নিতাই বাবু এর সকল পোস্ট

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

অভাবে সবই বিসর্জন

nitai

মান জ্ঞান ধ্যান সাধন
অভাব অনটনে হয় বিসর্জন
ভুলে যায় গুরুর বচন
চেষ্টা শুধু ক্ষুধা নিবারণ।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি,
গরিবের নাই যে গতি
ভিক্ষা চাইলে মারে লাথি,
তবুও থাকে দুহাত পাতি।

গুরুর বাক্য শুনে না তখন
পেটে ক্ষুধা লাগে যখন
ধর্মের নিয়মও হয়না পালন
দুঃখ যখন করে আগমন।

মনে হয়

nita

মানি লোকের মান বড়
বড় তার সম্মান,
অজ্ঞানী বোঝে না মানসম্মান
যতই হোক অপমান।

বিদ্বান লোকের জ্ঞান বেশি
বিদ্যা করে দান,
মুর্খ লোক বোঝে বেশি
বলে সে কে বিদ্বান?

যে শিক্ষিত হয় অহংকারী
রোগে শোকে মরে,
যে অশিক্ষিত হয় দয়ালু
সবাই সম্মান করে।

অহংকারীর অহংকার অলংকার স্বরূপ
অহংকারই সম্বল তার,
নিরহংকারীর সহ্য-ধৈর্য অনেক বেশি
নতশিরে প্রার্থনা স্রষ্টার।

প্রভু করে না ভুল

দেখি পৃথিবীর সবাই নিজের প্রশংসায়
থাকে সদা মশগুল,
প্রভু তোমার বেলায় দেখেনি তো কেউ
করতে এমন ভুল!

দেখা যায় কেউ কর্ম দোষে ভুগে মরে
দুঃখ আর যন্ত্রণায়,
তবুও তুমি হওনা ক্ষিপ্ত করছো ক্ষমা
দোষী নির্দোষীর প্রার্থনায়।

যৎসামান্য জ্ঞানের জ্ঞানী ক্ষমতাবান সেজে
করছে শাসন শোষণ,
তুমিতো প্রভু এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মালিক
ক্ষমতা কি দেখাও তেমন?

তোমার জল তোমার স্থল আকাশ-বাতাস
মানব করছে নিয়ন্ত্রণ,
তোমার ইশারায় ধ্বসে পড়ার কথা হিমালয়
করছো কি তুমি এমন?

প্রতিবছর ঈদ কেন ১১দিন আগে হয়?

ffty

আচ্ছা, প্রতিটি ঈদ কেন প্রতিবছর ১০-১১ দিন আগে হয়?
যেমন: গত হয়ে যাওয়া ঈদ-উল-ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৪ই মে ২০২১ইং। একবছর পরপর যদি ঈদ হয়, তা হলে তো এ বছর ১৪ ই মে অথবা মে মাসের ১৫ তারিখ পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তা-ই নয় কি?

কিন্তু সেটা না হয়ে এবার কেন ২-৩ মার্চ ২০২২ ইং ঈদ-উল- ফিতর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটা একটু ভাবার বিষয় নয় কি?

তবে হ্যাঁ, এবিষয়ে ভাবনা-চিন্তার কিছুই নেই! কারণ, এখানে সবকিছুই চাঁদের হিসাবে অর্থাৎ চান্দ্র মাসের হিসাবেই হচ্ছে। তাই প্রতিবছর গত বছরের ১০-১১ দিন আগেই পবিত্র মাহে রমজান-সহ ঈদুল ফিতর অথবা ঈদ-উল-আযহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোনো-কোনো বছর মাহে রমজান শীতকালে আরম্ভ হয়। আবার কোনও বছর প্রচন্ড রোদে ঝড়-বৃষ্টি আর বান-তুফানেও মাহে রমজান আরম্ভ হয়ে থাকে। কিন্তু ইংরেজি অথবা বাংলা সনের কোনও নির্দিষ্ট সময়ে হচ্ছে না। এর কারণ শুধু একটাই। আর তা হলো চন্দ্র মাসের হিসাব।

আমরা জানি ইংরেজি ৩৬৫ দিনে একবছর। আবার কোনো-কোনো বছর ৩৬৬ দিনেও হয়ে থাকে। আর তা হয় প্রতি চার বছর পরপর। আরও সহজভাবে বললে বলতে হয়, যেকোনো ইংরেজি সালকে অর্থাৎ ২০২০ সালকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগফল অবশিষ্ট কোনও সংখ্যা না থাকে, তা হলে সে বছর বা সেই ইংরেজি সালই হবে ৩৬৬ দিনে। যাকে বলে লিপ ইয়ার। ঐ বছরই ফেব্রুয়ারি মাস ২৮দিনের পরিবর্তে ২৯ দিন হবে। যেমন: ২০২৪÷৪= ৫০৬ এখানে ভাগফলের শেষে কোনও অবশিষ্ট সংখ্যা নেই। তার মানে হলো, ২০২৪ ইংরেজি সাল হবে ৩৬৬ দিনে, আর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস হবে ২৯দিনে। সোজা কথায় ২০২৪ ইংরেজি সাল হবে লিপ ইয়ার।

এবার আসি আমাদের বাংলা সন নিয়ে আলোচনায় : জানা যায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা একাডেমি ইংরেজি বর্ষের সাথে মিল রেখে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলা সনের হিসাব সংস্কারের একটি সুপারিশও প্রণয়ন করেছে। পত্রিকার খবরের মাধ্যমে জানা যায় যে, বাংলা সনের প্রস্তাবিত সংস্কারে বৈশাখ থেকে আশ্বিন ৬ মাস ৩১ দিনে গণনা করা হবে। ফাল্গুন ব্যতীত কার্তিক থেকে চৈত্র ৫ মাস হবে ৩০ দিনের। ২৯ দিনে ফাল্গুন ধরা হবে। বছরে দিনের সংখ্যা ৩১x৬ (১৮৬) + ৩০ x ৫ (১৫০) +২৯= ৩৬৫ ঠিক রাখা হয়। বাংলা একাডেমির ভাবনামতে এ প্রস্তাবের ফায়দা হল ৮ ফাল্গুন ও ২১ ফেব্রুয়ারি, ১২ চৈত্রে ২৬ মার্চ, ২৫ বৈশাখে ৮ মে, ১১ জ্যৈষ্ঠে ২৫ মে এবং ১ পৌষে ১৬ ডিসেম্বর প্রাতিষঙ্গিক হবে। কিন্তু একসময় বাংলা বর্ষেও কোনো-কোনো মাস ৩২ ও ২৯দিনেও হতো। তবে এখন আর সেটা নেই। তবু্ও কিছুকিছু হিন্দুরা সেই আগেকার বাংলা বর্ষপঞ্জিই অনুসরণ করে আসছে। এর পেছনে আবার একটা কারণও আছে। কারণ হলো, ইংরেজি তারিখ গণনা শুরু হয় রাত ১২টার পর সময় ০০ থেকে। আর বাংলা তারিখ গণনা শুরু সূর্যোদয়ের সাথে। তাই অনেক হিন্দুরা ক্যালেন্ডারের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন না করে এর পরদিন তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সবই পালন করে থাকে।

তা করুক, সেটা যার যার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির আওতায় পরে। তা হলে বুঝাই গেলো যে বাংলা এবং আন্তর্জাতিক ইংরেজি সাল হুবহু একই নিয়মে চলছে। ব্যতিক্রম শুধু ইংরেজি চার বছর পরপর লিপ ইয়ার। যা হয় ৩৬৬ দিনে।

এবার হিজরি সন নিয়ে আলোচনা : হিজরি সন হল চাঁদের হিসাবে। যাকে বলা হয় ইসলামি চন্দ্রমাস। এই হিজরি সাল হলো ইসলামী চন্দ্র পঞ্জিকায ব্যবহৃত পঞ্জিকা। জানা যায় যার প্রথম বছর শুরু হয়েছিল ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে। সেই থেকে হিজরি মুহররম মাসকে ইসলামি নববর্ষের প্রথম মাস ধরা হয়।

