মনোনীতা চক্রবর্তী এর সকল পোস্ট

দিনক্ষণ

150422670_3423

আমার ভালোবাসার কোন
পঞ্জিকা নেই …
কোন ঔপনিবেশিক লুঠ নেই
প্রতিদিন বাঁচি -প্রতিদিন মরি!

দু’ হাত পেতে চেয়ে নিই
এক বুঁদ ভালোবাসা, বেহোশী!
মৃত্যু লিখি জীবনের ঠিকানায় রোজ…
আমার ভালোবাসার
কোন বয়স নেই…
কোন শরীর নেই, আমার ভালোবাসার!
নীল খামে অভিমান ঢোকায় আর বের করে
পোস্ট হয় না একটিও চিঠি।
জমতে থাকে খামের মেদ
যেন বাবার ঘরে থাকা
মিঠি দিদির মোটা চশমার লেন্স!

উল্কি

683488_n

দানের ফটোগ্রাফির উল্কি আঁকা
পিঠটা খোলা রেখেছি…
তুমি তাকিও অন্তত একবার…
অনেক পিঠের উল্কি কাপড়ে ঢাকা, তার নীচে আবার লাইলিং।
বাহবা, তালি-খালি কিস্যু নেই!

অতএব…
আমার খোলা পিঠ নিলামে,
তুমি তাকাবে না, সোনা?

রেওয়াজ_৬০

হয়তো এভাবেই আমিও গান রেখে দিয়ে চলে যাবো;
যেভাবে মোহ থেকে মায়া সরে যায় একটু-একটু করে, ঠিক সেভাবেই। সন্ধের একটা নিবিড় গন্ধ থাকে, যে-গন্ধ উপেক্ষা করা বড়ো কঠিন; তবুও চলে যেতে হয়। চলে যাবো। দুরারোগ্যের পাশে গালে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস যেভাবে বসে থাকে, ঠিক তেমনই এক হাওয়ার মধ্যে ভেসে আসবে কোনও অচেনা ট্রেনের ছুটন্ত শব্দ। আমি সেই শব্দের কাছে নতজানু হয়ে বসে থাকবো; পাশ দিয়ে বয়ে যাবে অনন্ত এক নদী; স্থির জল, বিস্ময়ের ঘাট। চারিদিকে কেবল জল আর জল। মোহ থেকে মায়া খুলে গেলে পড়ে থাকে শুধু চলে যাওয়ার প্রগাঢ় ইচ্ছে।

হয়তো এভাবেই আমিও গান ফেলে চলে যাবো, দূরে…

সে এসেছিল

অনেকদিন যাওয়া হয়নি পাপের কাছে,যেমন যাওয়া হয়নি বুকখোলা নদীর কাছে! সে বারবার ডেকে ফিরে গ্যাছে। আমি তখন বাগান লিখছিলাম নিজস্ব কোণে। শুনতে পেয়েছিলাম কী পাইনি, আজ আর তা মনে নেই। পরে জেনেছি সে এসেছিল।

হরিণীর হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল এ তল্লাটে।
ঝুমঝুম শব্দে এগিয়ে আসছিল কাঁটা তার।
তারের জবানবন্দি তখুনি লিখতে লিখতে এগিয়ে যাচ্ছিল একটা তেলচিটে বুড়ো লণ্ঠন।
আলোর বয়স ক্রমশ কমছে, সুলেমান বইয়েই ভেতর অন্য বই ঢুকিয়ে মন-মাথা রেখেছে সেখানে।
চারিদিকে ঢেউয়ের মতো উছলে পড়ছে হরিণীর হাসি
আর হেঁটে চলেছে নির্বাক আলো …

