চিত্রনাট্য
……………….
(সুন্দরী সিরিজের কবিতা)
চিত্রনাট্য লিখেছি একটা।
নাম দিয়েছি ‘সত্য-মিথ্যার দ্বন্ধ’।
অনেকটা কমেডি-ট্রেজেডির মতো।
ব্যাপারটা বুঝা গেল না, তাইতো!
কমেডির ভিতর লুকিয়ে থাকা ট্রেজেডি।
ভাবছো এ আবার কেমন কথা,
আমি বলি তরমুজ দেখেছো কি
সবুজের ভিতর লুকিয়ে থাকা লাল। তেমনি।
চিত্রনাট্যটি প্যারডি বলতে পারো।
শব্দের বিকল্প শব্দ সাজিয়ে কাট-টু-কাট প্যারডি নয়,
জীবনের প্যারডি। প্রতিটি শিল্পকর্মই প্যারডি,
ঠিক জীবন নয় তবে জীবনেরই নান্দনিক উপস্থাপনা।
আমি তেমন শিল্পী নই, শব্দের পর শব্দ গেঁথে,
মাত্রা গুণে গুণে ভাবনাকে কালোত্তীর্ণ শৈল্পিক আচড়ে আঁকতে আমি জানি না
সংলাপ বলতে বলতে উপমায় উপমায়
সমাজ-রাষ্ট্রের-ধর্মের
বিমূর্ত চিত্রায়ন করতে আমি জানি না
ভালোবাসতে জানি
ভালোবাসতে বাসতে নিঃস্ব হতে জানি
ভালোবাসতে বাসতে মরে যেতে জানি।
আমার এই চিত্রনাট্যটি এই নিঃস্ব হয়ে যাওয়া
মরে যেতে চাওয়ারই প্যারডি,
শৈল্পিক কোন উপস্থাপনা নয়
নয় উপমার দৌঁড়ঝাপ- এ একেবারে সরাসরি।
ব্যাকগ্রাউন্ডে রূপালী চাঁদ পূর্ণ অবয়বের
অপার্থিব মায়ায় ছড়ানো থই থই জোৎস্না সমস্ত সবুজ গ্রহটিকে প্লাবিত করে রেখেছে
মদ খেলে যেমন পা টলতে থাকে,
পদক্ষেপগুলো বিন্যস্ত হয় খানিক এখানে খানিক সেখানে
বাতাস তেমন কখনও উড়িয়ে নিচ্ছে সুন্দরীর চুল,
কখনও কারুকাজ করা ওড়না
আমি হাঁটুগেড়ে বসে দু’হাত বাড়িয়ে বললাম
‘এই জোৎস্না, এই মাতাল বাতাস সাক্ষী থাক,
এই হাত স্পর্শ করে শুধু একবার বলো, ভালোবাসি…’
-ব্যাস শুধু এটুকুই?
– হ্যা শুধু এটুকুই।
আবার যদি প্রকৃতির নিয়ম ছিড়ে
আসি এই পৃথিবীতে; ধীরে ধীরে
আমার অনুভুতিকে ক্ষয়ে যেতে দেব না
আলোর স্পর্শ আমি নেব না
জলের স্পর্শ নয়, স্নেহের স্পর্শে শিহরিত
হব না, বাতাস এসে অবিরত
যে স্পর্শ দিয়ে যায়, নেব না তা
আমার সব স্পর্শানুভূতি একত্রিত করে যা
পাব; একত্রে জমিয়ে নিলে যে অপার বিস্ময়
জন্ম নেবে; সেই শিহরণে কম্পিত হৃদয়
নিয়ে ক্ষণিক ছুঁয়ে নেব তোমার হাত, আর
কিছু স্পর্শ করব না আমি-
মরে যাব- আহ্লাদে পূর্ণ হবে জীবন আধার।
-তারপর?
আবার যদি প্রকৃতির নিয়ম ছিড়ে
আসি এই পৃথিবীতে; ধীরে ধীরে
আমার অনুভুতিকে ক্ষয়ে যেতে দেব না
পাখির কলোতানে মুগ্ধ হবো না
নদীজলের কলোধ্বনি নয়, সমুদ্র গর্জনে শিহরিত
হব না, বাতাসের শু শু ধ্বনি অবিরত
যে সুখ দিয়ে যায়, নেব না তা
আমার সব শ্রবেন্দ্রীয় একত্রিত করে যা
পাব; একত্রে জমিয়ে নিলে যে অপার বিস্ময়
জন্ম নেবে; সেই শিহরণে কম্পিত হৃদয়
নিয়ে তোমার মুখনিসৃত ‘ভালোবাসি তোমায়’- শুনে নিব, আর
কিছু শুনব না আমি-
মরে যাব- আহ্লাদে পূর্ণ হবে জীবন আধার।
-কথা দিলাম, এরপর আর কখনও ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসে দাঁড়াবো না তোমার কাছে। চলে যাব, কোনদিন ফিরব না আর।
-মরে যাব।
-মরে যাবে? একটা মিথ্যাকে বুকে ধারণ করে মরে যাবে?
জীবনে যদি কোন সত্যি ধারণ করে থাকি
যদি একবিন্দুও তোমার পাগলামিকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকি,
তবে তোমাকে বলি, ভালোবাসি না আমি তোমাকে,
ভালোবাসি না, কোনদিন ভালোবাসিনি তোমায় ।
চিত্রনাট্যটি এখানেই হতে পারতো শেষ। গান না থাকলে ঠিক জমে না। জুড়ে দিলাম সুমধুর গান-
তুমি দিনের আলো, তুমি রাতের আধার
তুমি আমার সুস্থতা, তুমি কারণ অসুস্থতার
তুমি আমার রক্তের লোহিত কণিকা
তুমি আমার না ছুঁয়া আজন্ম ব্যাথা
তুমি কখনো ভেবে দেখোনি
তুমি কখনো ভেবে দেখোনি
তুমি আমার ভয়, কখনো ভাবিনি
নিজেকে কখনো অপরূপ জানিনি
এই আঁধারে আমায় খুঁজে দেখো
হাতটি ধরে একটু সামনে হাটো
যেন পুরো পৃথিবী তোমার, পুরো পৃথিবী তোমার
যেন পুরো পৃথিবী আমার, পুরো পৃথিবী আমার
তবে তুমি আছো কিসের অপেক্ষায়?
আজ ভালোবাস তোমার যেভাবে মন চায়
ভালোবাস আমায় যেভাবে মন চায়
ছোঁয়ে দেখো তোমার যেভাবে মন চায়
ছোঁয়ে দেখো আমায় যেভাবে মন চায়
এ কেবল আমার কল্পনা হৃদয়ের প্রতিধ্বনি, সুন্দরী কোথাও নাই।