একদিন বেষ্টসেলার হয়ে আগুনও দেখাবে তার সহস্র নিমরাজি শক্তি। পরিচয়হীন
পাখিরা পাশে দাঁড়িয়ে দেখবে, কোনো প্রাণীই জানতে চাইছে না তাদের কুশল।
যারা ভালোবাসার জন্য এতদিন পথে নামতে রাজী ছিল, তারাও গৃহসন্ধানে
ভুলে যাবে পুরনো প্রতিশ্রুতি। এই গ্রামের বিস্তীর্ণ সবুজে কোনো যুদ্ধচিহ্নই আর
খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ কথা ছিল- মানুষ ভুলে যাবে না যুদ্ধ ও জন্মের
মিথষ্ক্রিয়া। আগুন ভুলে যাবে না, তার অবিক্রীত প্রাচীন ইতিহাস। আমরা যারা
একান্তই পাঠক বলে নিজেদেরকে বিবেচনায় রাখতাম, তারাও পঠন-পাঠন ভুলে
গিয়ে বদ্ধ জলাশয়কে সমুদ্র বলে সনদ দিতে থাকবো। ভূগোলের ছাত্র-ছাত্রীরা
জানতে চাইবে, মানুষের চোখই কী তবে কঠিন শিলাখণ্ড !
ফকির ইলিয়াস এর সকল পোস্ট
দুটি কবিতা
বিজ্ঞাপনের শ্রমগল্প
ডায়লগটা একটা বিজ্ঞাপনের। আমাদের চারদিকে এখন দাদ, বিখাউজ,
কোমরের মোটা দাগ মিইয়ে দেবার বিজ্ঞাপন। আমাদের গোটা পরিকল্পনা
জুড়েই এখন রাজপথ। ফুটপাথ নেই। ফলে হেঁটে যাবার রাস্তা নেই। যারা
গাড়ির মালিক তাদের যাবার পথ আছে। আমাদের নেই। আমরা শ্রমজীবি
মানুষেরা জানি না, শিলাবৃষ্টি আমাদের বোরোধান তলিয়ে নিলে – দাঁড়াবো
কোথায়!নগরে প্যাকেজ রাজনীতি চলছে। খাদির পাঞ্জাবী পরে নেতারা
উদ্ধার করছেন আমাদের ভবিষ্যত। আর আমাদের সন্তানেরা হামাগুড়ি দিচ্ছে
ডোবায়। যে ডোবায় এখন পানিও নেই। শুধুই নর্দমা। কাদার ছড়াছড়ি।
সময় এলে অনেকেই আমাদেরকে চিনতে পারেন। সময় চলে গেলে আর চেনার
দরকার মনে করেন না। এই যে ধাউড় সম্প্রদায়, তারাই আমাদের নিয়ামক।
মাঝে মাঝে দূরে দাঁড়িয়ে তারাও বলেন- চেনা চেনা লাগে !
একটা চাকরির খোঁজে যে ছেলেটি গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়েছিল, সে-ও
অর্ধচন্দ্র খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কর্পোরেট অফিসটির সদর দরোজায়।
তার পিঠে বেদনার জন্মদাগ। কর্কট রোগে আক্রান্ত পিতার মুখ সম্বল করে
তার হাঁটু’টি আর চলতে চায় না। চলতে চায় না এখন অনেক কিছুই।
এই নগরটা পুড়ে গেলেও ক্ষতি নেই। কখনও কখনও পোড়া-ই ভাগ্যের
বলিরেখা। পোড়াবাড়িতেই গড়ে উঠে যে প্রাসাদ, কংকালগুলো তার সাক্ষী
হয়েই থেকে যাক আপাতত।
#
বরফজমা রোদের জামা
আরেকটি পোশাক পরিয়ে দিতে থাকি হিমকন্যার গায়ে। জমে থাকা হিমালয়ের মতো
বিচূর্ণ হয়ে আছে এই নিউইয়র্ক নগরী। দেখেছি এর আগেও সহবাসের দীর্ঘশ্বাসগুলো
কত মায়ায় মিতালী গড়ে চাঁদের সাথে। কত দরদ নিয়ে ইষ্ট রিভারের পারে জাগে