জানা যায় হিজরি সালের এই প্রথম বছরে মহানবী ও তার সাহাবীরা মক্কা থেকে ইয়াসরিবে (বর্তমানে মদিনা) দেশান্তরিত হন। এই ঘটনাটি ইসলামি পরিভাষায় হিজরত নামে পরিচিত যা ইসলামে প্রথম মুসলিম সম্প্রদায় (উম্মাহ) সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখার জন্য স্মরণীয়। তাই মনে হয় এই হিজরত থেকেই হিজরি নামকরণ করা হয়েছে।

তো যাইহোক, বাংলা এবং ইংরেজি সালের সাথে ব্যতিক্রম হলো, মাস এবং বছরের দিন। হিজরি মাস চাঁদের হিসাবে হওয়াতে বছরের প্রতিটি মাসই ২৯.৫০ মানে সাড়ে ঊনত্রিশ দিনে হয়ে থাকে। যেমন: ৩৫৪÷১২=২৯.৫, আবার ৩৫৫÷১২=২৯.৫৮৩৩৩৩। সে হিসাবে হিজরি চন্দ্র পঞ্জিকায় একবছর গণনা করা হয়, ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে। তা হলে দেখা যায় ইংরেজি সাল ৩৬৫দিন—হিজরি চন্দ্র পঞ্জিকা ৩৫৪দিন হলে ইংরেজি থেকে হিজরি ১১ দিন কম হয়। এই ১১দিন কম থাকার কারণে প্রতিবছর ইংরেজি বাংলা সালের নির্দিষ্ট কোনো তারিখে ঈদুল ফিতর অথবা ঈদ-উল-আযহা উদযাপন হয় না। প্রতিবছরই গত বছরের চেয়ে অন্তত ১০ বা ১১ দিন আগেই মাহে রমজান-সহ ঈদুল ফিতর ও ঈদ-উল- আযহা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু হিজরি ইসলামি চন্দ্র পঞ্জিকার ঠিক তারিখেই হচ্ছে।

বি:দ্র: লেখা আরও একবছর আগের।

শুভেচ্ছান্তে: নিতাই বাবু। আমি একজন হিন্দু। লেখায় ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আর লেখা পড়ে ভালো লাগলে দয়া পর্বক লাইক/কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরিশেষে সাবাকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’র অগ্রীম শুভেচ্ছা জানালাম।

আশাহত

মেঘের সাথে মিশে ভেসেছিলাম
একসময় আকাশের সীমানাও ছুঁইয়েছিলাম
কোথাও পাইনি তো স্থান,
সবার মাঝে ভালোবাসা বিলিয়েছিলাম
দুখী জনের সাথীও হতে চেয়েছিলাম
তাতে হয়েছিলাম শত অপমান!

তাই আজ হৃদয় হয়েছে ক্ষতবিক্ষত
আঘাতে হই না কাবু আঘাত আসে যত
সয়ে যাই একা নিরিবিলি,
শত দুঃখ বেদনায় হারিয়েছে আশা যত
নিরাশা ভরা ভবনে সাথী নেই মনোমত
তবুও দেখি রঙের ঝিলিমিলি!

হিন্দু বিয়েতে সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য

dfgh

বিবাহের মূল মন্ত্র যা স্বামী স্ত্রীরা প্রতিজ্ঞা করে থাকে :
“যদেতত্ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।।”
—তোমার এই হৃদয় আমার হোক আমার এইহৃদয় তোমার হোক।

সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য:
হিন্দু বিয়েতে সাত পাক ঘোরার সময়ে অনেক মন্ত্র পড়া হয়, বর-কনে পুরোহিত মহাশয়ের বলে দেওয়া মন্ত্র অনেক সময়েই না বুঝেই বলতে থাকেন। কিন্তু প্রতিটি মন্ত্রের এক একটি অর্থ রয়েছে যা বিয়ের পরের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা হলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক সাত পাকের মাহাত্ম্য !

প্রথম প্রতিশ্রুতি- পবিত্র অগ্নির সামনে দাঁড়িয়ে বর, কনেকে কথা দেন যে বিয়ের দিন থেকে কনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তাঁর। অগ্নি এবং অন্যান্য দেবদেবীর আশীর্বাদে যাতে কোনওদিনই নব-দম্পতির অন্ন-বস্ত্রের অভাব না হয় সেই দায়িত্ব বর নেন। উত্তরে কনে প্রতিজ্ঞা করেন যে সংসারের সুখের জন্য খুটিনাটি বিষয়ও তিনি নজরে রাখবেন। অর্থাৎ প্রথমে বর তাঁর বউ এবং তাঁর ভাবী সন্তানদের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্বামী এবং তাঁর পরিবারের যত্ন নেবেন।

দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি- সাত পাকের দ্বিতীয় পাক ঘোরার সময়ে বর-কনে একে অন্যকে প্রতিজ্ঞা করেন যে তাঁরা জীবনের সব ওঠাপড়ায় একে অন্যের সঙ্গে থাকবেন। বর কনেকে বলেন যদি কখনও কোনও বিপদ আসে, তা হলে তিনি তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের রক্ষা করবেন। আবার উত্তর কনে বরকে কথা দেন যে, সব সময় তিনি তাঁর স্বামীকে সাহস ও শক্তি যোগাবেন। অর্থাৎ এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্ত্রীকে সবরকম পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবেন। বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি স্বামীর সবরকম যন্ত্রণায় পাশে থাকবেন।

তৃতীয় প্রতিশ্রতি- তৃতীয় পাকে বর এবং কনে একে অন্যের পার্থিব সুখের দিকে নজর দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তবে একইসঙ্গে আবার আধ্যাত্মিক পথেও হাঁটবেন বলেও একে অপরকে কথা দেন। অর্থাৎ এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য রোজগার করবেন এবং তাঁদের দেখভাল করবেন। একই প্রতিশ্রুতি এবার কনেও করেন।

চতুর্থ প্রতিশ্রুতি- সাত পাকের চতুর্থ পাক ঘোরার সময়ে বর কনেকে কথা দেন যে সর্বাঙ্গে তিনি তাঁর স্ত্রীয়ের সম্মান রক্ষা করবেন এবং কনে বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে সারাজীবন তিনি তাঁর স্বামীকে ভালবাসবেন, অন্য সব পুরুষরা তাঁর কাছে গৌন। অর্থাৎ স্ত্রীর কাছে তাঁর পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া এবং একইসঙ্গে স্ত্রীর সমস্ত মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্ত্রী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেন।

পঞ্চম প্রতিশ্রুতি- একে অন্যকে সব সময় ভালবাসা এবং সম্মান করার প্রতিজ্ঞা হয় সাত পাকের পঞ্চম পাকটিতে। বর-কনে একসঙ্গে দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তাঁদের সংসার আনন্দে ও সমৃদ্ধিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে, তাঁদের সন্তান/রা যেন সুস্থ থাকে। বর এবং কনে একে অপরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে ওঠার অঙ্গিকারও করেন। অর্থাৎ যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্বামীকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেন স্ত্রী।

ষষ্ঠ প্রতিশ্রুতি- ষষ্ঠ পাক নেওয়ার সময়ে সারা জীবন একে অপরের প্রতি সত্য থাকবেন – এই প্রতিজ্ঞাই করেন বর এবং কনে। অর্থাৎ স্ত্রীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। স্ত্রীও স্বামীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

সপ্তম প্রতিশ্রুতি- সাত পাকের শেষ পাকটি নেওয়ার সময়ে বর বলেন, এখন থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী হলাম। এখন থেকে আমরা এক। কনেও তাতে সহমত দেন। অর্থাৎ শুধু স্বামী হিসেবেই নয়, বন্ধু হিসেবেও সারাজীবন স্ত্রীর সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন বর। বিনিময়ে স্ত্রীও স্বামীর সঙ্গে জাবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

এই প্রতিশ্রুতিগুলো পরস্পরের প্রতি বহন করতে হয় বলেই হিন্দু বিয়ের শাস্ত্রীয় নাম হলো ‘বিবাহ’, অর্থাৎ ‘বিশেষভাবে বহন করা’। তাই হিন্দু বিয়ে মানেই আজীবনের সুরক্ষা ও অবিচ্ছেদ্য সুখ-শান্তির প্রতিশ্রুতি।

