কাজী জুবেরি মোস্তাক এর সকল পোস্ট

হতভাগা সভ্যতা

সভ্যতা নামক খোলসে বন্দী করে নিজেকে
প্রতিক্ষণেই সামনে আসি মুখোশটাকে খুলে ,
কখনো আশার বাণী শোনাই দরদীয়া কণ্ঠে
কখনো আবার ক্রোধটা দেখাই বিশ্রি ভাবে ৷

সভ্যতা এ যেনো আজ আজব রকম খেলা
মনুষ্যত্ব দিয়ে বিসর্জন ভাসাই মেকির ভেলা ,
মানুষ নামের মুখোশ পড়ে সভ্য সারাবেলা
আসল রুপে ফিরি আবার হলে সন্ধ্যাবেলা ৷

মনুষ্যত্ব বিকিয়ে আবার কিসের তুমি সভ্য
ভাতৃত্ববোধ ভুলে আজ সম্পর্ক শুধুই তিক্ত ,
সভ্যতার মুখোশ পড়ে দিব্যি আছে অসভ্য
মিথ্যার কাছে প্রতিপদে পরাজিত হয় সত্য ৷

বিবেকটাকে বন্দী করে মনের জেলখানাতে
তেল মারতে ব্যস্ত সবাই সকাল থেকে রাতে ,
অন্য কারো ক্ষতি হলে কি আসে যায় তাতে
আপন স্বার্থ হাসিল করেই ক্ষ্যাত দেয় তাতে ৷

অসভ্যদের সমাজে আজকে দূর্বল সু-সভ্যতা
অযোগ্যরা চেয়ারে বসে প্রমাণ করে যোগ্যতা ,
অথচ সেখানে যোগ্য ব্যক্তি ধরে রাখছে ছাতা
হায়রে আমরা সভ্য সমাজের সু-সভ্য জনতা ৷

চেনা শহরের গল্প

চিরচেনা এ শহর আজ থেকে আর আমার না
এখানে আজ বসত করছে মানুষরুপী হায়েনা ,
যে শহরে অলিগলিতে বসে মাদকের আস্তানা
সে শহরে আমি বেমানান; সে শহর আমার না ৷

মানবতার পিয়াসী আমি;মানবতা খুঁজে ফিরি
এশহরে রোজই দেখি মানবিকতার ছলচাতুরি ,
ফেসবুক;টুইটারে জুড়ে শুধুই কথার ফুলঝুড়ি
অথচ বাস্তবতায় মিলছেনা কোনই কানা কড়ি ৷

আমার শহরে আমি যেনো হয়ে গেছি পরবাসী
নীতিহীনদের রাজনীতি আজ হয়েছে সর্বগ্রাসী ,
মনুষ্যত্বের মুখোশে শুধুই হায়েনাদের অট্টহাসি
তবুও এখানে আজও আমি মানবতার পিয়াসী ৷

মানুষের ভেতরের মানুষ আজ;যেনো প্রায় মৃত
মনুষ্যত্ব আর বিবেকবোধ সবই আজ ভুলুন্ঠিত ,
মুখোশের ভিড়ে মানুষ খুঁজে হয়েছি আমি ক্লান্ত
মাঝেমাঝে মুখোশ দেখেও হয়ে যাই দিকভ্রান্ত ৷

এ শহর আজ যেনো কোন অন্ধকার মৃত্যুপুরী
মানুষ মরছে;মনুষ্যত্ব হারাচ্ছে;নীতি হচ্ছে চুরি ,
প্রবীণালয়ে বৃদ্ধ মাতাপিতা করছে আহাজারী
হতভাগা আমি সে শহরে মানবতা ফেরি করি ৷