সূর্য। আমি যাযাবর সূর্যের সাথে হাঁটতে হাঁটতেই একদিন পালন করেছিলাম ভালোবাসা
দিবস। আর প্রকৃতিকে বলেছিলাম, তুমিও পালন করো ধারাবাহিক ছুটিতালিকা। একটি
জীবনে অবসরের প্রয়োজন হয় খুব। প্রত্যন্ত বরফেরা আমার কথা মন দিয়ে শোনে।
রোদের হাসি এসে ভুলিয়ে দেয় দুঃখ, জলবীজে মিশে ছায়া-প্রেমের, নিভৃতে-সংগোপনে।
ব্যাখ্যা বিষয়ক বচনপঞ্জিকা
তুমি অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারো।
‘জল’কে কেউ কেউ কেন ‘পানি’ বলে,
‘গোরস্থান’ কে ‘কবরস্থান’- কিংবা ‘খোদা হাফেজ’কে ‘আল্লাহ হাফেজ’। কেন কেউ
কেউ মাঝে মাঝে ‘তস্কর’ কে ‘লস্কর’ বানিয়ে বাজারে সেরে নিতে পারে মামুলি
বেচাকেনা। ‘বাতাসা’ খেতে গিয়ে যারা ‘বাতাস’ খেয়ে তৃপ্ত হয়ে নগরে ফিরেছিল
আমি তাদের গন্তব্য চিনি। জানি কীভাবে তারা সেরে নিয়েছে মাটির সাথে শেষ
মোলাকাত। কাদায় পা ডুবে যেতে পারে-এই ভয়ে যারা কাঁধে তুলে নিয়েছে পা,
আমি তাদেরকে প্রতিবন্ধী বলতেই পারি। অথবা পাঠশালায় গিয়েও যারা পড়েনি
চন্দ্র-সূর্যের জন্মইতিহাস, তাদেরকে বলতেই পারি অন্ধ। আমি তোমাকে আপাতত
‘ব্যাখ্যক’ হিসেবেই অভিহিত করতে চাই। কারণ এ পেশায় আমাদের কিছু সুদক্ষ
তালিবাজ প্রয়োজন।
রেখে যাবো না
কিছুই রেখে যাবো না। শ্লোক, শিলা, শিশ্ন- কিছুই
রেখে যাবো না পৃথিবীর জন্য। এমন কি শিকড়-ও
উপড়ে ফেলে এই চাঁদকে বলবো- তুমি গ্রহণ করো
আঁধারের পরিচ্ছদ- আমি কোনো আলো চাই না আজ,
বরং গণিকালয়ের মধ্যসত্ত্বভোগীর মতো, তারাগুলোকে
পাশে রাখো হে চন্দ্র, তারপর নিজকে বিসর্জনে ভাসাও।
রেখে যাবো না কিছুই। বিচ্ছেদ, বিনয়, বিনির্মাণ-
এসবের কোনো পাহারাদার নেই, যে মৃত্তিকায়-
তার জন্য রেখে যাওয়া কখনও সমীচীন নয়-
বরং সাথে নিয়ে যাবো সব পাপ, প্রস্রাব, পতন
এখানে কিছু রেখে যাওয়া মানেই আত্মহত্যা করা,
এখানে কিছু রেখে যাওয়া মানেই প্রতারকদের সাথে
হাত মিলিয়ে বলা- ‘আমিও তোমাদের তল্পিবাহক’।
কালের করায়তন
বিপুল আনন্দ নিয়ে ভেসে যায় হেমন্তের ফুল। পাতাগুলো
কাছে দাঁড়িয়ে দেখে ওইসব গমন। আর যে প্রাজ্ঞ আলো
সাথী হবে বলে কথা দিয়েছিল, তারাও পথ পাল্টে
অন্য সড়কে উড়ায় নিশান। রাত্রিচরী পাথর জেগে থাকে একা।
জেগে থাকে অগ্রহায়ণের নক্ষত্র। ঝুমকোলতার ছায়ায়
বিগত মুখ দেখে কান্নারত পাখি ভাবে-
দেখতে কেমন বিধাতার হস্তরেখা, যে আঙুল বাঁশরি বাজায়
সে ও কি- বোঝে ছিদ্রের বেদনা।
কালের অক্ষরে রেখাছায়া জাগে। সবিনয়ে
