সারাদিন শেষে যখন আমি একা হয়ে যাই,
তখন পিছনে যেতে থাকি আমি; বর্তমান ছেড়ে-
অল্প অল্প করে চোখের সামনে স্পষ্ট হয় তোমার মুখ, হাসি এবং চিহ্ন,
মনে হয় যেন, তুমি দূরে যাওনি- এখানেই আছো আমার হাতে স্পর্শ হয়ে।
ফিরে যেতে যেতে আমি থেমে যাই একটা সময়ের মধ্যে, যার নাম বোধহয় প্রেম,
মনে হয় সুদর্শন একটা বিকেলের রোদে হাঁটছি আমরা।
চোখে চোখ ডুবিয়ে দিতে দিতে তুমি লুফে নিচ্ছ আমাকে;
নিতে নিতে একবারে শূন্য-
তারপর সম্বিত ফিরে দেখি আসলে এসবই আমার একা থাকার ঘোর।
তোমাকে আমি আমার ঘোরলাগা একাকীত্বের কথা কিভাবে বুঝাবো ?
অথচ এসবই আমার ভুলে যাওয়া উচিত-
কিভাবে বলো ভুলে যাবো দিনশেষে এমন ঘোরে যাবার অভ্যেস ?
আমি যে তোমার মতো পারিনা-
তোমাকে বৃত্ত ভাবতে ভাবতে আমি যে আবদ্ধ বিন্দু, অভ্যস্ত হতে হতে আমি যে তোমাতে মগ্ন মুখর,
অথচ তুমিতো সেই কবে উড়ে যাওয়া এক ফেরারি পাখি।
.
০৮/১১/২০২২
মাসুদুর রহমান (শাওন) এর সকল পোস্ট
আলেম ভার্সেস আলেম
এখন ওয়াজের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, গ্রাম-গঞ্জ, শহরের জায়গায় জায়গায় ওয়াজের নামে কিছু সুরওয়ালা গায়কের আবির্ভাব হবে, এদের বয়কটের উপযুক্ত সময় এখনই। ধর্ম সম্পর্কে জানার জন্য ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার আগে যার ওয়াজ শুনবেন তাকে জানুন। খোঁজ নিন তার জ্ঞানের পরিধি কতটুকু তারপর যান, অমুক তমুক নাম শুনে চিল্লা ফাল্লা শুনতে আর কমেডি দেখতে যাইয়েন না প্লিজ। আমরা এদের দাওয়াত করি আর এদের মাহফিলে ভীড় করি বলেই এরা ইসলামি জলসাকে নাটকের মঞ্চ বানিয়ে ফেলতেছেন দিনের পর দিন। ওয়াজের স্টেজে রাতভর কমেডি চলে আর এসবের কারণে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মধু আহরণ করতে যেয়ে মগজে বিষ নিয়ে ফিরলে আপনারই বিপদ। এই যুগে মাহফিলে কী হয় সবাই জানার সুযোগ পায়, মূল ধারার মিডিয়ায় না আসলেও এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিকই আসে, ইসলামের প্রতি অনেকের ভুল ধারণা তৈরি হয় এদের কারণেই। সাম্প্রতিক এক মুর্খের কথা শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এমন মুর্খের কিন্তু অভাব নাই। আমার আপনার দায়িত্ব এদের প্রতিহত করা।
.
অনেকদিন আগে একজন আলেম বলেছিলো যারা সাহিত্য চর্চা করে তারা নাস্তিক, উনি কথাটা যে কিছুটা আমাকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন আমি বুঝেছিলাম৷ তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “হুজুর, সাহিত্য কী আর নাস্তিক কী জিনিস…? কুরআন যে সময় অবতীর্ণ হয়েছিলো সেই যুগে কিসের প্রাধান্য ছিলো বেশি…? সুরা কাউসারের শানে নুযূল কী…? কেনইবা কুরআনের মতো আরেকটি গ্রন্থ বা কুরআনের সুরাগুলোর মতো আরেকটা সুরা অথবা একটা আয়াত তৈরির চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো…? কুরআনের কোন গুণের উপর ভিত্তি করে…?”
উনি সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি। পরে বললাম “হুজুর, কুরআন অবতীর্ণের সময় সাহিত্যের প্রভাব ছিলো বেশি ইতিহাস পড়ে জেনেছি, পৃথিবীতে আর কোন যুগে সাহিত্যের এত বড় প্রভাব ছিলোনা, সেই যুগে কুরআন নাযিল হলো আর মানুষ সেই সময়ের সাহিত্যকে ডিঙিয়ে কুরআনের কাছে নত হলো…! কুরআনের ভিতর সাহিত্যক শক্তি না থাকার কোন প্রশ্নই আসেনা, বরং সেই সময়ের বিখ্যাত কবি ইমরুল কায়েস পর্যন্ত কুরআনের ভিতর যে সর্বোচ্চ সাহিত্যিক ক্ষমতা আছে এবং এমন উচ্চ গুণ সম্পন্ন সাহিত্য চর্চা কোন মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয় সেটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন, সুরা কাউসারের শানে নুযূল পড়ে জেনেছি। তাহলে সাহিত্য চর্চা করলে কেউ নাস্তিক হয় কিভাবে…?” উনি গরম আচরণ করলেন তারপর তার সাথে আমার আর কোনদিন তর্ক হয়নি।
.
