বসন্ত এসে গেছে

বসন্ত এসে গেছে

ভোরের স্নিগ্ধ শিশিরে খালি পায়ে হেঁটে যাওয়া। কোকিলের কুহু কুহু কলতান। আম্রমুকুলের ঘ্রাণে ম-ম চারপাশ। বিকেলের মৃদু বাতাসে মন দোলা দেয়। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতিতে বিরাজ করছে স্নিগ্ধ অনুভূতি। এ যেন বসন্তের আগমনী বার্তা। সবাই হয়তো ভাবতে শুরু করেছেন প্রথম বসন্তের দিনটি কীভাবে কাটাবেন।

ফাল্গুন বসন্তের আগমন দুয়ার খুলে দেয়। পাখির ডাকে মুখর হয় সারাবেলা। এ সময় কোকিল তার কণ্ঠ পুরোটাই উজাড় করে দেয় প্রকৃতির মাঝে। শীতও শেষ লগ্নে উপস্থিত হয়ে বসন্তের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে বিদায় নেয় ঋতুবৈচিত্র্যের অবগাহনে। ফাল্গুন মাস উৎসব-আমেজের মাস। নানা উৎসব-আমেজে মেতে থাকে গোটা দেশ। ঐশ্বর্যের অধিকারী বলা হয় বসন্তকে। গাছে গাছে ফুল-পাতার নতুন করে আবির্ভাব মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। নর-নারীর মধ্যে রোমান্টিক এক আবহ তৈরি করতে সে তার অভিনবতা দেখায়। এছাড়া ফুলের সমাহার যেন কোনোভাবেই হৃদয়ের ঝরনাধারায় আনন্দের ফোয়ারা ছড়াতে কার্পণ্য করে না।

ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি পেরিয়ে কচি পাতায় ঘেরা ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ উপহার দেয় বসন্ত। ফুল-ফাগুনে মুখরিত হয়েছে ফুলের সমারোহে। হরেক ফুলের ফুটন্ত রূপ প্রেমিক মনকে উদাসী করে তোলে। নানা রঙের ফুল প্রকৃতির শোভা বাড়ায়। রক্ত পলাশ, শিমুল, কাঞ্চন, মাধবী প্রভৃতি ফুলের সৌন্দর্য প্রকৃতিকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে। এছাড়া গোলাপ, গাঁদা ও ডালিয়া ফুলে ফুলে বাগান ভরে ওঠে। সবুজের রঙের আবিরে ছেয়ে যায় চারপাশ। ঝরা পাতাকে দূরে ঠেলে সবাই যেন নিজেকে একটু সাজিয়ে নিতে চায়। সব কিছুতেই পরিবর্তন আর নতুনত্বের ছোঁয়া লাগে।

সব মানুষই উপলব্ধি করে বসন্তকে। দল বেঁধে ফুরফুরে মনে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে সবুজ পরিবেশে। কেউ যেন ঘরে বসে থাকতে চায় না। ফুলে ফুলে নারীরা নিজেকে সাজাতে ভালোবাসে। ফুল আর নারীর সবটুকু সৌন্দর্য প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। যুক্ত হয় আবেগ-অনুরাগের উদারতা। কৃত্রিমতা বর্জিত বসন্ত বর্ণিল সবসময়। বসন্ত তার উদারতা দিয়ে অনুরাগের ছোঁয়াকে রঙিন সুতোয় বেঁধে দেয়। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দেখে মনে হয় কেউবা নেশার টানে বনে বনে ফুলেল আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। বনানীজুড়ে নবপল্লবের জয়গান। বাংলা প্রকৃতি এখন শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে স্নিগ্ধময়ী বাসন্তী বসনে সেজেছে।

বসন্ত এলেই নারীর মনে লাগে বসন্তের হলদে ছোঁয়া। তারা ফুলে ফুলে নিজেকে সাজাতে চায় বসন্তের প্রথম দিনে। কোন শাড়ির সঙ্গে কোন চুড়ি আবার এলো চুলগুলোকে কোন রঙের ফুলে জড়ালে ভালো লাগবে; সেসব নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন উ”ছল নারীরা। বসন্তে সব মেয়েরই পছন্দ শাড়ি। তবে বর্তমানে একরঙা শাড়ির ট্রেন্ডটাই বেশি। এর সঙ্গে হালকা সাজটা বেশ মানিয়ে যায়। শাড়ি এক রঙের পরলে ব্লাউজটা বাহারি ভালো লাগে। হালকা হলুদ জমিন ও কমলা পাড়ের শাড়ির সঙ্গে লাল ব্লাউজ মানানসই। কমলা রঙের ব্লাউজ পরতে পারেন হালকা সবুজ জমিন হলুদ পাড়ের শাড়ির সঙ্গে। পয়লা ফাল্গুনে ঘটি হাতা, খাটো হাতার ব্লাউজের আবেদন তো আছেই। ব্লাউজে ছোট ঘণ্টা, কলকা ব্যবহার করা যেতে পারে। শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট করে ব্লাউজের রংটা বেছে নিন। গলায় বা হাতে যে

