ট্যাগ আর্কাইভঃ চারু মান্নানের কবিতা

বসন্ত রাঙা মোহ

——বসন্ত রাঙা মোহ

চৈত্রের পাতা ঝরা সাঁঝ
নিঃসঙ্গ আকাশে
রৌদ্র প্রতাপ!
খরায় কনকনে তৃঞ্চা
মনন তেজে
পোড়ায় বার বার;

ক্ষয়িষ্ণু কাল
বসন্ত রাঙা মোহ
জানান দেয়
সোনালু ফুলে
রৌদ্র পোড়া চকচকে মোহ
অম্ল স্বাদে; চেখে চেখে যায়
ঐ কালো ঠোঁটের কাক;

তৃঞ্চায় যায়
তৃঞ্চায় ফিরে
বিমুখ বিবর্ণ চাহনিতে
ঐ দূরে বসন্ত মেঘ
অনাহারী আকাশ ছুঁয়ে রয়।

রূপক কবিতা/ ১৪২৫/চৈত্র/ বসন্তকাল

পথে যেতে যেতে মগ্নতা ঘুচে যায়

পথে যেতে যেতে মগ্নতা ঘুচে যায়

পথে যেতে যেতে মগ্নতা ঘুচে যায়
বাসনা গুলো স্তুতি হারালো, প্রকৃতির নানা অনামি অবয়ব
সমুখে আমার! বিভ্রান্তির কাঙাল যেন;
কেউ বা নুয়ে পড়ছে
কেউ বা থমকে আছে
কেউ বা যেতে যেতে পিছে ফিরে

চেনার একখান প্রবাদ গুনে
অমুকের সমুকের কে জানি কে
চেনার সূত্র ধরে টানে!
খেয়া মাঝির পথের পাথেয় যেন;
সময় কে খুঁজে ফিরে
কবে কোথায় যেন? বেড়িয়ে আসে অকপটে
কত দিন পর এলে এ পথে?
সেই যে গেলে আর ফিরলে না
পথের মোচর ঘুরেছে এখন
প্রত্যহ নতুন আলখেল্লা পথ যে বয়ে যায়;

কিন্তু আমি তুমির বিষম যাতনা,
শিশির ভেজা মাকড়ষার জ্বালে দিব্বি গেঁথে রয়
রৌদ্র তাপে শুকায় আবার মেঘ জলে ভিজে
কতক নন্দন ছায়া উড়ে উড়ে আসে,,,

জীবনমুখী, রূপক কবিতা/ ১৪২৫/ ফাল্গুন/ বসন্ত কাল।

কর্ম গুনে স্বপ্ন সেঁটে বাঁচ

——-কর্ম গুনে স্বপ্ন সেঁটে বাঁচ

চুপসে থাকা বেলুন
অনাথ চুপচাপ থলেতে পড়ে রয়।
বাতাস ভরে এবার তা ফুলে ফেঁপে মস্ত রাঙা
রঙিন বাতাসে টলে; ধায় আকাশে
এবার মনে বেশ অহঙ্কার তার দম্ভ ভরে কত কথা কয়?

ফড়িং তুই আয় না আমার সাথে
দেখাব তোরে নীল আকাশের গা
ঘাস ফুলের ডগায় তো রইলি পড়ে
এবার একটু মন খুলে গা;
আপাদমস্তক বাতাস খেলে খেলে!

বেশ তো আছি, সবুজ কোলাহলে
পাখি ভ্রুমর সনে দক্ষিণা হাওয়া গায়ে ছুঁয়ে
মমতা মাখা বড্ড আদুরে মায়ার টান
কেমনে ছিঁড়ে আসি বল?