ট্রেনচলা পথে


রোদ জ্বলা দুপুরে চলছিলাম
আনমনে দু’জনে মিলে
সেই ট্রেন চলা পথে ,
চোখে চোখ মেলে চাওয়া
বোবা ভাষায় কথা বলা ,
হৃদয়ে হৃদয় বিনিময় পালা
না বলা কত না কথা বলা ৷
দু’জনের দুটি হাত একসাথে একাকার
পিছলে পড়া কতোবার ৷
আবেগী সেই ক্ষনে
মনে নেই জীবনের অতীতটাকে ,
নেই কোন ভাবনা
কোন পথেই বা পথ চলা ,
কোথায় বা তার শেষ ঠিকানা
জানা ছিলো সবই তবুও অজানা ৷
বে- হিসাবি মন
শাসন তো মানে না
মানেনা বারন ৷
শুধু সহসা আনমনে পথচলা
মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টু কিছু কথা বলা ,
সে যে কি ভালো লাগা
চেনা অচেনা কেবলই পথ চলা ৷
কি জানি কি
হটাৎ – ই থামলে তুমি ! দেখলাম
ঐ – সুদূরে কি জানি কি দেখছিলে
আর আনমনে গুনগুন করছিলে ,
আর আমি ,
তোমার কণ্ঠে নিজেকে ভাবছি
দু’চোখ মেলে তোমায় দেখছি ৷
তখনো গভীর হর্ণটা বেঁজে উঠেনি
এতটা পথ কেউ পিছু তাকাইনি ৷
কল্পনার শত অভিসারে
গেয়ে চলেছি গান আনমনে দু’জনে ,
সময়ের হাত ধরে আনমনে আপনগতিতে
ট্রেনও বিরামহীন ভাবে ধেয়ে আসছে ৷
হটাৎ – ই মনে হলো ,
পদতলে বুঝি ভূমি কেঁপে উঠলো ,
ভাবছি তোমাকে প্রশ্ন করবো
১০ মিনিট তোমার বুকে মাথা রাখবো ৷
আবারও কেমন জানি মনে হলো
বুঝি কোন শব্দ বাতাসে ভেঁসে আসলো ,
এরই মাঝে তুমিও বলে উঠলে থামলে কেনো
ভাবছি কেবলই উত্তর দেবো
ঠিক তখনই এক অচেনা পথচারী বলে উঠলো
সরে যান গাড়ি এলো ,
পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি
সরে দাড়ানোর সময় হারিয়ে ফেলেছি
সজোরে তোমাকে ধাক্কা দিতে চেয়েছি
জানা হয়নি কতোটা সরাতে পেরেছি ,
আমার এ হাত
তোমাকে স্পর্শ করেছিলো কিনা তাও বুঝিনি ৷
আর তো কোনো কথাই বলা হয়নি
ঠিক তখনি
চুর্ণ বিচুর্ণ হয়ে গেছি আমি ৷

আমার প্রত্যয়

কোটি কোটি স্পাম কে পেছনে ফেলে আজকের এই আমি,
এতো সহজে দমে যাবার জন্যে আমার জন্ম হয়নি,
আমি আবার উড়তে শিখবো মেলবো ডানা আকাশই হবে ঠিকানা ৷

এই যে এই আমাকে দেখছো মরা গাঙের মতো শুকিয়ে গেছি,
জোয়ার এলে ঠিক আবারও টইটুম্বর হবো আমি,
পুরোনো আমার আমিকে ঠিকঠাক আবার ফিরে পাবো আমি
শত বাধা পেরিয়ে যেমন বিজয়ী হয়ে এই পৃথিবীতে জন্মেছি,
ঠিক আবারও আমার আসন পোক্ত করবো জানি,
সব হারানোর বেদনা থেকে সমবেদনা খুঁজে নিয়ে জেগে উঠবো আমি ৷

এ পৃথিবীতে আসার জন্যও প্রতিযোগীতার যুদ্ধে নেমেছিলাম আমি,
তবে এখন কেনো আমি করবো অনর্থক পাগলামি,
জীবন আর বাস্তবতাকে সামনাসামনি দেখে অনেক কিছু শিখেছি ৷

