হ্যাপি সরকার এর সকল পোস্ট

সাহসিনী

index

একটি জটিল পথ পাড়ি দিয়ে
দীর্ঘতর জীবনের স্বপ্নভঙ্গ খোলস
থেকে বেরিয়ে এসে
বেছে নিয়েছি একটা সোজা পথ
ভেঙ্গে যেতে শিখিনি
মচকে যেতে শিখিনি
কখনো সাহস ধৈর্যচ্যুত হয়নি বিবেক

আত্মার সমাধিলিপি ভেদ করে
অবশেষে পৌঁছে যায় জীবন;
হিসেবের খাতা খোলা রয়েছে সবার
সবাই চলছে…
ছুটে চলছে….
হিসাব কষছে…
এক…
দুই…
তিন…
প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়া প্রকৃতির মাঝে।

আমার সাহস
গত হওয়া সে অধ্যক্ষ
আমার পূর্বপুরুষ আমার পিতা
প্রতিদিন ঘুমঘরে কানে কানে বলে যায়
সাহস হারাবে না মা…
আমি প্রতিনিয়ত বাবার কথা শুনি
বাবাকে দেখি;
তার কর্ম, নিষ্ঠা সততা, আমাকে
বেঁচে থাকতে প্রেরণা যোগায়
আসলে তার কর্ম গুলো
তার প্রতিধ্বনি আমার শক্তি

শহর কি গ্রাম
প্রতিদিনের দেখা সাদা কালো মানুষগুলো
প্রতিনিয়ত তাদের রং পাল্টায়
এ যেন অক্টোপাস, তারা যেন গিরগিটি
কিন্তু কই, কেন!
আমিতো বদলাতে পারিনা
আমার স্বভাবজাত
সদ্যফোটা বাগানের ফুল
পূর্বে যে রকম ফুটেছে,
ঠিক একই রকম আজও ফুটছে

ঈশ্বর আমাকে আশীর্বাদ করেছে
একই যাত্রায় চলছে ছদ্মবেশ মানুষ
তাদের আভিজাত্য গৌরব আর অহংকার নিয়ে
আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে,

তবুও আমি তাদেরকে আজও মানুষ বলি;
কোন জীবনকে আমার অস্তিত্বে
বিরাজমান ঈশ্বর ঘৃনা করতে শেখায়নি;
যাদের যে কর্ম তারা
সেই কর্মের ভেতর দিয়েই পরাস্ত হবে,
শেষ হয়ে যাবে, কিংবা
সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ অন্ধকারের
স্তবক ছুঁইয়ে আলোর বিকিরণ ছড়াবে।

তারা অনুভব করবে
যারা আমায় দলিত করতে চেয়েছিল
তারা হেরে যায় সময়ের কাছে।
হেরে যায় মনুষ্যত্বের কাছে।
হেরে যায় বিবেকের কাছে।

আমার আস্থা ছিল সব কিছুর প্রতি
আমার বিশ্বাস আমাকে আস্থা হারাতে শেখায় নি।
আমি বিশ্বাসের পথে অগ্রসর হয়েছি
আজন্ম সাধনা নিয়ে…

কখনো, হেরে যেতে ভয় পাবো বলে
পথকে অন্যদিকে পরিচালিত করে নি
এই নির্ভেজাল অন্তরাত্মা
আমি টিকে গিয়েছি সময়ের কাছে…
আমার বিশ্বাসের কাছে,
আমার ভাবনার কাছে,
আমার চেতনাবোধের কাছে,
আমার ইচ্ছা শক্তির কাছে।

শুধু এটুকু জানি বিজয়ীরাই হেরে যায়
যাঁরা জগত জীবনকে তুচ্ছ করে
বন্ধুর পথ বেছে নেয়
তারা কখনও বিজয়ী হয় না
তাদের দলিত জীবন পদদলিত হয়ে
মিশে যায় সময়ের যুগল আঁধারে
যেখানে তারা হেরে গিয়েও
প্রসাদ খোঁজে নষ্ট চেতনা দ্বারা
তাই বলবো আমি নারী আমি সবকিছু পারি।

শোকাবহ ১৫আগস্ট

440830_n

আমি ভাষা আন্দোলন দেখিনি
আমি দেখিনি 71
আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি
আমি তার জীবনকে উপলব্ধি করতে পেরেছি
ইতিহাসের মর্মর ধ্বনিত পাতা থেকে…

৭ ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানের সেই
মুক্তি সংগ্রামের অমর বাণী

“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”

স্বাধীনতার সেই অমর বাণী আমাকে উদ্বুদ্ধ করে
মহানায়কের সেই নক্ষত্র পতনে আমরা যেভাবে শোকাহত যেভাবে পিছিয়ে পড়েছি সেভাবেই আবার জাগিয়ে উঠেছি।

আমরা এদেশের সেই হায়েনাদের চিনেছিলাম
তাঁদের অপরাধ আমাকে ব্যথিত
কিন্তু আমাদের হৃদয়কে দুর্বল করতে পারেনি।

আমি’ 75 দেখিনি;
বঙ্গবন্ধুর সেই আত্মাকে
ধারণ করা অসমাপ্ত আত্মজীবনী সাক্ষী
তার মধ্যে তাকে দেখেছি।

আজ 15 ই আগস্ট শোকাবহ
এক জাতির বুকে যেভাবে অস্ত্র চালিয়েছে
একদল হায়েনা।

আমি বাংলার মানচিত্রে
একদল কাপুরুষকে দেখেছি
রাতের অন্ধকারে
একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে
১৮টি বুলেটের আঘাতে
ক্ষতবিক্ষত করতে দেখেছি।

পুরুষের শরীরে কাপুরুষের প্রবাহিত রক্ত
যখন সিঞ্চিত করে অপরাধ
তাঁদের প্রতি একরাশ ঘৃণা থেকে
নিজেকে মজবুত করেছি।