তুমি ঠায় দাঁড়িয়ে। আমিও। তবে তোমার জন্য নয়।
তারচেয়েও গভীর কোনো ভুলের জন্য আমার অপেক্ষা। আমার অপেক্ষা একটা সবুজ-দুঃখ পেরোনো তুমুল দিনগুলোর জন্য, যেখানে জমিয়ে রেখেছি অসংখ্য আত্মদীপ …
পরে জেনেছি সে এসেছিল…

জলঙ্গির_পাড়ে_অন্য_বনলতা

চোখের সামনে খুন হতে দেখলাম।
অথচ, দিনের পর দিন পুলোওভারে
মহীয়সী আলোর মতো সজাগ ছিল সে বা তারা।
তাই ছিল প্রতিটি কথারই নানা রং!
‘আজি যত তারা তব আকাশে…’

চোখের সামনে মার্জিতভাবে ধর্ষিত হল সে।
সাজানো ছকে সব থেকে গেল
হাইটেক-টেকনোলজির ড্রাইভে। হার্ড-ডিস্কে।

চোখের সামনে তিল-তিল করে মরতে-মরতে
সে আশ্রয় নিয়েছিল একটি নিবিড় বুকে।
সেই বুক ঘুম দিয়েছিল।
চিনিয়েছিল নিজেকে রক্ষা করার যাবতীয় গোপন।
প্রাপ্যের চেয়ে সে অনেক বেশি দিয়েছিল;
অযোগ্য অন্ধকারে ভুল করে জ্বলিয়েছিল ঝাড়-লণ্ঠন।
নিভে গিয়েছিল বা নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

চোখের সামনে দেখলাম
হত্যার আগের যাবতীয় প্রকৌশল।
দেখলাম, ত্বকের সাতটি স্তরের সাত-কলা।
সঙ্গম দেখলাম। দেখে তুমুল ভিজলাম।
শরীর থেকে সবক’টা তাপ রেখে এলাম
মারাং-বুরুং এর পায়ে।
সাদা-লাল সব রঙের মুরগিও রেখে এসেছিলাম।

স্লো-পয়েজেনিংয়ের মতো ক্ষয়ে যাচ্ছে
দেওয়ালের নিজস্ব রং।

অথচ, জলঙ্গির ঢেউয়ের মতো অস্থির-চঞ্চল-পাগলপারা নদীটি,
ঝর্নার মতো ঝনঝন করে হেসে ওঠা নদীটি..
লেবু ফুলের আস্ত বাগান তুলে এনে দিয়েছিল
তার উঠোনে অথবা জীবনে।
অথচ কানামাছি জীবন মাথার কাছে রেখে গেল
কত-শত গানের গল্প।
তোমাকে বহুক্ষণ গান শোনায় মৌসুমি-হওয়া।
আর আমাকে বেঁচে থাকার গুনগুন শুনিয়ে
ঘুম দেয় কেউ। তোমার গান, আমার ঘুম সবই তো
ইথারের খেলা। মায়া পুড়ে গেলে
তার আগুন নিভিয়ে দেয় মৌসুমী হওয়া।
তখনও আমি তার আর সে আমার
শ্বাসের শব্দে ঘুমে মগ্ন…

হত্যাই ছিল শেষমেশ। বাঁচালো না কেউ।
বাঁচতে দিল না…
চোখের সামনে খুন হতে দেখলাম
ঝলমলে নদীটিকে…

দূরে তোমাকে রাখতেই হত;
জল নিরুপায় হলে ধর্ষকাম আগুন
বেপরোয়া হয়ে ওঠে!
আমি তোমার শ্বাসে শ্বাস রেখে
প্রলাপ আওড়ে বলি কত কথা!

এক-একটা জন্মান্তর কিতকিত খেলার মতো
পার করে শঙ্খমালা, দু’হাতে দু’পায়ের দু’দিক
থেকে সামান্য তুলে রেখেছে লাল ঢাকাই
ওর গোড়ালিতে আজীবনের সমস্ত জন্ম লেখা ছিল

কেউ আমার ডাকনাম রেখেছে ‘খলনায়িকা’
মৃত্যুর অনেক পরে জেনেছি…
অন্তত নদী নামের চেয়ে ঢের ভালো !

বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগৎ আঁকতে গিয়ে
ভেঙে গেল ঘুম…
শঙ্খমালারা মরে না।
সমস্ত জন্ম অতিক্রম করে সে জেগে থাকে জীবনানন্দের জন্য। ধানসিঁড়ির জন্য।
হেমন্তের ধানের জন্য…

রেওয়াজ_৫৯

প্রতিটি দুঃখের সাথে লেগে-লেগে থাকে একটি গানের সম্পাদনা। আড়িতে বেজে ওঠে তাল। পা_নি পানিতে ভেসে যায়। খাবি খায়। আমি তোমার মুখে স্বরলিপি লিখি…
প্রত্যেকটি দুঃখ মানেই
এক-একটি নীরবতার সম্পাদনা…

আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি কেবল;
তুমি তো জানো কবি, তোমার প্রতিটি জন্মদিনে আমি উন্মাদের মতো অক্ষর ওড়াই। অক্ষর পোড়াই।
দু-হাতে নিজের ছাই ওড়াই …

রেওয়াজ_৫৭

এক-একটা বিশ্বযুদ্ধের গায়ে যেমন বাসি রক্তের পাশাপাশি সারাজীবনের না-বলা জমা থাকে; সেভাবেই এক-একটা হাইফেন ইস্যুর ভিতরে জেগে থাকে অভিমান আর হিরণ্ময় অক্ষর।
অগোছালো অক্ষরে আলো মেলে
মুখটিপে হেসে ওঠা নির্বাসিত চাঁদ…

ঘোরের ভিতর আমাদের স্বজন ও সন্ততি
ঘরের ভিতর ভিড়
ঘোরের ভিতর খিদে
ঘরের ভিতর ছল
ঘোরের ভিতর তুমি-আমি
ঘরের ভিতর ঘর

বিশ্বযুদ্ধ আর স্বপ্নের ভিতর দাঁতে আঙুল আর নখ
খুঁটে খাওয়া অন্ধকার ও অনর্থ।

পাশ ফিরে চোখের জল মোছে হাইফেন ইস্যু…

শাখায় সংখ্যাহীন ফুল, তবু…

.
ছবি ঋণ- অন্তর্জাল

রেওয়াজ_৫৮

আমরা মানুষ তৈরি করি
কিন্তু ‘মানুষ’ করে উঠতে পারি না। বেয়াড়া রঙের ফুলগুলোর ফিসফিস করে বলে যাওয়া কথা এসব। হ্যাঁ, বেয়াড়া রঙই তো! কাদায় খুব বেশিক্ষণ হাত রাখলে একসময় কাদার থেকেও কদর্য হয়ে পড়ে ওই হাত। এভাবেও বলা যায় যে হাতেদের রংটাই বদলে যায়!

আমরা মানুষ তৈরি করি
কিন্তু ‘মানুষ’ করে উঠতে পারি না। বেয়াড়া রঙের ফুলগুলো একসময় কথা বদল করে নিজস্ব নিয়মে।
দীর্ঘক্ষণ অসময়ে চোখ রাখলে একসময় চোখ খসে পড়ে। ফুলগুলো কথার সাথে এবার রঙও বদল করলো। কীভাবে হ্যালুসিনেট করে চলেছে ফুলেদের মায়া! মাথা ঘুরে যায়। ছোটো-ছোটো ইচ্ছেপূরণ ঘুরপাক খায় রঙিন পাথরগুলোকে ঘিরে। পাথর তো পাথরই, একমাত্র তুমিই তো পারো তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু ওই যে চোখ খসে পড়েছে আগেই…

ভাবলে অবাক লাগে যে আমরা একটা আস্ত মানুষ তৈরি করি অথচ ‘মানুষ’ করে উঠতে পারি না…
না-মানুষের ভিড়ে গুটিকয়েক মানুষ কাদায় হাত ডোবায় আর ওঠায়। ওঠায় আর ডোবায়;
কিন্তু মোছে না কিছুতেই…
কনিষ্ক-জন্ম থেকে মুক্ত হোক যাবতীয় জন্মের ছায়া..
‘জন্ম’ শব্দটির কী তীব্র অভিঘাত!

