শীতের প্রকোপের অবসানের পরে,
চিরযৌবনা বসন্ত এসে গেলো,
বৃক্ষরাজিতে আজ পুষ্পের মেলা বসেছে ,
আঁচলে মুখ লুকিয়ে।
তুমিও এসো…
দূর্বাদলের বুক মাড়িয়ে এসো-
প্রতি ভোরে তোমার চুলে গুজে দিবো ফুল,
মিছে বাহানায় হাত ধরার গল্প সাজাবো।
তোমার স্পর্শ ফেলে কবি সত্তা জাগ্রত হবে,
কতক কথা কিংবা বুনো শব্দ চয়নে,
তোমার প্রতি প্রেম নিবেদনে,
আমি প্রেমিক হয়ে উঠবো।
বসন্ত এসে গেলো-
এখন শুধু তোমার জন্য অপেক্ষার পালা,
বৃক্ষরাজিতে মায়ার ভূষণে পুষ্প কন্যারা,
তোমার পথ চেয়ে আছে।
আর শুনো না,
তুমি আসলে-
হারিয়ে যাবো ঐ বহুদূরে,
বসন্ত দূতের আগমনী গানের সুর ধরে,
যেথা তুমি আমিতে আমরা হবো।
জানো,
তুমি আসলেই,
দূর্বাদল শুভানুষ্ঠান করে আহ্বান করবে,
আমরা যেন এক সত্তায় মিলি।
তবুও,
যদি ভয় হয়,হাত শক্ত করে ধরবে,
সহস্র বসন্ত কাটানোর শপথ করবো-
ভালোবাসি বলবো বহুবার।
শেষ নিবেদন,
এই বসন্তের রঙে রাঙাতে জীবন,
তুমি আসো,
একবার এসো-
নতুন জীবনের গল্প শুনাবো তখন।
আহমেদ হানিফ এর সকল পোস্ট
অচেনা
চেনা শহরটা বড্ড অচেনা আজ,
পরিচিত মুখগুলো ঢেকেছে নিজেরে,
একুশটা বসন্তের বিদায় দেখেছি-
নতুনত্ব আনেনি জীবনে।
প্রত্যহ ভাবনায় ডুবি-
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিচার বসাবে শুনেছি,
ইট পাথরের দালানে বন্দিজীবন,
অচেনা মানুষের সাথে সমঝোতায় বেঁচে থাকা।
দুই কদম সামনে চলতে শত বাঁধা,
সীমান্ত প্রাচীর বেঁধেছে সভ্যজনরা,
চেনা শহরটা তাই অচেনা আজ,
আর কত এমন ভাবে চলা।
ঋতুরাজের আগমনের সময় ঘনিয়ে এলো,
শীতের বিদায়ী কাফেলায় আমি সত্তার সামিল-
নতুন কোনো জনপদে-
নতুন মানুষের বেশে একটু আশ্রয় খুঁজবো।
চেনা শহরটার মানুষগুলো আজ,
পরিচিত জেনেও চিনে না আমায়,
ক্লান্ত শরীরের ভারে আমি অসহায়-
চেনা শহরটা বড্ড অচেনা আজ।
শেষ সময়
কাফনের দোকানে সকাল হতেই গমন,
সাড়ে তিন হাত দেহটার কাফনের বন্দোবস্তে,
গোর খোদকের আগমন বাঁশঝাড়ের ঠিক পিছনে,
যতনে খনন করিতে হবে গোর,
মোল্লা সাহেব ব্যস্ত সব কিছুর তদারকিতে।
দলে দলে ছুটিছে মানুষ,
বোবা দেহটা স্থির অনাদরে চাটাইয়ের উপরে,
পরিধেয় বস্ত্র কিংবা অলঙ্কার নেই গাত্রে,
ঠাণ্ডা হয়ে গেছে দেহটা।