.
নিতাই বাবু
১৩/৪/২০২৩ইং।
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

কোথায় আসল ঠিকানা?

yuio

আসলে ভবে যেতে হবে
থাকেনা কেউ ভবে,
আমারও একদিন যেতে হবে
যেদিন সময় হবে।

গায়ের চামড়ায় ভাজ পড়েছে
চোখে দেখি কম,
এই বুঝি হচ্ছে মরণ
পিছু ধরছে যম।

দেহের শক্তি মনের বল
কার থাকে কতক্ষণ,
স্বার্থের টানে এসব ভুলে
গড়ছি সম্পদ সর্বক্ষণ।

কার সম্পদ কোথায় থাকবে
মৃত্যুর পরে অজানা,
নিশ্বাস যেদিন হবে বন্ধ
শ্মশান গোরস্থানই ঠিকানা।

.
নিতাই বাবু
১৭/০৪/২০২৩ইং।

ঈদের আনন্দ সবার জন্য

ggy

ঈদ বুঝি গেলো গত হয়ে
অনেকে করছে খেয়ে দেয়ে,
কেউ করছে আনন্দে ঈদ
কেউ রয়েছে না খেয়ে।

কারোর ঘরের পোলাও মাংস
রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে ঢেলে,
কেউবা আবার কুড়িয়ে এনে
খাচ্ছে চোখের পানি ফেলে।

ঈদ উদযাপন করছে কেউ
নতুন জামা কাপড় পরে,
কেউ করছে ঈদ উদযাপন
ছেড়া ময়লা বস্ত্র পরে।

তবুও সবাই করছে ঈদ
বাকি রইলো না কারোর,
আসবে আবার খুশির ঈদ
রাখবে কি তাদের খবর?

যেখানে আছে গরিব দুঃখী
সুখ নাই যাদের ঘরে,
তাদের খবর যদি রাখো
ঈদ আনন্দে উঠবে ভরে!

.
নিতাই বাবু
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর
২২/০৪/২০২৩ইং।

গণেশের আসল মাথা ও হাতির দেহ কোথায়? এবং সেগুলো কীভাবে পূজিত হচ্ছে?

images-2

আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। মানে আমি হিন্দু। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, কাকা-কাকী, মামা-মামী-সহ হিন্দু সমাজের সকলেই ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজার্চনা করে আসছে। নিজেও নিজের এলাকায় প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়া প্রায় সব কয়টা পূজায় অংশগ্রহণ করে ভক্তিভরে পালন করি। বেশি আনন্দ উপভোগ করি আমাদের হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ দূর্গা পূজায়। আর প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের দিনটি শুরু করি গণেশ পূজা করে। বাংলা নববর্ষের এই দিনে অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে দেবতা গণেশের পূজা করার সময় নিজে নিজেকে প্রশ্ন করি, ❝আচ্ছা, এই দেবতা গণেশের হাতির মাথা কেন? তা যেভাবেই হাতির মাথা হয়েছে তো হয়েছেই, কিন্তু গণেশ দেবতার আসল মাথাটা কোথায় কীভাবে পূজিত হচ্ছে? আর হাতির দেহটি কোথায় আছে এবং কীভাবে পূজিত হচ্ছে?❞

এ শুধু নিজে নিজেকেই প্রশ্ন করি, কিন্তু উত্তর মেলাতে পারি না এবং কোনও পুরোহিতকে জিজ্ঞেস করলেও সদুত্তর পাই না। তারপরও থেমে থাকি না। এমনিতেই আমার জানার ইচ্ছেটা খুবই বেশি! সেই ইচ্ছে থেকেই শিব পুরাণ ঘেঁটে পেলাম গণেশ দেবতার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কাহিনী। কিন্তু গণেশ দেবতার আসল মাথা ও হাতির দেহের অবশিষ্ট কোনও কাহিনী খুঁজে পেলাম না। একদিন আমার বড় দাদা জীবিত থাকতে দাদাকে এবিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। (আমার বড় দাদা বর্তমানে স্বর্গীয়)। জিজ্ঞেস করার পর বড় দাদা বিস্তারিত ঘটনা বললেন। আমি শুনলাম! নিজের প্রশ্নের সাথে বড় দা’র কথা মেলালাম। মিলিয়ে দেখি বড় দাদার কথা আর আমার প্রশ্ন হুবহু মিলেছে।

তা কীভাবে মিললো, সেটা আমি আমার এই লেখার মাঝে প্রকাশ করছি। আগে শিব পুরাণ ঘেঁটে পাওয়া দেবতা গণেশের দেহ থেকে মাথা কীভাবে বিচ্ছিন্ন হলো এবং কীভাবে দেবতা গণেশের দেহে হাতির মাথা স্থাপন হলো, সে বিষয়গুলো তুলে ধরছি। আশা করি সবাই সাথে থাকবেন।

শিব পুরাণে উল্লেখ রয়েছে, একদিন নাকি কৈলাসে স্নানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, দেবী পার্বতী। সে সময় তিনি দরজায় পাহারায় বসিয়ে রাখেন শিবের বিশ্বস্ত অনুচর নন্দীকে। আদেশ দেন, যতক্ষণ পার্বতী স্নানঘরে থাকবে ততক্ষণ কাউকে যেন ভিতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়। নন্দী পার্বতীর আদেশ পালন করতে পাহারায় বসলেন।

এদিকে সেই সময় সেখানে হাজির স্বয়ং মহাদেব। নন্দী ছিলেন শিবের ভক্ত ও অনুচর। নন্দী শিবের ভক্ত হওয়াতে শিবকে পার্বতীর স্নানঘরে প্রবেশ করতে বাঁধা দিতে পারে না। যখনই শিব পার্বতীর স্নানের সময় স্নান ঘরের সামনে আসে নন্দী শিবকে ভেতরে ঢুকতে দিতে বাধ্য হয়। এতে সময়সময় এরকম পরিস্থিতিতে পার্বতী খুবই বিরক্তিকর অবস্থায় পড়েন।

ঐরকম বিরক্তি থেকেই পার্বতী অন্তত স্নান করার সময় নন্দীর পরিবর্তে একজন বিশ্বস্ত পাহারাদার কামনা করলেন। সেই কামনা থেকেই পার্বতী নিজের শরীরে মাখা হলুদ থেকে সৃষ্টি করলেন এক মূর্তি। সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে নাম রাখলেন ‘গণেশ’।‘গণেশ’ হলো পার্বতীর আজ্ঞাবহ পুত্র। আর এই আজ্ঞাবহ পুত্রই গণেশ হলেন পার্বতীর স্নান ঘরের বিশ্বস্ত পাহারাদার। পার্বতী স্নানঘরে ঢোকার আগে স্নান ঘরের দরজায় গণেশকে পাহারায় বসিয়ে রাখতো, আর গণেশের প্রতি আদেশ থাকতো স্নানঘরেকেউ স্নানঘরে প্রবেশ করতে না পারে। ঠিক তা-ই হতো। পার্বতীর আদেশ তাঁর আজ্ঞাবহ পুত্র গণেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনও করতেন।

একদিন পার্বতী স্নানঘরে ঢোকার কিছুক্ষণ পর মহাদেব স্নান ঘরের সামনে এসে দেখে তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর নন্দী নেই! অপরিচিত এক বালক স্নান ঘরের দরজার দাঁড়িয়ে আছে। মহাদেব স্নানঘরে প্রবেশ করতে চাইলে গণেশ মায়ের আদেশ রক্ষার্থে বাঁধা দেয়। গণেশ বাঁধা দিলে মহাদেব ভীষণ রেগে যায়। মহাদেব রেগেমেগে গণেশকে মহাদেব বলল, ‘জান আমি কে?’। গণেশ বলল, ‘আপনি যে-ই হোন-না-কেন আমি অন্তত আপনাকে মা পার্বতীর স্নানঘরে ঢুকতে দিব না’।