এবার আমি আবার গর্জে উঠবো ,নতুন করে পূনর্জন্ম হবে আমার,
ভুলিনি ভুলে যাবোনা অন্যায় ,অত্যাচার,অবিচার,
আবারও শূন্য থেকেই পূনর্জন্ম নিয়ে বেঁচে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় আমার ৷

ভীষণ আক্ষেপ

ভুলেই যাই ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে আমার পিতা
যখন দেখি ঐ রাজাকারের গাড়িতে সগৌরবে উড়ে পতাকা ৷
ভীষন কান্না পায় আমার ধর্ষিতা মা বোনের কথা মনে পরলে
ওদের সম্ভ্রম ঢাকা কাপড় আজ পতাকা হয়ে
উড়ে ওদের গাড়িতে ৷

ভীষণ কষ্ট হয় আমার প্রিয় জন্মভূমির মাটির জন্যে
পবিত্র এ মাটিতে আজও ওদের সৎকারের জায়গা জোটে ৷
আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে প্রতি ওয়াক্তে এই ভেবে
আমার প্রিয় স্বদেশের বাতাসে ওরা নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচে ৷

ভীষণ অবাক বিস্ময়ে আমি তাকিয়ে থাকি ওদের পানে
যখন ওরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অংশীদারীত্ব দাবি করে ৷
আমার ভীষণ হাসি পায় যখন আমাকে ওরা দেয় চারিত্রিক সনদ
যারা কিনা লুটতে চেয়েছিলো আমার বাংলা মসনদ ৷

যখন ভাবি আমার ভাইয়ের রক্তে ওরা হোলি খেলেছে
আমার রক্তে তখন প্রতিশোধের আগুন ফিনকি দিয়ে উঠছে ৷
ভীষণ আক্ষেপ নিয়ে আছি আজও অপেক্ষাতে
একদিন ওদের বিচার হবেই এই বাংলার মাটিতে৷

দেখা দাও প্রভু

প্রতিনিয়ত তোমাকে আমি পান করি
গ্লাসে গ্লাসে প্রতি ওয়াক্তেই পান করি
তোমার প্রতিটা ভাঁজেই আনন্দ দেখি ৷

প্রতিনিয়ত তোমাকে নতুনভাবে দেখি
অার বারবারই তোমার প্রেমেতে মজি
বুঝিনা কি তোমার প্রেমের কারসাজি ৷

ধীরে মৃত্যুর ভিতরে ঢুকে যাচ্ছি আমি
তবুও তোমাকে অনবরত চেয়ে যাচ্ছি
তুমিই একমাত্র ভরসা তুমি অন্তর্যামী ৷

প্রতিটি চরণেই তোমার প্রেমেতে মজি
যের, জবর, পেশে তোমার তসবি জপি
তুমিই আমার আরাধ্য তুমিই শুধু তুমি ৷

এ জগতে এক বেগানা মুছাফির আমি
এ মানব বনে তোমার তালাশেই ঘুরছি
এই দিল কাবাতে প্রভু দেখা দাও তুমি ৷

বড় ক্লান্ত আজকে

স্যার একটা চাকরি হবে ?
আগুনলাগা সূর্যটাকে মাথায় নিয়ে
প্রেমিকাকে দেখানো সেই স্বপ্ন নিয়ে
ছুটে চলি শহরের অফিস পাড়াতে ৷

পরিবার আমার দুই’দিন অনাহারে
আর আমি কর্মের সন্ধানে এশহরে
ঈশ্বর কি সৌভাগ্য দিলে আমাকে?
সারাদিন কাটে অফিসে ঘুরে-ঘুরে
আর রাতটা কাটে ফুটপাতে শুয়ে
এ কেমন জীবন ঈশ্বর তুমি দিলে ?

