প্রিয়তমেষু,
আর দু’দিন পরেই নতুন হাওয়ায় পুরাতন চুল ওড়বে
একটি ক্যালেন্ডারের জায়গা দখল করে জন্ম নেবে
আরেকটি নতুন ক্যালেন্ডার, কেবল
কিছু আইবুড়ো ব্যাচেলর এখন যেমনি আছে
তখনও ঠিক তেমনি থাকবে আক্ষরিক অর্থের থান্ডার!
তবুও আমার ভুলো মনে আকস্মিক সূর্যের উদয় হয়
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিছু নাদান-না খাস্ত বয়ান
ঢেঁকুর তুলতে তুলতে কথা কয়
দিনপঞ্জির পাতা পালটে গেলেও আমার পুরোনো
অভ্যাস পাল্টায় না
আমার হাতের বলিরেখা ঠিক আগের মতোই চুলকায়!
প্রিয়তমেষু, সব কথা কবিতায় বলা যায় না
কিছু কিছু কথা থার্ড আই দিয়ে বুঝে নিতে হয়…
স্বরবর্ণে-স্বরবর্ণে যেমন স্বরসন্ধি হয়
তেমনি স্বরবর্ণে- ব্যাঞ্জণ বর্ণেও স্বরসন্ধি হয়
কেবল পেছনে পড়ে থাকে চীনের প্রাচীর, নিপাতনে সিদ্ধ
প্রিয়তমেষু, বলতে পারো..
কার শাপে আজ প্রাণপ্রিয় বর্ণমালাও প্রশ্নবিদ্ধ….?
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট
লোপাট
বেদনাকে এখন আর কিছুই বলি না
বাড়ি যাবে বলে সেও আর গেলো না।
খুলে দেবে বলেও খুললো না কপাট
চিন্তা, চেতনা ক্রমাগত হচ্ছে লোপাট!
বন আগেই পুড়েছিল, এখন পুড়ে মন
জলেও আগুন জ্বলে দাবানলের ক্ষণ।
ক্ষুব্ধ সমুদ্রে উৎসবে মাতে যখন ঢেউ
তখন ছোট্ট তরীর সংগী হয় না কেউ!
লুট
সিন্ধু ফুঁড়ে বিন্দু কুড়াই
জনম ভরা ভয়,
দিবানিশি আপন ভাবি
সেই আমার নয়!
তবুও আমি তার পিছু
করছি কতো শুট
বিনিময়ে হচ্ছে আমার
কাঁথা-কম্বল লুট!!
না চাঁদ না জোছনা…
তপতী কেমন আছে, অনেকদিন কিছুই জানি না…
আমিও কেমন আছি, তাই কি কেউ জানে?
লোকে চাঁদ ভালোবাসে নাকি জোছনা? কেউ জানলেও
জানতে পারে… তবে আমি জানি না!
তবুও আকাশে চাঁদ উঠার কোনো কমতি নেই
তবুও চাঁদের জোছনা বিতরণে কোনো কৃপণতা নেই
তপতী কি জানে..?
পুতুল বেলায় যেমন ছিলাম এখনও আমি সেই!
এখনও আমি নীরবেই হজম করি গাল বটিকা
এখনো সাক্ষী গোপাল, রোজ দেখি বাহারি নাটিকা
বদ-হজমের ভয়ে হিসাব কষি ছ’আনা, ন’আনা
তবুও….
কেউ কেউ বলতে ছাড়ে না, আমি নাকি জন্মকানা!
আমি একটি হাই- পাওয়ার চশমার কথা ভাবি
ভাবি…. ছেমার মতোন অতীন্দ্রিয় একটা কিছু
পৃথিবী যেমন সূর্যের পেছনে পেছনে ঘুরছে
আমিও তেমনি ভাবি, কেউ নিক এই আমার পিছু!
তবুও ইতিহাস বলে, প্রশ্ন থেকেই যাবে অনন্তর
জোছনা, না চাঁদ? আমি বলি,
ভালোবাসা-টালোবাসা আসলে কিছুই না.সব. ফাঁদ!
শরীর বেয়ে হাঁটে পুণ্যের ঘাম
হেমন্তের উড়ন্ত সূচনায় ওড়ে অভিসারী মন
বউ বাজারের চড়া দামে তা টিকে না বেশিক্ষণ?
