ইলহাম এর সকল পোস্ট

কোনও কারণ নেই

তাকে ভালোবাসার কোনও কারণ আছে কি?
না, নেই
তবুও তার জন্য এমন লাগে কেন
কেন এমন হয়?
কোনও কারণ নেই তাকে কাছে পাবার
কোনও অনুষঙ্গ নেই তাকে
আমার জীবনে জড়াবার
কোনও উৎস নেই
তাকে ভালোবাসবার
তবুও তার জন্য এমন কেন লাগে?

মহাজগতের মহাবিশ্বের
মহাগ্রহের মহাদেশের
এই মহাশহরেই সে থাকে।
থাকে নাকি সে?
তবুও কেন আমার থেকে
সুদূর বহুদূর অনেকদূরে মনে হয় তারে?
জানি কখনো দেখা হবে না
জানি কখনো কথা হবে না
জানি তাকে কখনো পাবো না
তবে কেন এই দিন রাত্রি মাস বছর
যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা?
কিসের এই অপেক্ষা?

তাকে ভালোবাসবার কোনও কারণ নেই জেনেও
তাকে কাছে পাবার কোনও উৎস নেই জেনেও
না, কোনও কারণ নেই
তবুও কেন তার জন্য এমন লাগে?
সুখে অসুখে দুখে কান্নায় সুসময়ে অসময়ে
কেন তার মুখখানি ভেসে ওঠে?

আমরা কেউ তা জানি না

তুমি কবে কখন কি করে আমাকে ভালোবেসেছ
তা ঘুণাক্ষরেও টের পাওনি
শুধু তোমার বুকের বাম পাশে একটা জমাট ব্যথা
তুমি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাচ্ছো দু বেলা কিন্তু ব্যথা যাচ্ছে না
অথচ তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু তুমি তা জানো না।

আমাদের দেখা হয় নি, আবার হয়েছে
আমাদের কথা হয় নি, আবার হয়েছে
যতটুকু পার্থক্য ভার্চুয়াল আর বাস্তবের মাঝে।
গাইনি, মেডিসিন, কার্ডিয়াক সহ অনেক ডাক্তার দেখাচ্ছো
ডাক্তারি বিদ্যায় ভালোবাসা বিষয়ে কোনো সাবজেক্ট এখনো সংযোজন হয় নি
তাই ভালোবাসা বিষয়ক কোনো এফসিপিএস ডাক্তার এখনো পৃথিবীতে আসেনি
তোমার বুকের বাম পাশের ব্যথা যাচ্ছে না।

অথচ তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু তুমি তা জানো না।
জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, ভাইরোলজি সহ
তাবৎ বিদ্যা থাকলেও ভালোবাসাবিদ্যার কোনো বিজ্ঞানী নেই
কে তোমাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সমীকরণ বসিয়ে
অতএব সুতরাং যেহেতু সেহেতু ইত্যাদি বলে ভালোবাসা প্রমাণ করে দেখাবে?
আচ্ছা! সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের রাজনীতিতে এবার কি হলো?
আমি কিন্তু রাজনীতির আগা মাথা কিছুই বুঝি না
ইদানীং রাজনীতির ভেতরে পলিটিক্স ঢুকে গেছে।
ওহ! কি যেন?
আমি যেন কি করছিলাম?
ও হ্যা, আমি তো কবিতা লিখছিলাম
কিন্তু এর ভেতরে রাজনীতি এলো কি করে?
চিন্তার ভেতরে চিন্তা
ভাবনার ভেতরে ভাবনা
যেমন রাজনীতির ভেতরে রাজনীতি।

যাক সে কথা
অথচ তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু তুমি তা জানো না
কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না আমি জানি না
তবে তুমি যে আমাকে ভালোবাস সেটা বুঝতে পারি
হয়তো আমিও তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু আমিও তা জানি না।
আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি কিন্তু আমরা কেউ তা জানি না
কি আশ্চর্য!
দুটি চুম্বক উম্মুখ হয়ে পরস্পরকে আকর্ষণ করছে
অথচ চুম্বক দুটির মাঝে ব্যাপক ব্যবধান
কিন্তু চুম্বকেরা তা মানতে নারাজ
যত দূরেই থাক তারা পরস্পরকে আকর্ষণ করবেই
হয়তো আকর্ষন কখনো কমে কখনো বাড়ে
পৃথিবীতে অনেক চুম্বক আছে যারা পরস্পরকে আকর্ষণ করে কিন্তু মিলন হয় না
হয়তো আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি কিন্তু আমরা কেউ তা জানি না।

