নষ্ট কষ্ট একটু একটু : অণুগল্প

নিউমার্কেটের চারটি প্রবেশদ্বার। পূর্বপাশের পার্কিং এরিয়ায়, বসা অবস্থায়ই বাইক স্ট্যান্ড করায় শিহাব। চাবি খুলে নিয়ে ঘাড় লক করে। নামে না, আকাশের দিকে তাকায় একপলক। ঘুমোট হয়ে আছে। ঘোমটার আড়ালে মেঘবালিকাদের ভ্রু কুঁচকে আছে, স্পষ্ট অনুভব করে শিহাব।
.

স্মরণকালের ভয়াবহ তাপদাহ। ঝুলফির দু’পাশ দিয়ে ঘামের ধারা বয়ে চলেছে। বুক ভেসে যাচ্ছে। ভেজা অসস্তিকর অনুভব। উফফ!একটু বৃষ্টি হতো।
.

আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত উঁচু করে ইশ্বরের কাছে অভিযোগ জানাতে উদ্যত হতেই, আচমকা ফ্রিজ হয়ে যায় সে।
হ্যা!
পারু!
পারুই তো!
আরো একটি তুলতুলে বাবু পারুর হাত ধরে মার্কেটের গেট দিয়ে বের হয়ে আসছে সে। এখনো দেখতে একই রকম আছে সে!
.

কোথায়ও কি কিছু পুড়ছে?
গন্ধ পায় শিহাব। মুহুর্তে আঠারো বসন্ত পিছনে গিয়ে, সেই পারু দৃষ্টিগোচর হয়। অনুভবে… কল্লনায়!
.

শিহাবের হৃদয় একটু কি জ্বলে ওঠে? অদৃশ্য পর্দা ভেদ করে আবার সেই মেয়েটির উপস্থিতিতে একটু কি বেসামাল হয় সে?
.

ভাবনার অবসরে ওরা কেউ কাউকে দেখতে পায় না। ইজি বাইকে পারু মেয়েকে নিয়ে হারায়। আবারো? সম্বিৎ ফিরতেই মোড়ের ওপাশের তিন রাস্তার যে কোনোটি দিয়ে ভিড়ের মাঝে গন্তব্য খুঁজে নেয় পারুকে বহনকরা যান্ত্রিক বাহনটি।
.

ডান পায়ের জোরালো কিক স্টার্টারে পড়ে। পারুকে অবচেতনে নিয়ে, গলির মোড়ের দিকে ধাবমান শিহাব। রাস্তা জুড়ে চলে যাওয়া পারুর শরীরের ঘ্রাণ অনুভব করতে চেষ্টা করে সে। সেই আগের মতো ঠিক যেভাবে পারুর হেঁটে চলা রাস্তা ধরে ধরে.. আরও পরে পারুর বুকের উপত্যকায় নিজেকে ডুবিয়ে ভালোবাসার ঘ্রাণ পাওয়ার জন্য যেভাবে .. ঠিক আঠারো বছর আগে যেভাবে.. আজও সেভাবেই!
.

মোড়ে এসে আবারো থেমে যায় শিহাব। হারানো মেয়েটির শরীরের সেই হারানো সুরে একটুও উদ্দীপ্ত হয়না সে। অনুভব করে, পুরো রাস্তা জুড়ে এখন কেবলি শিহাবের বউয়ের ঘ্রাণ! শিহাবের অনুভবের গভীরতর প্রদেশ এখন কেবলি বউময়।
.

শিহাবের শরীর জুড়েও এখন কেবল বউয়ের-ই ঘ্রাণ! বাইক ঘুরিয়ে ফিরে চলে সে। বউ অপেক্ষা করছে। হাসে নিজের মনে শিহাব।
হ্যা!
শিহাবের জীবন এখন কেবল বউময়!
থাকুক হারোনো মেয়েটি তার নিজের মতো। যা সে চেয়েছিলো।
.

তারপরও… শিহাবের কি একটু একটু কষ্ট হয়?

#নষ্ট_কষ্ট_একটু_একটু_মামুনের_অণুগল্প_৪২৬

ছবিঃ Parbati Ghosh এর স্কেচ

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

6 thoughts on “নষ্ট কষ্ট একটু একটু : অণুগল্প

  1. অনেকদিন পর শিহাব এর সাথে একজন পাঠক হিসেবে দেখা হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে শিহাব চরিত্রটিকে যেন নিজের করে নিয়েছি। শুভেচ্ছা জানবেন মি. মামুন।

    1. অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। হ্যা, শিহাবের সাথে ইদানিং কম দেখা হয় আমারও। তবে দেখা আরো বাড়ানো হবে ইনশা আল্লাহ। আর যেখানেই শিহাব, সেখানেই পারু। এই দু'জনের কম্বিনেশন মানে নতুন সৃষ্টিশীলতার অনুরণন।

       

      শুভেচ্ছা নিরন্তর…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

      1. শিহাব এবং পারু নিয়মিত ভাবে ফিরে আসুক এই প্রত্যাশা। :)

    2. এবার শিহাবের সাথে কণাকে নিয়ে এলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।