গণেশ’র এই কথার পরই মহাদেব ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর হাতে থাকা ত্রিশূল নিক্ষেপ করে গণেশের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তারপর স্নানঘর থেকে পার্বতী দৌড়ে এসে দেখে মাটিতে পরে আছে গণেশের দেহ ও মাথা । তা দেখে পার্বতী রেগে অগ্নিশর্মা। পার্বতী মনস্থির করলেন, প্রলয় নিত্য করে পৃথিবী মুহূর্তেই ধ্বংস করে ফেলবেন। পার্বতীর এই অবস্থা দেখে মহাদেব পড়লেন বিপাকে! মহাদেব পার্বতীর রাগ থামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কিছুতেই পার্বতীর রাগ থামাতে না পেরে মহাদেব ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। ব্রহ্মা ঘটনাস্থলে আসলেন। ব্রহ্মা গণেশের ছিন্ন মস্তক জোড়া লাগিয়ে পুনরায় সেই আগের গণেশ করে দিবেন বলে পার্বতী ব্রহ্মা কথা দেন। ব্রহ্মার কথায় পার্বতী স্থির হলে ব্রহ্মা মহাদেবকে আদেশ দিলেন, ‘উত্তর দিকে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকা যেকোন প্রাণী বা পশুর মাথা কর্তন করে এনে গণেশের দেহের সাথে স্থাপন করতে। তা যেন হয় অতি তাড়াতাড়ি। দেরি হলে বিপাকে পরতে হবে। ব্রহ্মার কথামতো মহাদেব একজন বিশ্বস্তকে পাঠালেন, কোথাও উত্তর মুখী শুয়ে থাকা কোনও প্রাণী বা পশু পাওয়া যায় কিনা। পাওয়া গেলেই সেই প্রাণী বা পশুর মাথা কর্তন করে আনতে।

মহাদেব’র আদেশে ওই বিশ্বস্ত সহচর সাথে সাথে রওনা দিলেন, সোজা উত্তর মুখী। অনেক দূর যেতেই উত্তর মুখী শুয়ে থাকা একটা হাতি দেখতে পেলেন। সাথে সাথে মহাদেবের ঘনিষ্ঠ সহচর হাতির দেহ থেকে মাথা কর্তন করে এনে ব্রহ্মার হাতে দিলেন। ব্রহ্মা তন্ত্রমন্ত্র যোগে ওই হাতির মাথা পার্বতীর আজ্ঞাবহ পুত্র গণেশের দেহে স্থাপন করলে। গণেশ হাতির মাথায় পুনঃজীবন লাভ করলেন। গণেশের জীবন ফিরে পাবার পর দেবতা ব্রহ্মা গণেশের দেহ থেকে ছিন্ন হওয়া মাথা আর হাতির দেহ একসাথে নির্দিষ্ট একস্থানে মাটিচাপা দিয়ে রাখতে বললেন। দেবতা ব্রহ্মার কথামতো ঠিক তা-ই হলো, তাই করলো।

তারপরও যখন পার্বতীর মনোকষ্ট তখনো দূর হচ্ছিল না। তা দেখে ব্রহ্মা পার্বতীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখনও রাগ কেন?’। উত্তরে পার্বতী বললেন, ‘গণেশ তো পুনঃজীবন লাভ করলো ঠিকই। কিন্তু গণেশের আসল মাথার বিহিত কী হবে, আর নিরীহ অবুঝ প্রাণী হাতির দেহের বিহিত কী হবে, তার একটা সুরাহা দরকার। আর গণেশের হাতির মাথা দেখে দেবকুলে ঘৃণার প্রাত্র যাতে না হয়, এই বিষয়গুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কিছুতেই আমার রাগ থামবে না।’
পার্বতীর কথা শুনে ব্রহ্মা ওই তিনটে বিষয়ের বিধান দিলেন, এরকম: (১) ❝গণেশের হাতির মাথা দেখে কেই ঘৃণা করতে পারবে না। গণেশ হবেন গণপতি। (২) সকল দেবতার পূজার আগে গণেশের পূজা করতে হবে। আর গণেশের আসল মাথাও বিফলে যাবে না। আসল মাথাও সকল দেবতার পূজার আগেই থাকবে। (৩) হাতির দেহও গণপতি গণেশের সাথেই থাকবে এবং সকল দেবদেবীর পূজার আগে গণেশের সাথেই পূজিত হবে।❞ সেই থেকে দেবকুলে আর সৃষ্টিকুলে সেভাবেই সেই বিধান মেনেই সকল দেবদেবীর পূজার আগে গণেশের পূজা হয়ে আসছে। একইভাবে দেবতা গণেশের আসল মাথা ও হাতির আসল দেহ পূজিত হচ্ছে।

গণেশ দেবতার মাথা নিয়ে এরকম আরও কাহিনী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে প্রচলিত আছে। তারমধ্যে একটি কাহিনী হলো, এরকম ↓↓↓

যেমন: ❝শনিদেব হলেন পার্বতীর ভাই। সেইমতে গণেশ হলেন শনিদেবের ভাগিনা। গণেশকে একনজর দেখে আশীর্বাদ দেয়ার জন্য পার্বতী ভাই শনিদেবকে কৈলাশে আসতে বললে, শনিদেব বললেন, ‘আমি ভাগিনাকে দেখলে ভাগিনার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই আমি ভাগিনাকে দেখতে যাবো না।’ এরপরও পার্বতীর বিশেষ অনুরোধে শনিদেব গণেশকে দেখতে কৈলাশে গেলেন, বোন পার্বতীর বাড়ি। বোনের বাড়ি গিয়ে ভাগিনাকে দেখামাত্র ভাগিনা গণেশের দেহ থেকে সাথে সাথে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অতঃপর উপরোল্লিখিত ব্রহ্মার আদেশের মতোই শনিদেব একই আদেশ দিলেন। সেই আদেশ মতে উত্তর মুখী শুয়ে থাকা একটা হাতির মাথা কর্তন করে দেবতা গণেশের দেহে স্থাপন করা হয়।❞

এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হলো, গণেশের আসল মাথা কোথায়, আর হাতির দেহ-ই-বা কোথায় এবং কীভাবে সকল দেবদেবীর পূজার আগে এই দুটোর (১) গণেশের আসল মাথা (২) হাতির দেহ’র পূজা হচ্ছে?

হ্যাঁ, হচ্ছেও ঠিক তা-ই। দেবতা ব্রহ্মার বিধান ঠিকঠাকমতো বলবত আছে। তা কীভাবে আছে? আছে এভাবে! উপরোল্লিখিত ↑↑↑ দেবতা ব্রহ্মা বিধান দিয়ে পার্বতীর রাগ থামিয়ে আরও বললেন, ‘এখন গণেশের আসল মাথা ও হাতির দেহ একসাথে একটা নির্দিষ্ট স্থানে মাটিচাপা দিয়ে রাখতে হবে। সেখান থেকে একটা নারিকেল গাছ সৃষ্টি হবে। সেই নারিকেল গাছের নারিকেল হবে গণেশের আসল মাথা। আর হাতির দেহও যখন মাটির সাথে মিশে যাবে, তখন পৃথিবীর সব স্থানের মাটির সাথেই মিশে যাবে। ওই মাটি দিয়ে মানুষ তৈরি করবে ঘট। এই ঘটই হবে হাতির দেহ। প্রত্যেক পূজার আগে দেবদেবীর মূর্তির সামনে ঘট স্থাপন করতে হবে।

images-3

সেই ঘটে থাকবে জল। এর উপরে থাকবে একটা আম্রপল্লব। তার উপরে থাকবে নারিকেল। তার উপরে থাকতে হবে একটা বস্ত্র। এই ঘট আর নারিকেল মিলেই হবে গণেশের মাথা আর হাতির দেহ। এই ঘটকে আগে পূজা দিয়ে প্রত্যেক দেবদেবীর পূজা শুরু করতে হবে । এছাড়াও বছরের প্রথম দিন যেমন:পহেলা বৈশাখ। এই দিন শুরু হবে গণেশ দেবতার পূজার মধ্যদিয়ে। সেই থেকে এখনও বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এইদিন বা বছর শুরু করে গনেশ পূজা দিয়ে।

