ফয়জুল মহী এর সকল পোস্ট

ফয়জুল মহী সম্পর্কে

হে পরমেশ্বর,এই নশ্বর নিখিল সৃষ্টিতে রেখো না ওই মানুষ যার ভিতর নরত্বের অভিনিবেশ নাই ।

মানুষের ভিতরই মানুষ খোঁজা

recei

তপ্ত রোদে হলুদ পাখির ডাকহীন দুপুর
উদাস বিকেল আর বিষাদ আলো
উদিত হওয়া সূর্য ডুবো ডুবো
সন্ধ্যার ঝি ঝি পোকা‚চুপ এখন,
এইসব গত হয়ে গেলে
আমরা বোবা হয়ে যাই।

তখন চুপি চুপি কথা বলি
আঁধারে ঢলে পড়া আকাশের সাথে
নিঃসঙ্গ জ্বল জ্বল তারার সাথে_
তারা শোনে বা না শোনে
কী জানি!

তারপরও হন্যে হয়ে
কথা বলার মানুষ খুঁজি
অথচ কী আশ্চর্য এত মানুষের ভিড়েও
কথা বলার মত একটা মানুষ মিলে না!

আমি নির্বাক হয়ে অতীত মানুষের
ইতিহাস পড়ি মানুষ আসলে কখন মানুষ ছিলো।

গোধূলি বেলায় তোমার চেহারা

(এক)
কদম গাছের তলায় বসে পানি পান করে নিজেকে শীতল করলাম। শরীরটা খুবই ক্লান্ত লাগছে কিন্তু মনটা খুবই সতেজ তাই দুর্বলতা নেই। এই দীঘির স্বচ্ছ জল, দীঘির পাড়ে দূর্বাঘাস, বাদামী রংয়ের মিহি মিহি বালু আমার হৃদয়ের আকুলতা জানতো। অথচ আজ আমার মত নিঃসঙ্গ নিঃস্ব, কারো না কারো পায়ের তলার ধুলা কিংবা স্নান সেরে যাওয়া পরিত্যক্ত জল। এই জগত, এই সংসার, এই ছুটে চলা সবই জীবনের প্রয়োজনে আর এই প্রয়োজন নিজের কিংবা অন্যের যার ভিতর থাকে অনেকের স্বার্থহীন ভালোবাসা। চলার পথে অন্যের প্রতি প্রাকৃতিকভাবে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তা অক্ষয় ও অবিনশ্বর। শুধু সমাজ, সংসার এবং ধর্ম-কর্মের ভয়ে মানুষ চুপ থাকে, ভুলে যাওয়ার অভিনয় করে। কারণ মানুষের জীবন একটা খোলা বই যে কেউ পড়তে পারে এই বইয়ের পাতা নষ্ট করাই অন্যায় ও অবিচার। তবে এই প্রাকৃতিক ভালোবাসাই আবার কখনো সুখের রাজা-রাণী করে আবার কখনো দুঃখের।

হ্যালো,তুমি কোথায় আছো এখন।
আমি বিজয় সিংহ দিঘির পার্কেই বসা আছি।
পাশাপাশি দুইজনে কিন্তু তবুও কতদূরে হাতটা ধরে জিজ্ঞাসা করতে পারছিনা, জীবনের এই পড়ন্ত বেলাতেও “কেমন আছো তুমি মিতালি”! দুইজনই নীরব নিস্পন্দ, মুখে কোনো কথা না হলেও মনে মনে মিলিয়ন মিলিয়ন কথা হচ্ছে।
নীরবতা ভেঙ্গে আমিই বলি, মনে হয় সাঁইত্রিশ বছর পর দেখা তোমার সাথে, দেখা করতে এসেছো এতেই আমি ধন্য এবং তোমাকে ধন্যবাদ।
আসলে আসা এত সহজ ছিলো না।
তাহলে আসলে কেনো।
কিছু কিছু কাজ করা দরকার হয়ে পড়ে। বিনা কারণে মানুষ করতে বাধ্য হয়, ঠিক তেমন এই কাজটাও।
কেমন আছো তুমি রোহিত।
ভালোই তো আছি, দিন চলে যাচ্ছে।
মিতালির চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, চোখগুলো আগের চেয়ে বড় দেখাচ্ছে হয়তো বয়সের কারণে। কপালের কাটা দাগটা এখনো স্পষ্ট তবে মাথার চুল সাদা অর্ধেকের বেশী। লাল ছোট ছোট ঘরের সাদা শাড়িতে দারুণ মানিয়েছে মিতালিকে। কপালের কাটা দাগটা আমি তির্যকভাবে দেখছি দেখে মিতালি মুচকি হাসে এবং চুল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে।ছোট ছোট কথা বলে এক সময নীরব হই দুইজন।

আমি এখন একটা বটবৃক্ষ, ছেলে-মেয়ে এবং তাদের বাবা ও তাদের সন্তানদের ছায়া দেওয়াই আমার কাজ। কেউ গাছটার ডাল-পালা কেটে দিলে গাছটা কী করে বাঁচবে বলো রোহিত। তা ঠিক বাঁচবে না। ঝড়ে উপড়ে যাওয়া গাছ আর কখনই সোজা হয় না, সোজা হলেও বেঁচে থাকার ছন্দ পতন হয়। তাই যেমন আছো যেখানে আছো ভালোই আছো, আমিও ভালো আছি ।
পরিবার পরিজন নিয়ে তাহলে সুখেই আছো মিতালি।
সুখের সজ্ঞায় আমি যাবো যাবো না তবে যে লোকটা আমার স্বামী উনি নিরেট ভদ্রলোক তাই তুমিবিহীন বয়ে যাওয়া জীবন কাটাতে কষ্ট হয়নি।
আচ্ছা তুমি আমাকে কেনো বিয়ে করতে রাজি হওনি।
পাল্টা যদি আমি প্রশ্ন করি ইউরোপ গিয়ে কেনো আমার খোঁজ নাওনি রোহিত। কেনো তোমার পরিবার আমাকে বার বার অপমান করে তাড়িয়েছে। আত্মা হত্যা করা ভীরুতা আর কাপুরুষতা তাই মাথা উঁচু করে ভদ্র ঘরের বউ হয়ে বেঁচে আছি। যেখানে হৃদয়ের অনেক অনেক গভীরে তুমি নামক একটা শব্দ ধুলাবালিতে জমা আছে।

সংসারের গতিময়তা, ভদ্রলোকের পরিবারের স্নেহ তোমাকে জীবনের বাহিরে রাখতে সাহায্য করছে, তবে একটুও ভুলি নাই রোহিত। চুপ করে আছো কেনো কিছু বলো। তোমার বউ-বাচ্চা কেমন আছে। মিতালির কথায় মনে হয় শরীরটা হিমালয়ের বরফে ঢাকা লাশ। এই লাশটা নেপাল, ভুটান নাকি চীন সীমানায় কী জানি।

(দুই)

হিমালয় পৃথিবীর সৌন্দর্যের রাণী । এই সৌন্দর্যের রাণীকে দেখে শুধু মানুষের চোখই জুড়ায় না, হিমালয়ের বরফগলা পানি ভারত উপমহাদেশের মানুষের জীবন জীবিকার সাথেও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। অর্থাৎ হিমালয়ের বরফগলা পানি ভারত, বাংলাদেশ পাকিস্তানের নদীতেই প্রবাহিত হয়। তবে এখন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে গরমকালে অতিরিক্ত বরফগলে যায়। আবহাওয়াবিদগণের মতে এইভাবে বরফ গলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে হিমালয়ে আর বরফ থাকবে না। তখন পরিবেশের উপর মারত্মক প্রভাব পড়বে, এবং পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। হিমালয়ের পানিই যেহেতু ভারত হয়ে অন্য দেশে যায় তাই ভারত এই দুই দেশের পানি নিয়ে রাজনীতি করে সবসময়। হয়তো একদিন এই পানি নিয়ে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ অবস্থা হবে, ছোট বাংলাদেশ ভারত হতে আইন অনুসারে পানি না পেলেও চুপ থাকবে। হিমালয়ের পানি আসা বন্ধ হলে হয়তো এই তিন দেশের এক তৃতীয়াংশ মরুভূমিতে পরিনত হতে পারে তাই ভারত নিজ দেশকে বাঁচাতে অন্য দেশের সাথে কেমন আচরণ করবে এখনকার পানি রাজনীতি দেখেই অনুমান করা যায়।

আরে , রোহিত একদম চুপ হয়ে গেলে যে, কষ্ট পেয়েছো মনে হচ্ছে।
না , কষ্ট পাওয়া আমার উচিত নয় । কষ্ট দেওয়াই আমার কাজ।
একদম ঠিক বলেছো বাস্তবতা দেখলেই পালিয়ে বেড়ানো যেমন তোমার কাজ, তেমনি মানুষকে জীবনের অন্ধকার রাস্তায় ফেলে দেওয়াই তোমার কাজ। তাইতো বিখ্যাত প্রবাদ বাক্য “রাখে আল্লাহ মারে কে”। হাঃ হাঃ হাঃ।
তোমার হাসিটা স্কুল কলেজের সেই তরুণীর মত। কিন্তু এখন তুমি একটা মহিলা তাই তোমার হাসিতে বুকটা কেঁপে উঠে।
ওহ তাই, বোকার মত এত দুরে বসেছো কেনো বাতাসের শব্দে কথাই বুঝতে পারছি না। শুনো, আশা আকাঙ্ক্ষা ভালবাসা যন্ত্রণা এই নিয়েই আমাদের জীবন । মনের যন্ত্রণা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় তখন আশা আকাঙ্ক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ে, আশারা নির্মূল হয় এবং দীর্ঘ নিঃশ্বাসের ধোঁয়ায় কালো হয়ে যায় ভবিষ্যত আর হতাশার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় উৎস ও আকাঙ্ক্ষার দুপ ।

