জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

তালগাছ

2021071

কী অমন হেতুপদ, নিজেকে ভাবছ অতোটা উঁচু
তুমি বৃষ্টিস্নাত তালগাছ হও অথবা লতানো কিশলয়
ভেবো দেখো… একদিন তুমিও অংকুর ছিলে ইশ
ছিলে চালহীন-চুলোহীন, মুণ্ডহীন লাওয়ারিশ!

অতঃপর উর্বর হয় কোন এক বন্ধ্যা রমণীর যোনী
স্বরবৃত্ত ছন্দে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বসে একদিন হাটবার
সেই অস্থি, চর্মহীন লোলুপ রক্ত পিণ্ডটি
এখন দোল খায় দোলনা
প্রজ্ঞা ও সংজ্ঞার মিছিলে যোগ হয় নব দ্যোতনা!

এখন তুমি রাজর্ষি, কালকেতু উদ্ধত তোমার চলা
ঝাঁকড়া চুলে কথায় কথায় মাংসাশী কথা বলা
উলঙ্গ দেবদারুর মতোন
বলিহারি রাজঘোটকের মতোন ঠাট
পোয়াবারো সময়ের চক্রব্যুহে বল্গাহীন নামতার পাঠ!

বুঝতে পার? কেড়ে নিয়েছ সকল ঠিকানার ঘাট
মনে রেখো… আবার জমবে মেলা
পাকবে মাটির দলা দিতে হবে উড়নচণ্ডী সময়ের হিসাব।

না বর্ষা

অন্ধকারের পায়ে ঘুংঘুর দেখে ভেংচি কাটে শালিকের
জোড়া ঠোঁট, বিশ্লেষণ নেড়ে ছেড়ে দেখা যায়
শরীরের কোথাও নেই কোনো চোট;
তবুও একদিন আড়মোড়া ভাঙে সজল সকাল…

এরপর থেকে সখির বর্ষার কথা আর মনে পড়ে না!
তবু্ও দৈনিক হিসাবে পাড়ায় গড়ায় কিছু পাথর সুখ
সখিনা জানে তার রুপ আছে, তাই বুক করে ধুঁক ধুঁক!

তবুও বিকালের আশায় কোনোকিছুই থেমে থাকে না
একদিন ঠিক ঠিক চলে আসে আগন্তুক কামরাঙা বেলা
নক্ষত্রগুলোকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেও শিখে গেছে খেলা
তবুও কিছু গাঙচিল… ডানাহীন ওড়ে ওড়ে আসে…..
ওরা সখিনাকে নয়, তার রুপকে কচলাতে ভালোবাসে!

সড়ক

দুঃখগুলো দুঃখজনকভাবে সব স্পর্শের বাইরে…
তবুও ইতিকথার পর আরও কিছু কথা থাকে
এখনও কানামাছি, বউচির নাম করে ডাহুক ডাকে!

কেবল সময়ের অসম ফারাকটা কেউ বুঝে না
ভালোবাসার নদীটা আজও ঝড়ো বৃষ্টির মতো কাঁদে
ভেতরে-বাইরে একই রকম ভাঙাচোরা সড়ক
কোথাও কোনো সুবাতাসের সন্দেশ নেই….
গন্ধর্ব পৃথিবীর সবখানে লেগে আছে একই মড়ক!

অথচ
পানকৌড়ি সকালগুলো খিলখিলিয়ে হাসে বেবুঝ
কতো শরীরের বাতাস শরীরে লাগে রোজ রোজ
তবুও আজকাল কেউ রাখে না অন্য কারো খোঁজ!!

দ্বিতীয় পৃথিবী

মানুষ ভাবে এক, হয় দুই, তিন, চার পাঁচ, ছয়, সাত
কেউ আর অপেক্ষা করে না আটকোরা প্রভাত
কেবল ভোলা পাগলা একাই
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চেঁচায়…. জয় দ্বিতীয় পৃথিবীর জয়!