তাহলে আমরা কী বুঝতে পারলাম? আমরা বুঝতে পারলাম যে, দেবতা গণেশের আসল মাথা হলো “নারিকেল”, আর হাতির আসল দেহটি হলো “ঘট”। নারিকেল, আম্রপল্লব, আর মাটির তৈরি ঘট মিলিয়ে হলো যেকোনো পূজার “মঙ্গলঘট”।

আশা করি এখন গণেশের আসল মাথা আর হাতির দেহ নিয়ে কারোর প্রশ্ন থাকতে পারে না।

ঘট, ঘটের উপরে আম্রপল্লব তার উপরে নারিকেল এবং বস্ত্রেরও একটা বিধান আছে। তা আর এই লেখায় আমি উল্লেখ করলাম না লেখার শব্দ সংখ্যা অধিকতর বেড়ে যাবার কারণে। আজ এখানে এ-পর্যন্তই।

সত্য মিথ্যার জয় পরাজয়

ffrt

সত্য কথায় জীবন যায়
যেতে হয় কারাগারে,
ন্যায়বিচার খুব কমই হয়
মিথ্যার জয় বিচারে।

মিথ্যে কথায় পুরস্কার মেলে
মেলে সম্মানী পদবী
জোর-জুলুমের হয় উন্নতি
পক্ষে থাকে দেবদেবী।

উচিৎ কথা বলতে মানা
বলতে গেলেই কিল,
সাথে থাকে লাত্থি গুতা
আরও থাকে ঢিল।

মিথাবাদীরা দেয় ধর্মের দোহাই
সেটাই শুনে সর্বজনে,
কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা
যাচাই করে কয়জনে?

.
নিতাই বাবু
১২/০৪/২০২৩ইং।

গরিবের পহেলা বৈশাখ

poh

কতো বৈশাখ আসে কতো বৈশাখ যে যায়,
পহেলা বৈশাখে ধনীরা ভালো খাবার খায়।
জানেন, পহেলা বৈশাখে গরিবরা কী খায়?
বারোমাস যা খায়, তা-ই খেয়ে বৈশাখ কাটায়!

যাদের আছে প্রচুর তারা খায় পান্তা-ইলিশ,
মোদের মতো গরিবেরা খায় পান্তা-কাঁচামরিচ।
অনেকেই খায় কোরমা পোলাও মাছ মাংস,
এই দুর্মূল্যের বাজারে গরিবরা হচ্ছে ধ্বংস!

বৈশাখের কতো আয়োজন নাচ-গানে ভরপুর,
গরিবের বারোমাসই দুঃখ অভাব হয়না তো দূর!
বৈশাখে ধনীর দুলাল পরে নতুন জামা-কাপড়,
গরিবের নতুন একটা জামা মানে মরণকামড়!

তবুও গরিবদের প্রার্থনা বৈশাখ আসুক বারবার,
হয়তো আগামী বৈশাখে ভালো কিছু হবে তার।
এবার নাহয় বৈশাখে অনন্দ-উল্লাস করুক ধনীরা,
পরের বৈশাখে গরিবেরা আনন্দে হবো দিশেহারা।

.
সবাইকে পহেলা বৈশাখের আন্তরিক শুভেচ্ছা!
শুভেচ্ছান্তে: নিতাই বাবু
১৪/৪/২০২৩ইং,
পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

মৃত্যুর কোলে

mmc

শিশু কালটাই ছিলো ভালো
থাকতাম মায়ের কোলে,
ছিলো না কোনও ভাবনা চিন্তা
থাকতাম হেসে খেলে।

যখন একটু হাঁটতে শিখলাম
হাঁটি হাঁটি পায়ে,
দুষ্টুমি-টা বেজায় বাড়লো
সারা পাড়া গাঁয়ে।

আরেকটু যখন বড় হলাম
তরতাজা এক কিশোর,
তখন কী-আর থাকতাম বাড়ি
মাঠেই হতো ভোর।

কিশোর থেকে যুবক যখন
যৌবন দেখা দিলো,
যৌবনের আগুনে জ্বলে পুড়ে
সব হলো এলোমেলো।

জীবনসঙ্গী ঘরসংসার সবই হলো
হলো সন্তানাদি কতো,
হোঁচট খেলাম বার্ধক্যের টানে
জন্মদানকারী মা-বাবার মতো।

অবশেষে মায়ামমতা ছিন্ন করে
থাকলাম মৃত্যুর কোলে,
মৃত্যুই আমায় নিয়ে গেলো
ঐ পরপারে চলে।

.
নিতাই বাবু
১১/০৪/২০২৩ইং।

আদরের পুসি ও হিন্দুধর্মে বিড়াল সমাচার

n01

ছোটবেলা থেকেই কুকুর, বিড়াল, গরু-ছাগল ভালোবেসে আসছি। এই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত নয়, ঘরের জায়-জিনিস নষ্ট করে ফেলা ইঁদুরও। সময় সময় দুপুরে আর রাতে ভাত খেতে বসলে নিজে খাবার মুখে দেয়ার আগে ঘরের ইঁদুরের জন্য একমুঠো ভাত এক কোণে রেখে দিই। রাতে সবাই ঘুমিয়ে থাকলে ওই একমুঠো ভাত ঘরে উত্তাপ করা ইঁদুরগুলো মিলেমিশে সাবাড় করে ফেলে। আবার রাস্তার একটা কুকুর সামনে আসলে ওকে কিছু খাবার কিনে দিই, কুকুরটা মনের আনন্দে লেজ নেড়ে খায়। একটা বিড়াল সামনে আসলে ওকেও খাওয়াতে মন চায়। কারোর গরু-ছাগল দেখলে সামনে গিয়ে আদর করি, মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। কিন্তু দুঃখের কথা হলো মনের ভেতরে এসব পশু-পাখির বিস্তর ভালোবাসা থাকলেও নিজের বাড়ি-ঘর না থাকার কারণে মনের শখ মনে ভেতর রেখেই চলতে হয়। তারপরও মাঝেমাঝে শত ঝামেলা উপেক্ষা করে ভাড়া বাসায় কুকুর-বিড়াল পুষতে থাকি।

এইতো কয়েক বছর আগে ২০১৬ সালে শখের বশে একটা কুকুর ছানা বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম, ওটাকে পুষবো বলে। কুকুর ছানাটির নামও রেখেছিলাম “ধলু”। কিন্তু নিজের ধর্ম হিন্দু বলে কথা। কুকুর ছানাটি বাসায় নেয়ার পর নিজের সহধর্মিণীর সাথে লেগে গেলো কথা কাটাকাটি, আর হট্টগোল! ছিছিছি, রামরাম, হায় ভগবান হায় ভগবান! তারপরও দমে যাইনি। শেষমেশ ভাড়া বাড়ির আরও আরও ভাড়াটিয়াদের নানা কথা সহ্য করতে না পেরে ধলুকে আর নিজের কাছে রাখতে পারিনি। শেষাবধি ৭দিন পর ধলুকে ধলুর মায়ের কাছেই পৌঁছে দিতে হয়েছিল। তারপর ধলু একসময় অনেক বড় হয়ে গেলেও ওর প্রতি আমার ৭ দিনের ভালোবাসা কিছুতেই ধলু ভুলতে পারেনি। দিনরাত ধলুর ডিউটি ছিলো আমার দেখাশোনা। এভাবে কেটে গেলো প্রায় চারবছর।

n02
আমার আদরের কুকুর ‘ধলু’ এখন পরপারে।

একদিন আমি আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি সপরিবারে বেড়াতে গেলে সেখানে থাকতে হয় ১৫ দিন। এই দিনেক ১৫ দিনই ধলু আমাকে না দেখে খাওয়া-পিনা বাদ দিয়ে শুধু আমার আশায় রাস্তার দিকে চেয়ে থাকতো। এই ১৫ দিন ধলুকে অনেক মানুষে অনেক খাবার কিনে দিয়েছিল। কিন্তু ধলু কারোর কিছুই মুখে দেয়নি। অবশেষে ধলু না খেয়ে থাকতে থাকতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তারপর চিত্তরঞ্জন গুদারা ঘাটের কিছু মাঝি মিলেমিশে ধলুকে শীতলক্ষ্যার মাঝ নদীতে ফেলে দেয়। আমি আত্মীয়ের বাড়ি থেকে এসে ধলুকে দেখতে গুদারা ঘাট গেলে ধলুর মৃত্যুর খবর শুনে রীতিমতো কেঁদেই ফেললাম। তারপর দুচোখের জল ফেলতে ফেলতে বাসায় ফিরে যাই। সেই শোকে আর কখনো কুকুর বিড়াল পুষবো না বলে মনস্থির করি। কিন্তু না পারলাম না। ইদানীং আমাকে একটা বিড়াল ছানার প্রেমে পড়তেই হয়েছে।

