ট্যাগ আর্কাইভঃ গদ্য কবিতা

কবিতা : তুমি কি কিছুই দ্যাখো না! …”আবৃত্তি সংযুক্ত”

আমার বাবা ছিলেন বর্গাদার
অন্যের জমি আদি নিয়ে ফসল ফলাতেন
আমার বয়স যখন তিন
ঠিক তখনি আমার মা এর মৃত্যু হলো

কিছু দিন পর বাবা বিয়ে করে আনলেন
এক নতুন মা
ভালোই চলেছিলো কিছু দিন
তারপরই শুরু হলো সৎ মায়ের নির্মম অত্যাচার!
শুরু হলো মারধোর আর বকাবকি!

একদিন সৎ মা আমার বাবাকে
বিড়বিড় করে কি যেনো বোঝালেন
পরদিন বাবা আমাকে মেরে পিটে
বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে দড়জা আটকে দিলেন
তখন প্রায় শেষ বিকেল
আমি দড়জায় বসে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
“বাবা দড়জা খোলো! আমাকে কেনো বের করে দিলে! আমার কি অপরাধ!”

কিন্তু কেউ দড়জা খুললো না!
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো
নিকটের জঙ্গল থেকে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছিলো
আর আমি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম!

আমি ছোট্ট একটি মেয়ে
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না
ভোর হতেই আমার সৎ মা আমাকে ডেকে তুললেন
নিয়ে গেলেন বাজারের বাস স্ট্যান্ডে
তুলে দিলেন একটি বাসে
আর বললেন, তোমার নানার বাড়ী পাঠালাম, সেখানে ভালোই থাকবে।

অনেক রাতে বাসের লোকেরা আমাকে নামিয়ে দিলো একটি বড় শহরে
আর বলে গেলো, এই পৃথিবীতে কাজ করে খেতে হয়, তুমি কাজ করে খাও।

আমি ছোট্ট একটি মেয়ে খালি পায়ে হাটতে হাটতে আলো ঝলমলে একটি বাড়ী দেখলাম
ওখানে যেয়ে বারান্দায় আশ্রয় নিলাম
বসে থাকতে থাকতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম

সকালে গৃহকত্রী এসে সব শুনে বললেন, আজ থেকে তুমি এখানে থাকবে, এখানে খাবে, শুধু ঘর মুছবে আর কাপড় কাচবে।

উনারা প্রতিদিন মাছ মাংস দিয়ে ভাত খেতেন টেবিলে বসে
আর আমি ক্ষুদার্থ পেটে বসে থাকতাম রান্না ঘরে
উনাদের খাওয়া শেষ হলে,
গৃহকত্রী একটি প্লেটে একটু ভাত আর একটু শাক ভাজি দিয়ে বলে গেলেন, ঐ খানে লবণ আছে, জলদি খেয়ে কাপড় কাচতে যা।

একদিন সন্ধায় গৃহকত্রী ডেকে বললেন, বাথরুমের কাপড় গুলো ধুয়ে বেলকনির গ্রীলে ছড়িয়ে দিয়ে দে

আমি গিয়ে দেখি অনেক গুলো কাপড়!
আট দশটা জিন্সের প্যান্ট আর অনেক গুলো শার্ট
কাপড় কাচতে কাচতে কখন যে উঠে এসে ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না

সকালে এ অবস্থা দেখে গৃহকত্রী একটা কাঠের টুকরা নিয়ে আসলেন
দেখে মনে হলো কাঠের চেয়ারের একটা ভাঙ্গা পায়া
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি ওটা দিয়ে স্বজোরে আমার পিঠে আঘাত করলেন
সাথে সাথেই আমার দম আটকে গেলো
আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না!
চোখে শুধু অন্ধকার দেখছিলাম!
মুহুর্তেই তিনি তীব্র বেগে আবার আমার পিঠে আঘাত করলেন।
আমি মেঝেতে পড়ে গেলাম!
চিৎকার করতে করতে গৃহকত্রীর দু পা চেপে ধরে বললাম,
“আমাকে আর মারবেন না! আর মারলে আমি বাচবো না, আপনি আমার মায়ের মতো, আমি এক্ষুনি সব কাপড় কেচে দিচ্ছি!!!!!”