রেওয়াজ ৪৮

কলমে আমার আতর নেই।
আমার কলমে ঘুঙুরের ফানকার নেই; পল রোপসনকে হত্যার কোনও ব্লু-প্রিন্ট নেই। কলমের মুখে প্রেম-শব্দ নেই, লাইভ-পোস্টের মতো আডভেঞ্চার নেই, কোনও ক্ল্যারিফিকেশন নেই। পুরুষদের নিয়ে ভারসাম্যের খেলা নেই। যেটুকু লিখি সেখানে সেই মুহূর্তের সত্যিরা সত্যিকারের হাত ধরাধরি করে প্রাণের গান গায়। যোগ অথবা বিভাসে কোনও বিনিময় নেই। আনস্কেচড সব কথারা বসে থাকে টুল পেতে যেভাবে বসে থাকে নিষিদ্ধপল্লির মেয়েরা;
যেমন দ্যাখা যায় হামেশাই; তেমন।

আমার কলমে কোনও রাত নেই
দরবারি নেই; শ্যাম কানাড়া নেই।
অতএব, আমার সে-নিয়ে মাথা ব্যথাও নেই
যেমন অপেক্ষা বলে আর কিছু নেই।
কলমে আমার পিপাসা নেই; পাথর আছে।
পাথরে রক্ত না তেল-সিঁদুর সেটা বিতর্কিত
তাই কোনও আগ্রহ নেই তাতে;
বরং নিষ্পত্তি হোক দ্রুত এই বিতর্কের।
আমি আর চাই না এই খেলা চলতে দিতে।

কলমে আমার দুপুরের তাণ্ডব
বেপরোয়া ড্রাইভিং;
এক-একটা ড্রাইভ মানে লক্ষ জন্ম
এক-একটা ড্রাইভ মানে তুখোড় জখম
এক-একটা ড্রাইভ মানে তুমুল একাকিত্ব।

কলমে লাগাতার চোট; আতর নেই
কলমে হোঁচট, আর রক্তপাত
যেন গর্ভফুল ছিঁড়ে যাওয়া মধ্যরাত;
চোখের কোথাও কোনও ঘুম নেই!

অথচ কী আশ্চর্য, আমার কলমে কোনও রাত নেই…!

রেওয়াজ_৪৯

ক্ষমা চাইতে সবাই জানে না। অথচ, ক্ষমার অযোগ্য অসম্মানে শব্দের জন্য ধরে আনে কোনও গো-পালক। ভুল বুঝলে কথা দিয়ে কথা ঘিরে রাখে; এবং নেপথ্যে কেউ-কেউ ‘তাল সে তাল মিলাও” অথবা উস্কানিকে ধুমধাম জাগিয়ে রাখে। কথারা কী প্রবল উড়ে আসে; জানান দেয় বাসি ইতিহাস। নূপুর কে পরবে, রাই রানি? তুমি? নাকি যেসব পায়ে কখনও নূপুর ওঠে না, সেসব পা নূপুরে রিনরিন করে সুন্দর বাজবে? চুপচুপ করে তো বেজেই চলে, যারা শোনার ঠিক শোনে!