শেষ জীবন (গদ্য কবিতা)

index

আজ আমার বয়স আশি
যে বি এম ডাব্লিউতে এখন যাচ্ছি; সেটা আমারি কেনা
যে বহুতল ভবনের পাশ দিয়ে এখন যাচ্ছি; সেটা আমারি ফ্যাক্টরি
আজ আমার বয়স আশি
আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি
আমার স্ত্রী মারা গেছে আজ দশ বছর
আমার দুই সন্তান আমাকে নিয়ে যাচ্ছে আজ নতুন ঠিকানায়
যেতে রাজি নই তবু যেতে হচ্ছে
শরীর যে দুর্বল শক্তি হারাচ্ছে!
এক ঘন্টা পর আমাকে নামিয়ে দিলো “শেষ জীবন” এ
ঠিকই ধরেছেন; “শেষ জীবন” একটি বৃদ্ধাশ্রমের নাম।
একটি রুমে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম
তারপর আমার সন্তান এসে নিয়ে গেলো একটি রুমে
বললো, বিছানার চাদরটা বেশ পরিষ্কার না?
আমি চুপ করে থাকলাম
তারপর বললো, “বাবা আমি আসি – এখানে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না”
আমি চুপ করে থাকলাম
আমার সন্তান আবার বললো, রুমটা বেশ পরিপাটি আর বিছানার চাদর বেশ পরিষ্কার
যাওয়ার সময় আমি শুধু বললাম,জন্মের পর তোর নষ্ট করা ছোটো কাঁথা – বিছানার চাদর আমিই পরিষ্কার করতাম।
এর দু দিন পর, দুপুরের খাবার খেয়ে মনটা আনচান করে উঠলো
আমি রুম থেকে বেরিয়ে দোতালা থেকে নিচের বাগান দেখছিলাম
“তুমি রফিক না?” – একটি ভারি মহিলা কণ্ঠ
আমি বললাম, হ্যাঁ কিন্তু আপনি?
বেল্কুনি থেকে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, আমি মালিহা
মালিহা? মানে বগুড়ার মালিহা?
তারপর কিছুক্ষণ নিরবে কেটে গেলো
আমিই নিরবতা ভাঙলাম, বলেছিলাম না? আমরা একসাথে থাকবো?
মালিহার চোখে এক বিদ্যুৎ ঝিলিক এসে চলে গেল, বললো – আমাকে বিয়ে করলে না কেন?
আকাশে বিজুলি চমকালে বৃষ্টি নামে; মালিহার চোখে জল
আমি বললাম, কাঁদছ কেন?
তুমি এতো বড় শিল্পপতি হয়েও……
থাক না সেসব কথা, বাকিটা জীবন তো একসাথেই আমরা কাটাতে পারি
কিন্তু আমিতো চেয়েছিলাম তুমি আমার যৌবনের অংশ হও – চেয়েছিলাম আমাদের সংসার হোক – আজ যে আমি সত্তর!
একজন পুরুষের কাছ থেকে একজন নারীর জৈবিক চাহিদা এবং সংসার ছাড়া আর কিছু প্রত্যাশা থাকে কি?
মালিহা বললো, থাকে – এক স্বর্গীয় ভালোবাসা যা সংসার জীবনের মতো ক্ষয়িষ্ণু নয় – যা গোলাপের মতো পবিত্র – খাওয়া যায় না অথচ তার সৌন্দর্য তার সুঘ্রাণ কেউ হারাতে চায় না।

অগ্রাণের মধ্যভাগে

শীতের ভোর আকাশে উড়ে যায় সাদা বক ঘন কুয়াশায়
ভাটার টানে সাগরে জল যায় চলে যায় অজানার পানে
গাছে পেঁপে পেকে গেলে পাখিরা যেমন করে যায় জেনে যায়
শহর ছেড়ে এলে কবিতার পঙতি তেমনি আসে এখানে
অগ্রাণের মধ্যভাগে কিষাণ যখন ধান কেটে গোলা ভরে
এমন সময় সুর্য ডুবে গেলে তোমাকে আমার মনে পড়ে
এই দৃশ্য এসেছিল বিশ বছর আগের বৃহস্পতিবারে
জলাশয়ের ভিতরে যেন এক চাঁদ জেগে ওঠে অন্ধকারে।

বিশটি বছর আগে তুমি ছিলে এসেছিলে আমার জীবনে
দিয়েছিলে সুখ বুকে ছিল বুক মিশেছিলে জীবনে যৌবনে
আর ঠিক ঠিক দশ বছর আগে শুক্রবারের বিকেলে
বকের মতো লম্বা পা ফেলে নতুনের বিলে গিয়েছিলে চলে
আজকের এই দৃশ্য এসেছিল বিশ বিশটি বছর আগে
আর দশটি বছর আগে চলে গেলে অগ্রাণের মধ্যভাগে।