ওয়াসার পানি তৃষ্ণা মেটাতে পারে
কিন্তু কি স্বান্তনা দিবো ক্ষুধার্ত পেটে?
ঈশ্বর বড় ক্লান্ত হয়ে গেছি আজকে
বড্ড বেমানান আজ আমি এশহরে
তাইতো আছি আমি কর্মহীন পরে ৷

কাগজের সার্টিফিকেট সাথে নিয়ে
কর্ম খালি নাই শব্দ পড়তে-পড়তে
পোড়া চোখ পুরোই ঝলসে গেছে ৷
বড় স্বপ্ন নিয়েই এসেছিলাম শহরে
শুনেছি স্বপ্ন পুরন হয় নাকি এখানে
কিন্তু না এখানে স্বপ্নরা শুধু পোঁড়ে ৷

মুখোশ

অনেকটা পথ হেঁটে চলেছি পৃথিবীর বুকে
আদিম পেরিয়ে আজ এসেছি সভ্য নগরে,
কালের বিবর্তনে নাকি ওরা সভ্য হয়েছে
অথচ সভ্যতার লেশ মাত্র পাইনি খুঁজে ৷

নগর জুড়ে অট্টালিকায় সমাজ অাজ সভ্য
বড় বড় মিল কারখানায় বাতাস দুর্ভেদ্য,
মনের ভেতরে ক্লেশে ক্লেশে আজও জরাজীর্ণ
মুমূর্ষু মানবতা icu তে বন্দী বাঁচার আশা ক্ষীণ ৷

সভ্যতার সাথে অন্যায়,নির্যাতন, হানাহানি দেখে
বিবেক আজ মুখ লুকোয় কপাটের আড়ালে,
এই সভ্যতার মুখোশে আজ অসভ্যরাও ঘুরে
মুখোশে সবাই ওদের মানুষ ভেবেই ভুল করে ৷

শহরজুড়ে অট্টালিকা আর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া
কান পাতলে শোনা যায় গুমরে কাঁদে হতাশা,
দুঃখ কষ্ট গুমরে গুমরে কাঁদে দরজার ওপাশে
এপাশে মুখোশে সভ্যতাও সুখের সওদা করে ৷

কেউ এখানে বিষাদ লুকোয় মদের বোতলে
কেউবা আবার মজা লুটতে ভীড় করে এখানে,
আসলে সবাই আমরা এক মুখোশের আড়ালে
এই মানুষের মুখেই বাস হাজারো মুখোশের ৷

আমি প্রতিবাদ

আমাকে চেনা যায়?
আমি কে ?
আমি হলাম প্রতিবাদ !

কি ভাবছো ?
৫৬৯৭৭ বর্গমাইলের কাঁটাতারে বন্দী আমি ?
না !!!

আমি হলাম প্রতিবাদ
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিতে আমার বাস ৷
আমি গর্জে উঠি সেই সময়
যখন সমাজ ব্যাবস্থা হয় অবিচার ময় ,
আমাকে চেনা যায় ?

আমি কিন্তু সংঘাতময় নই
তবুও
অন্যায় অবিচারে প্রতিবাদী হই ৷
আমি প্রতিবাদ
মুক্তিকামীর সত্তায় আমার বাস
অন্যায়ে ঘুরে উঠাই আমার কাজ ৷

আমাকে চেনা যায় ?
ফিরে যাও স্মৃতির পাতায়
আমি ছিলাম, আছি, থাকবো মুক্তিকামীর সত্তায় ৷

জীবনের পঙ্ক্তিমালা

অসহায় জীবনের পরিত্যক্ত দেয়াল জুড়ে
শেওলা কাঁদার মতোই কষ্টেরা পরে আছে,
স্মৃতির বনসাই সাজানো হৃদয় করিডোরে
আশাগুলো আলোক লতার মতো ঝুলছে।

