ট্যাগ আর্কাইভঃ ফেসবুক

ফেসবুক দিন-দিন জ্ঞানীগুণী ও অসাধু ব্যক্তিদের দখলে যাচ্ছে

952129

বর্তমান সময়ে ফেসবুকের কারিগরি সিস্টেমের সাথে কিছু জ্ঞানীগুণী ও কিছু অসাধু প্রতারক ব্যবহারকারীদের তেলেসমাতি দেখে যেমন অবাক হই, তেমন আবার ভাবতেও থাকি! ভাবনার কারণ হলো, আমার ফিরে দেখা ১৯৭৩-৭৪ সাল ও ২০১১-১২ সালে ফেসবুকে আত্মপ্রকাশ নিয়ে এবং তখন কী দেখেছি আর এখন কী দেখছি তা নিয়ে।

১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে যখন এদেশে মোবাইল ফোন ছিলোই না, তখন এদেশে মোবাইল ফোনের নামও কেউ জানতো না। আর এখন দেশের আনাচে-কানাচের রাজপ্রাসাদে, বস্তিবাসীর হাতে উন্নতমানের নামী-দামী ব্যান্ডের টাচ্ স্ক্রিন এন্ড্রয়েড মোবাইল। এসব মোবাইলে রয়েছে দ্রুতগতির 4G ইন্টারনেট সুবিধা-সহ আরও কতকিছু! সবকিছুর মধ্যে তেলেসমাতি সুবিধা হলো, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা। এই ইন্টারনেট সুবিধা পেয়ে ধনী-গরিব সবাই বাজার থেকে একটা দামী অথবা কমদামি মোবাইল কিনেই ফেসবুকে রেজিষ্ট্রেশন করে দিন-রাত ফেসবুক নিয়েই পড়ে থাকে। কি ধনী আর কি গরিব, কি ছেলে আর কি বুড়ো; সবাই এখন ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ও ফেসবুক নিয়েই অস্থির সময় পাড় করছে।

আবার কিছু জ্ঞানীগুণী ও কিছু অসাধু ব্যবহারকারীরা ফেসবুকটাকে তাদের দখলে নিয়ে গেছে। যদিও পুরোপুরিভাবে দখলে নিয়ে পারেনি, তবুও তাদের প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত আছে। তাই ফেসবুকে থাকা এসব জ্ঞানীগুণী ও অসাধু ফালতু ব্যবহারকারীদের তেলেসমাতি সত্যি আমাকে ভাবিয়ে তুলে। ভেবেও কোনও লাভ হবে না বলে জানি! কারণ দিন যত গত হচ্ছে, নিত্যনতুন নামী-দামী ব্যান্ডের এন্ড্রয়েড মোবাইল এদেশের বাজারে আসছে। তাই খুব সহজেই যেকেউ একটা এন্ড্রয়েড মোবাইল থেকে অনায়াসে ফেসবুকে রেজিষ্ট্রেশন করে তেলেসমাতি দেখিয়ে যাচ্ছে। তেলেসমাতি দেখাতে পারতোই না, যদি এন্ড্রয়েড মোবাইল এদেশের বাজারে না আসতো; আর হাতে হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল না থাকতো।

এসব দেখে মনে পড়ে, একসময়ের বাটন মোবাইলের কথা! এদেশে যখন মোবাইল ফোন বাজারে আসে, তখন বেশিদামী আর কমদামী সব ব্যান্ডের সব মোবাইলই বাটন মোবাইল ছিলো। বাটন মোবাইলে ইন্টারনেট সুবিধা বলতে GPRS কচ্ছপ গতির 2G ইন্টারনেট ছিলো। সেই কচ্ছপ গতির ইন্টারনেট সুবিধাতেও একসময় মানুষ বর্তমান যুগের অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করতো। কিন্তু ফেসবুকে এতএত তেলেসমাতি কারিগরি সিস্টেম আর এতো জ্ঞানীগুণীদের পদচারণা ছিলো না। ছিলো না, ভুয়া আইডির অসাধু ব্যবহারকারীদের আনাগোনাও। 

সেই সময়কার বাটন মোবাইলে GPRS 2G ইন্টারনেট ব্যবহার করেই ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। যা এদেশে ফেসবুক আবির্ভাব হবারও অনেক পরে। তা-ও একসময় হঠাৎ করে ওই আইডি টা নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও ফেসবুকের প্রথম আইডি টা আর সক্রিয় করতে পারিনি। তারপর বাধ্য হয়ে ২০১২ সালে পুনরায় বর্তমানে চলমান আইডি টা খুলেছিলাম। কিন্তু বাটন মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করে এখনকার মতো এমন মজা পেতাম না। বাটন মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করা মানে, মানুষ হয়ে গরুর মতো মাঠের ঘাস খাওয়া।

যাই হোক, ২০১১-১২ সালে যখন ফেসবুক ব্যবহার করতাম, তখন ফেসবুকের এতো কারিগরি সিস্টেম ছিলো না। যা ছিলো, তা শুধু একে অপরের সাথে সামাজিক যোগাযোগই রক্ষা করতে পারতো। যেমন– নিজের পছন্দের ছবি দিতে পারতো। নিজের টাইম লাইনে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে কিছু লিখতে পারতো। সীমিত শব্দের বার্তা প্রেরণ করা পারতো। তাই মনে হয় বর্তমান ফেসবুক একসময় বিশ্ববাসীর কাছে অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাইট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। আগে ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করার সিস্টেম ছিলো না। ভিডিও লাইভ নামের কোনকিছুই ছিলো না। ভিডিও পোস্ট করার কোনও অপশন ফেসবুকে ছিলো না। কারোর কাছে ভিডিও কল তো দূরের কথা, কথা বলারও কোনও সুবিধা ছিলো না। মোটকথা মেসেঞ্জার সফটওয়্যার বা অ্যাপই ছিলো না। আর এখন? এখন ফেসবুক মেসেঞ্জারে মেসেজ ভিডিও কলের জ্বালায় রাতের ঘুম হারাম।

