জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

ছোট কবিতার কথা

ছোট কবিতার মতোন জীবনও ছোট…..
বলা হবে একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ
তবুও অবাধ্য পাঠক চোখের কোনো লাগাম নেই!

যা খুশি…. তাই দেখি অন্তরা, মন্তরা
ঘোড়ার পিঠে লেপ্টে থাকা তুলট সময়
সাহারা থেকে আন্দালুসিয়া…
কে জানে না
কিছুদিন হয় সময়েরও হয়েছে হিস্ট্রিরিয়া!

আসলে নিজের ভেতর ডুব সাঁতার দেওয়া দরকার
যেখানে অচল মহাসড়ক যেমন আছে
সেখানে অতল মহাসমুদ্র আছে
এমন কি মহামহিম তিনিও আছেন!

শূন্যের কড়চা

দিনশেষে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে এ জন্মের দেনা
লোকে বলে, এসব অন্যকিছু নয়, শূন্যতা দিয়ে কেনা!
অস্তমিত সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাসে অশরীরী কেউ….
তবুও আমি ভালোবাসি এ জগতের সকল আবর্জনা!
বোধিবৃক্ষের ছায়াতলে কেবল একটু জিরোই
ঈশ্বর আছে…. কি নেই; তার হিসাব কেউ করে না!
তবুও একদিন আমারও সকল তামাশা ফুরোয়!
বাবা বলেছেন, পাপ…….বাপকেও ছাড়ে না
বাবার বাবাও তাকে এই একই কথা বলে গেছেন
তবুও আমি পাপের বস্তা দুই কাঁধে নিয়ে হাসি
তবুও আমি রাশিরাশি পাপ করতে বড়ো ভালোবাসি!
গরু- ছাগলের মতো আমারও কোনো নেই পাপ-পুণ্য
আমিও এক এর পিঠ বরাবর দিয়ে যাচ্ছি অগুনতি শূন্য

পৃথিবী এখনো একাই লড়ছে

269740

আষাঢ়ের প্রথম কবিতাটা কার্নিশে ঝুলে আছে
তার মাধবী মনে প্রশ্নের পর প্রশ্নের ক্রোধানল;
কাপুরুষ কবি তবুও নিরুত্তর… তিনি ভেবেছিলেন
রক্ত, মাংশ, হাড়ের মতো কবিতাও তার দেবোত্তর!

আসলে পৃথিবী এখনো একাই লড়ছে……
উন্নত-ইতর প্রাণিরা সবাই যে যার মতো ছুটছে
মাঝে মাঝে কিছু দাঁড়ি, কমা, কোলনে কেউ কেউ
সাময়িক হোঁচট খায়; অতঃপর তথাস্তু…
যে যার মতো ব্যস্ত থাকে এই রুপের পানশালায়!

ছা-পোষা কবিও কবিতার মতো দিনশেষে একা
তবুও চালিয়ে যায় ফুল কুড়ানি কুসুমের মতো
অকালকুষ্মাণ্ড পতিত কিছু শব্দের চাষ;
তবে কি কবির মতো এমনি করেই কেটে যাবে
এই ধর্ষিতা পৃথিবীর দৈনিক হিসাবের বারোমাস?

ললাট

মাঝে মাঝে প্রথম আমি দ্বিতীয় বার একা হয়ে যাই
আশে পাশে তাকিয়ে দেখি সবকিছু ঠিক ঠাক আছে
কেবল ঠিক নাই
সমস্ত কবিতার বইয়ের মলাট,
অবাক তাকিয়ে দেখি অন্ধকারে—-
কারো হস্তরেখায় ঝলসানো আমার হতভাগ্য ললাট!!

জন্মদাগ

এই শীতেও শব্দেরাও ক্লিষ্ট, ঘর্মাক্ত
একটি পংক্তির আশায় বসে আছি দৈব সময়
অথচ আশেপাশে কতো শব্দাঞ্জলি ওড়ছে
মুখরা নক্ষত্রের ঝাঁজ
বাসের লক্কড় ঝক্কর কাজ
তবে কি ওরাও সবাই মৃতদের মতো ঘুরছে?

