ফকির আবদুল মালেক এর সকল পোস্ট

ফকির আবদুল মালেক সম্পর্কে

কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখক।

এই সত্ত্বায় অবিরল অনল

এই সত্ত্বায় অবিরল অনল

মানুষের মস্তিষ্ক ধারণ করে আছি।
আপন অভিজ্ঞতা ছাড়িয়ে অন্যের অভিজ্ঞতা
আত্মস্থ করার সমস্ত আয়োজন হয়ে গেছে সারা পূর্ব-পুরুষের হাতে,
উত্তর পুরুষ ফকির কুটিরে শুয়ে শুয়ে ঘুরি ফিরি
পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশের গ্রহে গ্রহে আর অভিজ্ঞতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে

হঠাৎ -আগুন আগুন- চিৎকারে ছিটকে পরি অজপাড়াগাঁয়ে
-নাড়া পাড়ায় আগুন
-আগুন নেভানো তাড়না নেই কারো
লোকালয় থেকে দুরে বলেই হয়তো বা,
ব্যস্ত হয়ে উঠলাম আমার সকল কোমল স্মৃতি পুড়ে যাচ্ছে বলে-
গতকাল রাতে আকাশ গলা জোস্নার শ্রাবনে সিক্ত হয়েছিলাম
আয়েশা আর আমি
পুকুরের ধারে কৃষানের পুঞ্জিভূত এই নাড়ার স্তুপে
পরস্পর হয়েছিলাম সংলগ্ন

আমাদের চোখে স্বপ্ন ছিল স্বপ্নের মতো
আমাদের কথায় ছিল সদ্য বলতে পারা
শিশুর কথার চপলতার মতো চঞ্চলতা
আমাদের হৃদয় ছিল হৃদয়ে নিপতিত
আমার স্মৃতি পুড়ে যাচ্ছে-

আয়েশা কোন ফাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে পাশে, বললে, তাহাদ আলী দেখছিল
যখন ফিরছিলাম ঘরে। মনে পড়ে, গভীর রাতে সে গিয়েছিল আমার কক্ষে
-কি আজে বাজে বই পড়ো সারাক্ষন, বলছিলো, বিজ্ঞান আর কবিতা,
কি হবে পাতাল-মর্ত্য-আকাশের আবিষ্কারে
আর শব্দের গাথুনীতে রহস্য বুনে,
জীবনের ধুলো ঝেড়ে মস্তিষ্কে দাও ঝাঁকুনি
তাকিয়ে দেখো সমাজ-রাষ্ট্র-ধর্ম মিলে কিভাবে লুটে নিয়ে যাচ্ছে
মানুষের অন্তর্গত অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সমস্ত অর্জন,
জেনে রেখো মাটির নীচে লুকিয়ে আছে কোথাও কোথাও আগ্নেয়গিরি
আর প্রতিটি মানুষ এক একটা দাবানল-
তোমাদের অতিমানবীয় প্রেমভাব নিয়ে তোমরা মত্ত থাকো অনর্গল
আমি মানব- এই সত্ত্বায় অবিরল অনল।

আমি রক্তাত্ত বেরিয়ে আসি মায়ের জরায়ু ছেড়ে

আমি রক্তাত্ত বেরিয়ে আসি মায়ের জরায়ু ছেড়ে

ইস্পাতের চিল উড়ে গেল ছুই-ছুই, তালগাছটার ঠিক উপর দিয়ে
দু’টা চক্কর দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে ছুটে গেল দানব
আওয়াজ ছড়িয়ে এবং বদলে গেল দৃশ্যপট-

উঠানে বিছানো ধান খাওয়া মগ্ন কাক কা কা রবে উড়ে গেল
এলোপাথাড়ি, লড়াইরত বিড়াল দুটি ছুটে গেল পাশাপাশি একই
নিরুদ্দেশে। এবং গরু, বাছুর, ছাগল আর মানুষের পাল দিকভ্রান্ত
ছুটাছুটি শুরু করল অত্যাসন্ন রক্তপ্লাবন আশংকায়-

এবং রেল লাইন, কালবার্ট, সেনাক্যাস্প পরিণত হলো ধ্বংসস্তুপে
এবং দুই দশক ব্যাপী ক্ষমতার স্বাদে অভ্যস্থ,
গত নয় মাসে দুর্দান্ত ক্ষমতাধর ফইজুদ্দি হাজী মুখ থুবরে
পড়ে রইল বড় রাস্তার পাশের বটগাছের তলায়
এবং অনিয়মিত বাহিনীর ভালোবাসা-ঘৃনা-উল্লাস-অগ্নি উত্তাপে
পিছু হটা পিচাশ আত্মসমর্পনের জন্য খুজে ফিরল নিয়মিত বাহিনী-

এবং আমি তখনো দৃশ্যপটে আসিনি
আমার আগমনের পুর্ণ প্রস্তুতি তখনো সম্পন্ন হয়নি
আমি তখনো মায়ের দেহের সাথে একীভূত।

ভাষাগত সংঘাতে জমাটবাধা রক্ত থেকে আমার সূচনা
আত্মস্বীকৃতির অভিপ্রায়ে মাংসপিন্ডে রূপান্তর
এবং অসমাপ্ত প্রস্তুতিপর্ব
আমার মায়ের দেহে পানি নেমে এলো, ফুলে ফুলে উঠল তার হাত, পা
অনর্থ রক্তপাত, অগ্নিদগ্ধতায় গৃহহারা হয়ে ছিটকে এলো মাঠের সবুজে
এবং প্রসববেদনা-
প্রস্তুতির আরো কিছু ছিল বাকী
জুলুম, রক্তাত্ত- হুলস্থুলে হলো না সময় ।

আমি রক্তাত্ত বেরিয়ে আসি মায়ের জরায়ু ছেড়ে

সবুজ মাঠে লালের চিৎকার আর দগদগে ক্ষত
মাছি ভোঁ ভোঁ, চারিদিকে সারাদিন সারারাত
মাথার ভিতর, পচন ধরে আসে,
মাছি ভোঁ ভোঁ, চারিদিকে সারাদিন সারারাত।

খুল্ যা সিম্ সিম– গেদুর ইয়ে দেখা

দূরে কাছে, দেশে বিদেশে যে যেখান থেকে এই আয়োজনটিতে চোখ রাখছেন তাদের প্রত্যেককে আন্তরিক মোবারকবাদ। গত পর্বে আপনারা বিজ্ঞাপন নিয়ে নানা কথা বলেছেন, তা আপনারা বলতেই পারেন। সে আপনারা যে যা বলেন না কেন, আয়োজনটি চলবে একটানা বিরতিহীন। তাই বলে ভাববেন না যে গেদু কোন বিজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে যাবে না, এটা তার পুরানো অভ্যাস। রাস্তার ফুটপাতে যে ঔষধ বিক্রির মহড়া চলে সেখানে সে প্রায় দাড়িয়ে যায়। হা ভাই বোন বন্ধুরা আসুন শুনি আসি মজমার হালচিত্র।