মিছে মরীচিকা পিছে ছুটে
বেলা গেলে ঢলে তুমি যে যাবে চুপ্‌সে!
স্বপ্ন উড়াল বামন জীবন তোর; রও পড়ে থলেতে
একটু আদর মাখা হাওয়া পেলে তবেই উঠ জেগে
এতেই তুমি, স্বস্তি এঁটে বাঁচো
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন এবার ছাড়! নয় তো ফুলেফেঁপে
হবে ফুটস নিঃস্ব; থলেতেও রইলে না আর বেঁচে
উচ্চভিলাসি মনকে এবার একটু বাঁধ,
কর্ম গুনে স্বপ্ন সেঁটে বাঁচ।

রূপক কবিতা/ ১৪২৫/মাঘ/ শীতকাল।

একুশের দলছুট কবিতা

একুশের দলছুট কবিতা

একুশ এলেই বিশ্ব জুড়ে
ভাষার দ্বীপ জ্বালে; হারিয়ে যাওয়া মায়ের মুখে
স্বপ্নের বুলি প্রসন্ন ত্যাজে জাগে।

কোথায় সেই রক্তের বসন?
শহীদ বেদিতে রক্তের চিহ্ন আঁকা; বার বার ফিরে
বজ্রমুঠি বিদির্ণ স্লোগানে।
চেতনা ফিরে বছর ঘুরে
কদর্য অধিকার ছুঁয়ে; অধিকারের পথে শত বাঁধা
শীর্ণ তেজে জেগে উঠে।

একুশ এলেই মর্মমূলে
[বোধের আঙিনায় মায়ার টান]; ঝরে পড়া শীর্ণ পাতায়
গহন লাগা দক্ষিণা বায়ু চেতনার গান গায়।
_____[০১]

একুশ সে তো
[মুক্তির সনদ!] রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার,,,,,,,,,,
শহীদের রক্তে লেখা;

দিয়ে ছিল আরও মুক্তির আকড়
একাত্তরের দিশা! লক্ষ প্রাণের দামে কেনা
সবুজ লালের পতাকা।
লক্ষ মায়ের অশ্রু ভেজা
স্বাধীন সোনার দেশটি পাওয়া; একুশ সে তো
অম্লমধুর ভালোবাসা মায়ের মমতা আঁটা।

একুশ সে তো
কবিতা, গান, গল্প কথা
মায়ের কথার জাদুর চেরাগ; রূপকথার জাল বুনে
মাগো তোমার কথার জালে যাই যে ফেঁসে
তাই তো মায়ার স্বপ্ন বুনি সকাল সাঁঝে।
_______[০২]

পাতার ঝরা দিন শেষে
দক্ষিণা হাওয়া বয়; নগর জুড়ে একুশ এলো
বই মেলার গান গায়।

বট তলায় বই পার্বণ বটের ঝুড়ির গায়ে
বর্ণমালার বর্ণ ঝুলে; বাংলা একাডেমির প্রান্ত ছুঁয়ে
বই বিতানের মৌনতা মিলে।

চেতনা ফিরে গানে গানে
অমর একুশের শ্রদ্ধা ভরে; শহীদদের মনে পড়ে
[নতুন বই!] গন্ধ ভারি নতুন বইয়ে স্বপ্ন উড়ে।
_____[০৩]

১৪২৫/ মাঘ/ শীতকাল।

নতুন লেখকের নতুন বই


চারু মান্নানের, নতুন বই
=============================

“একুশ এলে ভুতু সোনা
রং তুলিতে আঁকে,
ফুলে ফুলে শহীদ বেদী
লাল সূর্যটা হাসে।

রং পেন্সিল সাদা কাগজ
বোর্ডের সাথে সাঁটা
রং তুলির ছোপ ছাপ
মনে থাকে বাঁধা।”
============
ভুতু সোনা স্কুল যাবে
রাত পোহালে পরে,
চোখে তার ঘুম ছাড়েনি
বেজায় রাগ মনে।

ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে
ভাবনার আঁকি বুকি,
স্বপ্ন ঘুমে ভালই ছিলাম
রাজ্যের ছুটা ছুটি।
============

ভুতু সোনার পদ্য
এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনীর ৪৩৪ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে ছড়ার এই বইটি।