আমি প্রথম যখন ফেসবুকে রেজিষ্ট্রেশন করেছিলাম, তখন দেখেছি এদেশের অনেক সাধারণ মানুষ-সহ অসংখ্য খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গরা এই ফেসবুককে আঁড়চোখে দেখতো। মানে, দেশের জ্ঞানী-গুণীরা অনলাইনে থাকা ফেসবুককে অপছন্দের একটা সাইট হিসেবে বিবেচনায় রাখতো। আবার অনেকের ধারণা ছিলো, এই ফেসবুক অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অনলাইন থেকে হারিয়ে যাবে। সেই ধারণা নিয়েই দেশের অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিরা আগে ফেসবুকে রেজিষ্ট্রেশন করেনি। এমনকি ফেসবুকে একটু চুপিও দেয়নি। যদিও কোনও খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ ফেসবুকে রেজিষ্ট্রেশন করেছিলো, তা কেবল পরিচিত ব্যক্তিদের ফেসবুকে ফলোআপ করার জন্যই করেছিলো।

নামী-দামী ব্যক্তিবর্গরা ফেসবুকে রেজিষ্ট্রেশন করার পর তাদের নিজের আসল নামটাও দেয়নি। তারা ফেসবুকে আত্মপ্রকাশ করেছিল ছদ্মনামে, আর প্রোফাইল ছবিটি সাজিয়ে রেখেছিল নানান রঙে। যেমন– ফুলের ছবি, গাছে ছবি, পাখির ছবি, ফলের ছবি, গরুর ছবি, ছাগলের ছবি, লাঠির ছবি, লতা-পাতার ছবি ইত্যাদি দিয়ে প্রোফাইল ছবির জায়গাটা ঠেসে রেখেছিল। প্রোফাইল ছবি আর নিজের নাম আড়ালে রাখার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো, অনেকেরই মনের ভয়। সম্মানহানির ভয়। অপমানের ভয়। লোকলজ্জার ভয়। বহু লোকের মাঝে পরিচিতির ভয়। এই ভয় থেকে এখনো অনেক নামী-দামী কবি, সাহিত্যিক, বড়সড় ব্যবসায়ী, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাদের দেখাদেখি অসংখ্য অসাধু ব্যবহারকারীরাও তাদেরই পথ অবলম্বন করছে।

একসময়ে ফেসবুককে অপছন্দকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলো কবি, সাহিত্যিক, লেখক/লেখিকা, বড়সড় ব্যবসায়ী, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও অসংখ্য অসংখ্য শিক্ষক/শিক্ষিকা ও শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ। ওনারা সবসময়ই ফেসবুকে থেকে যাচ্ছে আড়ালে আবডালে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের মতো উনারাও ফেসবুক ব্যবহারকারী। তবে মজার ব্যাপার হলো, এখন আর তাদের কাছে ফেসবুক অপছন্দের নয়! এখন ফেসবুক তাদের কাছে জীবন চলার চাবিকাঠি এবং সকালের নাস্তা, রাতের ঘুম। মোটকথা বাংলাদেশের ফেসবুক এখন তাদেরই দখলে।

সম্মানিত ব্যক্তিবর্গরা এখন ফেসবুকে গ্রুপ বা পেইজ তৈরি করে সাধারণ ব্যবহারকারীদের যোগদানের আহবানও জানায়। যেসব কবিগণ আগে ফেসবুকের নামও শুনতে পারতো না, উনারা এখন কবিতার আসর জমিয়ে, তাঁদের লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়ার অনুরোধ করে। আবার বড়সড় খ্যাতিমান সাহিত্যিকরা তাদের নিজস্ব গ্রুপে সাহিত্যচর্চার আসরও বসিয়েছে। বই প্রকাশনার প্রশাসকরা তাদের ই-মেইল ঠিকানায় লেখা পাঠানোর আহবান জানাচ্ছে। ছোট-বড় রাজনৈতিক নেত্রী বৃন্দরা তাদের অনুসারী বাড়ানোর জন্য ফেসবুকে আইডি খুলে নিজের পরিচয় জানান দিচ্ছে। আবার অনেক অসাধু ব্যক্তি রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের নামে ফেইক আইডি খুলে হাতে ইশারা দিচ্ছে, আমি অমুক, আমি অমুক!

তাই এখন ফেসবুকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী প্রচারণাও চলে। এখন ফেসবুকে দেশের যেকোনো নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার পছন্দের প্রার্থীর একনিষ্ঠ কর্মীরা মিছিলও করছে, আমার ভাই তোমার ভাই, 'কেয়ামত ভাই, কেয়ামত ভাই। কেয়ামত ভাইয়ে চায় কী, কেয়ামত ছাড়া আর কী!

আবার অনেক জ্ঞানী গুণী দীর্ঘদিন ফেসবুককে অবহেলা করে ফেসবুক থেকে দূরে থেকে আফসোস করেও মরছে। তাই উপায়ন্তর না দেখে উনারা এখন ফেসবুকে আইডি খুলে প্রথমেই জানিয়ে দিচ্ছে, আমি কবি, আমি সাহিত্যিক, আমি রাষ্ট্রের এটা, আমি ওটা, আমি সেটা, আমি অমুক, আমি তমুক। এর মানে হলো, উনি অনেক দেরি করে ফেসবুকে এসে একদিনেই সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন জয় করে ফেলতে চাইছে।

আবার অনেক বড়-বড় কবিরা একটু দেরি করে এসে, নিজের লেখা কবিতা-সহ দিন-রাত পারিবারিক ছবি আপলোড করেই যাচ্ছে। তাদের কাছে ফেসবুক এখন মহামূল্যবান এক সম্পদে পরিণত হয়েছে। অনেকেই আছে প্রতিদিন একবার করে নিজের প্রোফাইল ছবি-সহ কাভার ছবিও পরিবর্তন করছেই। এসব দেখে বোঝা যায়, উনারা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে সারাদিন এই ফেসবুক নিয়েই বসে থাকে।