তুমি যখন বিদেশে যাবো বিদেশে যাবো করতে তখন খুব বিরক্ত লাগতো।
হ্যাঁ কিছুটা আমি বুঝতে পারতাম মিতালি।
সত্যিই তুমি একদিন চলে গেলে । এরপর তোমার দেওয়া সময়টাকে দুঃখের কিস্তি করে পার করতে লাগলাম। বিয়ের আগে সেই দুই বছরে কতবার যে বাবার মার খেয়েছি কতবার যে মার বকা শুনেছি হিসাব রাখতে পারিনি। কতবার বিয়ে ভেঙ্গে চরিত্রহীন অপবাদ পেয়েছি আমার রুমের ফ্যানটা জানে। না , মরে পাপ করেনি জীবিত থেকে পৃথিবী আবাদ করেছি, ভালোবাসার রূপান্তর করেছি। তাই একদিন আবিষ্কার করলাম আমার পাশে সুদর্শন এক রাজকুমারকে। তার হাতে সমর্পণ করলাম নিজেকে। কিন্তু এই সমর্পণ সম্পূর্ণ করতে মন সায় দিতো না কারণ প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হওয়া ভালোবাসাটা দেয়াল সৃষ্টি করতো। খুব কান্না আসতো যখন লোকটা আমাকে নিয়ে টিলা পাহাড় পর্বত আরোহী হতো। আস্তে আস্তে ভদ্রলোক সব জেনে গেল এবং আমাকে আরো আরো ভালোবাসার স্বাধীনতা দিলো। চিমটি কামড় গালি এইসব দিতে দিতে একদিন আবিষ্কার করি আমি রমণী, তাই একটা প্রাণের অস্তিত্ব ধারণ করলাম।

খুব খুব কান্না আসলো তোমার মায়াবী মুখ কল্পনা করে। ঘর ভর্তি একদল বাচ্চা তার মাঝে তুমি আমি এমন জগত বানাতে বানাতে সেই অসহ্য লোকটার সন্তানের মা হলাম আর জানলাম তূমি স্পেনের মাদ্রিদের নাগরিক।

(তিন)

সত্যিকার অর্থে মেয়ে মানুষের আমৃত্যু কোনো ঘর হয় না। যে ঘরে একটা মেয়ের জন্ম হয় যে মানুষ গুলি আদর স্নেহ দিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে ঠিক তারাই এক সময় মেয়েটাকে ঘর বদলে মরিয়া হয়ে উঠে। আর এই প্রক্রিয়ায় বদল হওয়া ঘর কখনো কখনো জন-মানব পূর্ণ কবরে পরিণত হয় যেখানে বসত করে জিন্দা লাশ। শোন রোহিত, মেয়েদের বড়জোর একটা সংসার হয় আর এই সংসারে মানব থাকলে আলো বাতাস থাকে,বসত করার রসদ থাকে। আর যদি মানব না থাকে তাহলে সেটা একটা মেয়ের জন্য আলো-বাতাসহীন কবর হয়। যে কবরকে সংসার মনে করে ইচ্ছামত হাল চাষ করে নির্দয় কৃষক।
তারপরও কেনো মেয়েরা ঘর বদল করায় ব্যস্ত থাকে মিতালি । স্বামী, সংসার, সন্তান সব কিছূ ছেড়ে ঘর-বর বদল করে।
কারণ মেয়েরা সব সময় ভালোবাসা খোজে । অনেক মেয়েও আজকাল স্বামীকে মানসিক যন্ত্রণায় তিক্ত করে যা ঘর সংসারে প্রভাব পড়ে।
এইটা অতি নগণ্য রোহিত, আমাদের দেশে এখনো নারীরা পুরুষকে নির্যাতন করতে সাহস করে না।

একটা মেয়ের নারীত্ব সার্থক হয় যখন মেয়েটা একটা ঘর পায়, একটা সংসার পায়, সেই সংসারে পার্থিব স্বর্গীয় আমেজ পায়। কিন্তু বদল হওয়া ঘরের মানুষের কুৎসিত আচরণ মেয়েটাকে জীবিতই কবরবাসী করে। যে কবরে জীবত মানুষ থাকে, যে কবরে দেবতা থাকে, যে কবরে বিচার হয় এবং শাস্তি হয় । প্রকৃত কবরের মত সাপ বিচ্ছু ঠোক্কর মারে কিন্তু উহ্ করা যায় না। দেবতার অতিষ্ঠ আচরণের ভিতরও অশ্বরিকভাবে মেয়েটা মা হয়। কিন্তু সুখ কিংবা ভালোবাসা পায় না। ছোটকালে যেমন পড়েছো কৃষক ’রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সোনালী ফসল ফলায়” ঠিক তেমনি একটা মেয়ে কবর নামক সংসারের অনলে পুড়ে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে হয়তো ভালোবাসার মানুষের জন্য। মূলতঃ ভালোবাসা অধরা থেকেই যায়।

মিতালি রাগ করলে আগের মত তোমার নাকটা লাল হয়ে যায়। আর কপালের কাটা দাগটায় বার বার ডান হাত দাও। এখনো সেই আগের মত–।
হ্যা, এখনো আগের মত তোমাকেও ভালোবাসি।
তাহলে চলে আসো আমার কাছে। হাঃ হাঃ ।
রোহিত তোমার সংসার সন্তান নিয়ে কিছুই বললে না। এতবার জিজ্ঞাসা করলাম অথচ তুমি এড়িয়ে গিয়েছো, কেনো বলতে চাচ্ছো না।
যা নেই তাই নিয়ে কী বলবো বলো।
মানে কী রোহিত।
মানে তেমন কিছুই না মিতালি, জয়নাল হাজারীর এক লেখায় পড়ে ছিলাম যাযাবরের “দৃষ্টিপাত” পড়ে নারীর প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয় উনার। আমি “দৃষ্টিপাত ”পড়ে তোমাকে আরো বেশী বেশী ভালোবাসতে শিখি। তাই হয়তো নিজ সীমানায় তোমাকে খোঁজ করেছি এক নজর দেখার জন্য।
তুমি আমার প্রশ্ন কেনো এড়িয়ে যাচ্ছো বুঝতেছি না। তোমার মা-বাবা কেমন আছেন।
উনারা কেউ এখন আর বেঁচে নাই।
দুঃখিত রোহিত,আমার জানা ছিলো না।

(শেষ)

এখানে দুঃখিত হওয়ার কিছুই নেই মিতালি। তুমি আমার মা-বাবার প্রতি রাগান্বিত থাকা স্বাভাবিক। তা ঠিক এক সময় প্রচণ্ড রাগ ছিলো উনাদের উপর, কারণ অনেক কটু কথা আমাকে বলেছে। এখন উনারা মৃত, আর মৃত ব্যক্তির উপর রাগ করে থাকা উচিত নয়। এখন সব সময় উনাদের আত্মার পরম শান্তি কামনা করি। তাহাছাড়া তুমিই যেহেতু আমার খবর নাওনি সেখানে উনারা বিরক্ত হওয়াই স্বাভাবিক ।
যদি পারো মা-বাবার সাথে সাথে আমাকেও ক্ষমা করে দিও, সবাইকে হারিয়ে আমি একটা জীবিত লাশ। শুধু দেহ নামক মেশিনটা বয়ে বেড়াই দেশ বিদেশ।
হাঃ হাঃ হাঃ।
এখানে হাসির কী হলো মিতালি।
তুমি এখন স্পেনবাসী। বাড়ি, গাড়ি, টাকা ও নারী ফুঁ দিলে পেয়ে যাবে।
আগে এক জনের ভালোবাসার মোহ ছিলো এখন কোনো কিছুর প্রতি মোহ নাই আর আমি বহুগামী নই।
তাহলে,কেনো তুমি আমাকে——-রোহিত।
স্পেন যেতে পথে পথে কাটে বহুদিন বহু বিপদে। রোজগার করার উপযুক্ত হতে হতে তুমিও হারিয়ে যাও চিরতরে, তখন নিজেকেও হারিয়ে ফেলি।

নিজেকে হারিয়ে ফেলি কাজের ভিতর। রোজগার করতে গিয়ে কোনো পিছুটান ছিলো না একমাত্র শুধূ ছিলো হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়ার ঝনঝন শব্দ। যে শব্দ আমাকে আকুল করতো , কখনো কখনো করতো কান্নায় মাতাল।
কখনো খোঁজ খবর নিতে চেষ্টা করো নাই কেনো ?
খোঁজ নিতে বহুবার চেষ্টা করেছি মিতালি ।
তবে, আমার পরিবারের বারণ ছিলো প্রচণ্ড রকম। রাগ করে চিঠি দেওয়া বন্ধ রাখতাম। কিন্তু আমি যে তাদেরই সন্তান মা বাপকে ফেলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমার মা লিখতো মিতালি একজন বিবাহিত নারী যোগাযোগ করলে তার সমস্যা হবে। আস্তে আস্তে মায়ের যুক্তিসংগত কথায় আমার মন বুঝ মানে। টাকা উপার্জনে মনোযোগী হয়ে প্রচুর টাকার মালিক হই কিন্তু অমনোযোগী হই নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। সময় এবং সুযোগ যেহেতু আমাকে যাযাবর করেছে এইভাবে কেটে যাবে বাকি জীবন।

যাযাবর ভাবছো কেনো নিজেকে। সারা পৃথিবী মানুষের হাতের মুঠোয় এখন। এক সেকেন্ডে পৃথিবীর এক পান্থ হতে অন্য পান্থের খবর মানুষ নিমিষে পেয়ে যাচ্ছে। এক সেকেন্ডে বিশ্বের যে কোনো পান্থ হতে প্রবাসীদের টাকা এসে যায়।
হাঃ হাঃ হাঃ। তা ঠিক মিতালি । কিন্তু প্রবাসীদের লাশ নিমিষে আসে না। বহু দেনদরবার করে টাকা পয়সা খরচ করে তারপর লাশ আনতে হয়। এই জন্য অনেকের লাশ বিদেশেই পড়ে থাকে। হয়তো আমার লাশও পড়ে থাকবে বিদেশে।

মানুষের ব্যক্তিত্ব হলো একটি দোকান। মুখ হচ্ছে তালা। তালা খুললেই বুঝা যায় এটা কী হিরার দোকান নাকি কয়লার দোকান। সোজা কথা হল, কথা বলা একটি আর্ট বা শিল্প, এর শক্তি বিস্ময়কর। সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে সঠিক শব্দ প্রয়োগ করে সুন্দরভাবে গুছিয়ে বললে যে কাউকে বশ করা যায়। চুপ করে থাকলে, উল্টো দোষী হতে হয় , অনেক সময় ভুল বুঝে মানুষ। জীবন জীবিকাও ঠিক তাই সুন্দর করে সাজাতে হয়, না হয় এলোমেলো হয়ে যায় সব। আর এইটা অনেক সময় টাকা থাকলেও কিছু লোক করতে পারে না তাদের ভিতর হয়তো আমিও একজন। আর তুমি সঠিক সময় সঠিক কাজ করে এবং স্বামীর সাথে সঠিক আচারন করে জীবন সুন্দর করেছো। জয় হয়েছে তোমার ।