১৫ আগস্ট এক শোকাবহ ইতিহাস
বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ
তা কোনোদিন মুছে যাবার নয়
হে পিতা, আমাদের ক্ষমা করো
তোমাকে বিশ্বাস দিতে পারিনি
তোমার বিশ্বাস এর মর্যাদা যাঁরা অবিশ্বাসে পরিণত করে
তাঁদের আমরা ক্ষমা করিনি।

অনুভূতির সবটুকুই তুমি

C4DA017

যখন আমি তোমার
একান্ত প্রেম কামনায় আত্মমগ্ন;
তখন সমুদ্রের ধূসর মুখবয় শঙ্খচিল
সমুদ্রের ঢেউ, উপরে ওঠা বাজপাখি
আর সোনালী ঈগল আমার ঠোঁট।

তখন জীবনের প্রত্যেকটা
বিশেষ মুহূর্ত আমার;
দুরন্ত ছুটে চলা সময়গতি শুধুই আমার।

আমার কাছে এসে থমকে যায়
অন্তরে প্রেম জাগে,
ভালবাসা গভীর আচ্ছাদন সাজিয়ে
পূর্ণতায় ছেয়ে নেয়
জীবনের সকল দুর্বিষহ মুহূর্তগুলো।

তোমার হৃদয়ের দখলদারিত্বে
আমার যে পরিতৃপ্তি, তা যে আর অন্য
কোথাও পাওয়া দায়
তোমার যে স্বপ্ন ভাবনার সাথী
তোমায় ভালোবাসি;

এই শব্দটি আমার কাছে
আমার অস্তিত্বের চেয়েও মূল্যবান
তোমাকে পাওয়ায় আমার পৃথিবীর
সকল সুখ সকল স্বপ্ন সকল
আনন্দ সকল আশা সকল আকাঙ্ক্ষা
আমার দুনিয়ায় সাজানো
বাগিচার মতই নান্দনিক
মরূদ্যানের ওই পূর্ণ দীর্ঘ রজনী

যেভাবে তারার মেলা সাজিয়ে
আমাকে করেছে আকৃষ্ট
সে সবই তোমারই দেয়া সৌন্দর্য মহিমা
তোমার চোখেই বিশ্ব দেখি
বিশ্ব ভ্রমণ করি;

তোমার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠে
প্রতিটা সোনালী ভোর
নতুন উদ্যমে, প্রভাতফেরীর মিছিল থেকে
যেভাবে বেঁচে থাকারও যুদ্ধ ঘোষণা হয়।
আমি সেই যুদ্ধের ডাক পেয়ে
তোমার হৃদয়ে আশ্রিত স্বপ্ন কন্যা

তুমি তো বল;
কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতা বলে
তোমায় পেয়েছি কুড়িয়ে;
পৃথিবীর এত ঝড়
এত কাঠ-খড় পুড়িয়ে যেখানে
আমরা লড়াই করেছি
প্রকৃতি বলছে তোমার জন্যই
এতটা পথ পাড়ি দেয়া।

এতটা যুদ্ধ করা নিজের সাথে নিজের
এতটা লড়াই করে
শেষ পর্যন্ত তোমার বুকে আশ্রয়
তোমার বুকে শান্তির যে ফোয়ারা।

পৃথিবীর এই অপরূপ সৌন্দর্যে ফিরে
আর কোথাও পায়নি পাওয়া যাবে ও না…

যখন আমি তোমায় ভালোবাসি
তখন আমি হয়ে যাই
মরুভূমির নক্ষত্র, চাঁদের আলো
চারপাশে জমা কত নেকড়ের দল
মনে হয় মুহুর্তের মধ্যে গিলে খাবে
সব সৌন্দর্য, সব অবয়ব।

চারপাশের প্রাকৃতিক
ঝড়ের কবলে পড়া এই জীবন
পাড়ি দিয়ে তোমার কাছে এসেছে
তা তুমি একমাত্র ভালো জানো

হে প্রিয়
এই দ্রবীভূত আলো
অদৃশ্য জীবনের গল্প গাথা
আফিমের ফুল হয়ে নিজেকে
করেছে মাতোয়ারা

এখানে শুধু তোমারি নেশা
আমাকে করেছে মুগ্ধ
এখানে লজ্জাপতির বৃক্ষে
কোমল, লতায় পাতায় যে লজ্জার ছায়া
সে তো আমার;
তোমার কাছে এসেই হয়ে যায় ম্লান।

যখন আমি ভালোবাসি তোমায়
সুতীব্র দহন একে একে ঝরে পড়ে
ঘর্মাক্ত শরীরের জলের ফোটায়
শরীরের শিরা উপশিরা

জমাট বেঁধে থাকা রক্ত কণিকা
দুরন্ত আর অগ্নিগর্ভ হয়ে যায় চঞ্চল
ঠোঁটে এসে যায় পৃথিবীর সবচাইতে পরিতৃপ্তির আনন্দ
জিহ্বায় ভেসে ওঠে অসাধারণ স্বাদ।

খালি পায়ে যখন শিশিরের বুকে
নিজেকে তুলে ধরি
গ্রামের মেঠোপথ ধরে যখন
হাঁটাচলা করি,

পৃথিবীর সব সমতল যেন
আমায় বিন্দুবিন্দু শিশিরের মাদুর বিছিয়ে দেয়
তার বিপরীতে আমি হয়ে উঠি
চঞ্চল তোমার প্রেমে ব্যাকুল এক প্রাণ

যদি তুমি প্রিয়সি বলে
কপালে আলতো চুমুতে ঘুম ভাঙিয়ে দাও
তখন আমার জগৎ জীবন
ফুলবাগানের মতোই রঙ্গিন হবে

আর যাই হোক
অনেক ভালোবাসি তোমায়
অনেক দুঃস্বপ্নের সিলগালা দিবস রজনী
পেছনে ফেলে অস্তিত্বের লড়াইয়ে
দিনশেষে তোমার ভাবনাগুলোকেই
বেছে নিয়েছি
এইতো আমি
এইতো আমি, আমি
তোমার তোমার প্রিয়তমা।