ঔষধ বিক্রেতা বলছেন-
তবে জনাব এইখানে যারা দাড়ায়া আছেন তারা হলপ কইরা বলতে পারবেন যে, আপনারা কেউ দুইটা রোগে কোনদিন ভোগেন নাই? কি মিয়ারা কতা কন না কেন? দুইটার মধ্যে একটা হইল গিয়া চিপার ভিতর চুলকানি, গুড়া কৃমির খাওজানি। পোলাপান লাগাও তালিয়া। আরে সাবাস, এইতো জোরে জোরে, সাব্বাস বেটারা সাব্বাস।

এইবার বাচ্চালোক তোমরা একটু দূরে যাও। যাও যাও। শাবাস। এইতো বাচচ্চারা কতা শুনে।
তবে জনাব ছোড কাল থেকে এদিক ওদিক উপরে নিচে এতবেশি অজায়গায় কুজাগায় তাকাইছেন যে নানা রকম কুঅভ্যাসে নিজের শক্তি এত ক্ষয় করেছেন যে আজকে জায়গা মতো নিজের শক্তি দেখাইতে পারতাছেন না।

তবে জনাব আমি আছি আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নাই। কামরুকামাক্ষা থেকে কংশ গাছের পাতার লগে চুতরা গাছের শিকর মিশাইয়া, পঞ্চপদী গাছের ছাল গুইট্টা এই দুই রোগের মহা ঔষধ বানাইছি। তবে জনাব আজকে নিতে হইব না সেম্পল হিসাবে একটু খাইয়া যান।

গেদু উত্তেজিত হয়ে বলল, তোমার এই ইয়ে কত খাইছি।

লোকটি আরও উত্তেজিত হয়ে বলন, শুইন্না খুশি হাইলাম আপনার মত ভদ্রলোক আমার মত ছোটলোকের ইয়ে খাইছেন। তবে জনাব সেম্পল হিসাবে আপনারা আজকে শুধু দেইখ্খা যান।

গেদু বলল, তোমার এই ইয়ে কত দেখচি।

লোকটি এবার ভীষণ উত্তেজিত হয়ে বলল, এইবার আপনে আমার ইজ্জতের উপর হামলা করলেন, ঐ মিঞা দেখলে আপনে আপনার পরিবারের ইয়ে দেখছেন আমার ইয়ে কবে দেখছেন বইল্লা যান।

গেদু দিল দৌড়। দে দৌড় দে দৌড়।

প্রিয় ভাই বোন বন্ধু এই দিকে এই মজমা থেকে গেদুর পালানো যেমন সত্য, অন্যদিকে অশ্লীলতার দায়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করতে টাক মাথার এক ভদ্রলোক এদিকে আসছেন সেটাও মিথ্যা নয়। যারা এই তাকে চিনেন তারা তাকে একটু জানিয়ে দিয়েন, তিনি ভদ্রলোক তাই বলে আমি অভদ্র হইব না কেন?

আজকে আসি। অশ্লীলতার দায়ে অনুষ্ঠাব ব্যান করে না দিলে আবার দেখা হবে।
আল্লাহ হাফেজ।

অন্যজীবনের স্বপ্ন

অন্যজীবনের স্বপ্ন
এই শহরে বন্ধি আমি, হারানো দিনের স্বপ্ন দেখি, দূরবর্তী কোন ভূমি রৌদ্রকরোজ্জ্বল যার পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট নদী একে বেকে কল্ কল্ শব্দ ছড়িয়ে, ওখানে কাকেরা হুলস্থুল করে উঠে, ওখানে বৃষ্টির ফোটারা আসে স্বর্গীয় বার্তা নিয়ে। আমারই মতো এই শহরের অধিবাসীদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে হাজারো সৌন্দর্যের উৎস বন্য-আদিম-মৌলিক। হে ধাবমান যাত্রী, কান্তিহীন কেবল ছুটে চলা, পাবে না পাবে না খুজে সেই শান্তি এখানে, যা হারিয়ে এসেছো।

আমার জানালার ওপাশে ব্রেক কষার কচ কচ শব্দ, মানুষের কোলাহল আর এয়ার কন্ডিশনারের গুঞ্জন। এসব চলমান থাকে রাত্রি থেকে সকাল আর সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত। ও মানুষ আর মানুষের বাচ্চারা! কেন এই কোলাহলে হারিয়ে যাও যেখানে হাহাকার পাথরের বিল্ডিংয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে, না থাকে চান-সুরুয, না থাকে তারা আর আকাশ? কেন কৃত্রিম জীবনে জড়াও কৃত্রিম আলোতে? কেন নি:শ্বাসে নাও ধুলো আর যান্ত্রিক ধোয়া? কি খুজে পাও তুমি সাদা সার্ট আর টাইয়ে? তোমার সোনালী চুলের নিচের মাথাটায় ব্যবসায়ের বায়ু ঘুরপাক খায় কেন? যদি এই হয় সুখের দৃশ্যায়ন, আমি বলি,“ অ খোদা! আমাকে কখনো সুখী করো না।”

আর হ্যা, কেন আমি বন্ধি চারদেয়ালের কারাগারে? কেন আমি আমার জন্মস্থান ছেড়ে এসেছি চলে, সেই গ্রাম যেখান থেকে আমার স¤প্রসারণ? এখানে, বস্তুত:, আমার কর্মসংস্থান। এখান থেকে আমি আমার খাবার আর বস্ত্র কেনার অর্থ জোগান দেই। এখানে আমি কায়িক শ্রম থেকে মুক্ত। এবং এখানে আমার হৃদয় আর আত্মা মৃত। আমি কি নিরাপত্তার জন্য আত্মা বিক্রয় করব? জীবনের নিরাপত্তা? কতটুকু!