কবিতার ধরণঃ সনেট
ছন্দঃ অক্ষরবৃত্ত
মাত্রাঃ ২২
পর্বঃ ৮ + ১৪
অন্ত্যমিলঃ কখকখঃগগঘঘঃঃঙঙচচঃছছ

হে…

হে প্রিয় কবি,
এমন একটি কবিতা লিখো আবার
বাঙালি হিন্দু বাঙালি মুসলিম
বাঙালি বৌদ্ধ বাঙালি খৃস্টান
যেনো একে অপরের সাথে হয় বাংলার।

প্রিয় আবৃত্তি শিল্পী,
কন্ঠে আনো আবার এমন কিছু পঙক্তি কবিতার
যেনো ধর্ম বিজ্ঞান পরস্পর মিলে মিশে থাকে আবার।

হে গল্পকার,
হয়ে যাও তুমি এমন কিছু গল্পের রূপকার
যেনো জেগে ওঠে বাঙালীয়ানা বাঙলায় আবার।

হে উপন্যাসিক,
এমন কিছু উপন্যাস লিখে ফেলো আবার
ধর্ম নয় ভালোবাসা যেনো হয়ে ওঠে হাতিয়ার।

হে প্রাবন্ধিক,
লিখো আজ সেই প্রবন্ধ
যেনো হানাহানি হয় বন্ধ।

হে সঙ্গীত শিল্পী,
গাও আজ সেই গান যেখানে আছে প্রাণ আছে সাম্য
দূর হোক জগৎ থেকে ধনী গরীবের বৈষম্য।

হে মানুষ,
বন্ধ করো মিসাইল, টর্পেডো, পরমাণু, কার্বন নিঃসরন
জলবায়ু শুদ্ধ করে বাঁচুক মানুষ শান্তিতে থাক আমরণ।

হে ঈশ্বর,
তুমি মহা প্রভু মহা বিশ্বের মানুষ সৃষ্টি তোমার বিস্ময়
জ্ঞান দাও প্রভু জ্ঞান দাও আমাদের মন করো হিরণ্ময়।

প্রার্থনা

হে মহান প্রভু
জীবনের অর্ধেকটা পথ অতিক্রম করে এসেছি
আজও তোমার দেখা পাই নি।
একজন মানুষ বলেছেন, তিনি তোমার প্রেরিত রাসুল
তিনি বলেছেন, তোমার সাথে তাঁর যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে,
তিনি আরও বলেছেন, তুমি তাঁর উপরে কিতাব নাজিল করেছো।

হে মহান সৃষ্টিকর্তা,
সেই মানুষের নাম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ),
তিনি বলেছেন,তুমি আল্লাহ আর তোমার মনোনীত ধর্ম ইসলাম,
যেহেতু তিনি তোমার কথা বলেছেন তাই আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি।

হে মহান আল্লাহ,
তাঁর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেছি কেননা তুমি আমাকে মুসলিম ঘরে পাঠিয়েছো।
তুমি আমাকে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টান ঘরে পাঠালে আমি তাই বিশ্বাস করতাম।

হে মহান আল্লাহ,
আমি জানি না আমি ভুল পথে নাকি সঠিক পথে আছি,
তবে যেহেতু আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি
তাই আমাকে বিশ্বাসীদের তালিকায় স্থান দাও।
শুধু আমাকে নয়,
ঈসা মুসাও বলেছেন তঁদের সাথে তোমার যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে
এবং অনেকে তাঁদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেছে
স্মৃতি শ্রুতি থেকেও অনেকে বিশ্বাস স্থাপন করেছে
গৌতম বুদ্ধের কথাতেও অনেকে বিশ্বাস স্থাপন করেছে
যে যেই ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেছে সবাইকে তুমি বিশ্বাসীদের তালিকায় স্থান দাও,
যেহেতু তুমি অন্তর্যামী তাই তুমি জানো কার অন্তরে কি আছে।

সব ধর্মে ভেক ধরা মানুষ আছে,
বহুরূপী মানুষ আছে,
সে অন্তরের খবর তুমিই জানো,
তাই অবিশ্বাসী হয়েও যারা বিশ্বাসীদের মতো আচরণ করে,
যে সব অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করে,
তাদের খবর তুমিই জানো এবং তার বিচার তুমিই জানো।

আর যারা তোমাকে মনে মনে এবং প্রকাশ্যে অস্বীকার করে,
তোমাকে অজ্ঞেয়বাদ বলে অবজ্ঞা করে,
তাদের তুমি ক্ষমা করে দিও,
কারণ তারা যা বুঝেছে তাই বলেছে
এবং তারা তোমাকে বুঝতে পারে নি,
তারা আর যাই বলুক তারা মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে না।
তুমি তাদের ক্ষমা করে দিও।