গত কয়েক মাস আগে বিড়াল ছানাটি আমার বাসায় ঢোকে। তখন রাত নয়টা। আমিও কর্ম ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরি। বাসায় ফিরে দেখি বাসার সামনে আমার সহধর্মিণী-সহ ভাড়া থাকা বাড়ির আরও আরও মহিলারা জড়ো হয়ে আছে। তা দেখে আমি একটু তাড়াতাড়ি করেই বাসার সামনে গেলাম। বাসার সামনে গিয়ে আমার গিন্নীকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঘটনা কী?’
বললো, “দেহ না বিলাইর বাচ্চাটা খালি আমগো বাসায় ঢুকে। এডারে খেদাইয়া দিলেও যায় না, আবার মে মে কইরা বাসায় ঢুকে। এডারে ধইরা বাড়ির বাইরে দিয়া আহ।”
আমি আমার সহধর্মিণী বা গিন্নীর কথায় কান না দিয়ে বিড়াল ছানাটিকে কোলে তুলে নিয়ে বাইর থেকে ঘরের ভেতর চলে গেলাম। তা দেখে আমার গিন্নী তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে বললো, “হায় ভগবান, কারে কি কইলাম? হেরে কইলাম বাইরে নিয়া ছাইড়া দিতে, আর হে কোলে তুইলা ঘরে আনছে।”
আমি গিন্নীর কথার উত্তর না দিয়ে বিড়াল ছানাটিকে বললাম, ‘আমিতো তোমাকেই খুঁজতেছিলাম। গত রাতে আমি তোমারে স্বপ্নে দেখছি।’
আমার এই কথা শুনে আমার ধার্মিক গিন্নী সামনে এসে বললো, “হাচাই কইছ? হাচাই স্বপ্নে দেখছ?”
বললাম, ‘মিথ্যা কিছু বলিনাই। যা সত্য তা-ই বলছি। ও আজ থেকে আমার ঘরেই থাকবে। যার যার ভাগ্যে যা আছে তা-ই হয়। আমি খাইলে, ও-ও খাবে।’
এসব বলার পর আমার গিন্নী আর কোনকিছু না বলে শুধু বললো, “হাগলে মুতলে আমি ছাপ করতে পারুম না। ওইসব তোমারই করন লাগবো। বুইঝা নিয়েন।”
বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। ওর যা যার করা লাগে, আমি নিজেই করবো। এটার জন্য তোমার কিছু ভাবতে হবে না। তুমি নিশ্চিন্তায় থাকতে পার।’

n03

তারপর দিন বিড়াল ছানাটির কি নাম রাখা যায়, তা নিয়ে গিন্নীর সাথে বৈঠক করলাম। আমি নাম রাখতে চেয়েছিলাম কুকুর ধলুর নামের সাথে মিলিয়ে ‘ধলি’। আমার গিন্নী ভেটো দিয়ে সেই নাম ক্যান্সেল করে গিন্নী আর আমার বড় নাতিন দুইজনে মিলে নাম রাখলো, ‘পুসি’।
বৈঠকে সেই নামই পাস হলো। সেই থেকে বিড়াল ছানাটি ভাড়া বাড়ির সবার কাছে এখন পুসি নামে বেশ পরিচিত। এর চারদিন পর একদিন আচমকা ‘পুসি’ বিছানায় পায়খানা করে ফেলে। এই পায়খানা নিয়ে ঘটে গেলো তেলেসমাতি কারবার। পায়খানা পরিস্কার করা নিয়ে কথা কাটাকাটি, রাগারাগি, লাফালাফি-সহ আরও অনেককিছু। শেষাবধি আমার ধার্মিকের সহধর্মিণী নিজেই ‘পুসি’র পায়খানা পরিস্কার করে বিছানার চাঁদর ধুয়ে দেয়। কিন্তু গিন্নির মনের ভেতরে থেকে যায় ভীষণ ক্ষোভ। সেই ক্ষোভ কাজে লাগায় পরদিন রাতে।

ঘটনাটা ঠিক রোজা শুরু হবার দুইমাস আগে। এই দিনগত রাত তখন প্রায় তিনটা। আমি তখন ঘুমে বিভোর। আমি পরম শান্তিতে যখন নাক টেনে ঘুমাচ্ছিলাম, আমার গিন্নী তখন ‘পুসি’কে ঘরের বাইর করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ‘পুসি’ তখন আমার পাশেই আমার মতো ঘুমে বিভোর। আমার গিন্নী মায়াদয়া ধূলিসাৎ করে ‘পুসি’কে টেনে নিয়ে ঘরের বাইরে ছেড়ে দিয়ে, ঘরের দরজা বন্ধ করে, বিছানায় এসে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পর ঘরের দরজায় মানুষের দেয়া টোকা। দরজায় টোকা কে-না-কে দিয়ে মা মা বলে ডাকছে। আমার গিন্নী দরজায় টোকার শব্দ আর মা মা ডাক শুনতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে ঘরের ভেতর থেকে বলছে, “এই তুমি কে? কিল্লাইগা মা মা কইয়া ডাকতাছ?”
ঘরের বাইর থেকে উত্তর এলো, ‘মা আমি তপন (মানে আমার মৃত ছেলে তপন)। বিড়ালডা কানতাছে। ওরে ঘরে লইয়া যাও।’ আমার গিন্নী নিজের মৃত ছেলের কণ্ঠস্বর শুনে আবারও জিজ্ঞেস করলো, “কেডা তুমি?” আবার উত্তর এলো, ‘মা আমি তপন। বিলাইর বাচ্চাডা ঘরে নিয়া যাও। ও খুব কানতাছে।’
আমার গিন্নী তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ঘরের দরজা খুলে কাউকে দেখতে পেলো না। দেখল পুসি দরজার সামনে বসে বসে মে মে করছে। পুসি মে মে করতে করতে এক লাপে ঘরে ঢুকে গেলে আমার গিন্নী ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর গিন্নী কাঁপতে কাঁপতে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার গিন্নী থরথর করে কাঁপছে! জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে? কাঁপছো কেন?’
আমার গিন্নী কাঁপতে কাঁপতেই ঘটনার বিবরণ খুলে বললো। আমি শুনে বললাম, ‘তাহলে তুমি পুসি’কে ঘরের বাইরে এতো রাতে ছাড়লে কেন?’ প্রশ্নের উত্তর আর মিললো না। এরপর থেকে আমার গিন্নী অন্তত পুসি’কে নিয়ে আর কোনপ্রকার অভিযোগ করেনি। বরং সকাল-সন্ধ্যা পুসি’কে নিজের কোলে-কাঁখেই রাখে। সময়মতো খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়, আদরযত্নও ঠিকঠাকমত করতে থাকে।

n04
দোলপূর্ণিমার দিন পুসিকে নিয়ে বাড়ির সবাই রং খেলায় মেতে ওঠে।

এ-র মাঝে একদিন আমার বড় নাতিন পুসি’কে নিয়ে খেলতে থাকে। হঠাৎ মনেহয় পুসি’র অজান্তেই পুসি’র পায়ের নখের আঁচড় নাতিনের হাতে লাগে। সাথে সাথে নাতিনের হাত থেকে আঁচড়ের স্থান থেকে রক্ত বের হতে থাকে। আমি তখন আমার কর্ম ডিউটিতে ব্যস্ত! বাসায় এসে দেখি নাতিনের হাতের অবস্থা। গিন্নীও রেগে-মেগে অস্থির হয়ে বলতে লাগলো, “আমার নাতিনের যদি কিছু হয়, তাহলে বুঝে নিয়েন। তাড়াতাড়ি নাতিনকে নিয়ে হাসপাতালে যাও। জলাতঙ্ক ইনজেকশন দিয়া নিয়া আসো”। গিন্নীর রাগারাগি আমার আর সহ্য হলো না। সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিলাম। ডাক্তার বললো, ‘কিছুই হবে না ঠিক, কিন্তু মন থেকে তো আর ভয় দূর হবে না, দাদা। তাই হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্ক রোগের ইনজেকশন দিয়ে আনেন।
তা-ই হলো। প্রায় ৬০০ টাকার মতো খরচ হলো। তারপর আর যাতে কেউ পুসি’র আঁচড় কামড়ের শিকার হয়ে জলাতঙ্ক আর ধনুষ্টংকার রোগ নিয়ে চিন্তিত না করে, তারজন্য পুসি’কে উপজেলা পশু হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্ক, ধনুষ্টংকার প্রতিরোধক ইনজেকশন দিয়ে আনি।