একদিন বাসায় অনেক বড় একটা ইলিশ মাছ এলো
এতো বড় ইলিশ মাছ আমি কখনো দেখিনি
উনারা চেয়ার টেবিলে বসে সেই মাছের তরকারী দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন,
আর আমি ক্ষুদার্থ পেটে রান্না ঘরে বসে সেই সুঘ্রাণ পাচ্ছিলাম
একটু পরে গৃহকত্রী আমাকে শুধু মিষ্টি কুমড়োর ভাজি দিয়ে ভাত দিয়ে গেলেন।

আমি ছোট ছিলাম
তাই না বুঝে সেই রাতে ফ্রিজ খুলে এক টুকরা মাছ খেয়েছিলাম
আমি ভূল করেছিলাম

সকালে গৃহকত্রী আমাকে রান্না ঘরে ডেকে নিলেন
বললেন, আমি রাতে গুনে রেখেছি এগার পিচ আর এখন দশ পিচ মাছ?
তারপর বললেন, জামা খোল
আমি জানতে চাইলাম, কেনো খালা আম্মা?
তিনি বললেন, যা বলছি কর হারামজাদী!
জামা খোলার পর বললেন, দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়া
তখনো আমি খেয়াল করিনি তার গ্যাসের চুলোয় একটি খুন্তি জ্বলতে জ্বলতে লালা হয়ে গেছে
মুহুর্তেই তিনি অগ্নি-লাল খুন্তিটি আমার পিঠে চেপে ধরলেন!
আমি অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে তার হাত থেকে ছুটতে চাইলাম!
কিন্তু তিনি তার পা দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরেছিলেন!

আমি দাপাদাপি করতে করতে ছূটে গিয়ে দৌড়ে পালাতে গেলাম
কিন্তু রান্না ঘরের দড়জার ছিটকিনি যে উপরেরটা লাগানো!
আমি ছোট তাই আমার হাত ওখানে পৌছুতে পারে নি!
তিনি আমাকে টেনে এনে আমার বুকে লাথি মাড়লেন!
আমি চিত হয়ে আবার মেঝেতে পড়ে গেলাম!
গৃহকত্রী আমার বুকে আবার লাল খুন্তি চেপে ধরে বললেন, বল আর কোনো দিন ফ্রিজ খুলে কিছু খাবি নাকি!
আমি চিৎকার করে বললাম, আমি আর ফ্রিজ খুলবো না! আপনারা যা দেবেন আমি তাই খাবো!

তিনি আমাকে মেঝেতে ফেলে রেখে চলে গেলেন
আমি জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই মনে হলো কে যেনো সব কিছু দেখেছেন!
আমার দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝড়তে লাগলো!

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,
হে আকাশের মালিক!
হে পৃথিবীর মালিক!
তুমি কি কিছুই দ্যাখোনা!
তুমি কি কিছুই শোন না!………… তুমি কি কিছুই দ্যাখোনা!

https://www.facebook.com/voicemultimedia/videos/640516262967974/

আমার যে ইদানীং কি হয়েছে কিছু বুঝি না

স্ত্রী কে রেখে এসেছি আমার বাবাকে দেখাশোনা করতে
রেখে এসেই বাসায় ঢুকে প্রথমে ছাদে উঠলাম
পতাকা টানালাম।
না। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল বা জার্মানীর পতাকা নয়
আমি টানিয়েছি স্বাধীনতার পতাকা।

হ্যা। বাংলাদেশ তো সেই কবেই স্বাধীন হয়েছে
আজ পঁয়তাল্লিশ বছর পর কেনো স্বাধীনতার পতাকা?