হ্যাঁ তুমি-সেই তুমি

তোমার চাহনি পূর্ণিমা চাঁদকে ম্লান করেছে
তোমার হাসিতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ফুটেছে
তোমার ঠোঁট যেনো রক্তকরবী
তোমার রূপ সাদাকালো পৃথিবীকে করেছে রঙিন পৃথিবী
তোমাকে দেখে জন্ম নিয়েছে হাজার লক্ষ কবি
তোমাকে পাওয়ার জন্য শুধু একটিবার
জন্ম নিয়েছি আমি এই পৃথিবীতে বারবার
শত সহস্রবার এসেছি পৃথিবীতে ফিরে ফিরে
জমিয়ে রেখেছি ভালোবাসা শত সহস্রাব্দ ধরে।

বিস্ময়কর এক নজরুল

image-3

“ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর”

আমরা জানি সৃষ্টিকুল কখনো
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদ করতে পারে না।

যারা না বুঝে কবি নজরুলকে কাফের বলেছিলো
কিংবা এখনো যদি অনেকে সংশয়ে থেকে থাকেন
তাদের জন্য বলছি।

যে সব ধর্মগুরুরা খোদার বাণীকে বিকৃত করে দেয়
যারা জুজুর ভয় দেখিয়ে মুক্ত চিন্তা করতে বাঁধা দেয়
যারা আল্লাহর বাণীকে বিকৃত করে ভুল বুঝাতে চায়
আসল খোদাকে বানোয়াট খোদা বানিয়ে দেয়
সেই বানোয়াট খোদার বানোয়াট বাণী শুনিয়ে
ইহকালীন ধান্ধা লুটতে কৌশলে লিপ্ত হয় !

সেইসব বানোয়াট খোদার
বানোয়াট আসন ‘আরশ’ ভেঙে চুড়ে
ছেদ করে হয়ে উঠেছিলেন যিনি চির-বিস্ময় বিশ্ববিধাতৃর!
উচ্ছেদ করেছিলেন মুসলিমদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন আগাছার মূল
তিনিই সেই মুসলিমদের
সত্য আলোর বিস্ময়
সত্য আলোর দিশারী
বিদ্রোহী কাজী নজরুল
বিদ্রোহী কাজী নজরুল
বিদ্রোহী কাজী নজরুল।

“ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদচিহ্ন
আমি খেয়ালি বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন”

বৃটিশরা যখন অবিভক্ত এই উপমহাদেশে
আবির্ভূত হয়ে উঠতে চাইলো খোদার বেশে
সেই বৃটিশ খোদার বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিয়ে
ভেঙে চুড়ে তচনচ করে অত্যাচারীর খড়গ থেকে মুক্তির জন্য
যিনি ফুটিয়ে দিয়েছিলেন বিষাক্ত হুল
তিনিই সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিদ্রোহী কাজী নজরুল
বিদ্রোহী কাজী নজরুল
বিদ্রোহী কাজী নজরুল।

ধর্মান্ধ অন্ধদের আলো দেখাতে
ধর্মাধর্মের হানাহানি আর যুদ্ধ ঠেকাতে
যিনি শোনালেন শ্যামা সঙ্গীত, হামদ, নাত আর গজল
যিনি ভেঙে দিলেন ধর্মীয় ইজমের সকল ভুল
সাম্প্রদায়িকতার সমুদ্রে নিমজ্জিত মানব জাতিকে
যিনি দেখিয়ে দিলেন অসাম্প্রদায়িকতার কূল
তিনিই সেই মানবতার অবতার
সাম্যবাদী কাজী নজরুল
সাম্যবাদী কাজী নজরুল
সাম্যবাদী কাজী নজরুল।

দোলন চাপা, চক্রবাক, ছায়ানট, পূবের হাওয়া, সিন্ধু হিন্দোল
প্রেমিক নজরুল দিয়ে গেলেন প্রেম বিজয়ের প্রেমময় মঙ্গল।

দারিদ্র্যতার কষাঘাতেও ছিলো যাঁর সৎ-স্বভাব
শিক্ষার সুযোগেও ছিলো যাঁর বড়ই অভাব
সকল প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে
যিনি ফোটালেন সাহিত্যের বাগানে অজস্র সুগন্ধি ফুল
তি্নিই সেই অসাধ্যের সাধক বিস্ময়কর এক নজরুল
বিস্ময়কর এক নজরুল
বিস্ময়কর এক নজরুল।

আলাপন-৫০

কাজল সাহেবের ঘুম আসছে না। অহেতুক মন খারাপ। মাঝে মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়ে থাকে। অথচ বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ বলেছেন প্রকৃতিতে কোনো কারণ ছাড়া কিছুই হয় না। কাজল সাহেব ভাবছেন, তাহলে উনার এই মন খারাপের কারণ কি?
কেউ একজন ফিস ফিস করে বললো, তোমার মন খারাপ হওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, তোমার কাছে মেসেজ আসছে কিন্তু তুমি তা ধরতে পারছো না।

ঘরে লাইট অফ করা আছে। বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালাবেন কি না বুঝতে পারছেন না। একটু ভয় ভয় লাগছে। কাজল সাহেব একটু রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন, কে ফিস ফিস করে কথা বলে?

