ফয়জুল মহী এর সকল পোস্ট

ফয়জুল মহী সম্পর্কে

হে পরমেশ্বর,এই নশ্বর নিখিল সৃষ্টিতে রেখো না ওই মানুষ যার ভিতর নরত্বের অভিনিবেশ নাই ।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা (৯)

31655

পরিবার, দায়বদ্ধতা ও অন্যান্য।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক রিক্সাচালক বাবা তার মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে–। ছিঃ কেমন বিশ্রী কথা ও কেমন বিশ্রী বাবা। নিজের মেয়ে তার লালসার স্বীকার। পেপার পত্রিকায় প্রায় দেখি এমন বাবাদের খবর, চাচাদের খবর, মামাদের খবর কিংবা ভাইদের খবর। কিন্তু কেনো এই বিকৃত পুরুষত্বের স্বীকার মেয়েরা। এখন হতে ভাবতে হবে সমাজ বিজ্ঞানীদের, না হয় এইটি মহামারী আকার ধারণ করবে এবং সমাজে ভদ্রতা নষ্ট হবে, সভ্যতা নষ্ট হবে, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে। একটা মানুষের জন্য ঘরটাই সবচেয়ে নিরাপদ অথচ সেই ঘরে বাবা, চাচা, ভাইরূপি জানোয়ারদের বাস। তাহলে একটা মেয়ে কাকে বিশ্বাস করবে, কোথায় নিরাপদ থাকবে। কথায় কথায় আমরা বলি পৃথিবীতে বহু খারাপ লোক আছে কিন্তু একটা খারাপ বাবাও নাই। কথাটা আজ মিথ্যায় পরিণত হতে চলেছে। তাই মেয়ের মা’দেরকে সচেতন হতে হবে, বিচক্ষণ হতে হবে। মেয়ের সাথে বন্ধুভাব রাখতে হবে যাতে কেউ কিছু বললে কিংবা করলে মাকে বলতে দ্বিধা না করে। প্রত্যেককে কয়েকটি বিষয় মেনে এবং খারাপ বিষয় পরিহার করে চলতে হবে।

ধর্মীয় ও পারিবারিক শিক্ষাঃ
সাধারণত পুরুষ হতে মেয়েরা বেশী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। তাই মেয়েকেও ধর্ম মেনে চলতে বাধ্য করে। কিন্তু অনেক বাবাই ধর্ম হতে অনেকটা দূরে থাকে কারণ পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য রোজগারে ব্যস্ত থাকার অজুহাত। তাই প্রত্যক স্ত্রীর উচিত উনার স্বামীকেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করা। যাতে স্বামীর মনে আল্লাহর ভয় থাকে, সমাজের ভয় থাকে। মেয়েদেরকে আবার শাসনের নামে মনে এমন ভয় দেওয়া যাবে না যাতে সে সহজ কথাও বলতে ভয় পায়। নিজেরা সত্য কথা বলতে হবে এবং সন্তানদের সত্য কথা বলতে বাধ্য করতে হবে। যৌথ পরিবার হলে সন্তানকে পরিবারের সবার সাথে সত্য-সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে বাধ্য করতে হবে। আশেপাশে কারো আচরণ কিংবা নজর কুরুচিকর হলে সন্তানদের তাদের হতে দূরে রাখতে হবে।

রাজনীতি ও মাদকঃ
আমার মনে হয় সমাজের এবং পরিবারের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণটা এখন রাজনীতি ও মাদক। ইয়াবা এখন গ্রাম মহল্লায় অতি সহজে পাওয়া যায় আর এর যোগান দাতা রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী। সন্তান দশম শ্রেণী কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠলে তার দিকে সতর্ক নজর দেওয়া দরকার। কারণ তখন তাদের কাছে সব কিছু রঙ্গীন রঙ্গীন মনে হয়। মোবাইল, বাইক, একা রুম এবং ক্ষমতা তাদের কাছে আকর্ষণীয় লাগে। বন্ধুদের সাথে ঘুরলে রাজনীতি করতে হয় আর রাজনীতি করলে মোবাইল ও বাইক লাগবেই। এইসব থাকলে রাজনীতি তাকে ক্ষমতাবান করবেই আর ক্ষমতা থাকলে টাকা আসবেই টাকা আসলে মাদক গ্রহণ করবেই। মেয়েদের মনে রাখা উচিত ছেলেদের বেশীর ভাগ প্রতারক হয়। সেটা ভালোবাসার, সেটা ক্ষমতার, সেটা কথার, সেটা অন্যান্যও বটে। তাই মুখে মিষ্টি অন্তরে অনিষ্ট অতএব সাবধান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমঃ
মাঝে মাঝে সন্তানদের মোবাইল চেক করে দেখা উচিত। কারণ মদ, জুয়া, বাটপারি, চিটিংবাজি সব এখন মোবাইলে হয়। একা রুমে কী করে দেখা উচিত, সন্দেহ হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ফেসবুক, টুইটার নেশাগ্রস্ত হলে দ্রুত পরিহার করতে হবে কারণ এইসব মাদক হতেও ভয়ংকর। কোনোমতেই মোবাইল গেইম খেলতে দেওয়া উচিত নয়। গেইমে আসক্ত হলে কঠিন শাসনের আওতায় আনতে হবে। টিকটক এবং লাইকি কোনোমতেই করতে দেওয়া যাবে না। শত শত নারী পাচার হয়েছে এবং সংসার হারা হয়েছে এই টিকটক এবং লাইকির কারণে। যেইসব নারী এইসবে অভ্যস্ত ওরা বিকারগ্রস্ত মানুষ। ভারতের ব্যাঙ্গালোরে এক নারীর উলঙ্গ ছবি ভাইরাল এই টিকটকের কারণে। বাংলাদেশ হতে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে শত শত নারী যৌন ব্যবসায় বাধ্য হয়েছে এই টিকটকের নেশায় পড়ে। সরকারকে অচিরে এইসব বন্ধ করা উচিত।

পরিশেষে বলবো সবাইর জীবন সুন্দর হোক। মেয়েরা নিরাপদ হোক ঘরে, হাটে, বাজারে ও শহরে। অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে সন্তান বখাটে হওয়া কাম্য নয়। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপে সন্তান জীবনহারা হোক কাম্য নয়। বৃদ্ধ মা-বাবা ঘর ছাড়া হোক কাম্য নয়। পরিবার হোক যৌথ আর যৌথ পরিবার হোক স্বর্গ। রাজনীতি হোক কল্যাণময়।

করোনায় আক্রান্ত প্রবাসী ছেলের মা’কে চিঠি

17217

মা আপনি জানেন আপনার ছেলে বিদেশ থাকে কিন্তু কোন দেশে থাকে নামটা ঠিক উচ্চারণ করে বলতেও পারেন না।

আমার জন্য ইউরোপের দেশ গ্রিসে আসা এতো সহজ ছিলো না। পাকিস্তান হতে ইরান এবং তুরস্ক হয়ে আমি গ্রীস পৌছি। তাই সেই সময় এক বছর আপনাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ ছিলো। ওই সময় আমি মরণকে খুব কাছ হতে দেখেছি কিন্তু ভয় পাইনি। অথচ এখন কেনো জানি মরণকে খুব ভয় পাচ্ছি। একটা অনুরোধ করি আমার ছেলেদের দেখে শুনে রাখবেন। তারা যেন পড়াশোনা শেষ করে দেশেই ছোটোখাটো চাকরী কিংবা ব্যবসা করে মরণকে হাতে নিয়ে সাগর, পাহাড় পর্বত, ও বন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে ইউরোপ স্বপ্ন না দেখে। এই স্বপ্নের কারণে লৌহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশী তরুণের সলিল সমাধি হচ্ছে।

তুরস্ক হতে গ্রীস আসতে যে কষ্ট সহ্য করেছি তা বললে মা’গো আপনি কষ্ট পাবেন বলে বলা হয় নাই কোনো দিন। গ্রীসের পাশে তুরস্কের সীমান্ত এলাকায় এক সবজি বাগানে কৃষি কাজ করে খেয়ে পরে কোনো রকম বেঁচে ছিলাম আমি। তাই অনেক দিন টাকা দিতে পারিনি আপনি বৃদ্ধ মানুষ হয়েও আমার স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ পোষন করেছেন। ধারকর্জ করে এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পেতে জীবন ধারণ করছেন। আপনারা হয়তো ভেবে ছিলেন আমি মরে গিয়েছি কিন্তু যখন আমার চিঠি পেলেন তখন আপনাদের ঈদের আনন্দ হলো। সেই সময়তো আর এত আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো না। খামার হতেও বের হতে পারতাম না পুলিশের কাছে ধরা পড়বো বলে কারণ আমি তুরস্কের অবৈধ লোক।

গ্রীস এসেই দুই/তিন দিন পরই একটা কৃষি কাজ পেলাম স্ট্রবেরি চাষের। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাইনি পুরাতন লোকের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে চলি আপনাদের দোয়া সাথে করে। এই কৃষি কাজ করে আপনাদের জন্য টাকা পাঠিয়েছি। আপনারাও মিতব্যয়ী হয়ে প্রয়োজনের বেশী টাকা খরচ করেন নাই। টাকা সঠিকভাবে খরচ করে বাড়ি-ঘর জমি-জমা করেছেন। এতে আমি অনন্ত মরার আগেও নিশ্চিত থাকতে পারছি আমার সন্তানেরা আমার মত কামলার কাজ করে জীবন চালাতে হবে না। কৃষি কাজ ছেড়ে রাজধানী এথেন্স এসেই একটা ওয়াইন (মদ) কারখানায় কাজ করেছি। এখানে প্রচুর আঙ্গুর এবং স্ট্রবেরির চাষ হয়, দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করে আবার আঙ্গুর ওয়াইন তৈরি করে। মদের কারখানায় কাজ করে প্রচুর টাকা রোজগার করি যার কারণে মাদ্রাসা, এতিম খানায় এবং মসজিদেও সাহায্য করতে পেরেছি। আর পারছি না মা লিখতে। ক্ষমা করবেন আমাকে।

ইতি, আপনার ছেলে।
কুটি।

(শেষ কিস্তি)

স্বচ্ছ লাল সব এক

23955

ভাবছি মুসলিম এই শব্দটাকে গঙ্গার জলে স্নান করাবো, আমি অতি নিরীহ মানব কারো সাত পাঁচে নাই
তাই গঙ্গা নদীর নাম শুনেছি কোথায় তা শুনি নাই।

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, ইহুদী এইসব শব্দকে স্নান করাবো
নীল নদে, কিন্তু নীল নদ যে বাংলা হতে বহু দূরে।

হয়তো তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আটকাবে আমাকে
তারপরও চেষ্টা করবো জমজম পানিতে শুদ্ধ করতে।
ইয়াজিদের তরবারি হাতে দাড়িয়ে আমি আজ
প্রতিটি শব্দকে হত্যা করে বলবো আলাদা করো
লাল রক্ত কোন শব্দটার।

আচ্ছা মানুষই যদি না থাকে এই সভ্যতা হবেটা কার।
জালিম হয়তো হেসে বলবে আমিই আমার।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা (6,7,8

20210

মিলিয়ে দেখবেন, কথা সত্য হয় কিনা!
@ নমুনা টপিকসঃ
# শ্রমিক হত্যা।
# গরিব ও লকডাউন।
# টোকাই মারুফ।
# ঝর্ণা, মুনিয়া, মিথিলা ও মিডিয়া।

যেখানে বিল গেটসের সন্তানেরা নানা ধরনের মানব সেবায় ব্যস্ত, সেখানে আমাদের বসুন্ধরার সন্তানেরা নানা ধরনের অপকর্ম আর খুন খারাবি নিয়ে ব্যস্ত।

যেখানে আম্বানীর সন্তানেরা নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিসে যায়, সেখানে আমাদের এক এমপি পুত্র রাস্তায় জ্যাম দেখে রাগে পাখির মত গুলি করে ২ জন মানুষকে হত্যা করে।

যেখানে ব্রিটিশ রাজপুত্ররা সেনাবাহিনীতে ট্রেনিং নেয় দেশ সেবার জন্য, সেখানে হাজির পুত্র ইরফান থাপ্পর দিয়ে সেনাসদস্যের দাঁত ফেলে দেয়। আবার অল্প দিনে জেল হতে বের হয়ে মাল্যভূষিত হয়।

যেখানে টাটা বিড়লার ব্যাংক থেকে এক রুপিও আত্মসাৎ করার নজির নাই, সেখানে সিকদার ব্রাদার্সরা ব্যাংক লোনের জন্য ব্যাংকের এমডিকে গুলি করতেও দ্বিধা করে না।