প্রচলিত অর্থে যাদের আলেম বলা হয় তাদের সাথে আমি কখনো তর্কে যাইনা, আমি এমন অসংখ্য প্রচলিত অর্থে বুঝানো আলেমদের সাথে কথা বলেছি, মিশেছি, যাদের ভিতর জ্ঞানের প্রচণ্ড অভাব। এরা মাদ্রাসায় কিছুদিন যাওয়া আসা করেছে, লম্বা জোব্বা-টুপি পরেছে আর কিছু মুখস্থ বিদ্যা আছে এটুকুর কারণে তাদের গর্বের শেষ নাই এরথেকে বেশি অর্জনও এদের নাই। এরা ভাবে জান্নাতে এদের এক পা আরেক পা দুনিয়াতে, এরা আপনাকে ঠাস করে জাহান্নামী বানিয়ে দিবে।
.
অথচ প্রচলিত অর্থে এদের আলেম বলা হলেও আল্লাহর ভাষায় কারা আলেম সেটা অনেকেরই অজানা। আল্লাহর ভাষায় আলেম তারাই যারা আল্লাহকে বেশি ভয় করে, আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই কেবল তাঁকে (আল্লাহ) ভয় করে।” (সুরা ফাতির, আয়াতঃ ২৮) এটা সরল অনুবাদ, আপনি এই বাক্যের অর্থ কী বুঝলেন…? আলেমরা আল্লাহকে বেশি ভয় করে, এর মানে যাদের ভিতর আল্লাহর ভয় আছে তারাই আলেম। আল্লাহর প্রতি ভয় কখন তৈরি হবে…? যখন আপনি আল্লাহর পরিচয় পাবেন…? আল্লাহর পরিচয় আপনি কখন পাবেন…? যখন আপনি জ্ঞানার্জন করবেন ও জ্ঞানীদের সাহচর্যে থাকবেন। অথচ প্রচলিত অর্থে আলেম বলতে আমরা বুঝি যার মাদ্রাসার সনদ আছে। বিষয়টা একাধারে ভ্রান্ত এবং হাস্যকর ধারণা। এটা সমাজে এতবেশি প্রচলিত যে তা দূর করা সম্ভবপর নয়।
.
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, সূচনা লগ্ন থেকেই এক শ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিহীন বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের সমালোচনা করে আসছে, ইসলামের আইনের ভুল ধরার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে, বারবার বলছে যে ইসলামে প্রচুর অসঙ্গতি আছে। আমাদের দাবী ইসলাম পরিপূর্ণ, এতে কোন অসঙ্গতি নেই, সাইন্টিফিক দিক থেকেও নির্ভেজাল। তবে এরা কিভাবে এসব বলে…? এর পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও অন্যতম একটি কারণ হলো ইসলামের সুমহান আদর্শ, ইসলামের মৌলিকত্ব আমরা তাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারিনি এসব মূর্খদের কারণে বরং এরা ইসলামকে হাসির বস্তু বানিয়ে ফেলেছে।
.
আমাদের বোকামির দ্বারা আমরা ইসলামের সমালোচনাকারীদের প্রকারান্তে সহযোগিতা করতেছি। জ্ঞানার্জনের শেষ নেই, যতই আপনি সত্যের জ্ঞান আহরণ করবেন ততই আপনার মাঝে আল্লাহ ভীতি পয়দা হবে, ততই আপনি আলেম হয়ে উঠবেন। কেবল জানলেই যদি আলেম হওয়া যেতো তবে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের মাঝেও প্রচুর আলেম আছে।
.
মূল বিষয় হলো ইসলামে জ্ঞানার্জনের এত গুরুত্ব অথচ আমরা কুরআন মুখস্থ করি এটুকুই শেষ। না বোঝলাম এখানে কী বলা হলো, না বোঝলাম এর ভাবগত অর্থ না পেলাম এর ভিতরের রস। এদিকে আজীবন শুধু বলে গেলাম কুরআনে সব আছে অথচ বড় বড় উদ্ভাবন ও আবিষ্কার করতেছে অন্যরা, পরে ঠিকই বলতেছি এগুলো কুরআন থেকেই করে…!!
হাস্যকর না…???
মুসলিম জাতির উচিত জ্ঞান বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখায় আবার বিচরণ করা, আমাদের অতীত সুন্দর ছিলো…
.
০৬/১২/২০২১
জীবন যেখানে যেমন
বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার সারাদিন মেস বন্ধ থাকে, যাদের সাথে মেসে খাই তাদের প্রায় সবার বাড়ি মোটামুটি কাছে হবার কারণে তারা সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে বাড়ি চলে যায় তারজন্যই মূলত মেস বন্ধ থাকে, আমার বাড়ি দূরে হবার কারণে যেতে পারিনা। সাধারণত এই সময়ের খাবারটা আমার হোটেলে খেতে হয়, শুরু থেকে ইচ্ছেটা এমন যে প্রতিবার নতুন নতুন হোটেলে খাবো এতে ঘুরাঘুরি হবে সাথে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদও পাবো।
.