বর্তমান ফেসবুক পাগল জ্ঞানীগুণীদের সাথে তাল মিলিয়ে অসাধু কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও এরকমই করছে। তবে অসাধু ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কার্যকলাপ ভিন্নরকম। তারা এক-এক সময় এক-এক অপকর্মে ব্যস্ত থাকে। যেমন–কাউকে ঘায়েল করতে হলে ধর্ম অবমাননাকর একটা পোস্ট প্রতিপক্ষের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আবার কারোর পোস্টে গিয়ে খামোখা বাজে মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দিয়ে ভালো মানুষের ক্ষতি করবে। কারোর সামনাসামনি না পারলেও ফেসবুক হুমকি-ধমকি দিয়ে যাবে। আবার কোনও জনপ্রিয় নেতা-নেত্রীর ভালো কাজের গুনগান তারা গাইবে না। বরং ওইসব জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করা-সহ দোষ দিবে, নিন্দা করবে, মিথ্যে অপবাদ দিবে এবং যেভাবেই হোক হেয় প্রতিপন্ন করাই হলো ওইসব অসাধু ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনের কর্ম।

তাদের ওইসব কীর্তিকলাপ দেখে ভাবতে থাকি, যদি গুগল প্লাসের মতো কোনোএক সময় এই ফেসবুক চিরতরে হারিয়ে যায়, তাহলে ফেসবুকে দেরি করে আসা এসব কবি, সাহিত্যিক, লেখক/লেখিকা, জ্ঞানীগুণী আর অসাধু ব্যবহারকারীরা কী করবে? মনে হয় হার্ট-অ্যাটার্ক করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। কামনা করি তা যেন না হয়। সবাই বেঁচে থাকুক! সবাই ফেসবুকের নিয়মনীতি মেনে ফেসবুক ব্যবহার করুক! জয়তু ফেসবুক।

ফেসবুক ট্যাগ কখন করবেন এবং কেন করবেন?

অনেকেই আছেন যারা অনেক দিন ধরেই ফেসবুক ব্যবহার করেই যাচ্ছেন। ফেসবুক মেসেঞ্জারে বন্ধুদের বিকাল-সন্ধ্যা, রাতদুপুরে মেসেজ দিয়েই যাচ্ছেন, দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু বন্ধু তালিকায় থাকা বন্ধুদের পোস্টে ভুলেও লাইক/কমেন্ট করছেন না। এমনকি মাসে একবারও চুপি দিয়ে দেখছেন না, বন্ধুটি কি পোস্ট করেছে। লাইক/কমেন্ট তো দূরেরই কথা!

আবার নিজের একটা ভালোলাগা ভিডিও মেসেঞ্জারে প্রেরণ করছেন। ভাবছেন না যে, আমি যেটা পছন্দ করছি বা আমার যেটা পছন্দ, সেটা আমি যাকে প্রেরণ করছি, তার কাছে ভালো লাগবে কিনা? ধরে নিতে পারেন, তার কাছে সেটা ভালো না-ও লাগতে পারে। সেটা না ভেবেই নিজের ইচ্ছেমতো বলা নেই কওয়া নেই, সময় নেই গময় নেই; দিনরাত মেসেঞ্জারে বিরক্ত করেই যাচ্ছেন। এতে নিজের কাছে ভালো লাগলেও, তা অন্যের কাছে হতে পারে বড়ই বিরক্তির বা অশান্তির মহৌষধ! তবে হ্যাঁ, মেসেজ বা বার্তা প্রেরণ করবেন। কখন এবং কেন করেন? যখন আপনার বিশেষ প্রয়োজন হবে, তখন মেসেজ বা বার্তা প্রেরণ করতে পারেন। নিজের আত্মীয় স্বজনদের ছবি নিজের আত্মীয় স্বজনদের কাছে পাঠাতে পারেন। জরুরি কোন সংবাদ প্রাপকের ইচ্ছায় প্রেরণ করতে পারেন। এছাড়া তো কোন অবস্থাতেই কারোর মেসেঞ্জারে কোনোকিছুই পাঠাতে পারেন না। এটা একরকম বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়!

এবার আসি ট্যাগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায়। আমরা যারা ফেসবুক ব্যবহার করছি। সকলেই লক্ষ্য করছি যে, কেউ কেউ দিন 🐀 রাত সুযোগ পেলেই একসাথে ৫০ জন বন্ধুকে ট্যাগ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন? ট্যাগ করার প্রয়োজন-ই-বা কি? আপনি যখন ফেসবুকে একটা পোস্ট করবেন, তখন অটোম্যাটিকলি আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা সকল বন্ধুরা এমনিতেই দেখতে পাবে। তাহলে এরপরও আবাত ট্যাগ করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এটা একরকম গায়ে পড়ে ঝগড়া করার সামিল!

আসলে যারা হরদম ট্যাগ করে যাচ্ছেন, মনে হয় তারা আজও জানেন না যে, ফেসবুক ট্যাগ কি এবং কেন? বিশ্বাস করুন, এটি ঠিকমত ব্যবহার না করা হলে সত্যিই খুব বিরক্ত লাগে। যা যিনি যাকে তাকে দিন 🐀 রাত ট্যাগ করে যাচ্ছেন, তাকে যদি কেউ ট্যাগ করে; তার কাছেও বিরক্তিকর হতে পারে। কেন হতে পরে?

তাহলে আসুন জেনে নেই ফেসবুক ট্যাগ কী এবং কেন?

ট্যাগ এর ইংরেজি (Tag) বাংলা অর্থ হলো, শিকল বা শিকল দ্বারা আটকানো বা মোটা একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা।

তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, আপনার কোন পোষ্ট বা ছবিতে যদি আপনি অন্য কোন ফ্রেন্ডকে আটকাতে চান, তাহলে শুধুমাত্র ট্যাগ ব্যবহার করেই আটকাতে পারবেন। তার মানে হলো, আপনি নিজে অন্যায় করে অপরকে ফাঁসানো।

কিন্তু কেন? কেন অযথা নিজের দোষ অপরের ঘাড়ে চাপাবেন? যদি ট্যাগ সম্পর্কে বুঝে থাকেন, তাহলে শুধু শুধু আপনার একটি পোষ্টে অনেক ফ্রেন্ডদের ট্যাগ করবেন না। এর কোনও মানেই হয় না।

এবার জেনে নিন ট্যাগ করলে কি হয়! ট্যাগ করলে আসলে কি হয়?