স্বরলিপির সমস্ত জমিন জুড়ে অংকিত সোনা
এভাবেই হউক রোপা আমনের শৈল্পিক বোনা!
কিষাণীর একহারা শরীর বেঁয়ে হাঁটে পুণ্যের ঘাম
কাগজের টাকায় কতোটা শোধ হবে তার দাম?
তবুও তোমাদের বিত্ত আর চিত্তের ফানুস ওড়ে
সৌখিন শালের আশ্রয়ে গড়ায়, ওরা ওঠে ভোরে।
কৃষকের সমস্ত বুকের জমিনে রাশি রাশি সামান
আইনের নাম করে সেই বক্ষপুটে দাগাও কামান!
যারা গোড়ায় জল ঢালে তুমি খাও সোনার ফল
ভেবে দেখ চাষিহীন দেশে তুমি কোথা পাবে বল?
আমারও একদিন প্রেম এসেছিলো
আমারও একদিন প্রেম এসেছিলো
তখনও মোরগ ডাক দিতে শেখেনি…
রাজ্যহীন রাজার মুকুটের মতোন কেবল ডাকসই কাল
চড়ুই এর উপর চড়ুই দেখে আমি তো লজ্জায় লাল!
ধান ক্ষেতের আলপথে প্রজাপতির ডানা হই
মিঠাপুকুরে মাইকেল থর্পের মতো সেরা সাঁতারু হই
একদিন দেখি নাকের নিচে কাউনের দানার মতো মিহি চুল
কিছুতেই আন্দাজ করতে পারছিলাম না
একি ভ্রম, বিভ্রম নাকি আমারই মনের ভুল!
তবুও বেলার সাথে খেলা হয়
যেমন মেঘের সাথে মেঘের ঘর্ষণে বৃষ্টি হয়!
অতঃপর একদিন দেখি মানুষের ট্যারা ট্যারা চোখ
পৃথিবী দেখার আগেই বেলা চোখ মুছে সতী হয়
আমার ডানপিটে বুক তবুও কেবল করে ধুঁক ধুঁক!!
ভাইরাস
মনে পড়ে…?
তোমার থুতু থেকে যে দীঘির দীর্ঘ জন্ম হয়েছিলো
তোমার নাভিমূলে জন্ম নিয়েছিলো যে মৃগনাভি
তাদের হাতেই আজ ঘুরে-ফিরে এই সময়ের চাবি!
বাড়ন্ত হাত কি জানে
কীভাবে মেটাতে হয় পুরাকীর্তির দাবী?
অথচ সবার একটাই শর্তহীন স্বপ্ন ছিলো
আমরা কেউ পিতার জায়-নামাজ বিক্রি হতে দেবো না
আমরা কেউ মায়ের মুখের বুলি ছিনতাই হতে
দেবো না
আমরা কেউ বোনের সতীচ্ছেদে শকুনের আনাগোনা
বরদাশত করব না
আমরা কেউ ভাইয়ের বাটোয়ারায় শ্যেনদৃষ্টি দেবো না!
অথচ তাকিয়ে দেখো….
ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে সবকিছু
উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুতেই কমছে না!
——————————————————–
কবি পরিচিতিঃ সহযোগী অধ্যাপক,
সরকারী আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ। 01712536755
স্বাধীন দিনের গল্প শোন
স্বাধীন দিনের গল্প শোন
নয়টি সবে মাস
চোখের জলে নাকের জলে
পাক বাহিনী নাশ!
বীরের জাতি ভয় করে না
সাহস ভরা বুক
জীবন দিয়ে আনলো কিনে
স্বাধীনতার মুখ।
স্বাধীন দিনের স্বপ্ন ছিলো
সবার মুখে হাসি
নারী-পুরুষ যুদ্ধে গেলো
গেলো মজুর চাষি।
আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি
দেশ যে সবার বড়
দেশমাতা-কে ভালো বেসে
নিজের জীবন গড়।।
আজকের তিনটি ছড়া
ছড়া পড় জীবন গড়
ছড়া পড় ছড়া লেখ
ছড়া সত্য বলে
আঁকাবাঁকা চেনে না
সরল পথে চলে।
ছড়ার দেশে নগদ মজা
স্বপ্ন চোখে ভাসে
প্রজাপতি আর মৌচিরা
নাচতে নাচতে আসে।
ছড়ার মাঝে ডুব দাও
ভুবন ঘুরে আস
দু’চোখেতে স্বপ্ন সাজাও
দেশকে ভালোবাস৷
ছড়ার মতো সুন্দর হও
ফুলের মতো পবিত্র
কে জানে না মানুষেরা
সবার চেয়ে বিচিত্র!