প্রথম কয়েক সপ্তাহ এমনটাই করলাম কিন্তু এখন সেটা করিনা একটা ছেলের জন্য। মেস বন্ধ থাকলে এখন ওর ওখানেই যাওয়া হয়, আমি গেলে ওকে আর বলতে হয়না কখন কী খাবো। আর সম্ভবত ও আমার অপেক্ষা করে কারণ আজকে দুপুরে জিজ্ঞেস করলো “এত দেরি করলেন যে ?” আর আমাকে ও যতটা যত্নের সাথে খাওয়ায় আর কাউকে ততটা যত্নের সাথে খাওয়ায় কিনা জানিনা।
.
বিষয়টা পরিস্কারভাবে বোঝার জন্য একটু পিছনে যেতে হবে। সপ্তাহ দুই আগে ওই হোটেলে দুপুরে খাবার জন্য যাই, রীতিমতো খাওয়ার শেষের দিকে জিজ্ঞেস করলাম কোন পানীয় হবে কিনা ? একজন ওয়েটার বললো আমাদের এখানে নেই তবে বাইরে থেকে এনে দেয়া যাবে। যশোরে এতবেশী গরম যে দুপুরের দিকে ঠাণ্ডা পানীয় না খেলে চলেনা।
.
সে যাইহোক সর্দার টাইপের ওয়েটার একটা ছেলেকে ডেকে আমার জন্য পানীয় আনতে বললো। আমি ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে ছেলেটাকে দিলাম, বড় নোট দিলাম যাতে সেটা ভাঙতিও হয়। ছেলেটার বয়স ৯-১০ বছর, এই বয়সের একটা ছেলে পড়াশোনা আর খেলাধুলায় মত্ত থাকার কথা অথচ ও এই হোটেলের সবথেকে কনিষ্ঠ ওয়েটার, ছেলেটা রোদের ভিতর বাইরে চলে গেলো। এদিকে প্রায় পাঁচ-সাত মিনিট পার হয়ে গেলো ছেলেটা আসছেনা, আমার খাওয়াও শেষ হয়ে গেলো।
.
যিনি তাকে বাইরে পাঠালেন তিনি এগিয়ে এসে বললেন হয়তো নোট খুচরা করতে পারেনি, আপনি ক্যাশে দিলেইতো খুচরা করতে পারতেন। আমি বললাম ওহ তাইতো আমার খেয়ালই ছিলোনা, মনে মনে ভাবলাম ছেলেটা কি চলে গেলো ? তারপর বললাম আমি তাহলে বাইরে যাই, পথেই নিয়ে নেবো ওর থেকে, আমার আবার একটু কাজ আছে। এই বলে বিল চুকিয়ে আমি বেরিয়ে পড়লাম।
.
বের হয়ে একটু আগাতেই দেখি পাশের এক দোকানের বেঞ্চিতে বসে ছেলেটা কোলাকোলার বোতল ওর গালে, কপালে ঘাড়ে চেপে ধরতেছে। আমাকে দেখতেই হচকয়িয়ে গেলো, আমি জিজ্ঞেস করলাম দেরি করতেছো কেন ? ও কোন উত্তর দিলোনা, ওর থেকে বোতল আর টাকা বুঝে নিয়ে বললাম ঠিক আছে। আর মনে হলো হয়তো ওর কোক খেতে ইচ্ছে করতেছে তাই বললাম দাঁড়ায়ও আর আমি কিছুটা খেয়ে বাকিটা ওকে সাধলাম, ও বললো নিবেনা ওর জ্বর, ঠাণ্ডা খাওয়া যাবেনা। বললাম ওষুধ খাওনি ? মাথায় পানি দেওনি ? মাথা নেড়ে জানালো কিছুই করেনি।
.
কপালে হাত দিয়ে দেখলাম সত্যি সত্যি অনেক জ্বর, তখন বোঝলাম কেন কোকের ঠাণ্ডা বোতল ওইভাবে চাপতেছিলো। তারপর বললাম এই জ্বর নিয়ে তুমি কাজ করতেছো কেন ? মালিকরে বলে বাড়ি চলে যাও, ও বললো যেতে দিবেনা আর গেলে হাজিরা দিবেনা। তারপর ওর সাথে আরও কথা হলো, ওর বাবা বেঁচে নাই, ওর মা বাসায় কাজ করে, ও স্কুলে পড়েছে থ্রি পর্যন্ত আর ওর বাবা মারা যাবার পর থেকে এখানে আছে। জোর করে ওকে একটা নরমাল কোক আর নাপা এক্সট্রা কিনে দিলাম, ও নিবেইনা, কারণ হিসেবে বললো মালিক জানলে বকবেনি, আমি বললাম এখানে খেয়ে যাও কোন সমস্যা হবেনা। ছেলেটা দ্রুত কোক খেলো, আমার সামনে টেবলেট খেতে বললাম, তারপর টেবলেট খেলো আমি বললাম হোটেলে গিয়ে মাথায় পানি দিবা। ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলো তারপর শরীরে জ্বর নিয়েই আবার হোটেলের দিকে চলে গেলো…
.