মসজিদের মিনার থেকে অনবরত ভেসে আসছে আওয়াজ,
বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে,
এলাকায় এলাকায় খবর পৌছিয়ে দিয়েছে,
আত্মীয়,অনাত্মীয় মিলে।
আগর বাতি জ্বালিয়ে রাখা আছে শিহরে,
কতক মানুষের কান্নায় জানান দিচ্ছে-
আত্মার বিদায় হয়েছে ক্ষণিক আগে,
গোসলের জন্য মুরব্বি সমাজের আহ্বান,
তাড়াতাড়ি করো জানাজার সময় গনিয়ে এলো বলে।
গোরস্থান থেকে খবর এলো শিশু দলের মারফতে,
কবর গৃহ তৈরি আছে,
নিয়ে আসো লাশ অতিদ্রুততার সাথে।
খাটিয়া সমেত লাশ নিয়ে চলছে একদল যুবা,
অপেক্ষায় আছে নামাজিরা নিকটস্থ মসজিদ মাঠে,
মোল্লা সাহেব শুনালেন উদ্দেশ্য করে জনতায়,
আমাদের আসিতে হবে এক এক করে ছাড় না কারো।
জানাজার শেষে বোবা দেহটা নিয়ে বাঁশঝাড়মুখী সবে,
মুঠোভরা মাটিতে ভরিলো কবর,
দেহটা একাকী নির্জনে,
অবরুদ্ধ দেহ মাটির আবরণে-
পালাবার রাস্তা নেই এই ক্ষণে।
পশ্চিম আকাশে দু’হাত তুলিয়া রবের আরশে এই আর্জি,
ওগো দয়াময় ক্ষমা করো আজ-
যত পাপ,অনাচারের।
দলে দলে চলিলো মানুষ বাঁশঝাড় ছেড়ে,
আত্মীয়ও রইলো না কেউ-
বোবা দেহটাকে ঘিরে।
নতুন ভোর দেখার আগে যদি মরণের দূত আসে,
কোথায় পালাবো?
এমন ঠিকানা কি আছে?
শেষ বেলায় এসে হিসাবের খাতা খুলে বসি,
তবেই মিলিবে কি করেছি,
কত পাপ,কত অবিচার।
আজি শেষ সময়ে এসে নিজেকে বাঁচাতে,
সরল,সহজ পথে চলি,
না চলিলে আজ কি করিবো হায় রবের দরবারে উঠি,
যদি চলি সুন্দর পথে,
সহজ,সরল মনে,
আমাদের মরণে উৎসব রচিবে-
ফেরেশতাদের আবাসস্থলে।
তাই,
শেষ সময়ের আগে প্রতিজ্ঞায় বসি সবে,
এমন জীবন রাঙাবো যেন মরণে আত্মা হাসে,
বিদেহী দেহের বিদায়ী কাফেলায়,
লাখো মানুষের অশ্রুঝরে।
শেষ সময়ের আগে-
গোরের কথা ভেবে নিজেরে করি ঠিক,
এই যে হয় সকল মুনাজাতের বাণী।
হুমা ও কুয়াশার মেয়ে
রিক্ততায় ছেয়ে গেছে চারপাশ,
মননে কত বেদনার স্মৃতিপট-
কতই না অজানা গল্পের করুণ সমাপ্তি,
শীতের প্রকোপে স্তব্ধ হয়ে আছে মনুষ্য আবরণটি।
শূন্যতায় ছেয়ে গেছে আমায়,
তুমি নেই বলে-
হুমা তোমাকেই বলছি-
তুমিই রিক্ততার কারণ হয়ে আছো।
আজি এই ক্ষণে বেদনায় জর্জরিত,
কথাদের দ্রোহে আমি বড়ই অসহায়-
না জানি কি বলতে প্রতিবাদী আজ কথারা!
