলো কারণ তার গায়ের রং কালো।
তবুও, তবুও ওরা কিছু করেনি।

পৃথিবীর উন্নততম দেশ আমেরিকায়।
চারজন পুলিশ অফিসারের রেসিজমের শিকার হলো একটা কালো লোক। জর্জ ফ্লয়েড।

ওদের যোগ্য শাস্তি পাওয়া উচিত।

শান্তিতে ঘুমিও জর্জ।

এই অন্যায় এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠুক সারা পৃথিবী। তোমার কবরে ন্যায়ের গোলাপ ফুটুক।

(Dumisani Goba)

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

3 thoughts on “ডুমিসানি গোবা র কবিতা

  1. একটা কৃষাঙ্গ লোক। একটা নরম দৈত্য।
    খুন হলো কারণ তার গায়ের রং কালো।
    তবুও, তবুও ওরা কিছু করেনি। :(

  2. অন্যের লিখায় পাঠক না হওয়া অথবা নিজের লিখায় মন্তব্যের উত্তর না দিলে আমার মনে হয় পাঠক সংখ্যা কমে যায়। Smile

    শুভ সকাল কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।