ধরুন আপনি একটি ছবি আপলোড করে আপনার কোন বন্ধুকে ট্যাগ করলেন। সাথে সাথে আপনার আপলোড করা ছবিটি আপনার ট্যাগ করা বন্ধুর ওয়ালে বা টাইমলাইনে চলে যাবে। এর অর্থ দাঁড়ায় আপনার পোষ্টের সাথে তারাও জড়িত। তাই আপনি তাদেরকে ট্যাগ করেছেন। যা আইনের চোখে জঘন্য অপরাধ। কাজেই নিজের ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ট্যাগ করবেন না।

হ্যাঁ, ট্যাগ করবেন। কখন করবেন, কী করবেন এবং কাকে করবেন? ট্যাগ করবেন, এলাকার কোনও জরুরি সংবাদ! আচমকা কোনও দুর্ঘটনাজনিত কারোর মৃত্যুর খবর ট্যাগ করতে পারেন। এছাড়াও নিজের পারিবারিক কারোর ছবি আপনার কোনও আত্মীয়স্বজনকে ট্যাগ করতে পারবেন। এই অবস্থায় আপনি আপনার ঘনিষ্ঠ পরিচিত বন্ধুদের অনুমতিতে ট্যাগ করতে পারেন। এছাড়া অন্য কাউকে নয়। আর এটাই হচ্ছে ফেসবুক ট্যাগের প্রকৃত অর্থ বা নিয়ম।

কিন্তু অনেকেই দেখি অবুঝের মতো নিজের একটা ছবি দিয়ে, ৩০ থেকে ৫০ জনকে ট্যাগ করে দেয়। যা আসলেই ফেসবুকের নীতি বিরোধী ও একপ্রকার স্পাম। তাই কখনোই এই কাজটি আর করবেন না, প্লিজ! আরও জানুন, ফেসবুকে ট্যাগ দ্বারা কাউকে বিরক্ত করা মানে নিজে ব্লক লিস্টে বা আনফ্রেন্ড তালিকায় নাম লেখানো। যদি ভুল বলে থাকি, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো অন্যসব বন্ধুদের দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টা অযথা মেসেজ আর বিরক্তিকর ট্যাগ করতে থাকুন। এরজন্য ভবিষ্যতে ফেসবুক থেকে পুরস্কারও পেতে পারেন। ধন্যবাদ।

ছবি গুগল থেকে।

ফেসবুক যদি হয় পৃথিবীর বড় গোরস্থান সেখানে আমার সমাধি

ক’দিন ধরেই ফেসবুকে আমার জন্ম এবং মৃত্যু নিয়ে ভাবছি। এখন সুস্থ আছি। ভালো আছি। পকেটে টাকা আছে। দোকানে ইন্টারনেট আছে। মেগাবাইট কিনে ফেসবুক ব্যবহার করছি। একদিন পকেটে টাকা থাকবে না। মোবাইলে মেগাবাইট থাকবে না। মেগাবাইট নামের ইন্টারনেট নেই তো ফেসবুক নেই। একসময় মোবাইল বা ল্যাপটপ টেপাটেপি করার শক্তি এবং মন-মানসিকতা থাকবে না। তখন ফেসবুকে প্রবেশ করা হবে না। তাহলে আমার বর্তমান সখের ফেসবুক আইডির অবস্থা কী হবে? আবার জীবের সেরা মানুষ হয়ে এই পৃথিবীতে যখন জন্মগ্রহণ করেছি, একদিন তো মৃত্যু হবে। তখনই বা আমার স্বাদের ফেসবুক প্রোফাইল বা আইডির অবস্থা কী হবে? একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারি, আমার মৃত্যু পর আমার ফেসবুক প্রোফাইল কী হবে! যা হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে নিজের কিছু স্মৃতিচারণ নিয়ে আলোচনা করি। পরে নাহয় এবিষয়ের আলোচনায় আসি।

একসময় একটা ওয়ান ব্যান্ড রেডিওর পেছনে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াতাম। স্কুলে যেতাম আর না-ই-বা যেতাম, কিন্তু রেডিওর পেছনে সময় ঠিকই দিতাম। গান শুনতাম। খবর শুনতাম। টেলিভিশনের তো দেখাই মিলতো না। শীতলক্ষ্যা নদীর এপার-ওপার দুই পাড় মিলিয়ে মাত্র দুইটি সাদা-কালো টেলিভিশন ছিলো। সেই সাদাকালো টেলিভিশন এখন মনে হয় জাতীয় যাদুঘরেও সংরক্ষণ নেই। এখন বাংলার ঘরে ঘরে বড় এলসিডি কালার টেলিভিশন। রেডিও তো এখন এই যুগের শিশুরা খেলনা হিসেবেও ব্যবহার করে না। আগের রেডিওর চেয়ে বর্তমানে শিশুদের খেলনা সামগ্রী অনেক উন্নতমানের।

১৯৮০ দশকের দিকে মোবাইল ছিল না। কেউ দেশের বাইরে থাকলে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে গিয়ে প্রিয়জনের কাছে ফোন করতো। বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে পোস্ট অফিসের টেলিগ্রাফের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ করতো। এখন আর সেইদিন নেই। সেই আমলের টেলিগ্রাফ বলতে আজকালকার ছেলে-পেলেরা বুঝেই না। এখন বুঝে মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, কম্পিউটার।

এখন প্রতিটি মানুষের হাতে মোবাইল। একসময় এর নাম ছিল সেলফোন। তা ছিল বাটন সেলফোন। এখন আর সেলফোন কেউ বলে না। এখন সবাই বলে মোবাইল ফোন বা মোবাইল। তাও আবার টাচস্ক্রিন। যাকে বলে এন্ড্রোয়েড মোবাইল। আঙুলের স্পর্শেই চলে। এই মোবাইল এখন মনে হয় বাংলার বেশিরভাগ মানুষেই ব্যবহার করছে। অনেকের হাতে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্নরকম দামী দামী এন্ড্রোয়েড মোবাইল সেট। এই মোবাইল দিয়ে দেশ-বিদেশে মুহূর্তেই কথা বলা যায়। ছবি তোলা যায়। ভিডিও দেখা যায়, করাও যায়। আর ভিডিও কল-সহ বার্তা আদান-প্রদান-সহ থাকে আধুনিক প্রযুক্তির ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা। মোটকথা মোবাইল এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটা অনুষঙ্গ। বর্তমানে মোবাইল ছাড়া মানুষ চলতেই পারে না। মোবাইল ছাড়া দেহ মন সবই মিছে মনে হয়। তাই বর্তমানে দেশের ধনী-গরিব সবার হাতেই মোবাইল। মানুষের আর কিছু থাকুক আর না থাকুক, কিন্তু মোবাইল থাকতে হবে। আছেও। তবে খুব কম মানুষেই বাটন মোবাইল ব্যবহার করে থাকে। জোয়ান বুড়ো অনেকেই ব্যবহার করে এন্ড্রোয়েড টাচস্ক্রিন মোবাইল।