১০/০৬/২০২০
ভালো থাকবার চিঠি
কখনো কখনো হয়তো তুমিও খুব করে চাও আবার সেই দিনটায় ফিরে যেতে যেখানে তোমার আর আমার প্রথম কথা, প্রথম পরিচয়,
হয়তো তুমিও ঘুম ভেঙ্গে গেলে কোন কোন রাতে নীরবে ফিরে যাও সেই প্রথম চোখে চোখ রাখার সময়টাতে।
নিজের অজান্তেই হয়তো কখনো থমকে দাঁড়াও, নিজের শরীরে অনুভব করো আমার স্পর্শকে,
অথচ সেই সময় সেই বিকেল কোনটাই আর ধরা দেবেনা তোমার হাতে আমাদের হয়ে।
সারাজীবন একসাথে পথ চলার কথা বলে হাত ধরে তারপর মাঝ পথে এসে যখন হাত ছেড়ে দিলে,
তখনও হয়তো তুমি ভাবোনি এরপর কখনো কোনদিন আমাকে তোমার খুব বেশি মনে পরবে।
হয়তো ভেবেছো সব ভুলে যেতে পারবে, নতুন করে কারো সাথে শুরু করবে সর্ম্পূর্ণ নতুন এক প্রেমোপাখ্যান,
অথচ সময়ের ব্যবধানে হয়তো এখন তুমি বুঝে গেছো একটা হৃদয়ে বারবার আসেনা শুভ্র শিহরণ।
অথচ দেখো আমি এখন এসবের কিচ্ছু অনুভব করিনা এসবের কিচ্ছু ভাবিনা এখন,
আমি সবকিছু ফেলে এসেছি মাঝপথ থেকে একা একা মাথা নিচু করে ফিরবার সময়।
এখন কোন অনুভব হয়না আমার, হয়তো হয় তবে যান্ত্রিক মনে কোনকিছু ধরা দেয়না,
হয়তো আমারও কোথাও তোমার জন্য ভীষণ দূর্বলতা আছে তবে সব ঢাকা পড়ে আছে তাই ওসব উঁকি দেয়না আর।
.
১৩/০৫/২০২১
একদিন আমি ফুরিয়ে যাবো
একদিন আমি ফুরিয়ে যাবো কর্পূরের মতো, শূন্যে মিলাবে আমার অস্তিত্ব,
তখন এইসব মায়াভরা রাতে আমি আর একাকী ঘুমহীন চোখে তোমাকে ভাববো না।
তখনও আসবে হিম কুয়াশা, ফোটা ফোটা ঝরবে শিশির শুকনো কাচা ঘাস পাতার শরীরে,
মেঘ ভাসবে হাওয়ায়, একই ঝুম ঝুম শব্দে নেমে আসবে বৃষ্টির দল,
তারারা জ্বলবে একইভাবে, গেয়ে যাবে আগন্তুক পাখিরা উঠোনের ডালে বসে।
.
আহ্নিক গতিতে এই পৃথিবীর রাতগুলোয় আসবে পূর্ণিমা কিংবা অমাবস্যা,
এভাবেই গন্ধ ছড়াবে বসন্তের ফুল, পথে পথে ঝরবে শিমুলের লাল ঠোঁট।
শুধু আমি থাকবোনা এইসব উপমায় তোমাকে মেলাতে আর,
ছটফট করে ক্লান্ত হবোনা আর, অব্যক্ত কিছু কথা নিয়ে আর কখনো হবেনা দম বন্ধ আমার,
হাতরে বেড়াবোনা তোমার সেই চেনা স্পর্শ আর,
একদিন আমি ফুরিয়ে যাবো কর্পূরের মতো।।
.
০৩/০৩/২০২২
স্বাধীনতা আজকাল
আয়োজন করে স্বাধীনতা প্রদর্শিত হয় সাম্যের মুখস্থ বুলি আওড়িয়ে,
ভাষণে মুখরিত হয় একাত্তরের চেতনার গান, দূর থেকে দূরে।
অথচ আমি এই বাংলার নারীদের মগজ ঘুরে দেখি,
সেখানে স্বাধীন ধর্ষকেরা, জারি রেখেছে অনির্দিষ্ট সময়ের কারফিউ।
মধ্যবিত্ত চোখ উপড়ে ফেলতে দেখি ক্রমবর্ধমান স্বাধীন নাগরিক বৈষম্য দিয়ে,
শ্রমিকের শরীর থেকে ঘামের সাথে টের পাই গলাকাটা স্বাধীন স্বপ্নের গন্ধ।
বেকার মাথার উপরে আজও সশব্দে উড়ে যেতে দেখি যুদ্ধ বিমান,
সেখান থেকে পড়ে স্বাধীন বিকারগ্রস্ততার অভিশাপ।
অনাহারীর পেটে আমি উঁকি দিয়ে দেখি,
সেখানে স্বাধীনতার তাবুতে খেলে স্বৈরাচারী ক্ষুধা।
.
