ট্যাগ আর্কাইভঃ গদ্য

প্রেমের দিন

আজ শহরময় প্রেম প্রেম গন্ধ। আমার শহরে আজ এই ভালোবাসার পুজো পুজো গন্ধ। হয়ত তর্কে অনেকেই হারাবে আমায়, “শুধু আজই কেন ভালোবাসার দিন?” তাহলে বাকি দিনগুলো কি ঝগড়ার? অথচ আজকের দিন আজকেই থেকে যায়, কাল হবার আগে। অতো হিসেব আমি বুঝিনা বা বোঝার চেষ্টা করি না। কিছু হিসেব না মিললেই ভালো লাগে !

মনের কোনে মেঘ জমেছে কদিন ধরেই, বর্ষনও হয়েছে অঝোরে চোখের জানলায়। আজ সকাল থেকেই সেই মেঘ এসেছে ঘরে, খাটের পাশে জানলা ধরে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। জানলা তবু খোলাই ছিল, বৃষ্টি যদি আসে। কদিন ধরেই, কেউ জানে না, চুপ থেকেছি আর, মেঘের কাছে অনুরোধ ছিলো। বরফ গন্ধ যখন তখন শিরায় শিরায়। একটু খানি শান্তি দিবি ধার?

আমি কিন্তু হাসতে পারি, কষ্ট লুকিয়ে বুকে। ঠিক সবার মতো হিসেবে মিল হয়না জানি, অঙ্কে আমি চিরকেলে কাঁচা। যখন তখন রোদ ঝলমলে আকাশে মেঘ দেখাটাই কাল। আমি এখন কি যে করি! আকাশটাকে টেনে নামাই, মেঘ গুঁড়িয়ে নদী, পারতাম ঠিক, আগুন হতাম যদি!

প্রেমের কথা মনেই নেই। শরতের শিউলি আলোয় প্রেমের বিসর্জন, এখন শুধু তুষারপাত সারাটা পথ জুড়ে। নিজের কথা ভুলেই থাকি, মৃত মানুষ যেন। মনের কথাও ভুলেই থাকি, এমন ভুলোমন! সকাল সকাল পলাশ রঙে মনে সাজতে চায় যে কেন?

একলা চলায় অভ্যস্ত আজ। স্বপ্নগুলো মৃত। আমিও তো তাই চেয়েছি, মৃত্যু তবু অনেক ভাল, অপমানের চেয়ে। মানীর শুধু মানই থাকে, এই টুকুই সম্বল। ইচ্ছেরাও জেগে নেই, সবই ঘুমের দেশে। এমনটা কি হবার ছিলো? মন যে আজ ভীষণ কঠিন, কিছুতেই হয়না সে দুর্বল।

তবে কি সবটুকুই ভুল? মেয়ে জন্ম ভুল, বৃদ্ধি ভুল, বিশ্বাস ভুল, ভালোবাসাও তো ভুলই ছিলো ; আজ দিনটাই ভুল। হয়তো বিতর্কের তুফান উঠবে, হয়তো হারাবো সম্মান। আমার আবার অপমান!! ধুর!! সবটাই যার ভুল, তার নাকি মান!

তবু আজ দিনটা শুধুমাত্র ভালোবাসার দিন। প্রেমের দিন। এমনটাই ভেবেছিলাম কখনো। এই লেখাটা অন্য ভাবে লিখতেও চেয়েছিলাম। সাগরের ঢেউ এসে বারবার মুছে দিচ্ছিল আমার সেই লেখা। তাই আকাশ, নদী, মেঘ সব এক হয়েই প্লাবন দিয়েছে ডাক। লবণ জলে মুখ ধুয়েছি; চোখের পাতা ভেজাই নাহয় থাক।

রূপান্তর

জানো কি তোমাকে এখন আর পড়তে পারি না। অথচ তোমাকে পড়তে পড়তে কাটাতে চেয়েছিলাম আরো কয়েক জনম। আরাধনা বলো আর যাই বলো, প্রতিটি চরণ থেকে খুঁজে নিতে চেয়েছিলাম মাধুর্য।
তোমাতেই সন্ধ্যাভরে গন্ধ খুঁজেছি। শেষ না হওয়া কবিতায় তোমাকে গুঁজে রেখে পেরিয়ে যেতাম পাতাদের সম্রাজ্য। অন্ধকারের কোলে রাতেরা আশ্রয় নিলে, তোমাকে পড়তে পড়তেই কেটে যেতো হিমঘুম। চরণ জুড়ে লেপ্টে থাকতো মাতাল ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণসমুদ্রে ডুবে মরেছি কতো সহস্রবার! অথচ সেই তোমাকেই আজ আর পড়তে পারি না।

আচ্ছা এখনো কি কাঁদো? কাঁদলে কেমন হও? লাল না নীল; নাকি বারুদের রঙয়ের মতো দেখায়? কষ্ট পাও? কষ্ট পেলে এখনো কি তোমার চোখের রঙ বদলায়? কোঁচকানো কপালে কি রংধনুর দেখা মেলে? খুব দেখতে ইচ্ছে করে।

জানো তোমাকে এখন আর পড়তে পারি না ঠিকিই। কিন্তু তোমাকে পড়তে পারার সময়টুকুতে তোমাকে লিখতে না পারার যে হলুদ যন্ত্রণা আমাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাখতো তারা আমাকে মুক্তি দিয়েছে। আমি এখন অনায়াসে তোমাকে লিখতে পারি। আরাধনা থেকে জন্ম নেয়া মনোবাসনায় গুঁজে দিতে পারি অজস্র শব্দ।