নিতাই বাবু এর সকল পোস্ট

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

অল্পতে হও খুশি!

298

হরি বলে হরি, আমি ক্ষুধায় মরি!
দাও কিছু মোরে, পেটখানা ভরি।

হরি বলে হায়, বলি যে তোমায়,
কর্ম দোষে মরে ক্ষুধার জ্বালায়!
যার যার ভাগ্য কর্মতেই বদলায়,
কর্মতেই শাস্তি ভোগ কড়ায় গণ্ডায়।

হরি বলে হরি, বুঝতে না পারি,
অভাবে স্বভাব নষ্ট, নিজে কি করি।

হরি বলে শুনো, নেইতো অভাব,
শুধু অভাব,অভাব, এটা স্বভাব!
আছে প্রচুর, তবুও অভাবী ভাব,
অল্পতে হইও খুশি, গুছবে অভাব।

হরি বলে হরি, যদি যাই মরি,
বলবো না কবু আর ক্ষুধায় মরি।

মায়ের কোল বাবার আদর

299

মায়ের কোলে নিরাপদে
থাকতাম চুপটি করে,
সেই নিরাপদ হলো মাটি
মা যখন মরে।

বাবার সাথে ঘুরতে যেতাম
বাবার কাঁধে চড়ে,
সেই আনন্দ হলো মাটি
বাবা যখন মরে।

মনের ভাবনা

298

আমি মজুর আমি গরিব আমি চির দুখী,
সারাদিনে একবেলা খাই তাতেই আমি সুখী।
নাইবা থাকুক টাকা-পয়সা প্রচুর ধনসম্পত্তি,
দিবারাত্রি খেটে মরি তবুও নেই কোনও আপত্তি।

খাই-বা-না খাই তবুও আছি অনেক ভালো,
যদি থাকতে ধনসম্পত্তি ছড়িয়ে দিতাম আলো।
সেই আলোতে আলোকিত হতো লোকসমাজ,
কেউবা হতো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কেউবা মহারাজ।

সুখী জীবনে দুঃখ আমার নেই তো টাকা কড়ি!
থাকতো যদি বিলিয়ে দিতাম অর্থ কাড়ি-কাড়ি।
অর্থ নেই মোর মনটা আছে দেবার সামর্থ্য নাই,
নিজেরই নাই জমিজমা তবুও বিলিয়ে দিতে চাই।

প্রাণঘাতী হামলার মুখে যেসমস্ত রাষ্ট্রনায়ক প্রাণ হারিয়েছেন

294

একটা দেশের রাষ্ট্রনায়ক মানেই অনেক অনেক ক্ষমতার অধিকারী। এককথায় বলতে গেলে রাষ্ট্রনায়ক হলেন গোটা একটা দেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এতো এতো ক্ষমতার অধিকারী হওয়া স্বত্ত্বেও কখনও-কখনও তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন আততায়ীর কাছে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও কিছুই করার থাকে না ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নায়কদের।

তো এই পৃথিবীতে সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে এ যাবত কাল পর্যন্ত যেসব রাষ্ট্রনায়ক আততায়ীর কাছে হার মেনেছিল, সে সকল রাষ্ট্রনায়কদের একটা ছোট তালিকা দেখানো হলো।

১.
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নং বাড়িতে কিছু উশৃংখল সেনাবাহিনীর সদস্যরা সপরিবারে তাঁকে হত্যা করে।

২.
বাংলাদেশের ৮ম রাষ্ট্রপতি ছিলেন, জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল অফিসার কর্তৃক তিনি নিহত হন।

৩.
ভারতের জাতির পিতা ছিলেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারিতে রাজধানী দিল্লির এক সন্ধ্যাকালীন প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁকে পর পর তিনটি গুলি করে হত্যা করেন, এক হিন্দুত্ববাদী।

৪.
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তাঁর সফদরজং রোডের বাসভবনের বাগানে হাঁটছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা। বাড়ি থেকে এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিতে তাঁর আকবর রোডের অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ঠিক সেই সময়েই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান তাঁর রক্ষীরা।

৫.
আব্রাহাম লিঙ্কন ছিলেন আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট। তাঁকে ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল, একটি থিয়েটারে মাথার পিছন থেকে গুলি করে খুন করেন আততায়ী। সন্ধে ৬টা নাগাদ লিঙ্কনের উপর হামলা হয়। পরের দিন সকাল ৭টায় মৃত্যু হয় তাঁর।

৬.
১৮৯৪ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মারি ফ্রাসোঁয়া সাদি কার্নটকে ছুরি মেরে খুন করা হয়। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট কার্নট তখনও সাত বছর পূর্ণ করেননি। অথচ এরই মধ্যে জনতার বিপদে-আপদে তাঁর যথা সময়ের উপস্থিতি তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। লোকের মুখে মুখে কার্নটের সততা, নীতিপরায়ণতার কথা। সেই সময়েই একটি জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে খুন হন কার্নট।

৭.
পাকিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। ১৯৮৮ এবং ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। মাঝে প্রায় ন’বছর আড়ালে থেকে আবার ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন ভুট্টো। ঠিক করেন নির্বাচনে লড়বেন। প্রচারও শুরু করে দেন। কিন্তু ভোটের ঠিক দু’সপ্তাহ আগে একটি জনসভায় হত্যা করা হয় ভুট্টোকে।