আবার সেই ফিস ফিসঃ আমি ডুডুভব ভ্রল্ল।
কাজল সাহেব বললেন, “তোমরা ডুডুভন’রা কি পেয়েছো? তোমরা কি আমাকে জ্বালাতন করেই যাবে? কিছুদিন পর পর তোমরা এসে কি সব আজব আজব কথা বলো?”
ডুডুভন ভ্রল্লঃ আপনি ঠিকই ধরেছেন।
কাজল সাহেবঃ কি ঠিক ধরেছি?
ডুডুভন ভ্রল্লঃ আপনার কাছে আমি একটি ম্যাসেজ নিয়ে এসেছি এই জন্য আপনার মন খারাপ।
– কি ম্যাসেজ?
– মিলিট্যান্ট হামলা হবে
– কি? মিলিট্যান্ট আবার কি?
-মিলিট্যান্ট হলো এক্সট্রিমিস্ট
– এর মানে কি?
– এই যুগে কেউ ডিকশনারি তেমন ঘাঁটে না, গুগোল ট্রান্সলেটে যান মানে পেয়ে যাবেন
– যাইহোক, সেই মিলিট্যন্ট বা এক্সট্রিমিস্ট হামলা কেন হবে?
– এটা ওদের এমন একটা স্ট্র্যাটেজি যখন কোনো ভাবে মানুষকে, জনগণকে, দেশকে বিব্রত করতে পারে না তখন এই স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে।
-কিন্তু এরা কারা?
– এরা বেশ কিছুদিন আগে গুজব সন্ত্রাস করেছিলো – জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলেছিলো একটি সেতুতে অগণিত মানুষের মাথা লাগবে তাই ভয়ে কেউ ওই সেতুর কাছে যেতো না।
– আচ্ছা!
– ওই স্ট্রাটেজি যখন বিফলে গেলো তখন জার্নাল সন্ত্রাস করেছিলো
-সেটা কেমন?
-একটি গণমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়েছিলো যেন দেশের প্রধান এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে। দেশের প্রধানকে খুশি রেখে একটি বাহিনীর প্রধানের নামে মিথ্যাচার করেছিলো
-কিন্তু ওরা এমন করছে কেন?
– দেশের শাসনভার নেয়ার জন্য
– ও, আর কি করেছে?
– কিছুদিন আগে উনারা ঘরে থেকে মাঠে নামিয়েছিলো একটি ধর্মীয় দলকে যারা ধর্মকে ব্যাবহার করে তান্ডব চালায়।
– কি তান্ডব করেছিলো?
-তারা অগ্নি সন্ত্রাস, ভাংচুর সন্ত্রাস ইত্যাদি করে সরকার পতন করে নিজেরা এবং যারা ঘরে থেকে ওদের মাঠে নামিয়েছিলো তারা মিলে দেশের শাসনভার নেয়ার চেষ্টা করেছিলো।
– ও, বুঝতে পেরেছি
– কিন্তু সেটাতেও যখন সফল হলো না এখন তাই মিলিট্যান্ট হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে
– ও, এই মিলিট্যান্ট মানে কি যেন?
– এক্সট্রিমিস্ট
– ও হ্যাঁ এটার অর্থ খুঁজতে আবার গুগোল ট্রান্সলেটে যেতে হবে
– ওরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু শক্তিশালী বোমা তৈরি করেছে
– হোয়াট? টার্গেট কারা?
– টার্গেট দেশের প্রধান, সেখানে সফল না হলে সাধারণ মানুষকে রক্তাক্ত করে দেশের প্রধানকে বিব্রত করবে
– এতো রক্তপাত ঘটাবে কি করে?
– কেন আপনাদের দেশে এর আগেও তো সিরিজ বোমা হামলা হয়েছিলো
– সিরিজ বোমা হামলা করবে তাহলে গোয়েন্দা বিভাগ কি করছে?
– তারা বিষয়টা একটু আধটু আঁচ করতে পেরেছে কিন্তু শিওর হতে পারছে না কারণ ওই এক্সট্রিমিস্টদের আস্তানা অনেক গোপনে আছে
– কোথায় আস্তানা আপনি বলুন তো ডুডুভন ভ্রল্ল
– কি করে বলবো? মোবাইল ট্র্যাক করে বা অন্যান্ন ডিভাইস ট্র্যাক করে তাদের আস্তানা লোকেট করতে যে সময় লাগে সেই সময় পর্যন্ত তারা এক স্থানে থাকে না
– ট্র্যাক করতে কতো সময় লাগে?
– মিনিমাম ২২ মিনিট কিন্তু তারা ২১ মিনিটের বেশি কোথাও থাকে না
কাজল সাহেব বললেন, শুনুন ডুডুভন, আপনার এইসব গাল গল্প কবি সাহিত্যিকদের কাছে গিয়ে বলুন তাহলে উনারা খুব সুন্দর প্লট পাবে এবং এডভেঞ্চার এবং ডিটেক্টিভ কাহিনী লিখে ফেলবে, আমাকে এই রাত দুপুরে অহেতুক ডিস্টার্ব করতে আসবেন না।