এসব মোবাইল দিয়ে খুব সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। তাই অনেকেই মার্কেট থেকে একটা মোবাইল কেনার সাথে সাথে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করে ফেলে। এরপর বিশ্ববিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে ভিডিও দেখা-সহ ফেসবুকে ফ্রি রেজিষ্ট্রেশন করে মনের আনন্দে ফেসবুক ব্যবহার করতে থাকে। অনেকে টুইটার-সহ আরও বিভিন্ন সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করে। কেউ ব্লগে, কেউ নিউজ সাইটে। যে যা-ই ব্যবহার করুক-না-কেন, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতভাগ ব্যবহারকারী ফেসবুক ব্যবহার করে এবং সবার কাছে ফেসবুকই বেশি জনপ্রিয়। তাঁদের মধ্য আমিও একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। তাই এই জনপ্রিয় ফেসবুকে আমার জন্ম এবং মৃত্যু নিয়েই আমার আজকের আলোচনা।

বর্তমানে ফেসবুক প্রোফাইল বা ফেসবুক আইডি নেই এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী-সহ চাকরিজীবী, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, শ্রমজীবী যেকোন পেশার লোকেই হোক-না-কেন, ফেসবুকে একটা আইডি থাকবেই থাকবে। বিশেষ করে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে,তাঁরা। তাই দিন দিন দেশের প্রতিটি মানুষ বর্তমানে ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়ছে। এমনও দেখ যায় লেখাপড়া না জানা বহুলোকও বর্তমানে ফেসবুকে পারদর্শী হয়ে উঠছে। এমনও লোক আছে নিজের নাম লেখতে কলম বেঁকা হয় সে লোকও ফেসবুক ব্যবহারকারী। কেউ যদি জানতে চায় কীভাবে মেসেস দেন? কীভাবে আপনার অনুভূতি গুলো বন্ধুদের জানান? আর কীভাবে একটা ছবির উপর মন্তব্য দেন? উত্তর আসে এরকম– আরে বাবু এটা কোনও কোন ব্যাপারই না। শুধু nice, good, Good morning, fine এইসব লেখাগুলো ভাল করে মুখস্থ করলাম, ব্যাস হয়ে গেল। আর কী লাগে বাবু? উল্টা প্রশ্নকারীকে প্রশ্ন করে। এসব কথা শুনে অবাক না হয়ে শুধু ভাবতেই হয়। ভাবনা শুধু ফেসবুক নিয়ে আর মানুষের আগ্রহ নিয়ে। দেশের সিংহভাগ মানুষের আগ্রহ এখন ফেসবুক। ফেসবুক আছে তো সব আছে। ফেসবুক নেই তো কিছুই নেই। কিন্তু কেউ ভাবে না যে মৃত্যুর পরে ফেসবুক প্রোফাইলটার অবস্থা কী হবে? এটা নিয়ে ভাবার সময় হয়তো ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নেই। ভাবনা শুধু কীভাবে ফেসবুকে বেশি করে সময় দেওয়া যায়।

তাই দেখা যায় মানুষের জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ফেসবুক। ব্যবসা, বাণিজ্য, খবর, বিনোদন, কেনা-বেচা, চিঠি-পত্র আদান-প্রদান, হিন্দুদের রামায়ণ পাঠ, গীতা পাঠ, মহাভারতের বাণী, পবিত্র বাইবেলের বাণী, সন্মানিত মুসলমানদের পবিত্র কোর’আন শরীফের আয়াত সংবলিত পোষ্ট। আবার সাহায্য চাওয়া, স্বজনদের সন্ধান করা, পাত্র-পাত্রীর খোঁজ করা, ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া, রাষ্ট্রনায়কদের সাথে যোগাযোগ করা। মোট কথা জীবন মরণ, ধর্মকর্ম, প্রেম-ভালবাসা, চোর ধরা ডাকাত ধরা, ঘোমড়ফাঁস করা, গুজব ছড়িয়ে দেওয়া-সহ এই ফেসবুক মানুষের কাছে এখন মহাকিতাবে পরিণত হয়েছে।

অনেক সময় লাইকের প্রতিযোগিতার বাহারও লক্ষণীয়। এই লাইক প্রতিযোগিতায় যুবতী মেয়েরাই সব চাইতে বেশি এগিয়ে থাকে। এই লাইকের প্রতিযোগিতায় আরও অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তাদের আইডি বা পেইজে লাইকের পাহাড় তৈরী হয়। এছাড়াও লাইক প্রতিযোগিতায় আছে সুপারস্টার, মডেল তারকা, অভিনেতা অভিনেত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, মন্ত্রী এমপি, দেশের ভিআইপি ব্যক্তিবর্গ। লাইক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ নিজেও।

মার্ক জুকারবার্গের প্রতিযোগিতা শুরু হয় ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে। আজও তিনি প্রতিযোগিতা থেকে থেমে নেই। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে ফেসবুক সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে মার্ক জুকারবার্গের প্রতিযোগিতা চলছে। ফেসবুক প্রথম প্রথম শুধু আমেরিকায় বসবাসকারীরা ব্যবহার করতে পারলেও, ২০০৫ সাল থেকে সারাবিশ্বের মানুষের জন্য উম্মুক্ত হয়। সেই থেকে অদ্যপর্যন্ত সারা বিশ্বেই ফেসবুকের পদচারণা। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এই ফেসবুক। তবুও থামছেন না মার্ক জুকারবার্গ। প্রতিযোগিতা চলছে চলবে। ফেসবুক একসময় শিশু ছিল। মানে ফেসবুক যখন যাত্রা শুরু করলো। এখন দিন দিন ফেসবুক বড় হতে হতে লাগলো। আজকের শিশুতো সবসময় শিশু থাকবেনা। শিশুটির বয়স বাড়বে। বুড়ো হবে। এটাই তো নিয়ম! একদিন মৃত্যুকেও বরণ করবে।