৮.
রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ছিলেন প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর বড় ছেলে। তিনি রাজীব গান্ধী ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁকে হত্যা করা হয় ১৯৯১ সালের ২১ মে। রাজীব তখন ভোটের প্রচারে দক্ষিণ ভারতে। তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমবুদুরে একটি জনসভা ছিল। সভাস্থলে পৌঁছে বুলেটপ্রুফ গাড়ি থেকে নেমে ডায়াসের দিকে এগোচ্ছিলেন রাজীব। একের পর এক শুভার্থীরা মালা পরিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁক। শুভেচ্ছা জানিয়ে পা ছোঁওয়ার পরই কোমরে বাঁধা আরডিএক্স বেল্টে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান। ঠিক ১০টা বেজে ১০ মিনিটে। সাথে সাথেই প্রাণ হারায় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী।

৯.
আমেরিকার ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যা করা হয় ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর ডালাসে। হুড খোলা গাড়িতে সওয়ারি ছিলেন সস্ত্রীক প্রেসিডেন্ট। তাঁর হন্তক লি হার্ভে ওসওয়াল্ড রাস্তার ধারের একটি বাড়ির ছ’তলা থেকে প্রেসিডেন্টের মাথা লক্ষ্য করে তিনটি গুলি চালান।
লেনিনের ভাবশিষ্য ছিলেন মার্কসবাদী বিপ্লবী লিওন ট্রটস্কি। তিনি ছিলেন রুশ বিপ্লবের প্রথম সারির নেতা। ১৯৪০ সালের ২১ অগস্ট তাঁকে হত্যা করা হয়।

১০.
মার্টিন লুথার কিং ছিলেন আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট মন্ত্রী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার গণআন্দোলনের নেতা ছিলেন মার্টিন। ভারতের মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে মার্টিনকে সামনে থেকে গুলি করে খুন করা হয়।

১১.
আধুনিক বিশ্বে সর্বশেষ রাষ্ট্রনায়ক হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয় জাপানে। ২০২২ সালের ৮ জুলাই জাপানের প্রাক্তন এবং দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রীর শিনজো আবেরও সম্ভবত তা-ই হল। শিনজোকে হত্যা করলেন টেটসুয়া ইয়ামাগামি। যিনি নিজের বয়ানে জানিয়েছেন, শিনজোর কাজে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই তাঁকে হত্যা করা হয়।

এতেই বোঝা যায় যে, এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই অনিশ্চিত! কেবল জীবের মৃত্যুর নিশ্চিত।

নিদারুণ অসহায়

2906

ভয় ভয় মন
ভাবি বসে সারাক্ষণ,
কী যেন হয় কখন
কথা বলি যখন।

কথা বলি কম
পেছনে দাঁড়িয়ে যম
কান খাড়া হরদম
উল্টা-পাল্টা হলেই খতম!

ধর্ম অবমাননার অজুহাত
খুঁজে বেড়ায় দিনরাত,
ধর্মের গেলো জাত
ধর মার বেজাত।

তাই মনে ভয়
কখন যে কী হয়,
কেউ যদি কিছু কয়
ভেবেচিন্তে বলতে হয়।

এ-কী নিদারুণ অসহায়
মানবতা গেলো কোথায়,
জবরদস্তি চাপিয়ে মাথায়
ধর-মার কথায় কথায়!

স্মৃতির আল্পনা

2899

কোথায় যে হারিয়ে গেলো
সেই সোনালী দিন,
ঝোলাবাতি গোল্লাছুট খেলা খেলে
কেটে যেতো সারাদিন।

বিকালে আমরা জড়ো হতাম
ছোট একটা মাঠে,
খেলা শেষে দৌড়ে যেতাম
ঐ নদীর ঘাটে।

সাঁতার কেটে পাড়ি দিতাম
ঐ খরস্রোতা নদী,
সাঁতরে যেতাম ভয়ভয় মনে
কুমিরে ধরে যদি!

কারোর হাতে যদি দেখতাম
সেকালের ক্যামি ঘড়ি,
অবাক চোখে তাকিয়েই থাকতাম
ফিরতাম না বাড়ি!

যদি দেখতাম কেউ-না-কেউ
বাজাচ্ছে এফএম রেডিও,
সারাদিন শুনতাম রেডিওর গান
ক্ষুধায় মরতাম যদিও!

বাবার সাথে বাজারে গিয়ে
ধরতাম কতো বায়না,
বাবুল বিস্কুট তক্তি বিস্কুট
কেন কিনে দেয়না?

অভাবী বাবা বিরক্তি মনে
দিতেন পকেটে হাত,
দিতেন মাত্র দশ পয়সা
তাতেই হতো বাজিমাত!

পাচ পয়সার বাবুল বিস্কুট
পাচ পয়সার তক্তি,
খুশিতে হাঁটতাম আর খেতাম
করতাম বাবাকে ভক্তি!

আর কি আসবে ফিরে
সেই সোনালী দিনগুলো,
জানি আসবেনা ফিরে সেদিন
তবুও আঁকি স্মৃতিগুলো!