প্রেম তার বা’পাশে ঘুমায়।
লোডশেডিং এর পরে
ফুরিয়ে যায় জেনারেটরের আয়ু। থেকে যায়
মানুষের প্রাণশক্তি, যারা সারারাত দাঁড় বেয়ে নদীকে করেছিল
কাবু, তারাও এসে দাঁড়ায় পাশে- চারদিকে বেজে উঠে
মায়াময় অন্ধকারের গান।
মানুষ অসাধ্য সাধন করে এর আগেও দাঁড়িয়েছে সকল
প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে, রুখে দিয়েছে বাণের কালোথাবা।
এবং আঁধারের ছায়ায় দেখেছে প্রিয়তমা রমণীয় ভোর,
আলো ঘরে তুলবে বলে খুলে দিয়েছে সবকটি জানালার শিকল।
ফুরিয়ে যায় চন্দ্রনক্ষত্রের গান।
বাউলের কণ্ঠে যে গান ভেদ করেছিল,
হেমন্তের ধানী মাঠ-
তা থেকে যায়। বনেদি জমির আ’লে
একটি মশাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন
একজন কৃষক। বিদ্যুৎ কিংবা
বনৌষধির প্রতি তার কোনো
অভিযোগ নেই আর….
.
#
রিরাইট, ১ নভেম্বর ২০২২
নিউইয়র্ক 💐
মেঘও রেখে যায় পাশে ভূমিষ্ট ছায়াডোর
কয়েকটি বিলাপ গেঁথে গেঁথে মেঘও রেখে যায় তার ভূমিষ্ট ছায়াডোর
পৃথক কোনো স্বার্থ নেই নিমগ্ন মাটিরও,
মেঘ ও মাটি পরস্পরের দেখা পেলে নিমিষেই মিতা হয়ে যায়
সবগুলো মিথ অস্বীকার করে তারা পরে নেয় একই পোশাক।
ভোরের পরিষেবা গ্রহণ করে সেরে উঠে সমগ্র ক্রান্তিকাল থেকে।
নদীরা নিরক্ষর নয়। তাই তারাও পড়তে পারে মেঘমাটির লিখিত
অঙ্গীকার। নিশ্চিত নিদ্রা চোখে নিয়ে যে চাঁদ শুয়েছিল অন্তরের
অগ্নিকোণে, তারও জাগার পালা শুরু হয়।
পালা করে আমরা পাহারা দিয়েছি যে ফালগুনের আভাস,
চেয়ে দেখি তার ঠিক দশগজ দূরে-
রূপসী বাংলা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন জীবনানন্দ দাশ।
দুটি কবিতা
রেখার কাজকারবার
দক্ষ হাতের ছোঁয়া থামিয়ে দেয় সকল ভেঙে পড়া। এই আকাশও
একদিন ভেঙে পড়তে চেয়েছিল ঠিক তোমার সামনে। তুমি মগ্ন
চাহনী দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলে দ্বিতীয় পতন।
যারা রঙ নিয়ে করে রেখার কাজ-কারবার, যোগ বিয়োগ তাদের কাছে সঞ্চয় সমান। পূরণ-ভাগের পরিমাণ বেড়ে গেলে দৃশ্যপটে বদলে যায়
ভাজ্য-ভাজক। কমে দেনামুখী দিন।
আমার দেনার অংকই আমাকে দেউলিয়া করেছে। তাই কোনো
ছোঁয়াই পারেনি বদলে দিতে ভাগ্যরেখা। কোনো শাস্ত্রকথাই আর লাগেনি কাজে। নির্ধারিত সমুদ্র ক্রমশ সেরেছে দ্বৈত হরণপর্ব।
সীমাবদ্ধ শূন্যতা ভেঙে
আজ এ কথাই থাক। আবার দেখা হবে, এই প্রত্নমন্দির ঘিরে
আমরা দেবো ফুল। ভাসাবো নদীর নিবাসে আমাদের রত্নরেণু
যারা দেখেও দেখবে না, অথবা জেনেও জানবে না এই গোপন
নৃত্যগাঁথা….