এখন পুসি আগের চেয়ে অনেক বড় হয়েছে। পুসি এখন ঘরে মলমূত্রও ত্যাগ করে না। কোথায় করে তা-ও কেউ দেখে না। আমি দু-এক দিন ওর মলমূত্র ত্যাগ করার দৃশ্য দেখেছিলাম। এখন আর আমি নিজেও দেখি না। কিন্তু ওর মলমূত্র ত্যাগ করার সময় হলে ঘরের সবাই টের পেয়ে থাকি। ঘর বন্ধ থাকলে পুসি ঘরের বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে মে মে করতে থাকে। দরজা খুলে দিলেই দে দৌড়। কাজ সেরে আবার নিজে নিজেই ঘরে ফিরে আসে।

আমি দুপুরের বাসায় গিয়ে যদি দেখি যে, পুসি ঘরে নেই। তারপর আমি পুসি পুসি বলে ডাকলেই পুসি যেখানেই থাকুক-না-কেন, আমার সামনে এসে হাজির হয়। রাতে পুসি আমার সাথেই ঘুমিয়ে থাকে। আমাকে ছাড়া অন্যকোনো জায়গায় পুসি রাতে ঘুমায় না। পুসি আমাদের মতো দিনে তিন-চার বেলা খায়। ওর খাবার হলো, মুরগির আঁতুড়ি-ভুঁজড়ি। পুসি’র জন্য এগুলো আমাকেই সংগ্রহ করে রাখতে হয়। আমি ডিউটি থেকে বাসায় আসতে পরিচিত মুরগির দোকান থেকে কেজি খানেক আঁতুড়ি নিয়ে আসি। এরপর ওই আঁতুড়িগুলো কেচি দিয়ে কুচিকুচি করে কেটে ফেলি। তারপর ঐগুলা ভালো করে ধুয়ে হালকা পানি আর অল্প লবণ দিয়ে সিদ্ধ করি। সিদ্ধ হয়ে গেলে পানি ছেঁকে কাটা আঁতুড়িগুলো ঠাণ্ডা করে পুসিকেও কিছু খেতে দিই, বাদবাকি সিদ্ধ আঁতুড়িগুলো ফ্রিজে রেখে দিই। তারপর থেকে পুসি’কে দিনে তিন-চারবার ওই আঁতুড়ি-ভুঁজড়িগোলো খেতে দিলে পুসি মনের আনন্দে লেজ নেড়ে পেটভরে খায়। তাছাড়াও ঘরে রান্না করা মাছ মাংস তো মাঝেমধ্যে থাকেই।

বর্তমানে এভাবেই চলছে পুসি’র দৈনন্দিন জীবন। পুসি’র বিরুদ্ধে এখন আর ঘরে বাইরে কারোর কোনও অভিযোগ নেই। পুসি এখন আমাদের ভাড়া বাড়ি-সহ আশেপাশে আরও বাড়ির সব ছেলে-বুড়োদের আদরের পুসি। যে-না-কেউ এখন পুসি’কে দেখলে কোলে নিতে চায়। আর বাড়ির ছোটছোট ছেলে-মেয়েদের তো খেলার বস্তু হয়ে উঠেছে, আমাদের আদরের পুসি। পুসি এখন মাঝেমধ্যে দু’একটা শিকারও করে দেখাচ্ছে।

ইদানীং পরপর দুটো ইঁদুরের বাচ্চা শিকার করে ফেলেছে। পুসি’র এই শিকার নিয়ে ঘরের গিন্নীর মাঝে একরকম তৎপরতাও দেখা দিয়েছে। এর কারণ হলো, পুসি’র আগমনের আগে ঘরে বাস করা ইঁদুরগুলোকে সকাল-বিকাল খাবার দিয়ে রাখতো। এর ফলস্বরূপ: ঘরে উৎপাত করা ইঁদুরগুলো ঘরের কোনও কাপড়চোপড় কেটে বিনাশ করতো না। এখন পুসি ঘরে থাকার কারণে ঘরের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা ইঁদুরগুলো কোথায় যেন গা-ঢাকা দিয়েছে। তা নিয়ে গিন্নী অনেক সময় আক্ষেপ করে বলে, “আগে সবসময় ইন্দুর দেখা যাইত। অহনে পুসি আহনে ইন্দুর আর চোখে পড়ে না। এতগুলা ইন্দুর কই গেলোগা?”
আবার মাঝেমধ্যে পুসি’কে কোলে নিয়ে গিন্নী বলে, “পুসি ইন্দুরগুলা মারিস না। এগুলা ঘরের ক্ষতি করে না।”

গিন্নীর কথায় পুসি কি বুঝল আর কি না বুঝল জানিনা। তবে এপর্যন্ত আর ঘরের ইঁদুর পুসি’কে মারতে ধরতে দেখিনি। এমনিতেই পুসি অনেক কথাই বুঝে। যেমন কারোর ঘরে যেতে বারণ করলে পুসি আর সে ঘরে যায় না। আবার ধমক দিলে চুপ করে বসে থাকে। চোখ বড় করে ধমক দিলে দৌড়ে ঘরের খাটের নিচে গিয়ে পালায়। সময়-সময় পুসি আহ্লাদ করে গিন্নীর হাতে কামড় দিতে চাইলে, গিন্নী আস্তে করে থাপ্পড় মারলে দ্বিতীয়বার কামড়াতে চায় না। বাড়ির কাউকেও আঁচড় কামড় দেয় না। তবে ঘরে বাইরে দৌড়াদৌড়ি নাচানাচি একটু বেশি করে। সময়-সময় ঘরের তাকে থাকা ডিব্বা-ডাব্বি ফেলে দিয়ে খেলতে থাকে। তা দেখে গিন্নী পুসি’কে ধমক দেয়, মারতেও চায়। কিন্তু পুসি যত দুষ্টুমিই করে থাকুক-না-কেন পুসি-কে মারা যাবে না। এটা আমার বারণ আছে। এর কারণ হলো, পুসি হলো বিড়াল। আর বিড়াল হলো মা ষষ্ঠী দেবীর বাহন, তাই।

পুসি ঘরে আসার পর গিন্নীর ছিছিছি, রাম রাম, হায় ভগবান হায় ভগবান শব্দ শুনে আমি রীতিমতো একটু বিরক্ত হয়েছিলাম। তারপর নেট ঘেঁটে বিড়াল বিষয়ে একরকম তথ্য জোগাড় করলাম। তথ্য সংগ্রহ করে আমার গিন্নীর ছিছিছি, রাম রাম, হায় ভগবান হায় ভগবান বন্ধ করার জন্য মা ষষ্ঠী দেবী ও ষষ্ঠী দেবীর বাহন বিড়াল নিয়ে একটা কাহিনী আমার গিন্নীকে শোনালাম।

n05
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

ষষ্ঠী দেবী ও ষষ্ঠী দেবীর বিড়াল কাহিনী নিম্নরূপ:
❝হিন্দু ঘরের মায়েদের বড়ো প্রিয় দেবী হলো, মা ষষ্ঠীদেবী। তিনি সারা বছর ঘরের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ভালো রাখেন। আর সেজন্য মায়েদের কাছে মা ষষ্ঠীর এতো কদর। শিশু জন্মানোর ষষ্ঠ দিনে মা ষষ্ঠীর পুজোর আয়োজন করা হয় গৃহস্থ বাড়িতে। পুজোর উপচারের মধ্যে আবশ্যিকভাবে থাকে দোয়াত-কলম। দিনের বেলায় পুরোহিত ষষ্ঠীপুজো করে চলে যান। আর এদিন স্বয়ং বিধাতা পুরুষ নাকি রাতের বেলায় অলক্ষ্যে এসে শিশুর কপালে লিখে দিয়ে যান তার ভূত-ভবিষ্যৎ।
এই মা ষষ্ঠীর বাহন হলো বিড়াল। ঘর থেকে বিড়াল যতই মাছ চুরি করে খেয়ে যাক, বিড়াল মারা যাবে না। কারণ, মা ষষ্ঠীর কোপ পড়বে। এতএব বিড়াল পাতের মাছ খেয়ে যাক্, অসুবিধে নেই।❞