যেখানে ইস্পাহানি বাওয়ানী পরিবার তাদের নিজস্ব জায়গায় দেশে একটার পর একটা স্কুল হাসপাতাল নির্মাণ করে যাচ্ছে, সেখানে যমুনা গ্রুপ হাজার হাজার একর জমি দখল করে যাচ্ছে, দেখার কেউ নাই।

যেখানে রতন টাটা বলে করোনায় দেশের প্রয়োজনে সে তাঁর সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিতেও রাজি, সেখানে আমাদের শিল্পপতিরা মদ ও রক্ষিতা নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে মত্ত।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শাসন-শোষণ করার জন্য উঠে আসছে এক নিষ্ঠুর, ভয়ংকর, পিশাচ টাইপের ধনী প্রজন্ম। ওদের বাবারা তো আমাদের অন্তত বাঁচিয়ে রেখেছে, কিন্তু তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের মানুষগুলা আমাদের সন্তানদের জাস্ট পিষে মারবে। মিলিয়ে দেখবেন, কথা সত্য হয় কিনা।

নোয়াখালি নিয়ে চুপ, হেফাজতকে টাইট এবং বাঁশ, এই হলো বাংলাদেশ।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৭)

টুকরো টুকরো স্মৃতিতে অতীত ও কয়েকজন স্যারঃ
কেমন আছেন হাজ্বি সাহেব। এই কথাটা বলেই আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরতেন লেমুয়া বাজারে। আমি সালাম দিয়ে পাশে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতাম আর দেখতাম উনাদের কথায় একে অপরকে শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং মার্জিত ভাব। উনি আমার বাবার সিনিয়র তবে লেমুয়া স্কুলের ছাত্র দুইজনে। মীর স্যার করৈয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যার ব্যক্তিত্ব আগুনের মত, এখনকার এই ছাইপাঁশ মাতব্বরদের জন্য উনার ব্যক্তিত্বটাই যথেষ্ট ছিলো। স্কুল বন্ধ হলেই আমি বাড়ি চলে যেতাম আর আমার বাবা প্রতি শুক্রবার চিটাং হতে আসতেন এবং স্যারও প্রায় শুক্রবার বাড়ি যেতেন। এই কারণে প্রায় সময় দেখা হতো বাজারে, কিন্তু স্যার যখন বাবাকে হাজ্বি সাহেব ডাকতেন তখন মনে খটকা লাগতো। উনি হজ্ব করেন নাই আর কেউ এটা ডাকেও না, তাহলে মীর স্যার কেনো ডাকে। তবে তারচেয়েও ভয়ে থাকতাম আমার পড়াশোনার কথা জিজ্ঞাসা করবে, তাই চুপ থাকা ।

মীর স্যারের সততা, প্রজ্ঞা, মেধা, মহানুভবতা এবং দক্ষতা আমার চেয়ে জ্ঞানী গুণী লোকেরা বলবে। উনার বিচার বিশ্লেষণ করতে গেলে এই মহান লোকের মানবিকতার সাগরে ডুবতে হবে আমাকে। শুধু এইটুকু বলবো মীর স্যার নিজেই একটা করৈয়া স্কুল। আমি, আমার স্ত্রী এবং বাবা ফেনী ট্রাংক রোড়ে বড় মসজিদের সামনে দাড়ানো, স্যার আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ হতে বের হলেন আমি দেখেই সালাম করতে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কারণ অনেক বছর পরে দেখা। সেই আগের মত বাবাকে হাজ্বি সাহেব ডাকতেছেন। সেই আগের মত শ্রদ্ধা ভালোবাসা ।

আমি স্যারকে কোথাও বসতে বললাম উনি বসলো না। আমি স্কুলের কথা জানতে চাইলাম, উনার কথা জানতে চাইলাম, বাবাকে বলেন হজ্ব করতে যেতে উনি যাচ্ছে না । স্কুলের কথা বলায় প্রদীপটা টপ করে নিভে গেলো। আমি কথা পাল্টাতে চাইলাম তারপরও উনি বলেন সাজেদুল্ল্যা স্যার দায়িত্বে আছেন। তবে স্বাধীনতা নাই। বুঝতে আর বাকি রইলো না প্রিয় স্কুল এখন লংষ্কা আর শাসন করে রাবণ। তবে রাবণ সীতার রূপে মুগ্ধ হয়ে অপহরণ করলেও ইজ্জতে হাত দেয় নাই। সব আমলে রাজনীতিক রাবণেরা মসজিদ, মন্দির, স্কুল ,কলেজ মাদ্রাসার ইজ্জত নিলামে তুলে আর এতে কিছু শিক্ষক নামের মানুষ সহায়তা করে।

বাড়ি গিয়ে ধরলাম বাবাকে মীর স্যার আপনাকে হাজ্বি কেনো ডাকে। উনি ফিরে গেলেন দেশ স্বাধীনের আগে স্কুল জীবনে। স্মৃতি মানুষকে কাতর করে, আবেগী করে। লেমুয়া স্কুলে পড়ার সময় নাটক করেছেন আর সেই নাটকে অভিনয়ে চরিত্রের নাম হাজ্বি ছিলো। তাই স্যার আমার বাবার সিনিয়র হলেও নাম ধরে ডাকে না।

টি ইসলাম হতে বাসে উঠে দেখি ভিতরে গোপাল স্যার বসা। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। ডেকে পাশে বসতে বললেন। আমি নানার বাড়ি হতে ফেনী যাচ্ছি,তখন ফেনী কলেজের ছাত্র আমি। স্যার আমার পুরো খবর নিবে, উপদেশ দিবে ভালো কেমন করে লাগবে! তবে মনে মনে খুশি আমি ভাড়া স্যার দিবে বলে। কথায় কথায় বললেন এক বেয়াদব ছাত্র দেলোয়ার স্যারের সাইকেল ভেঙ্গে ফেলেছে। দেলোয়ার স্যার খুব অপমানবোধ করেছে। এমন হলে শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে হবে। আমি বললাম আপনার সাথে কেউ এমন করবে না, স্কুলের সব ছেলে নিয়ে গিয়ে ওই ছেলেকে ধরে নিয়ে আসা উচিত, তাকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। স্যার হাসলেন কিছু বললেন না। বেয়াদব আগেও ছিলো এখনো আছে তবে পার্থক্য এখন বেয়াদবি রাজনৈতিককরণ করা হয়েছে যার কারণে বেয়াদব কালো চমশা পরে বাপও চিনে না।

তুমি এত আগে আগে হাটছো কেনো। আমি তাকে বলি।
তুমি আরো পিছনে থাকো তাই ভালো, মেয়েটা বলে।
আমি দশ/বার হাত পিছনে আর কত পিছনে থাকবো।
কারণ এই সময় নেপাল স্যার স্কুল হতে বাসায় যায়। নেপাল স্যার তখন ছাগলনাইয়া পাইলট হাই স্কুলের শিক্ষিক। স্যারের বাসা মেয়েটার বাসার পাশে আবার স্যার আমার বাবার সহপাঠী এবং এক গ্রামের আমরা । ভালো করে চিনে দুইজনকে এবং একসাথে দেখলে বেকায়দায় পড়তে হবে। একদিন ঠিক দুইজনকে রাস্তায় পেয়ে গেলো স্যার। দুরে দুরে দেখে কিছু বললো না শুধু বললো কেনো এসেছি ছাগলনাইয়া।

আমি বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়ে দেখি স্যার প্রধান শিক্ষক। দাওয়াত দিলাম পরিবারের সবাইকে। সেই পুরাতন রাস্তায় হাটতে ৯২/৯৪ সালের স্মৃতি এসে পা জড়িয়ে যাচ্ছে। জানি না মেয়েটা তার স্বামীর হাত ধরে এখন হাটে কিনা। এই কয়েক বছর আগেও নেপাল স্যারের সাথে দেখা করতে গিয়েছি উনি বাঁশপাড়া হাসপাতালের (নাম মনে নেই) দায়িত্বে আছেন । আমি সাথে নিয়ে চা পান করতে চাইলাম। হোটেলে গেলেন কিন্তু কিছুই খেলেন না কারণ উনার ডায়াবেটিস, আমার বিল দিয়ে দিলেন। একটা কার্ড দিয়ে বললেন তোর বাবাকে ফোন দিতে বলিস। এখন আমারও ডায়াবেটিস। মীর স্যার শেষ বয়সে, গোপাল স্যার নেই, আমার বাবা শেষ বয়সে। এইসব স্যারের কথা ভুলা যাবে না জীবনের শেষ অবদি। শিক্ষালয়ও আজ শেষ বয়সে ছাত্র, শিক্ষক এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে। দেখে হৃদয় রক্তক্ষরণ হয় তবে কিছু বলতে মানা কারণ আমি আপনি এবং আমরা দয়াহীন, বিবেকহীন ।

মুহুরীগঞ্জ হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোশারফ স্যার আমার নানা হয় বলে মজা করেই কথা বলতেন। মুহুরীগঞ্জ ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল কলেজে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়ে ছিলো উনাকে। আমার স্ত্রী দুই বছর কলেজের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু কলেজ টিকে নাই কারণ স্থানীয় রাজনীতি। স্যারই কলেজ বন্ধ করে দিতে বলেন। কতো কষ্ট, কতো টাকা সব জলে গেলো। অতীত জীবনে স্যারের উপদেশ এই মেয়ের চেয়েও আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো ভুলতে পারিনি। ভুলতে পারবো না মুহুরীগঞ্জ কলেজে আমার স্ত্রীকে অনেক সহযোগিতা। কিন্তু এই সমাজে ভালো কাজ মূল্যহীন।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৮)

ফেলে আসা দিনের কিছু গল্প কিছু স্মৃতি।
বছরে একবার খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্কুলের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। নবম শ্রেণীতে উঠে নাটকে অংশ নিয়ে নিজেকে অভিনয়ের পাঠশালায় হাজির করি। খেলাধুলায় বরাবর আমার অনীহা তাই কোন দিন তার ধারেকাছে যাওয়া হয়নি।এই জন্যই মনে হয় নাটকের পিছনেই পড়ে ছিলাম। ফেনী থিয়াটার এবং লেমুয়ার নাটক এখনো আমাকে স্বপ্নে অভিনেতা করে তুলে। আগে যাত্রা, পালাগান, নাটক শীতকালে মানুষকে বিনোদন দিতো সাথে সাথে মানুষের মনকে নরম করতো, প্রশস্ত করতো ও মানবিক করতো। এখন রাজনীতি রাজনীতি নাটকে মানুষ মনকে শক্ত, লোভী ও লিপ্সু করার দৌড়ে যুবসমাজকে ব্যবহারে লিপ্ত। আর যুবসমাজ বাইক, মোবাইল এবং ক্ষমতার কাছে নিজেকে সপে দিয়ে পুতুল হয়ে যেমন খুশি তেমন সাজে ব্যস্ত।

নাটকের রিহার্সাল চলার সময় কখনো কখনো এক মানবীর দুইটা চোখ জানালার ওপাশ হতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো। এতে আমার বুকে কাঁপন হতো আমি বুকে হাত দিয়ে হৃদয় খুজতে চেষ্টা করতাম। সাদা সাদা চোখের মিষ্টি মিষ্টি নজরে আমার হৃদয় বাতসে উঠতো আমি তখন মুকুটহীন সম্রাট হয়ে নাটকের ডায়লগ বলা শুরু করতাম। “বাংলা বিহার উড়িয়্যার শেষ অধিপতি নবাব———”। সেই দুই চোখের যাদুর টানে আজও আমি শুনি “আকাশের ওই মিটিমটি তারার সাথে কইবো কথা নাইবা তুমি এলে।” আবার কখনো কখনো শুনি “ ইন আখোকি মাস্তি মে” তারপর ইউটিউবে খুজি মোগল-লে আজম কিংবা পাকিজার নরম নরম সুরের ঠান্ডা ঠান্ডা গান। লাল লাল কৃষ্ণচূড়ার ঝরে যাওয়া কলির জন্য আমি গাছ তলায় নীরব পথিক। লোকে বলে ঝরে যাওয়া ফুলে মালা হয় না অথচ ঝরে যাওয়া ফুলেই সুঘ্রাণ বেশী। যদি কখনো পেয়ে যাই তাহলে ঘন কালো রেশমী চুলের খোঁপায় গুজে দিবো বকুল ফুলটা।