প্রিয় সাহেব দ্বিতীয় পর্ব

2187792

প্রিয় সাহেব,
জীবনের এই সংক্ষিপ্ত পথে
যদি হাতে হাত রেখে চলতে যাই
প্রকৃতির নিরাময় যোগ্য নিয়ম দিয়েই
পরিশুদ্ধ কোরো এই মসৃন পথ।
যদি ভুল করে কোন ভুল হয়ে যায়
নিরাপদ সময় নিয়ে বুঝিয়ে দিও…

আমাদের প্রসন্ন সকালটা যেন
শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে’ শত শুভ্রতায়
বাতায়ন ধরে রেখ কোমল অন্তর।
দেয়ালের ঝুলন্ত ঘড়ির দিকে
তাকিয়ে যেন চমকে যাই
কিভাবে সূর্য ঢলে পড়লো পশ্চিম দিগন্তে
আমাদের রঙিন দিনগুলো
যেন গোধূলির বিকেল হয়
সাত রঙা আলোয় সন্ধ্যা
শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে জমা পড়ে হৃদয়ের তল্লাটে।

প্রিয় সাহেব,
আমাদের এই অন্তসারশূন্য জীবনে
যে পরিণত দীপ জ্বলে উঠবে
তা যেন পূর্ণমান চাঁদ দেখেও চমকে যায়
আমি আর আপনি
হয়তো ফুলের বাগানের শিশির হতে
পারবোনা কিন্তু একটি বাগান হতে পারি
জীবন বিহঙ্গের পাখায়ডানা ঝাপ্টে
না চললেও চলতে পারি যেন

আমাদের পবিত্রতায় আমাদের অস্তিত্বের
সে বাগানে যেন সদা ফুল ফোটে
আমি যদি প্রতিদিন তার থেকে
একটি করেও ফুল হাতে পাই গুজিয়ে দিও খোঁপায়।

প্রিয় সাহেব মানুষের চাহিদা
দেখেছো নিশ্চয়ই আমার তেমন
কোনো চাহিদা নেই।
বেশি কিছু প্রয়োজন নেই
অস্তিত্বের এই টিকে থাকার লড়াইয়ের
সাথী হইও’ প্রতিদিন প্রতিটি পদক্ষেপ।
আমি আপনার কাছে

আসমান ছোঁয়া রঙধনু এনে দিতে বলবো না
ক্ষুদ্র আশাগুলো ক্ষুদ্র চাওয়াগুলো
যেন আমার অধীনস্ত কোরো।
প্রথম প্রহরের চায়ের কাপটা
যেন ঘুম থেকে ডেকে তুলে হাতে দিতে পারি

নিজেদের বোঝাপড়াগুলো যেন
আকুল ব্যগ্রতায় স্পন্দন কেঁপে না উঠে

জানেন’তো সাহেব
আমি একটু বেশিই অভিমানী
তোমার অভিমানে যেন পাথর না হই
সেদিকেও নজর টা দিও
ভুল করে যদি কোন ভুল হয় শুদ্ধ করে নিও

আমাদের এই বেলা অবেলার পথের বাঁকে
ফেলে আসা অতীত যেন আজন্ম ঢেকে যায়
তোমার মসৃন স্পর্শে।
অন্তরের বাঁধনটা যেন মজবুত হয়
কোন মজবুরি আঘাতে যেন ছিঁড়ে না যায়

অস্তিত্বের এই টানাপোড়েন
যেন আলোয় ঢেকে যায় সেদিকেও দিও নজর।
আমি যেন হাজার জনমের ইচ্ছে
পূরণে এই একজনমে আসি
খুব কঠিন কোন ইচ্ছে নয়
ক্ষুদ্র ভাবনাগুলো যেন মুক্ত আকাশে
উড়িয়ে দিতে পারি

যদি খুব করে স্বাধীনতা দাও
স্বাধীনতা দিলে স্বাধীনতার ভাঙ্গন আসবেনা
এই কথা দিতে পারি।
যেন চাঁদের রাত্রিতে একসাথে বসে
আকাশের নক্ষত্রের জগৎ থেকে
ছুটে চলা ফ্লাইং ষ্টারগুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে পারি।

জানেন তো সাহেব
ছোট বেলায় মা’র মুখে শুনেছি
চাঁদের বুকে’ যে কলঙ্ক দেখা যায়
তা একটি চাঁদের বুড়ি;
চাঁদের বুড়ি সুতো কেটে পৃথিবীতে
পাঠিয়ে দেয়
আর তা আমরা সকালের
শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে পড়ে থাকতে দেখে
আমরা খুবই উদ্বুদ্ব হতাম।

প্রিয় সাহেব
ছোটবেলার সেই গল্পকথাগুলো
আজ বড্ড মনে পড়ে
আপনাকে সঙ্গে নিয়ে সেই
শৈশবে যেতে ইচ্ছে করে

আমি বড্ড অভিমানে
যখন আপনার দিকে তাকিয়ে থাকব
তখন আলতো ছোঁয়ায় যখন
শক্ত করে হাতটা চেপে ধরবেন
তখন আমার সব কষ্ট সব অভিমান
আনন্দে পরিবর্তিত হবে

আমি জানি সাহেব’
আপনি তাই করবেন
আমার আঁচলের ভাজে
যে স্বপ্নগুলো বাঁধা রয়েছে
এ যেন আমার হাজার জনমের চাওয়া
আপনি ছাড়া সেই চাওয়া গুলো
পূরণ করার কেউ নেই।

প্রিয় সাহেব
কেমন হতো, এমন হলে?
যখন আমার ছোট ছোট আবদার গুলো
ছোট ছোট প্রাপ্তি গুলো আমার

অজান্তেই আপনাআপনি
যখন নিয়ে হাজির হবেন
স্বপ্নপূরণের এই অসীম আনন্দটুকু
পূরণ হলে
আপনার চোখে চোখ রেখে
একটু স্বস্তি পেতে দিবেন…

আমি আপনার সাথে হাজার
বছরের নির্ঘুম রাত চোখের পলকে
পাড়ি দিতে চাই
প্রত্যেকটি প্রহরগুলো যেন
স্বর্ণলতা হয়ে বটবৃক্ষের শরীরের
শরীরে লেফটে থেকে জীবনটাকে
অসীম সময়ের অনুগ্রহ নিয়ে
প্রত্যহ প্রলুব্ধ প্রলেপে
নিজেকে ফিরে পেতে চাই।