কুয়াশা মেয়েরও আর্জিতে দুচারি কথা চয়নের স্বাদ জাগে।
হুমা,
আজি নতুন দিবসের শুরুতে তোমার পানে তাকিয়ে,
কুয়াশার কিছু কথা বুনবো,
জানো,
কুয়াশা মেয়ের শত বাহনায় তুমি।
দূর্বাদলে আজ মুক্তো ছড়িয়েছে তুমি আসবে বলে,
ফসলের খেতে সুরভিত মোহনীয় সাজ,
তোমায় দেখাবে বলে,
তুমিময়তায় নানা আয়োজন,কুয়াশা বাসর সাজিয়েছে।
হুমা,
কুয়াশা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভুলা যায়-
পাতাঝরার মলিন দিনগুলো,
ভুলা যায় বৃক্ষের করুণ চাহনি-
তুমি আসবে বলে,
কুয়াশার শত রূপের প্রকাশ।
হুমা,
কথাদের বিদ্রোহে আমি পরাজিত অসহায়,
তোমার অপেক্ষায়,
কুয়াশা কিংবা কথাদের সাথে আমি বারংবার হারিয়ে বসবো নিজেকে।
শূন্যতায় ছেয়ে গেছে আমায়,
তুমি নেই বলে-
হুমা তোমাকেই বলছি-
আজ ফিরে এসো শত অনুনয়।
কুয়াশা মেয়ের সবুজে লেখা চিঠিতে শেষ নিবেদন,
হুমা,
ফিরে এসো আজ,
রিক্ততায় ভরা শীতের দিবসে,
প্রেমের বাসর সাজাবে কুয়াশার মেয়ে।
একটা গরম কাপড় চাই
শীতের প্রকোপ বাড়ছে-
একটা গরম জামার বড্ড অভাব আজ,
শীতের তীব্রতায় মরমর দশা,
বেঁচে থাকার আয়োজনের সমীকরণ খুবই জটিল,
গৃহস্থের বাড়িতে সারাদিন খেটে তবেই আহার জুটে।
আদরের ছোট্ট মাণিকের খুবই কষ্ট,
মক্তব ঘরে যাওয়াতে জবুথুবু অবস্থা-
পরনের কাপড়েরই ঠিক নেই,
বড্ড শীতের প্রকোপ-বাছাধন নাজেহাল।
একটা গরম কাপড় চাই,
করজোড়ে মিনতি করছি আজি,
অবোধ বাছা আমার জানে না-
সমাজের ফাঁকফোকর,যত অবিচার।
হে দয়াবান স্রষ্টা,
কতিপয় মানুষে রহম করো-
তবেই মিলিবে গরম কাপড়,
বাছাধনের আর হবে না কষ্ট।
একটা গরম কাপড়ের বড্ড অভাব-
বড়ো বাবুদের শীত নিবারণে কত আয়োজন,
পশমি কাপড়ের নানা ধরণের জামা-
কম্বল সম্বল করে সহাস্য বিচরণ।
আমার বাছাধনের একটা কাপড় চাই,
গরীবের সংসারে জুটে না-রুটি,
বাবু মহাশয়,
একটু দয়া করো-পুরানো কিংবা নতুন,
গরম কাপড় হলেই বাঁচে বাছা,
এই শীত যাক চলে,
আগামীতে বেঁচে রইলে গৃহস্থের কাজের অর্থে-
কিনিবো গরম কাপড় বাছার তরে,
তবে দয়াময়ের দরবারে এই মিনতি,
আগামী শীত পর্যন্ত বাছাধন মোর যেন বেঁচে রয়।
ভবঘুরে
জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক আমি,
সংসার থেকে বছর দুই বিতাড়িত-
কেউ খোজ নেয়নি,আমিও ভুলে বসেছি,
মা,বাবা মরলো সেতো বহুবছর আগে,
বাকিসব স্বার্থের কাঙ্গাল!
বিয়ের বয়স পার করে এসেছি,
বাবা,মা থাকলে না হয় মেয়ে দেখা হতো-
বাকিদের কি আসে,বেকারের বিয়ে কেন?