২৬/০৩/২০২২
তুমি বলেছিলে আমাকে তুমি ভালোবাসো,
আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলাম।
আমার যাকিছু ছিলো, যত স্বপ্ন, যত ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষা, যত চাওয়া,
এসবের কোন কিছুই আমার নিজের করে রাখতে পারিনি আর,
কেবল তোমার নামে লিখে দিয়েছিলাম এভাবে আমার যাকিছু আদ্যোপান্ত সব।
.
তুমি বলেছিলো আমার হাতে হাত রেখে একসাথে পাড়ি দেবে বার্ধক্যের দিনগুলো,
আমি আমার সব পিছুটান ছুঁড়ে ফেলে তখনই তোমার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছিলাম।
আর তোমার নির্মল স্পর্শের অপেক্ষায় সমস্ত জীবনটা বিলিয়ে দেবার নেশায় উন্মাতাল হয়েছিলাম,
আমার প্রিয় বৈশাখ, পৌষ, বর্ষার রাত সবটা ভুলে গিয়েছিলাম,
কেবল তোমার কোলে জীবনের শেষ নিশ্বাস ফেলবার সময়টুকু উপভোগ করবো বলে।
.
তারপর তুমি বহুদিন আমাকে অবহেলার বারুদে পুড়েছো বারবার, অকারণে যখনতখন,
আমার কান্নার শব্দে তুমি মৌন হাসি হেসেছো আমাকে উপহাস করার আত্মতৃপ্তিতে।
তারপর অন্যকারো গভীর রাতে মেতে উঠেছো উত্তাল মিছিলের মতো আড্ডায়, দারুণ আবেগী কথায়,
অথচ আমি প্রথম বিশ্বাস পুঁজি করে সারারাত ধরে জেগে থেকেছি একবার নাম ধরে ডাকবে বলে।
সেই দীর্ঘ অপেক্ষায় প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকেই চেয়েছি আমি ‘ফিরে এসো অনেকতো হলো’,
অথচ অন্ধকার আমাকে উপহাস করে জানিয়ে দিয়েছে আড্ডা শেষে ক্লান্ত তুমি ঘুমের দেশে স্বপ্নে বিভোর।।
.
১০/০৭/২০২১
মিশে যেতে চাই
কার হৃদয়ে আজ গান ?
কার মনে আজ বসন্ত বাতাস ?
ফুল ফোটে কার ঠোঁটের আদরে ?
কার হাত জোড়া কেবলই ছুঁড়ে দিতে জানে-
বেদনাহীন প্রেমের কোমল মেঘ ?
তার সাথে আমি মিশে যেতে চাই,
এই সকল ব্যথা বেদনা সরায়ে-
সলিল সমাধি পরে…
.
১৫/০৩/২০২২
প্রেমের অভিশাপ
আমার রাতগুলো ঘাতক ছুরির মতো,
কেটে কেটে বিচ্ছিন্ন করে আমার শরীর।
কাঠঠোকরার মতো কিছু স্মৃতি,
শিয়রে বসে বিরামহীন ঠুকরে খায় চোখ।
কিছু স্পর্শের অনুভূতি উইপোকার মতো,
নীরবে চেটে খেয়ে যায় ইন্দ্রিয়ের বোধ।
আমার সকল উচ্ছ্বাস এখন দীর্ঘশ্বাস হয়ে,
দখল করে আমার প্রাণের উপকূল।
কিছু আহত ইচ্ছেরা মুখোমুখি দাঁড়ায়,
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শত্রুর মতো দলবদ্ধ হয়ে।
এভাবেই আমি বাঁধা পড়ি অপমৃত্যুর হাতে,
আমারই প্রেম আমাকে ঠেলে দেয় নরকে।
.
১২/০২/২০২২
অথচ তুমি
কত রাত ধরে ভুলে আছো তুমি,
কতদিন তুমি মনে করোনা আমায়।
এভাবে কতটা সময় চলে যাচ্ছে আমাদের,
আমাকে ছাড়া কতটা নির্মল বেঁচে আছো তুমি।
অথচ এইসব রাত এইসব দিন তোমাকে ভেবে,
কতবার একা কেঁদে উঠি নিজের মুখোমুখি।
কত কথা লিখে কেটে দেই কাঁপা কাঁপা হাতে,
অথচ তুমি একবারও জানতে চাওনা কিছু।।
.