না। আমি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পতাকা টানাইনি
আমি টানিয়েছি মুক্তির পতাকা
স্ত্রী নেই! আমি স্বাধীন! আমি মুক্ত! সেই স্বাধীনতার পতাকা।

এখন কেউ বলার নেই, “এতো রাতে ল্যাপটপে কী করো?”
কেউ টাকার হিসেবের অঙ্ক কষতে বসে না এখন
কেউ সকাল সাতটায় ঘুম থেকে ডেকে টেনে তোলে না
আমি স্বাধীন! আমি মুক্ত!

কিন্তু ইদানীং যে আমার কী হয়েছে না!
কিছু বুঝি না।

এইতো গতোকাল রান্না ঘরে গিয়েছিলাম
ল্যাপটপ রেখে মাছ মাংস রান্না বড্ড ঝামেলা মনে হয়
কিছু চাল ডাল মিশিয়ে তেল নূন পেঁয়াজ মরিচ পাতিলে তুলে
পানি দিয়ে গ্যাসের চুলো অন করে আবার ল্যাপটপে বসে পড়লাম।

একটা কবিতার আবৃত্তি শুনছিলাম
তারপর কি যেনো লেখাযোখা করছিলাম
হঠাৎ একটি পোড়া গন্ধ পেলাম!

রান্না ঘরে দ্রুত যেয়ে দেখি খিচুড়ি পুড়ে গেছে
একটুও পানি নেই
দ্রুত চুলা থেকে নামিয়ে সিঙ্কে নিয়ে কল ছেড়ে পানি দিলাম
চুলোয় তুলে দিয়ে আবার ল্যাপটপে
আবার পোড়া গন্ধ!
রাগ করে চুলা থেকে নামিয়ে রেখে
আবার এসে বসলাম ল্যাপটপে।

একটু পর খেতে গিয়ে দেখি খিচুড়ির রঙ কালো
আর পোড়া গন্ধ!
একটা ডিম ভেঁজে নিয়ে ওটাই খেলাম
কৈ মন্দ লাগেনিতো!
শুধু পোড়া গন্ধ লাগছিলো।

আমার যে ইদানীং কি হয়েছে না!
কিছু বুঝি না।
ল্যাপটপে বসে সিগারেট টানতে টানতে
সিগারেটের ছাই এস্ট্রেতে না ফেলে পানি ভর্তি গ্লাসে ফেললাম।

আমি যে কয়েকদিন সূর্য দেখলাম না!
হঠাৎ ল্যাপটপের ঘড়িতে দেখি রাত সাড়ে তিন টা
দৌড়ে গিয়ে ওয়াইফাই, ল্যাপটপ, মোবাইল বন্ধ করে বিছানায়।

আমার যে ইদানীং কি হয়েছে না!
কিছু বুঝি না।
অনেক রাতে লোরকা, পাবলো নেরুদা, তলস্তয় এসে কথা বলে
কথা বলে জীবনান্দ, সুকান্ত আরও অন্যান্নরা।

আমার যে কি হয়েছে!
আজ সকালেই ল্যাপটপে বসে থাকতে থাকতে
একটা বড়ই মুখে দিলাম
মুহুর্তেই বুঝলাম ওটা ছিলো একটা আস্ত বোম্বাই মরিচ!

যখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসে সর্বত্র তখন এই বার্তা আগত হয়

যখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসে সর্বত্র তখন এই বার্তা আগত হয়

অতিন্দ্রিয় এক বার্তা কিভাবে আসে আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি যখন অন্ধাকার ঘনিয়ে আসে সর্বত্র তখন এই বার্তা আগত হয়। বলে-“ জাগো আনন্দোৎসবে আর প্রস্তুত হও, দ্যাখো বসন্ত আসছে অই আর শোন গ্রীষ্মের আগমনী সংগীত। শুন, শীত আজ মৃত।” সুতরাং বার্তা এসে গেছে, বসন্তের আমেজ সারা বন-প্রান্তরে।

এবং মনে হতে তো পারেই, পৃথিবী জীবনের নব-জাগরনে উঠেছে জেগে। যে পাখি ডাকেনি আগে কখনো ডেকে উঠলো। শীতের তীব্র মৃত হীম হাওয়া উধাও এবং গাছেরা সবুজ শাড়ীতে আবৃত হয়ে নব-বধুর সাজে সলজ্জ সজ্জিত। ফুলেরা উকি মেরে দেখছে শীত গিয়াছে কিনা, তারা প্রস্ফুটিত হতে চায় লাজ-রাঙা সাজে খুলে ফেলে অবগুন্ঠন।