.
ছবি নিজের তোলা। এলাকার বাদশা মিয়া।

মোবাইলে খেয়েছে ডাকবাক্স-সহ আরও অনেককিছু

286

বছর তিনেক আগে একটা জরুরি কাজে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলাম। যাচ্ছিলাম অটো চড়ে। হাজীগঞ্জ ফেরিঘাট পেরিয়ে যখন কিল্লারপুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, রাস্তার বাম পাশে ময়লা আবর্জনায় মধ্যে একটা ডাকবাক্স দেখতে পেলাম। ডাকবাক্সটি অনেক আগে থেকেই এখানে বসানো হয়েছিল। তবে আগে ডাকবাক্সটির সামনে এতো ময়লা আবর্জনা ছিল না, সবসময় পরিষ্কারই ছিল। বর্তমানে ডাকবাক্সটি পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়।

ডাকবাক্সটি ময়লার স্তুপের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বাক্সের চারপাশে থাকা জঙ্গলে একাকার। দেখে মনে হয় হয়তো মাসে, নাহয় বছরে একবার এই ডাকবাক্সটির তালা খোলা হয়। ডাকবাক্সটির অবস্থান হলো হাজীগঞ্জ কিল্লারপুল সংলগ্ন ড্রেজার সংস্থার মেইন গেইট ঘেঁষা। ডাকবাক্সটি দেখে আগেকার কথা মনে পড়ে গেল।

একসময় এদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ডাকবাক্স ছিল খুবই সম্মানী বস্তু। এই ডাকবাক্স ছিল অগণিত মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি। এসবের জ্বলন্ত সাক্ষী আমি নিজেই। দেখতাম একটা চিঠির অপেক্ষায় আমার মা ডাকপিয়নের বাড়িতেও দৌড়াতে। বাবার প্রেরিত চিঠি মা হাতে পেয়ে অস্বস্তির নিশ্বাস ফেলতো। চিঠি হাতে পেয়ে ডাকপিয়নকে কতনা অনুরোধ করতো, চিঠি পড়ে শোনানোর জন্য।

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে। মনে পড়ে তখন, যখন একটা পোস্ট অফিসের সামনে অথবা রাস্তার ধারে ডাকবাক্স চোখে পড়ে। ছোটবেলা দেখতাম আমার মা চিঠির মাধ্যমে বাড়ির সুসংবাদ, দুঃসংবাদ বাবাকে জানাতেন। বাবা থাকতেন নারায়ণগঞ্জ। চাকরি করতেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিত্তরঞ্জন কটন মিলে। আমার মা লেখা-পড়া জানতেন না। চিঠি লেখাতেন গ্রামে থাকা পাশের বাড়ির শিক্ষিত মানুষ দিয়ে।

এখনকার মতন তো শিক্ষিত মানুষ তখনকার সময়ে এতো ছিল না। কোনও কোনও গ্রামে একজন মেট্রিক পাস মানুষও ছিল না। যদি একটা গ্রামে একজন মানুষ ভাগ্যক্রমে মেট্রিক পাস করতো, দু’একটা গ্রামের মানুষ তাকে দেখার জন্য ভিড় জমাতো। আমাদের গ্রামে একই বাড়িতে তিনজন শিক্ষিত মানুষই ছিলেন। তাঁরা তিনজনই ছিলেন স্কুলের মাস্টার। সেই কারণেই তাদের বাড়ির নাম হয়েছিল মাস্টার বাড়ি। এঁরা হলেন, দক্ষিণা মাস্টার, প্রমোদ মাস্টার ও সুবল মাস্টার।

মাকে যিনি সবসময় চিঠি লিখে দিতেন, তিনি ছিলেন সুবল মাস্টার। সম্পর্কে নিজেদের আত্মীয়। চিঠি লেখাও একটা বিরক্তের কাজ। চিঠি লিখতে হলে সময় লাগে, মন লাগে, ধৈর্য লাগে, তারপর হয় চিঠি লিখা। সব শিক্ষিত মানুষ চিঠি লিখে দেয় না। চিঠি লিখতে পারে না, জানেও না। সুবল মাস্টার আমার নিকটাত্মীয় জেঠা মশাই। আমার বাবার খুড়াততো ভাই (চাচাতো ভাই)। আমার বাবার বয়স থেকে সুবল মাস্টার অল্প কয়েক মাসের বড়। তাই আমার মা’র ভাশুর।

মা জেঠাদের বাড়িতে গিয়ে অনেকসময় ফিরে আসতেন, চিঠি না লেখাতে পেরে। এভাবে দু’তিনদিন যাবার পর একদিন শ্রদ্ধেয় জেঠা মশাই মাকে সময় দিতেন, চিঠি লিখে দিতেন। জেঠা-মশাই কাগজ কলম হাতে নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করতেন কী ব্যাপারে চিঠি দিবে? মা বলতেন, ঘরে চাল নেই, ডাল নেই, তেল নেই, হাট-বাজার করার মতো টাকা-পয়সাও নেই। এই নিয়েই আপনি সুন্দর করে লিখে দেন, যাতে আপনার ভাই বুঝতে পারে।
তখনকার সময়ে শর্টকাট ( মানে কিছু লেখা) চিঠি লিখতে পোস্টকার্ডই বেশি ব্যবহার করতো। একটা পোস্টকার্ডের মূল্য ছিল মাত্র ১৫ পয়সা। আর একটা ইনভেলাপের মূল্য ছিল মাত্র চার আনা(২৫) পয়সা মাত্র। তখনকার সময়ে দশ পয়সার খুবই মূল্য ছিল। সহজে বিনা দরকারে কেউ পাঁচটি পয়সাও খরচ করতো না। পোস্টকার্ড আর ইনভেলাপের মূল্য দশ পয়সা এদিক সেদিক হওয়াতে মানুষ অল্প কথার জন্য পোস্টকার্ডই বেশি ব্যবহার করতো।

পোস্টকার্ডে জেঠা মশাই চিঠি লিখে মাকে পড়ে শোনাতেন, মা শুনতেন। পোস্টকার্ড বুকে জড়িয়ে বাড়ি চলে আসতেন। পরদিন সকালবেলা আমি স্কুলে যাবার সময় মা আমার কাছে পোস্টকার্ডটা দিয়ে বলতেন, “বাজারে গিয়ে চিঠিটা পোস্ট অফিসের সামনে থাকা বাক্সে ফেলে দিবি”। মায়ের কথামত পোস্টকার্ডটা খুব যত্নসহকারে বইয়ের ভেতরে রেখে বাড়ি থেকে রওনা হতাম।