২৭/০১/২০২২
ছবিঃ আমার নিজের
কেবলই একা
নেই, কোন চোখ নেই, দৃষ্টির আদরে জড়াবে উর্বর স্বপ্নের মতো করে,
কোন হাত নেই, লতার মতো করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকবে আমায়।
এই সব শিশিরের মতো নেই কোন কণ্ঠস্বর, শোনাবে আমায় রাতজাগা গান,
কেবলই অন্ধকার ঘন হয়ে আসে আমার সবটুকু শরীর ছুঁয়ে দিতে।
এখানে হৃদয় কেবলই শূন্য আকাশের মতো মনে হয়, নামেনা কখনো মেঘের জল,
সবটুকু খরা আমাকে জানান দেয়, মরে পরে থাকা শুকনো পাতার মতো এইতো জীবন।
বহুদিন বহুরাত ধরে ঘুমহীনতা আমাকে নিয়েছে কিনে সস্তা দামে,
শুধুই নিঃসঙ্গতা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায় অস্থির সময়ের পরতে পরতে।
কেউ নেই, শুধুই একা জুয়াড়ি যাযাবর হয়ে হেঁটে যাই কোন এক বিস্মৃত অতলের দিকে,
এইসব শহর, কোলাহল পাড়ি দিতে দিতে একদিন মুছে যাবো কেবলই একা।।
.
০৬/০১/২০২২
একটি বাস্তবতা ও কল্পনা
আমি বারবার ঢাকা যাচ্ছি একটা সরকারি চাকরির জন্য,
কোম্পানি, এনজিও বা রেস্তোরাঁয় চাকরি হলেও আমি দিব্যি ভালো চলতাম।
তবে তোমার পরিবার একটা সরকারি চাকুরে ছেলে চায়,
তার জন্যই আমি এত বেশি সিরিয়াস, মূলত তোমার জন্য,
অথচ আমার চাকরিটা হয়েও হচ্ছেনা।
বারবার যাওয়া আসার ফলে অচেনা শহরটা কেমন চেনা হয়ে গেছে এখন,
এদিকে তুমি অচেনা হয়ে যাচ্ছো,
তোমার আর ভালো লাগছেনা আমাকে, তুমি ছুটি চাচ্ছো।
তোমাকে ভালো কোন গিফট দিতে পারছিনা,
নিজেরই ভালো দামী কোন শার্ট নেই কেবল গোল গলার গেঞ্জি পড়ি,
তোমার বন্ধু-বান্ধবীদের সামনে এসব কারণে আমার পরিচয় দিতে পারোনা,
তবুও এসবের মাঝেই কিছু টাকা বাঁচিয়ে তোমাকে সস্তা দামের চুড়ি কিনে দেবার কথা ভাবছি সাথে দুটো ডেইরি মিল্ক।
আগে তুমি বলতে আমি ভালো জিনিসই সস্তা দরে কিনতে পারি যাচাই করে,
তাই সেসময় তোমার সস্তা চুড়িই ভালো লাগতো, চকোলেটতো কেড়েই নিতে,
আর এখন আমাকেই খুব সস্তা মনে হয় তোমার।
.
আসলে তোমার হাল ফ্যাশানের আরও বেশি স্মার্ট কাউকে প্রয়োজন,
উচ্চতায় তোমার থেকে কম করে হলেও আট ইঞ্চি বেশি, দেখতে সুঠাম দেহী, স্বাস্থ্যবান, মাশাল্লাহ চেহারা,
সেনাবাহিনীর কোন সৈন্য বা উচ্চপদস্থ অফিসার,
তুমি ভাবছো এমন কাউকে পেলে বন্ধু-বান্ধবীদের একটা ট্রিট দেবে,
সবার সামনে হাত ধরে ঘুরে বেড়াবে।
তোমার মা’ও কিচ্ছু বলবেনা বরং বাহবা দিবে,
তিঁনি সকাল সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে খোদার শুকরিয়া করবেন,
আর পাশের বাসার ভাবিদের কাছে গর্ব করে বলবেন ‘মেয়ের আমার পছন্দ আছে’।
.
