কাজী জুবেরি মোস্তাক এর সকল পোস্ট

যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছিনা

তবে তাই হোক তোমাদেরই জয় হোক
আমার নাহয় ব্যারাকেই ফিরতে হোক
আমার জন্য দরকার নেই কোন শোক ৷

জয় হোক আজকে ওদেরই জয় হোক
যারা ভঙ্গুর সমাজে রক্তখেকো জোঁক
আমরা নাহয় হলাম আজ ছোটলোক ৷

বেঁচে থাকো তোমরা শতাব্দীর সমদিন
বিবেকের কাছেই থাক তোমাদের ঋণ
শতায়ু হোক তোমাদের বাঁচার এইদিন ৷

আজকে আমরা ব্যারাকে ফিরে যাবো
আমাদের যাই আছে জমা দিয়ে দেবো
দেশপ্রেম আর প্রতিজ্ঞাটা রেখে দেবো ৷

আজকের মতো হয়তোবা ফিরে যাবো
নতুন করে আবারও সব গুছিয়ে নেবো
ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে স্বপ্নটা সাজাবো ৷

বৃক্ষের বাঁচার আকুতি

এই যে পথিক
এই যে একটু এদিকে তাকাও
আমি বৃক্ষ আমাকেও বাঁচাও
আমাকে রক্তাক্ত করে কি পাও
কেনো এই বুকে পেরেক ঢুকাও
কেনো বুকে সাইনবোর্ড টানাও ৷

এই যে পথিক
এটা কি তুমি ঠিক করছো বলো
আমার দানেই তোমরা যে বাঁচো
একথা কি বেমালুম ভুলে গেছো
আমাকে মেরে বাঁচার স্বপ্ন দেখো
আমি না থাকলে বাঁচবে কি বলো?

এই যে পথিক
আমার ছাঁয়ায় এসে একটু বসো
এক গল্প বলি তোমাদের শোনো
মানুষ আজব এক প্রাণী জানো
আমার জন্য আন্দোলন করছো
তবুও এই বুকেই পেরেক ঠুকছো ৷

এই যে পথিক
বুকে এক সাইনবোর্ড ঠুকে দিলে
বাঁচাও বৃক্ষ লেখা ঐ সাইনবোর্ডে
বৃক্ষ বাঁচলে তবেই মানুষ বাঁচবে
অথচ ! তুমি বলো এটা কি করলে
মাকে মেরেই “ঝি”কেই বোঝালে ৷

এই যে পথিক
এখনই সচেতন হও সময় আছে
আমার বুকে বোর্ড কেনো টানাবে
আমাকে কি তোমরা বাঁচতে দিবে
তবে এখনই সববোর্ড ফেলো খুলে
আমাকে বাঁচতে দাও উন্মুক্ত ভাবে ৷

সময়ের ক্ষত

বেগানা পথের ভীরে দিকভ্রান্ত পথিক আমি
সতিনের মতো দু’পায়ে জেঁকে বসেছে ক্লান্তি,
তবু আমি খুঁজে চলেছি এক লোকমা শান্তি ৷

স্মৃতির খাতার পুরোনো হিসেব মেলাতে বসি
শূন্যতা সেও আজ এ হৃদয়ে যেনো বানভাসী,
ওগো প্রেয়সী তবুও তোমাকেই খুঁজে চলেছি ৷

বিষাদ ভর করেছে জীবনের প্রতিটি পাতায়
স্বপ্নগুলো পথ হারিয়ে শূন্যতায় মিলিয়ে যায়,
আর আমি ফুরিয়ে যাই জীবনের বাস্তবতায় ৷

মাঝে মাঝে বহুদূরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে
এই স্বার্থপর সমাজ-সংসারের বন্ধনটা ছিঁড়ে,
তবুও আঁটকে আছি অক্ষমতাকে পুঁজি করে ৷

সময়ের ক্ষত হয়েই পরে আছি পথের মোড়ে
সব চাওয়া-পাওয়াগুলোকে ফ্রেমবন্দি করে,
ফিরে যাবার সেই মরনতরীর অপেক্ষা করে ৷

সব তন্ত্রের একই মন্ত্র

কানের ঠিক কিছুটা উপরে একটা পিস্তল তাক করা ,
সামনে সাজানো রয়েছে বিশাল এক পেটোয়া বাহিনী ,
পিছনেও পড়ে আছে রাজ্যের তামাম রক্ষি বাহিনী ;
কারনতো একটাই জনতাকে ওদের মতো
করতে না পারা ৷