কে জানে না.. শব্দেরা নিষিক্ত হলে ধীবর হয়
তখন তারাও ধীবরের মতো জলের সাথে কথা কয়
কেবল পেছনে পড়ে থাকে জন্মদাগ
এবার কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাকাও সখিনা..
দেখো…সহসাই পড়ে গেছে রাগ….!!

আমার সবুজ মেয়েটা ভালো থাকুক

আমার সারাটা নিশি যখন ক্লান্তিহীন ফিরে আসে
আসে সদ্যোজাত কান্নার নতুন নতুন উপগত উপকরণ
আমি তখন আমার চিরচেনা সবুজ মেয়েটার কথা ভাবি
আমার সবুজ মেয়েটার আজন্মলালিত স্বপ্নিল…
গাঢ় লাল বুটিদার জমিনযুক্ত শাড়িটার কথা ভাবি
ভাবি কীভাবে সবাই….ভালোবাসার ঘাসফড়িং হয়,
মায়াবতী প্রজাপতি হয়; অথচ আমার সবুজ মেয়েটার
দিকে তাকিয়েও দেখে না; দেখার ফুরসৎ পায় না!

তার মুখের কালশিটে জেব্রাক্রসিংয়ের মতন স্থায়ী
চোখের কোণ ভিজে ভিজে ক্ষতরা হালের কৃষ্ণগহবর
অথচ সবাই মিছিল-,সভায় ভালোবাসার বারুদ ফুটায়
বলা যায় সেইসব আহ্লাদি শব্দদের এখন পোয়াবারো
আমার সবুজ মেয়েটার মুখে-চোখে কোনো রা নেই
কেবল ফ্যালফ্যাল চাহনিতে স্পষ্ট ঘৃণার পদচিহ্ন আছে!

তার মতো আমারও তেমন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই
তবে আমি জানি, সাপের বিষদাঁত ভেংগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
অথবা সাপ থেকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান
নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই!
ভালোবাসা,আকাশ-সমুদ্র এইতিন, আমার আজন্ম ঋণ
তবুও আমার সামান্য চাওয়া. সবুজ মেয়েটা ভালো
থাকুক.. সে আমাদের সবাইকে ভালো রাখুক…..।।

একটি ফুলের জন্য

বীর বাঙালি অস্ত্র নিলো
একটি ফুলের জন্য
শিউলি, জবা, বকুল নয়
এই ফুলটি অন্য।

লক্ষ লক্ষ প্রাণ যে গেলো
ইজ্জত দিল বোন
হাজার হাজার গণ কবর
বলছে কথা শোন।

সাগর সাগর রক্ত গেলো
সবাই কি জানে জানে
সেসব কথাই বলছে ওরা
ওদের কানে কানে।

এই ফুলটি এমনি এমনি
আসে নাইরে ভাই
দেশ বিরোধী দুশমনদের
রুখে দেওয়া চাই।

ঘাঙ্গুরের জল

যদি আবার কোনোদিন আকাশে মেঘ জমে
যদি আবার কোনোদিন সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি
ছুঁয়ে দেয় ঘাঙ্গুরের জল,
তবে এসো এই খরদুপুরে কাকভেজা হই!

অমসৃণ যতো পথ অনিচ্ছায় দিয়েছি পাড়ি
ঘাঙ্গুরের জলে সেইসব দিনগুলি চলো বিসর্জন
দিই তাড়াতাড়ি!
আমার দিনগুলো এখন অনেক বড়ো, শেষ হতে
চায় না; রাতগুলোও জানি কেমন তরো!

ডাকবাক্সে কতোদিন কোনো চিঠি জমা পড়েনি
আমার বিষণ্ণ বিকেলগুলির কেউ খবর নেয়নি
তবুও আমি হররোজ প্রতীক্ষায় থাকি, সাদা
কাগজে তোমার মুখের মানচিত্র আঁকি; আবার
যদি কোনোদিন চাঁদ উঠে, বাগানে ফুলে ফুটে!!