দলছুট কবিতারা

দলছুট কবিতারা

[মৃত্যু হয়েছে মানুষটার]। পারিবারিক কোলহ। ঠিক সন্ধ্যার মসজিদে আজান পড়ছে সাঁঝ ঘনালো, এমন সময়। নিজ বাড়ির, নীচ তলায় বসবাস। ঝগড়া নাকি মাঝে মাঝেই বাধে। আজ শুরু সাঁঝের আগে। স্বামী স্ত্রী এক সময় হাতাহাতি। মানুষ টা বেড় হল, জেদ মাথা গরম করে। সদর দরজা পেরিয়ে, সমুখ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে, ঝগড়ার সূত্র ধরে রাগারাগি চলছে। এমন সময় রাস্তায় পড়ে গেল। লোকজন ধরাধরি, ডাকাডাকি করতে প্রাণ নাই। গলি পথেই রইল পড়ে মানুষ টা। বিশ গজ দূরে ঘরের দরজা। আর ঘরে ঢুকতে দেয়া হল না।

ঐ তাজা প্রাণ মানুষ টা এখন লাশ।
_____[০১]

রাতভর পাহারায় আঁধার রাত
লাশ টা এখন খাটিয়াতে; গরম জলে গোসল দিয়ে
আতর গোলাপ কর্পূর মেখে।

খাটিয়ার গা ঘেঁসে জ্বলছে আগবাতি
ওয়ারিশদের কান্না আর কান্না; আপন জনদের কত স্মৃতি?
এই বাড়িতেই জন্মেছিল, শিশু, কিশোর, যৌবন কাল।
[মধ্যবয়সী, চল্লিশর্দ্ধো]
হবে হয়তো একচল্লিশ, তেতাল্লিশ; কিংবা পঁয়তাল্লিশ
কিবা আসে যায় তাতে?

যেতে হবে ডাক পড়লে!
কেউ পারবে না টেনে রাখতে? অতি আপন জন
মা সন্তানেরা কই তারা তো পারলে না?
_____[০২]

মৃত্যু মানুষকে কাঙাল করে
মৃত্যু মানুষকে নিঃস্ব করে; মৃত্যু মানুষ চির অভাগা!
বড়ই অসহায় কাল
নিঃস্ব একা কি; কেউ থাকবে না পাশে।

চির অনাথ যেন প্রবাসী
কেউ ডাকবে না আর; সেও শুনবে না
এত এত মায়া কই গেল হায়?
জনম সদা চলা চলে; আকাশ তারায় খুঁজে ফেরা
না চোখে মিলে।

তাই জীবের কত কত স্বপ্ন সুধা ঘুরে
ঘুরে আনাচে কানাচে; সে তো গেল না ফেরার দেশে
মাটিতে শরীর সঁপে।
_____[০৩]

কেমন তরো বিধির বিধান
স্মৃতি পড়ে রয়?
মানুষটার যে প্রাণ নাই শুধু আকাশ পানে ধায়
আত্মা নামের দোলা চলে; উঠল সেই ঘরে
যেমন এসেছিল তেমনি ফিরে গেল।

মাঝখানে বসল স্মৃতির হাট
কত কত সাজানো বাহার?
রংধনু মোলাটে! রাঙা ফেরি, রঙিন ফেরিওয়ালা
স্মৃতির পরতে পরতে ঠাসা
[খতিয়ান বুনা কত কথা]।

নাটাই হাতে রাঙা ঘুড়ি
উড়ে উড়ে খলবল, খলবল মাতা মাতি
টান ধরেছে সুতোয় এবার; ঝড়ে বালুয়ারি
_______[০৪]

১৪২৫/ মাঘ/ শীতকাল।
[গতকাল সন্ধ্যায় সত্য ঘটনার প্রেক্ষিতে]