মানুষতো তার রুটি উত্তাপের জন্য, খাদ্য শিকারের জন্য আর উন্মুক্ত আকাশের তলে জীবনকে যাপনের জন্যে আগত। মানুষতো আগত দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকার জন্য ঝড়ের তান্ডবের মাঝে যখন বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে তাকে ঘিরে, রত্রির আধার আলোকিত করার জন্য। মানুষতো আগত মুক্ত প্রবহমান বায়ুতে নি:শ্বাস নেবার জন্য এবং স্বচ্ছ, শীতল ঝর্ণার পানি পান করার জন্য।

সুতরাং এই চারদেয়ালে বন্দি আমি স্বপ্ন দেখি। যেন আমি পাহাড়ের যে দিকটায় সমুদ্রের হাওয়া এসে আছড়ে পড়ে ওখানে বাসা বাধা এক শিকারী পাখি। যেন আমি ঈগলের উড়ন, ভল্লুকের ওঙ্কার। যেন আমি পাহাড়ের পাদদেশ ঘেষে গিয়াছে যে সমুদ্র নালী সেখানে দাড়িয়ে জল খেতে থাকা এক একলা হরিণ। আমি সমুদ্রের গর্জনে মত্ত থাকি, ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে মিটাই পিপাসা। গহীন বনে বাধা মৌচাকের ক্রমাগত গুণ-গুণ গানে মত্ত থাকা আর হেটে যাই নিরব বন-প্রান্তর। আমি স্বপ্ন দেখি নিরানী করা ঘাসের স্তুপে বসে, পূর্ণ চাদের আলোয় অথবা তারা খচিত আকাশের নিচে যা সময়ের সূচনা হতে ক্রমাগত স¤প্রসারিত হয়ে যাচ্ছে। আমি রাত্রির নিরবতা উপভোগ করি। আমি দুধ ঘাসের মিষ্টি গন্ধ শুকি। আমি এই নিরবতা আর বিশালতা ছেড়ে আসব না ফিরে যতক্ষণ না ঈশ্বরের উপস্থিতি টের পাই।

না, আগামী কাল আমি এই শহর ছেড়ে দিব, একজন মানুষের ঠিকানা খুজে পাবার জন্য।

মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আইকনিক ফিগার এবং আসাদ চৌধুরী’র বারবারা বিডলারকে

পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে সে যুদ্ধ গুলোর কোনটাতেই বেসামরিক মৃত্যুর কোন নাম ধরে তালিকা নাই। এমন তালিকা এখনো করা হয়না। কারণ এটা করা সম্ভব না। এসময় শুধু তথ্য সংগ্রহের সমস্যা নয়, এই অস্বাভাবিক অবস্থায় আরো অনেক ঘটনা ঘটে। যেমন, ব্যাপক সংখ্যক মানুষ দেশ ত্যাগ করে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ফেরেনা, অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, পরিবার-সমাজ বিহীন ভবঘুরে মানুষরাও নিহত হন যাদের খোঁজ পাওয়া সম্ভব হয়না। এছাড়াও আছে যুদ্ধের কারণে পরোক্ষ মৃত্যু। যারা হত্যা করে তারাও অপরাধ ঢাকার জন্য মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলে। এসব কারণেই যুদ্ধে নিহতের পরিসংখ্যান সব সময় একটা সংখ্যা; একটা নামসহ পুর্নাঙ্গ তালিকা নয়।

এটাই পৃথিবীব্যাপী গৃহীত নিয়ম। যুদ্ধে মৃত বা নিখোঁজ সামরিক ব্যাক্তিদের তালিকা করা সম্ভব কিন্তু বেসামরিক ব্যাক্তিদের নয়। তবে ইতিহাসের প্রয়োজনে এবং জনগোষ্ঠীর আবেগের সাথে তাল মিলিয়ে যুদ্ধে মৃতের একটা আইকনিক ফিগার বলা হয় যেমন আমেরিকান গৃহ যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৬ লক্ষ ২০ হাজার। এটা প্রকৃত সংখ্যা নয়, একটা আইকনিক ফিগার।

১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক সভায় জেনারেল ইয়াহিয়া খান ত্রুক্রদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘ওদের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করো, বাকিরা আমাদের পা চাটবে!’

ইতিহাসের কবে সেই দূর-ধূসরকালে সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছিলো এই শব্দটি গণ। আর, ওই শব্দের সহযোগে বাঙালির কণ্ঠে কতকাল থেকে কতই না ব্যবহৃত গণতন্ত্র, গণশক্তি, গণজাগরণ, গণনায়ক। আর, একদিন এই বাংলাদেশের আমরাই ঊনসত্তরের উত্তাল ইতিহাসের জন্যে নতুন রচনা করে উঠি গণঅভ্যুত্থান, যা আগে আর ছিলো না। গণ আর হত্যা এই শব্দ দুটির সহযোগেই কেবল যে নির্মিত এটি, তা নয়; এর ভেতরে পূরিত হয়ে আছে একটি ইতিহাস।একাত্তরে বাঙালির ওপরে পরিচালিত পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞ। (সৈয়দ শামসুল হক)

২৫ মার্চের গণহত্যার অভিজ্ঞতাই এক রাতের মধ্যে ‘পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নাকি স্বাধীনতা’ এর মধ্যে যারা তখনও দোলাচলে ভুগছিলেন তাদের এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সামনে দাঁড় করায়। এরপর আর থাকা চলে না পাকিস্তানের সঙ্গে এ রকম একটি সর্বজনীন বোধে মিলিত হয় বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। অভিজ্ঞতাটা চুন্নু ডোমের চোখে এ রকম : ‘আমরা ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ শাঁখারীবাজার থেকে প্রতিবারে একশত লাশ উঠিয়ে তৃতীয়বার ট্রাকবোঝাই করে তিনশত লাশ ধলপুর ময়লা ডিপোতে ফেলেছি। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ সকাল থেকে আমরা মিটফোর্ড হাসপাতালের লাশঘর ও প্রবেশপথের দু’পাশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিববাড়ী, রমনা কালীবাড়ি, রোকেয়া হল, মুসলিম হল, ঢাকা হল থেকে লাশ উঠিয়েছি। … আমাদের ইন্সপেক্টর পঞ্চম আমাদের সঙ্গে ছিলেন। এরপর আমরা লাশঘরে প্রবেশ করে বহু যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-কিশোর ও শিশুর স্তূপ করা লাশ দেখলাম। আমি এবং বদলু ডোম লাশঘর থেকে লাশের পা ধরে টেনে ট্রাকের সামনে জমা করেছি। আর গণেশ, রঞ্জিত (লাল বাহাদুর) এবং কানাই লোহার কাঁটা দিয়ে বিঁধিয়ে বিঁধিয়ে পচা, গলিত লাশ ট্রাকে তুলেছে। লাশগুলো ঝাঁঝরা দেখেছি, মেয়েদের লাশের কারও স্তন পাইনি, যোনিপথ ক্ষত-বিক্ষত এবং পেছনের মাংস কাটা দেখেছি। … প্রত্যেক যুবতীর মাথায় খোঁপা খোঁপা চুল দেখলাম।’ ( ইতিহাসের নিস্তব্ধতা : বিনায়ক সেন)

মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে মে মাসে গ্রানাডা টিভিতে একটি ডকুমেন্টারিতে খালেদ মোশাররফ বলেন ১০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। কবি আসাদ চৌধুরী “বারবারা বিডলারকে” নামে একটি অসাধারণ কবিতা লেখেন, সেখানে শহীদের সংখ্যা ১৫ লাখ মানুষকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে। লন্ডনে প্রকাশিত হ্যাম্পস্টেড এন্ড হাইগেট এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১ অক্টোবর ১৯৭১ সালে ২০ লাখ মানুষকে হত্যার কথা বলেছে। চরমপত্রে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে এম আর আখতার মুকুল সর্বপ্রথম ৩০ লাখ মানুষকে হত্যার কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা প্রথমে বিশ্ববাসী জানতে পারে প্রভদায় ৩রা জানুয়ারি ১৯৭২ এ প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে। দুদিন পর এই খবর দৈনিক আজাদিতে ছাপা হয়। বঙ্গবন্ধু লন্ডনে এই সংখ্যাই (৩০ লাখ) উল্লেখ করেছিলেন।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ভারতের রাজধানীতে পৌঁছার সাথে সাথে বাংলাদেশে অপেক্ষামান লক্ষ লক্ষ মানুষের উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা আরো বেড়ে যায়। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বঙ্গবন্ধু দিল্লীতে একটি জনসভায় বক্তৃতা করেন এবং রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। এই জনসভায় বঙ্গবন্ধু প্রথমে ইংরেজিতে তার বক্তৃতা শুরু করলেও শ্রোতাদের অনুরোধে পরে বাংলায় বলেন।
ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ দীর্ঘ নয় মাস পর তাদের অবিসংবাদী নেতার বক্তৃতা শোনার জন্যে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়। ১০ জানুয়ারি অপরাহ্নে বৃটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানযোগে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। অতি কষ্টে জাতির জনককে একটি খোলা ট্রাকে করে বিমানবন্দ থেকে সারা পথ প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে দিয়ে রেসকোর্সে আনা হয়। রেসকোর্সে পৌঁছুতে ট্রাকটির প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অংশবিশেষ উদ্ধৃত হলো।
…….
`যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, যারা বর্বর বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের আত্মার প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।
ভাইয়েরা আমার, লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ দানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার প্রতি জানাই সালাম। তোমরা আমার সালাম নাও।
আমার বাংলায় আজ এক বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। ৩০ লক্ষ লোক মারা গেছে। আপনারাই জীবন দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। আমাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে-পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা। বাংলার এক কোটি লোক প্রাণভয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের খাবার, বাসস্থান দিয়ে সাহায্য করেছে ভারত। আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী, ভারত সরকার ও ভারতবাসীকে আমাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে জানাই কৃতজ্ঞতা। বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন ও সহযোগিতা দানের জন্য ব্রিটিশ, জার্মান, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন জনগণকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’

২৬ মার্চ, ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের লিখিত রূপ পাই, তাতে তিনি এই সংখ্যাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,`দুনিয়ার মানুষের কাছে আমি সাহায্য চেয়েছিলাম। আমার সামরিক বাহিনীতে যারা বাঙালী ছিল, তাদের এবং আমার বি ডি আর, আমার পুলিশ, আমার ছাত্র, যুবক ও কৃষকদের আমি আহবান করেছিলাম। বাংলার মানুষও রক্ত দিয়ে মোকাবিলা করেছিল। ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছিল, শত শত বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। দুনিয়ার জঘন্যতম ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল পাকিস্তানী শোষক শ্রেণী। দুনিয়ার ইতিহাসে এত রক্ত স্বাধীনতার জন্য কোন দেশ দেয় নাই, যা বাংলার মানুষ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা পঙ্কিলতা শুরু করলো। যা কিছু ছিল ধ্বংস করতে আরম্ভ করলো। ভারতে আমার এক কোটি লোক আশ্রয় নিয়েছিল। তার জন্য আমরা নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব। আমি তাদের স্মরণ করি, খোদার কাছে তাদের মাগফেরাত কামনা করি, যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে, আত্মহুতি দিয়েছে। আমি তাদের স্মরণ করব, যে সকল মুক্তিবাহিনীর ছেলে, যেসব মা-বোনেরা, আমার যে কর্মী বাহিনী আত্মাহুতি দিয়েছিল, শহীদ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। এদেশ তাদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর যারা জীবন দিয়েছিল বাংলার মাটিতে, আজ তাদের কথাও আমি স্মরণ করি।’

আর এভাবেই ৩০ লক্ষ হয়ে উঠেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আইকনিক ফিগার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশে ফিরে দলের নেতাদের গণহত্যার তথ্য জমা দিতে বলেছিলেন। সেই তথ্য কোথায় জমা পড়েছিল বা আদৌ কোথাও জমা আছে কিনা সেটা কারো আজ জানা নেই।

আসুন আসাদ চৌধুরী অসাধারণ কবিতাটি পড়ে দেখি।

বারবারা বিডলারকে
– আসাদ চৌধুরী—সংকলিত (আসাদ চৌধুরী)

বারবারা
ভিয়েতনামের উপর তোমার অনুভূতির তরজমা আমি পড়েছি-
তোমার হৃদয়ের সুবাতাস
আমার গিলে-করা পাঞ্জাবিকে মিছিলে নামিয়েছিল
প্রাচ্যের নির্যাতিত মানুষগুলোরজন্যে অসীম দরদ ছিল সে লেখায়
আমি তোমার ওই একটি লেখাই পড়েছি
আশীর্বাদ করেছিলাম, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক।
আমার বড়ো জানতে ইচ্ছে করে বারবারা, তুমি এখন কেমন আছ ?
নিশ্চয়ই তুমি ডেট করতে শিখে গেছ।
গাউনের রঙ আর হ্যাট নিয়ে কি চায়ের টেবিলে মার সঙ্গে ঝগড়া হয়?
অনভ্যস্ত ব্রেসিয়ারের নিচে তোমার হৃদয়কে কি চিরদিন ঢেকে দিলে।
আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে বারবারা।
তোমাদের কাগজে নিশ্চয়ই ইয়াহিয়া খাঁর ছবি ছাপা হয়-
বিবেকের বোতামগুলো খুলে হৃদয় দিয়ে দেখো
ওটা একটা জল্লাদের ছবি
পনেরো লক্ষ নিরস্ত্র লোককে ঠাণ্ডা মাথায় সে হ্ত্যা করেছে
মানুষের কষ্টার্জিত সভ্যতাকে সেগলা টিপে হত্যা করেছে
অদ্ভুত জাদুকরকে দেখ
বিংশ শতাব্দীকে সে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নিয়ে যায়।
দেশলাইয়ের বাক্সর মতো সহজে ভাঙে
গ্রন্থাগার, উপাসনালয়, ছাত্রাবাস,
মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়ি
সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ফুলকে সে বুট জুতোয়
থেতলে দেয়।