দৈনিক হিসাবের রেওয়ামিল

তবুও চেয়ে থাকি ভাঙাচোরা ধূসর বিষন্ন রাস্তার ‘পর
কত গাড়ি বাজপাখির মতো সাঁই সাঁই করে চলে যায়
চোরাবাগানে মালিকের অজান্তে ফুটে থাকে কত ফুল
তবুও জীবন রক্তের দাগ.. মোছা যায় না কোনো ভুল!

এমনিভাবে এক এক করে শব্দের পাখা গজায়
উদ্ভট অভিধান এসব লিখে রাখে রোজনামচায়
পই পই করে সবাই খোঁজ রাখে গোলাপ বাগান
তবুও সুযোগ পেলেই কেউ কেউ কামান দাগান!

তবুও বসে থাকে না বয়স…. দৈনিক হিসাবের অনুরাগ
তবুও অবসাদ আর কষ্টগুলো চাঁদের কলংকে দিই জাগ
তবুও প্রসন্ন প্রহর গুনে গুণে কেটে যাক চামচিকা বেলা
কেউ জানে না, কখন কার সন্ধ্যা আসে..সাঙ্গ হয় খেলা!

সম্মুখ সমুদ্রে যতই অভিনয় জীবনের রেওয়ামিল
দিনশেষে আমাকে ডাকে শৈশবের রনিলের বিল
মাথার উপর যতই ঘোরাঘুরি করুক ছোঁ মারা চিল
হিসাবের খাতায় আমিও দিয়ে যাবো গোঁজামিল।।

জন্মদাগ

265506_n

এই শীতেও শব্দেরাও ক্লিষ্ট, ঘর্মাক্ত
একটি পংক্তির আশায় বসে আছি দৈব সময়
অথচ আশেপাশে কতো শব্দাঞ্জলি ওড়ছে
মুখরা নক্ষত্রের ঝাঁজ
বাসের লক্কড় ঝক্কর কাজ
তবে কি ওরাও সবাই মৃতদের মতো ঘুরছে?

কে জানে না.. শব্দেরা নিষিক্ত হলে ধীবর হয়
তখন তারাও ধীবরের মতো জলের সাথে কথা কয়
কেবল পেছনে পড়ে থাকে জন্মদাগ
এবার কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাকাও সখিনা..
দেখো… সহসাই পড়ে গেছে রাগ….!!

অপর পৃষ্ঠা

প্রতিদিন একই পৃষ্ঠা বারবার উল্টাই
এক পা, দুই পা করে জলের উপর হাঁটি
পা ডুবে কি ডুবে না.. সেইসব বহুতদূর
একই পৃষ্ঠায় শুরুতে যেমন ছিলাম
এখনো কিছুতেই কাটছে সেই ঘোর!

অথচ কত না বিস্তৃত সাগর নদী হয়
কত না সংখ্যা অংকের প্রতিনিধি হয়
তবে আমার কেন কাটে না পৃষ্ঠার ঘোর
যে ছিল দীঘল রাত্রি.. সে-ই মন চোর!

তবুও আক্ষেপ আর বিক্ষেপ বিক্রি করি
আক্ষরিক অনুবাদ লুফে নেয় পোকা
তবে কি অপর পৃষ্ঠা মানেই.. ধোকা..!!

উড়ুক্কু বেলার গান

24089

বারংবার আরশিতে মুখের মানচিত্র দেখি
সে যেনো এক স্বৈরশাসক!
যদিও চামড়ায় ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে
তবুও কমেনি এতোটুকু তেজ!

পান থেকে চুন খসতে তবুও দেরি হয়
ইগোর পারদ সীমালঙ্ঘন করতে দেরি হয় না
আশেপাশে কতো বৃষ্টি হয় মুষলধার
বলতে পার, ইগোরা কেন এতো বড়সড় চামার?

এই জীবন কি তাহলে নিছকই খেলা
ইগো আর সুপার ইগোর জমজমাট মেলা
তবুও এভাবেই একদিন ফুরিয়ে যাবে
ইস্টিশনের এই উড়ুক্কু কালবেলা…..?