এবং আরেক বার্তা এসে যায়। একমাত্র এই সময়ে সে বলে,“ তোমার প্রস্তুতি শেষ করো, সামনে এগিয়ে যাও, এলো গ্রীষ্ম তার সাথে সাক্ষাত করো।” এবং তাইতো পাখিরা, গাছেরা আর ফুলেরা সামনে এগিয়ে যায়, গোল হয়ে নৃত্য করে গ্রীষ্মের দরবারে আর গ্রীষ্ম তার উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়, তাদের সকলকে জড়িয়ে ধরে।

এবং আরেক বার্তা এসে যায়। সকলের হৃদয়ে দু:খ ছড়িয়ে দিয়ে বলে,“ বল বিদায় হে গ্রীষ্ম আর হেমন্তের সাজে নিজেকে সাজিয়ে নাও।” এবং তারা জেনে যায় শীতের আর দেরী নাই,সেইসব ঔষধি ফলন ফলে যায় , ফলেনি যা আগে। আর তারা জেনে যায়, সময় হলো তাদের বিয়োগের তাই তারা বীজের মাঝে নিজের অস্তিত্বকে স্থানান্তরিত করে নেয়। গাছেরা নেয় উজ্জ্বল রূপ গ্রীষ্মকে প্রলুব্ধ করতে। এখন সময় মহান উৎসবের, বছরের অল্প সময়ে যা দৃশ্যমান হয়। সমস্ত জল-জঙ্গল গ্রীষ্ম রাজের শেষ রাজস্ব দিয়ে যায়, শীতের ভয়াল থাবায় লগ্নী হওয়ার আগে শেষ মুক্ত নি:শ্বাস নিয়ে নেয় তারা।

এবং নদীর জলের থেকে আলাদা হয়ে যায় ডোবা আর পুকুরগুলো; এখন তারা স্বতন্ত্র আর শূণ্য নয়, এখন তারা বিস্মিত সুন্দর। গাছের উজ্জ্বল পাতারা ঝরে পরে পুকুরের জলে, কাদারাঙা জলের মাঝে একটা রঙের আচড় টেনে যায় এবং সমভূমিগুলো ঝরা পাতার রঙে চিত্রময় হয়ে উঠে। বাতাসে মচমচ আনন্দ আর সূর্য্যের আলোর ফোকাসে চিক চিক আলো-স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়। গাছের ডালে পাখিরা দৃশ্যমান হয়ে উঠে, কাঠবিড়ালী আর খরগোশেরা আর লুকোতে পারে না পাতার আড়ালে।

এবং শীত আসে কুয়াশার চাদর আর বরফের স্বচ্ছতা নিয়ে। শিশিরের ছোঁয়া আর বরফের আচ্ছাদনে শীতও অনন্য সৌন্দর্য্য নিয়ে আসে হৃদয়ে যখন সূর্য্য উকি দেয় চিক চিক আলো নিয়ে। কিন্তু জঙ্গলের প্রাণীরা সে সৌন্দর্য্যে মেতে উঠে না। ঠান্ডা মৃত্যু আর তারা ক্ষুধার্ত। তারা বসন্তের আগমনী বার্তার অপেক্ষা করতে থাকে। অতিন্দ্রিয় এক বার্তা কিভাবে আসে আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি যখন অন্ধাকার ঘনিয়ে আসে সর্বত্র তখন এই বার্তা আগত হয়। বলে-“ জাগো আনন্দোৎসবে আর প্রস্তুত হও, দ্যাখো বসন্ত আসছে অই আর শোন গ্রীষ্মের আগমনী সংগীত। শুন, শীত আজ মৃত।” সুতরাং বার্তা এসে গেছে, জীবনের আমেজ সারা বন-প্রান্তরে।