উল্টোটা ভাবা যাক দেখি,
আমার চাকরি হয়ে গেছে, সরকারি চাকরি, ভালো সুযোগ সুবিধা, সব মিলিয়ে মোটা বেতন,
তোমাকে প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে অনলাইন থেকে হাতের কাজ করা দামী একটা জামা কিনে দিলাম,
অথবা শহরের নামকরা কোন শপিংমল থেকে।
আর হাতে বেশকিছু টাকা দিয়ে বললাম তোমার বন্ধু-বান্ধবীদের ট্রিট দাও,
তুমি সবাইকে আমার কথা বলে দিলে,
ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দিলে ‘আমি আছি’।
মাঝেমধ্যে রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি, এখন আর টাকা নেই বলে না যাওয়ার বাহানা করিনা,
দুজন বসে বিরিয়ানি কিনে খাই, বিরিয়ানি তোমার বেশি পছন্দ।
এবার আর যাওয়া আসার পথে রিক্সায় আঁটোসাটো হয়ে নয় বরং জড়িয়ে ধরে বসি,
যেদিন তোমার ক্লাস থাকেনা তার আগের রাতে সারারাত কথা বলি,
মাসে একবার দেখাতো হচ্ছেই, তোমার হাতের সেমাই, নুডলস খাচ্ছি নিয়ম করে,
এভাবে আমরা দারুণ তুমুল প্রেম করে যাচ্ছি প্রতিদিন,
খুচরো করে বলতে গেলে আস্ত বই হয়ে যাবে।
এখন আর উচ্চতা নিয়ে কোন সমস্যা নেই তোমার,
তুমি বরাবরের মতো বলছো যে,
ছেলে মেয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালে এইটুকু উচ্চতার তফাৎ বোঝা যায়না উল্টো মেয়েদেরই খাটো মনে হয়,
তোমার চোখে এখন আমি স্মার্ট, কিউট আর হ্যান্ডসাম।
তুমি স্পষ্ট মুখে তোমার মাকে বলে দিয়েছো আমাকে ছাড়া কাউকেই কোনদিন বিয়ে করবেনা,
আমার সবকিছু জেনে তোমার মা আমাকে এখন পছন্দ করেছে,
তোমার বাবাকেও তিঁনি বুঝিয়ে বলেছেন,
তোমার পরিবারের সবাই আমাকে মেনে নিয়েছে।
মাঝে মাঝে আমাদের পুরো দিন ঘোরা হচ্ছে, ফুচকা, আঁচার, চটপটি আরও কত কী খাচ্ছি আমরা, তুমি দারুণ খুশি,
তোমার সমুদ্রে ভয় তাই সময় করে পাহাড়ে ঘুরতে যাবো বলে ঠিক করলাম,
আরও কোথায় কোথায় যেন ঘুরতে যাবে বলে প্ল্যান ছিলো তোমার,
এখন দ্রুত সবগুলো ইচ্ছে বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে।
এখন আমার মাঝে তুমি ভবিষ্যত খুঁজে পেয়েছো,
আমার সাথে এখন চাইলেই বাকি জীবন কাটানো সম্ভব।
.
কল্পনা থেকে ফেরা যাক এবার,
আমার সত্যিই সরকারি চাকরি হয়নি, হবে বলেও পরিপূর্ণ আশা করা যায়না,
আমার মামা-খালু নেই যে একটা চাকরি কিনে নেবো, মেধাতো আরও নেই।
তবুও শুধু পরীক্ষাই দিয়ে যাচ্ছি,
তুমি বিরক্ত হয়ে রেজাল্টের কথাও জিজ্ঞেস করোনা,
তুমি আমার প্রতি দিনদিন চক্রবৃদ্ধিতে বিরক্ত হচ্ছো, কথায় কথায় রাগ দেখাচ্ছো,
ধমক দিয়ে কথা বলছো, আমি তোমার পরিবর্তনে ভয় পেয়ে কাঁদি,
তুমি ছিঁচকাঁদুনে বলে হাসো, আমি কাঁদলে মজা পাও।
তবুও তোমার সাথে কথা না বললে আমার মস্তিষ্ক শুকিয়ে যায়,
তুমি বোঝোনা আমি ঠিকই বুঝি,
তাই আমি বারবার তোমাকে ফোন-মেসেজ করি,
আর তুমি বলো আমার লজ্জা নেই, আমি থার্ড ক্লাস বাংলায় ছেঁচড়া।
.
আমাকে সুযোগ পেলে অপমান করো যাতে তোমার প্রতি বিরক্ত হয়ে সরে যাই,
কিন্তু সব অপমান মুখ বুঝে সহ্য করি কারণ তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি।
যখন দেখলে কিছুতেই আমি সরছিনা তখন তুমি বলে দিলে আমার উপর কোন অধিকার খাটাবেনা, এসব আমার একদম অসহ্য লাগে,
আমি আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছিনা, কোন ইন্টারেস্ট পাচ্ছিনা, তুমি তোমার রাস্তা মাপো,
তারপর একদিন সত্যি সত্যি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
আমার সরকারি চাকরি সত্যিই হয়নি, সম্ভাবনাও কম,
আমি তবুও চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকা যাচ্ছি…
.
০৭/১০/২০২১
সইতে পারিনা আর
এত অবহেলা আমি আর সইতে পারিনা প্রিয়,
সইতে পারিনা এত বেশি উপেক্ষা আর।
এত বেশি ঝাঁঝালো দুপুরের রোদ,
নিতে পারিনা আমি আর চোখে সয়ে।
ম্লান হয়ে আসে সকল অনুভূতি শিরায় শিরায়,
সংকুচিত হয়ে যায় সকল আবেগ অন্তর আত্মায়।
ধীরে চারপাশ ঘিরে ধরে গভীর ঘন অন্ধকার,
কুড়েকুড়ে খায় ছাড়পোকা সবটা শরীর।
এত বেশি ক্রন্দনে ক্রমশ নেমে আসে ক্লান্তি ভীষণ,
আদিগন্ত ভরে যায় নরকের অভিশপ্ত হাওয়ায়।
রক্তের দেহে এত বেশি যন্ত্রণা সইতে পারিনা আর,
মেনে নিতে পারিনা ভালোবাসার বিপরীতে এত অবহেলা তোমার।
.