থমকে যায় চলার পথ

—- থমকে যায় চলার পথ

এই শীতেই তো হারিয়েছি মায়ার কাঞ্চন জঙ্ঘা
যে মায়ায় থমকে থাকে বিশাল আকাশ
থমকে থাকে পাহারের ঝরনা;
দল ভারি কুয়াশার ধুঁয়া
মায়ার আলপনা শিশির ধোয়া মূর্ছনা
বিরহী ঠোঁটে নিত্য পুড়ে মায়ার মর্ম যাতনা
থমকে রয় শিশির বিন্দুর ফোটা
অবারিত উত্তরের ক্ষেপ থমকে যায়
মায়ার মর্তলোক; শুধু চেয়ে চেয়ে বরফ চাঁই
আলোর ফুল ঝুড়ি মায়ার বুননে
এক আত্মিক যাতনা সূত্র ধরে
বহমান কাঙাল মায়া যেন তার পথ হাঁটে
একা কি নির্মোহ অবচেতন ক্ষণ ধরে!

যে পথ হারিয়ে যায়
আর ফিরে আসে না; মায়ার মর্ত্যলোকে
থমকে যায় চলার পথ; হারানোর ধান সিঁড়ি

১৪২৫/মাঘ/ শীতকাল

মা হারা আমার মা

—–মা হারা আমার মা

আমার মা ছিল মা হারা
মা হারা আমার মা; এখন যেমন আমি
অনাথ মা হারা! আগে পাইনি টের
সবই জানা তবু তল খুঁজা হয়নি কখনও
যখন এতিম আমি; মা হারা
তখন খুঁজি, মা আমার এমনি ছিল অনাথ দিশে হারা।

আড়াই তিন বছর বয়সে, মা হারা আমার মা
মামা মামির ফাই ফরমায়েশ শৈশব কিশোর কাটে
মামির আদরে হয়তোবা ঘুচেছিল মায়ের খানিকটা অভাব
সেই মামিই একদিন মা বুনে গেল!
শত যাতনা সয়ে অনাথ মা হারা আমার মা
যৌবনে সংসার আঁকড়ে; অনাথ মার প্রসন্ন সুখ
মা কি তার মায়ের মুখ আঁকতে পেরে ছিল?

না কি আজীবন বুকের ক্ষতে বেঁধে রেখে ছিল?
মায়ের মুখ! জানতে পারিনি কখনও
না কি আমার মতো বুকে চেপে ছিল
যাতনা ঘন নন্দন পোড়া তুষের আগুনে ধুঁয়া;
ধিক ধিক জ্বলে নিত্য পোড়ায় ক্ষণে ক্ষণে,,,

১৪২৫/ পৌষ/শীত কাল।

মাটির পথে মাটির মানুষ

—-মাটির পথে মাটির মানুষ

মাটির পথে মাটির মানুষ
দম্ভ খানিক বটে; কত কত ছাপ আঁকে মাটির পরে
সেই আঁকাতেই জনম ভর চলে পথের বাঁকে বাঁকে।
পথের বাঁক, সোজা পথ! সবই তো মাটির রং এ আঁকা
সুবোধ খোলা নীল আকাশ পড়ে ঢলে পথে পথে।

মাটির রং সুবোধ কালো, মেটে, সাদা, লাল
ধোয়া বালু, আঠালো, কালো জাম
সে তো মাটির অঙ্গ; সোদাই বলে মাটির মানুষ
কয় কথা নানা বেশ নানা জন আদম কোলাহলে।

আদম কোলাহলে পুষ্ট মানুষ পরম্পরা
মাটির সুধা রসে; বাঁচে জীবন অসহায় গুনে গুনে
নিত্য পুরান বাসনা ঘেঁটে ঘেঁটে
রপ কোলাহল একই! তবুও মানুষ বটে;
মাটির শুদ্ধ রস হারিয়ে বাঁচে নিত্য নতুন ঘাটে ঘাটে
প্রণামী অসহায় দম্ভ লয়ে!