আমাদের বাড়ি থেকে পোস্ট অফিসের দূরত্ব ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। বাজারে যাবার রাস্তার পাশেই ছিল স্কুল। স্কুলে বই খাতা রেখে চিঠি নিয়ে সোজা বাজারে চলে যেতাম। ডাকবাক্সে পোস্টকার্ডটা ফেলে দিয়ে তারপর আসতাম স্কুলে। স্কুল ছুটি হবার পর বাড়ি আসার সাথে সাথেই মা জিজ্ঞেস করতেন, ‘চিটি বাক্সে ফেলেছিস’? বলতাম, ‘হ্যাঁ মা ফেলেছি’!

এরপর থেকে মা অপেক্ষায় থাকতেন ডাকপিয়নের আশায়। মানে বাবার দেওয়া চিঠি হাতে পাবার আশায়। কখন আসবে বাবার চিঠি বা মানি অর্ডার করা টাকা? পোস্ট অফিস থেকে (ডাকপিয়ন) যিনি বাড়ি বাড়ি চিঠি পৌঁছে দিতেন, তিনি গ্রামের সবার নাম জানতেন এবং বাড়িও চিনতেন। ডাকপিয়ন আমাদের পাশের গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন।

পোস্ট অফিসে চিঠি বা মানি অর্ডার করা টাকা আসার পরপরই ডাকপিয়ন পৌঁছে দিতেন বাড়িতে। বকশিস হিসেবে ডাকপিয়নকে এক টাকা বা লাড়ু-মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। এতে ডাকপিয়ন সাহেব খুব খুশি হতেন। বাবা যদি মানি অর্ডার করে টাকা পাঠাতেন, তাহলে আমার মা বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই টাকা রেখে দিতেন। আর যদি টাকার বদলে চিঠি আসতো, তাহলে হাতে পাওয়া চিঠি ডাকপিয়ন সাহেবকে দিয়ে পড়াতেন, না হয় চিঠি নিয়ে দৌড়াতেন মাস্টার বাড়ি।

মায়ের চিন্তা শুধু কী সংবাদ এলো চিঠির মাধ্যমে। জেঠা মশাই মাকে দুঃখ সুখ নিয়ে বাবার লেখা চিঠি পড়ে শোনাতেন, মা চুপ করে বসে শুনতেন। সেসময়ে আমার মায়ের মতো এমন আরও অনেক মা ছিল, যারা লেখা-পড়া জানতো না। তাঁরা ডাকপিয়ন থেকে চিঠি হাতে পেলে অনেকেই দুঃচিন্তায় পড়ে যেতো। ভাবতো সুসংবাদ এলো, না দুঃসংবাদ এলো?

এখন আর সেই দিন নেই। মানুষ এখন চিঠি বা পত্র লেখা প্রায় ভুলে গেছে। মানুষ এখন কলম দিয়ে একটুকরো কাগজে মনের কথা লিখতে চায় না। মানুষ এখন এন্ড্রোয়েড মোবাইলের কীবোর্ড ব্যবহার করে। মেইল আর মেসেজের মাধ্যমে প্রিয়জন আর স্বজনদের সাথে মনের ভাব আদানপ্রদান করে থাকে। তাই পোস্ট অফিসে আগের মতো তেমন ভিড় দেখা যায় না। ডাকবাক্সেও মানুষ এখন কেউ চিঠি ফেলতে চায় না, ফেলেও না। এখন চিঠির যুগ প্রায় শেষপ্রান্তে এসে গেছে। এখন মোবাইল ফোনের যুগ এসেছে।

একসময় দেশের প্রতিটি পোস্ট অফিসের সামনে, আর গ্রাম গঞ্জের হাট-বাজারের রাস্তার পাশে দেখা যেতো ডাকবাক্স। অনেক স্থানে গাছের ঢালেও ঝুলানো ছিলো ডাকবাক্স। তবে আগের মতো ডাকবাক্সের তেমন একটা কদর নেই। আগেকার সময়ে ডাকবাক্সে মানুষ চিঠি ফেলতো। ডাকপিয়ন সময়মত ডাকবাক্সের তালা খুলে চিঠি বের করতো। তারপর চিঠিগুলো একটা বস্তা ভরে নিকটস্থ পোস্ট অফিসের উদ্দেশে রওনা হতো।

রাতবিরেতে ডাকপিয়নের হাতে থাকতো একটা হারিকেন আর আর একটা বল্লম। পায়ে বাঁধা থাকতো নূপুরের মতন ঝুনঝুনি। ডাকপিয়ন চিঠির বস্তা কাধে নিয়ে ‘বস্তিওয়ালা জাগো, হুশিয়ার সাবধান’ বলে চিৎকার করতে করতে হেঁটে যেতো। খানিক পরপরই হামাগুড়ি দিয়ে চিৎকার করতো, আর লাফিয়ে লাফিয়ে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হাঁটতে থাকতো। ডাকপিয়নের গলার আওয়াজ আর পায়ে বাঁধা সেই ঝুনঝুনির শব্দে মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠতো।