ফয়জুল মহী।
২৫/০৬/২২

ভালোবাসায় তুমি

272623

তোমাকে স্মরণ করতে ভালো লাগে
শীতের সকালে হিমেল হাওয়ায়,
রোদের উষ্ণতায় সেজদায় পড়ে।

তোমাকে ভাবতে ভালো লাগে
আমার ভালোবাসায়,
দিন বা রাতে কাজ শেষে।
স্নিগ্ধ আলোর জ্যোৎস্নায়,
কোরান পড়ার মিহি সুরে।

তোমাকে ডাকতে ভালো লাগে
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে
কারণ তুমি আছো আমার সমস্ত বিশ্বাসে
হৃদয়ের গভীর আঙ্গিনায় কিংবা বাহিরে।

তুমি রহমান, তুমি রহিম, তুমি করিম
তুমি পরম করুণাময়, তুমিই আমাকে সৃষ্টিকারী।

কালো আকাশ, সাদা চাঁদ

VG

শুধু একবার কচি কচি প্রেম নিয়ে এসো
নিয়ে এসো অফুরন্ত ভালোবাসা,
ওই দূর কালো আকাশে চাঁদ,
যতটা ভালোবাসায় জেগে রয়।

যখন হৃদয় প্রচণ্ড ব্যাকুল হবে
প্রবল ভালোবাসায় কাঁদবে মন প্রাণ
সকল বাঁধা চূর্ণ করে ছুটে আসো।
কালো কালো পাথরসম ভালোবাসা
চলার পথের খুব অন্তরায়।

লাল গোলাপী ওড়নাটা হাওয়ায় উঠবে
টেনে নিয়ে তুমি চেপে ধরবে দাঁত দিয়ে।
বসন্ত বাতাসে এলোমেলো তোমার চুল
দৌড়ে গিয়ে খোঁপায় দিবো বেলী ফুল।

অতি জরুরী সতর্কতাঃ আরো বড় বিপদ, ওমিক্রন

omicron

করোনা ভাইরাসের অতি বিপদজনক নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করেছে। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশ ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই অঞ্চলের কয়েকটি দেশের যাত্রীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

বাংলাদেশে যে কোন সময় করোনা ভাইরাসের নতুন এই ধরন ঢুকে যেতে পারে, এবং নিশ্চিত ঢুকবেই। গত কিছুদিনে দেশে সংক্রমণ কম থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে দেশের মানুষ খুব ঢিলেঢালা ভাব দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন যেভাবে জনসমাগম হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে, তাতে যে কোন সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই সময় হতে ব্যক্তি সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

# অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া শপিংমল, মার্কেটে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
# জনসমাগম, হাট বাজার এসব জায়গা যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করতে হবে।
# রেস্টুরেন্টে বা হোটেলে বসে খাওয়া বন্ধ করতে হবে আপাততঃ।
# কোথাও ঘুরতে যাবার ইচ্ছা থাকলে এখন বাতিল করুন, গিয়ে হয়তো বিপদে পড়তে পারেন। তাই এসব বিলাসিতার খরচ বন্ধ করুন।

# অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতার খরচ বন্ধ করে টাকা হাতে রাখুন। ভবিষ্যতে খারাপ সময় আসছে।

# মাস্ক ব্যবহার করুণ, স্যানিটাইজার ব্যবহার করুণ।
# সবচাইতে ভয়ের কথা করোনা ভাইরাসের নতুন এই ধরন আগের ডেল্টার চাইতে অন্তত দশ গুন বেশি শক্তিশালী, এবং টিকা দেয়া থাকলেও নাকি কাজ হবে না। আল্লাহর ওয়াস্তে যার যার জায়গা থেকে সতর্ক এবং সচেতন হোন।

আল্লাহ একমাত্র ভরসা। সবার মঙ্গল কামনা করি।

এখনি সময় দেশপ্রেমিক ও ধর্মপ্রেমিক প্রমাণ দেওয়ার

202110

কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান কী পবিত্র কোরআন শরীফের অবমাননা করবেন?
কোনো ধর্মপ্রাণ হিন্দু কী তার মন্দির ও প্রতিমাকে অবমাননা করবেন?
না, কেউ করবেন না।
তাহলে পবিত্র কোরআন শরীফ মন্দিরে রাখলো কে?
নিশ্চিত এমন কেউ রেখেছে যারা “ডিভাইড এন্ড রুল” গেম খেলে ফায়দা লুটতে চায়। যারা দেশ কে অশান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।

এই কুচক্রী দেশ বিরোধী বিদেশী শক্তির দালালেরা নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে ভুল বুঝিয়ে, ধর্মীয় আবেগের টোপে ফেলে মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে প্ররোচনা দিতেছে। তারা আপনার আমার সবার শত্রু। এরাই পবিত্র কোরআন শরীফকে মন্দিরে রেখে মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে মানুষের জান-মাল এর বিনিময়ে রাজনীতি কিংবা স্বর্গীয় টিকেট বিক্রি করে। আপনার আমার আশেপাশে গোপনে ঘাপটি মেরে আছে এই বেজন্মা দেশবিরোধী সকল ধর্মের শত্রু গুলি। এদের অপপ্রচার, উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড হতে নিজেকে দূরে রাখুন।

ধর্ম এবং রাজনীতির আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিদেশী গুপ্তচর ও তাদের দেশীয় দালালদের প্রতিহত করে দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান মিলেমিশে থাকার যে ধারা তা অব্যাহত রাখতে ভুমিকা পালন করবো। দেশ আমার এবং আপনার দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। পৃথিবীতে সাম্যের একমাত্র বীজ বপনকারী আমাদের নবীকে অনুসরণ করে চলি। মতলববাজ, সন্ত্রাসী এবং বিকৃত মনের লোকই অন্য ধর্মের জান-মাল বিনষ্ট করতে পারে। ইসলাম মানা কোনো মানুষ এইভাবে অন্যের মন্দির মূর্তি বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে পারে না। সাম্য ভ্রাতৃত্ব বিনষ্টকারী সন্ত্রাসী প্রতিহত করুণ তাদের কুকর্মের ভিডিও ধারণ করতেও চেষ্টা করবেন।

Cyber Police Centre, CID, Counter Terrorism & Transnational Crime, Rapid Action Battalion (RAB) Bangladesh এর ম্যাসেঞ্জারে ছবি, ভিডিও পাঠিয়ে সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিন।

যুবক, ডেসটিনি, আহসান সবই নগদ হিসাবে ইভ্যালির গাড়িতে

এই পৃথিবীতে যুগে যুগে কালে কালে কিছু কিছু মানুষ লোভের মিষ্টি ছড়ায় আর কিছু কিছু মানুষ সেই লোভের মিষ্টি খায়, কিংবা লোভের ফাঁদে পড়ে। পরিণাম অবশ্যম্ভাবী পতন। অতি লোভে গলায় দড়ি তো পড়বেই। কেউ আপনাকে মারুতির দামে মার্সিডিজ গাড়ি দিতে চাইলে অবশ্যই সেখানে কোন গণ্ডগোল আছে, এইটুকু বোঝার জ্ঞান যদি আপনার না থাকে তাহলে তো আপনি অপদার্থ, মুর্খ।

যুবক, ডেসটিনি, ইউনিপে দেশের কতিপয় মানুষের লোভকে পুঁজি করে তাদের লোভনীয় ফাঁদ পেতেছে আর মানুষ সেই ফাঁদে পা দিয়েছে। দুই পক্ষই সমান অপরাধী। যার সর্বশেষ নমুনা ইভ্যালি। এই দেশে বিশাল বড় একটা অর্গানাইজড ফিনানশিয়াল ক্রাইম দেখলো ইভ্যালি ও আহসানের মাধ্যমে। দেশের মানুষকে বলে, বুঝিয়ে আসলে কোন লাভ নেই। আবার নতুন কোন ফাঁদ আসবে, কিছু মানুষ আবার মিষ্টির পিছনে দৌড়াবে।

নিজেকে সামলান, নিজের লোভ সামলান, এক লাফে গাছে উঠা বা এক লাফে বড়লোক হওয়ার অলীক চিন্তা বাদ দিন। দেখবেন অনেক কিছুই বদলে গেছে। রাসেল, তার বউ এবং আহসানের মৌল্লারা যেমন প্রতারক, ধান্দাবাজ, অপরাধী, তেমনি আপনি তাদের প্রলোভনে পড়ে নিজেও কম অপরাধী নন! তারা হাজার কোটি টাকার লোভ করেছে আপনি হয়তো হাজার, লক্ষ টাকার লোভ করেছেন পার্থক্য কেবল টাকার অংকটা।

এইসব প্রতারকদের হাত অনেক লম্বা। এদের মাথায় থাকে ক্ষমতাবানদের ছায়া। তাই যুবক কিংবা ডেসটেনির টাকা কোন লোক ফেরত পায়নি। আহসান কিংবা ইভ্যালিরও পাবে না। রাজনীতি পরিবর্তন হলে একদিন নগদও বকেয়া হবে হয়তো।

লাশ লাশ এই খেলায় জিতবে দুই পক্ষ: হবে হানিমুন হারবে ধর্ম দেশ সভ্যতা ও নীরব জনতা

2021rr

ফিরে দেখা অতীতঃ
যারা হজ্ব কিংবা ওমরা করতে গিয়েছেন তারা দেখেছেন অত্যন্ত ছোট্ট একটা পাখি মসজিদুল হারামের ভিতর উড়াউড়ি করতে এবং মসজিদের ভিতরে ছোট ছোট মাটির ঘরে বসবাস করতে আর এই পাখিটিই আবা-বীল। যার কাজ এবং বর্ণনা কোরানে মুসলিম মাত্রই পড়েছেন। ঝাঁকে ঝাঁকে আবা-বীল পাখি কংকর নিক্ষেপ করে ছিলো ইসলামের দুশমনকে। কারণ আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি হেফাজত করার জন্য।

বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হলেও বিভিন্ন ধর্মের লোকের বাস এই জনবহুল দেশটিতে। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করে বাধাহীন ভাবে। তবে মাঝে মাঝে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ধর্মের উপর আঘাত করে কিছু মানুষ নামের অমানুষ। আমার গ্রামে মসজিদের পাশেই হিন্দু বাড়ি সন্ধ্যায় মসজিদ হতে আজানের ধ্বনি শুনা যায় আর মন্দির হতে শুনা যায় উলুধ্বনি। আজ অবধি কোন সমস্যা হয়নি মসজিদ ও মন্দির হতে একই সময় ভেসে আসা এই অসম ধ্বনি নিয়ে। তারপরও কিছু মুসলিম নিজ ধর্মের কঠোর সমালোচনায় মেতে উঠে কিন্তু হিন্দুরা নয়।

বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ গরিব, এতিম এবং ভাসমান শিশু আছে যাদের ভরণ পোষনের দায়িত্ব রাষ্ট্র কোনো কালেই নেয়নি। এমন কী রাষ্ট্র পরিচালিত কোনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাও শিক্ষার সুযোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেনা। অথচ এদের জন্য শিক্ষাই হলো সম্পদ। আর আমরা যাদের ধর্ম ব্যবসায়ী বলি তাঁরা অর্থাৎ কওমী মাদ্রাসায় সারা বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এইসব নিরীহ শিশুরা খেয়ে পরে বেঁচে আছে। ব্যতিক্রম কিছু বাদ দিলে বেঁচে থাকার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষালাভ করে জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর অনেকে সুযোগও পেয়েছে। তাই তারা ওস্তাদ এবং কওমী মাদ্রাসার প্রতি অনুগত, এইটাই বছরকে বছর চলে আসছে। দেশে জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ধর্ম চর্চা যেমন বেড়েছে তেমনি বিরুদ্ধ আচরণও বেড়েছে। এই বিরুদ্ধ আচরণের কারণে গঠন হয় অরাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলাম। ধর্মহীন মানুষ ব্যতীত ধর্মভীরু সাধারণ জনগণ এতে ব্যাপক সমর্থন দেয়। তবে এই হেফাজতকে আওয়ামী লীগ প্রথম পাত্তা না দিলেও জনগণের সমর্থন দেখে ভীত হয়ে শুরু করে পলিট্রিক্স। আর এতে ভিতরে ভিতরে সরকারের হাতের পুতুল হয় হেফাজত আমীর শফী সাহেবের ছেলে এবং উনার কাছের লোকজন।

আস্তে আস্তে হেফাজতে দেখা দেয় মতবিরোধ এই সুযোগে চরম ধর্মহীনেরা শাপলা চত্তরে সরকারী সব বাহিনী দিয়ে নর হত্যায় মেতে উঠে। সহায় সম্বলহীন মায়ের সন্তান হত্যা করে রক্তের দাগ পর্যন্ত মুছে ফেলে রাস্তা হতে সরকার আর হৃদয় হতে মুছে ফেলে ইসলাম হেফাজতকারী নেতারা। এরপর চলতে থাকে লীগ হেফাজত হানিমুন এই সুযোগে শফী সাহেবের কাছের লোক হয় সম্পদশালী। দুঃখজনক হলো যেইসব হেফাজত কর্মী মারা গেল তাদের নাম ঠিকানাও হেফাজত প্রকাশ করেনি। দেয়নি তাদের পরিবারকে কোনো রকম অর্থনৈতিক সাহায্য। অথচ অনেক বিধবা মা একমাত্র সন্তান হারিয়ে জীবন সাগরে ভাসছে আর হেফাজত নেতা ভাসছে সম্পদে। আস্তে আস্তে হেফাজতের একপক্ষ সরকারী মধু খাওয়ায় মত্ত হয়ে পড়ে আরেক পক্ষ মধুর খোঁজে সরকার বিরোধী।

বর্তমান হেফাজত ও লীগঃ
ভাগ্য পরিক্রমায় শফী সাহেব পক্ষ ধরা পড়ে কর্মীর জালে আর উনি জীবন দিয়ে ঋণ শোধ করে মৃত কর্মীর মায়ের। নেতৃত্ব চলে আসে চরম লীগ বিরোধীদের কাছে (মাঠে ময়দানে বক্তব্যে মনে হয়, ভিতরে কী তারা জানে)। সবাই জানে আওয়ামী লীগের কাছে জনপ্রিয় ছিলো মামুনুল হকের বাবা শায়খ আজিজুল হক। যার কারণে শায়খ আজিজুল হক চার দলীয় জোট হতে বের হয়ে আওয়ামী জোটে যোগ দেয় এবং চুক্তি করে হালুয়া রুটির। মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের নেতা ইসলামী বক্তা সে কোনমতেই রাজনৈতিক নেতা হওয়ার যোগ্য নয়। মামুনুল হক ওয়াজিন হিসাবে নেতা হয়েছেন বলে ওনার মধ্যে পরিপক্বতার অভাব আছে বলে আমার মনে হয়।

ইসলামের নামে রাজনীতি করতে হলে উন্নত নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলী থাকতে হয়। অনেক সাবধানে জীবন যাপন করতে হয় যেন কেউ অপবাদ দিতে না পারে। তা না হলে সমাজে কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সাধারণত রাজনীতি যারা করেন এদের সিংহ ভাগেরই চরিত্র ও নৈতিকতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে এবং মানুষ তাদের ক্ষমতার প্রভাবে বাধ্য হয়ে চুপ থাকে। তবে নোংরামিতে এই ধর্মীয় রাজনীতিবিদরা কখনই আওয়ামী রাজনীতিবিদদের হারাতে পারবে না। আমাদের দেশে প্রচলিত রাজনীতি সম্পর্কে ওলামাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের অভাব আছে। ফলে তারা সামনে আরও বিপদে পড়তে পারে যদি লীগ ক্ষমতায় থাকে। ইতিমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আসন হতে উনার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিমায় হুমকি দিয়েছে কওমীদের বাড়িঘর এবং মাদ্রাসায়ও আগুন জ্বলবে। শত উসকানিতেও জ্বালাও পোড়াও করা যাবে না। অথচ হেফাজত দেশের সম্পদ নষ্ট করার মত পচা রাজনীতির পথ অনুসরণ করেছে যা দুঃখজনক।

আওয়ামী লীগ তাদের প্রধান প্রতিপক্ষকে বহু আগেই কোমর ভেঙ্গে কোমায় পাঠিয়ে দিয়েছে যার কারণে বিএনপিকে হিসাবেই ধরে না। ভারতের সমর্থন এবং দেশীয় সব বাহিনীর সমর্থনে এরা দেশে যা ইচ্ছা তাই করতে পারছে। এমন অবস্থায় হেফাজত বিষ পোড়া। হালুয়া রুটির ভাগ না পাওয়ার বেদনা, ভিতরে ভিতরে বর্তমান হেফাজত নেতারা ফিল করে বলে মাথা তুলে মাঝে মাঝে। আর এতে পাশে থাকে লাখ লাখ কওমী ছাত্র যারা ধর্মে এবং ওস্তাদে মাতাল। এতে বিএনপির খুশি হওয়ার কিছুই নেই। আওয়ামী লীগ বর্তমান হেফাজত নেতাদের হয়তো সম্পদ দিবে, না হয় ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করবে, না হয় গুম করবে খুন করবে, মামলার জটে ফেলবে যেমন করেছে বিএনপিকে। সবচেয়ে বড় অস্ত্র চেতনার মোড়কে পুরাতন ক্যাপসুল জাতি এবং বিশ্বকে দিবে হেফাজত জঙ্গী।

মুসলিম নামধারী শাহবাগের উগ্র ইসলাম বিরোধীদের দমনে হেফাজত সফল হলেও মূর্তি নিয়ে আন্দোলন, ফ্রান্স নিয়ে আন্দোলন সর্বশেষ ভারত ও মোদি নিয়ে আন্দোলন কোন কিছুতেই সফল হয়নি হেফাজত। মাঝখানে ১৭জন মানুষ মরে গেল যার বেশীর ভাগ গরিব ঘরের। এক হাফেজ মাকে বলে ছিলো রমজানে ইমামতি করে ঈদে বাড়ি ফিরবে কী জবাব দিবে হেফাজত এই মরে যাওয়া হাফেজের মাকে। এই মৃত লোকদের বাড়ি বাড়ি হেফাজত নেতা সমবেদনা জানাতে যায়নি, এই মৃত লোকদের এখনো কোনো অর্থনৈতিক সাহায্য হেফাজত করেনি। একটা আওয়াজ তাদের মনকে কম্পিত করেছে এমন লড়াই করে মরে গেলে জান্নাত পাবে। অথচ দুনিয়ার জান্নাত (পরিবার) প্রিয়জন হারিয়ে আগুনে জ্বলবে জীবনভর জান্নাত পাওয়া এত সহজ হলে হেফাজত নেতা কেনো মরে না। কেনো কর্মীর লাশের উপর ভর করে হেফাজত নেতারা সরকারের সাথে হানিমুন করে।

ধর্ম ব্যবসায়ী ও বাহারি নামঃ
তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ ফেরত না দিয়ে মরে গেলেন একজন সরকার দলীয় এমপি। নদী দখল, ভূমি দখল, বাড়ি দখল, নারী দখল সব আছে লীগের দখলে। এমপি, ডিসি সবার নারীর সাথে ভিডিও লীগের দখলে। ক্যাসিনো, জুয়া, মদ, ইয়াবা সব ব্যবসা লীগের দখলে। ব্যাংক, বীমা ও দুদক লীগের দখলে এমনকি স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি এই সবও লীগের দখলে। লীগকে সমর্থন করা বেশ কিছু মাওলানার দখলে ধর্মের ব্যবসাটাও। আর এইসব ব্যবসা লীগের লোক করলে জায়েজ আর অন্যরা করলে হারাম। সাধারণ কিছু মাওলানার নামের সাথে আজব উপাধি দেখে (আজহারি, মাদানী, কুয়াকাটা ) লীগ এই উপাধিও অচিরে দখল করতে চাইবে। ওলামা লীগ যারা করে তারা ইসলামী লেবাসে ধর্মের জমজমাট ব্যবসায়ী। এই ওলামা লীগে কাঠ মোল্লার অভাব নাই যারা জামাতি ও কওমী মোল্লাদের বিরোধিতা করে ধর্ম ব্যবসা নিজেদের অনুকূলে রেখেছে।