যন্ত্রণারা ড্রইং রুমে অগোছালো পড়ে আছে
আর স্বপ্নগুলো আছে সিলিংয়ে বন্দী পড়ে,
ইচ্ছেশক্তিটা আজ এখনো জীবিত’ই আছে
তবুও ব্যার্থতার চোরাবালিতে’ই আছি পড়ে।

অশ্রুজল আজ হুরমুরিয়ে দু’চোখে ঝড়ছে
তবু চশমায় সে জল রেখেছি আড়াল করে,
কপালে আজ দুঃচিন্তার রেখা ভীর করেছে
তাকেও ঠিক রেখেছি হাসির আড়াল করে।

জীবনটাই যেন বড় বোঝা জীবনের কাছে
প্রতিনিয়ত বাস্তবতার কষাঘাত সহ্য করে,
আত্মহত্যা মহাপাপ তাইতো আজও বেঁচে
অথচ নিত্য জীবন চিতায় ছাই হচ্ছি পুড়ে।

ভুলে গেছি মানুষ ছিলাম

কবে যে মানুষ ছিলাম বেমালুম ভুলে গেছি
যান্ত্রিক সমাজে দিনেরাতে ভোল পাল্টেছি
কখনো সাধু বেশ , কখনো বা সন্যাসী
তবুও মনুষ্যত্বকে ঠিকই বিকিয়ে দিয়েছি ৷

কবে যে মানুষ ছিলাম বেমালুম ভুলে গেছি
মানুষের মুখোশে শুধু পশুত্বকেই লুকিয়ে গেছি
চোখ বুজে রক্তের হোলি খেলা দেখেছি
আর
কানে তুলো দিয়ে অসহায়ের আর্তনাদ শুনেছি ৷

কবে যে মানুষ ছিলাম বেমালুম ভুলে গেছি
ইট, পাথরের শহরে মানবতাকে হারিয়ে ফেলেছি
নর্দমায় মানুষ কুকুর একসাথে খেতে দেখেছি
তাতে কি ?
আমি তো পোলাও কোর্মায় ভুঁড়ি ভোজ করেছি ৷

কবে যে মানুষ ছিলাম বেমালুম ভুলে গেছি
নারী দেহের দিকে আমার লোভাতুর দৃষ্টি
সুযোগ পেলেই মুখোশের বাহিরে চলে আসি
একথা জানে শুধু সে, আমি আর অন্তর্যামী ৷

কবে যে মানুষ ছিলাম বেমালুম ভুলে গেছি
মুখোশের মিছিলে আজ মনুষ্যত্ব ছদ্মবেশী ৷

জীবন্ত ছবি

সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততাটুকু ঝেড়ে ফেলে,
চিলের ডানায় ভর করে উড়ে এলো ক্লান্ত সন্ধ্যা,
নিত্যদিনের মতোই জ্বলে উঠেছে সন্ধ্যাবাতির ফোয়ারা ৷

কিছু আল্লাহ ওয়ালা ছুটেছে মসজিদ পানে,
আর কিছু লোক এ দোকান ও দোকান ঢুঁ মারছে,
ওদিকে সন্ধ্যাবাতির নিচে পশরা সাজিয়ে বসেছে রাতের পাখিরা ৷

নষ্ট পুরুষরাও ব্যতিব্যস্ত কামবাসনা চরিতার্থ করতে,
সেই কামবাসনায় বিক্রি হয় রাতের পাখিরা,
শুধু বিক্রি হয়না তাদের মন যা ভরা আছে চাপা অভিমানে ৷

কেউবা ওদের বেশ্যা ডাকে কেউ বলে নটি,
অথচ ভাতের আশায় রাতের আঁধারে বিক্রিত শরীর,
এ যেন ঘুমহীন চোখে অপলক দেখা এক ত্রি-মাত্রিক জীবন্ত ছবি ৷