শৈশবের সেই বেড়ে উঠা গ্রাম, মেঠোপথ,
আর অভাবনীয় দুরন্তপনা
আজ আমাকে শিহরিত করে
সন্ধ্যার আকাশে মেঘ মল্লার দলের বুকে
দৃষ্টি নিক্ষেপ, শরতের আগে
হেমন্তের মাঝামাঝিতে বসন্তের অগ্রিম
শুভেচ্ছা যখন নিয়ে আসে
তখনকার সেই ফসলহীন জমির বুকে
বউসি’ সিবুড়ি খেলার সেই স্মৃতিগুলো আজও চোখের সামনে ভাসমান।

তোমার হাতে হাত রেখে সেই ভুমি
সেই মেঠো পথে সেই শৈশবের পথে
সেই নদীর বুকে আর একবার ছুটতে চাই
আবার সেই স্বপ্নলৌকে তোমার হাত ধরে
নতুন পদচারণায় নিজেকে মুখরিত করতে চাই

সেই অতীতকে ফেলে আজ
নতুন একটা জগতে এসেছি সেই স্মৃতি
আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়
শৈশবের সেই দিনগুলোতে
আর গাড়ল নদীর পাড় ধরে যে বৃক্ষগুলো
নদীর স্রোতস্বিনী জলকে ছায়া দিত

দুরন্ত সেই শৈশবে,
সেই দীর্ঘকায় বৃক্ষের মগডালে বসে
কারণ নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তাম
একদল দুরন্ত ছেলে মেয়েকে নিয়ে
তখন বেশ ভালোই লাগতো
তখন তো আর জানা ছিল না
এই নদী একদিন পিছমোড়া হয়ে শুকিয়ে যাবে

মৃত্যুর দিকে পতিত হবে তার জলহীন বুক
আমি আজ বড্ড ক্লান্ত বড্ড
বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে
এই পৃথিবীর পথে হেঁটে চলছি

জানো সাহেব
তোমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে
ইচ্ছে করে’ সেই গাড়ল নদীর পথ ধরে
গ্রামের সেই মেঠো পথ আমাকে কাছে টানে
আর একবার সেই পথ তোমার হাত ধরে
পাড়ি দিতে চাই আপনার হাতে হাত
রেখে আমার ছোট দু’হাত
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছে গুলো
সত্যিই পূরণ করবে কি তুমি?
প্রিয় সাহেব, কেমন হত, এমন হলে?

সাহেব
চাতক পাখি দেখেছেন নিশ্চয়ই
আজ আপনি আমার সেই চাতক পাখি
আপনি আমার ইচ্ছা পূরণের
সেই চাতক পাখি
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছেগুলো পূরণের
আপনি আমার সাথী
কোন এক জনমে আমি যদি চাতক পাখি
হয়েই থাকি তাহলে নিশ্চয়ই আপনি
সেই চাতক পাখির উদ্ধারকর্তা।

প্রিয় সাহেব
কেমন হতো এমন হলে
আমি তোমার হাত ধরে এই বহমান
পথ পাড়ি দেবো, তোমার হাত ধরে
এই পৃথিবীর প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে
চলবো’ সেই জন্মের দায় মেটাতেই
বুঝি এই নতুন জন্মে আপনাকে হবে পাওয়া।

যখন আমার ফুরাবার আগেই
ফুরিয়ে যায় সময় তখন নতুন একজনমের
দায় নিয়ে আপনার পাশে পাশে আসা
এটা আমার সৌভাগ্য
এরকম হাজার জনম বুঝি আপনার
অপেক্ষাতেই আমার কেটেছে জীবন।

অস্তিত্বের এই লড়াইয়ে
আপনার হাত ধরে পূর্ণ শক্তি দিয়ে
নিজেকে গড়ে চলেছি এক তৃষ্ণার্ত জনম।
আপনাকে পেয়ে এই
এক জনমে আমার সাধ মিটবে না
আপনাকে যে এই এক জনমে
আমার হাজার জনমের তৃষ্ণার্ত
জীবনকে উন্মুক্ত করব।

প্রিয় সাহেব
আমার বেশি কিছু চাওয়ার নেই
সেখানে শুধু তুমি পাশে থাকলেই চলবে…
আপনার সাহস শক্তি সততা
আর আপনার সুতীব্র অস্তিত্ব
আমাকে সাহসী করবে প্রতিটি মুহূর্তে।

আপনার তীব্র অস্তিত্ব
তোমার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায়
আমাকে গ্রাস করে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।।
.
কবিতা “প্রিয় সাহেব” তৃতীয় পর্ব। এর দ্বিতীয় পর্ব হাতের কাছে না থাকায় এই পর্বটিকেই আপাতত দ্বিতীয় পর্ব নামকরণ করলাম। শুক্রবার ২৩.০৭.২০২১ ইং।

আমার কাছে জীবনের মানে…

826773_n

আমার কাছে জীবনের মানে…

জীবন বহতা নদীর মত গতিশীল। নদীর দিক কূল পরিবর্তন হয়, তেমনি প্রতি মুহূর্তে মানুষের জীবনের দিক পরিবর্তন হয়।

আমাদের ক্ষুদ্র জীবনের পথ বড়ই বিস্তৃত। এই ছোট্ট জীবনে প্রত্যেক মানুষকে অনেক বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। তাই বলি যখন যেমন পরিস্থিতি জীবনে আসে তখন সেটি সাদরে গ্রহণ করতে পারাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে জীবনে শান্তি ও স্বস্তি মিলে খুব সহজে।

যদি কখনো এমন কোনো পরিস্থিতি জীবনে আসে তা গ্রহণ করা দুরূহ, তখন সে পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজতে হবে।

অন্যথায় সেই জটিল মুহূর্তকে মেনে নিয়ে’ সেই মুহূর্তকে কোনো ভালো কাজে লাগানো যায় কিনা সে কৌশল রপ্ত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে জীবন আপনার; সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে। এখানে কেউ আপনার দায়ভার নেবে না। নিজেকেই নিজের দায়ভার নিতে হয়।