স্রষ্টার বিধানে অতি সহজে পরিণয় করা শ্রেয়,
কিন্তু সমাজে অর্থের জয়জয়কার,
বারো শত মানুষ ভোজন,হাজার লক্ষ দেনমোহর-
সাথে চাই নামজাদা পরিবার,লাখ টাকার বেতন!
দুই পক্ষ বেঁকে বসে,
আমার এবার মত নেই-
ডিগ্রীর বস্তা নিয়ে হাটা চলা ভারি,
দু’পয়সার মূল্য নেই,মিলেনা ঝাল মুড়ি!
আবার বিয়ে কেন?
বাড়ি নেই,চুলো নেই,সংসারে ঠাঁই নেই-
দরবারে দরবারে ঘুরে কত শত জীবনবৃত্তান্ত ফেলে আসা-
লাভ নেই,ডাক নেই!
এবারে চাকুরী পাবে সৎ মামার আদরের শালা-
তুমি মশায় অন্যত্র যাও-
হুম,
চলে এসেছি বহুদূরে,আত্মীয় পরিজন ছেঁড়ে-
ভবঘুরে!
ঠিকানাহীন নগরীতে জাত-পাতহীন আমি মানুষ,
আমি ভবঘুরে।
ডিগ্রীর বস্তা ফেলে দিয়েছি-
এখন অক্ষরজ্ঞানহীন উন্মাদ!
পথে পথে ঘুরে,যায় দিন ভালো,
তবে মানুষের দরবারে আর না-
বনে বনে ঘুরে পাতা খাবো,
চারপাশের সহস্র পদের আহার।
তবুও আর মানুষ হবো না-
এই রবো ভবঘুরে!
স্বপ্নের নির্বাসন
অস্তগামী সূর্যের ক্ষীণ আলো-আঁধারের নিমন্ত্রণ,
অজানা গন্তব্যে চলেছি বেশ খানিক-
নিখোঁজের খোঁজে ঘুম নেই আত্মার,
নন্দিত কাবুলে বিষাদের সুর!
স্তব্ধ-নীরব গৃহতল, গৃহত্যাগীদের বিরামহীন চলা-
শঙ্কাহীন চোখ জোড়া-মুমূর্ষু তিমিরের খোঁজে,
নন্দিত জাতি, সৃজনে-মহাকল্যাণে।
কারণে-অকারণে স্বপ্নোত্থিত,
ভদ্র সমাজে নিশাচর প্রাণী-চোর!
খুদে মানুষের চলাফেরা সন্দেহজনক-
বাহারী সাজেও ঠাট্টা-গালমন্দ!
স্বপ্ন দেখা আমাদেরই অজুহাত-বিলিন সত্তারে,
জানি না স্বপ্নের কি হয়?
কোনো দেবালয়ে আশ্রিত সত্যই স্বপ্ন!
নাকি,
আমাদের ছোট জাতের দেখা কোন ভুল?
আমাদের ছোট্ট জীবনে বেঁচে থাকাই মহানন্দ-
কোন কালের স্বপ্নদেখা!
ছাপ্পানো হাজার বর্গমাইলে কথা জমে আছে,
বুকের গহীনে আগুন জ্বলে-
আমাদের গুরুদের প্রভুপরায়ণে, স্বপ্নরা মূল্যহীন।
জ্ঞানের প্রথম পাঠে,
আমাদের হিংসার বাস, আর বিমুখতা স্বপ্নে!
তাই,
রুচিহীন-রুটিহীন সমাজে,
আমাদের দেখা সবই ভুল-অকারণে,
স্বপ্নের নির্বাসন!