পেশাদার খুনি

এক পেশাদার খুনি আমি এই শহরে
কখনো স্বপ্ন পুরাই নতুন স্বপ্নের আশাতে
কখনোবা ঘুমোতে ভয় পাই দুঃস্বপ্নের ভয়ে ৷

কখনো আমি খুন করি বিবেক মনুষ্যত্ব
কখনোবা আবার ভোল পাল্টাতে হই মত্ত
আমি যে মুখোশধারী এটাই যে নির্মম সত্য ৷

এক পেশাদার খুনি আমি এই শহরে
সুখের আশায় খুন করি অসহায় অসুখকে
কখনোবা কাছে ডাকি সেই প্রিয়তমা অসুখকে ৷

গলা টিপে ধরি কখনো স্নেহ মায়া মমতাকে
কখনো আবার খুঁজি সেই স্নেহ মায়া মমতাকে
হত্যা করতে বারংবার উদ্ধৃত হয়েছিলাম যাকে ৷

এক পেশাদার খুনি আমি এই শহরে
দানবীয় ক্ষুধা আছে যার ছোট্ট উদর জুড়ে
এ ক্ষুধা মিটেনা গরীবের এতো এতো রক্ত চুষে ৷

এক পেশাদার খুনি আমি এই শহরে
স্বার্থের জন্য ব্যবহার করি নিঃস্বার্থ মানুষকে
দেখো ওরাও কেমন বোকা আমাকেই স্যালুট করে ৷

যেদিন তর্জনী উঠবে

আমার পক্ষেও একদিন তর্জনী উঠবে
রাস্তার মোড়েও সেদিন পিকেটিং হবে,
ছাত্র জনতা মিলে রাজপথ দখল নিবে
ঝড়ো স্লোগানে চারিদিক মুখরিত হবে ৷

আমার পক্ষেও একদিন কেউ দাঁড়াবে
কাঁধে কাঁধ রেখে প্রতিবাদী হয়ে উঠবে,
ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে পাশে দাঁড়াবে
ন্যায়ের পক্ষে বুকটা টান করে দাঁড়াবে ৷

আমার পক্ষেও একদিন ওরাই লিখবে
যে কলম আজকে ভয়ে পকেটে আছে,
সংবাদপত্র সেদিন আবারো সরব হবে
টিভি রিপোর্টাররাও ছুটে চলে আসবে ৷

আমার জন্যও কোন মা সিজদায় রবে
আবার কোন মা ঠাকুর ঘরে পড়ে রবে,
কেউ রোজা রবে ,কেউবা রাখি বাঁধবে
জয়ীও হবো ওদেরই দোয়া আশির্বাদে ৷

একদিন ওরা ঠিক সংগ্রামী হয়ে যাবে
দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি জ্বলে উঠবে,
অন্যায়ের প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে
নিজের অধিকারও আদায় করে নিবে ৷

একটা পৃথিবী একটাই মানচিত্র

উত্তাল আজ এই পৃথিবীর মানচিত্র;
চারিদিকে আজ যুদ্ধ যুদ্ধ আর যুদ্ধ,
বুঝিনা আমরা এ কেমনতর সভ্য ?

শুনেছি বিবাদে জড়ায় নাকি মূর্খ;
তবেকি মানুষ আজ সুশিক্ষিত মূর্খ
নিজেই নিজেকে করে দেখো প্রশ্ন।

ক্লান্ত চোখে দেখি বিশ্বজয়ের স্বপ্ন
সে স্বপ্নে ঢুঁকে গেছে গভীর ষড়যন্ত্র
হে ঈশ্বর;
সফল যেনো না হয় সেই ষড়যন্ত্র।

একটা পৃথিবী চাই; চাই একটাই মানচিত্র
কাঁটাতার আর জাতিভেদে হবো অভিন্ন,
সকল তন্ত্র ভুলে হবে শুধুই মানবতন্ত্র
এই হোক আমাদের বাঁচার মূলমন্ত্র।