মাওলানাদের মতভেদঃ
মাওলানাদের মতভেদের কারণে সবসময় সুযোগ নিয়েছে সেক্যুলার শ্রেণীর নগণ্য অংশ। ভারত উপমহাদেশের দুই ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা চালু করেছে মাওলানারা। ধর্মীয় পণ্ডিত মওদুদীর অনুসারী আর কওমী মাদ্রাসার অনুসারী যেন মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া সুন্নীর সম্পর্ক বিদ্যমান। মওদুদীর লেখা ইসলামী বই এবং কওমী ঘরণার ইসলামী বই পড়লে আকাশ পাতাল ব্যবধান বুঝা যাবে। এই ছাড়া আছে সুন্নী, ওহাবী, আহলে হাদিস ও মাজার পুজারী। সবাই নিজেকে সহী শুদ্ধ ইসলামের প্রধান খেদমতকারী মনে করে একে অপরের পিছনে বাঘে মহিষে লেগে আছে। মাঝে ফায়দা নিচ্ছে কতিপয় নষ্ট সেক্যুলার ও তাদের সাথে থাকা মোল্লারা।

শেষ কথাঃ
সব ভেদাভেদ ভুলে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির বাহিরে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক সুরে গঠনমূলক কথা বলতে হবে ইসলাম অবমাননাকারীর বিরূদ্ধে। সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে কথা বলতে হবে কোনো মতে উসকানি দিয়ে গরিব এতিম কওমী ছাত্রদের লাশ বানানো যাবে না। নীতি নৈতিকতা ঠিক রেখে প্রচণ্ডভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে সব জালিম ধর্মহীনদের বিরূদ্ধে। প্রতিটি কওমী মাদ্রাসায় ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিচ্ছিদ্র করতে হবে। হেফাজত হোক দেশের, মানবের ও ধর্মের।

পুনশ্চঃ আমি ধর্ম এবং রাজনীতি বিশ্বাসী।

ফিরে দেখা অতীত: তখন বাংলাদেশে সোনার মানুষ ছিল

FB_IMG_1604

সাল ১৯৭৮ (আমার অদেখা)
ঢাকা মেডিকেলের যৌতুকলোভী ও চরিত্রহীন ডাক্তার ইকবালকে কাজের মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে স্ত্রী সালেহা।

ফলাফল – ইকবাল ব্লেড দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে সালেহাকে। বলে আত্মহত্যা। অস্থায়ী বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ইকবালের পরিবারের। সালেহার পরিবার বলে হত্যা। সালেহার পক্ষে দেশবাসী। ঐ সময় জেলা শহরগুলিতে পত্রিকা পৌঁছাতো একদিন পরে।

কম্পিউটারের প্রচলন ছিল না।
– প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় আত্মহত্যা।দেশবাসী মেনে নেয়নি। তৃতীয় দফায় কবর থেকে লাশ তুলে আবার ময়না তদন্ত। এবার কোথায়? নেয়া হয় সলিমুল্লাহ মেডিকেলে।

ফলাফল – হত্যা।
ইকবালের ফাঁসির আদেশ।

পুলিশ
কিভাবে প্রমাণ করেছিল জানেন?
সালেহার দেহে ব্লেড টানার ধরণ দেখে মত দেয় – এটি কোন বাম হাতি অর্থ্যাৎ ন্যাটা মানুষের কাজ। ইকবাল ছিলেন বাঁ হাতি। সেখানেই শুরু এবং পুলিশ এক বিন্দুও ছাড় দেয়নি।

সাংবাদিক
সাংবাদিকরা পত্রিকার প্রথম পাতায় ছোট করে হলেও প্রতিদিন খবর ছাপিয়ে গেছে ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত, দেশবাসীও ছাড়েনি। এই ফাঁসির পেছনে বড় অবদান সাংবাদিকদের ছিল বিধায়, ফাঁসির পরে সাংবাদিকরা ইকবালের পরিবারের সাক্ষাতকার নিতে গেলে লাঠি দা নিয়ে ইকবালের পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের তাড়া করেছিল।

প্রেসিডেন্ট
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তাররা গেলে, তিনি তাদের তিরস্কার করে বের করে দেন।

বাড়তি প্রাপ্তি
এই হত্যাকাণ্ডের ফলেই ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে যৌতুক বিরোধী আইন পাশ হয়।

সাল ১৯৮৯ (আমার দেখা)
বাংলাদেশের দুই কিংবদন্তী ডাক্তার দম্পতি গাইনির মেহেরুন্নেসা ও ঢাকা মেডিকেলের প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাশেমের কুলাঙ্গার পুত্র মুনির জড়িয়ে পড়ে খুকু নামের এক বিবাহিতা মহিলা ও মায়ের বয়সী নার্স মিনতির সাথে অবৈধ সম্পর্কে। এই সম্পর্কের কথা স্ত্রী জেনে গেলে মুনির ও খুকু পরামর্শ করে স্ত্রীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। মুনির খুন করে স্ত্রী-
– মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিনের কন্যা শারমীন রিমাকে।
দেশ আবার ফুঁসে উঠে। কম্পিউটার তখনও সেভাবে আসেনি। ইন্টারনেট মোবাইল নেই। আবার প্রতিবাদে ফেটে পড়ে দেশ। পত্রিকার কাভারেজ, জনতার একাত্মতা, রীমা হত্যা নিয়ে ধারাবাহিক চটি বই, ক্যাসেটে গান, পথে ঘাটে ট্রেনে বাসে শিল্পীরা রীমার পক্ষে গান গায়। সেই গান শুনে যাত্রীরা কাঁদে, গান অপছন্দ করা মুরুব্বীরা শিল্পীদের সেলামি দেয় – আমার সোনার বাংলায়।

মুনিরের ফাঁসির আদেশ হয়। জনগন তাতেও খুশী নয়, খুকুরও ফাঁসি চাই।

একাত্মতা
আওয়ামীলীগ, বিএনপি বলে কিছু ছিল না। ছিল, সাধারণ জনগণ। আমি নিজে দেখেছি ১৯৯১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা (আরিচা মহাসড়ক) ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এক হয়ে বন্ধ করে দেয়। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। বাধ্য হয়ে মুনিরের সাথে খুকুরও ফাঁসির আদেশ হয়। যদিও উচ্চ আদালতে খুকুর ফাঁসির আদেশ পরবর্তীতে বাতিল হয়। তবে, বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারের পুত্র মুনিরের ফাঁসি কেউ ঠেকাতে পারে না। ফাঁসি হয়।

এই ছিল আমার সোনার বাংলা। সোনার বাংলায় সব ছিল । আর এখন নেই কিছুই, আছে ফেসবুক। আমরা সবাই মিলে চাইলে কি অপরাধী গুলো কে শাস্তি দিতে পারিনা? আইন আর বিচার ব্যবস্থার সার্বিক উন্নতি কামনা করতে তো দোষ নেই। চলুন বদলে যাই, বদলে দেই, আমাদের প্রিয় দেশটাকে। গড়ে তুলি স্বপ্নের বহু আকাঙ্খিত সেই সোনার বাংলা। ধর্মে নয়, কর্মে হোক মানুষের পরিচয়। সবার একটাই পরিচয়। আর সেটা হলো আমরা মানুষ।

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র

MG_16057

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৪৬তম পর্ব।


আসসালামুলাকুম আন্টি। কেমন আছেন।
আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো নাহিদ। যাক, জামিন হলো শোকর আল্লাহর ।
জ্বি আন্টি জামিন পেলাম।
যাও ফ্রেশ হয়ে নাও আমি খাবার দিচ্ছি।
ঠিক আছে আন্টি। আম্মু এবং শিউলীর কথা খুব মনে পড়তেছে।
আল্লাহ মেয়েটাকে জান্নাতবাসী করুণ। শিউলী জীবিত থাকলে তোমার জামিনে অনেক খুশি হতো। তোমার বাসায় জানে তুমি জেল হতে বের হয়েছো।
জ্বি, আম্মুকে ফোন দিয়ে কথা বলেছি।
আম্মু আপনি নাহিদকে খেতে দিবেন নাকি কথাই বলবেন।
আরে সুজন আমি খেতে পারছি ।
ঠিক আছে তোমরা খাও, কিছু লাগলে বলিও।
কি লাগবে বল নাহিদ।
সামনে সব আছে লাগলে আমি নিবো।
ভেরি গুড়।

কোন কিছুই ভালো লাগছে না সুজন, প্রচণ্ড অস্থির লাগছে মনটা । এইভাবে শিউলী আমাকে ছেড়ে চলে গেল। ইস! সে হয়তো আমাকে আমৃত্যু অভিশাপ দিয়ে গেল। আমি তাকে ভালো খাওয়াতে পারিনি ভালো পরাতে পারিনি। সে আমার প্রকৃত পরিচয়ও জানতে পারলো না শুধু জানতো আম্মু কিছু টাকা পাঠাতো যাহা দিয়ে চলতেও কষ্ট হতো।
এখন আর এইসব চিন্তা করে কোন লাভ হবে না।
তা ঠিক সুজন কিন্তু মনকে বুঝাতে পারছি না।
এখন কি তুই কোথায় থাকবি কি করবি ভেবে দেখ। দেখি সোবহান মিয়া কি বলে, তারপর সিদ্ধান্ত নিবো। জীবন তুমি আমাকে এমনভাবে ধাক্কা দিলে চলার পথে সব কিছু তছনছ হয়ে গেল।
একটা টিকটিকি দেয়ালের উপরে কোনায় বসা । বুকের মাঝামাঝি জায়গায় চামড়াটা টিকটিক করে উঠানামা করছে। কখনো কখনো দৌড়ে এসে লাইটের উপর বসা ছোট পোকামাকড় ধরে খায়। তবে বসে থাকে না আবার ফিরে যায় নিজের জায়গায় সেই কোনায়টায়।
আমি ঘুম যাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু ঘুম আসে না। চোখ বন্ধ করলেই শিউলীর মায়াবী নিষ্পাপ মুখটা ভেসে উঠে। মনে হয় যেন বলতে চায় ভালোবাসি বলে ভালোবাসি। খুব ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে কপালটায় একটা আদর করি কিন্ত পারি না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুম আসে কখন বলতেই পারি না।