বাবাকেই মনে পড়ছে
একুশটা বসন্ত গেলো নতুনত্বের আমেজে,
না পাওয়ার কিছুই নেই জীবনে-
অজানা শহরটার প্রতিটা গলি আজ চিরচেনা,
পিছনে ফিরে দেখা হয়নি কখনো,পরিচিত মানুষটারে।
সংগ্রামী একটা মানুষ,
একবেলার আহারেই আমুদে, অপ্রাপ্তিতে ক্ষোভ নেই,
তাহারে আমাদের সমাজে বাবা বলে,
বাবাইতো ছায়াবৃক্ষ।
বাবা,
আমাদের অগোচরে থাকা এক বিপ্লবী-
লড়াকু চিরতরুন!
আজ বড্ড মনে পড়ছে বাবারে,
যান্ত্রিক শহরটাই আজ বড় বাঁধা-
যাওয়া হয় না আগের মতো, কথাও জমে না।
আজ বাবা অসুস্থ,
পৃথিবীটা বড্ড এলোমেলো লাগছে-
ছায়াবৃক্ষ যদি শুকিয়ে যায়-
ছায়াহীন মরুপ্রান্তরে আমি হারিয়ে যাবো বহুদূরে।
বাবা,
বহুদিনের কথা জমে আছে,
একটু সময় দাও,আবার গল্পের আসরে বসবো,
বাবা,
চিরচেনা সোহাগ মাখা ডাকটা আবার দাও না,
বাজান, নিজের খেয়াল রাখিস।
বাবাকেই আজ মনে পড়ছে,
জমিয়ে রাখা কথা গুলো এবার শুনাতেই হবে-
বাবা,ছায়া হয়ে রও,
আরো শতবছর।
স্টেশন চত্বরের গল্প
দ্রুত বেগে চলে যায় ট্রেন নানান গন্তব্যপথে,
যাত্রা বিরতিতে মানুষের কোলাহল-
প্রাণহীন বগি গুলো-
জীবন্ত সত্তার গল্প বয়ে বেড়ায়।
অভুক্ত কতক প্রাণের শক্তিহীন দেহ গুলো লুটিয়ে পড়ে,
স্টেশনের বেঞ্চি গুলোর ঠিক হাত দশেক দূরে-
বাহারি পদের খাবারের পসরা বসিয়েছে সর্বত্র,
লুটিয়ে পড়া দেহ গুলোর প্রবেশে বাঁধা।
সকিনা,জমিলাদের হাত গুলো স্থির নেই,
বড়ো বাবুদের যদি একটু দয়া হয়-
দুচারি খুচরো পয়সায় শিঙাড়া কেনা যাবে,
বৃদ্ধ মজিদ মিয়া পয়সা পায় না,অবহেলিত।
এক ঝাঁক কচি সোনাদের দুরন্তপনা-
নানান কথা নানান অঙ্গভঙ্গি,
কেউ কম যায় না কারো সাথে-
গল্প গুলো চলন্ত ট্রেনের মতো চলছে অবিরাম।
হাজারো স্বপ্নের কতক মানুষের চোখ যুগলে দেশ,
উদাস বালকের কবিসত্তা লাভ-
কিংবা নব প্রেমিক-প্রেমিকার খুনশুটি-
চায়ের দোকানের ছেলেটা চিৎকার করছে-
এই গরম চা,গরম চা!
গল্প থামে না-
সম্বলহীন করিম চাচার সব হারানোর গল্প,
কিংবা-
জমিরনের স্বামীর অত্যাচারের ইতিহাস।
মানুষের গল্প জমিয়ে রাখে প্রাণহীন স্টেশনটা,
নতুন ভোর হয়,
আবার গল্পের শুরু-
প্রেম,বিরহ,ব্যর্থতা কিংবা মানুষের,
স্টেশন চত্বরটা একটা পাণ্ডুলিপি-
বেরসিক কবি সত্তারে নানান গল্প শুনিয়ে বেড়ায়-
ঝক ঝক শব্দে আবার ট্রেনের আগমন-
আবার গল্পের শুরু-
অবিরাম বকবক চলছে-
গল্প চলছে!