দেয়ালে দেয়ালে, সিড়িঁতে, উপরে-নিচে সব জায়গায় একটা স্লোগান “নাটক চাই নাটক চাই”। কিন্তু কারা লিখছে আর তারা কিভাবে জানলো এবার নাটক হবে না বুঝতে পারলাম না অথচ আমি তখন দশম শ্রেণীতে। রোজার পর ২৬শে মার্চ এখনো অনেক দেরী স্বাধীনতা দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে খেলাধূলার পুরষ্কার বিতরণ হবে, নাটক হবে, যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার স্যারেরা চুপ থাকায় সরব ছাত্র সমাজ, নাটক চাই নিয়ে। হাজ্বি স্যার, হুজুর স্যার নাটক করা নিয়ে কখনো প্রকাশ্য বিরোধিতা করতো না। খায়ের মোল্লা স্যার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে বলতেন না। তবে সাজেদুল্লা স্যার খুবই উদ্যমী ছিলেন কারণ উনি খুবই সাংস্কৃতিক মনের মানুষ তাই প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের সাথে মিলে সমস্ত সাংস্কৃতিক কাজ সমাধানে সহযোগিতা করতেন।

নাটক হবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষকমণ্ডলী। শুনে সমস্ত স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভিতর আনন্দ আনন্দ ভাব। ৯০ সালে ২৬ শে মার্চ উপলক্ষে নাটক হবে। একদিন কয়েক ঘন্টা হওয়ার পরে সব ছাত্রছাত্রীর ডাক পড়লো উত্তর পাশে দালানের দ্বিতীয় তলায়। প্রাইমারী স্কুলের শাহ আলাম স্যার যথারীতি পরিচালনার দায়িত্বে। নাটকের নাম “দুই ভাই”। সব স্যার মঞ্চে বসেছেন অভিনয়ের জন্য পার্থী নির্বাচন করবে তাই। আমি নিলাম গ্রাম্য মাতব্বের বখাটে ছেলের (তারা) অভিনয়। পার্থী নির্বাচন শেষ কিন্তু মাতব্বর কে হবেন তা ঠিক হলো না। তখন স্কুলে নতুন একজন স্যার সদ্য যোগ দিয়েছেন, রফিক আহম্মদ সেলিম। পরে সিদ্ধান্ত হলো উনিই হবেন গ্রাম মাতব্বর। শুরু হলো রিয়ার্সেল শাহ আলাম স্যারকে কখনো ভোলা স্যার কখনো সাজেদুল্লা স্যার কখনো শ্রীধাম স্যার সহযোগিতা করেন। মাতব্বরের অভিনয় দাপটে আমি অসহায়, ডায়লগে আব্বাজান বলতে হয় অনেক বার। সিংহনগরের সেলিম স্যার এখনো আমাকে ছেলের মত আদর করেন। কিন্ত তখন প্রথম প্রথম আব্বাজান বলতে খুব লজ্জা লাগতো।

আগের নাটকের রিহার্সালের সময় সাদা চোখের পরির যে নজর লেগে ছিলো তা যেন আরো প্রকট হয়ে আমাকে আড়ষ্ট করেছে। আমি এখন শমশের গাজীর রাজ্য দখলে ব্যাকুল তাই অভিনয় আমার কাছে মৃত কিৎসা। সবার সাহসী এবং হৃদয়গ্রাহী অভিনয়তে আমি পদ্মফুলের শিশির মাত্র। গ্রাম্য মাতব্বরের বাচনভঙ্গি, অভিনয়, শব্দ উচ্চারণে আমি তাঁর ছেলে মিলাতে পারি না। অথচ ওই মানবীর জন্য ঘোড়ায় চড়ে চাঁদের ওপারে যেতে মরিয়া আমি।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৯)

পরিবার, দায়বদ্ধতা ও অন্যান্য।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক রিক্সাচালক বাবা তার মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে–। ছিঃ কেমন বিশ্রী কথা ও কেমন বিশ্রী বাবা। নিজের মেয়ে তার লালসার স্বীকার। পেপার পত্রিকায় প্রায় দেখি এমন বাবাদের খবর, চাচাদের খবর, মামাদের খবর কিংবা ভাইদের খবর। কিন্তু কেনো এই বিকৃত পুরুষত্বের স্বীকার মেয়েরা। এখন হতে ভাবতে হবে সমাজ বিজ্ঞানীদের, না হয় এইটি মহামারী আকার ধারণ করবে এবং সমাজে ভদ্রতা নষ্ট হবে, সভ্যতা নষ্ট হবে, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে। একটা মানুষের জন্য ঘরটাই সবচেয়ে নিরাপদ অথচ সেই ঘরে বাবা, চাচা, ভাইরূপি জানোয়ারদের বাস। তাহলে একটা মেয়ে কাকে বিশ্বাস করবে, কোথায় নিরাপদ থাকবে। কথায় কথায় আমরা বলি পৃথিবীতে বহু খারাপ লোক আছে কিন্তু একটা খারাপ বাবাও নাই। কথাটা আজ মিথ্যায় পরিণত হতে চলেছে। তাই মেয়ের মা’দেরকে সচেতন হতে হবে, বিচক্ষণ হতে হবে। মেয়ের সাথে বন্ধুভাব রাখতে হবে যাতে কেউ কিছু বললে কিংবা করলে মাকে বলতে দ্বিধা না করে। প্রত্যেককে কয়েকটি বিষয় মেনে এবং খারাপ বিষয় পরিহার করে চলতে হবে ।

ধর্মীয় ও পারিবারিক শিক্ষাঃ
সাধারণত পুরুষ হতে মেয়েরা বেশী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। তাই মেয়েকেও ধর্ম মেনে চলতে বাধ্য করে। কিন্তু অনেক বাবাই ধর্ম হতে অনেকটা দুরে থাকে কারণ পরিবারের ভরণপোষণের জন্য রোজগারে ব্যস্ত থাকার অজুহাত। তাই প্রত্যক স্ত্রীর উচিত উনার স্বামীকেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করা। যাতে স্বামীর মনে আল্লাহর ভয় থাকে, সামাজের ভয় থাকে। মেয়েদেরকে আবার শাসনের নামে মনে এমন ভয় দেওয়া যাবে না যাতে সে সহজ কথাও বলতে ভয় পায়। নিজেরা সত্য কথা বলতে হবে এবং সন্তানদের সত্য কথা বলতে বাধ্য করতে হবে। যৌথ পরিবার হলে সন্তানকে পরিবারের সবার সাথে সত্য-সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে বাধ্য করতে হবে। আশেপাশে কারো আচরণ কিংবা নজর কুরুচিকর হলে সন্তানদের তাদের হতে দুরে রাখতে হবে।

রাজনীতি ও মাদকঃ
আমার মনে হয় সমাজের এবং পরিবারের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণটা এখন রাজনীতি ও মাদক। ইয়াবা এখন গ্রাম মহল্লায় অতি সহজে পাওয়া যায় আর এর যোগান দাতা রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী। সন্তান দশম শ্রেণী কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠলে তার দিকে সতর্ক নজর দেওয়া দরকার। কারণ তখন তাদের কাছে সব কিছু রঙ্গীন রঙ্গীন মনে হয়। মোবাইল, বাইক, একা রুম এবং ক্ষমতা তাদের কাছে আকর্ষণীয় লাগে। বন্ধুদের সাথে ঘুরলে রাজনীতি করতে হয় আর রাজনীতি করলে মোবাইল ও বাইক লাগবেই। এইসব থাকলে রাজনীতি তাকে ক্ষমতাবান করবেই আর ক্ষমতা থাকলে টাকা আসবেই টাকা আসলে মাদক গ্রহণ করবেই। মেয়েদের মনে রাখা উচিত ছেলেদের বেশীর ভাগ প্রতারক হয়। সেটা ভালোবাসার, সেটা ক্ষমতার, সেটা কথার, সেটা অন্যান্যও বটে। তাই মুখে মিষ্টি অন্তরে অনিষ্ট অতএব সাবধান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমঃ
মাঝে মাঝেে সন্তানদের মোবাইল চেক করে দেখা উচিত। কারণ মদ, জুয়া, বাটপারি, চিটিংবাজি সব এখন মোবাইলে হয়। একা রুমে কী করে দেখা উচিত, সন্দেহ হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ফেসবুক, টুইটার নেশাগ্রস্ত হলে দ্রুত পরিহার করতে হবে কারণ এইসব মাদক হতেও ভয়ংকর। কোনোমতেই মোবাইল গেইম খেলতে দেওয়া উচিত নয়। গেইমে আসক্ত হলে কঠিন শাসনের আওতায় আনতে হবে। টিকটক এবং লাইকি কোনোমতেই করতে দেওয়া যাবে না। শত শত নারী পাচার হয়েছে এবং সংসার হারা হয়েছে এই টিকটক এবং লাইকির কারণে। যেইসব নারী এইসবে অভ্যস্ত ওরা বিকারগ্রস্ত মানুষ। ভারতের ব্যাঙ্গালরে এক নারীর উলঙ্গ ছবি ভাইরাল এই টিকটকের কারণে। বাংলাদেশ হতে ভারত ও মধ্যপাচ্যে শত শত নারী যৌন ব্যবসায় বাধ্য হয়েছে এই টিকটকের নেশায় পড়ে। সরকারকে অচিরে এইসব বন্ধ করা উচিত।

পরিশেষে বলবো সবাইর জীবন সুন্দর হোক। মেয়েরা নিরাপদ হোক ঘরে, হাটে, বাজারে ও শহরে। অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে সন্তান বখাটে হওয়া কাম্য নয়। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপে সন্তান জীবনহারা হোক কাম্য নয়। বৃদ্ধ মা-বাবা ঘর ছাড়া হোক কাম্য নয়। পরিবার হোক যৌথ আর যৌথ পরিবার হোক স্বর্গ। রাজনীতি হোক কল্যাণময়।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা (1,2,3,4,5)

20210

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (১)

(১) আমার আমিঃ
আলি নেওয়াজ ভূঁইয়া আমার দাদার নাম। সামহোয়্যারইন বগ্লে আমার নিক নেইম নেওয়াজ আলি। বাড়ির গেইটে সৌজন্য দাদার নাম, জাষ্ট দাদাকে মনে রাখা।
মুলকুতের রহমান দাদা আমার দাদার চাচাত ভাই। ভূঁইয়া বংশ নিয়ে মুলকুত দাদার গৌরবের কোন শেষ ছিলো না। পুকুর ঘাটে বসে বিকালে দক্ষিণা বাতাস গায়ে লাগিয়ে দাদাদের সাথে কত মজা করেছি কিশোর কালে। মাঝে মাঝে মুলকুত দাদাকে টিট করতাম দুর মিয়া তোমরা কচুর ভূঁইয়া। এমনি শুরু হতো অতীত ইতিহাস বলা। পাশের বাড়ি হিন্দুরাও জমিদার ছিলো, আমাদের সামনে দিয়ে মানুষ হাটতে সালাম করতো আর তুই বলছিস কচুর ভূঁইয়া। ——সবাই মিলে প্রাণ খুলে হাসতাম।
মুলকুত দাদা বলতো আমরা বৃটিশ আমলের ভূঁইয়া। আসলে ভূঁইয়ারা বৃটিশদের অনুগত ছিলো সেই সুযোগে এলাকায় খাজনা ট্যাক্স আদায় করতো আর গরিবদের শোষণ করতো। এখন গরিবদের শোষণ করে আধুনিক নিয়মে আধুনিক পন্থায় নিচ হতে উঠে আসা কিংবা আজীবন উপরে থাকা বড় লোকেরা।

মাজম আলি ভূঁইয়া বাড়ি নানার নিবাস। আবার নানা বিয়ে করেছেন ভূঁইয়ার মেয়ে সেই ধারা আমি বজায় রেখে গিয়ে পড়লাম আনূ ভূঁইয়া বাড়ির মেয়ে বিয়ে করতে, মুহুরী নদীর এপার ওপার নানার বাড়ি আর শুশুর বাড়ি। আমার নামের সাথে এই পদবি লিখতে ইচ্ছে করে না। কোথায়ও আমি লিখি না কারণ সবাই আমরা মানুষ, কর্মই তার পরিচয়।