টু উইমেন ছবিটা দেখেছ বারবারা ?
গির্জার ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকেদেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলে
আমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল-
সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশে
তিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনে
তিনি শিউরে উঠবেন।
অভিধান থেকে নয়
আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী ?
জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিওলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না স্বাধীনতার
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাছে এসো-
সাধু অ্যাবের মর্মর মূর্তিকে গণতন্ত্র আর মানবতার জন্য
মালির ঘামে ভেজা ফুলের তোড়া দিয়োনা-
নিহত লোকটি লজ্জায় ঘৃণায় আবার আত্মহত্যা করবে।
বারবারা এসো,
রবিশঙ্করের সুরে সুরে মুমূর্ষু মানবতাকে গাই
বিবেকের জংধরা দরোজায় প্রবল করাঘাত করি
অন্যায়ের বিপুল হিমালয় দেখে এসে ক্রুদ্ধ হই, সংগঠিত হই
জল্লাদের শাণিত অস্ত্র
সভ্যতার নির্মল পুষ্পকে আহত করার পূর্বে,
দর্শন ও সাহিত্যকে হত্যা করার পূর্বে
এসো বারবারা বজ্র হয়ে বিদ্ধ করি তাকে।

সিনায় সিনায় জিকির উঠে

সিনায় সিনায় জিকির উঠে

ফকির আবদুল মালেক

পাগলটাকে আটকাও … কেউ বললে, ভ্রক্ষেপ করিনি,
সরাসরি লাশ শায়িত খাটের পাশে দাড়িয়ে বললাম-
শেষ দৃশ্য বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় উপস্থিত
সমবেত জনতা, তাহাদ আলী সন্ত্রাসী ছিল…
তবুতো অনেকে ভিনদেশে দিয়েছে পাড়ি ,
তাহাদ আলী মাটিকে আকড়ে ছিল বৃক্ষের মতো আজীবন,
ডোবার পাড়ে উপোড় হয়ে পড়ে থাকা লাশটার মুষ্ঠিবদ্ধ মাটি
তোমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে !!

-আগেই বলেছি পাগলটাকে আটকাও, ওকে শিকলে বেধে রাখো…..
যেন স্রষ্টার –কুন-ফা-ইয়া-কুন,
কয়েকজন যুবক আমাকে জনহীন প্রান্তরের বৃক্ষে
শিকল দিয়ে বেধে লাশ নিয়ে চলে গেল, শেষ গন্তব্যে, মাটিতেই।

উদিত চন্দ্রিমায় দিন হজম হয় রাত্রির উদরে
গুটিয়ে নিলো ব্যাঙ তার উল্লাসিত জিহ্বা পোকার সর্বনাশে
মাটিতে সাতার দিয়ে একে বেকে ছুটে যায় সাপ
চোখের রাডারে দেখে নিয়ে এদিক ওদিক
ভেজী যায় ধরনীর বুকে সুড়সুড়ি দিয়ে।

খাদ্যচক্রের এইসব রূঢ় সত্য আমার ভাবনাকে
তাড়িয়ে নিয়ে যায় ভয়াবহ রক্তপাতের দিকে,
একটা চরমপন্থী পথনির্দেশনা আমার ভাবানাকে
তীরের মতো ছুড়ে নিয়ে যায় বাস্তবতার সন্নিকটে ।
জোৎস্নার ফোয়ারা টিকটিকির রক্ত বলে ভ্রম হয়।
তবু ক্রশ ফায়ারের তাহাদ আলী লাশ মাথার ভাবনাকে
বক্ষে নিয়ে আসে…

সিনায় সিনায় জিকির উঠে -মানুষ, মানুষ ইছমে-আজম,
সকল ধর্ম-মতবাদে পড়ে টান
শিকল ছিড়ে রক্ত ঝরে নূহের প্লাবন সমান।

ঘাস

মুঠো ভর্তি ঘাস নিয়ে বাচ্চা ছেলেটি জিজ্ঞেস করল ‌-ঘাস কি?
একতারায় জীবনের তার নাড়তে নাড়তে বাউল বলল
-জীবনের মানে কি?
আমি কারোর উত্তর দিতে পারিনি, কিভাবে পারব,
আমিতো বেশি জানি না তাদের চেয়ে।

বচ্চা ছেলেটিকে তবু বললাম- দেখো আমাদের মাথায় যেমন চুল হয়,
তেমনি পৃথিবীর বুকে ঘাস হয়।
কি বুঝলো, হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো, বলল -বুঝেছি,
-ঘাস হচ্ছে পৃথিবীর চুল।

সেদিন গোরস্থানে গিয়েছিলাম, উদাম উদ্যম ঘাসগুলি নড়ছিল,
জীবনের উচ্ছ্বাস দেখতে পেয়েছিলাম তাদের প্রতিটি কম্পনে।
এই ঘাসগুলোর উচ্ছ্বাস
মৃত মানুষের সব- বৃদ্ধ-বৃদ্ধার শরীরের মাংস থেকে উৎসারিত
যুবক-যুবতীর, বালক-বালিকা কিম্বা যে শিশু জন্মেছিলো
পরিপুষ্ট হতে পারেনি তাদের মাংস থেকে-
ঘাসগুলো আমাকে বলল- তারা মৃত্যু খায় আর দোলে আনন্দে
আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম-
বাউল, বাউল- জীবনের মানে গোরস্থানের বাবড়ি চুলের
অহংকারী কম্পন, টুং টাং একতারার সুরের মাতাল মূর্ছনা।

বাউল হাসতে হাসতে বলল- কিছুই বুঝলাম না
আমি বললাম- আমিও না।

(একটি অশ্লীল কবিতা) আমি শহরের অন্দর মহলে ঢুকে পরি

আমি শহরের অন্দর মহলে ঢুকে পরি (গদ্য-কবিতা)

একজন না-নর না-নারী কিম্বা হা-নর হা-নারীকে নিয়ে এই শহরে কোথায় যাই?
টি এস সি-তে আড্ডা দিতে দিতে হঠাত্ অনুপমা, আমি উধাও,
রিক্সায় আইসক্রীম খেতে খেতে
টনির ম্যাছে ঢুকেছি কতবার, সেই টনি বললে -ছি!