বিবেকের জবানবন্দি
কথাদের সাথে বিদ্রোহ আজ,
সমাজ দর্শনে কথা গুলো চেঙ্গিস, মাহমুদ-
রক্তাক্ত জিহ্বায় হরতাল ডেকেছে কতক শব্দ,
মানব মুক্তির ফর্দে বিবেকের আহাজারি।
মানুষের নির্মিত কাঠগড়ায় আসামি বিবেক,
সমাজের শত্রু পক্ষ বিপরীত দলের ছায়াতলে-
একাকিত্বে প্রাণপণ লড়ছে বিবেক,
স্তব্ধ বিচারালয়ে আত্মপক্ষ সমার্থনে বিবেক,
পুরানো দিনের কথা আজ অকপটে স্বীকার-
কত অন্যায়ে কত অবিচারে,
নতজানু-রাতের আঁধারে চুপিসারে পাপাচার,
কত হত্যায় নিরুপায় দর্শক-
কতক বস্ত্রহরণে দূরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে-চুপ মনুষ্য।
একে একে সবের স্বীকারোক্তি,
ঘুমন্ত বিবেককে পুঁজি করে মানবাকৃত দেহটা বয়ে বেড়ানো,
কত বসন্তের দিনগুজরানো কতই পাপাচার,
স্তব্ধ বিচারালয়,
অকপটে স্বীকার বিবেকের অসহায়ত্ব-অমানুষতা!
মানুষের তৈরি কাঠগড়ার দৈববলে ভাষার প্রকাশ,
চারদিক থেকে অপদস্থের কড়াসুর-দোষী সাব্যস্ত বিবেক,
বিবেকের করুণ চাহনি,
মানবাকৃত অন্য দেহগুলোর বিকৃত অট্টহাসি,
স্তব্ধ বিচারালয়ে বিবেক মর্যাদালুপ্ত মাংসপিণ্ড,
আত্মপক্ষে সমার্থনে,
বোধোদয় জাগ্রত হওয়ার অপেক্ষায় বিচারপ্রার্থী,
নতুন দিনের প্রত্যাশায় বিবেক-
যেন স্বপ্ন বুনতে পারে মানুষের, সত্যের।
অবহেলা
শরীরের প্রতি বড্ড অবহেলা চলছে আজকাল,
খাওয়াতে রুচি নেই-
জ্বরে শরীরটা পুড়ছে বহুদিন ধরে,
মরণের ব্যামো বাসা বেঁধেছে গতরে মনে হয়।
প্রতিটা নিঃশ্বাসে চুক্তিভঙ্গ হয় স্বপ্নের সঙ্গে,
বেঁচে থাকার যত আয়োজন ছিলো-
আজ মরণেই যেন বাঁচি,অবহেলা!
প্রিয় মানুষ গুলো কাছে নেই,
কথা বলার মানুষটি পর্যন্ত মিশে গেছে মাটির বুকে।
চায়ের কাপে চুমুকে চুমুকে আর জমে না গল্প,
মতিয়ার,সকিনারা কে কোথায় খোঁজ নেই,
বৃদ্ধাশ্রমে হয়তো খোঁজ মিলবে কতক মানুষের-
ভালো নেই আজ তারা।
অবহেলা!
আমাদের বড়ো মানুষের কি দোষ?
বয়সটা নাকি বেঁচে থাকা?
কারো আর দোষ খুঁজি না,
নিয়তির শিকার মেনে নিয়েছি।
শরীরের প্রতি আরো অবহেলা চলতে থাকুক,
ঔষধের শিশিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অনাদরে,
কাজের মেয়ের ভুলেই খাওয়া হয় না,
আজ দুই-তিন দিন ধরে,
অবহেলা!