চাচা কি বাসায় আছে?
জ্বি আছে, বসেন ডেকে দিচ্ছি।
ঠিক আছে, বলবেন নাহিদ এসেছে দেখা করতে।
আরে নাহিদ মিয়া তুমি কবে ছাড়া ফেলে জেল হতে। একটু ফোন দিলে না, একটু খবর দিলে না । আমি জেল গেইটে যেতাম নিয়ে আসার জন্য আচ্ছা থাক এইসব কথা, এখন বলো কেমন আছো, কি খাবে? চাচা আমি আমি ভালো আছি , চা হলে ভালো হয়।
তোমার বাসায় তালা মারা , আমার ভাড়া দিলো না এবং বললোও না তোমার বউ চলে গেল কাজটা কি ঠিক হলো বাবা! আমাকে বলে যেত পারতো সে।
চাচা আমার বউ কিছু দিন আগে বাস দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে আপনি জানেন না?
ইন্নারিল্লাহ। আহারে, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। খবরে দেখেছি ঢাকাগামী একটা বাস অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।
জ্বি সেটাই। আমি জেলে যাওয়ায় সব শেষ হয়ে গেল। এখন তুমি আমার বাসায় থাকবে নাকি মা বাবার বাসায় থাকবে। তুমি এখানে থাকলে আমার কোন আপত্তি নাই , টাকা পয়সা লাগলেও বলতে পারো।আমি আপনার এখানে থাকতে চাই এবং আপনার সাথেই কাজ করতে চাই, যদি আপনি সুযোগ দেন ।আমার দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা।
আরেকটা কথা বলবো চাচা।
আরে বলো কি বলতে চাও।
আগামী কাল আমার কিছু টাকা লাগবে। আমি আমার শুশুর-শাশুড়ীর সাথে দেখা করতে যাবো।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি তিন হাজার টাকা দিবো যাও দেখা করে আসো। আমি তোমার জামিনের জন্য সরকারি পিপি কে অনেক বার ফোন করে বলেছি ভালোভাবে চেষ্টা করতে। কিন্তু তোমার বন্ধু সুজন কোন দিন দেখাও করলো না আমার সাথে তাই খবরাখবর জানতে পারি নাই। একটু রাগও ছিলো, এখন তুমি আসছো সব পুরাতন কথা ভুলে নতুনভাবে শুরু করো । তোমার সব কিছু আমি দেখবো।
ধন্যবাদ চাচা।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র।
৪৭তম পর্ব।

সোবহান মিয়ার সাথে কথা বলেছি সুজন।
ভালো হয়েছে, কি বললো উনি ?
এইসব লোক হল খুবই চতুর। এরা মিথ্যাভাষণে পটু এদেরকে বিশ্বাস করা আর নরকে বাস করা সমান কথা। তবে ভালোই বলেছে তার বাসায় থাকতে বলেছে টাকা পয়সা নিয়ে সমস্যা হবে না বলেছে। আমি শিউলীদের ওইদিকে যেতে চাই তুই যাইবি ঘুরতে। আর সকালে আমি সোবহান মিয়ার সেই বাসায় চলে যাব, আপতত সেখানে থাকি।
শিউলীর মা বাবা তোকে দেখে রাগ করে কিছু বললেও তুই মন খারাপ করবি না। আমার সময় হবে না যাওয়ার , না হয় গিয়ে দেখে আসতাম। টাকা পয়সা কোথায় হতে যোগাড় করবি আমার একদম হাত খালি এখন তবুও দেখি কি করা যায়।
ওহ হ্যাঁ, সোবহান মিয়া তিন হাজার টাকা দিবে বলেছে দেখি আরেকটু বেশী নিতে পারি কিনা।
তিন হাজার টাকায় হবে না তোর ।
সন্ধ্যায় দুইজনে চা নাস্তা না করে বাহিরে চলে গেলে। এখন চা দিবো নাকি তোমাদেরকে ?
দাও আম্মু, চা পান রত আলাপে মজা লাগবে।
আন্টি কাজের মেয়ে কোথায়?
তোমার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করো বাবা। সুজন বলে ছোট বাচ্চা মেয়ে দিয়ে কাজ করানো অমানবিক । আর বড় মেয়েরা চুরি করে, মান সম্মানের ভয়ে কিছু বলাও যায় না।
আম্মু আমি তোমার যদি কলিজার টুকরা হই অন্যের সন্তানও তাদের কাছে সেই রকম এইটা কেউ না বুঝলে আপনি আমার মা হয়ে এইটা বুঝবেন। বিভিন্ন কারণে মানুষ ছোট মেয়েদের অন্যের বাসায় কাজে দেয় সেখানে তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করে অমানবিক খাটুনি খাটায়। এর পরও একটু এদিক সেদিক হলে অকথ্য নির্যাতন চালায় যা খুবই দুঃখজনক। এর চেয়ে ভালো আপনি আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছেন কাজ করছেন। গৃহকর্মীর কাজের টাকা প্রতি মাসেই দুইজনকে পড়ালেখা করতে দিচ্ছি আর আমি বস্তিতে গিয়ে বাচ্চাদের লেখাপড়া দেখিয়ে দিচ্ছি এইটাই আমার কাছে ভালো লাগে। আর সমস্যা হলে আমি আপনাকে কাজ সাহায্য করবো।

চা নাও তোমরা ।
আন্টি আপনি সুজনের মা হয়ে গর্বিত। তার জন্যই আমি জেল হতে বাহির হতে পেরেছি।
এইভাবে আমাকে উপরে উঠাতে হবে না শেষে পড়ে আমার কোমর ভেঙ্গে যাবে, নাহিদ।
হাঃ হাঃ হাঃ (সবাই হেসে উঠে)।
“মা তুমি আমাকে দুনিয়ায় এনেছো
আমি তোমাকে দুনিয়া দেখাবো”।
সুজন কবিতা বলে মাকে জড়িয়ে ধরে। নাহিদ সেই দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে। আস্তে আস্তে নাকি সব ঠিক হয়ে যায়? অথচ প্রিয়জনের স্মৃতি মনে পড়লে মানুষ কাঁদে? কারণ মনের অগোচরে সব রয়ে যায়! শুনেছি মানিয়ে নিলেই নাকি সব ঠিক হয়ে যায়। তবে কেনো সংসার ছেড়ে মানুষ বৈরাগী হয়। তবুও কেনো মানিয়ে নিতে নিতে লোক চরমভাবে হেরে যায় জীবনের কাছে!

পরিবারের জন্য ভালোবাসা ত্যাগ দেওয়া কি ঠিক? নাকি ভালোবাসা আগলে রেখে সময়ের সঙ্গে চলা উচিত? কিন্তু মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে খুশি করতে চাইলে, তাকে শুধুই ভালো রাখা যায়, ভালোবাসা হয়না! তাই হয়ত ভালোবাসা মানে ভালো রাখা হলেও ভালো রাখা মানেই ভালোবাসা নয়। আম্মু আমাকে ভালোবাসা দিয়ে বুকে আগলে ভালো রাখতে চেয়ে ছিল কিন্তু হয়নি আমি ভালোবাসা দিয়ে শিউলীকে ভালো রাখতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু পারিনি।নিয়ম করে কোন কিছু হয় না কিংবা চলে না। জীবন চলে জীবনের আপন নিয়মে মানুষকে শুধু শক্ত হাতে হাল ধরতে হয় না এলোমেলো হওয়ার সম্ভবনা থাকে।সাগরে পাল তোলা নৌকার মত মাঝি শক্ত হাতে বৈঠা না ধরলে ঝড় আসলে উল্টে যায় নৌকা জীবনও ঠিক তাই। জানি না আমার জীবনে কোন ভুলের প্রভাব পড়লো। আব্বুর অতিরিক্ত শাসন আম্মুর অতিরিক্ত আদর ভালোবাসা এই দুইটির প্রভাবে জীবনের মাঝ সাগরে ডুবন্ত জাহাজ আমি। এই ঝড়ের মাঝো শিউলী যাত্রী হয়ে সাগরের তলদেশে যেখান হতে আর কখনো ফিরে আসার পথ নেই। ক্ষমা করো শিউলী তোমার স্বর্গময় বিচরণ হতে। শুনেছি – “মানুষের জীবনে সব কিছুই ছোট ছোট হয়, জীবন ছোট, ভালোবাসার দিন ছোট, শুধু দুঃখের কাল বড়”। দেখা যাক আমার বেলায় কেমন হয়।

আমি সকাল সকাল যেতে হবে, না হয় সোবহান মিয়াকে পাবো না পরে গেলে, বাসাটাও দেখে আসবো। সব ঠিকঠাক মতো আছে কিনা দেখবো। টাকা হলে আগামী কাল রওয়ানা হবো শিউলীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কয়েক দিন থাকবোও সেখানে । ঠিক আছে নাহিদ।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র।
৪৮তম পর্ব।

চাচা আরো এক হাজার টাকা বেশী দিলে ভালো হয়। কিন্তু কেন এত টাকা দরকার তোমার। থাকবে আমার এখানে খাবে হোটেলে, দরকার হলে হোটেলে আমি বলে দিব। তুমি কি কোথায়ও যাবে?
জ্বি চাচা আমি আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি যাবো কয়েক দিন সেখানে থাকবো তাই টাকা একটু বেশী দিতে বলতেছি , এছাড়া অন্য কোন কারণ নাই।
ফিরে আসবে এখানে ?
হ্যাঁ চাচা অবশ্যই ফিরে আসবো, মাত্র কয়েকটা দিন। দেখো আবার আমাকে বেকুব বানানোর চেষ্টা করো না। তুমি এখানে ফিরে আসবে আশা করি। এই নাও পাঁচ হাজার টাকা দিলাম ।
ধন্যবাদ চাচা, অবশ্যই আমি ফেরত আসবো চার/পাঁচ দিন পর।
ঠিক আছে যাও। আসার পর একটা কাজ করতে হবে।
কি কাজ চাচা।
তোমাকে মন্ত্রীর সাথে ভালো করে পরিচয় করে দিতে হবে। তুমি আমাদের জন্য কাজ করো তা মন্ত্রী জেনে রাখা ভালো হবে।
উনি এলাকায় আসবে কখন চাচা?
এখনো তারিখ সিউর করা হয়নি। তাই বলছি তুমি এলাকায় থাকলে ভালো হয়।
আচ্ছা চাচা অচিরে ফেরত আসবো।