আবাসিক যেই হোটেলটিতে ঢুকলে তরল অনল
আর শারীরিক ফুর্তির আয়োজন করে দিত এক ফুত্কারের মত ইঙ্গিতে
সেই রমিজ ঠোঁটে নিয়ে চিপটির
সুদৃশ্য বর্নালী বললে-এতটা নিচে নামতে পারি না , স্যার।

পরিত্যাক্ত এক পাবলিক টয়লেটে যেতেই
লাল ফিতার রমনী ক্ষীপ্ত হয়ে উঠলো
‘হিজড়াগুলোর জ্বালায় দিন দিন খদ্দের হারাতে হচ্ছে’ বলে।

অবশেষে পার্কে বসে বাদাম চিবুতে চিবুতে
সে তার হৃদয় মেলে ধরল, কান পেতে শুনি –
একটি দাঁড় কাক অনবরত কা কা ধ্বনি তুলে যাচ্ছে সৃষ্টিছাড়া কর্কশতায়,
হৃদয়জমিন ফেটে চৌচির খাঁ খাঁ রোদ্দুরের তপ্ততায়,
বৃষ্টি এসে একটা ঘাসও জন্মায় না, কখনও আকাশ ফুড়ে এসিড বৃষ্টি
আসে, দেহ ঝলসে যায়।

আমি শহরের অন্দর মহলে ঢুকে পরি, শহরকেই বেআব্রু করে ফেলি।

এই শহরে স্বর্ণলতার অলংকার গলায় দুলিয়ে চড়ুইভাতি খেলার দৃশ্য বেমালুম অদৃশ্য,
ডুবো জলে সাতার কেটে মাছ ধরার উচ্ছ্বাস কোথাও পাই না খুজে।
এই শহরে নরেরা সব আপন নারীতে কান্ত, ব্যাংক লকারে জমা পরে
সারি সারি হৃদয়, ছিনতাই হয়ে যায় প্রেমিক-প্রেমিকার দেহ।
এই শহরে শিকারের দৃশ্যাবলী কসাইখানায় বন্দী,
প্রকৃতিকে সযত্নে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা সুস্পষ্ট,
তবু আমি আদিগন্ত আঁধারচুম্বী অরণ্যে- মানুষখেকো বাঘের
হাড় চিবুনোর দৃশ্য কিম্বা মানুষের উদ্দাম নৃত্য মৃত বাঘ ঘিরে,
তেমনি দৃশ্য দেখি, রাজপথে- মানুষের লাশ ঘিরে মানুষের উল্লাসে।

সৃষ্টির উল্লাসে শহরকে বেআব্রু করতেই
জড়ায়ুহীন ক্লীবের ক্রন্দন শুনতে পাই যা আমি শুনেছিলাম
পার্কে বসে বাদাম চিবুতে চিবুতে না-নর না-নারী কিম্বা হা-নর হা-নারী
রূপী প্রকৃতির ব্যতিক্রম অস্তিত্বের হৃদয়ে।

অবশেষে জেনেছি মানুষ যৌন কাতর এক প্রাণী বিশেষ

প্রার্থনায় যাই-
হুরের বর্ণনায় কেপে কেপে উঠি,
যখন ছিল ভাষাগত বৈষম্য- ঈশ্বর আর আমার
কি এক অপার্থিব ভাব-উন্মোষে স্বর্গের ভাব-কম্পন নিয়ে বেরিয়ে এসেছি,
আজ বুঝি টুটে গেল ভাষার বন্ধন-
দেখি, ঈশ্বর আমায় মদ,নারী যৌন-কাতরতার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন

ঈশ্বর কি চিনেননি আমায়?
জানেন না কি, সুর-মাধুর্যে আর শব্দের নন্দিত বিন্যাসের অস্পর্শিত
কম্পনে আমি সুখ পাই। কতকাল কবির কল্পলোকে ভাব ভালোবাসায়
বিচরণ আমার, কত সম্পদের আহ্বান দুরে ঠেলে দিয়ে আমি কেবল
সুর আর ছন্দ নিয়ে মেতে উঠেছি, এ আমার আজন্ম নেশা, আমার কাম্য সুখ।
ঈশ্বর কি জানেননি আমায়?

শীতের ভোরে যখন ঘুম প্রিয়, কে ডাকলো আমায় “আস-সালাতু …. ”
যে আমি কবিতার জন্য রাতের পর রাত জেগে কাটিয়েছি অলীক বিস্মরণে
কবিতাকে কোন শীত-সকালেতো ঘুমের চেয়ে প্রিয় হয়নি মনে কখনো,
সে-ই আমি কার ডাকে ছুটে যাই প্রর্থনালয়ে আর ফিরে আসি
মদ,নারীর যৌন কাতরতার স্বপ্ন নিয়ে
এ কোন উর্ধ্বমুখী পতন আমার?

গত শীত জুড়ে একটিও কবিতা লিখতে পারি নি আমি,
যারা আমার কবিতা পড়ে পুলকিত হয়, আর যাদের কবিতা পড়ে আমি সুখী হই
তাদের সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না-
এইসব শীতগুলো গল্প এনেছিল হৃদয়ে
কত অজস্র গল্প জমে উঠেছে পৃথিবীর মনে তারা এসে ভিড় করেছে,
আর অজস্র খন্ড খন্ড আমাকে নিয়ে এসেছিল একটা বিশাল ক্যানভাসেÑ
সেই গল্পেরা আজ নেই কোথাও কেবল আমার স্মৃতির ভান্ডারে কিলবিল করতে করতে
আমার স্পষ্ট একটা চিত্র এনে দিয়েছিল সমস্ত স্বত্তা জুড়ে-
যাকে রূপ দিয়েছি অপার্থিব প্রেমের গল্পে , তার ভিতরগত প্রেরণায় আমি আঘাত
করেছি, শব্দের বাধনকে ভেঙ্গে গল্পের চালকের দেখেছি
দেহের কামনায় এক ভুবুক্ষ কামুকের মাতাল সন্তরণ…

প্রার্থনায় যাই
হুরের বর্ণনায় কেপে কেপে উঠি
দেখি, ঈশ্বর আমায় মদ,নারী যৌন-কাতরতার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন

অবশেষে জেনেছি মানুষ যৌন-কাতর এক প্রাণী বিশেষ।

খুল যা সিম সিম… গেদুর ব্যর্থতা

দূরে কাছে, দেশে বিদেশে যে যেখানে আছেন তাদের সকলকে খুল যা সিম সিম এর পক্ষ থেকে সু-স্বাগতম। বিজ্ঞাপনের এই যুগে যেখানে বিজ্ঞাপনের ফাকে ফাকে অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় সেখানে কেবল মাত্র বিজ্ঞাপনের অভাবে এই অায়োজনটি বন্ধ ছিল। এমনই জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠান! অবশেষে নিজের পয়সায় অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হচ্ছে। তাই আপনারা নিশ্চিত থাকেন যে অনুষ্ঠানটি একযোগে বিনা বিরতিতে প্রচারিত হবে।

সেদিন এক সুন্দরী লাস্যময়ী তরুনী এসে গেদুকে বলল, শুনেছি আপনি নাকি ভবিষ্যত বলতে পারেন?
গেদু বলল, পারি না মানে! যদি তোমার হাতটি ছুয়ে দেই তাহলে তুমিও বলতে পারবে ভবিষ্যত।
মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিল। গেদু হাত ধরেই রাখল। এক দুই তিন, কেটে যাক দিন, গেদু মনে মনে বলে এ পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হয়!
মেয়েটি বলল, কই। আমিতো ভবিষ্যত বলতে পারছি না?
মিষ্টি হেসে গেদু বলল, পারবে। পারবে না মানে একেবারে পরিস্কার দেখতে পারবে। শুধু তোমার গালটি আমার দিকে বাড়িয়ে দাও।।
মেয়েটি বলল, না।
গেদু বলন, কে নয়?
– আপনি, আমার গালে চুমু খাবেন।
গেদু মহা উল্লাসে বলল, এই তো দেখতে পারছো তুমি ভবিষ্যত। দাও দাও তোমার গালটি বাড়িয়ে দাও। যে ভবিষ্যত তুমি দেখতে পারছো তাকে বর্তমানে নিয়ে আস।

হা ভাই-বোন-বন্ধুরা, গেদু যে কৌশল নিয়েছে সেখানে সে ব্যর্থ হয় নাই। তার ব্যর্থতা অন্য জায়গায়। আসুন সে দিকে যাওয়া যাক।

বিভিন্ন দেশের পুলিশের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। প্রতিযোগিতার বিষয় হচ্ছে, একটি শিকারী কুকুরকে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হবে দেখতে হবে কোন দেশের পুলিশ কত দ্রুত খুঁজে বের করে আনতে পারবে।

ছেড়ে দেয়া হলো কুকুরটি। একদিনের মধ্যে খুঁজে নিয়ে এলো যে পুলিশের দল তাদের চিহ্নিত করা গেল যে পুলিশ বাহিনীটি চীনের।

দ্বিতীয় দলটি দুই দিনে চিহ্নিত হলো আমেরিকান পুলিশ।

তৃতীয় দলটি খুঁজতে গেল। কিন্তু দিন যায়, রাত যায় যেতে যেতে এক সপ্তাহ চলে গেল কিন্তু তারা আর ফিরে এলো না। জাতিসংঘের প্রশিক্ষিত পুলিশ টিম বেরিয়ে গেল। আবশেষে দেখতে পাওয়া গেল সেই পুলিশ বাহিনীকে। জানা গেল তারা গত এক সপ্তাহ যাবত একটি ভেড়াকে গাছে বেধে পিটাচ্ছে আর বলছে –
স্বীকার কর তুই সেই কুকুর।
স্বীকার কর তুই সেই কুকুর।

কোন দেশের পুলিশ তারা? কেউ জানল না।
গেদুকে দায়িত্ব দেয়া হলো খুঁজে বের করতে যে, তারা কোন দেশের পুলিশ। গেদুর ব্যর্থতা এখানেই যে সে চিহ্নিত করতে পারল না তারা কোন দেশের পুলিশ।

গেদুর এই ব্যর্থতা নিয়েই শেষ করতে হচ্ছে আজকের খুল যা সিম সিম। আল্লাহ হাফেজ।

আবার জমবে মেলা শব্দনীড়

শব্দনীড় ব্লগে সাথে জড়িয়ে আছে অনেক দিনের আবেগ। শুধু আমার একার নয় অনেকের। এক সময় অনেক ভাল ভাল ব্লগ লেখক ছিলেন এই ব্লগে সক্রিয়। তাদের নানাধর্মী লেখায় উত্সবমুখর পরিবেশ ছিল এখানে। অনেক সম্ভবনা তৈরি করেও শেষ হয়ে গেছে সেইসব আনন্দমূখর দিন।

ব্লগ চালিয়ে রাখতে যে টাকা পয়সা ব্যয় করতে হয় তার জোগার হচ্ছিল না, তাই ব্লগটি বন্ধ হয়ে পরে। সেই সমস্যা সমাধান হয়েছে। এখানে পুনরায় সক্রিয় হোন। আপনাদের কাছে টাকা পয়সার সাহায্য চেয়ে আর পোষ্ট আসবে না। এ কথা এ কারণে বললাম অনেক ভাল ভাল ব্লগ লেখক কথা প্রসংগে আমাকে জানিয়েছেন যে এখানে সক্রিয় হলেই টাকা পয়সার কথা বলা হয়।

পরিশেষে এই আবেদন করছি আসুন এখানে নিত্য নতুন নতুন কনসেপ্ট নিয়ে এখানে সক্রিয় হই। আর কিভাবে ব্লগটিকে বেগবান আর প্রাণবন্ত করে তোলা যায় সেই বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরি।

আদিম উৎসবে

আদিম উৎসবে
(সুন্দরী সিরিজের কবিতা)
……
এক.
কে যায় সেখানে? নির্বোধ, দুর্বোধ্য, নিথর, নগ্ন;
হারিয়ে ফেলেছে দক্ষতা? ভোজ উৎসব হতে শক্তি রূপান্তরে,
হারিয়ে ফেলেছে সর্ব কর্মসঞ্চালন ক্ষমতা? সে আজ মৃত!

জীবিত বা মৃত যে কোন অবস্থায় মানুষের প্রকৃত অবস্থা কি?
আমি আমার কে? তুমি তোমার? তুমি তো জানো, মৃত্যু কেন্দ্রিক
জীবন যাপনের যে পদ্ধতিগুলি প্রচলিত আমি তাতে পুরোপুরি অভ্যস্থ নই,
মানুষতো মৃত্যুতে যে অর্থহীনতা জন্ম লয় তার শূন্যতায় ঈশ্বরকে ডেকে আনে,
অত:পর উপসনার পদ্ধতির পার্থক্যে তারা পরস্পর আলাদা হয়ে যায়,
কেন আমি উপসনায় মত্ত হব? কেন আমি নিজেকে আচার অনুষ্ঠানে পূর্ণ
কতগুলি মন্ত্র উচ্চারণে সীমাবদ্ধ রাখব?