বিড়াল নিয়ে আরেকটি বিধিনিষেধ আছে। বিড়াল রাস্তা পার হলে আর যাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না কেউ এসে সে রাস্তা পেরোচ্ছে। কাজেই ট্র‍্যাফিক পুলিশ কোনো গাড়িকে থামাতে না পারলেও বিড়াল কিন্তু থামিয়ে দেয়।❞

❝ভারতীয় আয়ুর্বেদ মতে, আসলে মেয়েদের বাধক রোগের নাম হলো “ষষ্ঠী।”
আয়ুর্বেদ গ্রন্থ “বৈদ‍্যামৃত” অনুসারে— –
“নেত্রে হস্তে ভবেৎ জ্বালা কোনো চৈব বিশেষত:।
লালা সংযুক্ত রক্তঞ্চ ষষ্ঠী কা বাধক: স্মৃত:।
মানদ্বয়ং এয়ং বাপি ঋতুহীনা ভবেৎ যদি।
কৃশাঙ্গী ষষ্ঠীদোষেণ জায়তে ফলহীনতা।”
চোখে-হাতে জ্বালা, ঋতু: স্রাব অপরিস্কার, বাধক ব‍্যাধিগ্রস্থা সন্তানহীনা নারী ষষ্ঠীরোগিণী।
এর ওষুধ বলা হচ্ছে প্রাচীন কবিরাজী গ্রন্থ “ক্রিয়াকৌমুদী” -র পাতায়—
“পূটদগ্ধ মার্জারসস্থ মেষশৃঙ্গী বচা মধু।
ঘৃতেন সহ পাতব‍্যং শূলং বন্তি ঋতুদ্ভবং।”
অর্থাৎ, ধোঁয়ায় দগ্ধ বিড়ালের হাড়, মেষশৃঙ্গী, বচ ও মধু সমপরিমাণে নিয়ে ঘিয়ের সঙ্গে চেটে খেলে মেয়েদের ঋতুকালীন যন্ত্রণা দূর হয়।❞ ❝তথ্য সংগ্রহ ইন্টারনেট।❞

❝হোমিওপ্যাথি ওষুধ মেফাইটিস্ বিড়াল থেকেই তৈরি হয়, যা মেয়েলি রোগে ব‍্যবহৃত হয়।❞
❝তাছাড়া আয়ুর্বেদ মতে, বাধক ব‍্যাধিগ্রস্থা নারীদের বিড়াল স্পর্শ ফলদায়ক। এতে গর্ভাশয়ে আটকে থাকা ঋতু: স্রাব স্বাভাবিক হয়ে যায়।❞
❝ডিপথেরিয়া রোগ সৃষ্টি করলেও বিড়ালের মধ্যে রয়েছে নারীকে প্রজননক্ষম করে তোলার শক্তি।❞

এসবের জন্যই বিড়াল হয়ে গেছে মা ষষ্ঠীর বাহন‌। তাই হিন্দুদের বিশ্বাস বিড়াল গৃহস্থের বাড়ি বা ঘরে যতই উৎপাত করুক-না-কেন, বিড়ালকে আঘাত করা যাবে না। আর কোনও হিন্দু গৃহস্থের বাড়ি পালিত বিড়াল যদি মারা যায়, তাহলে সেই মৃত বিড়াল সাধু-বৈষ্ণব মারা গেলে যেভাবে সমাধিস্থ করা হয়, সেইভাবেই বিড়ালকে সমাধিস্থ বা কবরস্থ করতে হবে। এটা মা ষষ্ঠী দেবীর বাহন বিড়াল, তাই।

1680967908525
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

হিন্দু ধর্মে জামাই ষষ্ঠী প্রসঙ্গ:
❝জামাই ষষ্ঠী প্রসঙ্গে একটি কাহিনিও প্রচলিত আছে, হিন্দু সমাজে। কথিত রয়েছে, এক গৃহবধূ স্বামী গৃহে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে বার বার দোষ দিতেন এক কালো বিড়ালের ওপর। এর প্রতিশোধ নিতে ছোট বউয়ের বাচ্চা হলেই ওই কালো বিড়ালটি তার সন্তান তুলে লুকিয়ে মা ষষ্ঠীর কাছে দিয়ে আসে। গৃহবধূ তা জানতে পেরে ষষ্ঠী দেবীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, সে আর কখনো বিড়ালকে মিথ্যা অপবাদ দিবেন না। গৃহবধূর সেই প্রার্থনা মা ষষ্ঠীদেবী শুনলেন। প্রার্থনা শুনে মা ষষ্ঠীদেবী দুই শর্তে তাকে ক্ষমা করেন বলে আশ্বাস দেন।
প্রথম শর্ত হলো, “শুক্ল ষষ্ঠীর দিনে তার পুজো করার আদেশ দেন তিনি।”
দ্বিতীয় শর্ত হলো, “বিড়ালকে তার বাহন হিসেবে সম্মান জানানোর কথা বলেন।”
তারপর ষষ্ঠী দেবীর আরাধনা শুরু করেন ওই গৃহবধূ৷ দেবী তুষ্ট হলে গহীন বনেই সে নিজের সন্তানকে ফিরে পায়। এই জন্যই ষষ্ঠী দেবীর অপর নাম হলো, “অরণ্যষষ্ঠী।”

অন্য দিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ওই গৃহবধূর পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল মা-বাবা ষষ্ঠীপুজোর দিনে জামাইকে নিমন্ত্রণ জানান। ষষ্ঠী পুজোর দিনে স্বামীর সঙ্গে নিজের বাপের বাড়ি যান ওই মেয়েটি। তার পর থেকেই ষষ্ঠীপুজো পরিণত হয় জামাই ষষ্ঠীতে❞।

সভ্য যুগে ত্রাসের রাজত্ব

299

সভ্য যুগের সভ্য মানুষ
স্বার্থের ধান্দায় থাকে বেহুশ,
মন্দের কদর ভালোর দোষ
ধর্মের বাণীতেও হয়না হুঁশ!

ধর্মের বাণী করে শ্রবণ
করে না কেউ দুষ্টের দমন,
পুণ্যের আশায় তীর্থে গমন
ফলায় না সভ্যতার ফলন।

সভ্য যুগে অসভ্যের শক্তি
দুষ্ট লোকদের করে ভক্তি,
জ্ঞানী লোকের খণ্ডন যুক্তি
কী করে আর মেলে মুক্তি?

সভ্য যুগের দেশ-বিদেশে
অসভ্য সভ্যতার সাথে মিশে,
অশিক্ষিত থাকে শিক্ষিত বেশে
ত্রাসের রাজত্ব দেশে-দেশে।

জন্ম ধর্ম কর্ম

30fg

জন্ম সবার একইভাবে, ধর্ম ভিন্ন-ভিন্ন,
কর্মও ভিন্ন, তবুও কেউ ধন্য কেউ নগন্য।

কর্ম যার ভালো, ভাগ্যও হয় ভালো,
যদিও হয় কালো, জ্ঞানে বাড়ায় আলো।

মাথার মগজ একইরকম, জ্ঞান হয় ভিন্ন,
কেউ হয় সভ্য মানুষ, কেউ আবার বন্য।

জন্ম, কর্ম, ধর্ম, ভিন্ন-ভিন্ন মতান্তর,
এভাবেই চললে জগৎ, চলবে যুগযুগান্তর।