(২) ফেসবুক, করোনা, বই উপহারঃ
আমি ছোটকাল হতে লিখি এইটা একটা অনিয়মিত নেশা। তবে ফেসবুক আসার পর এইটা নিয়মিত নেশা হয়ে পড়েছে। মনে হয় যেন মনের বড় একটা খোরাক এই সাহিত্য চর্চা। যশ খ্যাতি কোনো কিছুর জন্যই এই নেশা নয়। আত্মীয়-স্বজন এলাকার কিছু লোক বাদ দিলে সাহিত্যিকমনা লোকই এড আমার সাথে। সালু আলমগীর, মাহাবুর রহমান, তপন কুমার বড়ুয়া আরো কয়েকজন লেখকের নাম মনে পড়ছে না মারা গিয়েছেন। খুব খুব মনে পড়ে উনাদের কারণ বন্ধু কম হওয়ায় সবার লেখা পড়ার চেষ্টা করি এতে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ভালোবাসার।

“মনাব্বর হোসেন” ভাই একজন লেখক ও রাজনীতিক নেতা। উনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কী একটা পদে আছেন। কয়েক বছর আগে হঠাৎ করে বলে ঠিকানা দিন বই পাঠাবো। আমি ঠিকানা দিয়ে বলি বিকাশ নাম্বার দিন। বই উনি ফেনীতে পাঠালেন কিন্তু টাকা নিলেন না। রুদ্র আমিন “আবিরের লাল জামা” দিলেন টাকা নিলেন না। প্রতি বছর আমি মেলা হতে বই কিনি আর তা ফেসবুক বন্ধুদের এবং নতুন লেখকদের। আমার সাথে নামি দামি লেখক এড নাই তাদের বই মেলা হতে কেনাও হয় না তেমন।

গত বছর “জোসেফ জাহাঙ্গীর” এবং “ফারুক এম জাহাঙ্গীর” ভাই বই উপহার দিতে চেয়ে ছিলো আমি নিতে রাজি হই নাই, বলেছি কিনে নিবো কিন্তু দুর্ভাগ্য কিনতে পারি নাই। বেকারত্ব ও করোনার চাপে পড়ে এইবার আর বই কিনতে পারছি না। কিন্ত গতকাল “ইসলাম তরিক” ম্যাসেজ দিয়ে বলে ভাই ঠিকানা দিন বই পাঠাবো। ঠিকানা দিয়ে বলি বিকাশ নাম্বার দিন আপনার, মনাব্বার ভাইয়ের মত সেই একই কথা টাকা লাগবে না এই বই আপনার জন্য উপহার। আমি মনে মনে বলে উঠি ভালোবাসা ভাই ভালোবাসা । উনাদের অনেককে জীবনে দেখি নাই এবং কখনো দেখা হবে কিনা জানি না। আমরা কারণে অকারণে অযথা অন্যকে আনফ্রেন্ড করি, বক্ল করি ভুল করি । আমার অনেক পুরাতন বন্ধু এখন এড নাই বিভিন্ন কারণে হারিয়ে গিয়েছে তাদের বলবো ভালোবাসি হ্যাঁ ভালোবাসি , সাহিত্যপ্রেমিক ভালোবাসি তোমাকেই।

টাকা খরচ করে বই বাহির করতে হয়। এইবার করোনার কারণে পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। খবর বের হয়েছে প্রকাশকগণ বড় রকমের লোকসান দিবে এইবার। লেখকগণও ব্যক্তিগতভাবে লোকসান গুণবে সন্দেহ নাই। তাই বলবো যারা সাহিত্য ভালোবাসেন তাঁরা যেন একটা হলেও বই কিনেন। বই কিনার ইচ্ছা করলে মেলার দরকার হবে না যে কোন মাধ্যমে বই কিনতে পারবেন। লক্ষ লক্ষ লোক ফেসবুকে লেখালেখি করে শুধু তাঁরা একে অপরের বই কিনলে সাহিত্য একটা শিল্পে দাড়িয়ে যাবে। বেশী বেশী পড়লে লেখার মান অনেক উচ্চতায় চলে যাবে। দুইটা পাঠাগারে বই দেওয়ার কথা ছিলো, করোনা পৃথিবীকে তছনছ করায় আমিও লণ্ডভণ্ড। সময়মতো বই দিতে পারছি না বলে ক্ষমা চাই তবে আমি বেঁচে থাকলে অবশ্যই বই দিবো এবং নিজেও পাঠাগার করতে চেষ্টা করবো আপনারা পাশে থাকবেন।

মহামারীর ভিতর যতটুকু সম্ভব নিরাপদ থাকার চেষ্টা করুণ। আশেপাশে লোকজনের খোজখবর রাখতে চেষ্টা করুণ, নিজে না পারলেও সরকারি বেসরকারী যে কোনো সাহায্য পেতে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করুণ।
নিজে টিকা নিন, অন্যকেও নিতে বলুন।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (2)

গোপাল স্যারঃ
একজন শিক্ষক, একটা আদর্শ, উনি পূর্ব দিগন্তে উদিত হওয়া সুর্য। এই সুর্য মেঘে ডাকা সকালের সুর্য নয়। এই সুর্যের আলো এতটাই দ্বীপ্ত প্রখর যে ধুলোতে হারিয়ে যাওয়া সুই খুজে নেওয়ার মত। শান্ত, সৎ এবং জ্ঞানী একজন শিক্ষক। মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে যেইসব উপাধান থাকা দরকার তার সবটি শতকরা একশ ভাগ বিদ্যমান ছিলো উনার ভিতর। আজকাল কোনো শিক্ষকের নৈতিক হীনতা কিংবা লোভী খবর যখন পড়ি তখন মনে পড়ে বাবার মত শতভাগ নিরাপদ আদর্শবান এই মহান গোপাল স্যারের কথা।

তখন আমি দশ শ্রেণীতে পড়ি। এক অলস দুপুরে টিফিন পিরিয়ডে শ্রেণী কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। গোপাল স্যার ডাকলেন আমাকে, বললেন মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছিস কেনো? আমি চুপ করে থাকলাম। তারপর অত্যন্ত শান্ত স্বরে বললেন নামাজ কেনো পড়িস না? আমাদের স্কুলের বর্ষীয়ান শিক্ষক হাজ্বি স্যার এবং হুজুর স্যার অনেক ছাত্র নিয়ে তখন স্কুল মসজিদে নামাজরত। উনি বলেন আমি হিন্দু, আমার ধর্মে নামাজ নাই; তুই মুসলিম তোর ধর্মে নামাজ আছে অথচ নামাজের সময় আমরা দুইজনে মসজিদের বাহিরে। তুই মুসলিম হয়ে নামাজ না পড়লে তোর আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়!

গোপাল স্যার ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ, নিজ ধর্মের রীতিনীতি মেনে চলতেন। আমি তখন লজ্জা পেলেও ধর্মের রীতিনীতি মেনে চলতাম না। এখন বয়স শেষে ধর্মকে আকড়ে ধরতে ছুটছি আর মনে হয় আমার মত এমন বহু মুসলিম আছে। শেষ বয়সে বাংলাদেশের মানুষ হজ্ব করতে ছুটে যান শারীরিক কারণে সঠিকভাবে সুসম্পন্ন করতে বেগ পেতে হয়। তাই সময় থাকতে সময়ের মূল্য দিতে হয়।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা । (৩)

গোলাপ হাতে মানস প্রতিমাঃ
সিঁড়ির নিচে দশম শ্রেণীর ক্লাস রুম, শিক্ষক রুম, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক রুম তারপরে ছাত্রীদের বিশ্রামাগার। দক্ষিণমুখী দালানের পূর্বপ্রান্তে শেষ কামরায় ক্লাস আর পশ্চিমপ্রান্তে সব শেষ কামরা ছাত্রী বিশ্রামাগার। বিশ্রামাগারের দিকে আমার চঞ্চল মন লাজুক লাজুক চোখের এক বালিকার খোঁজে। সমস্যা হলো সেই বালিকার কোনো বিশেষত্ব নেই, নেই ঠোঁটে কৃষ্ণচূড়ার মত টকটক লাল লিপস্টিক, নেই চোখে কালো কাজল। কিন্তু মুখটা তার ইতিহাসের সেরা কবিতা তাই আমার চোখ সেই অকৃত্রিম মায়াবী মুখ খোঁজ করে। মনে হয় পাবো তারে এখনি পাবো। আর তখন দৌড়ে গিয়ে একটা রক্তজবা তার খোপায় দিবো আলতো করে।

নব্বই দশকের দিকে এরশাদ সরকারের একজন মন্ত্রী আসবেন স্কুলে তাই সাজ সাজ রব স্কুলময়। বিভিন্ন স্কুল হতে যেমন ছাত্র ছাত্রী আনা হয়েছে তেমনি মন্ত্রীকে দেখার জন্য স্থানীয় লোকজন এসে স্কুল মাঠ লোকারণ্য। পূর্বমুখ করা মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান বাজছে। এইদিকে বার বার মঞ্চ হতে ঘোষণা আসছে “অল্প কিছুক্ষণের” মধ্যে মন্ত্রী মহোদয় এসে হাজির হবেন আমাদের মাঝে। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার আরো পরে ছাত্রীদের হাতে ফুল দিয়ে রাস্তার দু’ধারে দাঁড় করিয়ে দিল অনুষ্ঠানের দায়িত্বপাপ্ত কর্তা ব্যক্তিগণ।

ফুল হাতে লাইনে দাঁড়ানো একজন অপ্সরী আমার হৃদয় মানসে আঁকা ছবির সাথে মিলে যায়। দ্বিধা সংকোচ ঝেড়ে ফেলে আমি তাকে বার বার পলক করতে থাকি। সাহিত্য বিশারদগণ বলেন প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে একটা অদৃশ্য মানবীর ছবি আঁকা থাকে। যখন মানুষ কাউকে দেখে আকৃষ্ট হয় তখন হৃদয়ে আঁকা ছবির সাথে বার বার ওই মানবীকে মিলিয়ে দেখে। যখন মনের ছবি আর জীবন্ত ছবি মিলে যায় তখন মানুষ তাকে ভালোবাসতে থাকে। আর এই মিলে যাওয়া হলো হৃদয়ের মানস প্রতিমা। দেশে আবার বহু গণতন্ত্রের মানস কন্যা আছে যাদের কাজ শাসন করা সেই রকম কিছু মনে করলে ভুল হবে। মাথায় তার গোলাপী জর্জেট ওড়না, গায়ে কালো আর গোলাপীর মিশ্রিত জামা। চোখে এক রাজ্যের লজ্জা, হাতে মন্ত্রীর জন্য গোলাপ ফুল।

চিকন সরু লম্বা নাকটার উপরে একটি কাটা দাগ সিঁথির যেন মাঝখান বরাবর। সাদা সাদা চোখের কালো পর্দায় জলের পাতলা আবরণ টপ করে ঝরে পড়ে যেন আমার ভালোবাসাকে শীতল করবে। আমি তাকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকি মেয়েটার সেইদিকে কোনো নজরই নেই, মনে হয় আধা একটা বোকা মেয়ে যেন পৃথিবী চিনে, রাধা-কৃষ্ণ বুঝে না।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৪)

একটা গান দিও আমার জন্যঃ
ছাদে লাউয়ের ডগা লক লক করে দেখে বুঝা যায় বাহারি ফলন হয়েছে। আর এমনি গানও আসে স্বরে “স্বাদের লাউ বানাইলি মোরে বৈরাগী”। লাউয়ের সাদা সাদা ফুলে মৌমাছি ও প্রজাপতি ঘুরে বেড়ায় আপন মনে। কালো হলদে একটা প্রজাপতি আমার মনে দাগ কাটে তাই তাকে ধরার জন্য পিছু নিই। প্রজাপতিটা বড্ড চালাক ধরতে গেলেই উড়াল দেয় , এইদিক সেদিক তাকাতে থাকি আমি দেখি না আর প্রজাপতি। হয়তো উড়াল দেয় দুর আকাশে। বসন্তকাল সূর্যকিরণে তাপ তেমন না থাকায় আমি চুপচাপ নারিকেল গাছটার নিচে লাউ গাছের পাশে ছাদে বসে পড়ি আরামে। কারণ প্রজাপতি ফুলে ফুলে বিচরণ করে আমাকে পরাজিত করে, ক্লান্ত করে। এই সময় চুপে চুপে আমার হৃদয়ে মানস প্রতিমা এসে হালকা জোয়ার তুলে মনে প্রাণে। তখন মন আবেগী হয় রাক্ষুসে হয় মানস প্রতিমাকে পুজা করতে। এক বোতাম ভালোবাসা চাই টি-শার্টের বুকে রেখে দিতে।

