টিটি’র একদিন

বিমান বন্দর স্টেশন ছেড়ে ট্রেন খুলনা অভিমুখী। ধীরে ধীরে গতি বাড়ছে। সময়ের বুক থেকে বের হওয়া আরো অনেক কু-ঝিকঝিকের সাথে ট্রেনের গুলোও মিলায়.. বাতাসে.. শব্দ তরংগ।

যুবক ওরা চারজন। এক টেবিল মাঝে রেখে সামনাসামনি। টুয়েন্টি নাইন খেলছে। অপর পাশে ভিন্ন বয়সের নারী- পুরুষ শিশু। একেবারে শেষ মাথায় দুজন দুপাশের বন্ধ দরোজার ওপরের খোলা অংশ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। সেদিকের অপর বগি থেকেই আসলেন টিটি।

বয়ষ্ক মানুষ। ইউনিফর্মের ভেতরের মানুষটার কথা বলছিলাম। অন্য বগিতে পা রাখার মুহুর্তেই দুই বিপরীত পাশে দাঁড়ানো যাত্রীদের দিকে তাকান। সময় কাটে..কথা বার্তায়.. আর শব্দবিনিময়ের সাথে সাথে গোপন লেনদেন টুকু চলন্ত ট্রেনকে শিউড়ে দিতেই তীব্র বাঁকে পৌঁছে ট্রেন কেঁপে ওঠে.. হুইশেলের শব্দে চারপাশ কাঁপিয়ে দিয়ে বাঁক নেয় ট্রেন।

একে একে চেক করে তাস খেলারত গ্রুপের নিকট থামেন। ওপাশে ছোট্ট বাবুটা তার বাল্যশিক্ষায় পড়ছে,
‘ ঘ – ঘুষ খাওয়া মহা পাপ
ঘুষ দূর্ণীতির বাপ।’
বাবুটা ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করে, ‘বাবা, ঘুষ কিভাবে খায়?’

আশপাশের সব কিছু কেমন নীরব মনে হতে থাকে টিটির কাছে। বুকের বাম পকেটের ওখানটায় কেমন জ্বলে ওঠে। ওপর নিচে সব দিকে।
ট্রেনের দুলুনিতে স্থির হতে একটু সময় নেন। বাবুটার সামনে হাঁটু ভেংগে বসেন।
‘ আসো বাবা আমার সাথে। আমি বলছি তোমায়।’

অবাক সবার সামনে দিয়ে ছোট্ট বাবুটার হাত ধরে এখন পোষাকের ভেতরের মানুষটি দুই বগীর সংযোগস্থলে দাঁড়ানো সেই দুই যাত্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান। বুক পকেট থেকে বের করা একটু আগের গোপন সময়, বর্তমানে এনে সেটার মোড়ক উন্মোচন করেন। অবাক যাত্রী দুজনের দৃষ্টির সামনে নিজের কঠোর দৃষ্টি আর নীরব চাহনি নিয়মকে বড্ড তীব্রভাবে রিয়্যাক্ট করালো এক আন্ত:নগর ট্রেনে।

বাবুটার থুতনি নেড়ে আদর করে টিটি বলেন,
‘ আমি যে টাকাগুলি ফেরত দিলাম, ওটা নেয়াটা ঘুষ খাওয়া ছিল। আমি মহাপাপ করেছি। আমার দুই কান জোরে মলে দাও। তারপর এই দুইজনের গুলিও মলে দিও। ওরা ঘুষ দিয়েছে আমাকে।’

সময় স্থির থাকে যেন। কেবল চলন্ত ট্রেনের এই আওয়াজ ভেসে আসে, ‘ঘুষ খাওয়া মহা পাপ… ঘুষ দূর্ণীতির বাপ’…।

একজন টিটি বেলাশেষের আবীর মেখে মেখে পরিশুদ্ধির পথে পা রাখেন। জানেন সময় একদম-ই নাই। তারপর ও শুরুটা করেন।
শুরু, যে কোনো সময়েই করা যায়। দরকার কেবল একটু সামনে পা বাড়ানো। আজ স্মিত হেসে একজন টিটি ভাবেন, তিনি শুরু করতে পেরেছেন.. জানালার বাইরে তখন সন্ধ্যা নামবে একটু পরেই।।

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

5 thoughts on “টিটি’র একদিন

  1. শব্দনীড় এ অনেকদিন পর প্রিয় লিখক মামুন এর অণুগল্প পড়লাম। স্বাগতম প্রিয় লিখক। লিখা চলুক অবিরাম। শুভ সকাল  এবং শুভেচ্ছা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. ধন্যবাদ প্রিয় ভাইয়া। আসলে সাংবাদিকতায় নিজেকে জড়িয়েছি, দিনের এবং রাতেরও বেশীরভাগ সময় আমার বাইরে কাটে বিধায় লেখায় সময় দিতে পারছি কম। ইনশা আল্লাহ এখন থেকে নিয়মিত হবো আবার।

      একটা ব্যাপার জানতে চাইছি, আগের পোষ্টগুলি দেখছি না কেন?https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      1. আদি শব্দনীড় ডেটাবেইজ করাপ্ট হবার কারণে গতবছর জানুয়ারীতে নতুন ভাবে শব্দনীড় চালু হবার পরে প্রকাশিত সব লিখাই এখানে রয়েছে মি. মামুন। শব্দনীড় এখন সিকিউরড।

         

  2. দারুণ এবং অনবদ্য প্রকাশ। বিষয়টি আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাক।

    1. ধন্যবাদ বন্ধু।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

      হ্যা, টিটি'র মতো অনুভব সবার মাঝেই জেগে উঠুক।

      ভালো থাকবেন।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।