আমাদের জীবন দশায় যে মুহূর্ত কখনো বর্তমান ও ভবিষ্যতে আসার কোন সম্ভাবনা নেই’ সেই অদৃশ্য মরীচিকার পেছনে সময় নষ্ট করা সেফ বোকামি ছাড়া কিছুই না।

সে অতীত মুহূর্ত থেকেই শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এমন বাজে পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতে হয়। তবে জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে।

আমরা প্রত্যেকেই যেন আজকের জন্য বাঁচি; আগামীকাল জীবনের নাও আসতে পারে, কারণ জীবন দশায় মৃত্যু এক ধ্রুব সত্যের নাম।

মৃত্যু খুব স্বাভাবিক ঘটনা; মৃত্যুর করালগ্রাসে জীবন প্রদীপ কখন নিভে যাবে কেউ বলতে পারেনা। মস্তিষ্ক থেকে মৃত্যু ভাবনা সরিয়ে রাখলেই জীবন থেকে মৃত্যু সরে থাকে না।

ভেবে দেখেন; যে লোকটি আগামীকালের কথা বলেছিল সে লোক আজ পৃথিবী থেকে গত। ঠিক আজকের মুহূর্তে বেঁচে থাকা অসংখ্য মানুষ আগামীকাল পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে।

এই পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসেছে, আবার চলে গিয়েছে… তাই আগামীকাল কি হবে তা আমরা কেউ জানিনা।

অতএব, অতীতের দুর্বিষহ মুহূর্ত বর্তমানে আজকের দিনে নিয়ে এসে আজকের দিনটাকে নষ্ট করার কোন মানেই হয়না। যেখানে আমরা নিজেরাও জানিনা আগামীকাল কি হবে বা কি হতে চলেছে?

দূর থেকে অনেক কিছুই অনেক কিছু মনে হয়। আমাদের ভাবনায় অনুমানের অনেক কঠিন জিনিস সহজ করে তোলে। আবার অনেক সহজ জিনিসকে কঠিন করে তোলে।

অনুমান দিয়ে বা ভাবনা দিয়ে কখনো জীবন চলেনা। এটা কেবল বাস্তবতা থেকে আমাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যম মাত্র।।

প্রিয় সাহেব

27369_n

অফিসের সকল ব্যস্ততা শেষে
গুটি গুটি পা ফেলে, ক্লান্ত শরীরে
আমার ঘরের চৌকাঠে ক’ড়া নড়াতে যদি’
আর, আমি অধীর আগ্রহের প্রহর ঘুচিয়ে
তোমার সমস্ত ক্লান্তি মুছে দিতাম
আমার আঁচলভরে!

কেমন হতো, এমন হলে?
বিষণ্নতার চাদর মুড়িয়ে নির্ঘুম রাতের
প্রহরগুলোতে, অস্থিরতায়, অবসাদে
পাশ ফিরে যদি তোমাকে পাওয়া যেত?
কেমন হতো, এমন হলে?

যদি মাঠের কোমল ঘাসগুলো
ছুঁয়ে যাওয়া শিশিরের মতো তোমাকে ছুঁয়ে ফেলা যেত’
বিনা বাধায়, বিনা উৎকণ্ঠায়
কেমন হতো, এমন হলে?

সাহেব,
চাতক পাখি দেখেছো কখনো?
কিছু কিছু সময় আমাকে ভাবিয়ে তোলে!
কোন এক জন্মে’ আমি বুঝি চাতকপাখি ছিলাম!

সেই জন্মের দায় মেটাতে বুঝি
আরেককটা তৃষ্ণার্ত জনম পেলাম;
কয়েক জন্মের তৃষ্ণা মেটাতে চাতক পাখির মতই
তোমার অপেক্ষায় প্রহর গুনি!

মনে হতে থাকে’
তোমায় এজন্মে না পেলে বুঝি
আমার অস্তিত্বের অস্তমিত হবে ঠায়;

জানো সাহেব’
বরাবরের মত সব কিছুতেই তোমাকে দেখি-
চায়ের কাপে, চুমুকের ফাঁকে…
পালিয়ে যাওয়া ধোঁয়ায় দেখি…

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের
মেঘের ভেলায়’ তোমায় দেখি!
বইয়ের পাতায়, লেখার খাতায়,
আমার অনুভবে,

আমার অস্তিত্বে বারবার তোমায় দেখি;
তুমি রয়েছো আমার অস্তিত্বে
তুমি থেকে যাচ্ছ প্রতিনিয়ত
আমার জীবনের প্রহেলিকায়!

এ দু’টি চোখে আজও বন্দী হয়ে আছি’
তোমার বাঁকা দাঁতে, স্নিগ্ধ হাসিতে!
আমার পুরো অস্তিত্বে তুমি!

ভেতরে তুমি, বাইরে তুমি,
আমার যত বৃত্ত আছে,সবখানে তুমি।

যেখানে তুমি
আসোনি আজ অব্দি
তার সবটা জুড়ে থাকছে এক’ তুমিই!

তোমার তীব্র অস্তিত্ব
তোমার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায়
আমাকে গ্রাস করে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।।

.
30.06.2021@ 03:04AM

দেখে নিও এই ক্রান্তিকাল একদিন শেষ হবে

I5558

করোনা প্যানডেমিকের এই ক্লান্তিকাল
থমকে দিয়েছে দুনিয়াকে
থমকে দিয়েছে শহর-বন্দর গ্রাম, থমকে দিয়েছে পথিকের পথ চলা।

কর্মব্যস্ত মানুষ আজ কর্মব্যস্তহীন
এ যেন ঘরে বসে মৃত্যুর দিকে প্রত্যাগমন করা
সবকিছু দেখেও কিছুই যেন দেখছি না সবকিছু বুঝেও কিছুই যেন বুঝছি না।
এইসব দুর্দশাগ্রস্ত খেটে খাওয়া কুলি শ্রমিক দিনমজুরের মত আটকে গিয়েছি’ আমি আর তুমি; এ যেন শিকলবন্দী জীবন।