একটা গান লিখা কাগজ পকেটে ছিলো। বের করে নিজ মনে গুন গুন করে পড়ি। সেই বয়সে কিংবা এই বয়সে গান করার গলা আদৌ শ্রুতিমধুর পর্যায় পড়েনি আমার । তবুও একটা সা রে গা মা সুর তুলতে চেষ্টা করি। এই নিরব নির্জন পরিবেশটা আমাকে একটা আমিত্ব দেয় তখনি মনে চায় একটা ভালোবাসার কাননের মালী হতে। এই সুতা ছেড়া ভাবনায় ছেদ ধরায় মোতালেব, পাশে বসেই সেও গান বেসুরে রেওয়াজ করা শুরু করে। আমি উপরে দেখতে থাকি নারিকেল গাছে শুকনা কোনো নারিকেল আছে কিনা। থাকলে ভালো হতো ছিড়ে নিচে পড়লে এই বেসুরো গানের আওয়াজ হতে বাঁচতে পারতাম। একটু পর সে নিজেই গানের কাগজটা নিয়ে চলে যায়, এতে আমার মন খুশিতে নেচে উঠে।

পরে গানের কাগজ মোতালেব ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও ফেরত দেয়নি, আর তার দেখাও মেলেনি। দক্ষিণের ছাদ হতে উত্তরে আসতে দেখি এক দেবী আমার গানের কাগজ হাতে বান্ধবী ও অন্যান্যদের নিয়ে হাই বেঞ্চের উপর বসে গানটার শ্রাদ্ধ করতেছে। মুহুরী নদীর স্বচ্ছ জলে ছোট ছোট মাছের ঝাঁক, উপরে একদল সাদা সাদা গাঙ চিল। টি-শার্ট খুলে ঝাপ দিলাম নদীতে মুক্তার খোজে, আর মুখে গান “এখানে রমণীগুলো নদীর মত,নদীও নারীর মত কথা কয়”। সাহস সঞ্চয় করে সবার সামনে গিয়ে দাড়াই।
এইটা আমার গানের কাগজ।
সবাই মিটমিট হাসে আর বলে আমরা পড়ছি।
এইদিকে আমার সাহস বাড়তে থাকে বাতাসে ভেসে আসা পারফিউমের সুগন্ধিতে।
কাগজটা দিয়ে দাও আমি চলে যাচ্ছি। আমি বলি নিচের দিকে তাকিয়ে অথচ তাকেই প্রতিদিন দেখার জন্য মন ব্যাকুল থাকে আর এখন চোখ মেলানোই দায়।
দে-বো না আমি। মজা করে হেসে হেসে বলে।
না দিলে দেখাবো মজা।
কী করবে শুনি।
আমি কাগজ ধরতে চাইলে চঞ্চলমতি হরিণী বসা হতে উঠে বেঞ্চে হতে বেঞ্চে নৃত্য শুরু করে।
আমি হতবাক হয়ে দাড়িয়ে দৌড়াদৌড়ি দেখতে ব্যস্ত।
নৃত্যের তালে সামাল দিতে না ফেরে গলা হতে ওড়না নিচে পড়ে যায়।
আমি তখন পাথরে পাথরে আগুন জ্বালাই আদিম যুগের মানবের মত।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৫)

সত্যকার মুক্তিযোদ্ধা অন্যকে ঘায়েল করে না, নিরব দেশপ্রেমিক হয়ঃ
মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখুন? এইটা কোন পার্টির দেয়া দলীয় মুক্তিযোদ্ধার সনদ নয়, এটা ২৩ বছর বয়সী একজনের নামে ভারতে বাংলাদেশী যুদ্ধ শিবিরের ইস্যু করা সনদপত্র। পরে স্বাধীন দেশে নতুন করে ইস্যুর জন্য তার কাছে কিছু পরিমান উৎকোচ চাওয়া হয়েছিলো, তিনি প্রত্যাখান করেছিলেন। এই মলিন কাগজটা দেখিয়ে একটি চকচকে সনদ নেয়ার সুযোগ পরেও অনেকবার এসেছিলো, নিম্নবিত্ত পরিবার সে সুযোগ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি কখনই।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্লট বা ফ্ল্যাট, কোটায় চাকরী কিংবা ভাতাও পান না। এই মুক্তিযোদ্ধা দেশকে ভালোবেসে দায়িত্ব পালন করেছেন। উনার সন্তানেরা চাকরী বা অন্য কোনও সুবিধা চায়নি এবং পায়নি । তাই উনার সন্তানেরা ছোটখাটো চাকরী করে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে গর্ব অনুভব করে নিরবে, তবে পরিচয়টা রাস্তাঘাটে বিক্রি করে না। এই রকম শত নিরব মুক্তিযোদ্ধা আছে অতএব সম্মান করা উচিত।

রেমিটান্স যোদ্ধাদের জীবনঃ
করোনায় তছনছ গোটা বিশ্ব। করোনা প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জীবনও তছনছ করে দিয়েছে। অনেকে কাজ হারিয়ে দিশেহারা। কেউ কেউ আক্রান্ত স্বজনদের জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। আবার অনেকে নিজে ‘শোক সংবাদ’ হয়ে যাচ্ছেন।
প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বে বাংলাদেশির মৃত্যু হচ্ছে। প্রতিদিন যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন দেশ, যেখানে একের পর এক প্রবাসী আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছেন। এক সময় করোনায় প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যায় সৌদি আরব। এখন পর্যন্ত সৌদি আরবসহ বিশ্বের ২৩টি দেশে ২ হাজার ৭৩৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে করোনায়।

সৌদি আরবে ১ হাজার ২৩০, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৬৫, কুয়েতে ১০৭, ওমানে ৭০, কাতারে ৩৫, জর্ডানে ১৫ ও বাহরাইনে ৩১ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪৫, যুক্তরাজ্যে ৪১২, ইতালিতে ৩৫, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০, লেবাননে ১৫, কানাডায় ৯, সুইডেনে ৮, ফ্রান্স ও স্পেনে ৭ জন করে, বেলজিয়ামে ৩, পর্তুগালে ২ এবং ভারত, মালদ্বীপ, কেনিয়া, লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।

এই মারা যাওয়া ২ হাজার ৭৩৫ জন প্রবাসীর লাশ বিদেশে দাফন করা হয়েছে। যুদ্ধে মারা গেলে যেমন দাফন হয় তারচেও নির্মম এই লাশ দাফনের প্রক্রিয়া কিন্ত কিছুই করার নেই। এরা অনেকে দেশে লাখ লাখ টাকা পাঠিয়েছে এতে পরিবার উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি দেশও উপকৃত হয়েছে। এই টাকা দেশের উন্নয়নে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। আর মরে যাওয়ার পর ভিন্ন দেশের মাটি তাদের দেহ খেয়েছে।
(LinkedIn, amader shomoy)

স্বাধীনতার স্বাদ প্রত্যাশা

262_n

স্বাধীনতা খুঁজি আমি পাখির মাঝে
স্বাধীনতার স্বাদ প্রত্যাশা করি মনুষ্য কপালে।
কী পেলাম সবাই হিসাব করে মনোযোগ দিয়ে,
কিন্তু কী দিলাম দেশকে হিসাব করে ক’জনে।

স্বাধীনতা আলমারিতে সাজিয়ে রাখা মধুর স্মৃতি,
বিবর্ণ কালো ধুসর হলে বছরে একবার দেখি।
এই দিনে ভেবে না পাই স্বাধীনতা কোথায় রাখি
তাইতো সবাই মিলে ফুল আর কথার বাহার মেলি।

মধু আহরণ করতে খেতে হয় মৌমাছির কামড়
মধুর চেয়ে মিষ্টি আর উপকারী কোনো কিছু নাই।
স্বাধীন হতে গিয়ে গেলো শত শত প্রাণ, অথচ
কিছু লোক বলে স্বাধীনতা নাকি তাদের অবদান।

স্বাধীন দেশে স্মৃতিসৌধে রাজা রাণীর ভিড়ে
প্রজারা সবাই চুপ করে চেয়ে চেয়ে দেখে।
স্বাধীনতা খুজে কিছু লোক দেশের সিংহাসনে
সাধারণ লোক ছুটে চলে ক্ষেত আর খামারে।

দেশের বুকে লাশের সারি, নিজের দেশে পরাধীন
পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও কে বললো দেশ স্বাধীন।
এমন করে শোষণ জুলুম চলবে আর কত দিন।

৩০-০৩-২০২১।

করোনায় আক্রান্ত প্রবাসী ছেলের মা‘কে চিঠি

72177259

বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ভাষার, বিভিন্ন গোত্রের, সাদা কালো বর্ণের আটজন রোগী আছে এই ওয়ার্ডে। তার মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র আমি একজন। কেউ কাউকে চিনি না, কেউ কাউকে জানি না শুধু একে অন্যের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি দেখলে মনে হবে সবাই যেন দয়ামায়াহীন, বৃদ্ধ যুবক সবাই যেন নিস্তেজ ও প্রাণহীন। সবার চোখে অজানা এক আতংক সবার চোখে বেঁচে থাকার আকুল আবেদন বিশ্ব অধিপতির দরবারে।

মা‘গো আপনি তো জানেন আপনার ছেলে বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান ক্ষুদ্র এক জীবাণুর সাথে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে লিপ্ত গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের অনেক নামকরা ও আধুনিক হাসপাতালের বিছানায়। আপনার এবং আপনার বউমার এক অভিন্ন অভিযোগ আমি অসুখ-বিসুখের কথা বাড়িতে বলি না। বলি না এই জন্য যে, আপনারা চিন্তা করবেন তাই। এখানে মানুষের জীবন মান অনেক অনেক উন্নত যেটা বাংলাদেশের রাজধানীসহ অজপাড়ার মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না।

অথচ এখন ছোট্ট একটা ভাইরাসে কুপোকাত হয়ে চারিদিকে নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ। আজ সবাই পরম শক্তিমান ঈশ্বরের কাছাকাছি নশ্বর জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে। এরা জ্ঞান এবং বিজ্ঞান মনুষ্য কল্যাণে এমনভাবে প্রয়োগ করেছে যে প্রতিটি কর্মই জনকল্যাণে নিহিত। আর এখন এই ভাইরাস হতে বাঁচার সমাধান খুজতে বাধ্য হচ্ছে আসমানে। তাই মনে হয় আমি আর বাঁচতে পারবো না, মা‘গো আমার সমস্ত পাপ পূণ্য আপনার চরণে। হাসপাতাল হতে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে কাদা মাটির ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে রিক্সায় চড়ে কোনো এক সন্ধ্যায় আপনাকে জড়িয়ে ধরে বলতে এই দেখো মা তোমার ছেলে তোমার বুকে আর তুমি তখন আনন্দ অশ্রুজলে বুক ভাসাতে। রোজ আমি স্বপ্ন দেখি মা, আপনি সেজদায় পড়ে কান্না করেন আর বলেন আপনার জীবনের বিনিময় যেন আমি সুস্থ হয়ে উঠি।

তখন আমি বিছানায় ছটফট করি মা। আমি জানি আমিই মায়ের সাত রাজার ধন, গলা ছেড়ে গেয়ে উঠি “মায়ের মত এমন দরদী ভবে আর কেউ নাই”। আমার এমন বেসুরোর আওয়াজে নীরব পরিবেশে ভারী চোখে সবাই দেখতে থাকে এবং বুঝতে চেষ্টা করে যদিও ভাষাগত কারণে সবাই চুপ থাকে। তখন আমি মানি ব্যাগে থাকা সাদাকালো ছোট্ট ফটোটা উচিয়ে ধরি। একটু দূরে থাকা পাঁচ/ছয় বছরের বাচ্চাটা এসে ছবির উপর হাত বুলিয়ে জানতে চায় এই ছবির মহিলা আমার কী হয়। বাচ্চাটা আজ সকালে নতুন এসেছে মাত্র। এই ছোট্ট বাচ্চা মায়ের কোলে থাকার কথা অথচ সে লড়াই করছে নিঃসঙ্গ সৈনিক হয়ে এটম বোমার সাথে। আমি তার কথার উত্তর দিতে যাবো এই সময় শুরু হয় প্রচণ্ড কাশি সাথে অ্যাজমার কষ্ট। বাচ্চাটা দৌড়ে দূরে সরে আমার কাছ থেকে। মা, জানো হাসপাতালের ডাক্তার নার্স সবাই সেবা এবং ভালোবাসায় খুবই আন্তরিক তাই এখনো বেঁচে আছি। তবে কোন ঔষধ দিলে রোগ সারবে তা নির্ধারণে হিমসিম খাচ্ছে ডাক্তারগণ।