তাহলে দিন যাচ্ছে, ফেসবুকেরও তো বয়স বাড়ছে। তাই এখানে একটা হিসাব কষে নেওয়া যায়। হিসাব কষে দেখা যায়, প্রথম যারা ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে; তাঁদের বয়স এখন প্রায় সবার চল্লিশে ছুঁই ছুঁই করছে। কারণ, যারা ফেসবুকের জন্মলগ্ন থেকে ফেসবুকে রেজিষ্ট্রেশন করেছে, তখন তাদের বয়স আনুমানিক ভাবে ১৮ থেকে ২০ বছর বা তারও বেশি ছিল। তাহলে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৯’, ১৬ বছর। ১৬+২০=৩৬ বছর। তাহলে ফেসবুকের বয়স ১৬ বছর, আর প্রথম থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বয়স হচ্ছে ৪০-এর কাছা-কাছি। এখন একটু চিন্তা করলে দেখা যায়, এখন থেকে একজন মানুষের ৮০ বছর হলে জন্মলগ্ন থেকে ফেসবুকের বয়স তখন কত হবে? হিসাব করলে দেখা যায়, তখন ফেসবুকের বয়স হয়ে যাবে ৯৬ বছরের উপরে। মানে ১০০ বছরের কাছা-কাছি। বর্তমান যুগে খুব কম মানুষেই ৯০বছর বেঁচে থাকে। শতবছর তো হাতে গোনা দুই একজন মাত্র। তাহলে আজ যাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে তাদের একদিন মৃত্যু হবে। তাহলে মনে করতে হবে এই মৃতব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টাও মৃত্যুবরণ করলো। হয়ে গেলো ফেসবুকে তার সমাধি বা কবর বা শ্মশান। আর ফেসবুক হলো সমাধিস্থান বা গোরস্থান বা শ্মশানঘাট। ফেসবুকের জন্মলগ্ন থেকে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর মৃত্যু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবেও। তখন সেই মৃতব্যক্তিদের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে যাবে শুধুই একটি কবর বা সমাধি হয়ে।

মৃতব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইল কবর হয়ে থাকার পেছনে কারণও আছে। এর মূলকারণ হলো এই জনপ্রিয় ওয়েবসাইট কারোর প্রোফাইল মুছে ফেলতে নারাজ। হোক সে জীবিত বা মৃত। এই ওয়েবসাইটি সকল ব্যবহারকরীদের সন্মান রক্ষার্থে, সবার প্রোফাইল চিরদিন স্মৃতি করে রাখতে চায়। যদি তা-ই হয়, তা হলে ফেসবুকের জন্মলগ্ন থেকে অদ্য পর্যন্ত সারাবিশ্বে কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রতি মাসে কিছু কিছু ব্যবহারকারী মৃত্যুবরণ করলে, ১০০ বছরে এর সংখ্যা কত হতে পারে? সংখ্যা যা-ই হোক-না-কেন, সেসব বা এসব মৃত্যুবরণকারীর সমাধি কিন্তু ভূমিতে থাকছে, ফেসবুকেও থাকছে।

এখন লক্ষ্য করা যাক বর্তমানে পৃথিবীতে বড় সমাধিস্থান কোনটি? গুগল অনুসন্ধানে দেখা যায়, বর্তমানে বিশ্বের বড় গোরস্থান হলো ইবাকের নাজাফ শহরের নিকটবর্তী “ভ্যালি অব পিস”। ইমাম ইবনে আবি তালিবের মাজারের পাশেই এই গোরস্থানটি অবস্থিত। স্থানীয় ভাষায় এই গোরস্থানটির নাম “ওয়াদি আল সালাম” বাংলায় যার অর্থ হয় “শান্তির উপত্যকা”। এখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রায় ১৪০০ বছর ধরে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষকে এই গোরস্থানে কবর দেওয়া হয়েছে। গোরস্থানটি মোট ১ হাজার ৪৮৬ একর জায়গার উপর অবস্থিত। এখন দেখা যায় এসব বড় বড় সমাধি স্থানকে পিছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমাধি স্থানে পরিণত হবে বর্তমান যুগের এই জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুক। এটি নিশ্চয়ই আমার জন্য একটা খুশির খবর।

খুশির খবর হলো এই পৃথিবীতে যতদিন ফেসবুক থাকবে, আমি মৃত্যুবরণ করলেও আমার প্রোফাইলটা ফেসবুক সমাধিস্থানে ততদিন থেকে যাবে। তাহলে আমার আর ভাবনা কিসের? আমার জীবন থাকতেও ফেসবুক, মৃত্যুর পরেও ফেসবুক। জয়তু ফেসবুক!

ফেসবুকের একটা লাইকের মূল্য কত?

ফেসবুক হলো বর্তমান বিশ্ব-সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট। নির্মাতা হলেন, মার্ক জাকারবার্গ। যার পথচলা শুরু হয় ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে। শুরু থেকে অদ্যবধি ফেসবুক ব্যবহারকারী শুধু লাইক নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। যা এখন সারাবিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেক ব্যবহারকারী লাইক ভিক্ষুক সেজেছে। তা দেখে মনে হয় ফেসবুক নির্মাতা মার্ক জাকারবার্গ শুধু স্বাদের লাইক সিস্টেমটাকে কেন্দ্র করেই, ফেসবুক তৈরি করেছেন। কারণ, লাইক ছাড়া তো ফেসবুকের মজাই থাকে না, তাই।