তাই বলি তোমরা সবে
মজার ছড়া পড়
সত্য, ন্যায়ের ঢাল ধরে
সুন্দর জীবন গড়!
———————
নদী নামের সেই মেয়েটা
নদী নামের সেই মেয়েটা
বেজায় পিয়াস তার
কয়েক ঘটি জল পানেও
তৃষ্ণা যায় না যার!
খালের কাছে বিলের কাছে
জল জামানত চায়
আকাশ পানে চেয়ে থাকে
বাজবে কখন সানাই!
সেই মেয়েটার জলের নেশা
আর যে যায় না
ফুলের কাছে পাখির কাছে
জানায় বায়না!
সেই মেয়েটা চাতক হলো
দুঃখ হাজার বুকে
মানুষ নামের অমানুষেরা
থাকবে কি সুখে?
—————————-
সেই ছেলেটি স্বপ্নবাজ
সেই ছেলেটি ভালো ছিলো
কেমনে চোরের তকমা পেলো?
সেই ছেলেটি স্বপ্ন বাজ
একদিন মাথায় পড়লো বাজ!
বাবা-মায়ে মারা গেলো
চার ভাই-বোনে এতিম হলো!
দ্বারে দ্বারে খুঁজলো কাজ
গলা-ধাক্কার পেলো তাজ!
সমাজ তাকে বদলে দিলো
চোরের তকমা গলায় নিলো!
তবুও সে কাজ চায়
সুন্দর জীবন গড়তে চায়!
মৌন-মুখী
নিঃশব্দে জেগে থাকি সহযাত্রী রাত্রি
আশেপাশে আর ঝিঁঝিঁ ডাকে না
ব্যস্ত সড়কে সারারাত-ই ধুলো ওড়ে, কিছুক্ষণ পর পর
এটম বোমা ফাটার মতোন হর্ণ ফাটে!
ঘুমন্ত মানুষগুলোকে বড় সুখী মনে হয়
তবে এরা রোমান্টিক না
নিঃসীম রাত্রির নিস্তব্ধ সৌন্দর্য এরা বুঝে না, বুঝতে চায়ও না
নিরব-নিথর
শরীরে শরীর চাওয়ার পর… অতঃপর!
তবুও আমি একা নই…এই প্রবাস প্রহর
কিছু কিছু নক্ষত্রের সাথে দৈবাৎ মিতালি হয়
ওরা আমার লোমশ পোক্ত বুকে হাত বুলিয়ে দেয়
বাঁ চোখের বড় পাপড়িটা নিয়ে অবোধ শিশুর মতোন খেলে যায়
আমার বাবার কথা মনে হয়
আমার মায়ের কথা মনে হয়…।
অতঃপর আবার সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড মৌনমুখী হয়!!
সুবেহ সাদেক
যখন কিছু পাপ, লাফ দিয়ে আমার শরীর ছেড়ে যায়
তখন নগ্ন আকাশে একটি জলজ্যান্ত চাঁদ উঠে…
কিছুকিছু নক্ষত্র সে চাঁদের দিকে নিষ্পত্তির চোখে তাকায়
আমি তখনও সর্বৈব নিষ্পৃহ!!
অথচ প্রতিদিন সুবেহ সাদেক আমায় ডেকে ডেকে
ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায়
পাপের ভারে আমি সহজে শীতনিদ্রার মায়া কাটাতে পারিনা
আগন্তুক সময় আমাকে নিয়ে চামচিকার মতো খেলে!
তবুও আমি শীতের সকালে কফির পেয়ালায় প্রথম দীর্ঘ
চুম্বনের মতো বিছানায় অবচেতন পড়ে থাকি
আমি আমার ভেতর ছেড়ে বাইরে আসতে পারি না
আমার তখন পা কাটা শামুকের কথা মনে হয়
যার সাথে মাঝে মাঝে ভিন্নজগতে আমার কথা হয়!!