গণতন্ত্র নামক এক দিল্লিকা লাড্ডু ঝুলিয়ে রাখা সামনে ,
একনায়কতন্ত্রকেও বৈধতা দিয়ে;নাম তার অাজ গণতন্ত্র ,
স্বার্বভৌমত্ব ভেবে ছিনিয়ে নিয়ে দেখি সেও এক ষড়যন্ত্র ,
সব তন্ত্রেরই ঠিক একই মন্ত্র যা জনতার
কাপর খোলে ৷

স্বৈরাতন্ত্রের নিয়মিত চলাচল আজকে আমার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ,
স্বাধীনতা’তো হলো এক ট্রাম কার্ড তার জুয়ার টেবিলে বসে ,
সব তন্ত্রকেই দেখি দিনের শেষে স্বার্থতন্ত্রেই
গিয়ে মিশে ,
বাম ঘরামী স্বভাব আমার সেতো শুধুই আপন দম্ভে ৷

কাজী জুবেরী মোস্তাক এর “মৃত্যুদণ্ডের দাবি”

আমি অমরত্ব নিতে আসিনি
আমি আমার মৃত্যুদণ্ড নিতে এসেছি,
আমি জানি এখনই আমাকে বন্দী করা হবে
শেকল পড়ানো হবে আমার উন্মুক্ত হাতে পায়ে ৷

আমি জানি আমি দেশদ্রোহী,
তোমরা কতোটা দেশ দরদী বলবে ?

আমার টাকা চুরি করে গড়েছো অট্টালিকা
তাতেও আবার বসিয়েছো দেখি সিসি ক্যামেরা ৷
আমি জানি আমি সংখ্যালঘু,
কারণ বিদ্রোহী হয়ে জন্মায় খুব কম,
আর যারা বিদ্রোহী লাশ থাকে তাদের ডোবা, নালায়
তাদের নিস্তব্ধ দেহতে শেয়াল শকুনেরাও মচ্ছব চালায় ৷

আমি জানি আমি একা,
কারণ আমি কোন দুর্নীতিবাজ না,
পেনশনের ফাইল আটকে হাত পেতে দিইনা
অথবা অন্যায়ের সাথে আমি আপোসহীন চলি তাই একা ৷

মধ্যরাতে আমার ছবি যাবে প্রেসে
আমার কণ্ঠ রোধ করতে ক্রসফায়ার হবে,
শিরোনামে থাকবে আমার মৃত্যু হয়েছে বন্দুক যুদ্ধে
আর পা চাটার দলেরা তখন চায়ে টোস্ট ভিজিয়ে খাবে ৷

আমি অধিকার চাইতে এসেছি
নির্যাতিত নিপীড়িতের কথা বলতে এসেছি,
মনে রেখো আমাকে হত্যা করলেই সব শেষ হয়ে না !

১০মাস ১০দিন পরে আবারো আমার জন্ম হয় অন্য কোন গর্ভে ৷

পুরোনো শহরের স্মৃতি

একদিন আমিও ছিলাম তোমার পুরোনো শহরে
আমারও বসতভিটা ছিলো তোমার পুরোনো সে
শহর জুড়ে ৷

ভালোবাসাময় এক যৌথ খামার ছিলো সেখানে ,
দুয়ার ছিলো ; ছিলো জানালা ভরা প্রিয় আকাশ
আর তুমি ছিলে ৷

আমার অপেক্ষাতেই বন্দী থাকতে ভেতর দুয়ারে
কখন ফিরবো আর কড়া নাড়বো খামারের সেই
বন্ধ দুয়ারে জোড়ে ৷

আজও স্বপ্ন দেখার স্বপ্নেরা আছে তোমার শহরে ,
শূন্যতা আর হতাশার যৌথ গ্রহণ চলছেই আজও
আমার শহর জুড়ে ৷

যে শহরে একদিন ছিলো ভালোবাসার মাদকতা
সে শহর আজকে ভালোবাসাহীন ; আছে শূন্যতা
আর ব্যার্থতা ৷

তোমার শহরে আজ জানালা ভরা প্রিয় আকাশ ,
আর আমার শহরে আজও পাওয়া না পাওয়ার
যন্ত্রনার বসবাস ৷

তোমার শহরে তুমি তোমার মতো ভালো থেকো ,
অামিও ভালো থাকার অভিনয়টা আমার মতো
শিখে নেবো ৷