আমি ফেসবুকে সদস্য হয়েছি ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তখন ফেসবুকের ধরণ ধারণই ছিল ভিন্ন। তার মানে হলো সোজা সাপটা যাকে বলে! তখন ফেসবুকে হরেকরম লাইক ছিল না, গ্রুপও ছিল না। আর এই বিশ্ব-যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে দেশ-বিদেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, লেখিকা, রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, মিনিস্টার, ডাক্তার, উকিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, নেতা, নেত্রীদের দেখা যেত না। একসময় তাঁরা ফেসবুকের সুনাম তো মুখে আনতেন-ই-না, বরং এর সমালোচনাই বেশি করতো।

আর এখন সব দেশের সব রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি, সাহিত্যক, লেখক/ লেখিকা, সিনেমার নায়ক, নায়িকারাও দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ফেসবুকে যারযার পেইজ বা গ্রুপ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সবর থাকে, নজরও রাখে। লেখকগ্ণ লেখে। কবিগণ কবিতা লেখে। সাহিত্যিকরা সাহিত্য নিয়ে লেখে। তাঁরা পেইজ বা গ্রুপ তৈরি করে সেখানে অন্য লেখক/লেখিকাদের আমন্ত্রণ জানায়, “আসুন, এখানে লিখুন! আপনার আলোকিত প্রতিভা প্রচার করুন!” অনেকে তা করেও।

ওইসব পেইজ বা গ্রুপে সদস্য হতে হলে আগে গ্রুপের পিন পোস্ট (শর্তাবলী) পড়তে হবে। তারপর গ্রুপের শর্ত মেনে নিয়ে গ্রুপে অ্যাক্টিভ হতে হবে। শর্ত থাকে গ্রুপে অন্যদের পোস্টে পড়তে হবে, লাইক/ কমেন্ট করতে হবে। একজন সদস্য যদি কারোর পোস্টে লাইক/কমেন্ট না করে, তাহলে কয়েকদিন পর ঐ সদস্যকে গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আবার অনেক গ্রুপের একটা ভালো দিকও চোখে পড়ে। ওইসব পেইজ বা গ্রুপের অ্যাডমিনরা বা গ্রুপ পরিচালকগণ গ্রুপে অ্যাক্টিভ থাকা সদস্যদের নিয়ে বিভিন্নরকম আয়োজনেও করে থাকে। যেমন–পিকনিক, আড্ডা, সভা, সেমিনার সহ নানারকমের আয়োজন করে। আবার গ্রুপে লেখা বা পোস্টের উপর ভিত্তি করে পুরস্কৃতও করা হয়। যা অনলাইনের থাকা লিখিবার পড়িবার কোনও স্বনামধন্য ব্লগ কর্তৃপক্ষও করতে পারে না বা করেও না। তা করে থাকে ফেসবুকে থাকা পেইজ বা গ্রুপ পরিচারকগণ। এসব করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, লাইক আর গ্রুপের কর্মকাণ্ড প্রচার কার।

আর রাষ্ট্রপ্রধানরা তো এখন একরকম ফেসবুক নির্ভর হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপ্রধানরা তাঁদের সুকৃতি নিয়ে ফেসবুকে তাঁদের নিজস্ব পেইজ বা গ্রুপে প্রচার করে। যাতে তাঁদের জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে। বর্তমানে ফেসবুকে সারাবিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্টপ্রধানদেরও পেইজ বা গ্রুপ আছে। তবে এসব ভিআইপি ব্যক্তিদের নামে পেইজ বা গ্রুপ কতটা সত্যিকারের তা অনেকেরই জানা নেই। তবু অনেকেই সত্যি সত্যি মনে করে লাইক দিচ্ছে, মন্তব্যও দিচ্ছে। আর ভিআইপি ব্যক্তিরাও তাঁদের পেইজ বা গ্রুপে তাঁদের গুণগান যেমন প্রচার করছে, তেমন আবার ফেসবুকের দিকে খেয়ালও রাখছে।

খেয়াল রাখছে এই কারণে যে, যদি তাঁদের কোনও অপকর্ম আর অসৎকর্মের খবর ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়? তাই বর্তমানে রাষ্ট্রপ্রধানরা ফেসবুকের দিকে বেশি খেয়ালি। তবে এসব ভিআইপি ব্যক্তিদের পোস্টে অন্যদের করা মন্তব্যের কোনও রিপ্লাই করা হয় না। মেসেজ পাঠানোর সিস্টেম থাকলেও কারোর মেসেজের উত্তর দেওয়া হয় না বলেই মনে হয়। তাঁরা শুধু লাইকের দিকে আর বাজে মন্তব্যের দিকেই বেশি খেয়াল রাখে। যদি কেউ ভুলবশত মনের ক্ষোভে কোনও বাজে মন্তব্য করে, তাহলে কয়েকদিনের মাথায়ই খবর হয়ে যায়। মামলা হয়, কারাদণ্ডে দণ্ডিতও হয়। তাই বর্তমানে রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, নেতা, নেত্রীদের নিয়ে ফেসবুকে কেউ বেশি মাথা ঘামায় না। যার যার পোস্টের লাইকের ধান্ধায়ই বেশি থাকে।

এবার আলোচনায় আসা যাক ফেসবুকে থাকা লাল লাইক, সবুজ লাইক, আঙুল মার্কা লাইক, ইমেজি লাইক আর ট্যাগ নিয়ে। আগে এতো হরেকরকমের লাইক ছিল না। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ট্যাগ করাও বুঝতো না। ছিল না মেসেঞ্জার, ফ্রি ফোন কল, ভিডিও কল, ভিডিও শেয়ারিং-এর ব্যবস্থাও। শুধু নিজ টাইমলাইনে ছবি আর কয়েক লাইন লেখা সহ স্ট্যাটাস দেওয়ার সিস্টেমেই ছিল। মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে অনেক শর্টকাট সুবিধা ফেসবুকে যুক্ত করে ফেলেছেন।

বর্তমানে শুধু লাইকের জন্য নিউজফিডে থাকে, খবর বিনোদন সহ দেশবিদেশে ঘটে যাওয়া নগদ খবর। আছে দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার খবর। সেসব পত্রিকার পেইজ থেকে প্রতি মিনিটে মিনিটে খবর আপডেট করা হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারী নিউজফিডে তা দেখতে পারছে, পড়তেও পারছে। লাইক দিচ্ছে। মন্তব্যও করছে। কিন্তু কোনও মন্তব্যকারীর মন্তব্যের উত্তর দেওয়া হয় না। আগে ফেসবুকে পত্রপত্রিকার খবরাখবর ছিল না, যা বর্তমান সময়ে দেখা যায়। এটা বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকের একরকম সফলতাও বলা চলে।