কাজল সাহেব বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আর ওই ফিস ফিস শব্দ শুনতে পেলো না। এখন কাজল সাহেবের অহেতুক মন খারাপ ভালো হয়ে গেছে। বরং হাসি আসছে – এই ডুডুভন যে কবে থেকে কাজল সাহেবের কাছে আসা বন্ধ করবে সেটাই ভাবছে। না কি কোনো সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে সব খুলে বলবে তা বুঝতে পারছে না।
আবার ফিস ফিস শব্দঃ সাইক্রিয়াটিস্ট আপনার সমাধান করতে পারবে না। কি ভেবেছেন? আপনাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুমিয়ে রাখবে আর ডুডুভন আসতে পারবে না? ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে এখন ঘুমান। আমি আবার সময় মতো আসবো।

বিনামূল্যে প্রাপ্য

2940436703

মানুষ আজ অপেক্ষায় আছে
উদ্বেপ উৎকণ্ঠা আর ভয়ে আছে
পৃথিবীর সব দেশের মানুষেরই আজ ভয়
ফুসফুস নষ্ট করা এই জীনাণুকে যারা ভয় করে না তারা সচেতন নয়।

ফাইট অর ফ্লাইট
মরো অথবা মারো
মানুষের চেয়ে করোনা বুদ্ধিমান নয়
মানুষকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে জীবাণুর রাজত্ব চলতে পারে না
মানুষ তা হতে দেবে না।

কিন্তু তোমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল করছো
ব্যাধি নিয়ে বানিজ্য করা যায় না – কিন্তু তোমরা তাই করছো
ভ্যাক্সিন নিয়ে বানিজ্য করা কাম্য নয় – কিন্তু তোমরা তাই করছো
তোমরা ভুল তথ্য দিচ্ছো
এক কোটি বিশ লাখ মানুষকে ইতিমধ্যে ওই জীবাণু টেনে নিয়ে গেছে মাটির নিচে
অথচ তোমরা সঠিক হিসাব রাখতে পারছো না।

ভ্যাক্সিন নিয়ে বানিজ্য করলে – জীবাণুরা বুঝে ফ্যালে
আর তখনি মিউটেড হয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে
ভ্যাক্সিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা দাও অতি দ্রুত
আর পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে ভ্যাক্সিন দাও – বিনা মূল্যে
আঠারো বছরের নিচে বা উপরে – এই ক্ষেত্রেও তোমরা ভুল করছো
করোনা’র বুদ্ধিমত্তা তোমরা এখনো যাচাই করতে সমর্থ হওনি
ফুসফুসের পর সে আক্রমণ করবে মানব মস্তিষ্কের ব্রেইনে
আর মানুষের পর মানুষ পাগল হতে থাকবে।

এসো—
বিনা মূল্যে ভ্যাক্সিন সরবরাহ করা হোক-
মানুষের ফুসফুস নষ্ট করার পূর্বে
মানুষের ব্রেইন নষ্ট করার পূর্বে
মানব সভ্যতা পচে যাওয়ার পূর্বে
এসো সমস্ত মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন দেওয়া নিশ্চিত করি।

অপেক্ষা

tuiio

আষাঢ় মাসে কথা ছিলো তোমার আসার
আশার আষাঢ় এসেছে আজ ভালোবাসার।
আকাশ ঘন কালোমেঘে অন্ধকার,
কদম ফুলে একাকার চারিধার।

বৃষ্টি স্নাত কদম-ঘ্রাণে এগিয়ে চলি জোর কদমে,
ভালোবাসাতেই শক্তি যখন উত্তমে আর অধমে।
আশার আলো জ্বলেছে আজ নতুন আষাঢ় এসেছে বলে,
আশার ভালোবাসার আষাঢ় ভিজবে কি তবে অশ্রুজলে!

আশায় আশায় আছি আজও আসার অপেক্ষায়,
জীবন তবে যাবে কি কেটে শুধুই অপেক্ষায়!
তবুও আমি তেমন পাত্র নই তো হাল ছেড়ে দেবার,
আসবেই তুমি এক আষাঢ়ে সময় তবে হলেই আসবার।

তবুও কেন থাকো দূরে দূরে?