তবুও আমার নিঃশ্বাস আর প্রশ্বাসের মাঝখানে উদয়াস্তের
নিরন্তর নিঠুর খেলা চলে
তবুও আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না
যে আমার, আমি যাঁর; তাঁর কথা আমি কীভাবে যাই ভুলে??
ধাপ্পাবাজ
সেই ছেলেটা ধাপ্পাবাজ
কথায় কথায় দেখায় কাজ!
স্যুট, টাই বাগাড়ম্বর
মুখে বলে অনাড়ম্বর!
বারেবারে চোগলখুরি
চান্স পেলেই গাজাখুরি!
রাস্তা-ঘাটে ঠাংকি মারে
থুড়ি মেরে নজর কাড়ে!
সেই ছেলেটা ধাপ্পাবাজ
কাজে ফাঁকির কারুকাজ!
সবাই তাকে মন্দ বলে
সে এখন একলা চলে!!
মাত্র লেখা তিনটি ছড়াঃ
খোকার স্বপ্ন
আমন ধানে সুখ আনে
ছড়ায় মধুর হাসি
পিঠা-পুলি মায়ের বুলি
সবাই ভালোবাসি।
ধানের উপর প্রজাপতি
ঝুমুর ঝুমুর নাচে
সেই নাচনে শুকপাখিটা
আসে খোকার কাছে!
খোকার চোখে স্বপ্ন অনেক
ঝিঁঝিঁ ডাকা দিন
দেশকে যারা করল স্বাধীন
শোধিবে তাদের ঋণ!
———***
মেঘের বাড়ি
খোকা যাবে মেঘের বাড়ি
রাজ্য জুড়ে খবর
পাখপাখালি ওরাও যাবে
আয়োজনটা যবর!
দোয়েল পাখির শিস নিবে
ময়না পাখির সুর
তোমরা সবাই সংগী হবে
জাগবে যারা ভোর!
মেঘের বাড়ি গল্পের হাড়ি
গল্প দাদু থাকে
চকাচকির পুতুল খেলা
গুড়ুম গুড়ুম ডাকে!
———***
ঘাসফুল
ঘাসফুলটা একলা থাকে
কেমনে কাটে বেলা
মাঝে মাঝে মৌমাছিরা
এসে করে খেলা!
মানুষ যেমন হাসতে হাসতে
বন্ধুকে দেয় ধোকা
মৌমাছিরাও বারেবারে
বানিয়ে যায় বোকা!
উড়ে এসে জুড়ে বসে
মধু খাওয়ার ছল
মানুষ রুপী অমানুষেরা
কবে মানুষ হবে বল?
শহীদ মিনার
ফাগুন এলেই আগুন জ্বলে
কৃষ্ণচূড়ার গায়
সেই আগুনে কিছু মানুষ
পুড়তে শুধু চায়!
বাংলা বাংলা মুখেই বলে
ভালোবাসে না
এরচেয়ে অনেক ভালোবাসে
কানাবগির ছা!
বাংলা যদি মা-ই হতো
ইংলিশ প্রীতি এতো!
ছাগল ছানার ভ্যা ভ্যা রবে
ভালোবাসা কতো!
শিমূল, পলাশ মান করেছে
সালাম ভাইয়ের মতো
শহীদ মিনার কেঁদে বলে
ফুল নেবো আর কতো!
ফুলের ভারে আমি এখন
চলতে পারি না
আজবাদে কাল আমায় কেউ
মনে রাখে না!
সেই দুখেতে পরান আমার
উথাল পাথাল ঢেউ
রফিক বরকত সংগী ছিলো
আজ যে নেই কেউ!!
আজকের ছড়া … বই
আজ কোন ছড়া নয়
আজ শুধুই পড়া
পড়াতেই আপন হবে
এই সুন্দর ধরা।
বইয়ের সাথে সখ্য গড়
বই তোমার বন্ধু
বইতেই লুকিয়ে আছে
অথৈ জ্ঞান সিন্ধু।
যে পড়ে সে-ই পারে
হাতে তোল বই
বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেতে
বইকে বানাও মই।
কালো কালো হরফেরা
স্বপ্ন সাজায় বেশ
খুকির ছোট্ট গালে যেন
ভালোবাসার রেশ!!