ডাকপিয়ন কতো বাধা আর ঝড়বৃষ্টি, চোর ডাকাতের ভয় উপেক্ষা করে চিঠির বস্তা পৌঁছে দিতো হেড পোস্ট অফিসে। হেড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি চলে যেতো দেশের বিভিন্ন জেলাশহরে। পৌঁছে যেতো ডাকবাক্সে ফেলা প্রেরকের চিঠি প্রাপকের হাতে। সেসময় এই ডাকবাক্সের অনেক আদর ছিল, কদর ছিল, যত্ন ছিল। মানুষ চিঠি প্রেরণের জন্য, টাকা পাঠানোর জন্য ছুটে যেতো নিকটস্থ পোস্ট অফিসে। আবার অনেকেই অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকতো ডাকপিয়নের আশায়। কখন হাতে এসে পৌঁছবে প্রিয়জন আর স্বজনদের চিঠি, সে আশায় লেখাপড়া না জানা মানুষেরা চিঠি হাতে পেয়ে কেউ আবার হাউ-মাউ করে কাঁদতো। মনে করতো কী যেন দুঃসংবাদ এসেছে। অনেকে আবার খুশিতে হয়ে যেতো আত্মহারা। এখন মোবাইলের জগতে ডাকপিয়ন আর ডাকবাক্স যেন মোবাইলে খেয়েই ফেলেছে।

শুধু ডাকবাক্সই খায়নি, খেয়েছে আরও অনেককিছুই। যেমন: আগে মানুষে রেডিওর গান শুনতে একটা মনোমত রেডিও কিনে ঘরে রাখতো। সেই রেডিও চালু করে গান শুনতো। খবর শুনতো। নাটক শুনতো। আবহাওয়া বার্তা শুনতো। আর এখন? একটা কমদামি মোবাইলেও থাকে এফএম রেডিও। মিউজিক প্লেয়ার। ভিডিও প্লেয়ার। ঘড়ি। বার্তা প্রেরণেরও অত্যাধুনিক সিস্টেম। এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে টাকা প্রেরণের সহজ সুবিধা। মোবাইলে পানির বিল পরিশোধ করা। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা। যেকোনো ব্যাংক থেকে নিজের হাতে থাকা মোবাইল টাকা আদানপ্রদান করা-সহ আরও যে কয় কী বাহারি সুবিধা, তা আর লিখে শেষ করা যাবে না। তাই আর কথা আর লেখার শব্দ সংখ্যা না বাড়িয়ে বলতে চাই, বর্তমান যুগের মোবাইলে অনেককিছুর মধ্যে ডাকবাক্সটাকে ভালো করে খেয়েছে।

বি:দ্র: এই লেখাটা আরও অনেক আগে কয়েকটা ব্লগে পোস্ট করেছিলাম। আজকে আবার লেখার কিছু ঘষামাজা করে পোস্ট করলাম। ছবিটি আরও তিন বছর আগের তোলা।

ফল খামু বল বাড়ামু

28

আম খামু, জাম খামু
খামু মাল্টা পানিফল,
পেয়ারা বাঙ্গি আনারস খামু
বাড়ামু শইলে বল!

তাল খামু বেতফল খামু
খামু বুটিজাম কৎবেল,
ডালিম আতা বাদাম খামু
শইলে বাড়ামু তেল।

জলপাই খামু বেল খামু
খামু গোলাপজাম তেঁতুল,
আমড়া লেবু নাইরকেল খামু
করতাম নাতো ভুল!

আমরুজ খামু তরমুজ খামু
খামু পেঁপে কাঠবাদাম,
কলা লিচু কামরাঙা খামু
না থাউক কাজকাম!

আপেল খামু বেদানা খামু
খামু আঙুর কমলা,
গাব ডাব করমচা খামু
থাউক পয়সার ঝামেলা।

বড়ই খামু ডেউয়া খামু
খামু জাম্বুরা চিনাল,
পুতিজাম কাউফল কইতন খামু
নাইত আইজ-কাইল।

চালতা খামু শরিফা খামু
খামু সফেদা লটকন,
অরবড়ই আমলকী কাঁঠাল খামু
টাটকা খামু সর্বক্ষণ।

অশান্ত মন

283

১।
অশান্ত এই মন
করে শুধু বনবন
ভাবে বসে সারাক্ষণ
কী করি এখন?

২।
দিতে চায় ওজন
সেরে সেরে মণ
মেলে না যখন
গোলমাল বাধে তখন!

৩।
ভাবতে হয় ভীষণ
হিসাব নেবে মহাজন
মেলাবে কে এখন
সময়ও নেই বেশিক্ষণ!

৪।
তবুও ভাবে কিছুক্ষণ
ফাঁকি চলে কতক্ষণ
হাতে সময় অল্পক্ষণ
কী হবে যে কখন!

৫।
কে আছে আপন
কোথায় আপনজন প্রিয়জন
পরিজন আত্মীয়স্বজন বন্ধুগণ
কাছে নেই স্বজন।

৬।
বিপদে বন্ধুর লক্ষণ
ক্ষুধায় উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ
লোভে কুমন্ত্র গ্রহণ
বিশ্বাসে মন্ত্র শ্রবণ।

৭।
এমনি করে কতোজন
ভাগ্যে সিংহাসনে আহরণ
জোটে ক্ষমতার আসন
ময়দানে বক্তৃতা ভাষণ।

৮।
বনে যায় রাবণ
কাঁপায় রাজনীতির অঙ্গন
দুর্নীতিতে গড়ে বিলাসভবন
চামচিকা করে তৈলমর্দন।

৯।
এভাবেই চলছে ভূবণ
মরছে দেশের জনসাধারণ
চালিয়ে যায় আন্দোলন
নিশ্বাস থাকে যতক্ষণ।

১০।
হোক না মরণ
চলুক দমন পীড়ন
করবো না পলায়ন
প্রভুকে করবে স্মরণ!

