মামুনুর রশিদ এর সকল পোস্ট

এলোকেশী

তখন তার এলোচুল বাতাসকে করছে শাসন
এমন মেঘলা দিনে ভিজতে ইচ্ছে করে ভীষণ
সুবাসে তার মাতাল চারপাশ যখনতখন
এমন নেশায় কতবার হয়েছে ইচ্ছে মরণ
চাতকের মতো চেয়ে থাকি, হয় যদি বর্ষণ
বাড়ছে তৃষ্ণা যত দেখি ঢেউয়ের আন্দোলন।

long-hair-girls-dp-28

ধূসর এ আঙিনা তার পরশ পেয়েছে যখন
এই অবেলায় হলো যেন বসন্তের আগমন
হাসি তার নির্ঝরিণী বারবার হচ্ছে প্রসারণ
ভাসছে চাঁদের খেয়া করতে তাকে দর্শন
কোথায় শিখেছে সে এমন নিখুঁত বশীকরণ
সকাল-বিকাল করছে কেবল হৃদয় হরণ।

জানি আসবে জ্বর তবু মন শুনছে না বারণ
আসছে ঝড় চোখের ভেতর করছে সম্মোহন
চোখবুজে যতবার করছি আত্মসমর্পণ
নির্ঘুম সারাবেলা তবু স্বপ্নলোকে বিচরণ
জানবে না কেউ এই এলোমেলো হবার কারণ
শুধু নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে থাকবে তার আলোড়ন।

গোলাপি চাঁদ

images (4)

ডাকছে গোলাপি চাঁদ
এই নির্ঘুম আধোরাত
জানি না তো অনুবাদ
ভাঙছে জোয়ারে বাঁধ।

এই হাওয়া মৃদুমন্দ
আঁকাবাঁকা জলতরঙ্গ
মনে হয় অতীন্দ্রিয়
শোনায় কত যে গল্প।

সরিয়ে মেঘের পালক
উঁকি দেয় দুরন্ত চোখ
জানি না কোন শ্লোক
তাকিয়ে থাকি অপলক।

বাতাসে ফুলের গন্ধ
আবার এসেছে বসন্ত
ভাসছে জলে প্রতিবিম্ব
ছুঁতে গেলে হই বিভ্রান্ত!

এই অনল

images (3)

যত দেখি বাড়ে তৃষ্ণা
নদীর তো নেই কোন সীমানা
ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসবো বলে
ঝাঁপ দিয়েছি গহিন জলে।

বসন্তে সেজেছে কার আঙিনা
ফুলের গন্ধে আর ঘুম আসে না
জোস্নার সাথে রাত জাগবো বলে
পথহারা হয়েছি তার কবলে।

জলপরী যখন মেঘকন্যা
উড়ে যেতে তার নেই তো মানা
বৃষ্টিতে একদিন ভিজবো বলে
আটকে থাকি ওই মায়াকাজলে।

হাসছে কে সে অনন্যা
মনে হয় যেন পাহাড়ি ঝর্না
সত্যি সত্যি বুনো হবো বলে
পুড়ছি নিশিদিন এই অনলে।

নিভৃতচারী

IMG_20230808_093856

জানি না কে সে
চুপিচুপি আসে পাশে
টের পাই ফুসফুসে
সুবাস ছড়ায় বাতাসে।

বলে না কোন কথা
পুষে রাখে মৌনতা
তবু এই নীরবতা
মনে হয় গভীরতা।

জানি নিভৃতচারী
করে তবু মনচুরি
জানি না নিশাচরী
কেন এই লুকোচুরি?

তৃষ্ণা মিটবে কিসে
একবার যদি হাসে
ঝরনার জলে ভেসে
নদী হবে অনায়াসে।

জানি না কে সে
এভাবে কেন আসে
মনখারাপের দেশে
পালিয়ে যায় শেষে।

জলের নিনাদ

জলের শব্দ শোনা যায়; যতবার বৈঠা ওঠানামা করে। হেলেদুলে যাচ্ছে নৌকা ঢেউ ভেঙে ভেঙে। এসব ছন্দের মানে ক’জন জানে! এই যে জলের ফোঁটা, আর ওই তো সোনালি রোদ। তৃষ্ণা কি একেই বলে! নাকি শুধু খেলা। চঞ্চলা মেঘের সেই সাজ। হতে চায় সে বৃষ্টিতে অনুবাদ। এসব শব্দের মানে ক’জন খোঁজে! শুধু নেশার ঘোরে ভাঙছে সিঁড়ি মাতাল বাতাস। খুলছে কপাট বদ্ধ ঘরের। ঐ যে দেয়ালচিত্র। পূর্বপুরুষ দেখেছিল জোয়ার। ভেসে গেছে তাদের কাঠের পাটাতন। আচ্ছা নদী কেন হয় আঁকাবাঁকা?