আমারও ইচ্ছা ছিল মন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়া এই সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না। সোবহান মিয়া তোমার হতে বাঁচতে পালাতে গিয়ে আমার বউ কবরে। আমি তা ভুলি কেমন করে চাচা সোবহান মিয়া। যে দল ক্ষমতায় আছে সরকারে আছে সেই দলেই আমি আছি। অচিরে আপনাকে একটা ধাক্কা দিবো আমি তখন থানা পুলিশকে ঠাণ্ডা রাখতে বড় লোকের টেলিফোন খুব দরকার হবে। সহজ সরল সুন্দর মনের মানুষ পৃথিবীতে বেশী কিন্তু অল্প কিছু অসুন্দর ও কুলষিত মনের মানুষের কাছে পৃথিবীটা অসহায়। সুজন কিংবা শিউলী কারোই ক্ষমতা কিংবা টাকা পয়সায় কাছে দাঁড়ানোর সাহস নেই হবেও না। সুজনকে চুপ থাকতে হচ্ছে নিজের জীবনের ভয়ে আর শিউলীকে জীবন বাঁচাতে গিয়ে জীবনের অবসান হয়েছে। অথচ সোবহান মিয়ার কিছুই হয়নি হবেও না তাহাছাড়া মানুষ জানবেও না আর জানলেও বিশ্বাস করবে না কারণ উনি সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষ। উনার নামের আগে আছে বিশেষণ সবাই জানে উনি দানশীল ও জনদরদী । আর আমি জানি উনি চোরাচালানকারী, মাদক কারবারী, ভূমিদস্যু ও নারীর দেহ লোভী। উনার কথার প্রভাব আছে কোট-কাচারি, থানা এবং অফিস আদালতে।

বাসার ভিতরে সব কিছু সাজানো গুছানো আছে শুধু নেই শিউলী। আমি বিপদে পড়ে সোবহান মিয়ার পিছনে হাটতে হচ্ছে কিন্তু আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে চায়। জানি না কবর হতে শিউলী আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে কিনা তারপরও বলবো যদি পারো ক্ষমা করো।জীবনের তাগিদে সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয় অনেক সহ্য করতে হয় নাহিদ।
তাই করছি সুজন।
নিম পাতাকে যতই মিষ্টি রসে ভিজিয়ে রাখো সে তিতা থাকবেই। সেই রকম কিছু মানুষও আছে, তাদেরকেে তুমি যতই ভালো উপদেশ দাও তারা লোভী থাকবেই।
তা ঠিক, সোবহান মিয়া সেই রকম একজন মানুষ। আমি তোকে কোন উপদেশ দিবো না তোর মনে যে কাজ করতে চায় তা মেজাজ দিয়ে বিবেচনা করে তারপরে করবে যা ভালো হয়। আবেগী হয়ে কোন কিছু করাটা উত্তম নয়। আর যখনি বাসায় থাকবি বই পড়তে চেষ্টা করবি, ভালো ক্ল্যাসিক্যাল বই, বড় বড় মনীষিদের জীবনী, ভ্রমণ কাহিনী পড়তে চেষ্টা করবি। দেখবি ভালো লাগবে অনেক কিছু জানা হবে, মন উৎফুল্ল থাকবে।
ঠিক আছে চেষ্টা করবো তোর কথা রাখতে।
ধন্যবাদ তোকে নাহিদ।

কুটুমনগর ভারতের সীমান্তবর্তী ছোট ছোট টিলা আর গাছ পালায় সৌন্দর্যময় এলাকা। রাস্তা কিংবা টিলা সবখানে নানা জাতের কাঠের গাছ লাগানো দেখতে এলাকাটা নয়ন জুড়ানো তবে শিউলীদের গ্রাম থেকে একটু দুরে। বিকাল বেলায় বিভিন্ন গ্রাম হতে কুটুমনগরে দলবেঁধে ঘুরতে আসে সব বয়সী নারী পুরুষ। ।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র।
৪৯তম পর্ব।

এই সীমান্তবর্তী এলাকাটি মাদক চোরা কারবারীদের
স্বর্গ রাজ্য। ওপার হতে শুধু মাদক নয় আসে কাঠ, কাপড়, ঔষধ ও মসলা। এপার হতে যায় ইয়াবাসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এতে জড়িত বড় বড় রাঘববোয়াল যাদের নাম নিলে রাষ্ট্র আমাকেই অস্বীকার করবে যে আমি বাংলাদেশের নাগরিক। সারি সারি মেহগনি আকাশী সেগুন গাছের বাগান দেখতে খুব ভালো লাগে। শীত মৌসুমে বাগানে কিশোরী মেয়েরা দল বেঁধে পাতা কুড়ায এইসব পাতা রান্নার কাজে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে গ্রামের হত দরিদ্র পরিবারগুলি। এই ছোট ছোট মেয়েদের সাথে কথা বলে মজা করতে আমার কেনো জানি খুব ভালো লাগে। কুটুমনগর আসা যাওয়ার পথে শিউলী আমার নজরে পড়ে আর প্রথম দেখায় আমি তাঁর গভীর প্রেমে পড়ে যাই। অথচ শিউলীর গায়ের রং সাদাও না। শ্যামলা ছিপছিপে লম্বা মায়াবী নেত্র আমাকে আকৃষ্ট করে তাই দেখতে দেখতে আমি তার নেত্রজলে ডুবে যাই। কুটুমনগরের টিলায় টিলায় ঘুরে বেড়াতে শিউলী ছিলো আমার সঙ্গী, মনে হয় সেইসব দুই/একটা দিন যেন জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার বিধাতার।

কেউ হারিয়ে যাওয়া কিংবা হারিয়ে ফেলা মানুষ গুলোর কেবলই শারীরিক উপস্থিতি হারায়। চায়ের দোকানের তুমুল সংলাপে কিংবা মধ্যরাতের দীর্ঘশ্বাসে থেকে যায় স্মৃতি চিহ্ন। তারা সরব থাকে রেখে যাওয়া ছোঁয়া কিংবা চলার পথের তিক্ততায়।
বর্তমান পুরাতন হয়ে যায়, নতুনের সুর আসে কথা হয় বহুপথ একসাথে চলার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে। তারপরও কখনো কখনো আসে ক্লান্তির ছাপ। আশ্রয় নেয় এবং আধিপত্য বিস্তার করে ছোট ছোট শত শত অভিযোগ। আমি সব অভিযোগেও “তোমায় ভালোবাসি”। আর এই কথা বলতে না পারার অভাবে মরে যায় কত নিবিড় সম্পর্ক। মিষ্টি শব্দের স্রোত থেমে যায় নিষিদ্ধ চাওয়ার আকুতিভরা আবদারে। “আমি তোমায় অকৃত্রিম ভাবে নিঃস্বার্থ ভালোবাসি” এইটা তো কথার ফুলঝুরি। কিন্তু শিউলী তুমি অকৃত্রিম ও নিঃস্বার্থ ভালোবেসেছো এইটা ধ্রুব ও সাদা সত্য। এই সত্য অস্বীকার করা যাবে না কখনো।

অনেক দিন পর আবার দুরের কোথায়ও বেড়াতে বের হলাম। বাসে জানালার পাশে সিট নিয়ে বসে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলাম। বাসও ঠিক টাইমে ছেড়ে দিলো। বাস ছাড়ার সাথে সাথে একটা ভয় দপ করে এসে হৃদয়টাকে মোচড় দেয়। ভয়টা যেন একদম দৃশ্যমান দানবের মত আমেকে চেপে ধরে বার বার অদৃশ্য আওয়াজ অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্সিডেন্ট করে। পাশে বসা ভদ্র লোক বুঝতে পারলো আমার অস্বস্তি তাই তাড়াতাড়ি পানি পান করতে দিলো।
আপনি এমন কেন করছেন ভাই?
আসলে কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে।
লোকটি হেসে উঠে বলে ওহ আচ্ছা, ভয় পাওয়ার কি আছে।
আসলে কিছু দিন আগে রোড় অ্যাক্সিডেন্টে আমার স্ত্রী মারা গিয়েছেন আমি তখন——।
খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সত্যিই দুঃখিত।
এখন তাঁর মা বাবার সাথে দেখা করবো। এবং তাঁর জন্যও দোয়া করবো।
আমিও দোয়া করি আপনার স্ত্রীর জন্য। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুণ।
আমিন। ধন্যবাদ ভাইজান।

থেমে থেমে লোকটার সাথে টুকটাক কথা বলে ভালো লাগলো। কিন্তু উনি একটু পরেই ঘুমিয়ে যায় আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাসের জানালার পর্দা একটু টেনে আমি প্রকৃতি উপভোগ করি। আসলে আমি বাস ভ্রমনে জানালার পাশেই বসতে ভালোবাসি কারণ জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে খুবই আনন্দ লাগে। জানালা খোলা থাকলে হু হু করে যে বাতাস ঢুকে তাও খুব উপভোগ্য।

(চলবে)।

জোনাকির আভা

20210728_063918

কালো বিবর্ণ ও বিমূর্ত রাত
এই রাতে কথা হবে না তোমার সাথে
হবে না কোন গল্পও,
কণ্ঠ হতে আসবে না গান
আসবে না কোন কবিতার আবৃত্তি
কারণ সে রাতে কবিতা হারিয়েছে ছন্দ!

গভীর অন্ধকার ধূসর রাত
যে রাতে প্রচণ্ড গরম হাওয়া,
চাঁদটাও আলোহীন,
কেটেছে আমার নির্ঘুম রাত
চোখ দুইটি স্বপ্নহীন, মহাসাগর।

কোন একদিন ভেসে আসা করুণ
আওয়জটা হৃদয়ে বাজে
ভালো থাকো চাঁদনী রাত নিয়ে
অলস দুপুরে করবো স্মরণ তোমায়
আধার রাতে দেখবো জোনাকির আভায়।

পুরুষ যেমন মানুষ নারীও তেমন মানুষ প্রাকৃতিক কারণেই শুধু শারীরিক গঠন আলাদা

FB_IMG_16

কবি, লেখক নারীকে নিয়ে অসংখ্য লেখা লিখেছেন। এর অধিকাংশ শিল্পমান অনেক উপরে যা আমার মত নগণ্য লোক বিচার করার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু “নাতীন বরই খা, বরই খা” এবং “বুকটা পাটয়া যায় পাটয়া যায়”। এইসব কথা মোটেও শিল্প সম্মত নয়, এতে আছে অশালীন ভাব। এই কুরুচিপূর্ণ কথায় নারী পুরুষ উভয় শিল্পী কণ্ঠ মিলিয়েছেন এবং আমরা এইসব গান শুনে তাদেরকে বাড়ি গাড়ির মালিক বানিয়েছি। ভিতরে “কাটা লাগা” মনোভাব নিয়ে নারী দিবসে হুমড়ি খেয়ে পড়ি নিজেকে সাধু করতে। ফেসবুক, টুইটার এবং ব্লগে নারীর পক্ষে এত লেখা আসে যে সেদিন অন্য কোনো লেখা চোখেই পড়ে না।