১১।
একজন দুইজন তিনজন
ক্ষমতায় আসে যতজন
তারাই করছে ভোজন
কে আছে আস্থাভাজন?

১২।
মেলেনা মনের মতন
এমনই হিসাবের ধরন
বোধহয় জীবনটা রণাঙ্গন
চলছে যুদ্ধ সর্বক্ষণ।

১৩।
থাকবেনা বেহিসাবি ধন
ধরবে দুর্নীতিদমন কমিশন
বিফল চেষ্টা প্রাণপণ
শ্রীঘরে করবে প্রেরণ।

১৪।
সরগরম আদালত প্রাঙ্গণ
হিসাব দাওরে মদন
কোথায় করছো ভ্রমণ
কী কী করছো গোপন?

১৫।
অবৈধ সোনাদানা বাসভবন
সেজেছো পুরোহিত ব্রাহ্মণ
কতনা নাট্য মঞ্চায়ন
উজাড় করেছো বনায়ন।

১৬।
খেয়েছ কতো শিল্পায়ন
খেয়েছ তেল চিনি লবণ
মেরেছ মানুষ যখনতখন
এবার হবে পতন।

১৭।
হোক সুন্দর ভূষণ
থাকুক সুন্দর কথন
দুষ্কৃতকারী হয়না পরিবর্তন
শুধুই মঞ্চ রূপায়ণ।

১৮।
বৈশাখে বাতাস সনসন
তীব্র বেগে আগমন
একসময় থামে ঝড়তুফান
শান্ত হয় আসমান।

১৯।
করজোড়ে করি পণ
হে প্রভু নারায়ণ
করো দুষ্টের দমন
গড়াও সুন্দর জীবন।

২০।
কর্মের ফলটা এমন
সুকর্মে মিষ্টি ফলন
দুঃখ কর্মের উপার্জন
সৎপথে করো গমন।

নবীজীকে কটূক্তির প্রতিবাদ

28640

যারা মহানবীকে নিয়ে করে কটূক্তি,
তাদের সাথে হবে না কোনও চুক্তি।
করবো বয়কট, দেখা দিক যত সংকট,
করবো ঘৃণা, চলবে প্রতিবাদ ধর্মঘট।

মুসলিম হিন্দু ইহুদী বৌদ্ধ খ্রিস্টান,
আমরা সকলেই একই মায়ের সন্তান।
নেই কোনও ভেদাভেদ, সকলেই সমানসমান,
আল্লাহ ঈশ্বর গড একজনই, তিনিই মহান।

জীবের মৃত্যুই নিশ্চিত

2807

মরতে চায় না কেউ বাঁচতে সবাই চায়,
বাঘের সাথেও করে যুদ্ধ বাঁচতে দুনিয়ায়।
এই দুনিয়ায় সুখশান্তি সবাই পেতে চায়,
ভাগ্যগুণে কেউ পায় কেউ বুক ভাসায়।

জায়গা জমি বাড়ি গাড়ি চায় যে সকলে,
একদিন চলে যাবে সবাই সবকিছুই ফেলে।
রাজা-বাদশা সাধু-সন্ন্যাস মহাজ্ঞানীও হলে,
মরণকে সবাই করছে বরণ সকালে বিকালে।

তবুও হায় ভুলে যায় সবাই বাস্তব অতীত,
মৃত্যুকে করে না স্মরণ গায় ভবিষ্যৎ সংগীত।
যা-কিছু আছে এই দুনিয়ায় সবকিছুই অনিশ্চিত,
চিরসত্য স্রস্টার বিধান জীবের মৃত্যুই নিশ্চিত।

.
ছবিটি নারায়ণগঞ্জ শ্মশান থেকে তোলা। একদিন ছবির মতো আমিও শবদেহ হয়ে শ্মশানে যাবো, তা একশো-তে-একশো নিশ্চিত!

তাঁর ইচ্ছা

288

তাঁর হুকুম ছাড়া যদি
না নড়ে গাছের পাতা,
কার এমন শক্তি আছে
ছিন্ন করে কারোর মাথা?

তাঁর হুকুম ছাড়া যদি
হবেনা চন্দ্র-সূর্য উদিত,
কার এমন সাধ্য আছে
বিনা দোষে করবে দন্ডিত?

তাঁর হুকুম ছাড়া যদি
হবেনা দিন আর রাত,
কার এমন ক্ষমতা আছে
ঝরাবো শিলাবৃষ্টি আর বজ্রপাত?

তাঁর হুকুম ছাড়া যদি
হয়না জলোচ্ছ্বাস ঝড়-তুফান,
কারো কী এমন সাধ্য আছে
ভাঙবে ঐ দেবমূর্তি হনুমান?

নিজের শান্তি খুঁজতে গিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তাকে অশান্তিতে রাখছি!

289

আমার ঠাকুরদা’র সংসারে শুধু তিন ছেলে ছিলো। এই তিন ছেলের মধ্যে যনি সবার বড়, তিনিই ছিলেন আমার বাবা। আর যেই দুইজন ছিলেন, উনারা আমার বাবা’র ছোট ছিলেন। সেই হিসেবে ওই দুইজন আমার কাকা। একজন মেজো কাকা, আরেকজন ছোট কাকা। এখন হয়তো কেউ বেঁচে নেই। আমার বাবা’র সংসারে আমরা দুই ভাই চার বোন।

আমরা বড় হয়ে যখন ছয় ভাই-বোন কিছু-না-কিছু নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ, মারা-মারি করতাম, বাবা তখন ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করতেন। আমাদের সাথে জোরাজুরি করেও যখন ঝগড়া থামাতে পারতেন না, তখন বাবা বাড়ির উঠোনে বসে কপালে হাত রেখে চোখের জলে বুক ভাসাতেন।
কাঁদতে কাঁদতে বলতেন, “ওরে তোরা আর ঝগড়া-ঝাটি করিস না! আমার ভালো লাগে না! আমাকে আর অশান্তিতে রাখিস না! হে দয়াল, আমাকে মৃত্যু দাও! আমি আর সইতে পারছি না!”