নোটিফিকেশন বলে উত্তরের জন্যই প্রশ্ন লেখা হয়। লিখতে বলা হয়। ক্ষমা চাইতে জানা একটা নির্ভেজাল সুর। কোনও হিপোক্রেসি থাকে না সেখানে। সব মুখে ‘ক্ষমা’ উচ্চারিত হয় না। তাই ওই ঠোঁটে কখনও বাঁশি বাজে না। এমনকি প্লুত স্বরও নেই। কথার পিঠে কথা উড়ে-উড়ে আসে! বাসি ইতিহাসে শুধু আলোর মতো পুরু অন্ধকার…যারা, জেনেছে তারাই সরেছে…রাই রানির চলা তাই আজও থামেনি…

নেপথ্যচারীরা ভালো থাকুক।
ফ্রন্টলাইনার যারা, হ্যাঁ, আপনাদের বলছি যারা নাঃ, চাঁদবিন্দু আপাতত সরিয়ে রাখি বরং; অন্যকে ধমকানো, জ্ঞান দেওয়া এবার বন্ধ করুন; সবাইকে সবকিছু মানায় না। প্রয়োজনে যুক্ত বর্ণ ভেঙে ‘ক্ষমা’ বানানটা দু-জনে মিলে প্র্যাকটিস করুন জমিয়ে; দেখবেন… কিছু ডিলিট করার দরকারই হবে না! আপনার কথা, অন্যের নয়; আপনার মুখেই বলুন.. খুব মিষ্টি শোনাবে!

কত কৃষ্ণ এলো গেলো
কত কান্না যমুনা হল;
কান্নার মানে কি আর সকলে জানে!

কত কৃষ্ণ আরও আসবে
কত বাঁশি আরও বাজবে
রাই আবার ভাসবে। বাজবে। উঠবে।

অনন্ত পথ হাঁটবে বলেই, সে জন্মেছে;
সব গল্প কি আর সকলে জানে;
একতরফা গল্পের মূল চরিত্র হয়ে কখনও কারও করুণা চাইনি। যত দিন যাচ্ছে, কী ভীষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে সব!
প্রতিবার আমাকে নীচু দেখাতে গিয়ে আসলে তুমিই বারবার নীচু হয়ে গ্যাছো…অথচ, তেমন তো কখনও চাইনি দেখতে!

মা গোসাঁই গো, সব ঠোঁটে বাঁশি বাজে না… ইন ফ্যাক্ট মানায়ও না।
ওহে কৃষ্ণ, অঙ্গে রঙমশাল আমারও আছে। কিন্তু ওই যে; সব বারুদে আগুন থাকে না, কী আর করা যাবে; কৃষ্ণ নয়; কৃষ্ণগহ্বর থাকে… তারপর একটা খড়গপুর প্ল্যাটফর্মের মতো দীর্ঘশ্বাস আর একটা ফ্লাইং-কিস…

এনিওয়ে, ‘নূপুর’ বানানে ভুল থাকলে তোমরা ক্ষমা করে দিও😊🙏❤️

ছবি ঋণ-অন্তর্জাল।

লয়

লয়

আমার চারপাশ এখন তোমারই ছড়ানো-ছিটনো জড়ের দুনিয়া।
যেখানে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তাজমহলটা…
জন্মদিনে তোমারই দেওয়া
সন্তান ক্রোড়ে মাতৃমুর্তি।

যমুনা জেনে গ্যাছে চলার
ছন্দ
সুর
তাল…

পাঠ অথবা …

পাঠ অথবা …

যত-যতবার তুমি বলো শ্বাসের মত জরুরি, জীবনের মত জরুরি, বেঁচে থাকার মত জরুরি; ততবারই ঠিক এভাবেই আরও একবার পড়ি নিজেকে! … পৌঁছে যাই আয়নাগ্রামে … ছুঁয়ে দেখি কত-কত জন্মের ভালোমন্দ!