নারী দিবসে এত লেখা, এত কবিতা, এত সম্মান, এত শ্রদ্ধা। তারপরেও নারী শারীরিক, মানসিক সব যন্ত্রণাই পায় কেনো! আসলে নারী দিবসে সবাই মুখোশ পরে ভদ্রতার তবে ভদ্র করা দরকার চোখ, ভদ্র করা দরকার মন। নিজের ঘর হতে সেই ভদ্রতা শুরু করা দরকার, নিজের ঘর হতে সেই ভদ্রতা শিখা দরকার। নারী দিবসের দিন চট্টগ্রাম হাটহাজারীর এক ছাত্র নেতা ও কয়েকজন পুলিশের বিরূদ্ধে একজন নারী মামলা করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ নেতা ও পুলিশ মিলে উনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভোগ করে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। তাই বলবো প্রিয় নারী পা ফেলতে এবং মানুষ চিনতে খুব সাবধান।

যেমন অশিক্ষিত ও জালিম বর্বর ওঁৎ পেতে আছে ছোবল মারার জন্য তেমনি শিক্ষিত সমাজও আছে ওঁৎ পেতে এরা সবাই সমাজের দুষ্ট কীট। সবাই এক চেহারার মানুষ, চিনতে ভুল করলে জীবন শেষ, হোক সে বাবা, চাচা, ভাই, সন্তান ও স্বামী কিংবা পাড়া- প্রতিবেশী। হোক সে দরদি নেতা, জনপ্রতিনিধি, মোল্লা-মৌলভী, ওস্তাদ এবং শিক্ষক, হোক সে আইনের লোক কিংবা আইনের পোশাক পরা। মনে রাখা দরকার নিজের এবং শিশু সন্তানের ইজ্জত আব্রু আসমানে রেখে চলার দিন শেষ।

নারীর প্রতি সহযোগী মনোভাব পোষণ করে সহাবস্থান সৃষ্টি করি, সময় এসেছে সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার। নারীর ন্যায্য অধিকার দেওয়ার সাথে সাথে ন্যায্য সম্মান দেওয়ার নূন্যতম চেষ্টা করি। নিপাত যাক মতলবাজ ও মুখোশ পরা নারীবাদ।

(ছবিতে বাকপ্রতিবন্ধী একজন নারীকে ধাক্কা দিয়ে বাস হতে ফেলে দেয় পুরুষজাতির একজন। )

যেখানে জীবন যেমন

9448035_n

মহামারী, লকডাউন, ছিন্নমূল মানুষ
রোহিঙ্গা, রিক্সা চালক এবং বাংলাদেশ।
মঞ্চ, ভাষণ আধা সত্য নাকি পুরো মিথ্যা
শ্রোতাসাধারণ জোরে দেয় হাতে তালি।

পৃথিবীকে জ্বালিয়ে করেছি মোরা পোড়া
মাটি ছাই, আর আজ পৃথিবীর একটু প্রতিশোধে
মনুষ্য জাত বেসামাল। বাংলাদেশ গরিব একটা
দেশ তবুও সুইস ব্যাংকে টাকার পাহাড়।

ডাল চাল নেতার গুদামে বস্তায় বস্তায়
সাহায্যে পাওয়া ঘর পানিতে বিলীন হয়ে যায়।
এই দেশে ঘর নয়, হাসপাতালও বিলীন হয়।
মানুষ পোড়া রক্তে হয় জুস ও জুম বাণিজ্য
আগুনে পুড়ে, দালান পড়ে, পানিতে ভেসে
মানুষ মরে অকালে তার বিচার চলে বাণিজ্যে।

রংধনুর আড়ালে

2021062

আকাশ ভরা উদাসী মেঘ
ঝরে তা থেমে থেমে
কদম, কেয়া নাকি প্রিয়া
কাকে তুমি মনে করো হিয়া?

যার জন্য লেখার এই আগ্রহ
এই আকাশ ভরা মেঘ দেখা
এই অঝর বৃষ্টি দেখা
সে যে মিশে গেছে
পাহাড়ের আড়ালে রংধনুতে।

শান্তি আর স্তব্ধতার মাঝে
দূরত্বের প্রাচীরটা থাক সব সময়
দূরে গিয়েও ভালোবাসা হয়।

স্তব্ধতা, নীরবতা আর
একরাশ নীল কষ্ট
আজ সবই বিষাদময়।

দূরের ভালোবাসা এমনই
আর তা কখনও বড় কষ্টের
কখনও মিহি মিহি আনন্দের।

Pic# Facebook

প্রথম চিঠি (অণু গল্প)

2021

এক এক করে পুরাতন সব বন্ধুদের সাথে দেখা হলো কিন্তু মিথিলার কোনো খবর পেলাম না। কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না লজ্জার কারণে। অথচ মন উতলা তাকে দেখার জন্য, তাই অবিরত তাকেই খুজছি।
মন খারাপ কেনো। মুচকি হেসে ফারজানা প্রশ্ন করে।
মনের ভিতর শীত শীত লাগছে তাই হাঃ হাঃ হাঃ।
লাগারই কথা মিথিলা আসে নাই তাই। তুই তার সাথে দেখা করতে এসেছিস, আমার মনে হয়।
না ফারজানা,আমি তোদের সবার সাথে দেখা করতে এসেছি। তবে মিথিলাকে ফেলে আরো ভালো লাগতো ঠিক আছে অন্যদিন দেখা হলে তাকে বলবো।
না থাক, বলতে হবে না ফারজানা।

শীতের শিশিরসিক্ত সোনালী সকাল। কলেজ মাঠে ছোট ছোট দলবদ্ধ হয়ে ছাত্ররা আলাপচারিতায় ব্যস্ত। নবীনদের পদচারণায় মুখরিত কলেজ ক্যাম্পাস। আমি অন্য কলেজ হতে গিয়েছি পুরাতন সহপাঠীদের সাথে দেখা করার জন্য এবং মিথিলার দেখাও পাওয়ার আশা ছিলো। ফাইনাল পরীক্ষার পর আর কোনো দিন দেখা হয়নি তার সাথে। ফল প্রকাশ হলো কলেজে ভর্তি শুরু হলো অথচ মিথিলার কোনো খবর পেলাম না অদ্যাবধি, তাই মনটা উতলা।

প্রেম ভালোবাসার অনেক রকম ভেদ হয়। মুখ ফুটে বলতে পারিনি ”তোমাকে ভালবাসি“ অথচ তার নামে পুজা সাজাই। স্বাধীনতার অভাব, সাহসের অভাব, প্রতি উত্তর শুনার পর মানসিক শক্তির অভাব। এইসব অভাব এসে মিলিত হয়েছে সময়ের সাথে। এই অভাবগুলি আজ মিথিলাকে করেছে আরব দেশের প্রিন্সেস আর আমি হয়েছি দরিদ্র দেশের খেটে খাওয়া আজনবী।

চল এক আত্মীয়ের বাসায় যাবো।
রাতুলের কথায় রাজি হয়ে আমি তার পিছু নিই। চিকণ সরু ডাকবাংলা রোড়ে টিন চালা ঘরটিতে রায়হানের আত্মীয় বাস করে। ওটা আবার মিথিলার আপন খালার বাসা আমার জানা ছিলো না। লাল টক টকে রুহ আফজাহ শরবতে চুমুক দেওয়ার পর রায়হান হাসি মুখে এই বার্তা আমার কানে ফিসফিস করে বলে। দপ করে হৃদয় নেচে উঠে, ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের এই ছোট শহরকে ভালোবাসার কানন মন হলো। শমসের গাজীর ছাগল কাহিনী হতে যে ছাগলনাইয়া শহরের নাম হয়ে ছিলো তা সেকাল এর মনে হলো। টেবিলের উপর ছোট বাচ্চার এলোমেলো বই খাতা, একটা খাতার উপর পাতায় টুপ করে আমার ঠিকানাটা লিখে ফেললাম। লিখে দিলাম দুই লাইন কবিতা।

চিঠি দিও মিথিলা,
কথা আছে শত বেলার।

ডাকবাংলার এই রাস্তায় বড় একটা আম গাছের নিচে জরাজীর্ণ পোষ্ট অফিস। আমার লিখা ঠিকানা মিথিলার চোখে পড়লেই হলুদ খাম দুই টাকার টিকেটে ভর করে এই পোষ্ট অফিস হতে উঠবে আমার নামে। ভাবতেই কেমন যেনো শিহরিত হলো মন প্রাণ তাই একটা উড়ন্ত চুমা ছুড়ে দিলাম পোষ্ট অফিসের দিকে। শহরের উত্তরে সবুজ শ্যামল গ্রামের নাম আন্ধার মানিক। গ্রামের রাস্তার দু’ধারে বড় বড় তাল গাছ, একটা রাস্তা সোজা ত্রিপুরার দিকে চলে গিয়েছে। অর্ধেক ভারতে এবং অর্ধেক বাংলাদেশে বিখ্যাত এক মাজার আছে এইখানে, যা দুই দেশের মানুষের কাছে মানত করার জন্য প্রসিদ্ধ স্থান। এইসব ভাবতে ভাবতে কলেজে ফিরে এসে রাতুলকে মন থেকে ধন্যবাদ দিলাম। আরো ধন্যবাদ দিতে মন চাইলো রাতুল কথাটা অন্য কাউকে বলেতেছে না দেখে।

সপ্তাহ চলে গিয়ে পক্ষে পড়লো মিথিলার চিঠির কোনো খবর নাই। মনে হয় আমার ঠিকানা তার চোখে পড়েনি। তাদের কলেজে যেতেও আর মন চাইতেছে না কারণ তার দেখা যদি না মিলে। ভাবনা কখনো আমাকে আসমানে চড়ায় আবার কখনো পাতালে। রোজ রোজ গিয়ে দেখে আসি কলমা পট্টির সেই ঠিকানা নির্ভুল কিনা। এমনই চলতে চলতে আসলো মিথিলার প্রথম চিঠি।
প্রিয় কৌশিক
——————-
——————-
ইতি মিথিলা।

বিঃদ্রঃ সম্ভব হলে আমার কলেজে আসিও কথা হবে। হলুদ খাম পেয়ে আমি যেমন ভরা জোছনার চাঁদ পেলাম তেমনি চিঠি পড়তে গিয়ে চাঁদহীন অন্ধকার রাত পেলাম।পুরো পৃষ্ঠায় প্রিয় আর ইতি এবং বিশেষ দ্রষ্টব্য।