১৪২৫/ পৌষ /শীত কাল।
[জীবনমুখী/রূপক কবিতা]

স্বপ্ন খরার বাঁকে

—–স্বপ্ন খরার বাঁকে

একগাদা মিথ্যের বোঝা! চড়িয়েছে যেই
গাধার পিঠে; পড়ল গাধা শুয়ে
বেত্রাঘাত যতই পড়ুক, উঠে না সে তো মোটে!
মিথ্যে বোঝা নাকি বেজায় ভারি?
সইতে না পারে! তাইতো শুনে না প্রভুর হুকুম
টগবগিয়ে চায়; মালিক সোদা দুঃখ বদনে
এবার অন্যখানে যাও।

এবার রাগে মিথ্যের বোঝা; গড় গড়িয়ে কয়
লক্ষ কোটি মিথ্যা যদি মানুষ মুখে লয়
তুই বেটা কোন ছাড়! ক্ষুধার জ্বালা পাস নাই বুঝি টের
ক্ষুধার তরে না কি মিথ্যা সয়? সাথে প্রাণ ভয়ে ও আছে
তাই তো মিথ্যে বাড়তে বাড়তে বোঝা বুনে গেছে!

এই যে মিথ্যের বোঝা! তুই না নিলে, কেমনে যাই
ওড়ে গাধা হোসনে এতো নিষ্ঠুর এমনিই পরম্পরা
ঐ যে দিগন্তের ও পাড়ে; না হলে যে মানুষ মানুষের
মিথ্যার জলজ জলে হাবুডুবু খায়
এবার গাধা উঠে, টগবগিয়ে চায়;
সুখের হাঁড়ি ভরেছে বুঝি ঐ, স্বপ্ন খরার বাঁকে।

১৪২৫/১৮ পৌষ/শীত কাল।
[জীবনমুখী / রূপক কবিতা]

সে তো হারিয়ে গেল পথে

—সে তো হারিয়ে গেল পথে

মেঠো পথ ছেড়ে
সবে যেই মেখেছে
সষেক্ষেত এর হলদে পরাগ
ডানা মেলে সবে যৌবন
দিগন্তের ঐ
অনামি পথে ছুটে ছুটে
রক্ত রাগ প্রেম সদা দেয় দোল
কোজাগরী জোছনা ভাসান
দিগন্তের পথ ফুরিয়ে আসে
আমলকির বনে;
একটু স্থুতিতে
হাজারও স্বপ্ন ঘুড়ি উড়ায়
অমানিশার প্রেম সুধা রসে
বিরহ যাতনা কেটে যায়
কত কত রাত অনাহারী
জোছনা ছুঁয়ে;

রাত পেরুলে
জোনাক জীবন ফুরিয়ে যায়
যেমন আঁধার রাত যাপনে
কতক কালে তেমন
জোনাক জীবন পথে পথে
থমকে যায়; আচনক এক অতীত টানে
যে পথে একদিন তুমি ছিলে
অনাহারী জোনাকি হয়ে
শুধু বুকের পাঁজরে
রক্তক্ষরণ সয়ে;
সপ্তর্ষি বাসনা যায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে,,,
===

রঙধনু মরীচিকা

—রঙধনু মরীচিকা

ডেকো না আর পিছু ডেকো না
দেখতে দেখতে পথের নিশানা,
ধুলা ঝড়ে যায় উড়ে; কদাচিৎ চিহ্ন আঁকে
মাড়িয়ে যাওয়া সবুজ ঘাসের পরে
আধেক হলুদাভ মুর্চ্ছা যাওয়া তার শরীর।

বাতাস ডেকে কয় ও গো স্বপ্নচারী
কত আর রইবে পড়ে পথের ধারে,
আমার মতো করে সঙ সাজো; রঙধনু মরীচিকা
তবেই পাবে ভালোবাসা অঙ্গন জুড়ে
সপ্তর্ষি প্রেম বুকে কাঁদে জলে ভেসে।

পিছনে তো অতীত রয় হেসে
যেন বার বার তারে ডাকে কেঁদে
যে ব্যথা বুঝবে না কখনো; অন্দর মহল জুড়ে
সে তো পড়াবে নিত্য গেয়ে
আধেক বোলে বুক পাঁজরে সয়ে।

