ট্যাগ আর্কাইভঃ জীবনকথা

অন্তরালে

তখন অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে, বাড়ী থেকে যেয়েই পরীক্ষা দেই। সকাল ৯ টার দিকে বের হলে ফিরতে ফিরতে ৯ টা বা কোন কোন দিন আরও বেশি রাত হয়ে যায়। নাসীরাবাদ কলেজে পরীক্ষা হচ্ছে যার কারণে টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড হয়ে আসতে কিছুটা দেরী হয় তাছাড়া প্রান্তিক পরিবহণের সার্ভিসও খুব একটা ভালোনা। তাই আমি আর আমার বন্ধু কামরুল বরাবরই আকুয়া বাইপাস হয়ে আসি।
.
প্রথমে ইসলাম পরিবহণ অথবা রাজিব পরিবহণে মুক্তাগাছা পর্যন্ত আসি তারপর সেখান থেকে সিএনজি হয়ে কালিবাড়ী তারপর সেখান থেকে আবার সিএনজি অথবা মাহিন্দ্রায় আসি মধুপুর পর্যন্ত। ছাত্র হবার অজুহাতেই হোক আর টাকা কম থাকার কারণেই হোক বরাবর ভাড়া দিতে আমরা একটু কার্পণ্যই করি, মানে দশ/পাঁচ টাকা করে কম দেই। এতে করে জন প্রতি কোন কোন দিন মূল ভাড়া থেকে প্রায় ২০ টাকা করে বেঁচে যায় তা দিয়ে আবার মধুপুর থেকে বাড়ী পর্যন্ত আসা যায়।
.
মুক্তাগাছা থেকে সিএনজিতে চড়লাম, তখন ট্রাফিক পুলিশ একটা আইন করে দিয়েছে, সিএনজিতে চারজনের বেশি নেয়া যাবেনা। অথচ তখনও কেউ কেউ পাঁচজন পর্যন্ত নেয়াটা বহাল রেখেছে। আমরা যে সিএনজিতে উঠলাম তিঁনিও প্রথমে চারজন তুলে পরে কিছুদূর এসে আবার পাঁচজন মিল করে রওয়ানা হলেন। যার কারণে কিছুটা দেরী হলো আর এর জন্য পিছনের ছিটে বসা এক ভদ্রলোক ড্রাইভারকে অনেক বকা ঝকাও করলেন কিন্তু তিঁনি কিছু বললেন না।
.
কিছদূর আসার পর ড্রাইভারের ফোন বেজে উঠলো, তিঁনি ফোন রিসিভ করে কানে দিলেন আর তাতেও পিছনে থাকা ভদ্রলোক বিস্তর রেগে গেলেন যার কারণে তিঁনি ফোনটা কান থেকে নামিয়ে হ্যান্ডেলের উপরের দিকে সিএনজিতে যে একটু গর্তের মতো জায়গা থাকে সেখানে লাউড স্পিকার দিয়ে রেখে গাড়ীর গতি কমিয়ে দিলেন। ও পাশ থেকে ছোট একটা মেয়ের গলা শোনা গেলো সে তখন বলছেঃ
-আব্বা, তুমি কোনসুম আবা…? আম্মারতো অসুখ বাড়ছে, আমার জোন্যে আইজকা ব্যাগ আনবাই… লোকটা আস্তে করে “আচ্ছা আনমুনে” বলে বললো তোমার মার কাছে দেও। ওপাশ থেকে পিচ্চির মা বলতেছেঃ
-তোমারেতো আইজকা যাবার না করলাম, এহনতো আমার জ্বরটা বাইড়া গ্যাছেগা, ডাক্তার কইছিলো সেলাইন দেওন লাগবো, আর ও এহন ব্যাগের জোন্যে কান্দিতাছে…
-আমি আওয়ার সোময় ডাক্তার নিয়া আমুনি, এইডা শেষ ট্রিপ, এহন রাহো চলতি গাড়ি।
এই বলে লোকটা ফোন রেখে দিলো, সামনের ছিটে বসার কারণে তাঁদের কথোপকথন আমি ভালোভাবেই শোনলাম। পরে সিএনজি থেকে নামার সময় তিঁনি একা একাই বললেন “আমি চারজন করেই আনি আর চলতি গাড়ীতে মোবাইলও ধরিনা, আসলে আইজকা বাড়ীতে সমস্যা।” সেদিন আর অন্যদিনের মতো কম টাকা দিতে পারিনি। আর জানিনা পিছনের ভদ্রলোক কথোপকথনগুলো শুনেছিলেন কিনা…
.
১৫/০৪/২০২০
#StayAtHome #StaySafe
বিঃদ্রঃ করোনার এই কঠিন সময়ে এই শ্রেণীর মানুষের কাজ কর্ম নেই, আসুন খোঁজ নেই তাঁরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছে, আসুন আমরা সবাই যার যার সাধ্য অনুযায়ী এদের পাশে দাঁড়াই…