২৭/০৯/২০২১
আমি বুঝে গেছি
শহর জুড়ে সুদর্শন যুবকদের ভির, ওরা বাহ্যিক লাবণ্য দিয়েই,
কেড়ে নেবে প্রতিটা তরুণীর ঘুম, মন, মগজ, সত্তা-দেহ।
আমি কুৎসিত, আমি পারবো না তার কিছু,
আমি পারবো না কারো ভিতরে এতটুকু প্রভাব ফেলতে কোনদিন।
অন্যকারো ভিতরে পঁচা মানসিকতা থাকলেও,
বাইরের সৌন্দর্যের আড়ালে ঢেকে রাখতে পারবে সব।
আমার কুৎসিত আবরণের জন্য ভিতরটা সবার অগোচরেই রয়ে যাবে শুধু,
কেউ উঁকি দেবেনা কোনদিন, ছুঁয়ে দেখবে না আমার ভিতরের সবুজ ঘাস।
আমার অবুঝ মন, শান্ত হও, ঘুমিয়ে যাও তুমি,
আমি তোমাকে কারো ভিতরে একটুও জায়গা করে দিতে পারবো না।
হে আমার হাতজোড়া, আমাকে ক্ষমা করে দিও তুমি,
তোমার হাতে আমি এনে দিতে পারবো না কারো নরম ছোঁয়া।
প্রিয় চোখ, তুমি অন্যদিকে ফিরো, অরণ্য দেখো আকাশ কিংবা নদী,
তোমার সম্মুখে কেউ কোনদিন হাসবে না তোমার জন্য, কাছে এসে দাঁড়াবে না।
এত পরিপাটি যুবকদের সাথে কিভাবে দাঁড়াবো এত অগোছালো আমি ?,
কিভাবে নিজেকে নিয়ে কারো সম্মুখে যাবো ? কিভাবে প্রকাশ করবো অনুভূতি ?
এত বেশি সুন্দর রেখে কে তাকাবে আমার দিকে ?
হে আমার আত্মা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও,
আমি পারবো না কারো ভালোবাসা এনে দিতে, আমাকে দিয়ে হবেনা।
হে আমার ভিতরের অস্তিত্ব, তুমি যত সৎ হও যত সুন্দর হও তাতে কিচ্ছু হবেনা,
আমি বুঝে গেছি,
এই শহর, এই পৃথিবীর সবাই কেবলই বাহ্যিক সুন্দরের পূজা করে, ভিতরের সুন্দর কেবলই পরিত্যাজ্য।
.
১৯/০৮/২০২১
অনন্ত যাত্রা
আরও রক্ত ঝরুক, তবুও পৃথিবী জানুক,
আমরা রক্ত দিতে জানি, মাথা নোয়াতে নয়।
আমাদের নেতা আমাদের রক্ত দেয়া শিখিয়েছেন,
সেই যে বদরে আমরা রক্ত দিয়ে বিজয় আনলাম।
তারপর থেকে আমরা রক্ত দিয়েই ইতিহাস লিখে চলেছি,
কেবল বিজয় আমাদের মঞ্জিল, গোলামী আমাদের রক্তে নেই।।
.
কেউ বলে এত রক্তপাত কী করে শান্তি আনবে ?,
আমরা বলি রক্তপাতহীন মানুষের সুন্দর জন্ম অসম্ভব।
আমরা বলি আমাদের রক্ত দেয়া কেবল শান্তির জন্য,
আমরা আক্রমণ করে নয় আক্রান্ত হলে রক্ত দেই, রক্ত ঝরাই।
আমাদের মস্তক কোন অরাজকতার কাছে নত হবার নয়,
আমাদের নেতা শিখিয়েছেন কেবল একজনের কাছে নত হওয়া।।
আমাদের মিছিল অনন্ত যাত্রার দিকে উত্তাল ঢেউয়ের প্রবাহ তোলে,
সেই ঢেউয়ে আমরা যোগ করি আমাদের তাজা রক্তের স্রোত।
আমরা মরুর বুক চিরে শুভ্র নরম ফুলের জন্ম দিয়েছি বহুবার,
ঘোর অন্ধকারে আমাদের রক্ত পিদিমে জ্বলে উঠেছে সূর্যকর।
পৃথিবী এইসব ভুলে যায়নি, যেন গতকালের বাস্তবতার তাজা গন্ধ,
আমরা সেই গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে কেবলই এগিয়ে চলছি অনন্তকাল ধরে।।
আমরা অশান্তিকে পায়ে দলিয়ে নিশান উড়াতে শিখেছি,
আমরা পৃথিবীর আকাশে একটি স্লোগান ধ্বনিত করে চলেছি।
আমরা জীবনের কাছে মৃত্যুকে ডেকে আনি জীবনকে অমর করতে,
মৃত্যুভয় কখনো পিছুটান নয়, আমাদের মৃত্যু নতুন জন্ম আনে।
আমাদের স্বভাবই আমাদের প্রেরণা দেয়, জেগে উঠবার,
গাজী হয়ে শাসক হবো না হয় শহীদি অমৃত জীবন পাবো তবে গোলাম হবোনা।।
.
অনন্ত যাত্রা
০১/০৩/২০১৯
#FreePalestine