তোমার ভালোবাসার ওজন অনেক বেশি।
পাথরের পাহাড়ের মতো চাপ দিয়ে ধরে আমার বুকে;
আমি সে ভার সইতে পারি না।
তবুও সইতে হয় কেন-না তুমি থাকো আমার থেকে দূরে।

তোমার ভালোবাসার আকর্ষন; মধ্যাকর্ষণের চেয়েও বেশি।
মনে হয় সৌর চুম্বকের মতো আমাকে টেনে ধরে;
আমি সামাল দিতে পারি না।
তবুও কেন তুমি এখনো থাকো দূরে দূরে?

তোমার ভালোবাসার আগুন আগ্নেয়গিরির চেয়ে বেশি
আমার অস্তিত্ব এ আগুনের উত্তাপ নিতে পারে না
তবুও নিতে হয়; আমার প্রতিটি কোষ যায় পুড়ে পুড়ে।
জানিনা তবুও তুমি কেন থাকো দূরে দূরে?

কেন যে তোমাকে এতোদিন আগে আমি দেখলাম না?
ভালোবাসায় যে এতো শক্তি কেন আগে জানলাম না?

কেন এমন বিপদ

1150_n

ভালোবাসা যখন মায়ায় পরিনত হয়; সে এক বিপদ!
“মায়া” – সে এক অদ্ভুত অনুভূতি
এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র একটি বিপদ
যার থেকে কোনো উদ্ধার নেই—
যে একবার এই মায়ায় পড়েছে
সে এক অসীম উদ্ধারহীন বিপদে পড়েছে।

হা – ঈশ্বর!
তুমি মানুষের মাঝে এই মায়া দিয়ে
বিনিময়ে, তার বিনিময়ে
কেন এমন উদ্ধারহীন বিপদে ফেলো?

হা – ঈশ্বর!
তুমি মানুষকে কেন এমন বিপদে ফেলো?

১৭ মার্চ ২০২০: সংক্ষিপ্ত মুজিবনামা

resize

আজ হতে ঠিক একশত বছর আগে
শেখ লুৎফুর রহমান এবং সায়েরা খাতুনের
ঘর আলোকিত করে
তুমি এসেছিলে এই বাংলায়
মধুমতী নদীর তীরে
গোপালগঞ্জের টুঙ্গি পাড়ায়।

উনিশ্য তেত্রিশ সালে বিয়ে আর
বিয়াল্লিশ সালে ম্যাট্রিকুলেশন,
তেতাল্লিশ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিমলীগের কাউন্সিলর
আর ছিচল্লিশ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক-
ঠিক তখোনি কুখ্যাত “ক্যালকাটা কিলিং” সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু;
তুমি জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে
রক্ষা করেছিলে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষদের,
কে জানতো তখন, তুমিই হবে বাঙালি জাঁতির পিতা।

উনিশ্য সাতচল্লিশে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি
তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য
সোহরাওর্দীর সাথে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলে তুমি,
আটচল্লিশ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে ভর্তি এবং
ওই বছরই “রাষ্ট্রভাষা উর্দুকে মেনে নিতে হবে” – খাজা নাজিমুদ্দিনের
এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তৈরি করেছিলে “সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ”-
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় তোমাকে গ্রেফতার করা হয়-
আটচল্লিশ সালেই “ছাত্রলীগ” এবং ঊনপঞ্চাশ সালে “আওয়ামীলীগ” প্রতিষ্ঠা করেছিলে।

উনিশ্য বাহান্ন সালে আবার খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষণা ” একমাত্র উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা”
২১ ফেব্রুয়ারীর ওই দিনে তুমি ছিলে জেলে বন্দি কিন্তু তোমার তৈরি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি নিয়ে একশ চুয়াল্লিশ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হলে
মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলিতে রফিক বরকত সালাম’রা শহীদ হলে
জেলের ভেতরেই আমরণ অনশন শুরু করেছিলে,
অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারীতে মুক্তি পেয়েই চীনের শান্তি সম্মেলনে গিয়ে বাংলায় বক্তৃতা
দিয়ে ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে গিয়েছিলে বৈশ্বিক অঙ্গনে।

উনিশ্য চুয়ান্ন সালে পুর্ব পাকিস্তানের সাধারন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সংখ্যা গরিষ্ট আসন
পেলেও কেন্দ্রীয় পাকিস্তান প্রহসনের “ভারত স্বাধীনতা আইন” প্রয়োগ করে
যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভা ভেঙে দিয়ে বাঙালি জাতিকে করেছিলো বঞ্চিত।