সীমাবদ্ধ শূন্যতা ভেঙে তাদের জন্যই রেখে যাবো সবটুকু আলোর বারতা।
পাতাপ্রান্ত
কোনো কথা না বলেই রাত কাছে এলো। অথচ এখনও দুপুর-
কোনো সায় না দিয়েই পাতারা নড়ে উঠলো, আর
পাখিরা জানিয়ে দিল- তারা আর আমার সঙ্গে থাকছে না।
মানুষ একা হলে আশ্রয় নিতো পাতার ছায়ায়,
কথাটা ভুলে গিয়ে আমি ঘাটের দিকে পা বাড়ালাম।
ঘাট সরিয়ে নিল তার ছায়া…
পাখিদের নীরবতা আমাকে ভেদ করলো আবারও।
মুদ্রিত জীবনের অমুদ্রিত তৃষ্ণাগুচ্ছ
‘ইহা একটি মুদ্রিত ছোটকাগজ’- শব্দগুলো দেখার পরই আমি জেনে যাই
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এই গঞ্জে অনলাইন ভার্সনের কোনো অস্তিত্ব
ছিল না। ডিজিটাল ধ্বনি কন্ঠে নিয়ে কোনো কোকিল এখানে গাইতো না
গান। রিমিক্সড গীটার বাজিয়ে কেউ রুদ্ধ করে দিত না সানাইয়ের অপূর্ব
মিলনসন্ধ্যা। পরস্পরকে ভালোবেসে যারা হাত ধরাধরি করতো, তারা পরতো
না প্লাস্টিকের হাতমোজা। অথবা মাস্ক পরে আঁকতে চাইতো না নিভৃতের
চুম্বনদৃশ্য। অনেক কিছুই তখন মুদ্রিত ছিল। চাইলেই স্পর্শ করা যেতো
কাগজ ও কালির প্রকাশ। তাকালেই দেখা যেতো নিঃশ্বাসের নিঃশব্দ ওঠা-নামা।
আমরা যারা ঐ গঞ্জে পাহারাদারের দায়িত্বে ছিলাম, তারা বাঁশি বাজিয়েই
হটিয়ে দিতে পারতাম রাতের তস্কর। এখন এখানে বহুমুখি শক্তির মহড়া হয়।
শান্তি কায়েমে নিয়মিত রাজসিক ঢাক-ঢোল বাজে। মুদ্রিত জীবনের অমুদ্রিত
তৃষ্ণাগুচ্ছ বুকে নিয়ে অসহায় কবি ভাবে, তাহলে কী আমি আরও বেশি
একাকী হয়ে যাবো !
নারী দিবসের কবিতা
দিবসকে পাশে রেখে আমি খুঁজি তরল আকাশ
যে আকাশ চিরদিন ছায়া হয়ে থেকে যাবে পাশে,
পাখিদের গানে গানে, পুষ্পদের
স্বতন্ত্র বিন্যাসে
এ জীবন সম্মিলিত- এ জীবন
প্রেমের প্রকাশ।
তোমাকেই ধ্যানী জেনে, পাপড়িগুলো দেবো প্রিয়তমা
অক্ষরের অনুরাগে যে ঋতু অপেক্ষায় থাকে
বসন্তে সুবাস ছড়ায়, বর্ষায় ঢেউচিত্র আঁকে
জলাচলে এই প্রেম চিরদিন রেখে দিও জমা।
নির্মাণের আদিকলা, সৃষ্টির এই যে পেখম
সেজে আছে স্তরে স্তরে কল্যাণের
জন্মদ্যুতি হয়ে
মানুষই করেছে সব, শ্রম-ঘাম মাটিতে মিশিয়ে
নর-নারী, একে অন্যে মিশে মিশে
খুঁজেছে পরম।
ভূবনগ্রহিতা তুমি,তোমাকে নমস্য
মানি- নারী!