সেসময়ে বাবার কান্নাকাটি নিয়ে এতো মাথা ঘামাইনি। যা নিয়ে এখন প্রায় সময়ই ভাবি! এখন বুঝি, সেসময় বাবা কেন কেঁদেছিল! সেসময় বাবা আমাদের ঝগড়া-ঝাটি সইতে পারছিলেন না বিধায় কেঁদে কেঁদে কপাল ঠুকছিল। যদিও এখন বাবা, বড়দাদা, বড়দি এখন বেঁচে নেই, তবুও সেসব ঘটনা নিয়ে এখন নিরালায় বসে খুবই ভাবতে হচ্ছে।

হ্যাঁ, খুব ভাবি এবং খুবই চিন্তা করি। সেইসাথে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি। আচ্ছা, সেসময়ে আমাদের ঝগড়া-ঝাটি দেখে আমার বাবা যে এতো কষ্ট পেয়ে কেঁদেছিলেন, বাবার কান্না দেখে মহান সৃষ্টিকর্তা কতটুকু কষ্ট পেয়েছিলেন?

আমার এই প্রশ্নের কারণ হলো, আমাদের ভাই-বোনের মতো এই পৃথিবীর সেবাইতো মহান সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি! সবাইতো এক জায়গা হতে এবং একইভাবে এই পৃথিবীতে এসেছি।

তা-ই যদি হয়, তাহলে আবারও জানতে ইচ্ছে করে, এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা ক’জন? উত্তর আসে, এই পৃথিবীর সকল জীবের সৃষ্টিকর্তা একজনই!

তাহলে আমরাতো সবাই একজনেরই সৃষ্টি! সেই হিসেবে আমরা সবাই একে অপরের ভাই-বোন অথবা নিকটাত্মীয়! ধর্ম হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন। তাতে আবার দোষের কী? যে যেই ধর্মের অনুসারীই হোক, ডাকছে তো এক জনকেই। আমার একজন ভাই ও-তো নিজের ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। মহান সৃষ্টিকর্তাকে জন্মগত ধর্মে থেকে যেই নামে ডেকেছিল, সেই নামে না ডেকে যেই ধর্ম গ্রহণ করেছে– সেই ধর্মমতে মহান সৃষ্টিকর্তাকে ভিন্ন নামে ডাকবে; সেটা স্বাভাবিক!

যেমন আমার বাবাকে কেউ বাবা, কেউ কাকা, কেউ জেঠা, কেউ মামা, কেউ দাদা, কেউ পিসা, কেউ মেসো, কেউ ঠাকুরদাদা বলে ডেকেছিল।

তদ্রূপ এই পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল মানুষরা মহান সৃষ্টিকর্তাকে যার যার ধর্মমতে ভিন্ন-ভিন্ন নামে ডাকছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা একজনই। আমরা সবাই একজন মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি! সেই হিসেবে আমরা সবাই সবার ভাই-বোনের মতো অথবা সবাই সবার নিকটাত্মীয়।

তাহলে আমাদের ঝগড়া-ঝাটি, মারা-মারি, কাটা-কাটি দেখে মহান সৃষ্টিকর্তা কি আমার বাবার মতো কষ্ট আর অশান্তি ভোগ করছে না? যেখানে আমরা তাঁর কৃপা পাবার জন্য উপাসনা করি। তাঁকে সন্তুষ্টি করার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারি, সেখানে তাঁকে অশান্তিতে রাখছি কেন? আমাদের নিজের অশান্তি কি মহান সৃষ্টিকর্তার অশান্তি নয়?

আমার মনে হয়, এই কারণেই আজ পৃথিবীর সব দেশেই অশান্তি বিরাজ করছে। আর এই অশান্তির মূল কারণই হচ্ছে, আমাদের বাড়াবাড়ি, মারামারি, আর মহান সৃষ্টিকর্তাকে খুশি রাখতে না পারা এবং নিজেদের শান্তি খুঁজতে গিয়ে স্বয়ং মহান সৃষ্টিকর্তাকে অশান্তিতে রাখা।

বি:দ্র: বন্ধুগণ, আমার লেই লেখাটা কাউকে উদ্দেশ্য করে লিখিনি। লেখাটা আমার নিজের ব্যক্তিগত ভাবনা থেকে লিখেছি। কারোর মনে আঘাত লাগলে অবশ্যই ইনবক্সে জানাবেন। আর ভালো লাগলো মন্তব্যে প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ রইল।

নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দ

28400

বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ রয়েছে। ৮টি বিভাগে রয়েছে ৬৮ হাজার গ্রাম। এই ৬৮ গ্রামের মানুষ কিন্তু শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলে না। শুদ্ধ বাংলা ভাষা যে বলতে পারে না, তা কিন্তু নয়। অনেকেই শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে। তারপরও যে যেই অঞ্চলের, সে সেই অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলতে বেশি পছন্দ করে।

কারণ মাটির টার আর মাতৃত্বের টান তো সবারই থাকে। যেমন; যাদের জন্ম চট্টগ্রাম, তারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলতে পছন্দ করে। এমনই নোয়াখালীর মানুষ নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। বরিশাল অঞ্চলের মানুষ বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষ। তাই আমি নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করি।

তো আমি বাংলাদেশের গুটিকয়েক অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা জানি এবং কথাও বলতে পারি। অন্য অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা জানলেও, আমি অন্য অঞ্চলের ভাষা নিয়ে কিছু লিখছি না। আমি নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। তো আসুন, দেরি না করে শুরু করা যাক!