স্বপ্ন বয়ে কাঁদায় আঁধার

—স্বপ্ন বয়ে কাঁদায় আঁধার

এখানে আলোয় আলোয় ভরা
তবুও বিদ্রূপ করে মারে টুকরা টুকরা আঁধার
এতটা আলোর মাঝে ও
এই আঁধার যেন চির জাগ্রত;
আলোকে ঠেলে বীভৎস আবরণে জেগে উঠে
বার বার আবার নিমেষ ই মিলিয়ে যায়
এই আঁধার হন্তারক বেশে ঘুরে বেড়ায়
আঁধার কালোতে মিশে।

এখন আলো না কি সভ্যতার?
নতুন সভ্যতা, পেরিয়েছি সেই কত কাল আগে?
এখন তবে নতুন করে কোন আলো;
স্বপ্ন বয়ে কাঁদায় আঁধার
জীবনবোধ আলো ছুঁয়ে ছুটে যুগে যুগে
তারই প্রদাহ যাতনা নিত্য পুড়ায় চিতার মগ্নতায়
যদি মুছে যায় কালো;
শুধু সেই প্রত্যশায় বাঁচে যাপিত কাল।

১৪২৫/ শরৎকাল/ আশ্বিন।

বিস্বাদ আঁকে সর্বনাশে

—বিস্বাদ আঁকে সর্বনাশে

আমি তুমির পর্যায় এখন বিবর্ণ অতীত
তবু কেন বর্তমানে?
ভাবনার কল কাঠি;
সে কি তবে তুমি আমি ছিলাম দুইয়ে দুই
তাই বুঝি এখন মুহূর্তেরা!
সর্বনাশের দিঠি;

যাই বলো না, ভুলেই থাকা যদি
দুইয়ে দুইয়ে, যুগ পেরুল কত দিবানিশি?
আধেক যখন তুমি ছিলে, অন্য আধেক
তোমারই প্রাণ; নাইতে জলে জলছবি ভাসে
তুমি আমির সেই প্রক্ষালন!

তুমি আমির ভারসাম্য কই? শুধুই নদের নন্দ প্রেম আকাঙ্ক্ষা
বাজিয়ে বাঁশি জগৎ পুঁজিল; প্রেম কি তবে সেই চরা চরে যাচে?
আমি তুমির পরম্পরা বিস্ময় কালে কালে!
প্রেম না কি চুইয়ে চুইয়ে? বিস্বাদ আঁকে সর্বনাশে।

১৪২৫/ভাদ্র/ শরৎ কাল।

কবিতায় গল্প

—কবিতায় গল্প

কবিতায় গল্প বলে ঐ সুদূরে আকাশ
কবিতায় গল্প বলে শূন্যে ঝুলে কোটি নক্ষত্র
কবিতায় গল্প বলে সচল বায়ু
কবিতায় গল্প বলে মেঘ মেঘমল্লার দল।

কাশবন বাতাসে দুলে
সাদা মেঘের পালকি চলে, হুনহুনা! হুনহুনা!
দিগন্তে ঐ নীল আকাশের আঁচল পাতা রাশি রাশি স্বপ্নমাখা গল্প বলে।
বেলা শেষে সন্ধ্যাবতীর গায়ে
গল্প বলে রং ছড়ায় সাঁঝের আলো ঝিকিমিকি;
বিলের জলে শাপলা ফোটা রং ছড়িয়ে যায় সাঁঝ লালিমা গল্প বলে।

গল্প বলে ঝিলের কাদা কাদাখোঁচা
গল্প বলে কচুরি পানায় ডাহুক ডাহুকী
গল্প বলে পদ্ম পাতায় বসে সোনালী ব্যঙ
গল্প বলে জলমাকড়শা জলের উপর হেঁটে হেঁটে।

কবিতায় গল্প শুনেছি দাদির আঁচল ধরে সেই শৈশবে!
কবিতায় গল্প শুনেছি জোছনা রাতে উঠানে বসে।

১৪২৫/ ভাদ্র/ শরৎকাল।