অবাধ্য চুলগুলোর ভেতর থেকে হুহু করে বেরিয়ে আসে এক দলছুট চঞ্চলতা…

শুধু বেরোতে পারি না আমি অসংখ্য জন্ম-মৃত্যুর পরেও …

আরও একবার পড়ে ফেলি নিজেকে …

বর্ষা

আন পাব্লিশড কবিতার মতো তুমি জমছ আমার গর্ভে।
কাটাকুটিতে ভরে আছে পাণ্ডুলিপি।
তেমন কোনও প্রকাশক পাইনি এখনো,
যাঁর হাতে তুলে দিতে পারি তোমায়…

কেউ বলেছিল একটা কাজরি শোনাতে
ঘোর বর্ষা ভেতরে, বাইরেও..
স্বপ্নের মতো না-ফেরা মুখ
সাঁতরে চলে কেবল জীবন থেকে জীবনে
জন্ম-দরজায় বারবার করাঘাত…

ওখানে কে? কে ওখানে…?

যুগলবন্দি

কবিতা ও গানে সর্বনাশ ডেকে এনে, আমাকে করো পথ সমগ্র লিখে রাখুক অতিক্রমের ধারাবিবরণী। বাতাসে নির্মেদ-বিশ্বাস। রং তার হিজলপাতার। বুকে ছড়ানো উর্ধমুখী দু-পাশের শিরা, সমর্পণের গড়ন। কোনো নাটমন্দিরে নেচে-গেয়ে ওঠা বিভোর যেন!

কবিতা ও গানে সর্বনাশ ডেকে এনে, আমাকে করো পুনঃপ্রতিষ্ঠা। একটা -একটা করে মহামারী খুলে যাক রেশম-তন্তুর মতো। অনবরত ওঠা-নামার জাদুবাস্তবতা দু-হাতে পরে নিক মৃত্য-পরোয়ানা। যেভাবে আত্মহত্যার আগে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে প্রতিটি মুখ, সেভাবেই …

কবিতা ও গানে সর্বনাশ ডেকে এনে, আমাকে করো হলুদ অভিধান। অস্পষ্ট-অমসৃণ পাতা থেকে নেমে আসুক বিকলাঙ্গ অক্ষরেরা। ধার করে লিটল ম্যাগাজিন করা বোকা সম্পাদকের নামের বানানে ছিটিয়ে দাও খই-চন্দন-সিঁদুর,যেন রমজান-পূর্ণিমা!

কবিতা আর গানে সর্বনাশ ডেকে এনে, আমাকে সাদা-বাতাস করো। ভ্যালি অব লভ থেকে উঠে আসা সুখে এখন শুধুই শীত। পুলওভারের পকেট বরবাদ লিখুক
কুহু রঙে। সারিসারি মৃত্য শুয়ে থাক জাতীয় সংগীত গাওয়া শেষ উচ্চারণের শেষ ফাঁকে না-বেরোনো স্বরের মতো …

কাঁটাচামচে লেগে থাকা মাংস

কাঁটাচামচে লেগে থাকা মাংস

তাহলে থাক। আগুনের গল্প জ্বলুক নিজের মতো। পোশাকহীন হেঁটে যায় সময়। নির্লজ্জ চোখ থেকে ধুয়ে যায় ইতিহাস…
বরং ঠাণ্ডা ঘরে জমে উঠি আমরা
যেমন জমে উঠতাম প্রতিবার…
সেফ জোনে থেকে সব দ্যাখা আর নানারকম ফল ছুঁড়ির আগা থেকে মুখে টেনে নেবার মজাই আলাদা!

তাহলে থাক। চাবুকের দাগ শিল্প হোক নিজের মতো। এগিয়ে যাক নদী-জীবন। ধুয়ে দিক অধিকারের অ আ ক খ।
হায়না আর শকুন যেভাবে ছিঁড়ে ফেলে সব, বরং সেভাবেই দাঁতে কাটি বর্ণমালার প্রিয়তম পাতা।

নগরের মলিন ধূলা রঙ্গন ফুলের মতো রঙিন হল। আঁচলে পড়ে রইল গণতন্ত্রের বাসি টুকরো…

বরং গল্প পুড়ুক নিজের মতো…