একদা কনিষ্ঠা আঙ্গুলি থেকে জন্ম হয়েছে যে রাত
সে এখন দিব্যি তর্জনী, মধ্যমা থেকে শাহাদাৎ!

গাড়োয়ান জানে না, কোথায় তার সাধের পঙ্খিরাজ
ধুমা তালে কেবল টাক মাথায় বাজ পড়ে বাজ
তবুও ভোলা পাগলা সাঁয়বাজ থেকে হয় ধড়িবাজ
এবারে চেল্লায় গাড়োয়ান..
তোরা এনে দে… এনে দে আমার সাধের পঙ্খিরাজ!
চিত্রনাট্যের ফরম্যাটে অন্য আর কেউ নেই
গাত্রদাহে কেউ শোনে না কারো গোপন আওয়াজ!

প্রিয় কবিতাগুলো আজ আর প্রিয় নেই

প্রিয় কবিতাগুলো আজ আর প্রিয় নেই
অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের মতোন
কদিন পর পর সেও শহরে নাইওর যায়;
সেই শহর যেখানে কোনোদিন চাঁদ উঠে
না, সূর্য উঠে না!!

সেই কোন্‌ প্রাগৈতিহাসিক কালে জন্ম নেয়া
সকাল চলতে থাকে, চলতেই থাকে, সন্ধ্যা হয় না;
অজ্ঞাতবাসে চলে যায় নীরবরাত্রির ট্রেন
যাত্রীরা কেউ দিন বুঝে না, রাত বুঝে না…
কেবলই সমুদ্র সাম্পান—-!!

মৃত সী-গালের জন্য কোনো শোক নেই
আজকাল কবিতাও নারী এবং পুরুষ জাত;
হস্তরেখায় ভবিষ্যৎ দেখে———-!!

দেয়াল

কবিতাটাও হয়েও হলো না গোঁফ খেঁজুরে সময়
তবুও রাত্রির নিস্তব্ধতার কথা খুউব মনে পড়ে
মনে পড়ে মধ্যরাত্রির সপ্তর্ষি মণ্ডল, আদম সুরত ওদের
এখনও ওরা সবাই ঘুমিয়ে আছে সুরতহাল রিপোর্ট
সুমনা জানো, আজকাল গজবে আর গুজবে কেন
এতো চোট..?
তবুও আশা আর নিরাশার মাঝামাঝি কেউ আছে
সেঁজুতির দাপ্তরিক কর্ম শেষে রোগীর মতোন যেমন ভোর নাচে;
আমারও তেমনি নিষ্পত্তিহীন চোখ
কর্ম আর অকর্মের মাঝে খুঁজে বেড়াই আপন সুখ!
তবুও দিনান্তে দেয়াল ভেদ করে উঁকি দেয় কিছু বোধ
তবে কি আমাকেই নিতে হবে আমার উপর প্রতিশোধ!

তেজারতি

চায়ের স্টলে যতটা গন্ধ ওড়ে.. আদা, তেজপাতা,
লং, কালোজিরা
ততটা মুদী দোকানে নেই, অনেকটাই নিরাকপরা!
তবুও কাঁচা আনন্দে ঘুম আসে না
সবাই শিখে গেছে হিসাব বাইনারি
কিছু কিছু ভদ্দরলোক সুপুরুষ এখন কেবলই নারী!
আমিও তেমনি কেউ…… নাগরদোলা
চাহিদারেখা জাগ দিয়েছি আত্মভোলা!
তবুও আমূল বদলে গেছে মরাকটাল-তেজকটাল
তবুও….
তেজারতির নামে নামিক হিসাবের ভাঙে কাঁঠাল!