কোনো একটি গয়না পরুন। এছাড়া মেটাল, কড়ির গয়না পরতে পারেন। বসন্তে ঘরে বসেই সেজে নিতে পারেন অনায়াসে। এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিউটি এক্সপার্ট কানিজ আলমাস খান। ‘প্রথমে প্যান কেক বা কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে মুখে বেইস করে নিন। তারপর বাদামি, গাঢ় বাদামি রঙের ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন। সাদা ও সোনালি রঙের মিশ্রণে আইশ্যাডো দিয়ে চোখটাকে সাজাতে পারেন। ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে হবে। তবে সাজে ভিন্নমাত্রা আনতে চাইলে হালকা মেকআপের সঙ্গে ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। ব্লো ড্রাই করে চুলটা খুলে রাখতে পারেন। চুল বড় হলে বেণি করে ফুল পেঁচিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া হাতখোঁপা এক পাশে বা দুই পাশে আলাদা করে বাঁধলে অন্য রকম লাগবে।’

শীত যাই যাই করছে, গাছে গজাচ্ছে নতুন পাতা। প্রকৃতিতে বসন্তের সাজসাজ রব। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। পয়লা ফাল্গুন বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতিতে এক বিশেষ দিন। ফাল্গুনের প্রথম দিনে প্রকৃতির মতোই নতুন সাজে সেজে থাকে শৌখিন তরুণ-তরুণীরা। বাঙালি তরুণ-তরুণীদের কাছে এই দিনটি এক উৎসবের দিন। ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়েরা বাসন্তী রঙের শাড়ি, মাথায় গাঁদা ফুলের মালা পরে মনের মতো সাজায় নিজেকে। বিশেষ করে টিনএজার ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মধ্যেই এই ক্রেজটা বেশি। বাজারে সবসময়ই পাওয়া যায় রকমারি সব হলুদ রাঙা শাড়ি, তবে এই বিশেষ দিনে ফ্যাশনেবল নারীদের চাই ফ্যাশনেবল শাড়ি। আর ছেলেদের চাই মানানসই উজ্জ্বল রঙের ফতুয়া, শার্ট, পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট।

বর্ণিল রং বিন্যাসের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। ফ্যাশন হাউসগুলোতে এবারের ফাল্গ–নে আয়োজন করা হয়েছে শাড়ি, থ্রিপিস, ছেলেদের ফতুয়া, মেয়েদের ফতুয়া, স্কার্ট-টপস, পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট। সব কিছুতেই প্রকৃতির সব উজ্জ্বল রঙের ছড়াছড়ি। রঙ-এর ফাল্গুনের শাড়িতে বাসন্তী ও হলুদ রঙের আধিক্য বেশি। তবে নতুন পাতার রং সবুজও এসেছে শাড়ির ডিজাইনে। তবে পাশাপাশি লাল-কমলা রংকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সালোয়ার-কামিজ, শার্ট, পাঞ্জাবির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বসন্তে যেহেতু ফুলের উপস্থিতি বেশি থাকে, তাই ডিজাইনে ফুলকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রকৃতির বিভিন্ন মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে। এক কথায় ডিজাইনে প্রকৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সুতি কাপড়ে কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে চুনরি, টাই-ডাই, ব্লক-স্প্রে, অ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিন, হ্যান্ডপেইন্ট, বাটিক, ভেজিটেবল রং, কারচুপি, এমব্রয়ডারি, চুমকির কাজ ও মেশিন এমব্রয়ডারি ইত্যাদি।

ঋতুরাজ বসন্ত আসে ফুলে সৌরভ নিয়েই। মাঠের পর মাঠ তখন শর্ষে ফুলেল উজ্জ্বল সোনালি আভায় ভরে ওঠে আর কদিন পরেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আসবে বসন্ত, পহেলা ফাল্গুনে। বাঙালি মুখিয়ে থাকে এই দিনটির জন্য। অন্যরকম ভালোলাগায় দিনটি উদযাপনের প্রতীক্ষায়। আর এমন একটি দিনে প্রিয় মানুষের সঙ্গ দেয় অনাবিল আনন্দ, অনিশেষ সুখময়তা।

এই দিনটি তো আসলে উৎসবে মেতে ওঠার। আর এই উদযাপন নতুন পোশাক ছাড়াও যে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই তো বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্যাশন হাউজ রঙ বাংলাদেশ পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে সাজিয়েছে বিশেষ ফাল্গুন সংগ্রহ। এ প্রসঙ্গে রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস বলেন, ‘এবার হলুদ, বাসন্তী, গোল্ডেন, সবুজ ও নীল রঙে উজ্জ্বল হয়েছে প্রতিটি ফাল্গুনের পোশাক।

মূলত ট্র্যাডিশানাল পোশাকই থাকছে এই কালেকশনে আর রয়েছে ফিউশনের নান্দনিক মিশেলের সম্ভার। পোশাকের নকশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহারে। এর মধ্যে রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, এম্ব্রয়ডারি, হাতের কাজ, গ্লাসওয়ার্ক, কারচুপি ইত্যাদি। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, স্কাট সেট, টপস, আনস্টিচ, কুর্তা, সিঙ্গেল পালাজ্জো, সিঙ্গেল ওড়না, ব্লাউজ আর ছেলেদের পোশাকে রয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, কাতুয়া। ছোটদের সম্ভারে আছে সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, ফ্রক, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, কাতুয়া। উৎসবের পরিপূর্ণতার জন্য পাবেন যুগল আর পরিবারের সবার জন্য একই থিমের পোশাক। এছাড়া আরো রয়েছে জুয়েলারি, মেয়েদের ব্যাগ, পার্স ও উপহার সামগ্রী হিসেবে রয়েছে নানা ডিজাইনের মগ।’

6 thoughts on “বসন্ত এসে গেছে

  1. ফাল্গুনি শুভেচ্ছা জানবেন, দিদি। সাথে রইল আগমনী ভালোবাসা দিবসের এক নদী ভালোবাসা  

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।