ট্যাগ আর্কাইভঃ নাইট কুইন ফুল

ফুটেছে নাইট কুইন সৌরভ ছুটেছে


হযরত জলিল শাহ-এর মাজারে ফোটা দুর্লভ নাইট কুইন। দেখতে ঠিক পদ্মফুলের মতো।

নারায়নগঞ্জ গোদনাইল হাজারীবাগের হজরত জলিল শাহ মাজারে ফুটেছে দুর্লভ নাইট-কুইন ফুল। দেখতে অনেকটা পদ্ম ফুলের মতো। নাইট কুইন ফুলের রঙ ধবধবে সাদা ৷ মৃদু একটা সৌরভ আছে এই ফুলের। ফুল ফুটে থাকে রাতের শুরু থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত। মধ্য রাত পার হলেই ফুল মিলিয়ে যেতে শুরু করে। আর সেই রাতের অন্ধকারে হয় নাইট-কুইন ফুলের জীবনাবসান। তাই হয়তো এই ফুলের নাম হয়েছে রাতের রাণী নাইট-কুইন (night-queen)। যাকে বলা হয় দুর্লভ একটি ফুল। এর প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, এটা যতটা দুর্লভ ফুল ভাবা হয়, আসলে ততখানি নয়। কিছুটা বিরল ক্যাকটাস জাতীয়।


লম্বা লম্বা পাতায় লতার মতো গাছে দেখা যাচ্ছে সৌভাগ্যের প্রতীক নাইট কুইন ফুল।

জানা যায় নাইট কুইন ফুলটির আদি নিবাস আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল এবং মেক্সিকোতে। নাইট-কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম ( peniocereus greggii )। যার দেখা মেলে গাছ লাগানোর আনেক দিন পর। প্রচলিত ধারণায় এটাকে সৌভাগ্যের প্রতীকও মনে করে থাকে অনেকে। তবে দুর্লভ ফুল হিসাবে নয়, ফুলের চির স্নিগ্ধ শুভ্র-প্রবিত্র রূপকে সবাই বেশি পছন্দ করে। আর নাইট কুইন ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে কেউই দ্বিমত পোষণ করে না। নাইট-কুইন ফুল নিয়ে পৃথিবী জুড়ে বহু কাহিনী ছড়িয়ে আছে। সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনীর অবতারণা ঘটেছিল দু’হাজার বছর আগে বেথেলহ্যাম নগরীতে।

m.youtube.com/watch?v=oaGwCSfrk_Q
গতবছর ইউটিউবে আমার আপলোড করা একটা ভিডিও।

তখন নগরীর প্রত্যেক বাড়িতে নাইট-কুইন ফুলগাছ ছিল। এক রাতে ঘটল আশ্চর্যজনক ঘটনা! প্রত্যেক বাড়ি নাইট-কুইন গাছে ফুলে-ফুলে ছেয়ে গেল। এই ঘটনায় কৌতূহলী নগরবাসী এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। তাঁরা বুঝে উঠতে পারল না প্রকৃতি কেন এক অজানা উৎসবে মেতে উঠেছে। পরে অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল নগরবাসী। সেই রাতে বেথেলহ্যামের ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের। যিনি ছিলেন যিশু খ্রীষ্ট। বেথেলহ্যামের সব নাইট-কুইন সে রাতে মেতে উঠেছিল যিশুখ্রীষ্টের জন্মোৎসবে। এ জন্য আজও অনেকের কাছে এ ফুলটি বেথেলহ্যাম ফ্লাওয়ার নামেও পরিচিত ৷


মাজারে দায়িত্বে থাকা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মহিউদ্দিন সাহেব ও সৌন্দর্যের প্রতীক দুর্লভ নাইট কুইন ফুল।

আর আজ থেকে প্রায় বিশবছর যাবৎ এই দুর্লভ নাইট-কুইন ফুলটা নিয়মিত ফুটছে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল হাজারীবাগ হযরত জলিল শাহ’র মাজার শরিফে। সন্ধ্যার পর-পর প্রবিত্র এই মাজারে প্রবেশ করলেই এই ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভে মন-প্রাণ বিচলিত হয়ে উঠে। আমার জানামতে এই দুর্লভ নাইট-কুইন ফুলটি নারায়নগঞ্জের আর কোথাও নেই। গাছের পাতা থেকে ফুলের কলি, তারপর ফুল। আবার পাতা থেকে গাছের জন্ম। পাতা মাটিতে পরলেই কিছুদিন পর আস্তে আস্তে পাতা থেকে শিকড় গজায়। এরপর হয় গাছের জন্ম। গাছগুলো লম্বা লম্বা পাতায় লতা আকৃতির হয়ে থাকে।


এবার শুরুতেই অনেক নাইট কুইন ফুল ফুটেছে। যা গতবছরের চেয়েও অনেক বেশি।

এই মাজার শরিফ থেকে অনেকেই নাইট-কুইন ফুল গাছের পাতা নিয়ে রোপণ করেছিল ফুল জন্মানোর আশায়, কিন্তু হয় নাই। এই মাজার শরীফের ওরশ মোবারক প্রতি বছর তিনবার হয়ে থাকে, যথাক্রমে পহেলা ফাল্গুন, আটাশে ভাদ্র, একুশে কার্তিক। ওরশ উপলক্ষ্যে এই মাজারে বহু লোকের সমাগম ঘটে। এই মাজারের ওরশ মোবারক উপলক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি লোকের সমাগম ঘটে একুশে কার্তিক। কারণ শুধু একটাই, তা হলো এই দুর্লভ নাইট কুইন ফুলের জন্য। আগত লোকজনের দৃষ্টি থাকে এই নাইট কুইন ফুলের দিকে। প্লাস্টিকের বড় ড্রাম আকারের টবে সারিবদ্ধভাবে রাখা ফুল সহ গাছগুলো খুব সুন্দর দেখা যায়।