ঢেঁকুর

জানি নীরবেই ঢেঁকুর তুলতে হয়
আমিও নীরবেই ঢেঁকুর তুলতে চেয়েছিলাম
সখি, এখন দেখি…. তথাস্ত
আমার ঢেঁকুরের শব্দ সবারই মুখস্ত!
তবু্ও ভ্রুক্ষেপহীন হোক গণশুনানির দিন
ইশতেহারে লেখা আদ্যক্ষর “ভ”
পিতা আজও নীরবেই কেঁদে কেঁদে কেঁদে
বলেন, “ম”!
ঢেঁকুর দিয়ে কবিতাটা শুরু করেছিলাম
কে জানে কী দিয়ে হবে শেষ
লোকে বলে, শেষ ভালো যার সব ভালো
তার অবশেষ….!!

এক একে এক

একের নামতা বারবার পড়লাম
রাশি রাশি ধনের সমাহার
যে আজন্ম বুভুক্ষু সেও পেতে পারে
এক থেকে অনন্য আহার।
আসলে সৃষ্টি আর প্রলয় একসুতে
গাঁথা দুটি মুক্তোর মালা
প্রমোদতরীতে যেজন প্রণয় খুঁজে
সে অর্থে সবাই প্রমোদবালা।
যেজন বুঝতে শিখেছে উচ্ছিষ্ট জীবন
তার কাছে রুপ-রস-গন্ধ অতল
দেখো.. একের নামতায় ছড়িয়ে আছে
কী… প্রেমময় এই ধরাতল!!

ন কবিতা

নিশাচর এই আমি আরও একবার ঘুমিয়েছিলাম
যেভাবে মরুভূমির বালুকণারা ঘুমিয়ে থাকে
যেভাবে আকাশে ওড়তে ওড়তে পাখিরা ঘুমিয়ে থাকে
আমিও ঠিক সেভাবেই আরও একবার ঘুয়েছিলাম!
তখনও এই গ্রহে চলছিলো পৌষের চাষ
না রাত আর না দিন বারোমাস
তবুও গণকবরে ঝিমিয়ে থাকে চিত্তের ঋণ
অথচ এই আমি….
যেমন অর্বাচীন ছিলাম, এখনও তেমনি অর্বাচীন!
এইসব কথার স্রোতে জনসমাগমে দীর্ঘ ভাষণ হয়
বেজোড় রাত্রির দীঘল কেশ হয়
কোনোদিন সার্থক কবিতা হয় না
ইনসমোনিয়া রোগীর মতোন কেবল রাত বড়ো হয়!

খসড়া জলের দাগ

কবিতারা আর কবে গণমুখী হবে…?
যেভাবে রাস্তার ধারে ভাঁপ-ওঠা পিঠারা গণমুখী হয়
যেভাবে সাত-সকালে কাঁচাবাজার গণমুখী হয়
ঠিক ঠিক সেভাবে…।
সময়ের মৃত শরীর ঘেঁষে বিস্তীর্ণ মশা-মাছি ওড়ে
কাব্যের কালো অক্ষরগুলো কাব্য থেকে বেশ দূরে
তবুও কপালকুণ্ডলারা খিলখিল হাসে
মোটাদাগে খসড়া জলের দাগ ভালোবাসে
এভাবেই একদিন মরাগাঙে চির ধরে
তবুও ওরা চিরদিন একসাথে বাঁচে একসাথে-মরে!

বিশ্বস্ত ছাতা

অনেকদিন ব্রহ্মপুত্রের কাব্যশ্রী দেখি না
যেমন দেখি না আজন্মের পৈতৃক ভিটা
পেছন বাড়ির ক্ষেতের ধানের চিটা
ধূলো পড়তে পড়তে স্মৃতিরাও কালশিটা!
জীবনের ব্যস্ত সড়কে কেবল অথৈ যানজট
বঊ, ছেলে, মেয়ে সবাইকেই “হ্যা”বলতে হয়
কখনো বলতে পারি না এবার “নট”!
তবুও একটু একটু করে আমার দেনা বাড়ে
ভয়ে হাত দিই না হিসাবের খাতা
বাবার কথা খুউব খুউব মনে পড়ে
মাথার উপর থেকে কোথায় হারিয়ে গেলো
বিশ্বস্ত ছাতা।