এই দেখ, রুয়ে যাচ্ছি জন্মাবধি
গোলাপের সারি।
#
নিউইয়র্ক √ ০৮ মার্চ ২০২৩
হে অতীত, হে মেঘের ভবিষ্যত
হে অতীত, হে মেঘের ভবিষ্যত
তুমি উড়ে যাবে বলো না—
ধীর ছায়ার মতো সাথে থাকো এবং
রাখো এই লোকালয়ে পদছাপ, কররেখা, তর্জনী
তালুতে জমে থাকা জলের মতো
টলটলে বারুদ, বিস্ফোরণ-
রাখো সবকিছু সাথে।
আমি আলো জ্বালাবো বলে যেদিন পথে নেমেছিলাম
সেদিন থেকেই তোমাকে বলছি—
আমার চোখ পাহারা দেয়া তোমার কাজ নয়।
তুমি বরং শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়াতে শিখো।
ঘটনার মৌলিকতা
মূলত স্মৃতিলেখাই মৌলিক মেঘের ছায়া। যেসব ঘটনা
আত্মজীবনীর সাক্ষী হয়ে থাকে, তার পাশাপাশি উড়ে
যায় শাদা শালিকের ঝাঁক। তারা বলে যায়- আমরাও
সাথী ছিলাম বিগত সকল মৃৎশিল্পের। ঝিনুকের
বুকে লুকিয়ে থাকা মুক্তোর মতন, উজ্জ্বল ছিল বেশ-
আমাদের সংসার।
লিখিত আখ্যান নিয়ে যে গোলাপ রৌদ্র সাজায়, মূলত
সেই পর্বই মানুষের মৌলিক প্রেম।
ছাদহীন, ছায়াহীন যে বাক্যজাল মোহ ছড়িয়ে যায়
তাকে ভালোবাসার নামই জীবনের রত্ন পরম্পরা।
গোপন গায়েবানা
আমার সংগ্রহে এখনও রয়েছে কিছু গোপন পাথর। গায়েবি
ডাক জানা পাখির পালক। আছে কিছু জলরশ্মি— যে জলে
আলোর মশাল হারিয়ে গিয়েছিল একদিন। অপরিচিত নৌকো
তার গলুই ডুবাতে ডুবাতে, রেখেছিল যাত্রীদের নাম লিখে
কাঠের তলানিতে। ফুটো হয়ে ভরে যাওয়া জল,হরণ করেছিল
একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম চুম্বনের দীর্ঘ বিবরণ।
গায়েবি এলেম শিখে যে পাহাড় আমার বুকের সমান্তরালে
দাঁড়াতে চেয়েছিল, তাকে আমি কখনও হিংসে করিনি।
বরং বলেছি, আমার দেহ যে মাটিতে গড়া,
সেই মাটি দিয়েই গঠিত পর্বতের চূড়ায় একদিন
হারিয়ে গিয়েছিল আমার প্রণয়ের শুভ্র বিকেলগুচ্ছ।
দলিলের প্রাচীন অক্ষর
সাকিন খিত্তা পরগনার পুরানগাঁও মৌজা। পড়তে পড়তে আরও খুঁজতে থাকি
দলিলের উপাত্ত। বিক্রেতা শ্রী নগেন্দ্র কুমার দাশ। ক্রেতা শ্রীযুক্ত ওমর শাহ।
নামের দাগ খতিয়ান দেখতে দেখতে আমিও ক্রমশ শ্রীযুক্ত হয়ে যাই।আসলে
কখনও সুশ্রী ছিলাম কী না-কিংবা আমার চারপাশে ভেসে বেড়াতো কী না
সলাজ বিলপদ্ম, সেই স্মৃতির পাতায় হাত রাখি।
অনেকগুলো অক্ষরের গায়ে লেগে আছে পিতামহের হাতের ছাপ, অনেক
দলিলে এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে তাঁর নাম ! ভিটেসূত্রের ভোরে দাঁড়িয়ে
দেখি সেই বাটোয়ারানামা, দ্বিখণ্ডিত ভূমির জরিপ। দু’ভাগ হয়ে গেছে,
সীমান্ত এসে হাজির হয়েছে প্রহরী হয়ে। কেবল নদীরাই অব্যাহত রেখেছে
তাদের উজান-ভাটির টান।