এই প্যানডেমিক সিচুয়েশন একই সূত্রে গাঁথা
উন্মুক্ত দুনিয়াকে করেছে আবদ্ধ!
এদিকে পৃথিবীকে অপেক্ষার প্রহরে উৎকণ্ঠিত করেছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।

এখানে বাবার অপেক্ষায় ছোট্ট ফুটফুটে
সোনামনিটা চেয়ে থাকে পথের বাঁকে
অসহায় মা তাঁর ভালোবাসার ধন, কলিজার টুকরো সন্তানের অপেক্ষার দিন গুনে।

প্রিয়তমা স্ত্রী’ ব্যাকুল নয়নে, অন্তর্দহনে একরাশ আফসোস আর কষ্ট তাড়িত আবেগ নিয়ে অপেক্ষা করে তাঁর ভালোবাসার মানুষের জন্য।

তোমার বেলি ফুল ভালো লাগে
তাই, প্রতিদিনের খোঁপায় বাঁধা বেলি ফুলটি যেন শুকিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যায় প্রিয়জনের অপেক্ষায়।

মনে হতে থাকে এই ক্রান্তিকাল, এই ক্রান্তি লগ্ন যেন শেষ হবার নয়;

আমিও তাদের মত করে অনেক স্বপ্ন দেখি,
স্বপ্ন বুনি; প্রতীক্ষার প্রহরে মন ধৈর্য্য হারা হয়। ব্যাকুল হৃদয় নানা রকম আশংকা তৈরি হয়। কোথায় কিভাবে বিপদ ওত পেতে রয়েছে তা কেই বা জানে।

প্রতীক্ষার দিন, রাত, প্রতিটা সেকেন্ড,প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা ঘন্টা যেন শেষ হবার নয়। সময়; এই দিন, এ রাত পার করা বড়ই কঠিন।

এই বিষন্ন দিনগুলো যেন তন্ন তন্ন করে শেষ করে যাচ্ছে জীবনের সকল সৌন্দর্য, সকল স্বপ্ন, সকল আশা, সকল আকাঙ্ক্ষা। কবে শেষ হবে এই পথ; দুরন্ত দিন কবে আসবে ফিরে?

প্রিয়তম আমার,
দেখবে এই অপেক্ষার শেষ হবে; এই দুঃসময়ে কেটে যাবে। এই নিরানন্দ দিনগুলো পেছনে ফেলে আবার ফিরে আসবে সুন্দর সকাল, সোনালী রৌদ্র, আমরা হাটি হাটি পায়ে পায়ে ছুটে চলবো মেঠো পথ ধরে ঘাসফড়িং এর মত।

আবার নতুন করে শুরু হবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন’
আবার নতুন করে শুরু হবে দিন, এই দুর্বিষহ জীবন পেরিয়ে ফিরবেই সুসময়।

এই অসময় একদিন চলে যাবে;
সবকিছু অতীত হবে, তারপর তুমি আমি মিলিত হব; কোন এক শহরে’ মুক্ত আকাশের নীচে, হুড-খোলা রিক্সায়; বিশুদ্ধ বাতাসে, হাতে হাত রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেব।

সেই সোনালী দিনটি ফিরে আসবে
হ্যাঁ খুব দ্রুত ফিরে আসবে যারা গত হয়েছে
তারা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে
ভবিষ্যৎ গত হবে, সকল দিন হবে অতীত আমরা সেই অতীত বাসনায় অধীর অপেক্ষায়’
যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে বন্দী জীবন পার করছি আমরা প্রত্যেকে, আমরা প্রত্যেকে পার করছি একরাশ আর্তনাদ নিয়ে
বহুরূপী করোনা তুমি; তোমার রূপের পরিবর্তন
না ঘটিয়ে বিদায় নিলেই পারো!

তোমার করালগ্রাসে পুরো পৃথিবী নাস্তানাবুদ
কত প্রাণ হলো বিপর্যস্ত। কত মায়ের বুক হলো খালি
সন্তান হারালো বাবা-মা’কে, কত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হল। মনে হচ্ছে যেন সহস্র শতাব্দী এই অপেক্ষা! ভাবতেই হৃদয়ে কাঁপন ধরে, হার্টবিট বেড়ে যায়।
আহা হচ্ছেটা কি এই পৃথিবীতে
পুরো দুনিয়াটাই যেন নরকে পরিণত হয়েছে।

চারপাশে ভয়ার্ত আর্তনাদ, লাশের স্তুপ
এ যেন এক কঠিন যুদ্ধের দামামা। এ যেন এক অদৃশ্য শক্তির সাথে মানবসভ্যতার টিকে থাকার লড়াই।

কত বুক শূন্য হয়েছে, কত হৃদয় খালি হয়েছে, পিতৃহারা, মা হারা, কত নারীর সিঁদুর মুছে গেল তোমার নৃশংস থাবায়। কত বোন হারিয়েছে তার পিতৃতুল্য ভাই।

কত সেবিকা, কত ডাক্তার অদৃশ্য এই শক্তির সাথে যুদ্ধ করতে করতে জীবন দিল।
কি এক বিভীষিকাময় সময়, এ যেন এক কঠিন অন্ধকারের যুগ।

প্রিয়জনদের স্বজনহারানো আর্তনাদে
ভারী হয়েছে আই.সি. ইউ, হসপিটাল, শহর-গ্রাম বন্দর, প্রত্যেকটা সেকেন্ড মৃত্যুর দামামা বেজে চলছে, মৃত্যু যেন এক সহজলভ্য বস্তু
যা মানব সভ্যতাকে সহজেই বধ করছে ;
এ যেন এক মৃত্যুপুরী; এই প্রকৃতির মনোরম জগত যেন থমকে যাওয়া মৃত্তিকা।

তবুও আমরা প্রতিদিনের মত অপেক্ষা করছি
নতুন সূর্যোদয়ের; নতুন আশায় বুক বাঁধছি,
নতুন স্বপ্নে, নতুন নতুন ভাবনায়, নতুন আঙ্গিকে জীবনের স্বপ্ন আঁকি,