বিষণ্নতার ঠোঁট পুড়ে

রোদ গলে গলে বিষণ্নতার ঠোঁট পুড়ে
নগ্ন বাতাসে ওড়ে চলতি হিসাবের করোনার কাল
তবুও হৈচৈ এ মেতে থাকে বৃদ্ধবণিতা আবাল!
ওজন দরে বিক্রি হয় বোধ
কুয়াশায় মুখ ঢেকে ভণ্ডও হয় সুবোধ
ছেঁড়াপালে লাগে হাওয়া
দিন কতেক আগে সখিনা ছেড়ে দিয়েছে খাওয়া!
তবুও উত্থান শেয়ার বাজার
ইতোমধ্যে লেনদেন চুকিয়ে গেছে হাজার হাজার
আঙুলে আঙুল ঘষলে উষ্ণতা বাড়ে
কফির কাপে পোড়া ইতিহাস কেবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে!

পলাতকা

সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

পলাতকা
এখনও শোধ দাওনি জন্মান্তরের দেনা, এখনও–!
দেখো, আমি আজো পথের মাঝেই খুঁজে বেড়াই পথের ঠিকানা!
অথচ এই শিনশিনে কপট শীত উপেক্ষা করেও তুমি পালিয়ে গেছ,
হে যাযাবর পলাতকা!
পালিয়ে গেছ ভাঙা বেড়ার ফাঁক গলিয়ে, ডিঙিয়ে সিঁদকাটা অজস্র সমাক্ষরেখা!
একবার ভেবে দেখেছ, কী রেখে গেছ কালান্তর?
ছেঁড়া গোল পাতায় ছাওয়া রুদ্রাণী অবিশ্বাস,
আর শত জনমের করোনার জলপাই বেদনা!
দেখো, এখনও আড়ি পেতে আছে সর্বগ্রাসী মেঘনার
সাত দোযখের পাণ্ডুর নিঃশ্বাস!
এতো যে ডাকাডাকি, এতো যে আকুতি ভিজে যেতো পারতো যে কোনো বিশ্বস্ত বালুচর;
আমার সবে ছিল দু’বিঘে জমি, তারও একবিঘে গ্রাস করে নিলে পাষাণ নিশাচর!
তবুও এই জলাতঙ্ক বুকে, আতশি পাথর বেঁধে
এই যে আমার শত অনুনয়, পিছু পিছু কতো দিয়েছি তোমায় ঘুঘু ডাক; তথাপি তুমি ফিরলে না…
বড় জানতে ইচ্ছে হয়, তুমি আসলে কার..?
তোমার ফেরার সময় হলো না; আর একটিবার–!!

অবাক সূর্যোদয়

591_n

মৈনাক পর্বতের পাদদেশ থেকে নেমে আসা
কিম্ভূতকিমাকার অন্ধকারে বড়সড় হতে থাকে
রাত্রির দীঘল অজৈব ছায়া, কামুক জলে
স্নান সারে রাজহংস-রাজহংসী; ঘাতক জলও
তখন পৌষের পিঠা..
সময়ও তেমনি কখনও তিতা, কখনও মিঠা!
নৈঃশব্দ্যের উর্বর ডানায় পাস্তুরিত হয় নতুন
ভোর, কোকিলের কুহুতানে বাজে বেহালার সুর
পরাজিত হয়েছে সকল আকাল, করোনা কাল;
আবালবৃদ্ধবনিতার মুখে চড়া দামের হাসি
ভালোবাসি ধরনী.. আমি তোমায় ভালোবাসি।
এমনি করেই হোক সমস্ত কালশিটের বোধোদয়
বলিহারি হোক সমস্ত রোগ, শোক-তাপ-ভয়
নতুন পৃথিবী তাকিয়ে দেখুক অবাক সূর্যোদয়!