আগেই বলেছি ফেসবুকে সর্বপ্রথমও ট্যাগ ছিল। যা ব্যবহারকারী বুঝেশুঝে ট্যাগ করতো। এখনো ট্যাগ সিস্টেম ফেসবুকে আছে। ট্যাগ হলো, শিকল। নিজের করা পোস্ট অন্যের ঘাড় চাপানোই হলো ট্যাগের কাজ। তবে আগে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সহসা কেউ কাউকে ট্যাগ করতো না। এখন একটা লাইকের আশায় একটি ছবি আপলোড করে তা ৪০ থেকে ৫০ জন বন্ধুকে ট্যাগ করে বসে থাকে। যা একধরণের যন্ত্রণা। যন্ত্রণা হলো এই কারণে যে, এক বন্ধুর একটা বল্টু মার্কা ছবি ফেসবুকে আপলোড করে তা আমাকে কেন ট্যাগ করা হবে? এটা তো একরকম অন্যায়। কিন্তু ন্যয় অন্যায়ের দিকে আর কেউ বিচার বিবেচনা না করে শুধু একটা লাইকের জন্যই; সিরিয়াল ৪০ থেকে ৫০ জনকে একই শিকলে বেধে ফেলে। একবার শোনা গিয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আনলাইক সিস্টেম চালু করবে। কিন্তু না, তা আর হয়নি। শুধু আলোচনার মাঝেই তা থেকে গেল।

তবে আমার মতে ফেসবুকে আনলাইক সিস্টেম চালু করার খুবই দরকার ছিল। দরকার ছিল এই কারণে যে, বর্তমানে শুধু আমাদের দেশের ফেসবুকাররা হচ্ছে লাইক পাগল। ফেসবুকে একটা লাইকের জন্য নিজের প্রেমিকার বিকিনি ছবিও ফেসবুকে সবার মাঝে শেয়ার করছে। আরও কত যে অভিনব কায়দা কৌশল অবলম্বন করে থাকে, তা আর লিখে শেষ করা যায় না। যদি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আনলাইক সিস্টেম চালু করতে, তাহলে দেখা যেত কত ছবিতে কত লাইক, আর কত আনলাইক!

লাইক পাগল ফেসবুকারা এখন সেলফি মোবাইল ব্যবহার করে। যেমন–OPPO মোবাইল। যা কিনা ছবি আর সেলফির জন্য বিখ্যাত। সেলফি যে কী, তা আমি নিজেও আগে জানতাম না। এখন জানি সেলফি কী? সেলফি হলো, নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে নিজের ছবি নিজে তোলা। এর নাম হলো সেলফি। ফেসবুকেও চলছে সেলফি ছবির রমরমা পোস্ট। আর লাইকের জন্য ভিক্ষা আর ফরিয়াদ।

লাইক পাগল ফেসবুকাররা তাঁদের ছবি পোস্টে লিখে থাকে, “ভাইয়া একটা লাইক দিবা?” কিছু লাইক পাগল মেয়ে ফেসবুকার আছে। ওরা নিজের ছবি আপলোড করে ছবির উপরে লিখে থাকে, “ভাইয়া আমার ভাই কোনও নেই! ফেসবুকের সকল বন্ধুরাই আমার ভাই। ভাইয়া আমাকে দেখতে কেমন লাগছে? যদি ভালো লাগে তো একখান লাইক দিতে ভুলবেন না!” আবার দেখি লেখা থাকে, “কেউ এড়িয়ে যাবেন না!” আরও লেখা দেখি, “একটা লাইক বা একটা কমেন্ট করুন! আজ আপনার ভাল কিছু একটা হবে।” কেউ আবার সরাসরি সাক্ষাতে বলে ফেলে, “ছবি ছাড়ছি, লাইক দিয়েন ভাই!” কেউ লাইকের জন্য ধর্মের বানীও পোস্ট করে থাকে।

এমন আরও শতরকমের অভিনব কায়দায় অনেক ফেসবুকারকে লাইক ভিক্ষা করতে দেখা যায়। সেসব লাইক ভিক্ষুক ফেসবুকে এখনো আছে। ওরা পোস্টে মন্তব্যের জন্য পোস্ট করে না। আর মন্তব্য যে কী, সেদিকে ওরা গুরুত্বও দেয় না। কেউ পোস্টে মন্তব্য করলে, সেই মন্তব্যের রিপ্লাইও করে না। ওরা শুধু লাইকের জন্যই ফেসবুকে ছবির পর ছবি আপলোড করতেই থাকে, আর ট্যাগ করতে থাকে।

এখন আসল কথায় আসি। কথা হলো, ফেসবুকে ওইসব লাইক পাগলদের কাছে একটা লাইকের মূল্য কত হতে পারে? আমরা মনে হয় ফেসবুকার লাইক পাগলদের কাছে একটা লাইক মানে, দিল্লিকালাড্ডু আর পোড়াবাড়ির চমচমের মতো। ওরা লাইক পাগল ফেসবুকাররা মনে করে থাকে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ হয়তো কোনও একদিন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পোস্টের লাইক হিসেব করে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে পুরস্কৃত করবে। আসলে তাঁদের ধারণা কি ঠিক? তা টিক হোক আর না হোক, তাতে কারোর কিছুই যায় আসে বলে মনে করি না।

তবে ফেসবুক লাইক পাগলদের পোস্টে লাইক/কমেন্টও আমাদের কিন্তু দেখেশুনে করতে হবে। কারণ, কোনও বন্ধুর অপছন্দের পোস্টে যদি আমি লাইক করে ফেলি তো, সেই বন্ধু আমার পর খুব রাগ করতে পারে। আর না বুঝে মন্তব্য তো করাই যাবে না। কারণ, সময়সময় একটা মন্তব্যের সাংঘাতিক বিপদ টেনে আনতে পারে। আবার ঝগড়াও হতে পারে। সময়সময় ঝগড়া বেধেও যায়।