(দ্বিতীয় কিস্তি)।

করোনায় আক্রান্ত প্রবাসী ছেলের মা‘কে চিঠি

3993

প্রিয় আম্মা,
কেমন আছেন আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে। মোবাইলটা হাতে থাকলে ফোন করতে পারতাম কিন্তু হাসপাতাল এর নিয়ম সকাল এবং বিকাল এই দুই সময় মোবাইল রোগীকে দেওয়ার, শৃঙ্খলিত জীবনের এইটিই নিয়ম। একটু একটু কাশি আর জ্বর নিয়ে বাসা ছেড়ে আসলাম আজ ১৫ দিন, প্রথম প্রথম চলার শক্তি ছিলো, মনেরও শক্তি ছিলো এখন কাশি আর জ্বর বাড়ার সাথে সাথে চলার শক্তি আর কথা বলার শক্তিও লোপ পাচ্ছে। নার্স ও ডাক্তার নিয়ম করে আসে দেখে ঔষধ দেয় তা খেয়ে আমি যেন আরো কবরের কাছাকাছি যাচ্ছি। কী যেন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে মাটির নিচে বন্ধ ঘরে আদর করে ডাকছে। সাদা সাদা পোশাকের চোখ মুখ বন্ধ করা ডাক্তার নার্সকে সেই কবরের দূত মনে হয়। তখন আরো বেশী মনে পড়ে মায়ের মুখ, কচি কচি দুই ছেলে আর আপনার বউমার নিষ্পাপ মুখটা। আমি শিশুকালে পিতৃহীন হয়েছি এখন মনে হয় আমার দুই ছেলেও তাই হবে। এগার বছর আগে ঘর ছেড়ে, দেশ ছেড়ে প্রবাসী হয়ে মুক্ত কারাগারে বন্দী হই।

দেশে যাবো যাবো বলেও কোনো এক অদৃশ্য পিছুটানে যেতে পারিনি। আপনি কী এখন বয়স্ক নারী দেখতে কেমন মা আপনার মুখটি, ছেলে দুইটাও বড় হয়েছে তাদের মা ভালোবাসার অপ্রাপ্তিতে বিরক্ত হতে হতে এখন কথাও বলা ছেড়েছে। মারে, কষ্টটা দিন দিন আরো যেন বাড়ছে সেই কষ্ট সহ্য হয় না মা, তাই মনে হয় শরীর হতে দম পাখি উঠে গেলেই বাঁচি। এইটি কেমন হাসপাতাল বুঝে আসে না মাছি মশা তো দূরের কথা এক জটলা হাওয়াও আসার পথ নাই, যেন এটা আরেক কবর দুনিয়ার উপর। এখন হতে আর কথা বলার সুযোগ হবে না, কী করে বলবো আমি তো শক্তিই পাচ্ছি না। আজ সকালে কষ্ট করে উঠে দাড়ালাম বড্ড ইচ্ছে করলো আকাশ দেখতে। সাদা পর্দা সরাতে গিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে যায় পর্দাটা, দেখলাম অবিকল একটা লাশ দাড়িয়ে আছে আলো বাতাস পাওয়া এই স্বার্থময় দুনিয়ায়।

আকাশে কোথাও একটু মেঘ নাই কোথাও একটা উড়ন্ত পাখি নাই জমাট বাঁধা বরফের মত শীতল পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে খুব মন চায় মা। এখন আমার দালান বাড়ি আছে, চাষ করার জমি আছে, বসে বসে খাওয়ার জন্য ব্যাংকে টাকা আছে। অথচ প্রবাস নামক এই যাযাবর জীবনে শেষ মুহূর্তে এসে করোনা নামক এক শক্তি বলছে চলো যাই মাটির ঘরে। মাগো মরণকে যদিও খুব ভয় লাগে তারপরও মরতে খুব ইচ্ছে করে তোমার কোলে। আমার এই রুমটায় এখনো কোন রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরতে দেখি নাই অথচ রোজ মরে দুই একজন। এই মরণ দেখে দেখে বুকটা ভেঙ্গে যায় ভয়ে, না জানি কখন আবার আমার ডাক আসে। “ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, রইবো না আর বেশী দিন তোদের মাজারে।” অতিদূরে রোগীটা আফ্রিকার কোন দেশের হবে হয়তো, রোজ কান্না করে বুক ভাসায় তার বুক-ফাটা কান্দনে আমিও কান্নায় চিৎকার করে তোমায় ডাকি মা-জননী ।

(প্রথম কিস্তি)
উৎসর্গঃ করোনায় মৃত প্রবাসী এনামকে।

সমকালীন চিত্র

20210315_122324

ভালোবাসি তোমাকে অথচ তুমি বদলে গেলে
চুপি চুপি বিয়ে করলে আদর্শবান ওই মাস্তানকে।
শুনেছি আমি লোকটা সম্মানিত মাস্টার মশাই
অথচ সে রোজ পিটাই করে স্কুলের শিশুদের।

কী দরকার ছিলো ভালোবাসার অভিনয়ের
অথচ বিয়ে করলে কোটি টাকার মালিককে।
তুমি শুনেছো লোকটা পরিশ্রমী, সৎ ও মানবিক
শুনেছি সে ব্যাংক ঋণ খেলাপি, ট্যাক্স ফাঁকিবাজ।

কত কথা, কত স্বপ্ন দিয়েছো তুলে আল্পনায়
এইসব ভুলে ঘুম আসে না একা একা বিছানায়।
দাড়ি রেখেছি গোঁফ রেখেছি হয়েছি মাওলানা,
লোক দেখে টিটকারি করে বলৎকারি জামানার।

লম্বা লম্বা দাড়ি দেখে লোক ভাবে সাধু বাবাজি
সুরা কেরাত জানি বলে তাবিজ বেচি চুপি চুপি।
সস্তায় বেচা তাবিজের হাদিয়ায় পেট চালানো কষ্টকর,
আসলে কী তাবিজ করে কারো কোনো উপকার?
তবুও লোক বলে মাওলানা সাহেবজি, মনে মনে
হেসে বলি ভালোবাসা, হে মানব ভালোবাসা।

১৫—০৩—২০২১।

জীর্ণ-শীর্ণ চিন্তা

FB_I

কবিতার মরণ হয়েছে
আইন নামক জালে পড়ে
শহীদ, কিশোর, মুশতাক,
সবই আজ এক একটা মরা কবিতা।

আকাশখানি আজ মেঘে ঢাকা
বিজলী চমকায় ভয়ংকর
অভিমান গুমোট বাঁধে,
প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গে বারংবার।

দুঃখ-কষ্ট মেঘ হয়ে বৃষ্টি ঝরায় অঝোরে
গুমের ভয়ে চুপ থাকে হাজার কবি।
তবুও মন শীতল অনুভূতির ছোঁয়ায়,
মিথ্যা অভিনয়ে করে আবৃত্তি।

শকুন উঠে উপর আকাশে
নিচে নামে না ভয়ে
অত্যাচারিত কবিতার দেহ পচন ধরে বাতাসে
মুশতাকের পরে লাশ হবে অন্য কোনো লেখকের।

০৫-০৩-২০২১।

আ-মরি বাংলা ভাষা আহারে মোঃ আলি জিন্নাহ

20210221

রাজনৈতিক নেতারা একরোখা স্বভাবের হয় তাই মোঃ আলি জিন্নাহ হতে আজকে আধুনিক বাংলাদেশের নেতারাও এইটা ছাড়তে পারে নাই। ৫২তে যদি জিন্নাহ বলতো, যে রাজ্যে যে ভাষা আছে তারই চর্চা হবে তবে ইংরেজি হবে প্রধান ভাব প্রকাশের মাধ্যম। তখন আর গরিব বাঙ্গালী মরতো না। এখন আর ধনী বাঙ্গালীদের সন্তান বিদেশে জন্ম নিয়ে বাংলা ভুলতো না। এই প্রজন্মকে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি, আরবী, ফরাসি ভাষাও শিখা দরকার।

আজকে যেসব রাজনৈতিক নেতা একদল কর্মী নিয়ে ভোরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়েছে ওইসব নেতাদের শতকরা নব্বইজন লোকের সন্তান বিদেশে বাংলা ব্যতীত অনন্ত তিন চারটা ভাষায় পারদর্শী। আর নেতার পিছনে ভেড়ার পাল বাঃ বাঃ করে জীবন দিতেছে। কর্মীগণ এতই উম্মাদ যে মঞ্চে হিন্দি গানের তালে তালে আজ কোমর নাচাবে। এই কর্মী অনেকে আরবী না জানার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ভালো কাজ পাবে না। এই কর্মীর অনেকে ইংরেজি না জানার কারণে উন্নত দেশে পড়তে গিয়ে বেগ পাবে। বহু দেশে ফরাসি ভাষা চলে বলে কাজ করতে গিয়ে হা করে থাকবে।

নেতারা কর্মীর আবেগে এমপি মন্ত্রী হবে বিদেশে টাকা পাঠাবে নিরাপদ ও বিলাসী জীবনে তাঁদের পরিবার কাটাবে। আজ ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা ভাষা নিয়ে এত পোষ্ট যে শুদ্ধ বাংলা লজ্জা পাচ্ছে। ধর্ম, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও কর্মের জন্য সব ভাষার দরকার। তাই নতুন প্রজন্ম তোমরা মাতৃ ভাষার সাথে সাথে দরকারি ভাষাটাও শিখবে। ভারতে হিন্দি ভাষা প্রধান হলে বহু ভাষার দেশ ভারত তেমনি পাকিস্তানে উর্দু প্রধান হলেও বহু ভাষার দেশ পাকিস্তান। শ্রীলংকা ও নেপালে ইংরেজি সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। আমরা বাংলা ইংরেজি মিক্স করে বলে নতুন ভাষা সৃষ্টি করি।

গ্রামের এক সদর রাস্তা

20210216_133713

নদীর পাশে আঁকাবাঁকা রাস্তাটা নদীতে বিলীন
হচ্ছে, আজ অবধি নজরে আসেনি কোনো জন প্রতিনিধির। সবকালে ধসে পড়ে ইট পাথর, বালুু উঠে হাওয়ায়, প্রকৃতির চাপে এখন সবাই মুখে মুখোশ বাঁধা।

এই রাস্তায় রিক্সা চলে আরো চলে অটো রিক্সা সিএনজি, কখনো ছোট গর্ত আবার কখনো বড় গর্ত পড়ে। ধপাস করে গর্তে পড়তেই হরিপদ চিৎকার দেয় রাম রাম বলে, রহমান বলে আল্লাহ রক্ষা করো তুমি আমারে।

কত যে বৃদ্ধ বাবা এই রাস্তায় হাটা চলা করে,
তার হিসাব কী আর জন প্রতিনিধি রাখে।
বৃদ্ধ মা আর গর্ভবতী মা রিক্সায় উঠে না পড়ে
যাওয়ার ভয়ে, এদের সবার চোখে অজানা ভয়
আগুন হয়ে বাতাসে উঠে।

নদীতে বিলীন হলে কষ্ট পাবে মানুষে, ক্ষমা করো তোমরা রাস্তা নামক ইট,পাথর এই বালুকে। যদি এই বর্ষায় তলিয়ে যায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা হাটে যেতে কষ্ট হবে, তাই এখন হতে মনে মনে ডাকো আল্লাহকে।

১৫—০২—২০২১।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র

IMG_2021

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৬১তমপর্ব

ঢাকায় কয়েক দিন থেকে ভালোই হলো। কী যেন একটা গান আছে “ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাছে, লাল লাল নীল নীল বাতি দেইখা নয়নয় জুড়াইছে”। ত্রিশ/চল্লিশ বছর আগের এই গান ঢাকার সাথে মানানসই ছিলো তখনকার দিনে। এখন আগের হতে অনেক পরিবর্তন হলেও এই পুরানো গানের সুর কানে ভেসে আসলে মানুষ এখনো থমকে দাঁড়ায় শুনার জন্য। বায়তুল মোকারমের হকার মার্কেট এবং জাতীয় প্রেস ক্লাব ঘুরে দেখা যেমন আমার পুরাতন অভ্যাস তেমনি বাংলা একাডেমি ঘুরে দেখাও আমার প্রিয় শখ। কালের আবর্তনে হয়তো এইসব অভ্যাস একসময় আমার থাকবে না, দখল করে নিবে গভীর রাজনীতি আর অন্য চিন্তা। পার্টি অফিসে গিয়ে এই কয়েক দিনে ভালোই হয়েছে দেখলাম, বুঝলাম এবং পরিচয় হলাম।