এখন জলের শব্দ হচ্ছে গেলাসে। সুইমিংপুলে নৌকা বাঁধা আছে। বৈঠাগুলি তার প্লাস্টিক সিলিকনের।

প্রেমটেম

নদীর দিকে তাকালে টের পাওয়া যায় সব নিমিষে। তবু ভনিতা করছে নদী নিখুঁতভাবে। এবেলা ছিলো তৃষ্ণা। ওবেলা প্রচন্ড ক্ষুধা। তারপর মুক্ত হতে চাওয়া পাখির মতো। খড়কুটো মুখে এ ডালে- ও ডালে ওড়াউড়ি। কোন নীড় থাকে না অক্ষত। এতো ঝড়বৃষ্টি! বসন্ত এখনো নাকি রয়েছে বাকি! নতুন সুরে গাওয়া হয় গান। যেতে হয় পূর্ণিমা স্নানে। কবিতা লেখা হয় সেসব আদলে। হারিয়ে যাবে সমস্ত পান্ডুলিপি। যেভাবে সযত্নে মালা গেঁথে ছিড়ে ফেলা হয় নীরবে কতবার।

জোয়ার-ভাটায় যে তরী হারাল পথ। খুঁজে পেলে তার খোলস। হাহাকার করছে ফাঁকা বাতাস।

বৃষ্টির দিন

বৃষ্টির দিন মন কেমন করে। ঘুমঘুম পায়। যদি ঘুম ভাঙে এমন দিনে, বৃষ্টির শব্দ শিহরণ জাগায়। মনে হয় মায়াবী সুরে কেউ পিয়ানো বাজায়! উঁকি দিলে আধখোলা জানলায়, দেখা যায় পদ্ম টলমল। অদূরে ঘাসের জমি ভিজে জবজব। কাঁপছে বন্দী গোলাপ বারান্দায় টবে। শামুক হাঁটতে চায় জিহ্বা লেলিয়ে। যদি খোলা হয় ঘরের দুয়ার। এলোমেলো হবে সব মাতাল বাতাসে। এলোকেশী তখন শুনতে পাবে মেঘের নাদ। কতবার যে বিজলী চমকাবে! পাহাড় দুলবে সে ঝড়ে।

বৃষ্টি হচ্ছে বহুদিন পর। এমন বৃষ্টি চেয়েছে চাতক!

নির্জীবতা

দরজার নিচ দিয়ে ঢুকছে হাওয়া। এবার শীতকাল দীর্ঘ হচ্ছে মনে হয়। হোক। তাতে কার কি! পাতাঝরা দিনে ভালো হয় পাতার উৎসব। যদি থাকে মুঠোভরতি সাদা হাওয়া। পুড়িয়ে দেয়া যাবে নিশ্চিন্তে এ শব। যেভাবে উড়িয়ে নিচ্ছে স্বপ্নগাঁথা। আবার ছুড়ে ফেলছে অদ্ভুত বাস্তব। তবু কুয়াশা আসে জানলায়। ফিসফিস করে বলে কথা। একদিন পালিয়ে যাবার অপেক্ষা। সে জানে না কতবার মন পলাতক!

আরো শীতলতা নিয়ে বৃষ্টি আসছে। আসছে তুষার। কুকুরকুণ্ডলী হয়ে থাকতে হবে আর কত?

আষাঢ়

ব্যাঙের ডাক শুনতে হলে যেতে হবে পঁচা ডোবায়। ফেলে যেতে হবে চকচকে শহর-বন্দর পেছনে। ভয় হয়! ব্যাঙদের ডাক বড় সাংঘাতিক আষাঢ়-শ্রাবণে। বৃষ্টি আসবেই তাদের সে কোরাসে। প্রবল বর্ষণে জমে যাবে জল। স্যাঁতসেঁতে হবে পরিপাটি ঘর। বৃষ্টিতে ভিজলে হতে পারে জ্বর। ভয় হয়! মনে যদি পড়ে শৈশব-কৈশর। বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া এমন আষাঢ়ে ব্যাঙের ডাক কে ভালোবাসে? কাঁদা লেগে নষ্ট হবে রাজকীয় সাজ!

তবু ফিরতে হল একদিন ঠিকই পঁচা ডোবায়। পঁচে যাবার পরপর। এই অন্তিম সাধ!

অস্তিত্ব

‘বাস্তবতা বড় কঠিন’ আর পাঁচজনের সাথে চলতে গেলে
যে ধীরে চলে সে তাল মেলাতে পারে না; পেছনে থেকে যায়
তার ছায়া ক্রমশ গন্তব্য থেকে বহুদূর… যে দ্রুত চলে সে হোঁচট খায়
তার চোখ ধূসর, একই স্বপ্ন দেখেছিল পাঁচজন।
শীতে শুকিয়ে যায় নদী; ভয় হয় পাতা ঝরা বৃক্ষ দেখলে হঠাৎ
যারা উঠে গেছে ওপর তলায়, তাদের ছাদে শোভিত ফুল
একদিন ধূসর রোদ হঠাৎ তাদের বেলকুনিতে
স্থির চশমায় খোঁজে গন্তব্য, ডুবে যাওয়ার পূর্বে দেখে আরো পাঁচজন।

যে গাছ মরে গেছে, নিয়মমাফিক মাটিতে মিশেছে ফসিল
তার ডালে পাখির কূজন স্বপ্নের মতো ধূসর এখন
আর যাকে করা হয়েছে টুকরো টুকরো, সাজানো হয়েছে চিতায়
বহু শতাব্দী কেউ কেউ জাদুঘরে প্রাণহীন প্রদর্শক।
তাদের গন্তব্য পাঁচজনের স্বপ্নে অনুপস্থিত চিরকাল।
একই পথে যাত্রা তবু যে যার মতো দল থেকে বিচ্ছিন্ন
আপাদমস্তক অপ্রস্তুত তৃষ্ণার্ত প্রায় প্রত্যেকে আঙুল কামড়ায়,
যে পৌঁছে যায় সে ফেরে না, যে হারিয়ে যায়, সে হারিয়ে যায়।