মরণের অপেক্ষা আছি আজ,
সমাদর রচিবে যত সাড়াহীন দেহটাকে ঘিরে,
হাজার মানুষের ভোজে শোক কীর্তন,
অবহেলিত থাকবে না বাঁশ দেওয়া কবর গৃহ,
মহামূল্যের পাথরে রচিবে নামখচিত স্মৃতিস্তম্ভ।
স্বেচ্ছাচার
পথ হারিয়ে বসে আছি ক্লান্ত মৃতপ্রায়,
দুই দিন ধরে অভুক্ত!
সমাজের খোঁজ নেই-
বিচার বসেছে চুরির,
সভ্যজনে উচ্চবাচ্য কঠিন দণ্ডের বিধান করো,
ইহাতে মগেরমুলুক,ক্ষমতানুযায়ী মান্যবর-
প্রকাশ্যে ক্ষমতার চর্চা-নির্বোধ মানুষের আদালত!
যদু যায় মধুর দলে ভ্রান্তমতে মতাদর্শ,
ভয়ে ভয়ে আছে সাবু-দণ্ডিত মিথ্যাপবাদে,
সমাজ চলছে তোষামুদে-দালালের আড্ডাখানা!
দু’পয়সার আহারে খুনের পসরা-
বড় জাতের দাম বেশি নামমাত্রে ছোটজাত,
নেতারাই সর্বসহা,সর্বত্র তাদের বিচরণস্থল-
আমাদের খোঁজ নেই-যাত্রা নিরুদ্দেশ,
যত্রতত্র ক্ষমতার বাহাদুরি স্বেচ্ছাচার সর্বত্র,
মানবিক মানুষ নেই-লোভী নির্দয়,
কবিতার কথা শেষ হয়ে যায়,
অপরাধ আনন্দেই বাড়ছে-দলাদলি।
রুচিহীন মানুষের আহারে শতপদ,
অভুক্ত রুটিহীন-বহুকালব্যাপী।
মানুষের সমাজে মানুষই দাস,
স্বেচ্ছাচার ছড়িয়ে মানুষের গৃহে।
অবেলায় এসো না
অবেলায় কেনো এলে তুমি?
আজ,
অশান্ত নগরে লাশের গাড়ির যত্রতত্র সাইরেন,
কথা বলার অভিযোগে দণ্ডিত মানুষের দেহ পরিবহণে,
নীতির মানুষের শঙ্কা বাড়লো মরণের-
কোটি টাকার সওদায় প্রত্যক্ষদর্শীরা চুপ।
বড় অবেলায় এলে তুমি,
যেখানে ভাসমান মানুষের দাম নেই,
দলিত শ্রেণির নিত্য মরণে-
খবরের কাগজে শিরোনাম”নর্দমায় অজ্ঞাত লাশ”!
আমাদের দেখা ভোর গুলো হতাশার,
মানুষের রক্তের দাগে রঞ্জিত রাজপথ,
অগ্নিকাণ্ডে অচেনা হয়ে যাচ্ছে পরিচিত দেহের গড়ন-
তবুও ভোর হয় কষ্টের-মরণের।
মরণোন্মুখ এই বেলায় কেনো এলে?
এখানকার কাশের বনেতেও রক্তের দাগ,
সাদা ফুল গুলো রক্তের জমিনে পতিত,
এখানে ভোর হয় স্বজনের আহাজারিতে-
প্রতিটি পাড়ায় শোকের মাতম।
অবেলায় কেন এলে?
এখানকার জনপদে নগ্ন মানুষের অস্ত্র হাতে বিচরণ,
বুড়িয়ে যাওয়ার কাল গুনছে ষোড়শীরা,
নেশায় মত্ত পুরুষের দেহগুলো উন্মাদ!
এই বেলায় কেনো এলে?