উনিশ্য ছাপ্পান্ন সালে মাত্র নয় মাস পর মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়েছিলে
বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য।
উনিশ্য আটান্ন সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে
সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করে তোমাকে একের পর এক
মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে ১৪ মাস পর মুক্তি দিয়ে সেদিনই আবার
জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার করেছিলো।

উনিশ্য একষট্টি সালে “স্বাধীন বাংলা বিল্পবী পরিষদ”
বাষট্টি সালে “জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট” এবং
চৌষট্টি সালে “কম্বাইন্ড অপজিশণ পার্টি” গঠন করেছিলে।

উনিশ্য ছিষট্টি সালে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে
পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের শেকড়ে
করেছিলে কুঠারাঘাত।
আটষট্টি সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ” রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব” দায়ের করে আইয়ুব সরকার।

উনসত্তর সালে দেশব্যপী টানা গণআন্দোলনের মুখে
আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
একই বছরে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তোমাকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করে,
ওই বছরেই তুমি পুর্ব পাকিস্তানের নাম দিয়েছিলে “বাংলাদেশ”।

উনিশ্য সত্তর সালের সাধারণ নির্বাচনে তুমি আওয়ামীলীগের প্রতীক নৌকা বেছে নিয়েছিলে
মাত্র দুটি আসন বাদে সব আসনেই তুমি জিতেছিলে,
কিন্তু উনিশ্য একাত্তর সালে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে
পহেলা মার্চে ইয়াহিয়া অনিদৃষ্ট কালের জন্য অধিবেশন বন্ধ করে দেয়।
মার্চ হয়ে ওঠে উত্তাল, সর্বস্তরের বাঙালি রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে,
অতঃপর এলো সেই সাতই মার্চ, রেসকোর্সের ময়দান পরিণত হলো জনসমুদ্রে,

পৃথিবী কেঁপে উঠলো তোমার বজ্র কণ্ঠের আওয়াজেঃ
“আর যদি একটা গুলি চলে-
আর যদি আমার লোকদের উপর হত্যা করা হয়-
তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো-
প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তলো-
তোমাদের যা কিছু আছে-
তাই নিয়ে-
শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে”
বিশ্বের হাজার কোটি কর্ণকুহরে পৌঁছেছিলো তোমার প্রদীপ্ত কন্ঠঃ
“তেইশ বছরের করুণ ইতিহাস-
বাংলার অত্যচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস
তেইশ বছরের ইতিহাস-
মুমুর্ষ নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস
বাংলার ইতিহাস-
এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস”

সাত কোটি বাঙালির মনে জাগ্রত হয়েছিলো দুর্বার অদম্য সাহসী শক্তি
সেই সাহসী শক্তি পরিণত হয়ে হয়েছিলো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার এক প্রলংকারী মহাশক্তি
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরাজিত হলো মুক্তিবাহিনীর কাছে
জেগে উঠলো স্বাধীন বাংলার নতুন সূর্য
তৈরি হলো স্বাধীন বাংলা, বাঙালি জাতি এবং জাতীয়তা
সেই থেকে তুমি আছো, তুমি থাকবে চিরকাল হে বাঙালি জাতির পিতা।

থ্যালাসামিয়া

সে
এক
করুণ
জীবনের
পরিসমাপ্তি।
বাবা মা দুবোন
সুখের পরিবার
হাসি আনন্দ অপার
চলে যাচ্ছিলো জীবনের
উঁচু নিচু পথ বেঁয়ে তারা।
জীবন সময়ের এক বাঁকে
কেউ যেন কোনও অদৃশ্য থেকে
জীবন পথে ভিন্ন এক ছবি আঁকে।
আকস্মিক এক রক্ত রোগ ধেয়ে এলো
দু বোনের জীবন করে দিলো এলোমেলো।
হায় থ্যালাসামিয়া! প্রতি চার মাসে বদলে
দিয়ে নতুন রক্ত নিতে হয় জীবন বাচাতে।
রক্তের বিকল্প যে শুধুই রক্ত, তাই বসে থাকে
দুই বোন বাবা মা’র সাথে রক্ত নেয়ার ল্যাবে।
আজ নতুন রক্ত নিতে হবে দুই বোনকে
রক্ত পেলে বাঁচবে আরও চারটি মাস
দেখতে পারবে সুর্য গাছ পাখি সব
পাবে হাসি ভরা জীবনের নির্যাস।
অনেক অপেক্ষা করে রক্ত পেলো
তবে তা ছিলো এক ব্যাগ মাত্র!
বাঁচতে পারবে এক বোন
সবার অশ্রুসিক্ত চোখ!
বড় বোন বলে, বাবা;
ছোটকে রক্ত দাও।
ছোট বেঁচে গেলো
তপ্ত নিশ্বাষ
ফেলে বড়,
কোথায়
গেলো
সে?