শুদ্ধ শব্দ – আঞ্চলিক শব্দ
নারায়ণগঞ্জ=নানগঞ্জ
এখানে=এনো
ওখানে=হেনো
এদিক=এন্দা
এদিক দিয়ে=এদিকদা
আসেন=আহেন

ওইদিকে=ঐদিকদা বা হেন্দা
কোনদিক দিয়ে=কোন্দা
কাঁঠাল=কাডাল
শোনেন=হুনেন
শুনছেন=হুনছেন
শুনবেন=হুনবেন

যাচ্ছি=যাইতাছি
যাবো=যামু
যাবো একসময়=যামুনে একসুম
যেতে হবে=যাওন লাগবো
একসময়=একসুম
কখন=কোনসুম
কখন থেকে=কোনসুম তে
যেসময়=যেসুম

আসবো=আমু
আসবো একদিন=আমুনে একদিন
নদীর পাড় দিয়ে=নদীর পাড়দা
নদী=নদী বা গাঙ
পাড় হবো=পাড় ওমু
হবো=ওমু
খাবো=খামু

হতাম=ওইতাম
দেখাতাম=দেখাইতাম
দেখবো=দেখমু
দেখাবো=দেখামু
দিবো=দিমু
বুঝেছি=বুঝছি
বোঝাবো=বুঝামু
বুঝেছেন=বুঝছেন

খেয়েছেন=খাইছেন
গিয়েছেন=গেছেন
এসেছেন=আইছেন
গেয়েছে=গাইছে
গাইবে=গাইবো
গাইবো=গামু

খাবে=খাইবো
রান্না=পাক
রান্না করা=পাক করা
রান্নার কাজ=পাকের কাম
কাজ=কাম
কাজকর্ম=কামকাইজ
কেটেকুটে=কাইট্টাকুট্টা
খেটেখুটে=খাইট্টাখুট্টা

কোনরকম=কোনোমতে
ভালো লাগে না=ভাল্লাগে না
ভালো লাগে=ভাল্লাগে
বিয়ে=বিয়া
বিয়েবাড়ি=বিয়াবাড়ি
হেলেদুলে=হেইল্লাডুইল্লা
মোটামুটি=মোডামুডি

ঘামাবো=ঘুমামু
ঘুমাও=ঘুমা
ঘুম আসে না=ঘুম আহে না
যেভাবে=যেম্নে
এভাবে=এম্নে
ওইভাবে=হেম্নে
কীভাবে=কেম্নে

পারবো না=পারতাম না
পারবো=পারুম
বলবো না=কইতাম না
চাবো না=চাইতাম না
খাবো না=খাইতাম না
শোবো না=হুইতাম না।
শুনবো না=হুনতাম না
মরবো না=মরতাম না

মরবো=মরুম
মারবো=মারুম
করবো=করুম
করাবো=করামু
ধরবো=ধরুম
ধরাবো=ধরামু
পড়বো=পড়ুম

আজকে এ-পর্যন্ত। এখানেই শেষ!
বি:দ্র: এর আগেও আমি শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)-এ নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দ এবং নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দের দুই-তিনটা পোস্ট করেছিলাম। ভাগ্যগুণে শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)-এর অ্যাডমিন সেগুলো উনার ব্যক্তিগত ব্লগে চিরস্থায়ী করে রেখে দিয়েছেন। কারণ একই দেশের ভাষা অনেকরকম থাকলেও সেসব ভাষা সম্বন্ধে একই দেশের সবারই জানা দরকার মনে করে সেই পোস্টগুলো ব্লগে রেখেছেন। সেজন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ।

তো আজকে শুধু আমাদের নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দ এখানে দেখালাম। তারজন্য দয়া করে কেউ কিছু মনে করবেন না। যদি ভুল করে থাকি, তাহলে মন্তব্যের ঘরে অথবা ইনবক্সে জানালে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানাবো।

অশান্তির ফুটপাত

28887

ফুটপাত,
কিছুতেই কমছে না হকারদের উৎপাত
এতে শত উন্নয়ন-ই হয়ে যাচ্ছে ধূলিসাৎ,
পথচারীদের মাথায় পড়ছে বজ্রপাত
ফুটপাতের কারণেই যানজটের সূত্রপাত!

ফুটপাত,
শহরের রাস্তা মাত্র কয়েক হাত
তারমধ্যে অর্ধেক রাস্তাই ফুটপাত,
সরাতে গেলে পেটে লাগে আঘাত
কেউ বলে গরিবের উপর কষাঘাত!

ফুটপাত,
তাহলে কীভাবে হবে মুক্ত ফুটপাত?
যদি না থাকে বিশিষ্টজনের দৃষ্টিপাত,
শহরের উন্নয়ন সৌন্দর্য সবই ধূলিসাৎ
নির্বিঘ্নে হাঁটার বিঘ্ন ঘটাচ্ছে ফুটপাত।

.
ছবি নারায়ণগঞ্জ কালীর বাজার সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জ কলেজ’র সামনে থেকে।