২৬/১১/২০২১। জাতীয় দৈনিক আজকের প্রত্যাশা।

অবিক্রীত ভালোবাসা

26069

আজকাল অধিকাংশ সময়েই কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনা
মনের আনাচে কানাচে দলা পাকায়…
কুণ্ডলী পাকানো কেঁচোর মতো কিংবা স্নেক আইল্যান্ডের সাপের মতো..
জড়ানো নিঃশ্বাসে কেবল অবিশ্বাসের দানা বাঁধায়!

আমিও সাক্ষী গোপালের মতো কেবল চেয়ে থাকি
বলতে আমার কিছুমাত্র লজ্জা নেই
একটা শব্দের বারোটা, তেরোটা বাজিয়ে আরেকটি
শব্দের লজ্জা ঢাকি!
তবুও ভালোবাসা বলতে এখনো নিজেকেই বুঝি
তবুও ভালোবাসা বলতে দ্বিপদী কাহিনীকেই বুঝি!

অবশ্য এতে করেও কারো কিছু আসে যায় না
কেবল দেনার দায়ে দেনা বেড়ে যায়…
আর আমার কিছু ভালোবাসা অবিক্রীত থেকে যায়!

২৫/১১/২০২১। জাতীয় দৈনিক উষার বাণী।

ঘোড়ামার্কা রোদের ঘোর

56479_n

সারাদিনই ভুখা আকাশটা জ্বরের ঘোরে আছে
যেমন আমরা সবাই কোন না কোন ঘোরের মধ্যে আছি
এই যেমনঃ ঘোড়া মার্কা রোদের ঘোর
গাধা মার্কা বৃষ্টির ঘোর….এসবের সাথে যোগ দিয়েছে
আরও কতো কতো গ্রহণ লাগা পানকৌড়ি ভোর!

তবু শাসন আর অনুশাসনের মাঝামাঝি বেশ আছি
পথের একপাশে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্টগুলো যেমন থাকে
সবাক মিছিলের জব্দ নির্বাক শব্দেরা যেমন থাকে
আমিও তেমনি ভাবে বেশ আছি….বেশ আছি
তাতে ইঁচড়ে পাকা টোকাইদের চোখ পড়লেও ভালো,
আর না পড়লে….তা আরও আরও ভালো……. !!

এইতো সেদিনও কয়লা আর ময়লা দু’জনে মিলে
সারাদিন অথৈ জল থৈ থৈ হতো
হাটে-ঘাটে-মাঠে ছলাৎছলাৎ শব্দ হতো
বাতাসিদের ঘুম নিমিষেই ভাঙিয়ে দিতো…
আর এখন বাতাসও নেই, বাতাসিদের প্রয়োজনও নেই!

তবুও বড় কবির পাঠকহীন কবিতার মত ভালো আছে
গণমত, পথ, জোট.. ভালো আছে গেরস্তের মসৃণ ঠোঁট।

আতসি কাঁচের খাঁচায় ঘুংঘুর ডাকে

একদিন ইচ্ছে হলেই কবিতার সাঁড়াশি মাঝি হতাম…
জল সাঁতারে হতে পারতাম সপ্তডিঙার কানাই…
ঝুমুর ঝুমুর নৃত্যে নৃপতিরা……. যেমন খুশি
বাজিয়ে নিতেন, সাজিয়ে নিতেন শব্দ সানাই!

আর এখন
মেঘের দেখা পেলেও ব্রিজ ভেঙে বৃষ্টি নামে না
আতসি কাঁচের খাঁচায় ঘুংঘুর ডাকে
টুংটাং ধ্বনি তোলে বাজি পোড়ায়
এসব কিছুতে আমিও কম যাই না হাওর-বাওর
তোলা দরে নগরের বেশ্যার মতো যৌবন ওড়াই!

তবু্ও উঠতি বাজারের সব প্রেম হয় পারিজাত
বলতে পার কবিতা, আমার কেন কাটে না রাত?