আপনি আমাকে অন্য পার্টির সাথে আলাপ করিয়ে দেন, না হয় আপনি আমাকে জিনিস দিন। যেটা আপনার কাছে ভালো মনে হয় তাই করেন। তবে আপনি নিরাপদে জিনিস গন্তব্যস্থলে পৌছে দিতে পারবেন। কারণ আপনি অনেক দিন ধরে এই লাইনে আছেন, আপনার সাথে অনেকের পথ পরিচয়ও আছে। অন্যরা যেভাবে আপনার সাথে ব্যবসা করতেছে আমিও সেইভাবে করবো।
কিন্তু এই লাইনে তুমি যে নতুন।
কোনো কিন্তু নয় বড় ভাই।
আচ্ছা, চিন্তা করে দেখি আমি কালকে জানাবো।
টেকনাফ হতে ফিরে আসলাম হোটেল সী-গালে। কক্সবাজার আসলে মানুষ সাগর দেখার সাথে সাথে বৌদ্ধধর্মের মন্দির ও বার্মিজ মার্কেট দেখে দৌড় দেয় শুটকি মার্কেট দেখার জন্য লম্বা লম্বা শুকনা মাছের সাথে সেলফি তোলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। যেমন কুমিল্লায় নুরজাহান, মিয়ামী ও ওয়াল্ডভিটা যে কোনো হোটেলের সামনে বাস বিরতি নেয় লোকজন সেখানে দাঁড়িয়ে একটা সেলফি তোলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয় আর লিখে এখন আছি কুমিল্লার এই হোটেলে। এইসব সাতপাঁচ ভেবে ভেবে রাত কাটলো একটু ঘুম আসলো না দুই নয়নে। পরের দিন আবার ছুটলাম টেকনাফে বড় ভাইয়ের কাছে।

কেমন আছো (মুচকি হেসে বড় ভাই জানতে চায়)।
হাসি দেখে আমার মনে ভালো লাগার দোলা দেয়।
জ্বি, ভালো আছি বড় ভাই।
ঠিক আছে ব্যবসা করতে পারবে তুমি। লোকমানের সাথে কথা বলো আর এখন কত পিস নিবে নগদ দিয়ে নিয়ে যাও। তবে জিনিস নিয়ে আর কক্সবাজারে থাকার দরকার নেই সোজা চলে যাবে।
ঠিক আছে এখনই নিয়ে চলে যাবো।
সাত হাজার পিস লক্ষ্মী নিয়ে আমি রওয়ানা হই আমার শহরে। রাঙ্গামাটি এবার আর যাওয়া হয় না। রাস্তায় যেন কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য মনে মনে ভয়ে থাকি। কক্সবাজার হতে চট্টগ্রাম বাসে এসে চট্টগ্রাম হতে আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা আসার জন্য দৌড় দিই বাদামতলী রেল স্টেশন। শোভনের যাত্রী হয়ে আরাম করি ট্রেনে আর ট্রেন দ্রুত পিছনে ফেলে পাহাড়তলী, বারবকুণ্ড, সীতাকুণ্ড, ফেনী ও কুমিল্লা।

এলাকায় নিজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য যা করা দরকার সবই করবো, চাচা আপনি শুধু কী করা লাগবে বলে দিবেন। আর আমার আগের মামলাটা পুলিশ যেন চার্জশীট না করে। পুলিশ জানে তুমি এখন সোবহান মিয়ার বিশ্বস্ত লোক দেখলে সালাম দিবে, কিসের আবার চার্জশীট। আস্তে আস্তে ক্ষমতার স্বাদ পেতে থাকি এবং ক্ষমতার শিখরে উঠতে থাকি অর্থাৎ ধীরে চলো নীতি মেনে চলি তাই ভালো হবে। গোপনে আমার ব্যবসাটাও প্রসার করবো আর সোবহান মিয়া চাচা জানলে আর কী এমন হবে। ঠিকমতো এক বছর করতে পারলেই কোটিপতি বনে যাবে নাহিদ। খুশিতে নিজে নিজে হাসি। হাঃ হাঃ হাঃ।
(চলবে)

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৬২তম পর্ব।

আম্মু কেমন আছো।
আমি ভালো আছি। তুমি?
হ্যাঁ আম্মু, আমিও ভালো আছি। আমি অনেক ব্যস্ত থাকি তাই এখন আগের মত ফোন করতে পারি না। প্লিজ আম্মু মন খারাপ করো না। মামাকে সাথে নিয়ে বৃটেন দূতাবাসে যাবে, উনি সব চিনে সব বুঝে মামা সব ঠিক করে দিবে। টাকা পয়সার কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।
আমি তোমার মামার সাথে কথা বলেছি। উনিও ব্যবসায়িক কাজে সারা দিন ব্যস্ত থাকে তাই সময় সুযোগ কম পায় তবে তুমি চিন্তা করো না সময়মতো সবকিছু ঠিক করে দিবে। যখন আমি দূতাবাসে যাওয়া লাগবে তখন আমিসহ যাবো।
আমি দাদীর সাথেও কথা বলেছি। আব্বু প্রথম নাকি রাজি হচ্ছে না পরে দাদীর জেদের কাছে হার মানে। দাদী যেহেতু কানাডা হতে লন্ডন আসবে তাই হয়তো উনার আসাটা আপনি আসার আগেই হবে। আম্মু তুমি আপতত দাদীর কাছে ফোন করার দরকার নাই তারা মনে করবে তুমিই দাদীকে মিসগাইড করতেছো। ঠিক আছে আমি লন্ডন আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আর ফোন দিবো না।
যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে দুই/এক মাসের ভিতর ভিসা প্রসেস হয়ে যাবে।
হুম তাই।
আম্মু রেখে দাও ফোন।
ওকে,লাভ ইউ মামনি।

মৌরিকে নিয়ে যখন আমি একা থাকতাম তখন রাতে আমার ঘুম আসতো না। এই মেয়েটাকে আমি কতদিন বুকে আগলে রাখতে পারবো, এরচেয়েও বড় কোনো ঝড় আসে যদি জীবনে তখন হয়তো উপড়ে ফেলবে মা ও মেয়ের জীবনের শিকড়। তখন হয়তো বাস্তবতার কারণে জীবনের দুই পান্তে দুইজন হবো। এই ভয়ে নিজের মনকে শক্ত করেছি মৌরিকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে করেছি রঙহীন। আজ বিধাতা আমাকে সেটার প্রতিদান দিচ্ছে অনেকগুণ বেশী করে। আমি মৌরিকে কখনো বুঝতে দেয়নি বাবার অভাব কিন্তু আসল সত্য হলো একজন আরেক জনের অভাব কখনোই পুরণ করতে পারে না। একজন বাবা হিসাবে সন্তানকে কাছে রাখতে না পারা মানুষের জীবনের ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে। নিজ জীবনের স্বার্থের প্রাধান্য দেওয়ায় মৌরির মনে বাবার প্রতি ঘৃণা জন্মে গিয়েছে যার কারণে মৌরি কখনোই তার বাবার প্রতি ভালোবাসা দেখায়নি। আমিও নিজ জীবনে স্বার্থের প্রাধান্য দিতাম সন্তানকে দুরে রাখতাম তাহলে আমিও মৌরি হতে সেই ঘৃণাই পেতাম। কিন্তু আজ আমি আমার মেয়েকে নিয়ে লন্ডনে বাস করবো। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু তেমনি সন্তানের দেওয়া ভালোবাসাও পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের।

কাঁদছো কেনো মা।
আসলে কখনো কখনো সুখেও কান্না আসে। তোদের দুই ভাই-বোনকে ছোট ছোট রেখে তোর আব্বু মারা গেলো তখন আমার ভয় হতো তোদেরকে পড়ালেখা শিখিয়ে সুশিক্ষিত করে সুনাগরিক করে গড়ে তুলতে পারবো কিনা। তুই খুব ছোট ছিলে তাই এতকিছু বুঝতে পারতে না। আমি তোদের নিয়ে সংগ্রাম করলাম বড় করলাম বিয়েশাদী দিলাম। ছেলে বউমা নিয়ে সুখে থাকলেও তোর জন্য সবসময় মন কাঁদতো। ভাবতাাম আমরা মা মেয়ের জীবন এক ও অভিন্ন। তুই তোর বাবার মত সৎ এবং সাহসী বলে জীবনের কুল পেয়েছিস। তোর বাবা মরে যাওয়ায় আমি তোদের নিয়ে সংগ্রামী হয়েছি আর মৌরির বাবা ভোগ বিলাসী ও লোভী হওয়ায় তুই সংগ্রামী হইলি। আজ আমি পরিপূর্ণ মা। লন্ডনে মৌরিকে নিয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দিবো, শুধু তোমার দোয়া দরকার। তোকে আর মৌরিকে মনে পড়লে আর দেখতে পাবো না বলে কষ্ট লাগছে।
আমি শৌরিকে নিয়ে সংগ্রাম করেছি আর সাথে ছিলো আমার শাশুড়ী। উনি দোয়া আর অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছে বলেই মৌরি লন্ডন যেতে পেরেছে। মৌরির আব্বুর সাথে আমি সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইনি মৌরির আব্বুই আমার হতে দুরে সরে গিয়েছে এবং দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, সে তার কর্মের ফল সে পাবে মা।

তোদের কী লাগবে কী খাবে আমাকে বল জলী। মৌরি ফোন দিলে জিজ্ঞাসা করবি আমি কী পাঠাবো তার জন্য।
মা আমি মৌরিদের গ্রামের বাড়ি যাবো সবাইর সাথে দেখা করার জন্য গ্রাম হতে এসে আবার আসবো তখন থাকবো এবং বলবো।
মৌরি আমাদের বাসায় আসতে চাইতো না সে আমাদের কথায় হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছে। একজন মা সন্তানের সুখ ছাড়া দুঃখ কখনো মেনে নিতে পারে না। আমি, তুমি এইটা এখন বুঝি মৌর মা হলে বুঝবে, কারণ আমরা সবাই নারী। সে সময় আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।
বাদ দেন মা এইসব কথা। মৌরি এখন বড় হয়ছে সব বুঝে। আর সবসময় ফোন করে আপনাদের সবার খোজখবর নিচ্ছে রাগ থাকলে কখনো তা করতো না।
(চলব)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৬৩তম পর্ব।

আমি বাড়িতে এসেছি আপনাদের সবাইকে দেখে যাওয়ার জন্য কারণ আমি লন্ডন চলে গেলে আবার কখন দেশে আসি তার কোনো ঠিক নাই। কে বাঁচে কে মরে আল্লাহ জানে তাই যাওয়ার আগে সবাইকে একবার দেখে যেতে মন চাইলো।
খুব ভালো করেছেন ভাবী আপনি এসেছেন, আপনাকেও আমরা দেখতে পারলাম।
আমি মৌরিদের বাড়িতে থাকতে চাই তাই একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা দরকার।
কিছুই করতে হবে না সব কিছু সাফ সাফাই করা শুধু নতুন বেড সিট লাগাতে হবে। সব কিছু ধুয়ে আলমারিতে রাখা আছে, যেটা পছন্দ সেইটা নিবেন। আমি একটু বাড়ির সবাইর সাথে দেখা করি। কারণ
শুক্রবারে সবাইকে খাওয়াতে চাই, খতম ও মিলাদ পড়াতে চাই, বাড়ির মৃত ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত করাতে চাই।
আচ্ছা,আপনি তাহলে আমাদের ছেড়ে বিদেশে চলে যাবেন ভাবী, মৌরি মা মনি তাহলে আর আসবে না।

মৌরি লন্ডনে একটা ভালো চাকরী পেয়েছে, তাই আমাকেও নিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের দিনমান কেমন কাটছে, জামাই বাবা খোজ খবর নিতেছে কিনা?
ভাবী সে সবসময় ফোন করে। প্রতি মাসে বিশ হাজার টাকা দেয় খরচের জন্য, বলেছে ঘরটা দালান করে দিবে। আমার ছেলেকে পড়ালেখা শেষে ব্যবসা করার টাকা দিবে। সব মিলিয়ে ভালো আছি আমরা।
জামাই কী করে এখন।
সে বলে ব্যবসা করে, তবে তার আত্মীয় স্বজন বলে রাজনীতিও করে! আমি কিছু জানতে চাইনি কখনো। থাক এতকিছু জেনে কী লাভ। আপনাদের ভরণপোষণ দিচ্ছে এটাই বহু কিছু।
আপনাদের বাড়ির নারিকেল সুপারি ও ধান বিক্রির কিছু টাকা জমা আছে। এই আমানত আপনার হাতে তুলে দিতে চাই।
দেখুন ভাই আমি এখানে আমার শাশুড়ীর জন্যই আসতেছি এবং আপনাদের সবার আন্তরিক ভালোবাসা আমাকে আসতে বাধ্য করে। এইসব টাকা পয়সা আমার কোনো দরকার নেই।
তবুও ভাবী আপনি হকদার। এই বাড়ীর ধনী গরিব সবাইকে আপনি উপকার করেছেন। আপনি ও আপনার শাশুড়ীর সাহায্যে এই বাড়ির গরিব বেঁচে আছে, এতেই আমরা কৃতজ্ঞ ।