প্রিয়জনের অপেক্ষায়…
আপন মানুষের অপেক্ষায়, বুক বাঁধি।
কবে এই বন্দি জীবনের অবসান ঘটিয়ে
নতুন একটি আকাশ দেখবো…
বন্দিজীবন ভেদ করে কবে বেরিয়ে আসবো মুক্ত আকাশের নীচে

মুক্তি মিলবে একাকীত্বের, নিষ্ঠুর নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে কবে তোমার দেখা পাবো।
কবে বা সড়কে যানবাহন চলবে।
আবার প্রাণচঞ্চল হবে শহর বন্দর গ্রাম
পৃথিবীর এই মহাপথ শব্দ আর কোলাহলের
তাণ্ডবে জ্বলে উঠবে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো।

মানুষ জীবিকার তাগিদে আবার ঘর থেকে বের হবে। প্রিয়জন তার প্রিয়তমার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে আবার টেনে নিলে বুকে। আহা অপেক্ষা! এ যেন পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্র যাকে বধ করা এতটা সহজ নয়।

কবে ক্ষুধার্ত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, হতাশা, আনন্দে পরিণত হবে! এই ব্যাধী,এই যন্ত্রণা,এই হাহাকার শেষ হবে। মহুর্মুহু ভাবে প্রহরে-প্রহরে মৃত্যুর মিছিলে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মানুষের আর্তনাদ আর্তচিৎকারের অবসান ঘটবে।

আমরা কেউ কি জানি এই করোনার ক্রান্তিলগ্ন
কবে শেষ হবে! এর থেকে কবে মুক্তি পাব।
কেউ জানিনা; তবুও আমরা আশায় বুক বাঁধি,
তবুও আমরা অপেক্ষায় বুক বাঁধি, দিন আসবে আর মুক্ত করবে আমাদের…

সুন্দর সময়, সুন্দর জীবনের আশায় অপেক্ষায় থাকি। প্রিয় মানুষকে কাছে পাবার আশায় অপেক্ষায় থাকি, তুমি আমি আমরা অপেক্ষায় থাকি, দেখবে সেই সময় খুব নিকটে, খুবই নিকটতম। আমরা মিলিত হব।

আমাদের এই জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী ভূমিকায় থাকা মানুষেরা অবশ্যই জয়ী হবে। জয়ী হবে আমাদের সভ্যতা আমাদের জন্য যারা লড়াই করে যাচ্ছে তারা। আমরা হারতে শিখিনি, হারাতে জানি।

এই ক্রান্তিলগ্ন কেটে যাবে, এই ক্রান্তিলগ্নের অবসান ঘটবে; এই জীবন আবার ফিরে পাবে তার মুক্ত নিঃশ্বাস; স্বাধীনতা আবার হাতছানি দেবে প্রকৃতিতে… এবং মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে।

ভাবতে পারো তোমার দেখায় আমি হলাম অভিমানী

50063

ভাবতে পারো তোমার দেখায়
আমি হলাম অভিমানি
আমি অভিমানী হয়ে
অভিমানে প্রস্থান করবনা
আমি সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ পার হতে শিখেছি।
স্রোতস্বিনী নদীর বিপরীতমুখী স্রোতের পথ ধরে চলতে শিখেছি।

আমি জীবনের অলিগলিতে
পদচারণার পর অনেক পথিকের পথ চলাকে উপলব্ধি করতে পেরেছি।

তুমি ভাবছো আমি কোন কিছুতে ভয় পাই
হা হা হা…
এটা তোমার ভুল ধারণা
আমি সোজা পথে চলতে চলতে
বাঁকা পথে হাঁটতে শিখেছি
তুমি ভেবো না আমি বাঁকা পথে থমকে গিয়ে
নিজেই নিজের দায় এড়াবো।

তবে এটুকু মনে রেখো
ভুল করেও আমার এই তৃষ্ণার্ত জনমে
তোমায় না পাবার ব্যথায় ভেঙে পড়বো না।

আমি লোকারণ্য দেখেছি
লোকারণ্যে সব অন্ধকার দেখেছি
লোকারণ্য একসময় আলোকিত থাকে
সেই লোকারণ্যকে অন্ধকার হতে দেখেছি
নির্জন হতে দেখেছি, নিরব নিস্তব্ধ হতে দেখেছি।

আমি মন্দির মসজিদ গির্জা দেখেছি প্যাগোডা দেখেছি এইসব জায়গায় এইসব পবিত্র স্থানগুলোতে একইভাবে বিচরণ ছিল আমার
আমি সকল ধর্মের মানুষকে দেখেছি
সকল ধর্মের মানুষকে চিনেছি।

আমি দেখেছি, এমন অনেক কিছুই দেখেছি
আমি ঘরের মানুষ পর হতে দেখেছি
যেখানে একজন মানুষ আশা নিয়ে এসেছিল
সেখান থেকে প্রস্থান করা ও দেখেছি।

আমি দেখেছি, সত্যিই আমি দেখেছি
হ্যাঁ আমি আমি দেখেছি
আমি দেখেছি নৈসর্গিক এই জীবনের অস্তমিত
মানুষ যেখানে ঐশ্বর্যের খোঁজে
প্রতিনিয়ত নিজেকে শেষ করে
আমি সেখানে ভাঙ্গন দেখেছি
আমি সেখানে চোখের অশ্রু দেখেছি
আমি সেখানে হাহাকার দেখেছি।

দেখেছি,
একে-একে, ধীরে-ধীরে, সব কিছু দেখেছি;
তুমি ভাবছো ভেঙে পড়বো!
তুমি ভাবছো শেষ হয়ে যাব,
ধীরে-ধীরে, তিলে-তিলে শেষ হয়ে যাবো;

যেভাবে শেষ হয় সুন্দরী হরিণীটি
যেভাবে নীড়হারা যাযাবর পাখি
উড়ে বেড়ায় পৃথিবীর পথে পথে
খালে বিলে নদীতে সাগরে
শহরে বন্দরে বিচ্ছেদের ডালে!
তুমি ভাবছো সে রকমই হওয়া উচিত!
হা হা হা….