আমার চাওয়া

বুক সেল্ফে বন্দী পড়ে থাকা গণতন্ত্র আমার চাইনা
যে গণতন্ত্রর মুখোশে স্বৈরাতন্ত্রর বাস তাকে চাইনা
বুক ফুলিয়ে যে গণতন্ত্রে কথা বলা যায় তাকে চাই।

পর্দার আড়ালে বিদ্রোহী কবিতা আবৃতি করবোনা,
জনমঞ্চে দাঁড়িয়ে পাঠ করতে চাই বিদ্রোহী কবিতা
আজকে আমি আমার বাকস্বাধীনতার মুক্তি চাই।

রাজনীতির পকেটে বন্দী গণতন্ত্রকে অামার চাইনা
হাতে-পায়ে শেকল জড়ানো কথিত গণতন্ত্র চাইনা
মুক্ত বিহঙ্গের মতো সতন্ত্র হয়ে উড়ার গণতন্ত্র চাই।

যে সংবিধান স্বাধীনতার মুক্তি দেয়না তাকে চাইনা
যে সংবিধান রাজনেতার হয় জনতার না তা চাইনা
আমার সংবিধানে আমার জন্য বলার ক্ষমতা চাই।

যে আইন দূর্বলের না হয়ে সবলের হয় তাকে চাইনা
ক্ষমতা অার টাকায় বিক্রি হওয়ার আইনও চাইনা
আমার আইন সেতো ভরসা ও আস্থার হওয়া চাই।

আমার দুর্বলতাকে পূঁজি করে দুর্নীতি হতে দেবোনা
আমার ন্যায্য হিস্যায় অনিয়ম হবে তাও মানবোনা
দুর্নীতিহীন অধিকারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া চাই।

কিছুই অবশিষ্ট নেই

এখানে আজ আর কিছুই চাওয়ার নেই
এক সুশৃঙ্খল সমাজ চাইতে গিয়ে দেখি !
সে সমাজ উচ্ছৃঙ্খলতার আগুনে পুড়ছে
অথচ সমাজপতিরা আলু পোড়া খাচ্ছে।

এখানে আজ আর কিছুই পাওয়ার নাই
সস্তায় আজ যা মেলে তা শুধুই উপদেশ,
নয়তো নেতাজীদের মিথ্যে আশার বাণী
আর কৃত্তিমতায় ঝড়ানো চোখের পানি।

এখানে আজ স্বপ্ন দেখাই যেনো দুঃস্বপ্ন
ইচ্ছাগুলো গলাটিপে হত্যা করছি রোজ,
স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন প্রতিদিন হয় নিখোঁজ
আর ; সমাজপতিরা দেখায় মিছে দরদ।

এখানে আজ বেঁচে থাকাটাই বিলাসিতা
আর মৃত্যু সেতো আজ একেবারেই সস্তা,
জীবন সাজাতেই জীবন আজকে মরিয়া
অথচ মৃত্যুকে রাখি বুকপকেটে ঢাকিয়া।

এখানে আজকে কেউই ইতিহাস ঘাঁটেনা
ক্ষমতা আর অর্থ দম্ভই যেনো মূল চেতনা
মগজেও লালন করে নোংড়া চিন্তা,ছলনা
অথচ ভাবটা তার ; সে ধোয়া তুলসীপাতা।

আমি যা চাই …

তোমাদের বাক্সবন্দী স্বাধীনতা আমি চাইনা
আমি শুধু মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে চাই,
যে হাওয়ায় ভেসে বেড়াবে না বারুদের গন্ধ
অাবার; পঁচা লাশের গন্ধও নাকে লাগবেনা।

অবচেতন মনের চেতনাবাদ আমার চাইনা
আমিতো শুধুই আমার আগামী ফেরত চাই,
অনেক হয়েছে এবার এ ব্যবসা বন্ধ করো
বিশ্বাস করো ধোঁকাবাজি আর সহ্য হয়না।

নীতিহীনদের নীতিকথা আর শুনতে চাইনা
ওদের গালগল্প, ভন্ডামি আর কত সইবো ?
আমিতো শুধুই দুর্নীতিমুক্ত এক সমাজ চাই,
নীতি আদর্শহীন ভাবে আমি বাঁচতে চাইনা।

আমি বাক প্রতিবন্ধী হয়েতো বাঁচতে চাইনা
আমিতো শুধু উচিত কথাগুলো বলতে চাই,
আর চাই; ন্যায্য পাওনা চাওয়ার ক্ষমতাকে
বলতে গেলে কণ্ঠ চেপে ধরবে তা মানবোনা।