ঠিক আছে, আমি আম্মার সাথে কথা বলে জানবো এই টাকা কী করবেন।
এখন আমরা চলতে পারছি আল্লাহ চালাচ্ছে। তাই এক টাকাও খরচ করি নাই।
এখনতো জামাই বাবা টাকা পাঠায়। হাঃ হাঃ হাঃ।
নিজের মেয়েই বেঁচে নেই পরের ছেলের কী আর ভরসা! দুইদিন পরে খোজই হয়তো নিবে না।
আরে মন খারাপ করবেন না। ইনশাল্লাহ খোজ নিবে। দোয়া করবেন সবসময়।
এখন যেভাবে নিজের মনে করে এইখানের সব দেখে রেখেছেন ঠিক সেইভাবে ভবিষ্যতেও দেখে রাখবেন। আম্মার শরীর ইদানিং ভালো যাচ্ছে না আল্লাহ জানে কত দিন হায়াত আছে আবার দেশে এসে উনার গঠা ঘর-দরজা দেখতে পারবে কিনা।
আল্লাহ চাচীকে সুস্থ সবল যেন রাখে। এই ঘরের ভাত তরকারি খেয়ে বড় হয়েছি, বেঁচে আছি। শুধু আমি না আমাদের অনেকই। একটা কথা আছে “নুন খাইলে গুণ গাইতে হয়”। যেতদিন বাঁচি গুণ গেয়েই যাবো।

ভাবী ঢাকা গিয়ে ফোন দিবেন। আবার লন্ডন যাওয়ার আগেও ফোন দিবেন।
ঠিক আছে ভাই। যে টাকা জমা আছে তা গ্রামের কোনো গরিব মেয়ের বিয়েতে দিবেন ।
আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী।
অন্য সময় টাকা জমা হলে বাড়ির ভিতর কারো ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার জন্য টাকা দরকার হলেও দিবেন। কারো ছেলে মেয়ের বই খাতা কিনতে টাকা পয়সার সমস্যা হলে জানাবেন আমি সবাইকে বলে যাচ্ছি। কারণ সুশিক্ষিত মানুষই সুন্দর সমাজ গঠতে চেষ্টা করে সবসময়। সবাই ভালো থাকবেন।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৬৪তম পর্ব।

আমরা আবার একই ছাদের নিচে একই বাসায় আমি, আম্মু আর দাদী। আসলে নিঃস্বার্থ ও নির্মল ভালোবাসাই পারে ভালোবাসা অগাধভাবে বাড়াতে। দায়িত্ব ও কর্তব্যের সাথে যদি স্বচ্ছ ভালোবাসা থাকে তাহলে সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য আনন্দিত মনে পালন করা যায়। আমার আম্মু করে আমার দাদীর জন্য, আর আমি করছি আম্মুর জন্য।
তোমাদের কাছে পেয়ে আমার যেন বয়স কম হয়ে গিয়েছে,যেন শরীরে শক্তি বেড়ে গিয়েছে। আমি চলাফেরায় অনেক আনন্দবোধ করতেছি নিজেকে অনেক হালকা মনে করেতেছি।
আসলে দাদী যৌথ পরিবারের যৌথ ভালোবাসা মন ভালো রাখার জন্য অসাধারণ টনিক। মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো লাগে।
আজকাল মানুষ যৌথ পরিবার নয় একক পরিবারে সব ভালোবাসা এবং সুখ খোজে বোন।
আচ্ছা শুনেন আমি আপনাদের বেশী সময় দিতে পারবো না। প্রতি রবিবার ছুটির দিনে আমি আপনাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াবো এবং লন্ডনের নামি দামি রেস্তোরাঁয় খাবার খাবো।
না বোন আমি বাহিরে যাবো না তোমরা মা মেয়ে যেও

আম্মা যেই দিন আপনার শরীর ভালো থাকে সেই দিন বেড়াতে যাবো আমরা। মানুষের শরীর প্রাকৃতিক উপায় বিধাতা সৃষ্টি করেছেন তাই মানুষ যেত সবুজ গাছপালা কিংবা নদ নদী এবং সাগরের কাছাকাছি হবে মানুষের মন ও শরীর প্রকৃতির মোহে আবিষ্ট হবে এবং সতেজ হবে। আমরা বনজ উদ্ভিদ হতে যে অক্সিজেন নিচ্ছি তাই একমাত্র বিশুদ্ধ উপাদান শরীর জন্য।
ঠিক আছে সম্ভব হলে যাবো।
আম্মু তোমাকে ড্রাইভিং শিখতে হবে।
না না মামনি, আমার ভয় লাগে পারবো না।
হাঃ হাঃ হাঃ চালানো শিখলে আস্তে আস্তে ভয় চলে যাবে, প্রয়োজনে সব কাজ করতে হয় আম্মু।
কিন্ত ভয় লাগে যে আমার ।
ঠিক আছে তাহলে এখন কিছু দিন টেক্সিতে চলাফেরা করতে হবে। সব কিছু জানাশোনা হলে তখন গাড়ি নিতে পারবো।
এখন এইসব নিয়ে ভাবতে হবে না মৌরি। আমি আর তোমার দাদী বাসায় থেকে কাটাতে চাই, এতে আমি আম্মাকে দেখাশোনা করতে পারবো আর উনারও মন ভালো থাকবে।
আমি তোমাদের কাছে পেয়ে যেন নতুন জীবন পেয়েছি। বেঁচে থাকার ইচ্ছা বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ।

বাংলাদেশের রক্ষণশীল ও নানা কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের মানুষ আমরা, যেখানে স্বামী দুরে সরে গেলে মেয়েদেরকে শাশুড়ীর মায়া পাওয়া কঠিন। যেখানে তোমার দাদী আর আমি একসাথে থাকলে মানুষ কানাঘুষো করতো। এখানে ওইসব নেই তোমার দাদী আমাকে মায়ের মায়া দিতে পারবে আমিও তা মন উজাড় করে উপভোগ করবো। আর তুমি মেয়ে হয়ে আমাকে মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করতেছো তাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখ ও মেয়ের শ্রেষ্ঠ মায়া। তোমার দাদী এখানে কত দিন থাকতে পারে তাও দেখার বিষয় আছে। তোমার আব্বু নিয়ে যেতে চাইবে এবং ভিসা সংক্রান্তও ব্যাপার আছে অতএব উনি আমাদের কাছে থাকতে পারে কিনা তার নিশ্চয়তাও নেই।
মা‘রে এত কিছু বুঝি না, আমি তোমাদের কাছেই থাকতে চাই। ওদের প্রতি আমার এত মায়া-মমতা নেই তাই তাদের আমার প্রতিও দায়িত্ববোধ নেই। আমি কানাডা গেলে একা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বো।
এইতো জীবন মা, যা কিনা মায়াহীন।

আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এখানে আপনাকে রাখার জন্য। কিন্তু আইনগত জটিলতা যেমন আছে তেমনি আপনাকে নিয়ে যাওয়ার অধিকারও আপনার ছেলের আছে। সে মেয়ের ভালোবাসা পাচ্ছে না তাই মায়ের ভালোবাসা হারাতে চাইবে না।
এত জটিলতা হতে বাঁচার একমাত্র পথ হলো আমার মরণ আর আমি তোমাদের কাছে মরবো। আমি কোথাও যাবো না, এখানে একসাথে আমরা আছি এবং থাকবো আর এইটাই আমাদের মায়া।
(চলবে)।

শব্দনীড় ব্লগের অতি সাধারণ একজন আমি

2021021

শব্দনীড়ঃ কয়েকটা বর্ণের সমষ্টিতে একটা শব্দ হয় এইটা আমরা সবাই জানি। নীড় অর্থ বাসা এইটাও অজানা নয় ব্লগারদের। অর্থাৎ শব্দনীড় হলো বাংলা বর্ণের বাসা। এখানে বর্ণের সমষ্টিতে আমরা শব্দের চাষ করি যা হতে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধি লাভ করছে। তাই প্রতিটি ব্লগারই সাহিত্যের একজন কৃষক।

ব্লগঃ আধুনিক জামানায় ব্লগ হলো লেখালেখির সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট মাধ্যম। এই জন্যই ব্লগের লেখা সমাজকে নাড়া দেয়, ঝাকানো দেয়। লেখার পক্ষে বিপক্ষে মত গড়ে উঠে। তবে আপনি কী ধরনের লিখা লিখবেন তা একান্ত আপনার ব্যক্তিগত। ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি, বিজ্ঞান নাকি সাহিত্য যে কোন বিষয় আপনার পছন্দীয় হতে পারে। সব বিষয় লিখার খোলা আকাশ বা জমিন এই ব্লগ।

ব্লগারঃ সৃজনশীল, মননশীল, সৎ, সততা, মানবিক ও ন্যায়পরায়ণ আধুনিক লোকটিই ব্লগার। শব্দনীড়ে বর্তমানে অনেক লেখা আসে তবে বেশীর ভাগ সাহিত্য বিভাগের। “লেখকের লিখনী সমাজ পরিবর্তনের বলিষ্ঠ হাতিয়ার।” সাহিত্যের মাধ্যমেও সমাজের অন্যায়-অবিচার ও বন্ধ্যাত্ব দূর করা সম্ভব। এখানের প্রতিটি লেখা তাই বলে অন্তত।

অথচ এই লোকগুলি অন্যের লেখা পড়ে না। লেখা পড়লেও কোন মন্তব্য করে লেখককে উৎসাহ দেয় না। কেউ মন্তব্য করলেও প্রতিউত্তর অনেকেই দেয় না। যেমন বাচ্চা জন্ম দেওয়াই শেষ, লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার দরকার নেই এমনিই বড় হয়ে যাবে। বাচ্চা বড় হয় ঠিকই সেই বাচ্চা মানুষের চেহারায় হলেও কাজে মানুষ নাও হতে পারে। ব্লগার মনগত এত কৃপণ কেন হবে এত হীনম্মন্য কেন হবে। আসুন সব অলসতা ঝেড়ে ফেলে মন্তব্য করি, প্রতি-মন্তব্য করি। একে অপরের সাথে বন্ধুতা গড়ে তুলি। আলোচনা সমালোচনা করে নিজেকে এবং ব্লগকে বিকশিত করি। কৃষক জমিতে ভালো ফলন পেতে যাই করে শব্দচাষীও তাই করা উচিত। শুধু উর্বর মাটি ও ভালো বীজ হলে ভালো ফলন হয় না। মেধাবী কৃষক মানে চাষে নতুনত্ব আনে।

বিঃদ্রঃ এইটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। তাই ক্ষমা করবেন।

আলোহীন জগত

20210210_232146

গরিবের সন্তান বড় হয় এতিম খানায়
বড় লোকের মা-বাপ মরে আশ্রয় কেন্দ্রে।
মাওলা এ কেমন জগত বানাইলা বুঝি না
বুঝি না মাওলা তোমার এ কেমন খেলা।

ব্যথা পাবো বলে বাপে কোন দিন চিমটি কাটে নাই
সে লোকটাকে বউয়ে এখন চোখ রাঙ্গায়।
ধমক দিয়ে বউ বলে বিয়া করলা কেন
বাপের এত আদরের পোলা বাপের কোলে থাকতা।

বাকপ্রতিবন্ধি মা আমার ফ্যাল ফ্যাল করে চায়
দমক দিয়ে বউয়ে বলে, বুড়ি এটার সেবা করা
আমার বড় দায়। বউয়ের এমন ধমক মাঝে মাঝে
বাবা শুনে চলে যেতে চায়, হাত ধরে কান্না করি।
যেও না গো বাবা এখনো আমি তোমার সেই ছোট্ট খোকা।

যখন আমি ছোট ছিলাম কত কষ্ট করেছে মা
এখনো সেই একই কষ্ট শীতের রাতে পায়।
ময়লা হওয়ার ভয়ে মাকে দেয় না নতুন তোশকটা।
মাওলা এ কেমন জগত বানাইলা বুঝি না,
বুঝি না মাওলা তোমার এ কেমন খেলা।

(গীতি কবিতা। )

20210210_232451