আমি জানি আমি অস্তিত্ববান আর শব্দময়,
মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্ত আমার দিকে সাংকেতিক বানী পাঠায়,
আমি শুধু জানি আমাকে সেইসব বানীকে লিপিবদ্ধ করতে হবে,
করে তুলতে হবে শব্দময়।

দুই.
আমার কবিতাগুলি প্রেমের উচ্চারণ, সৃষ্টিশীলতার অনন্য অনুভব,
বস্তুকে আত্মায় রূপদানের অনন্য মাধ্যম,
প্রেমেরর চেয়ে মাধুর্যময় আর কোন চিত্রকর্ম নেই অনুভব ক্যানভাসে ।

কে সে? রাজ্যজয় করে উঠেছে ক্ষমতারশীর্ষে?
কে সে? অর্থের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে গায় সফলাতার গান?
আমি তাকে প্রতিদ্বন্ধী ভাবি না কখনও,
আমি তাকে সুশাসনের আহ্বান জানাই,
কি হাস্যকর সে আমাকে আদেশ দেয়, কহে- তাকে বলি মহামান্য!
তার সম্মানতো আলাদা কোন নয় একজন মানুষ থেকে!

এইসব কোলাহল আর বেদনাহত যন্ত্রনাকে পাশ ফিরিয়ে
তোমার কাছে ফিরে ফিরে আসি, হে অমিতব্যয়ী প্রেমিকা আমার,
সব কিছু মুছে যায় যাক , এসো, জেগে থাকি যতক্ষণ জেগে থাকা যায়
সৃষ্টিশীলতার আদিম উৎসবে।

স্বপ্ন তাড়িত ক্রন্দন

স্বপ্ন তাড়িত ক্রন্দন
(সুন্দরী সিরিজের কবিতা)
…………….

মনে পড়ে, তুমি ছাদে, আমায় ছুঁয়ে ছিল প্রান্তরের ঘাস
আমাদের এক করে রেখেছিল অনাদি অফুরন্ত আকাশ।
আমার ভাবনার ভুবনে তোমার আলোর উচ্ছ্বাস…
কি যে হতো, কখন ডুবে যেত পূর্ণিমার চাঁদ,
দেখার পেতাম না অবকাশ।
যে আমি একটি কবিতার জন্যে
মুঠোয় নিয়ে সমস্ত চেতনা, খুজে ফিরি হয়ে হন্যে
প্রান্তর-উপত্যকা-সাগর-নদী-গিরি
পেয়ে যেতাম সৃষ্টির গহীন আনন্দের অলৌকিক সিড়ি।

আমারই এই ক্রন্দন শুধু, স্বপ্ন তাড়িত অবিশ্রাম স্থিতিহীন।
লৌকিক সুখবহরে এমন ক্রন্দনে কখনও কি হওনি লীন?

কসম খোদার, তুমি আমার সুন্দরী

কসম খোদার, তুমি আমার সুন্দরী
(সুন্দরী সিরিজের কবিতা)
…………………..
দম মারো দম, তখন টানি হরদম, জয়বাবা ফেলুনাথ
আমার শরৎ সাদা মেঘলা আকাশে তুমি পুর্ণিমারই চাঁদ
চার তলার ছাদ বরাবর তোমার পঞ্চম তলার বারান্দা
চোখর হাসির বাধ ভেঙ্গে যায়, হাতের আঙুলে করি ইশারা
মন যদি মন ছুয়েছে, প্রেম সাগরে ডুবে যেতে কেন তবে দেরী
তেমার জন্য মরতে পারি, কসম খোদার, তুমি আমার সুন্দরী!

জেগে জেগে নির্ঘুম সারা রাত, এক শব্দ লিখে দুই শব্দ কাটি
হৃদয়াবেগের কালি দিয়ে লিখে ফেললাম চার পাতার চিঠি
এদিক ওদিক দেখে শুনে বারান্দাতে চিঠিখানি যেই ছুড়েছি
বুঝতে পেলাম প্রথম দিনেই আমি বড়ই ভুল যে করেছি
চিঠি পরেছে তোমার মায়ের হাতে! থোরাই কেয়ার করি-
তোমার জন্য মরতে পারি, কসম খোদার, তুমি আমার সুন্দরী।

তোমার বড় ভাই, মস্তানীতে জুড়ি নাই, কাঁপে সব লোকে
বীর পুরুষের কলিজা, জুটল সহসা, নিরিহ আমার বুকে
গাছে আমায় বেধে, সকলে একসাথে, মারল কিল-কুনি-ঘুষি
রক্তমাখা ঠোটে, বলছি অকপটে, তোমার বোনকে ভালোবাসি!
প্রেম করেছি বেশ করেছি, মার খেয়ে তবু তোমায় যাইনি ছাড়ি
তোমার জন্য মরতে পারি, কসম খোদার, তুমি আমার সুন্দরী।

কিছু করিনি, সুন্দরী, কিচ্ছু করিনি

কিছু করিনি, সুন্দরী, কিচ্ছু করিনি
(সুন্দরী সিরিজের কবিতা)
…………

কাননে ফুল ফুটেছে, গন্ধ শুকিনি
শিরির ভেজা দুর্বাঘাসে নাঙ্গা পায়ে একটুও হাটিনি
চাঁদনী রাতে জ্যোৎস্নার বুকে সাঁতার কাটিনি
সাগর বুকে উদাম গায়ে লোনাজলের গন্ধ মাখিনি
কিছু করিনি, সুন্দরী, কিচ্ছু করিনি
তুমি চলে যাবার পর, আমি কিচ্ছু করিনি।

হৃদয়োত্থিত ধ্বনিগুলোর বর্ণচিত্রের শব্দ গড়িনি
শব্দগুলি মন-মাধুরীতে পত্র লিখিনি
ছন্দচালনে মাতাল তালের তবলা বাজেনি
কতদিন তোমায় দেখিনি, আমি কাব্যে মাতিনি
কিছু করিনি, সুন্দরী, কিচ্ছু করিনি
তুমি চলে যাবার পর, আমি কিচ্ছু করিনি।

শিশুর মুখের অম্লান ঘ্রানে মাতাল থাকিনি
নৌকোর ছইয়ে পিঠ লাগিয়ে নদীবক্ষে উড়াল পারিনি
তোমার হাতটি ছুঁতে কারো কোনো বাধা মানিনি
সেই তোমাকে নিজের করে রাখতে পারিনি
কিছু করিনি, সুন্দরী, কিচ্ছু করিনি
বছর পর বছর কাটল, আমি কিচ্ছু করিনি।