তবে জেনে রেখো
আমি কোন কিছুতে ভেঙে পড়বো না;
নতুন করে হারাবার ভয়ে
তোমার জন্য কোন ব্যথায় ভেঙে পড়বো না।

ভেবেছ নতুন কোনো কষ্ট পাব
নতুন কোন কষ্ট পেয়ে নতুন করে আরেকবার
চোখের জল ঝরাবো।

আমি এমনটা সাহসিনী না
নতুন করে কোনদিন চোখের জল ঝরাবোনা
আমি পাথরের বুঁকে ফুল ফুটতে
দেখিনি বটে দেখেছি মানুষের হৃদয়
পৃথিবীর পথে পথে লক্ষ্য বার হেঁটেছি
কিন্তু নিজেকে করিনি ছোট
তবুও নিজেকে দেখিনি অসহায়
আমি অসহায়ের পাশে থেকে
বরং পেয়েছি সহায়ক শক্তি।

আমি পবিত্রতা দেখেছি,
আমি অন্তর দেখেছি
অন্তর ছুঁয়ে দেখার প্রমোদ বাসনা নিয়ে
মানুষের হৃদয়ে মানুষ হয়ে দেখেছি
কিন্তু অন্তর খুঁজে পাইনি তো কারো।
একলা চলা জীবনের এই অলিগলিতে ভীষণভাবে
পথের বাঁকে থমকে যেতে দেখেছি।

আমি পথের শুরু দেখেছি
আমি পথের শেষ দেখেছি
সামনে আঁধার জড়ানো সব নিরবতা দেখেছি
নিস্তব্ধতা দেখেছি নির্জনতা দেখেছি
আবার নির্জনতাকে ভেঙ্গে মানুষের
সমারোহ দেখেছি
কোলাহল দেখেছি
আমি দেখেছি পথের শেষের শেষ লেখাটি
যেখানে ব্যর্থতা বলে কোন শব্দ খুঁজে পাইনি!!

তুমি ভেবো না আমি তিলে-তিলে শেষ হয়েছি
তুমি ভেবনা ধীরে-ধীরে আমি দুর্বল হয়েছি
এই সকল উঁচু-নিচু বিস্তৃত অন্ধকার
আর নিরবতার পথ পার হতে
নিজেকে আরও দৃঢ় আরও শক্তিশালী
করে নিজের পথ উন্মোচন করেছি।

তুমি কি জানো এই পথের শেষ কোথায়?
হয়তো আমি জানতাম
এই পথের শেষ কোথায় গিয়ে হবে…

এত দীর্ঘ লড়াইয়ের বিস্তৃত পথ
পার হতে ভেবো না আমি ক্লান্ত হই নি,
কিন্তু নিজেকে আমি বারংবার ভেঙ্গে চুরমার করে আবার নতুন করে করতে শিখেছি
এভাবেই প্রতিদিন গড়েছি আর প্রতিরাতে ভেঙ্গেছি
তবুও আমি আমার প্রস্থানের ব্যথা
কাউকে বলতে পারিনি।

সূর্যোদয় দেখেছো কখনো!
তুমি শুধু সূর্যাস্ত দেখেছো;
গোধূলির সেই হলুদ রাঙা মেঘ দেখেছো বটে
কিন্তু তার ভেতরের বিষাদ দেখনি
তাইতো আমি তোমার হৃদয় দলিত করে
নিজের পথ বেছে নিতে পারিনি।

আমি জগতের এইসব সুশৃংখল পথে
অসংখ্যবার দেখেছি উশৃংখলতা…
তবুও কোথাও থমকে যাইনি
তবুও নিজেকে অসহায় মনে হয় নি,
তবুও নিজেকে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করিনি।
তুমি ভেবেছিলে আমি পিঞ্জিরার পাখি হলেই বেশ ভালো মানাবে তোমার জন্য।

তুমি কি জানো পিঞ্জিরার পাখিটিও
একসময় জঙ্গলে বাস করত?
তাদের আদি নিবাস এ জঙ্গলই
পিঞ্জিরা টি তুমি সোনাদানা দিয়ে
যতই ভরে দাও না কেন
সেই বৃষ্টি ভেজা বনাঞ্চল’টাই তার পছন্দের জায়গা।

তবু আমি তোমার পথে হাঁটিনি
তবুও আমি সকল দুঃখ সয়ে
নিজেকে করেছি গ্রহণ
বাঁকা পথ দেখেছি অন্ধকার দেখেছি
আমি আলোর আলোর খোঁজে বের হয়ে কখনো দিশাহারা হইনি।

আমি বাঁকা অন্ধকার পথেই বের হয়েছি
আর বের হয়েছি এই ভেবেই
হয়তো এ পথ শেষে পাবো নতুন প্রদীপ।

এটা আমার জীবনের দায় নয় জনমের দায়
আমি আমার জীবন পথে নিজের
সিদ্ধান্তকে ছুঁয়ে দেখেছি
তবুও আমি পৃথিবীকে বলিনি কিছু
আমার যত ব্যর্থতা একে একে সব পাড়ি দিতে শিখেছি।

আমি এখন লড়াই করছি দাঁড়ানোর জন্য
আমি আমার জীবন পথে এমন কিছু পেয়েছি
যা আমার অন্য কোন জনমের ফল
আমি আমার জীবনে এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি
তা আমার আজন্মের সাধনা আজন্মের ইচ্ছা
আমি আজ দুর্বল নয়,

কোন এক স্বপ্ন পুরুষের হাত ধরে
বাস্তবের এই জীবন পথে চলতে শিখেছি।
আমি অন্ধকারে আলোর মুক্তি দেখেছি
আমি প্রিয়জন ছেড়ে প্রস্থান দেখেছি
আমি বাঁকা পথের শেষে,
নতুন সূর্যোদয় দেখবো বলে বাঁকা পথেই হেঁটেছি।।

.
হ্যাপি সরকার
দ্বিতীয় সংস্করণ ১৪.০৭.২০২১