অশান্ত নগরে লাশের গাড়ির সাইরেন বাজছে,
আত্মীয়দের খোঁজ নেই-
কথা বলার অভিযোগে দণ্ডিত মানুষের লাশের-
গোরে সমাপিত করতে মরণের শঙ্কা-
মানুষের বড্ড অভাব এখানে।
এই বেলার চলে যাও কোনো সভ্যদের লোকালয়ে,
বসবাস করো তুমি এসো না এখানে-
যদি কোনো দিন শান্ত হয় আমাদের নগর গুলো,
তবে,
এসো শত ফুলের বরণ মালায়,
তোমার আগমনের উৎসব মানাবো।
অসমতা
মেহমান খানায় আজ মেজবানি ভোজ,
মণ পাঁচেক ওজনের গরু জবাই-
নানা পদের আরো দশেক খাবার,
আত্মশুদ্ধি!
সমাজের বড়ো বাবুদের বাড়িতে বাড়িতে নিমন্ত্রণ,
সামিয়ানা টাঙানো মেহমান খানায় হরেক রকম বাতি,
লাল,নীল আলোয় আলোকিত অন্দরমহল,
গৃহকর্তা বেজায় ব্যস্ত খাতিরে,
বড়ো বাবুদের ভোজনেই যত সুখ।
বহুদূরগামী গোস্তের গন্ধ-
তবুও খোঁজ নেই বিধবা সকিনার,
গত বছর শেষবার গোস্ত খাওয়া,
মৃত স্বামীর মেজবানে!
আজো চুলোয় জ্বলেনি আগুন,
অসহায় আত্মচিৎকার।
সমাজের কথিত রীতিতে মানুষের কত ভাগ,
কতক বড়ো জাত,
কতক ছোট-অমানুষ।
আত্মার বিদায়ে মেজবান রচে-মানুষের,
তবুও উপেক্ষিত সকিনারা-
বড়ো মানুষের দরবারে,
মেজবানের গোস্তের গন্ধের পথরোধ করো-
আবদ্ধ করো সত্তারে!
সকিনারা মরে যাক,বড়োদের উল্লাসে।
আশরাফ-আতরাফে কত অসমতা,
মানুষের নাম কি?
বড়ো বাবু,
নাকি সকিনার মতো বিধবা!
দুর্দিনের অবসানে
মরণের ইচ্ছা জাগিছে আজি,
কোনোমতে বেঁচে থাকার বহু চেষ্টা গেলো জলে,
জগতে বিশ্বাস নাই,
ঈর্ষাবশত অমূলক দোষারোপে সমাজচ্যুত আমি।
মৌনাবলম্বনে অনেক হইলো দিনগুজরানো,
ইহাতে সুখ নাই-
বেদনার্ত অনুভূতির কবলে কত রাতের অবসান,
মুক্তির প্রতিজ্ঞা করেছি আজ-
দেশান্তরে জীবন পার করবো না,আত্মহুতি।
বিজন প্রান্তরে সন্ন্যাসজীবন নিবো না,
অথবা,
সমাজের অবিচারে প্রতিবাদীও হবো না!
ভয় হয়-খুব ভয়!
সাহসী যুবক রুইতনের মতো মারা পরবো নাতো,
নাকি,
ষোড়শীর হত্যাকে আত্মহত্যা নামে চালিয়ে দিবে?
ওরা সমাজের মানুষ,
সমাজচ্যুত আমিতে তাদের মাথাব্যথা নেই-
মিথ্যা দোষারোপে এমনিতেই দুরাচারী।
আমি জনসমাবেশে মরণের সুধাপান করিবো,
রোষারক্ত নয়নে দেখুক সমাজপতিরা,
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে প্রতিবাদ হউক,
অমূলক দোষারোপে আর কত প্রাণের বিসর্জন?
রুইতনের বিদেহী আত্মার করুণ চিৎকার,
কর্ণগোচর হয় আজ,
সমাজচ্যুত জীবনে বাঁচিবার শখ জাগে কার?
প্রত্যাবর্তন হবে নতুন মানুষের,
দুর্দিনের যত অবিচারের নিষ্কৃতি হবে-
নতুন মানুষে আবার সমাজ হবে,
তখন আর,
মিথ্যা দোষারোপে সমাজচ্যুত হবে না মানুষ।